প্রয়োজন পর্বঃ ১৫

0
883

গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১৫
লেখায়ঃ তানিয়া তানু

উনাকেও ফোনের স্ক্রীনে আমার সাথে দেখা যাচ্ছে। দুইজনই কাপলদের মতো করে মনে হচ্ছে সেলফি তুলছি। এই ভাবনা মনে হতে দূরে সরে যেতে চাইলেই কোমর ধরে কাছে টেনে বললেন,
” এখনই চলে যেতে চাইছো যে? আমার তো পুরো কথা এখনো শেষ হয়নি। যতক্ষণ শেষ না হয়। ততক্ষণ তুমি এখান থেকে এক চুলও নড়তে পারবে না। ফোনে তাকাও। একটা সেলফি তোলে নেই।”
এমন ধরণের কথা শুনে সত্যি আমি বাকরুদ্ধ। পৃথিবীর যত ভয় সব যেন আমার কাছে এসেছে। সাহস করে কিছু বলতেও পারছি না। পারছি না বলতে, আপনার এত সাহস কী করে হয়? এভাবে নির্জন স্থানে একটা মেয়েকে এইভাবে স্পর্শ করে তাকে টিজ করার। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার!

” কী হলো তাকাও।”
ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে ফোনে তাকালে উনি ক্লিক করে সেলফি তোলে নিলেন। মনে এসে ত্রাস জমলো। আজকাল তো ছবি দিয়ে খারাপ কিছু করা হয়। না জানি আমার ছবি দিয়ে উনি কী করবেন!

“ডোন্ট ওয়ারি। এই ছবি দিয়ে আমি তেমন কিছুই করবো না। তবে তোলাটা দরকার ছিলো। কোনো একদিন কাছে পেলে না হয় বলবো।”
উনার কথা শুনে স্বস্তি পেলাম।কিন্তু উনি কী করে মনে কথা বুঝলেন। হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছেন। সে যাইহোক উনাকে পরক্ষণে বললাম,
“আমি তো এখন আপনার কাছেই আছি।”
“এটাকে শরীরের দিক দিয়ে কাছে হয়। এই কাছে আর আমার বলার কাছের মানে এক নয়।”
“মানে?”
“আন্ডা।”
খানিক নীরব থেকে চারপাশের পরিবেশ একবার চোখ বুলিয়ে উনার দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“প্লিজ, এখন অন্তত ছেড়ে দিন। জনগণ আমাদের এভাবে এসে দেখলে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাবে। প্লিজ, ছেড়ে দিন। আমি আর কোনোদিন আপনার পাপড়ি ছিঁড়বো না।”
উনি আমার কথা শুনে আমাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ রাখলেন। দুজনের উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। পরিবেশ যেন এক অদ্ভুত মায়াজালে আটকে রাখলো আমায়। উনাকে কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছি না। উনার অবাককান্ড অবাক হয়ে দেখছি। উনার চোখে অদ্ভুত এক খেলা চলছে। কিছুক্ষণ এইভাবে চললে নিশ্চিত এই লোকের সাথে আমার কিছু হয়ে যাবে। খানিক পর মৃদু হেসে উনি নিজেই বললেন,
“তোমাকে পাপড়ি ছিঁড়তে বারণ করিনি। ছিঁড়বে তবে ভালোবাসা দিয়ে। এভাবে ছিঁড়লে তো বুকে বেশ লাগে। জ্বলে ছারখার হয়ে যায়(আমার হাত বুকে দিয়ে) দেখিয়ে)”
আমি এখনো নীরবতা পালন করছি। তবে উনার লোমশ বুকে আমার হাত পৌঁছায় কেমন জানি শিহরিত হচ্ছি। অজানা ঘোরে উনার লোমশ বুকে আমার হাতের বিচরণ করছে।

“তুমি এমন করলে তো আরো পাগল হয়ে যাবো, দীপ্তি।”
উনার কথায় হুঁশ এলে মনে পড়লো আমি এতক্ষণ কী করছিলাম?নিজেই নিজেকে বকা দিলাম। ছিহঃ তুই এমন থার্ড ক্লাস মেয়েদের মতো এই কাজটা করতে পারলি। ছিহঃ

“পাপড়িগুলো ছিঁড়লে কেন? বেশ তো রোমান্সের মুডে ছিলাম। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত মায়াজাল সৃষ্টি করছিলাম। এভাবে মায়াজাল ছিঁড়লে কেন?
উনার প্রশ্নের উত্তরে নীরব হয়ে রইলাম। বলার মতো তেমন শব্দ মাথায় আসছে না। সব গুলো শব্দ একে অপরের সাথে জট লেগে অগোছালো ভাব সৃষ্টি করেছে। তাই নীরবতা ছাড়া কোনো কর্মই সাধাওণ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।

“কী হলো? বলো, পাপড়ি ছিঁড়লে কেন? একটু আগে এমন করে চোখ বন্ধ করে কী করছিলে। পাপড়িই বা হাতের পিঠে রেখেছিলে কেন?”

উনার এমন চিৎকারমূলক প্রশ্নে আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“পাপড়ি দিয়ে আল্লাহর কাছে চাওয়াগুলো চাইবো। তাই আপনার পাপড়ি ছিড়েছিলাম। এখন দোয়া করতে চাইছিলাম। কিন্তু তার পূর্বেই আপনি বাধাঁ দিলেন।”

আমার কথা শুনে আর উনার মুখ দেখে বুঝা গেল তিনি প্রচুর অবাক হলেন। কিন্তু কপালে রাগের ভাঁজে এটাও বুঝা যাচ্ছে তিনি আমার কথায় ভারি রাগ করছেন। রাগান্বিত হয়ে পরক্ষণে বললেন,
“এগুলো তোমায় কে বলেছে?”
“ছোটবেলায় এক ক্লাসমেট বলেছিলো।”
“এখনো তুমি সেটা বিশ্বাস করছো। এগুলো জাস্ট কুসংস্কার ছাড়া কিছুই না।”

উনার কথায় ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললাম,
“আরে নাহ। ও বলেছে ও যেগুলো ছেয়েছে সেগুলো পূর্ণ হয়েছে।”
“ও রিয়েলি।”
“হুম।”
“আমি প্রমাণ ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করি না। কারণ আমি এস আই পুলিশ অফিসার অয়ন মাহমুদ। প্রমাণ দাও।

অসহায় হয়ে বললাম,
“প্রমাণ কী করে দিবো?
উনাকে খুব ভাবুক দেখা গেল। খানিক চিন্তা ভাবনা করেই মনে হয় কিছুক্ষণ পর বললেন,
“তুমি আমার সামনে একটা পাপড়ি দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দাও। তারপর যেটা চাইবে সেটা আমাকে বলবে। আমি মিলিয়ে দেখবো। তোমার চাওয়া পূরণ হয় কী না?”
উনার কথামতো ব্যাগ থেকে কাগজটা এনে খুললাম। খুলার পর একটা পাপড়ি নিলেই উনি অবাক হয়ে বললেন,
“বাপরে, তুমি আমার এত্তগুলা পাপড়ি ছিড়লা। তাই তো বলি আমার চোখের এত পাপড়ি গেলো কই? আর এত জ্বলছিলো কেন? সব উত্তর যে এখন পেলাম। মেয়ে তোমার বড্ড সাহস। এখনই ইচ্ছে করছে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেই।”
উনার কথা শুনে ভয়ে ভীত হয়ে গেলাম। কথা বলতে পারছি না। তবুও আমতা আমতা করে বললাম,
“শ্বশুর বাড়ি মানে? প্লিজ, আমার বিয়ে দিয়েন না।আমি এখন বিয়ে করবো না।

আমার কথা শুনে অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন। উনার হাসির শব্দ আমার কানে যেন বিষের মতো বেজে উঠলো। রাগত স্বরে বললাম,
“আপনি এভাবে হাসছেন কেন? জানেন না কারোর কষ্টে এভাবে হাসতে নেই।”
“তোমার আবার কষ্ট কিসের?”
“ঐ যে আপনি বললেন, আমার বিয়ে দিয়ে দিবেন। কিন্তু আমি তো বিয়ে করতে চাইছি না।ঐ টাই আমার কষ্ট। বুঝেছেন?”

“বেশ বুঝেছি। আর এটাও বুঝেছি তুমি খুবই বোকা। এত বোকা যে তোমায় নোবেল দিতে ইচ্ছে করছে।”
“আমি মোটেও বোকা নই। আর এখানে তো বোকামির কিছু করিনি।”
“তুমি আলবাত বোকা। নাহলে কী এইভাবে কেউ বলে?”
“কী বলেছি আমি?
” বিয়ে নিয়ে যে সব কথা।”
“ওগুলো তো আপনি বলেছেন।”
“আমি বলেছি তোমায় শ্বশুর বাড়িতে পাঠাতে ইচ্ছা করছে অর্থাৎ জেল হাজতে।আর তুমি কী বুঝলে?”
উনার এই কথায় নিজের বুঝার ভুল বুঝতে পারলাম। ইচ্ছে করছে কোথাও এই মুখটা লুকাই। ছিহঃ আমি কী ভেবেছিলাম। কিন্তউ একটা কথায় সন্দেহ হলো। তাই বললাম,
“হাজতে বলতে তো মামার বাড়ি বুঝায়। শ্বশুর বাড়ি নয়।”
“এটা শ্বশুর বাড়িই বুঝায়। কারণ মামার বাড়িতে মধুর হাড়ি থাকে। শ্বশুর বাড়িতে লবণে। সেখানে মারামারি ছাড়া কিছুই পাবে না। বাদ দাও সেসব কথা। এখন হাতে পিঠে পাপড়ি নিয়ে তোমার চাওয়া চাও।”
উনার কথামতো তাই করলাম। ফু দিয়ে উড়িয়ে উনার দিকে তাকালে মৃদু হেসে বললেন,
” তো কী চাইলে?”
“হে আল্লাহ, এই মুহূর্তে আমায় একটু শান্তি দাও।”
“মনে হয় না শান্তি পাবে।”
“কেন?”
“কারণ এখন আমি তোমায় আরো বেশি করে জ্বালাবো।”
এত অবাক হলাম যে তা বলার মতো নয়। লোকটা এত অসভ্য। কিন্তু আমারও কোনো কিছু করার ছিলো না। একে তো এই বাড়ির মহাত্মীয়। তার উপরের আবার পুলিশ। অভিযোগ করলে আমার শরীরে দাগ লাগবে কিন্তু উনার কিছুই হবে না। সমাজে যত দোষ সব নারীর। না পেলেও খুটিয়ে খুটিয়ে দোষ বার করবে এই সমাজ। কারণ সমাজে ছেলেদের বড্ড অভাব। ওদের সম্মান করাই যে সমাজের মহৎ কাজ। উনার আচরণে এতই কষ্ট হচ্ছে যে কাঁদোকাঁদো স্বরে বললাম,
“প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আমি আর কোনো দিন আপনার সামনেও আসবো না।”
“আরে, তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? আমি খারাপ ছেলে নই। আমার আচরণ তোমার কাছে বাজে মনে হলো আ’ম রিয়েলি সরি। প্লিজ এবার অন্তন্ত শান্ত হও।আর হ্যাঁ পাপড়ি নিয়ে কুসংস্কার বিশ্বাস করবে না। যদি এগুলো অবিশ্বাস করো তবে এখান থেকে যেতে পারো। আমি বাঁধা দিবো না।”

এই কথাগুলো বলেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আমিও খাঁচার পাখির মতো হঠাৎ দরজা খোলা পাওয়ায় দৌড়ে চলে আসলাম। মনে মনে খুব করে আচ্ছা বললাম। এগুলো আর কোনোদিনই বিশ্বাস করবো না। আসার পথেই আবারও কারোর সাথে ধাক্কা খেলে হুমড়ি খেয়ে ছিটকে পড়ি মেঝেতে।
“ও হ্যালো, দেখেশুনে চলতে পারেন না নাকি?”
একে তো কোমরে কী ব্যথাটাই না পেলাম। তার উপর এই ছেলের চ্যাটাং চ্যাটাং কথা। রাগত স্বরে মুখ ঘুরিয়ে বললাম,
“নিজে দেখে,,,,,,,,”
পুরো কথা সম্পূর্ণ হবার আগেই দেখলাম আবারো আমার সামনে আকাশ ভাইয়া পড়েছেন।
“কীরে, এভাবে পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিস কেন?”
“দৌড়াচ্ছি কী আর সাধে! এক পাগলের হাত থেকে বাঁচার জন্যই তো আরেক পাগল হয়ে দৌড়াচ্ছি। এই কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বললাম,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে