প্রেরক: নুসরাত জাহান লিজা – প্রিয় কিশোর পাশা,

0
503

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং: ২
প্রেরক: নুসরাত জাহান লিজা

প্রিয় কিশোর পাশা,
কেমন আছো? জানি রহস্যের গন্ধ পেলে তুমি ভালোই থাকো। তবুও জিজ্ঞেস করলাম, কারণ তোমার জন্য লেখা এটাই আমার প্রথম চিঠি। রবিন, মুসা, জিনা, রাফিয়ান, মেরী চাচী, রাশেদ চাচা সবাই ভালো আছে তো?
যাক, সূচনা তো শেষ হলো, এবার সবিস্তারে বর্ননা দেবার পালা। তোমাকে যেহেতু লিখছি ই, তোমার সাথে আমার পরিচয় পর্বের কথাটাও নাহয় বলি। আমি তখন সবে ফোরের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে ফাইভে উঠার জন্য প্রস্তুত। রূপকথা আর কমিকসের গন্ডি পেরিয়ে দুই একটা বই কেবল পড়েছি। বাড়িতে বইয়ের বিশাল সংগ্রহের মাঝে নিজের পড়ার উপযোগী বই পাচ্ছিলাম না। আমার আবদার পূরণ করতেই যেন দাদু আমার হাতে তুলে দিলেন ‘তিন গোয়েন্দার ভলিউম এক’। বইটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখছিলাম মনে পড়ে এখনো।
প্রথমে গল্পটাতেই তোমাদের গোয়েন্দা দলের নামকরণ করা, কার্ডে সেই আশ্চর্যবোধক চিহ্ন সব মিলিয়ে বুঁদ হয়ে যাই। টেরর ক্যাসল রহস্য উদঘাটনে তোমাদের সাথে সাথে আমিও কখন সামিল হয়ে যাই বুঝতেই পারিনি! এরপর তো আরও কত-শত রহস্যের কিনারা করেছো তা আর নাইবা বললাম। তবে প্রতিটি মুহূর্তে তোমাদের সাথে কিন্তু আমিও ছিলাম, সশরীরে না থাকি আত্মিক ভাবে সবসময় ছিলাম।

পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে তোমাদের হেডকোয়ার্টারের সবগুলো প্রবেশপথ চেনা ছিল, সেই আমেরিকার কল্পিত শহর রকি বীচ কবেই আপন হয়ে গিয়েছিল!

তোমার চিন্তিত হয়ে নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটা, সাথে মূসার খাওয়ার গুণ আর ভাঙা বাংলায় ‘খাইছে’ বলাটা খুব উপভোগ্য ছিল। রবিনের বই পড়ার গুণটা আমার সাথে মিলে যেতো। তোমাদের সাথে সাথে বেদুঈন বৈমানিক ওমর শরীফ কিংবা খুঁড়া গোয়েন্দা ভিক্টর সায়মন, হ্যানসন, বরিস, রোভার আরও বাকি সবাই যে কতটা কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছিল, সেটা নাইবা বললাম! সবার নাম বলতে গেলে হয়তো চিঠিতেই কুলাবে না। তবে দুটো নাম না বললেই নয়, শুটকি টেরি ওরফে টেরিয়ার ডায়েল আরেকজন ফগরেম্পারকট ওরফে ঝামেলা! এরা তোমাদের পিছু লেগে থাকত বলে তোমাদের সাথে সাথে আমারও শত্রুতে পরিনত হয়েছিল।
অনেক নতুন কিছু শিখেছি তোমার কাছ থেকে, পেয়েছি ‘ভূত থেকে ভূতে’র মত অভিনব কৌশল!
এতটা নেশা হয়ে উঠেছিলে যে পাঠ্য বইয়ের নিচে লুকিয়ে কত যে পড়েছি, সেটার কোন হিসেব নাইবা দিলাম। ফাইভে পড়ার সময় ধরা পড়ে জীবনে একমাত্র এবং প্রথম বার মার খেয়েছিলাম, পরের দিন দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা ছিল বলে! এরপরও সহস্রাধিক বার এই কাজটা করেছি। কী ভীষণ স্মৃতিকাতরতায় যে আক্রান্ত হচ্ছি এই চিঠি লিখতে বসে!

কৈশোর পেছনে ফেলে এসেছি সেই কবে, এরপর আরও কত-শত বইয়ের কত চরিত্র মনে গেঁথেছে, তবুও প্রথম ভালোবাসা তুমিই ছিলে! আমার জীবনে তোমার আবেদন তাই একদমই আলাদা। কারণ তুমি আমার প্রথম প্রেম। আমার কৈশোরকে এতটা রঙিন করার জন্য তোমার একটা বিশাল ধন্যবাদ প্রাপ্য। সেইসাথে একটা বিশাল ধন্যবাদ প্রিয় ‘রকিব হাসান’কে, তোমার মতো একটা চরিত্র সৃষ্টি করার জন্য। তোমার কাছে অনুরোধ থাকলো, আগের মত অভিনব আর কৌশলী থাকো, এখনকার বইতে নিজেকে এলোমেলো করো না।

কল্পিত রকি বীচের পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড এতটা জীবন্ত ছিল যে, মনে হতো সত্যিই বুঝি এর অস্তিত্ব আছে। মনে হতো বড় হয়ে একদিন ঠিক খুঁজে বের করব তোমাকে আর তিন গোয়েন্দায় যোগ দেব। জিনা যুক্ত হবার পরেও তিন গোয়েন্দাই নাম ছিল, তো আরেকজন সদস্য বাড়লেও তাই থাকবে জানি, কোন এক বইতে বলেছিলে তুমি! ভলিউম ৬৭ পর্যন্ত প্রায় দুইশটির মতো কতবার করে যে পড়েছি! তোমাকে এরকমই দেখতে চাই জন্য পরেরগুলো আর পড়িনি।

এত লম্বা চিঠি পড়ার হয়তো ধৈর্য্য থাকবে না তোমার, তাই আর বড় করব না। আরও কত সহস্র কথা যে আছে তোমাকে বলার, সেটা নাহয় অন্য কোনদিনের জন্য তোলা রইলো। এতটা রঙিন কৈশোরে উপহার দেবার জন্য আরেকবার ভালোবাসা নিও, হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত ভালোবাসা।
ইতি,
তুমি যার প্রথম প্রেম
প্রথম ভালোবাসা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে