প্রেম ২ পর্ব-০৫

0
1064

#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

এবার জীম মিষ্টিকে একটা পার্কে নিয়ে আসে।

“এখানে চারপাশে তাকিয়ে দেখো শান্তি খুঁজে পাবে। অবশ্য তুমি তো ক্লাস রুমে শান্তি পাও তো এখানে নাও পেতে পারো।

” এটা কোনো জায়গা হলো। আগেও এসেছি বাপির সাথে। একদম ভালো লাগে না

জীম মিষ্টিকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বসে

“তোমার প্রিয় খাবার কি?

” চকলেট আইসক্রিম বার্গার স্যান্ডউইচ এগুলো

“ফুসকা চটপটি?

” এসব খেতে বাপি বারণ করছে। এগুলো হেলদি খাবার না।

“আচ্ছা। চলো আজ তোমায় ফুসকা খাওয়াবো

” না আমি খাবো না
জীম মিষ্টির কথায় পাত্তা দেয় না

“মামা বেশি করে ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুসকা দাও তো

জীম পাশে থাকা ফুসকাওয়ালাকে বলে।

” আমি ঝাল খায় না

“আজ খাবি

” পাগল আপনি

“হুমম

ফুসকাওয়ালা ফুসকা দেয়। মিষ্টি হাতে নিয়ে বসে আছে। জীম একটা ফুসকা নিজের মুখে পুরে বলে

” জীবনে সব কিছুর দরকার আছে। সব পরিস্থিতির সাথে পরিচিত থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে বাবা মায়ের কথার বাইরেও যেতে হয়। নিজের মতো করে লাইফটাকে এনজয় করতে শিখতে হয়। তবেই তো জীবনের আসল মজাটা উপলব্ধি করা যায়

“আমার এসবের দরকার নেই

” অবশ্যই আছে। আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হলে

“এক্সকিউজ মি আমি কখনোই আপনার গার্লফ্রেন্ড হতে চায় নি। প্রেম ভালোবাসা এসব আমার জন্য না। আমার জন্য শুধুই বই। আমার ফিউচার ব্রাইট করা একমাএ উদ্দেশ্য। আমি জীবনে কিছু করতে চায়। তাছাড়া আপনার মতো একটা বখাটে ছেলের সাথে আফরা ইবনাত মিষ্টি কখনোই ভালোবাসতে পারে না। আপনার তো কোনো ফিউচার প্লানই নাই। গাঁজা খোর একটা। আপনার সাথে আমার যায় না

জীম একটু হাসে। তারপর একটা ফুসকা মিষ্টির মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে

” মন থেকে তাকিয়ে দেখ এই বখাটে টাকেই ভালোবেসে ফেলবি

মিষ্টি ঝালে শেষ। কোনোরকমে ফুসকাটা গিলে ফেলে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঠোঁট নাক লাল হয়ে গেছে। পানি পানি করছে। জীম মধু খাইয়ে দেয়। ঝাল কমে যায়। আসলে আসার সময়ই জীম মধু নিয়ে এসেছিলো।

“আমি এখুনি বাসায় যাবো

” আমি না চাইলে যেতে পারবি না

“হুমম সেই জন্যই নিয়ে যেতে বলছি।

একটা মেয়ে আসে

” জীমমম

“তুমি

” তুমি এখানে। কাল মিট করার কথা ছিলো তুমি আসলে না কেনো? জানো কতো খারাপ লেগেছে আমার

মেয়েটা অভিমানের সুরে বলে। মিষ্টি তাকিয়ে দেখছে

“সরি বেবি বিজি ছিলাম

” আজ ফ্রি আছো

“কাল মিট করবো।

” ঠিক আছে। কল কিন্তু রিসিভ করবা

“ওকে

” লাভ ইউ

“লাভ ইউ টু

মেয়েটা চলে যায়। মিষ্টি অবাক হয়ে জীমের দিকে তাকিয়ে আছে

” হোয়াট

“এটা আপনার গার্লফ্রেন্ড?

” হুমমম

“তাহলে আমাকে কেনো প্রপোজ করলেন?

” ও আমার গার্লফ্রেন্ড ভালোবাসার মানুষ না

“এক ই তো

” এক না। প্রেম আর ভালোবাসার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ও আমার টাইমপাস আর তুই ভালোবাসা

“আমি বাসি না

” ওহহ রিয়েলি

“ইয়াহহ

” যদি ভালো না বাসিস তাহলে আমার সাথে এখানে কেনো আসলি? আমি তোকে এতো বিরক্ত করার পরেও তুই কেনো তোর বাপির কাছে কমপ্লেন করলি না? আমাকে ভয় পাস বলে

মিষ্টি বোকা বনে যায়। সত্যিই তো কেনো কোনো স্টেপ নিচ্ছে না মিষ্টি

“এতো ভাবতে হবে না। তুই আমাকে ভালোবাসিস কি না জানি না বাট তোর আমাকে ভালো লাগে মারাক্তক ভালো লাগে

” ইম্পসিবল। আপনার মতো ক্যারেকটার লেছ বখাটে ছেলেকে কখনোই আমার ভালো লাগতে পারে না

“ঠিক আছে। ভালো না লাগলে আর কি করার। জোরই করতে হবে। চল

মিষ্টি বাইকের বসে আছে। জীমকে মিষ্টির একটু হলেও ভালো লাগে। কিন্তু মিষ্টি সেটা স্বীকার করবে না

“একটা কথা বলি

” বল

“সবাইকে তুমি করে বলেন আর আমাকে তুই কেনো?

” সবাই তো আর তুই না

মিষ্টি আর কিছু বলে না।

জীম মিষ্টিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। একটা কথাও বলে না। মিষ্টি রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে তারপরই বাবা মা ভাই চলে আসে। ওদের সাথে একটু আড্ডা দেয়। তারপর মায়ের সাথে রান্না করতে যায়। মিষ্টির ইচ্ছে আজ খিচুড়ি রান্না শিখবে। মিষ্টির মা ও আর না করে না।

রান্না করতে গিয়ে গরম পাতিলে মিষ্টির হাত লেগে যায় বেশ খানিকটা পুরে যায়। মিষ্টি আড়াল করে ফেলে। মা দেখতে পেলে ব্যস্ত হয়ে পড়বে আর বাপি দেখলে মাকে বকবে। সব মিলিয়ে একটা অশান্তির সৃষ্টি হবে। তাই আড়াল করে যায়।

রান্না শেষে রুমে এসে গোছল করে টুল টেনে বেলকনিতে বসে। হাতের পোরা জায়টা দেখতে থাকে। এখনো জ্বলছে।

জীম রুমে এসে দেখে মিষ্টি গভীর মনোযোগ দিয়ে হাত দেখছে।

“নিশ্চয় হাত কেটেছে। নাহলে এভাবে দেখবে কেনো?

জীম এগিয়ে যায়। দেখে হাত পুরে গেছে। জীম মিষ্টির হাত ধরে। মিষ্টি চমকে তাকায়

” হাত পুরলো কিভাবে?

“রান্না করতে গিয়ে

জীম মলম নিয়ে আসে। তারপর মিষ্টির হাতে মলম লাগাতে লাগাতে বলে

” কি রান্না করলি

“খিচুড়ি

” যা আমার জন্য নিয়ে আয়

“এখন

” হুমম যা

মিষ্টি আমতাআমতা করছে

“‌যেতে বলছি

মিষ্টি যায়। লুকিয়ে খিচুড়ি নিয়ে আসে। জীম ততোখনে মিষ্টির রুমে চলে এসেছে। মিষ্টির খাটে বসে আরাম করে

” এই যে নিন

মিষ্টি জীমের সামনে খাবারের প্লেট নামায়। দরজা বন্ধ করে দেয়। জীম মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করে। প্রচন্ড ভালো হয়েছে খিচুড়ি টা। পরম তৃপ্তিতে জীম খাবারটা শেষ করে। মিষ্টি তাকিয়ে দেখছে

“কেমন হয়েছে?

” আমার জান রান্না করলো সেটা কি খারাপ হতে পারে

মিষ্টি মুচকি হাসে। জীম হাত ধুয়ে মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে

“সকালেও তুই আমাকে প্রচন্ড ভয় পেতিস কিন্তু এখন ভয় পাচ্ছিস না কেনো?

মিষ্টি নিজেও বিষয়টা ভেবে দেখেছে। সত্যিই এখন আর জীমকে ভয় করে না। কিন্তু কেনো?

জীম মিষ্টির হাত ধরে টান দিয়ে মিষ্টিকে পাশে বসিয়ে দেয়

” বল

“এমনিতেই

” মিষ্টি মিথ্যে বলা ভালো না তোর বাবা তোকে বলে নি?

“আমি মিথ্যা বলছি না

” ভয় করে না

“সত্যি বলতে এখন আর ভয় করে না

” তাহলে

“আপনি তো লেজ ছাড়া বাঁদর ভয় কেনো পাবো

বলেই মিষ্টি খিলখিল করে হেসে ওঠে। জীম মুগ্ধ নয়নে দেখে।
” প্রেমে পড়লে না কি প্রেমিকার হাঁচি ও গানের সুরের মতো মনে হয়”
জীমেরও সেই অবস্থা হয়েছে।

“যদিও আমি মানি কারো প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হওয়া পতনের লহ্মণ তবুও কেনো জানি বারবার নেশায় পড়ে যায়

জীমের কথা মিষ্টি হাসি বন্ধ করে।

” একটা কথা বলবো

“বল

” নাহহ কিছু না

“কিছু। বল

” পরে বলবো

“এজ ইউআর উইস

” মিষ্টি

মিষ্টির বাবা দরজায় নক করে ডাকে। মিষ্টি চমকে ওঠে

“বাপি এসেছে প্লিজ যান

” জানন

“চলে যেতে বলছি

” ভাবছি শশুড় মশাইয়ের সাথে কথা বলে যাবো

জীম খাটে সুয়ে বলে

“প্লি প্লিজ প্লিজ যান

” যেতে পারি একটা শর্তে

“কি

” প্রতিদিন একঘন্টা সময় আমাকে দিতে হবে

“ইম্পসিবল

” যাবো না

“ঠিক আছে

” আমার কিউটি ফিউচার বউ

জীম ঠাস করে মিষ্টির কপালে একটা চুমু দিয়ে বেলকনি দিয়ে লাফিয়ে চলে যায়। মিষ্টি বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে চুল ঠিক করে দরজা খুলে

“এতোখন লাগলো

” সরি বাপি ওয়াশরুমে ছিলাম

“ইটস ওকে সোনা। খেতে আসো

” তুমি যাও আমি এখুনি আসছি

“ওকে

বাপি চলে যায়। মিষ্টি বেলকনির দরজা বন্ধ করতে যায়।

” এই যে ফুলটুসি

মিষ্টি তাকিয়ে দেখে জীম বেলকনির দরজায় দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

“আপনি

” কখন সময় দিবি সেটা তো বললাম না। তাই আবার এলাম

“😡

” প্রতিদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় আধঘন্টা আর কলেজে যাওয়ার সময় আধঘন্টা। এই হলো একঘন্টা। আর রাতে তো ফ্রি

“কিন্তু আমার কোচিং আছে

” কিচ্ছু করার নাই ডার্লিং। প্রেম করতে গেলে তো পড়ালেখা একটু কমিয়ে দিতেই হবে। তাই না সুইটহার্ট

জীম মিষ্টির কথা না শুনে চলে যায়

“এবার কি করবো? এই পাগল কে কি করে বোঝাবো। লেজ ছাড়া বাঁদর একটা। লাইফটা শেষ করে দেবে।

মিষ্টি খেতে চলে যায়। খেতে গিয়ে মিষ্টির মেজাজবিগড়ে যায়। সব বিরক্ত এক সাথে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে