#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রয়োজন পর্বঃ ০৮
লেখায়ঃ তানিয়া তানু
‘চিনি তো এখন আনাটা প্রয়োজন। তো আমি এখনো বেতন পাইনি। তোমার কাছে হবে?’
‘দাঁড়া। শিউলির মা কিছু টাকা দিয়েছিলো সেটা আছে কীনা দেখে আসছি?’
মায়ের টাকা এমনিতেই থাকে না। হয় বাজার আনতে দিয়ে দেন। ন হয় বিথী আর দ্যুতি লুকয়ে মায়ের টাকা নিয়ে চিপস বা চকলেট কিনে। বাবা টমটম গাড়ি চালিয়ে যা পান তার থেকে বেশি প্রতিদিন সুদ দিতে হয় পাওয়াদারদের। তাই মায়ের উপর আমরা প্রত্যেকেই নির্ভরশীল। আমি টিউশনি করে যা পাই তা দিয়ে বেবলির খাতা-কলম আর আমার খরচাপাতিতেই চলে যায়। মাস শেষে তো টানাপোড়নে দিন যায়। এই খরতাপে বাবাও গাড়িতে তেমন যান না। উনার বড্ড বেশী বুকে ব্যথা। সাথে সারাদিন তো কাশি লেগেই আছে।
মা আমার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলেন। আমিও বাইরে গেলাম বিথীর খুঁজে। মূলত বাড়ির পাশে খাটাশ নুরুর দোকানে না বেবলি যাবে না আমি। দোকান থেকে সব প্রয়োজনীয় জিনিস আনবে হয় বাবা নাহয় বিথী। বিথীকে বলে দিলেই সে সব আনতে পারে। বছর তো আর কম হয় নাই। এইবার সাত হবে। বুদ্ধিও বেবলির থেকে বেশি। বেবলির কথা মনে পড়তেই ও যে আমাদের দুর্ভাবনার হেতু তা মনে পড়ে গেল। আমরা সবাই একটা কথাই ভাবি বেবলি কী করে এত অবুঝ হলো? ভাবনার ফলশ্রুতিতে শূন্য ছাড়া উত্তরের ঝুলিতে কিছুই আসে না।
বিথীকে টাকা দিতে রান্না ঘরে থেকে বের হলেই বাতাসে দুলে ওঠা পর্দার ফাঁকে দেখতে পেলাম চিরচেনা সেই মানুষটিকে। যে আমার জীবনে একমাত্র পুরুষ ছিলো। ক্লাস ওয়ান টু থেকেই সে আমার অন্য ছেলেদের সাথে মিশতে দিতো না। মিশতে দেখলেই প্রচুর মারতো। এতটাই মারতো যে পরদিন শরীর কাঁপিয়ে জ্বর চলে আসতো। এতটা যত্নবান দেখে ভাবতাম হয়তো সে ভালোবাসে আমায়। কিন্তু শাহেদা আন্টির কথায় আমার সে ভ্রম ভাঙলো।
বিথীকে টাকা দিয়ে এসে দেখি ভাইয়া এক ধ্যানে আমাদের পাচঁ বোনের ছবিতে তাকিয়ে আছেন। এই ছবিটা বছর পাচেঁক আগেকার। আমাদের সবার প্রিয় একটা ছবি। তাই দেয়ালে টাঙিয়ে দিলাম। যখনই বড় আপার কথা মনে পড়ে তখনই ফটোটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে পুরোনো স্মৃতি গুলো আওড়াই।
‘তো দিনকাল কেমন যাচ্ছে?’ভাইয়ের কথাহ হুঁশ হেলে মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে বললাম, ‘বেশ যাচ্ছে।’
‘শুন, বর্তমানে যে টিউশনিটা করছিস।ঐটা ছেড়ে দিস না। কারণ নিয়ন বেশ দুষ্টু হলেও স্নেহ পেলে ঠিক হয়ে যাবে। তাই নিলা যখন তোর কথা বললো,আমি আর না করিনি। কারণ আমি জানি তুই ওরে সামলাতে পারবি। পরিবারের দুই ভাই আর তিন কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই। আর অয়ন তো সে সময় ডিউটিতে থাকে। অয়নের সামনে তুই কখনো মনে হয় পড়বি না।অয়নও বাজে ছেলে নয়। খুব ভালো একটা ছেলে।’
ভাইয়ার কথা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আমাকে নিয়ে উনি অনেক কেয়ারফুল। কিন্তু কেন এত সচেতন? এই প্রশ্ন শুধু আজ না যতবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, উনার হাবভাবে সেই প্রশ্ন আমার মাথায় বার বার ঘুরেছিলো। হাজার বার চিন্তার ফলশ্রতিতে যা আসে তা যদি উত্তর হয়। তবে রামিসা কে? আমার বেলায় যে সচেতনতা সেটা কী রামিসার প্রতিও?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
‘আবার কই হারালি?’কথা শুনে হুঁশ ফিরে আসায় বলি,
‘যেখানে হারানোর পর সামাজিক কোনো কিছু বিরক্ত করে। যেখানে নিজের ইচ্ছামতো পরিবেশ সাজানো যায়। সেখানেই মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই।’
আমার কথায় কী উত্তর দিবে সেটা মনে হয় ভেবে পেলেন না। তাই তো আর কোনো শব্দ উনার মুখ থেকে শুনা গেল না। কেউই কোনো কথা বলছি না। এখানে যেন রাজ্যের যত নীরবতা আছে সব এসে ভর করেছে। এতক্ষণ মাথা নিচু করেই সব উত্তর দিয়েছিলাম। ঘাড়টা ব্যথায় যেন মরে যাচ্ছে। আমি কল্পনায় শুনতে পাচ্ছি। ঘাড় আমায় বলছে, ‘হেরে দীপ্তি, এবার তো অন্তন্ত মাথাটা তুল। তুই তো আর নতুন কনে নয়। তোর চোখের এত লজ্জা কিসের? প্রেমট্রেম জাগলে সব জলে ফেলে দে। মনে নেই, শাহেদা আন্টির কথা? উনি তো বলেছিলেন, খুব শিগগির রামিসার সাথে আকাশের বিয়ে হবে?তাহলে প্রিয় তুই কেন কাবাবে হাড্ডি হবি?’
