#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana (Writer)
“গায়ে হাত দেওয়া আমার পছন্দ না
চোখ মুখ শক্ত করে বলে মিষ্টি। জীম এতোখন আলতো করে হাত ধরেছিলো মিষ্টির কথা শুনে শক্ত করে ধরে।
” আমার আবার খুব ভালো লাগে
জীম বাঁকা হেসে বলে। তিথি বেশ ভালো বুঝতে পারছে মিষ্টি রেগে যাচ্ছে। মিষ্টি রেগে গেলে বাবার কাছে কমপ্লেন করবে আর মিষ্টির বাবা জীমকে উওমমাদ্ধম দেবেন
“জীম ছেড়ে দাও না প্লিজ
তিথি অনুরোধের সুরে বলে। জীম অন্য হাত দিয়ে তিথির মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে মুচকি হেসে বলে
” ছেড়ে দেবো বাট ওকে আমার পাশেই বসতে হবে
মিষ্টি বড়বড় চোখ করে জীমের দিকে তাকায়। জীম বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে
“কি বলেছিলাম ভুলে গেছিস? এভাবে তাকাতে না করছি। আমার নেশা নেশা লাগে। আর নেশার ঘোড়ে আমি অনেক কিছু করে ফেলতে পারি
বাস আবার স্টাট দেয়। মিষ্টি ধাপ করে আগের জায়গায় বসে। জীমও মিষ্টির পাশে বসে।
জীম মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বাসের জানালা খোলা তাই মিষ্টির চুল গুলো উড়ে জীমের মুখের ওপর পড়ছে। জীম চোখ বন্ধ করে মিষ্টির চুলের ঘ্রান নিচ্ছে।
বাস কন্টাকটার বাসের ভাড়া নিচ্ছে।
মিষ্টি ভাড়া দেয় কিন্তু কন্টাকটার ভাড়া নেওয়া তো দুরে থাক মিষ্টির দিকে তাকাচ্ছেও না
” আজিব তো কখন থেকে টাকা দিচ্ছি নিচ্ছেন না কেন?
“আপনার ভাড়া দেওয়া হয়ে গেছে
” মানেনননন
“ফুলটুসি আমি দিয়ে দিয়েছি
মিষ্টি জীমের দিকে তাকায়। জীম ইশারায় বসতে বলে। মিষ্টি আর কথা বাড়ায় না
এইটুকু সময়ে মিষ্টি যা বুঝেছে জীম সম্পর্কে সেটা হলো জীম কথা শোনার ছেলে না। আর মিষ্টির কথার কেউ দাম না দিলে মিষ্টির ইগোতে বাধে। মিষ্টির মতে মুখের একটা কথার দাম অনেক।
মিষ্টি এসব ভাবছে
” টাকাটা দিয়ে দিতে হবে লোকটাকে। কিন্তু সাধলে তো টাকা নেবে না তাহলে? এতো এখন চোখ বন্ধ করে আছে এখন পকেটে ঢুকিয়ে দেয়
যেই ভাবা সেই কাজ। মিষ্টি টুক করে জীমের পকেটে একশো টাকার একটা নোট ঢুকিয়ে দেয়। ভাড়া হলো বিশ টাকা কিন্তু মিষ্টির কাছে ভাংতি টাকা নাই। তাই একশোই দিলো। যদিও মনের মধ্যে খচখচ করছে আশি টাকার জন্য। চার দিন ভাড়া দিতো পারতো। মিষ্টি মন খারাপ করে বই বের করে।
জীম বুঝতে পেরেছে জীম টাকা দিয়েছে কিন্তু জীম কিছু বললো না। কারণ জীম এটাই চাইছিলো মিষ্টি ওকে টাকা দিক।
কলেজের সামনে এসে বাস থামে। মিষ্টি তারাহুরো করে নামছে
“তিথি তাড়াতাড়ি চল। ক্লাস মিছ হয়ে যাবে
” এই ফুলটুসি পড়ালেখা তো কতোই করলে এবার বখাটেটার দিকে নজর দাও
মিষ্টি বাস থেকে নেমে বলে
“বাপি পারমিশন দিলে নজর দেবো
মিষ্টি মুচকি হেসে চলে যায়।
জীম এই প্রথম মিষ্টির হাসি দেখলো। অপূর্ব লাগে হাসলে মেয়েটাকে। জীবনে অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করোছে কাছ থেকে দেখেছে কিন্তু মিষ্টির মতো কাউকে দেখে নি।
” কি হচ্ছে আমার সাথে এটা? এই ফুলটুসি দেখি আমাকে জাদুটাদু করে ফেলবে।
এসব ভাবতে ভাবতে বাস থেকে নামে।
“মে আই কাম ইন স্যার
ইফাদ মিষ্টির আইসিটি স্যার। আজ মিষ্টির দশ মিনিট লেট হয়েছে। স্যার পড়ানো শুরু করেছে।
” আরে মিষ্টি আজ লেট। কখনো হয় না
মিষ্টি ছিটে বসতে বসতে বলে
“বাসের জন্য লেট হলো
” আচ্ছা
মিষ্টি আর তিথি বসে। স্যার পড়ানো শুরু করে। তিথিও সুন্দর ভাবে পড়া দেয়
পড়া শেষে ক্লাস করে। সব শেষে মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছে বসের জন্য বাসায় যাবে। তিথি বফের সাথে মিট করতে গেছে। জীম কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টির থেকে খানিকটা দুরে। বাস আসলে আবার মিষ্টির পাশে বসবে। বাইকটা জীমের সাঙ্গ পাঙ্গদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে মিষ্টির মোটেও ভালো লাগছে না। কিন্তু বাসের খবর নেই। এখন এতো আমাদের এখানকার বাসের অবস্থা। যখন থাকে দুই তিনটা একসাথে থাকে যখন থাকে না একটাও থাকে না।
জীম কখন এভাবে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে নি। আজ থাকছে মিষ্টির জন্য। কড়া রোদ ও জীমের খুব ভালো লাগছে।
“মিষ্টি
মিষ্টি পেছনে তাকিয়ে দেখে ইফাদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” স্যার আপনি
“হুমম চলো ড্রপ করে দিচ্ছি
” না না ইটস ওকে
“বাপি রাগ করবে না বরং খুশি হবে
ইফাদ মুচকি হেসে বলে। মিষ্টি আমতাআমতা করছে
” তাহলে কি তোমার বাপিকে ফোন করবো
ইফাদ পকেট থেকে ফোন বের করতে যায়। মিষ্টি আটকিয়ে বলে
“না না থাক
“তাহলে চলো
ইফাদ মুচকি হেসে ফোন রেখে যায়।
মিষ্টি ইফাদের কাঁধে হাত রেখে বাইকে ওঠে
” যাওয়া যাক
“হুম
মিষ্টি কে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে জীমের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। তারপর মিষ্টিকে লোকটার বাইকে উঠতে দেখে জীম হাত মুঠ করে ফেলে।
” কাজটা ঠিক করলে না ফুলটুসি। এই ছেলেটারে তো জানে মেরে দেবো।
জীম রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।
“মিষ্টি
বাইক চালাতে চালাতে বলে ইফাদ।
” হুম
ইফাদ কিছু বলছে না। একটু আগে কড়া রোদ ছিলো কিন্তু এখন শিতল হাওয়া বইছে। রোদের আঁচ বেশ খানিকটা কমেছে। দুইধারে গাছ মাঝখানে রাস্তা। নির্জন। মাঝেমধ্যে দুই একটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে।
ইফাদের খুব ভালো লাগছে। ইফাদের মনে হচ্ছে সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো।
মিষ্টির কেমন কেমন লাগছে। যদিও মাঝেমধ্যেই ইফাদের বাইকে আসে। ইফাদ মিষ্টির বাবার খুব পছন্দের একজন মানুষ। মিষ্টি মনে মনে ভাবছে রাস্তাটা কি আজ একটু বেড়ে গেলো না কি? কখন পৌছাবো আর কখন বাইক থেকে নামবো।
অবশেষে বাড়ি পৌছে যায়। মিষ্টি লাফ দিয়ে নামে
“মিষ্টি বাসায় যেতে বলবে না
ইফাদ লোকটা বেশ খানিকটা গায়ে পড়া। নিজে নিজেই বাড়ি যাওয়ার কথা বলছে। যদিও মিষ্টির ওনাকে বাড়ি নেওয়ার বিন্দু মাএ ইচ্ছে নেই তবুও ভদ্রতার খাতিরে বলে
” কেনো নয় চলুন
ইফাদ হেলমেট বাইকে রেখে চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে হাঁটা শুরু করে। মিষ্টি পেছন পেছন যায়।
লান্স করে ইফাদ চলে যায়।
মিষ্টি রুমে বসে পড়ছিলো কিন্তু কারেন্ট চলে যায়। প্রচন্ড গরম পড়েছে।
“মিষ্টি ছাঁদে গিয়ে পড়ো। এখানে গরম
মায়ের কথায় মিষ্টি দুইটা বই নিয়ে ছাঁদে চলে যায়। বাসা থেকে মুরা নিয়ে যায়। একটা বই রেলিংয়ের ওপর রাখে আর একটা বই হাতে। চুল গুলো ছাড়া। পরনে হালকা গোলাপি টিশার্ট আর কালো স্কার্ট।
জীম ছাঁদে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো। এই সময়টা জীম ছাঁদে কাটায়। জীমের মতে পড়ন্ত বিকেলে সিগারেট খেতে খেতে সূর্য ডোবা দেখার মজাই আলাদা।
” খুব সাহস তোর তাই না
মিষ্টি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখে জীম দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। জীমকে দেখে মিষ্টির হাত পা কাঁপছে
“আআআপনি
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মিষ্টি
” তুই কি ভেবেছিস আমার বাইক নেই? আমার Suzuki বাইক। আমার বাইকের মডেল দেখছোস তুই? শুধু এই এলাকা কেন পুরো দশ বারোটা এলাকায় আমার বাইকের মতো কারো বাইক নেই
জীমের কথা শুনে মিষ্টির ভয়টা অবাকে পরিবর্তন হয়। এই ছেলেটা কি পাগল? আপনাআপনি মনে মনে প্রশ্নটা জাগছে
জীম মিষ্টির সামনে রেলিংয়ের ওপরে বসে পড়ে
“দেখ আমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি এবং বলি। আমি সিগারেট খায় মদ খায় গাঁজাও খায় মাঝে মাঝে। সাড়ে নব্বইটা এক্স আছে। পেজেন্ট গফ আছে বারোটা। বাবা আমাকে দেখতে পারে না। সয্য করতে পারে না। পড়ালেখা করি বলতে পাশের ছিটের মেয়েরটা দেখে লিখে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠছি। এখন কথা হলো। আমি তোকে ভালো লাগে। আই মিন আমার তোকে ভালো লাগে। তোর আমার সাথে প্রেম করতে হবে বাট এখন না। তোকে একটু সময় দিলাম। তুই অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না প্লাস বাইকে উঠবি না। যদি দেখছি তো
মিষ্টি হা করে তাকিয়ে আছে। জীম মিষ্টির মুখের কাছে মুখটা নিয়ে বলে
” তোকে কিছু করবো না। যার বাইকে উঠবি তাকে বাইকসহ উড়িয়ে দেবো
মিষ্টি ভয়ে ঢোক গিলে। জীম মিষ্টির চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়
“রাতে ফোন রিসিভ না করলে রুমে চলে যাবো। আসি
জীম চলে যায়। মিষ্টি এখনো হা করে আছে।
” এই ছেলেটা মানুষ তো?
“চলবে