প্রয়োজন পর্বঃ ১৪

0
968

#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ১৪
লেখায়ঃ তানিয়া তানু

” কে তুমি? স্টেজের পিছনে কী করছো?”
আচমকা প্রশ্ন ও পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আত্মা কেঁপে উঠলো। পরিচিত কণ্ঠ লাগলো। কিন্তু তাও কে সেই লোক তা দেখার জন্য ঘাড় ঘুরালে দেখতে পেলাম। আকাশ ভাইয়া আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে এখানে দেখে মনে হলো বিস্মিত হলেন। তাই তো দেখেই বললেন,

“তুই? স্টেজের পিছনে কী করছিস?”

সত্যটা বলার মতো সাহস এখনো হয়নি। তাই বললাম,
“নাচ দেখছিলাম”
আমার উত্তরে বোধয় সন্তুষ্ট হননি। চোখ-মুখ কুচকে বললো,
“এখান থেকে। সামনে থেকে দেখলে কী হয়?”
“এত মানুষ তো। তাই ভালোমতে দেখতে পারিনি।”
সামনের দিকে এক নজর তাকিয়ে আমাকে বললো,
“নাচ শেষ। এখন সবাই নিলার সাথে ফটো তুলবে। আয়।”
যাবো কী না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। গেলে যদি নিয়নের ভাই দেখে ফেলে। তারপর কী করবে! আল্লাই জানে!
“কীরে? আয়।
তারপরও সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব বক্সে বন্দী করে আকাশ ভাইয়ার পিছনে পিছনে গেলাম। কিন্তু চারপাশে উনার দেখা নেই বলেই বেবলির পাশে দাঁড়ালাম। বেবলি এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো,
“আপা, আমি না তোর গাঁয়ে হলুদে এমন ভাবে নাচবো।দেখিস, গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান আমরাও নিলা আপাদের মতো করবো।”
বেবলির অবুঝ কথাবার্তা শুনে স্মিত হাসলাম। ওদের মতো বারান্দার সাজ ও সাজাতে আমার সামর্থ হবে কী না তাতেও প্রচুর সন্দেহ। কিন্তু নাচের কথা মনে আসতেই বললাম,
“এখন কেন নাচছিস না?সবাই নাচছে তুইও নাচ।”
“ও তো আর আমার আপন আপা নয়। নাচলে মানুষ আমাকে নিয়ে যা তা বলবে।”
“মানুষের মুখ আছে। ওরা তো অনেক কিছুই বলবে। তুই না শুনার ভান করে নেচে ফেলবি।”
“তাও এইখানে নাচবো না।”
ওর এমন কথা শুন”যাহ্”বলেই ধাক্কা দিয়ে নাচের ভীড়ে ফেলে দিলাম। কিন্তু ভাগ্য তার উলটো হলো। ও যাবার সাথে সাথেই নাচ শেষ হয়ে গেল। মুখটা বেজায় বেজার করে আমার সামনে এসে বললো,
“আপা, আমি শুধু তোর বিয়েতেই নাচবো।”

সবাই ফটো তুলায় ব্যস্ত। আমি কী না এই লোকটাকে খুঁজে দেখছি। হায় ভাগ্য!

“দীপ্তি, এ্যাই দীপ্তি।”
পুরো ছাদ খুঁজে দেখছিলাম। নিলার ডাকে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ও হাত দিয়ে বার বার ডাকছে। ভাভারে ভাবা বিয়ের কনেও এই ভাবে চিল্লাইতে পারে। কিন্তু সবাই না পারলেও আমার বান্ধুবি ঠিকই পারে।

“এই ভাবে ছাগলের মতো ভ্যা ভ্যা করছিলি কেন? একবার ডাকলে হয় না বুঝি।” ওর পাশে গিয়ে বসে এই কথা বললাম।
“হু, তুই বোধয় এক ডাকেই শুনছিলি। যাকগে, বাদ দে সেসব কথা। এবার বাংলার পাঁচের মতো চেহেরা না বানিয়ে হাসিখুশি চেহারা রাখ। মুখ দেখলে সবাই ভাববে বিয়ের আগেই তুই জামাই হারা।”

মুখের ভয়ার্ত ভাব দূরে সরে রাখার চেষ্টা করলেও এতক্ষণ পারছিলাম না। কিন্তু নিলার কথায় নিজের চেহেরার এমন মন্তব্যে আমি বড়ই আশাহত হলাম। তাই মুখটাকে স্বাভাবিক রেখে ক্যামেরার দিকে যেই না তাকালাম। দেখলাম ক্যামেরাম্যানের পিছনে আমায় দেখে ডেবিল মার্কা হাসি দিচ্ছেন। উনার এই মুড দেখে মনে হচ্ছে আমায় পেলেই আলু ভর্তা করে খাবেন। হায়!

“আপু, প্লিজ একটু হাসুন। আর কনের গা ঘেঁষে বসুন।”
ক্যামেরাম্যানের কথায় হুঁশ এলেও নিজেকে যথা সম্ভব ঠিক রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু কোনো মতেই পারছি না। ক্যামেরাম্যান যতটা ক্লিক করলো সব গুলোতেই অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম।
“আপু, আপনার হাতে থাকা চশমাটা লাগিয়ে ফেলুন। এতে আপনাকে সুন্দর লাগবে। হয়তো আপনার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে। আর আপনিও দেখতে পারবেন। ক্যামেরা ঐ দিকে নয় এদিকে।”
লোকটার কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হাসিতে বোম ফাটালো। আর আমিও লজ্জায় মিইয়ে গেলাম।পরক্ষণে নজর দিলাম হাতে থাকা চশমাটার দিকে। নিয়নের ভাইয়ের চশমা আমার হাতে। চশমার দিকে খানিক তাকিয়ে উনার দিকে তাকালাম। দেখতে পেলাম ভ্রুযুগল কুচকে আমার দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করছেন। খানিক পর সবার দিকে তাকিয়ে চশমাওয়ালী সেজে ভয়টয় বন্দী রেখে ক্যামেরা দিকে তাকালাম। কিন্তু উনার দিকে তাকালে আবারো ভয়টা এসে ভীড় জমালো।

“আপু, প্লিজ ক্যামেরার দিকে তাকান। এইটা লাস্ট ফটো।”
এই ক্যামেরাম্যান যেন আমায় জ্বালাতান করার জন্য নতুন তৈরি হয়েছে।

“আমি আর ফটো তুলছি না।”
রাগ দেখিয়ে উঠে আসতেই মনে হলো। এখান থেকে বের হলেই আমার জীবনে বাকি তেজপাতাও থাকবে না। তাই আবারো বসে ক্যামেরাম্যানকে জোর করেই কয়েকটা তুললাম। কিন্তু শুধু কি আমিই ফটো তুলবো? না তো। কিন্তু এখান থেকে উঠতেও মন সায় দিচ্ছে না।
“অয়ন এবার তুই আর আমিই ফটো তুলবো।”
হঠাৎ আকাশ ভাইয়ার এই কথাশুনে আমার চেহারায় ভয়ের রেশ কেটে জায়গা করে নিলো এক চিলতে হাসি। যেন মেঘের আড়ালে সূর্যের হাসি।

আকাশ ভাইয়া আর নিয়নের ভাই ফটো তুলায় ব্যস্ত হলেই ভীড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। উনার দৃষ্টিসীমায় আমি বের হলেও উঁকিঝুঁকি বেশ কয়েকবার দেখতে পেলাম উনি যে আমায় আড়চোখে বার বার খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন। উনার প্রত্যেক ফটোই বেশ ভালো হচ্ছে। কী সুন্দর হাস্য উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ফটো তুলছেন! অন্যের চেহারায় ভয়ে ভাব ফুঁটিয়ে নিজেরটায় বেশ আছেন। আরেকবার উঁকি দিয়ে দেখলাম এবার আকাশ ভাইয়ার জায়গায় নিয়ন এসে নিলার পাশে বসেছে। এতক্ষণ পর দুষ্টুমির রাজার দেখা পেলাম। চশমায় দুই ভাইকে একই গ্রহের প্রাণীর বদলে ভিন্ন গ্রহের প্রাণী লাগছে। দুই রকমের দুই চশমা দুজন পড়েছে। কারণ এখনো উনার চশমা আমার হাতে।

নিলাকে আজ ভারি লজ্জাবতী মনে হচ্ছে। লজ্জাবতী গাছের সম্পূর্ণ লজ্জা যেন ওর মধ্যে এসে স্থান পেয়েছে। গাছ হয়ে জন্মানো লজ্জাবতী আর নারীর মধ্যে স্থান পাওয়ায় হয়তো সে ভারি খুশি। একমাত্র বিয়েতেই মনে হয় নারীর যত লজ্জা তা দেখতে পাওয়া যায়।
নিলার কথা ভাবতেই মনে পড়ে গেল আমার ভ্যানিটিব্যাগে রাখা পাপড়ি কথা।ভীড় থেকে কিছু দূরে একপাশে নির্জন দিকে গেলাম। এই দিকটায় কেউ আসবে না। কারণ এটা অনুষ্ঠান থেকে বেশ দূরে। আর এই চিপায় এসে মানুষ কী করবো। আর মতো তো আর তাদের মহৎ কাজ নেই।
তাড়াতাড়ি ব্যাগের চেইন খুলে কাগজে মুড়ানো পাপড়ির দিকে খানিক তাকালাম। তারপর কাগজ খুলে কয়েক খানেক পাপড়ির মধ্যে একটা পাপড়ি তুলে নিলাম। চোখে চশমা পড়ে পাপড়ি হাতের পিঠে রেখে চোখ বন্ধ রেখে, মনে মনে বলতে লাগলাম, হে নবী, মায়ার নবী, আল্লাহ তায়ালেক বলুন আমার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দিতে। তবে ধীরে সুস্থে।
এগুলো বলে যেই না পাপড়িতে ফু দিবো। তখন কারোর শীতল হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম। হাত দিয়ে কে যেন আমার হাত জরিয়ে নিলো। অন্যরকম অনুভূতিতে ছেয়ে গেল আমার শহর।

আচমকা কে যেন আমার চোখের চশমা খুলে নিলো। তড়িৎ গতিতে আমিও চোখে খুলে দেখলাম। নিয়নের ভাই একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখ থেকে চশমা খুলার সাথে নিজের কালো চশমাও খুলে ফেললো। মৃদু হেসে আমার চোখে কালো চশমা লাগিয়ে বললো,
“এই চশমায় আপনাকে বেকুব বেকুব লাগে। আর এই চশমায় বেশ স্মার্ট লাগে। দেখবেন? দেখুন।
বলেই ফোনের ক্যামেরা অন করলো। আমিও ভ্যাবলাকান্তের মতো দেখতে লাগলাম আমাকে কেমন দেখাছে। কালো চশমায় কেমন একটা গুন্ডি গুন্ডি ভাব ফুটে উঠলো। স্ক্রীনে শুধু আমি না আরেকটা মুখ খুব হাস্য উজ্জ্বল দেখা যাচ্ছে ।উনাকেও ফোনের স্ক্রীনে আমার সাথে দেখা যাচ্ছে। দুইজনই কাপলদের মতো করে মনে হচ্ছে সেলফি তুলছি। এই ভাবনা মনে হতে দূরে সরে যেতে চাইলেই,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে