প্রয়োজন পর্বঃ ০৭

0
955

#গল্প_পোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা
প্রয়োজন পর্বঃ ০৭

চিঠির বিষয়বস্তু দেখে ক্রোধে আমার চিবুক শক্ত হয়ে গেল। মস্তিষ্কে শুধু একটা কথাই খেলছে, কী লক্ষ্য নিয়ে এই সামাজিক জ্ঞানহীন মেয়েকে দোকানি প্রেমের প্রস্তাব দিলো? সে তো এগুলোর কোনো কিছুই বোঝে না। না বুঝে প্রেম, না বুঝে ভালোবাসা, আর না বিয়ে। সে তো আনন্দ আর খেলা নিয়ে ব্যস্ত। দুনিয়াদারি কিছুই তার মগজে প্রবেশ করে না। তাহলে ঐ দোকানির এই চিঠি দেওয়াতে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নেই তো!

একদিকে আমি এই বিষয় নিয়ে ভেবে মাথা ঘামাচ্ছি। অন্যদিকে বেবলির এখনো মৃদু হাসিতে মত্ত। যা দেখার ফলে সর্বাঙ্গে জ্বালা শুরু হয়ে গেল। ক্রোধান্বিত হয়ে ধমকে প্রশ্ন করলাম,
~আবারও হাসছিস কেন?
উত্তরে অট্টহাসি দিয়ে আমার কানে কানে বললো,
~আপা, চিঠিটা ভালো করে পড়েছিস?
~হ্যাঁ, খুব ভালো করেই পড়েছি। বিরক্তিকর!
~তাহলে এখন বল,নুরু দোকানিকে তোর কী মনে হয়?
~একটা অধম, ছোটলোক, অসভ্য, ইতর,,,,,,
~উহু,আমার কিন্তু এগুলো কিছুই মনে হয়নি।
ওর এই কথা শুনে আবারো ক্রোধের আগুন ধপ করে জ্বলে উঠলো। ঐ অধম লোকটাকে নিয়ে ওর এইসব নেগেটিভ চিন্তা আসেনি মানে? ওর কী তাহলে চিঠিটা ভালো লেগেছে?ঐ পচাঁ ডিমের প্রতি ওর ভালোলাগা আছে নাকি? এত্ত এত্ত প্রশ্ন ওর এক কথায় ভীর জমিয়েছে মস্তিষ্কে। তাই সব প্রশ্ন আড়াল করে সাধারণভাবে বললাম,

~তোর কী মনে হয় নুরু দোকানির সম্পর্কে?
~ঐ নুরু দোকানি আস্ত একটা মুর্খ আর অশিক্ষিত। নাহলে দেখ চিঠিতে এত বানান ভুল থাকতে পারে। আমার নামটারে পুরো স্মৃতি থেকে ইশরিতি বানাইয়া ফেলছেরে আপু। আমি তো ইশরিতি হইয়া গেলাম।

ওর কথা শুনে মনে যেন প্রশান্তির বাতাস বয়ে গেল। ক্রোধের আগুনও নিমিষেই শেষ হয়ে বোনের প্রতি আবারও মায়া জন্মালো।
~আপা, জানিস আমার নাম বিকৃতি করার জন্য দোকানির কী অবস্থা করতে ইচ্ছে করছে। ওর কথায় হুঁশ ফিরে এলো। দেখি ও তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে আমার চোখের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে এই কথা বলছে।
আমারও তো অনেক কিছুই করতে মনে চাইছে। তাই আগে ওর কী ইচ্ছে সেটা জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে বললাম,
~কী করতে তোর মন চাইছে?
~দোকানির লগে মনা আপার বিয়ে দিতে।
~কীহ?
~দ্যাখ, মনা আপার লগে বিয়া দিলে আপাও আস্ত একটা দোকানি আর দোকানের মাল পাইবো। সারাক্ষন গরুর মতো চাবাইতে পারবো। তাই না আপা?
ওর কথা শুনে অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম। মনা, আপা। হ্যাঁ, ঐ মনার আপার সাথেই অধমের মিলবন্ধন যথেষ্ট ভালো হবে।
চিকন আলী+মুটকি বেগম। ভেবেই হাসি পাচ্ছে।
মনা আপার হচ্ছে আমাদের এক প্রতিবেশিনী। সে এতই মোটা যে, যার জন্য এক রিক্সায়ও হয় না। নুরুর তো বিনে পয়সায় চকলেট খাওয়ানোর শখ তা মনা আপারে দিয়াই পূরণ করতে পারবে। মনা আপা তো সারাক্ষণ খায়।

~আপা, তুই এখন হাসছিস কেন?
~তুই যে জন্য হাসছিলি।
হাসার মাঝেই হাতে থাকা চিঠির দিকে নজর গেল। নজর যাওয়াতেই মনে পড়লো নুরুর কথা। চিঠির প্রতি তৈরী হলো একরাশ ক্রোধ। সেই ক্রোধ মেটানোর জন্য চিঠিখানা মুচড়ে বল বানিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম। বেবলির দিকে দৃষ্টি গেলেই তীক্ষ্ণ ক্রোধের দৃষ্টি দিয়ে ধমাকানোর সুরে বললাম,
~আর যদি ঐ অসভ্যর দোকানে যাস। তাইলে ঠেংখোঁড়া করে বাড়িতে রেখে দিবো।
~গেলে কী হবে?
~যাবি না যখন বলছি তার মানে যাবি না। কোনো প্রয়োজন হলে বিথীরে বলবি। বুঝলি।
~হুম।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


দোকানিকে শাসানোর জন্য ঘর থেকে বের হতে মায়ের নজরে পড়লাম। মা আমাকে দেখে বললেন,
~দীপ্তি, এই তো এলি। আবার কোথায় চললি?
~নুরু দোকানিকে শাসাতে।(রাগে)
~কেন? সে কী করলো?(অবাক হয়ে)
~বেবলিরে প্রেমপত্র দিয়েছে। তাই।
~কীহ? ঐটুকু মেয়ে প্রেমের মানে বুঝে কী? ওরে যে চিঠি দিল।
~সেটাই তো? আসছি।
~শুন্ মা, যাস না। তুই নিজেই তো মেয়ে। তোর কথা সে শুনবে না। তোর বাবা গিয়ে খানিক ধমকে আসবে। তুই যাস না।
মায়ের কথা শুনে আমি পুরোই অবাক। মায়ের প্রচুর রাগ হচ্ছে সেটা জানি। কিন্তু এও জানি আজ মেয়ে বলে সেই রাগ প্রকাশ করতে পারছেন না। কারব প্রতিপক্ষের শক্তি অনেক।কিন্তু আমি কিছুতেই থামতে পারছি না। তাই বললাম,
~আমি যাবো মা। আমি গিয়েই ঐ ব্যাটা বজ্জাতে সাইজ করে,,
পুরো কথা শেষ হবার পূর্বেই মা হঠাৎ বললেন,
~আরে আকাশ বাবাজি।

আকাশের নাম শুনে মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি লম্বা গড়নের একটা ছেলে ফুল হাতা কালো রঙের শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পড়ে হাসিমুখে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো আজকালকার ছেলেদের মতো স্টাইলিশ নয়। তবে সিল্কি চুলগুলো রেলিঙে পাশ থেকে আসা বাতাসে এলোমেলো হয়ে আছে। যা অন্যরকম দেখাচ্ছে এই মানবটাকে।

দীপ্তি, এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
ছেলেটার কথায় হুঁশ ফিরে এলো। তবে না এলেই ভালো হতো। এভাবে মায়ের সামনে লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পড়ে কী লাভ হলো।
~কী হলো তোর? বার বার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিস?
তুড়ি বাজিয়ে আবারো হুঁশ আনলো ছেলেটা।এবারো লজ্জায় মরি মরি ভাব। ছেলেটা হলো আকাশ ভাইয়া। নিলার ভাই হওয়ার নিমিত্তে আমারও ভাইয়ের জায়গায় স্থান দিয়েছি। আমার আর নিলার বাড়ি খুব দূরে নয়। আমাদের বন্ধুত্বে বন্ধন সেই ছোটবেলা থেকেই। তাই ভাইয়াও মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। যার ফলে আমার পরিবারের সবাই চিনে। আকাশ ভাইয়া, এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়েন। আমার থেকে বছর পাচেঁক বড়।
ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছু বলার চেষ্টা করছেন। তাই উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম,

~ভাইয়া, হঠাৎ তুমি
~আসতে বারণ বুঝি।
~না। অবেলায় এলে তো।
~নিলার বিয়ের আয়োজনে বাবা আর আমি হিমশিম খাচ্ছি। এই সময় একটু রেস্ট পেলাম। তাই ভাবলাম তোদের ইনভাইটেশন কার্ড দিয়েই আসি।
~আসসালামু আলাইকুম আন্টি। সরি আন্টি, সালাম দেরীতে দেওয়ার জন্য। মায়ের দিকে দৃষ্টি রেখে।
~ওয়ালাইকুমুস সালাম। সেটা সমস্যা না বাবা। তা তোমার বাবা-মা কেমন আছেন?
~সবাই ভালো আছেন, আন্টি। মা খানিক অসুস্থ। তবে সেটা গুরুতর নয়।
~অহ আচ্ছা। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম জানিও। আর তোমরা গল্প কর। আমি একটু আসছি। এই বলেই এই স্থান ত্যাগ করলেন। মা সম্ভবত রান্না ঘরে যাবেন। চা তৈরী করতে। কিন্তু চিনি তো নেই। চা কী করে বানাবেন? তাই আমিও ভাইয়াকে আমার ঘরে বসতে বলে মায়ের পিছু পিছু চলে আসলাম। মা আমাকে দেখেই বললেন,
~কীরে তুই এলি যে?
~মা, তুমি চা বানাতে এসেছো সেটা জানি। কিন্তু চিনি ছাড়া চা বানাবে কিসের?
~চিনি শেষ! দুদিন আগেই তো তর বাবা চিনি আনলো।
~সারাক্ষণ সেলাই মেশিনে ব্যস্ত থাকলে দেখবে কী করে?গতকাল সকালে যে বেবলি আর আমি আমের আচার বানালাম। তুমি তো দুদিন ধরে রান্নাঘরে আসোনি।
~কী করে আসবো। হাতে এত কাপড় সেলাইয়ের দায়িত্ব। সেটা না সেরে আসা যায় কীভাবে?
~সে যাইহোক,চিনি তো এখন আনাটা প্রয়োজন। তো আমি এখনো বেতন পাইনি। তোমার কাছে কিছু টাকা হবে?
~দাঁড়া। শিউলির মা কিছু টাকা দিয়েছিলো সেটা আছে কীনা দেখে আসছি?
মায়ের টাকা এমনিতেই থাকে না। হয় বাজার আনতে দিয়ে দেন। না হয় বিথী আর দ্যুতি লুকিয়ে মায়ের টাকা নিয়ে চিপস বা চকলেট কিনে।অন্যদিকে বাবা টমটম গাড়ি চালিয়ে যা পান তার থেকে বেশি প্রতিদিন সুদ দিতে হয় পাওয়াদারদের। তাই মায়ের উপর আমরা প্রত্যেকেই নির্ভরশীল। আমি টিউশনি করে যা পাই তা দিয়ে বেবলির খাতা-কলম আর আমার খরচাপাতিতেই চলে যায়। মাস শেষে তো টানাপোড়নে দিন যায়। এই খরতাপে বাবাও গাড়ি তেমন চালান না। উনার বড্ড বেশী বুকে ব্যথা। সাথে সারাদিন তো কাশি লেগেই আছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে