#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা
প্রয়োজন পর্বঃ ০৬
লেখায়ঃ তানিয়া তানু
ভয়ের চোটে হঠাৎ বিকট একটা চিৎকার দিলাম। আমার চিৎকার শুনে ঐ লোকটা চলে আসলো। এসেই বললো,
~কী হয়েছে আপনার? আপনি ঠিক আছেন তো?
এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলাম না। শীত বুড়ির মতো টকটক করে কাঁপছিলাম। তখনই লোকটার ফ্লোড়ে পড়ে থাকা নিউজ পেপারে নজর পড়লো। নিচু হয়ে পেপার তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~সামান্য কয়েকটা হরর স্টোরির অনুবাদ দেখে আপনি ভয় পেলেন। আশ্চর্য!
~এগুলো কী ভয়ংকর!
~এগুলো মোটেই ভয়ংকর নয়। যেগুলো ভয়ংকর স্টোরি সেগুলো দেখতে হলে আমার সাথে আসেন। দুজনে মিলে এক সাথে দেখবো। ভালো হবে না?
লোকটার কথা শুনে আমার চোখ তো কপালে। এই লোকটা এমন কেন! আমি ভয়ে ভীত। আর উনি আমাকে নিয়ে ট্রল করছেন। এইগুলো ভাবতেই মুখটা আমার পান্ডুবর্ণ হলো।
~মুখটা এমন করে রেখেছেন কেন? বিশ্রী দেখতে লাগছে। যেন পথে পড়া অসুস্থ ভিখারিনী।
আবারও লোকটার কথা শুনে মাথা উঁচু করে আশাহত চোখে তাকালাম। কিন্তু উনার চেহারায় আমার জন্য কোনো মায়া ছিলো না।
হঠাৎ করে নিয়ন এসে বললো,
~আপু, এই সময়ে আপনার প্রয়োজনে আমি নিজের হাতে লেবুর শরবত তৈরী করে আনলাম। এই নেন।
বলেই আমার দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিলো । কিন্তু আমি একটা কথা বুঝলাম না। এই শরবত আমার প্রয়োজন হবে কেন? তাই জানার জন্য বললাম।
~হঠাৎ শরবত কেন?
~আপনার বিরাট চিৎকার দেওয়ার ফলশ্রুতিতে নিশ্চয় আপনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে? তাই আমার তরফ থেকে সামান্য লেবুর শরবত। প্লিজ টেক ইট।
নিজের আওয়াজে নিজেই এখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লাম। অন্যদিকে উনিও মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছেন। চোখে মুখে যেন বিরাট হাসির ঝলক দেখা যাচ্ছে। আমি চলে গেলেই বোমের মতো সেই হাসি ফাটবে। অন্যদিকে শরবতটাও যেন আমার চোখের সামনে হা করে তাকিয়ে আছে। বারবার সে বলছে, দয়া করে দীপ্তি, আমাকে গ্রহন করো তোমার মুখগহ্বরে । শরবতটার জন্য প্রচুর মায়া হলো। তাই কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসটা নিতে গেলেই হঠাৎ করে এক মহিলার আগমনে তা ব্যাঘাত ঘটলো। তিনি লোকটার দিকে চোখে রেখে বললেন,
~বড় বাবা, দ্যাখো তো, এই মোড়কটা কের?
লোকটা প্যাকেট নিয়ে খানিক পর জিজ্ঞাসা সূচক চাহনিতে নিয়নের দিকে তাকালো। অন্যদিকে নিয়নও মুখটা যেন লুকাতে চাইছে। কিন্তু এতো মানুষের ভীড়ে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় সে বললো,
~আ-স-লে ভা-ই-য়া।
ওর এমন সুরে কথা বলার ভঙ্গি দেখে লোকটা বললো,
~তুই কবে থেকে তোতলা হলি?
~ভাইয়া,,,,,আসলে,,,,,আমি,,,
এইভাবে টেনে কথা বলে দরজার কাছে গিয়েই এক দৌড়ে পালালো এখান থেকে। লোকটাও নিয়ন বলেই থেমে গেল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
কিন্তু আমার কিছুই মস্তিষ্কে ঢুকলো না। এই প্যাকেটই বা কিসের? আর নিয়নই বা পালালো কেন? কিন্তু এই দুই ভাইয়ের কান্ড দেখে আমার গলাটা আবার শুকিয়ে গেল। তাই সহসা গ্লাসে চুমুক দিতে গেলেই তিনি বললেন,
~শরবত কী কোনোদিন খাননি?
এতো বড় কথা শুনে চোখমুখ একেবারে লাল হয়ে গেল। চোখ যেন নদীর বাধঁ ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে আমিও মনের জোরে তা আটকে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। বুকের ভেতরেও যেন চিনচিন ব্যথা অনুভব করলাম। কিন্তু কোনো কিছুই বললাম না। প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে বললেন,
~দেখলেন, এখানে একটা বিষয়ে কথা চলছে। কথাটা বুঝে তারপর না হয়ে শরবত খেতেন। তার আগেই চুমুক দিতে গেলেন কেন?
~_______
~আমি জানি, আপনি আমার কথায় কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু আমি এটাও খুব ভালো করে জানি আমার ভাই প্রচুর দুষ্টু। ওর দুষ্টুমি সহ্য করতে না পেরে ত্রিশজন টিউটর নালিশ করেছে। কিন্তু আমি কোনো কিছুই করতে পারেনি। কারণ ও আমার একমাত্র ভাই। তাই আগেই বলেছি, ওর সাথে বেশি কথা বলবেন না। সে যাইহোক, শুনুন, ও শরবতে পেট খারাপের ঔষুধ মিশিয়েছে। যার খেলে বারবার বাথরুমে আসা যাওয়া করা লাগবে।
এতক্ষণ লোকটা প্রত্যেক কথাই মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। কিন্তু শেষ বাক্য শুনে আমি বাকরুদ্ধ। এতটুকু ছেলে আমার সাথে এই খেলাটাই খেলতে চাইছিলো ভেবেই যেন অবাকের শীর্ষে পৌছালাম।
এতক্ষণ নীরব দর্শকের মতো আমার বাক্যালাপ শুনছিলেন ঐ মহিলা। কিন্তু আমার অবস্থা দেখে বললেন,
~তুমি আমার লগে আও মা।
ব্যাগ নিয়ে মহিলাকে অনুসরণ করলাম। তিনি রান্নাঘরে আমায় নিয়ে গেলেন। সেখানে একটা টুল দেখিয়ে বললেন,
~টুলে বও। তোমারে টুল দেওয়ার লাইগা কোনো কিছু মনে নিও না। তোমার কাপড় দ্যাইখাই আন্দাজ করা যায় তুমি তেমন বড় লোকের মাইয়া না। তাই ভাবলাম এই রান্ধন ঘরে আইন্না তোমার লোগে একটু গপ্পসপ্প করি।
গল্প! তাও আবার আমার সাথে। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। মনে হয়, উনি আমার সাথে কোনো বিষয়ে কথা বলতে চান। তাই উনাকে বললাম,
~কী গল্প?
~আমি জানি তুই বড় বাবার কথায় রাগ করেছিস। বড় বাবার এমনই। পেটে কথা রাখতে পারে না। তাই তরে আগে ওমন কইরা কইছে। তুই রাগ করিস না। ছোট বাবা বেশি দুষ্টামি করে। কারণ বড় বাবা পুলিশ হওয়ায় তার অনেক শত্রু-টত্রু আছে। এর লাইগা ছোট বেলায় থাইকাই ছোট বাবারে বন্দী কইরা রাখছে। কারোর লগে খেলতে দেয় না। বড্ড ভয় পায়। আর ছোট বাবা কারোর সঙ্গি পায় নাই বলেই সব টিউটরদের লগে ওমন দুষ্টামি করে। তুই কিছু মনে নিস না মা।
~আচ্ছা। তা আন্টি আমি এখন আসছি।
~যা।
যাবার সময় দেখলাম লোকটা প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও মুখ ভেংচি দিয়ে চলে আসলাম।
বাসায় এসে দেখি বেবলি জানার পাশে বসে মিটমিট করে হাসছে। হাসার কারণ জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম,
~বেবলি, তর কী হয়েছে? এই অসময় হাসছিস ক্যান?
~আপা আমার কিছু হয়নি। তবে নুরু দোকানির মনে হয় কিছু হয়েছে?
কিসের মধ্যে কী? পান্তা ভাতে ঘি। আমার কাছে বেবলির উত্তর এমনি মনে হলো। আমাদের বাড়ির পাশে একটা দোকান আছে। ঐখানে মাঝবয়সী এক ছেলে বসে। এই দোকানটাই তার। কিন্তু ও কেন বেবলির উত্তরে আসবে। তা ভেবে পেলাম না। তাই উৎসুক হয়ে বললাম,
~এখানে নুরু দোকানি কোথেকে এলো?
~দোকানি তো আসবেই। কারণ ঐ দোকানিই তো আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছে।
কতটা হীন মন-মানসিকতা হলে ওর মতো এত ছোট সহজ-সরল মেয়েকে কেউ প্রেমপত্র দিতে পারে তা ভেবেই আমার চোখ কপালে উঠলো। তাই আগ্রহ সহকারে বললাম,
~যদি চিঠি দিয়ে থাকে তাহলে সেটা কই?
~এই তো।
~দেখি দে আমার হাতে।
~এই নে। বলেই একটা রঙিন কাগজ হাতে ধরিয়ে দিলো। আমি চিঠি খুলে পড়তে লাগলাম।
পিয়ো ‘ইশরিতি’
ভালা আছোনী। জিবনে পথম আমি কাউরে চিটি লেখসি। আর হেইডা অইছোগা তুমি। তোমারে দিসি কারণ আমি তোমারে ভালা পাই। তোমার ওই বড় বড় চোখ আমার অন্নেক ভাল্লাগে। তুমিও দেখতে অন্নেক শুন্দর। হুন্ তুমি কালকে আমার দোহানে দুই বেনী নারাইতে নারাই আও। আমি তহন চাইয়া খাকি তোমারে দেখি। প্রত্তেকদিন আইয়ো। তোমারে মেলা শকলেট দিমুনে।
আচ্চা আইজকা রাখি। আর না। অন্যদিন দিমুনে। আবারো কইতাসি ভালা থাইকো।
ইতী তোমার পেয়ারি
‘নুরু মিয়া’
চলবে„„„„„