#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১৬
লেখায়ঃ তানিয়া তানু
“দৌড়াচ্ছি কী আর সাধে! এক পাগলের হাত থেকে বাঁচার জন্যই তো আরেক পাগল হয়ে দৌড়াচ্ছি।”এই কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বললাম,
“তোমায় কী বলতে হবে, ভাইয়া? আর তুমিই বা কে?”
“বিরক্ত হচ্ছিস নাকি?”
বিরক্ত না হওয়ার কী আছে? আলবত বিরক্ত হবো। তোমায় যত বার আমার সামনে দেখি। ততবার মনে হয় তুমি ভীষণ ব্যস্ত। রাজ্যের যত ভার সব এসে তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে। তোমাকে সব কাজ এখন একলাই করতে হবে। কিন্তু আমি আড়াল হলেই দেখি, কী সুন্দর রামিসার সাথে আড্ডায় মত্ত হচ্ছ। এই তো ফটো তুলার সময় রামিসার সাথে হাসিমুখে ছবি তুললে। দেখতেও কাপলদের মতো লাগছিলি। কই একবারও আমায় বললে না আয় তুই আর আমি ফটো তুলি? তো বিরক্ত হবো না তো কী হবো?
“কীরে, বল? আচ্ছা তুই কী কাঁদছিলি? চোখের এই অবস্থা কেন? একেবারে লাল হয়ে আছে!
ভাইয়ার কথায় ভাবনা জগত থেকে বের হলেই আবারো ঢুকে গেলাম। কথায় এমন ভাব। বুঝা যাচ্ছে যে, আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। আমাকে কেন দেখছো? ঐ রামিসাকে দেখো। ও আজ আমার মতো এই রকম মধ্যবিত্তের মতো সাজেনি। ওর ড্রেসাপে বুঝা যায় ও কতটা উচ্চবিত্ত। ওকে গিয়ে দেখো।
“দীপ্তি।”
ধাক্কা দিয়ে কথা বলায় একেবারের জন্য জ্ঞান ফিরলো। কিন্তু ক্রোধের আগুন ধপ করে জ্বলে উঠলো।
“ধাক্কা দিলে কেন, ভাইয়া? কথায় কী বলা যায় না। এভাবে শরীরে হাত দিয়ে কেন বলতে হবে। আমি তোমার সম্পদ নই যে এইভাবে গাঁয়ে হাত দিবে। আর আমি রামিসাও নই যে শরীরে হাত দিবে। এগুলো আমার পছন্দ নয়।”
আমার কথাশুনে ভাইয়ার চোখমুখ লাল হয়ে গেল। হয়তো আমার কাছে থেকে এমন কিছু আশা করেননি। কিন্তু এ ছাড়া আমারও কিছু করার ছিলো না। কিছু বলছে না দেখে পরক্ষণে আমিই রাগ নিয়ে
বললাম,
“তা কী বলবে শুনি?”
“দুঃখিত। এমনভাবে ধাক্কা দেওয়া মনে হয় আমার উচিত হয়নি। তবে তেমন স্পর্শকাতর জায়গা নয় কাঁধে হাত দিয়েছিলাম। সে যাইহোক, একদিন ঠিক আমার সম্পদ করে নেবো। মনে রাখিস। ”
এই বলেই হাতের তালু দিয়ে অবাধ্য জল মুছে নিয়ে চলে গেলেন অন্যত্র। আমি এখনো ঠায় হয় দাঁড়িয়ে আছি। সম্পদ তুমি আমায় না রামিসাকে করবে ভাইয়া সেটা তো আমিও দেখতে চাই?
নিলার রুমে গিয়ে দেখলাম এলোমেলোভাবে কয়েকজন ঘুমিয়ে আছে। বেবলিও তারপাশে ঘুমে বিভোর। একটু পড়েই ভোর হবে। সবাই ঘুমিয়েছে ভালোই করেছে।কিন্তু নিলা ঘুমে নেই। ও হাতে মেহেদী দিয়ে চেয়ারে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।আমাকে দেখেই রাগত স্বরে বললো,
“এলি কেন? যে জায়গায় ছিলি সে জায়গায় থাক না বাপু।”
“রাগলি বুঝি?”
“রাগবো না তো কী করবো শুনি? এলি আমার বিয়েতে। সারাদিন আমার পাশে থাকবি। কাল তো চলেই যাবো। আজ দুজনে আড্ডা দিবো। তা না করে তুই আমার থেকে ছয় ফুট দূরে থাকছিস। কিসের জন্য শুনি?”
ওর এত প্রশ্নের উত্তর আমার ঝুলিতে থাকলেও মুখের উত্তর পুরোপুরিই শূন্য। যে কান্ড আমি ঘটালাম সেটা বলে নিজের ইচ্ছায় অপমানিত হওয়ার কোনো সাধ নেই। নিলাকে বললে সে না জানি কী বলবে! হয়তো আবার নিয়নের ভাইয়ের মতো ট্রল করবে আমায় নিয়ে। এর থেকে নিজের ঘটনা নিজের মাঝেই থাক।
“তোরা বাড়িটা কী সুন্দর সাজিয়েছিস! সারাদিন এগুলোই দেখতেই মন চায়। তাই তোর কাছে আর যাইনি।”
“ও হো। এত সুন্দর সাজিয়েছি! তা সাজানোটা বুঝি স্টেজের পেছন থেকে দেখতে হয়।”
“মানে?”
“ভাইয়া বললো তুই নাকি স্টেজের পিছন থেকে নাচ দেখছিলি।”
আকাশ ভাইয়ার কথা মাথায় আসতেই মনে পড়লো একটু আগে ঘটানো আমার ঘটনা। ভাইয়ার লাল চেহারা। ইশ, এত কঠোর কথা না বললেও পারা যেত। এখন যেন অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছি। তাই তো দৌড়ে আবারও চলে গেলাম ভাইয়ার খুঁজে। পিছন থেকে শুনতে পেলাম নিলা জোরে জোরে বলছে, তুই আবার চললি? এমন ব্যবস্থা করবো আর কোনোদিন আমাদের এখান থেকে যেতে পারবি না।
ভাইয়াকে তন্নতন্ন করে খুঁজে না পেয়ে শেষে ছাদে গেলাম। তিনি ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছেন। তার পাশ থেকেই নিকোটিন যুক্ত কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। সম্ভবত এটা সিগারেট। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভাইয়াকে আমি কখনো সিগারেট খেতে দেখিনি। প্রথম দেখায় বেশ অদ্ভুদ লাগলো। পরক্ষণে খারাপও লাগলো আমি কীনা এরকম একটা ছেলেকে অপমান করায় অনুশোচনায় ভুগছিলাম। সেই স্থান ত্যাগ করতে পিছন ফিরলেই দীপ্তি বলে ভাইয়া ডাক দিলো। আমিও ঘৃণার চোখে তাকালাম।
“এসেছিলি কেন?”
“ছাদে দাঁড়িয়ে ভোর সকালে স্নিগ্ধ হাওয়া খেতে।
বেশ ভালো করেই মিথ্যেটা বললাম।
“তো চলে যাচ্ছিলি কেন?
“হাওয়া নষ্ট হয়ে গেছে তো তাই।”
“ওহ। আমি চলে যাচ্ছি। আর হাওয়াও কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে।”
চলে যেতে চাইলে বাঁধা দিয়ে বললাম,
“এটা তোমার বাড়ি। এখানে আনাচে-কানাচে আসা যাওয়া তোমার মানায়। তুমি কেন চলে যাবে। বেশ তো ধোঁয়া ছাড়ছিলে। ছাড়ো। আমিই চলে যাচ্ছি।”
“এটা আমার বাড়ি হলেও আমি আমার শহরে একজনের আনাগোনা বেশ চাই। তাই তাকে আসতে দিতে হলে এই বাড়িতে থাকে পূর্বে মর্যাদা দিতে হবে।”
” মানে?”
“সিগারেট খেলে নাকি বুকের যন্ত্রণা ভুলে থাকা যায়। তাই খাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন সব জ্বালাতন শেষ। তাই আর খাবো না।”
এই কথার উপরে আমি কিছু বললাম না।নীরব থাকলাম।ভাইয়াও খানিক এদিক সেদিন তাকালো। কিছুক্ষণ পাশে থেকে আমাকে পরখ করলো। শেষে বুঝতে পারলো কথা আর জমাতে পারবে না। তাই তো আবারো এক পলক চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল সিঁড়ি বেয়ে নিচে।
ভোর সকালে সূর্য যখন হালকা উঁকি দেয়। তখন সেই উঁকিতেই ফুঁটে উঠে নতুন দিনের নতুন রূপ। চারদিকে আলোর খেলা। আধারকে সরিয়ে আলোর আনাগোনা চলে পৃথিবী নামক গ্রহে। নতুন উদ্যমে মানুষ ঘর থেকে বের হয় কাজের সন্ধানে। তবে এখন সবাই সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে ব্যস্ত। আমিও হতাম। কিন্তু বিয়ের এক পরিবেশের জন্য অজুহাত দিতে হলো।
ভাইয়ার ছড়ানো ধোঁয়ার গন্ধ এখন আর নেই। চলে গেলো। ভাইয়ার মতোই। পূর্বের মতো ভাইয়াকে দেখলে এখন আর সেই অনুভূতি হয় না। অনুভূতিরা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল শুধুমাত্র ভাইয়ের বেলায়। কিন্তু কেন? নতুন কারোর আগমণে কী? নাকি অবহেলায়। অবহেলায় তো লোহায় জং ধরে। তবে আমার বেলায় নয় কেন? সেটাই বোধয় হয়েছে। আগে তো বেশ কথা হতো। এই বাড়িতে আসলেই কথার পাহাড় জমতো। কিন্তু এখন সব কেমন হারিয়ে গেল। সত্যি কী হারিয়ে গেছে নাকি আমার দিক দিয়ে তা মন হচ্ছে? সব কিছু তো অজানা। সময়ই না হয় সব কিছু বলে দেবে। পথের প্রতিটি পদক্ষেপ তো সেই বলে দেয়।
চলবে„„„„„„„„