ঘাড়ের এই প্রশ্ন শুনেই সহসা মাথাটা উঁচু করে ফেললাম। পরক্ষণেই দু জোড়া চোখ যেন চোখাচোখিতে একাকার হলো। সেই গভীর চোখে দেখতে পেলাম এক অন্য জগত। কিন্তু এই জগত তো আমার নয়। এটা তো রামিসার।
এগুলো ভাবতেই চোখে এলো জলের ধারা। উড়নায় চোখের জল মুছে দৌড়ে চলে এলাম মা-বাবার ঘরে। এসেই বিছানায় হেলে দিলাম নিজের পরিশ্রমী দেহটাকে। শরীর হেলে দেওয়ার কারণেই শুনা গেল নড়বড়ে খাটের খ্যাঁচ করার শব্দ। এই নড়েবড়ে খাটের জন্যই ভাইয়ার বিচরণ আজ আমার ঘরে। ময়লা চাদর,কষে পড়া দেয়াল, চেয়ারের অবস্থা তো আরো শোচনীয়। এই ঘর দেখলেই একটা ভিখারিনী ভিখারিনী ভাব। শুধু ভাব না এইটা মনে হয় চরম শব্দ। নাহলে শাহেদা আন্টি এমন অদ্ভুদ সব কথা শুনিয়ে অপমান করতেন না। ভিখারিনী বলেই অপমান করেছেন। উনার বলা প্রতি কথাই যেন সত্য। আমি মনে হয় বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম যে চাঁদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া আলোর যে তেজ তা হাতগুলো ঝলসে দিতে পারে।
শাহেদা আন্টি ঠিকই বলেছেন, ‘মানুষ যখন বর্তমান অবস্থান থেকে উন্নতি পায়। তখন পিছনে ফেলা সেই অতীতকে আর কখনো ফিরে পেতে চায় না।’ তাই তো উনার ধারণা আমার মতো দরিদ্র এক মেয়ে যদি উনার ছেলের সাথে সম্পর্ক হয় তাহলে এক সময় পরের প্রজন্মের একই সম্পর্ক আমি নাকী কখনো মেনে নিতে পারবো না। হয়তো এই কথাটা সত্যের চরম এক সত্যের মধ্যে পড়ে। তাই সেদিন উনার প্রত্যেক অপমানের জবাবে নীরবে অশ্রু ফেলেছিলাম। সেদিন উনি গর্ব সহিত বলেছিলেন, ছেলে আমার দয়ালু। তাই তো গরীব মানুষকে সাহায্য করতে সে দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু সেই মানুষগুলো এতই অবুঝ যে সব সময় উলটা পালটা বুঝে।
ভ
‘দীপ্তি, তুই এ ঘরে এলি কেন? ছেলেটা কত করে খুঁজলো তরে? দ্যাখ, কার্ড দিয়ে গেল। সামনের সপ্তায় বিয়ে। আমি তো ভাবছিলাম নিলার বিয়েতে কীভাবে কিছু দেবো? হাতে তো কারোর কাছেই টাকা নেই। কিন্তু দ্যাখ, আকাশ দু হাজার টাকা দিয়ে গেল। বললো, ‘বোনের বিয়েতে উপহার কিনে দিয়ে দিতে।’ কত ভালো ছেলে! আমাদের প্রয়োজনটা যেন অতি সহজেই বুঝে পেলে।’
মায়ের কথা শুনে ক্রোধের আগুনে যেন অন্তর জ্বলে যাচ্ছে। শাহেদা আন্টির বলা প্রতিটা কথা ঢোল পেটানোর শব্দের মতো প্রচন্ড জোরে বেজে কানে ব্যথা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই অগ্নি চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে,,,,,
চলবে„„„„„
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন।