#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মিষ্টি। ঘুমের ঘোরেই বুঝতে পারছে কেউ ওকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাও খুব কাছ থেকে। তার নিশ্বাসের শব্দও মিষ্টি শুনতে পাচ্ছে। তার নিশ্বাসের শব্দেই মিষ্টির ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না মিষ্টি। চোখ খুলে যদি দেখে সত্যিই কেউ আছে এই রুমে তাহলে কি করবে? নিশ্বাসের শব্দটা আরও কাছে আসছে মিষ্টির। ভয়ে ঘামতে শুরু করেছে মিষ্টি।
“ফুলটুসি
লোকটা মিষ্টির গালে হাত দিতেই মিষ্টি লাভ দিয়ে উঠে বসে। চোখ খুলে দেখে সামনে একটা ছেলে। মিষ্টির দুই ঝুঁকে বসে আছে।
” আআআআপনি কে?
আলরেডি মিষ্টির চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে। ভয়ে মিষ্টির হাত পা কাঁপছে।
“আমি? আমি জীম। রাইয়ান রহমান জীম। ওইযে রুমটা দেখছো ওটা আমার। এসল বেপারটা হলো। তুই চোখ মুছ, পানি খা, নরমাল হ, তারপর বলছি
” কককিহ
“দেবো ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় যা বলছি কর।
জীম ধমক দিয়ে বলে। মিষ্টি চোখের পানি মুছে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে ফেলে।
জীম খাটের ওপর আরাম করে বসে
” আমার বাপ একটা চিজ মাইরি। এলাকার মেয়েদের ডিস্টার্ব করি বলে এখানে শিফট হলো। কিন্তু বাপটা তে আর জানে না এখানে একটা ফুলটুসি আছে। আমি তো ভেবেছিলাম এখানে থাকবোই না। কিন্তু রুমে ঢুকে বেলকানিতে দাঁড়িয়ে একটা পরি দেখতে পেলাম। ব্যাস প্ল্যান চেঞ্জ
মিষ্টি হা করে শুনছে
“দেখলাম পরিটা বই পড়ছে। বিরক্তিকর একটা জিনিস। ভাবলাম একটু পড়ে গিয়ে পরিটার সাথে দেখা করে আসবো। তাই বিয়ারের বোতলটায় চুমুক দিলাম। বিয়ার শেষ করে দেখি পরিটা ঘুমিয়ে গেছে। বেলকনি টপকে লাফ দিয়ে পরিটার রুমে চলে এলাম আর ঘুমন্ত পরিটাকে দেখলাম।
মিষ্টি মনে মনে ভাবছে চিৎকার দেবো আবার ভাবছে দৌড় দেবো। কিন্তু মোট কথা মিষ্টি নড়াচড়া করার শক্তিটা পাচ্ছে না।
“আর শোন চেঞ্জ করার সময় জানালা বন্ধ করে নিবি
মিষ্টি এবার বড়বড় চোখ করে জীমের দিকে তাকায়।
” বাহহ তোর চাহনিতেও তো দেখি মদ মেশানো। নেশা নেশা লাগছে। আমার আবার মদে নেশা হয় না। দুই বোতল বিয়ার খেয়েছি। দেখ এখনো নরমাল আছি।
মিষ্টি নিচের দিকে তাকায়।
“আআপনি প্লিজ চলে যান।
মিষ্টি আবার কাঁদছে। হাত পা কাঁপা তো বন্ধই হয় নি
” তো আমি কি থাকতে এসেছি না কি? যাবোই তো। কাঁপছিস কেন? আমি কি তোকে টাচ করেছি না কি বকেছি? কোনোটাই তো করি নি। তাহলে
ওকে ওকে চলে যাচ্ছি
জীম বিছানা থেকে নামে।
“তোর ফোনে আমার নাম্বারটা সেভ করে দিয়েছি। সকালে কল করবো। ওকে
মিষ্টি জীমের কোনো কথায় শুনছে না। ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
” কাঁদুনি ফুলটুসি
জীম আবার বেলকনি টপকে নিজের রুমে চলে যায়।
মিষ্টি বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
“বাপির রুমে যাবো? না থাক এখন আর যাবো না। বাপি মামনির ঘুম ভেঙে যাবে। কিন্তু কি করবো এখন? ভয় করছে। বই পড়ি তাই আর ভয় করবে না।
মিষ্টি এসব ভেবে চোখ মুছে বই নিয়ে বসে।
বই আর বাপি এই দুটো নিজিস মিষ্টির মন ভালো করতে পারে। ভয় দুর করতে পারে।
সকাল বেলা গোছল করে কলেজ ড্রেস পড়ে চিরুনি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টির মা ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। বাবা অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। ভাই বসে বসে গেমস খেলছে।
” ও মামনি চুলটা আচড়ে দাও। লেট হচ্ছে তো
“একটু ওয়েট করো। আমিও তো একটা মানুষ কোন দিকটা সামলাবো। তাজকেও রেডি করতে হবে। আর আমাকেও স্কুলে যেতে হবে।
মিষ্টি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে।
” মামনি আমি আচড়ে দিচ্ছি
মিষ্টির বাপি মাথা আচড়ে দেয়। মিষ্টির বাবা পুলিশ অফিসার। মিষ্টির চুল গুলো প্রচুর লম্বা আর ঘনো। প্রায় হাঁটু ওবদি চুল। মিষ্টির চুল গুলো বাবা মা দুজনেরই খুব প্রিয়।
মিষ্টির মা মিষ্টি আর তাজকে খাইয়ে দেয়। মিষ্টি আইসিটি আংক করছে আর খাচ্ছে।
“খাওয়ার সময় মন দিয়ে খাও পড়তে হবে না।
” মামনি পড়া কমপ্লিট হয় নি
মিষ্টি আর মিষ্টির ফ্রেন্ড তিথি। দুইজন একসাথে কলেজ যায়। মিষ্টি তিথির জন্য দাঁড়িয়ে আছে
“ওই ফুলটুসি
মিষ্টি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখে জীম বাইকের ওপর সুয়ে আছে মুখে সিগারেট। মিষ্টি মুখ ঘুরিয়ে নেয়
জীম লাফ দিয়ে বসে। এ্যাশ কালার কামিজ সাদা সেলোয়ার সাদা ওড়না কেচি করা। কাঁধে স্কুল ব্যাগ। বা হাতে ঘড়ি। চোখে কোনো কাজল নেই। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। লম্বা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। মিষ্টিকে দেখছে জীম।
” ওই ফুলটুসি এখানে আয়
“আআআমাকে বলললছেন?
মিষ্টি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” তো আশেপাশে কি আর কেউ আছে না কি?
মিষ্টি আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সত্যি কেউ নেই। মিষ্টি এগিয়ে যায়।
“ববলুন
” আমাকে দেখলেই তোর কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায় কেন? আমি কি কিছু করছি
মিষ্টি হাত কচলাচ্ছে। একে কি করে বোঝাবে অচেনা কারো সাথে কথা বলতে মিষ্টি অব্ভস্ত নয়।
“তোর নাম কি?
” মিষ্টি
“কেউ মান জিজ্ঞেস করলে পুরো নাম বলতে হয় শেখায় নি তোর কমিশনার বাবা
” আফরা ইবনাত মিষ্টি
“গুড।
কোন ক্লাসে পড়োস?
” ইন্টার ফাস্ট ইয়ার
“ছেলেদের চুল দেখিয়ে ইমপ্রেস করতে এভাবে চুল ছেড়ে কলেজ যাস বুঝি?
মিষ্টির খুব রাগ হচ্ছে। না জেনে না শুনে একটা মন্তব্য করে দিলো। মিষ্টির কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
” তোর ফোনে আমার নাম্বারটা সেভ করা। কল দিলে রিসিভ করবি। আর ভুলেও আমার কথা বাপিকে বলবি না। বললে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চলে যাবো। তোর কমিশনার বাপ তোকে খুঁজেও পাবে না। কাল থেকে একদম চুল না বেঁধে কলেজে যাবি না। যদি দেখেছি তো চুল কেটে দেবো।
” আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মিষ্টি পেছন ঘুড়ে যেতে নেয়।
“জীমমমমমম
মিষ্টি তাকিয়ে দেখে তিথি জীম বলে চেচিয়ে জীমের কাছে যাচ্ছে।
” এর আবার কি হলো? এভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে কেনো?
“আরে তিথি মাই সুইট ডার্লিং
মিষ্টি শুধু দেখছে। তিথি জীমের হাত ধরে হেসেহেসে কথা বলছে। মনে হচ্ছে অনেকদিনকার কথা জমিয়ে রেখেছে।
” তিথি তোর লেট হলে আমি যাচ্ছি। ক্লাস মিছ হয়ে যাবে নাহলে।
“আমিও যাবো।
জীম বাই পরে কথা হবে
” হুমম
মিষ্টি আর তিথি বাসে উঠে পড়ে।
“তিথি তুই ওনাকে চিনিস
” হুমম
“কি করে? তোর বফ
” আরে না। ইউটিউব চ্যানেল আছে। মোটামুটি গান করে। আর ফেসবুকে এড আছে। & বড় আপুর বফ ছিলো তো একদিন ওদের সাথে ঘুড়তে গেছিলাম। সো চিনি
“ওহহহ। এখন
” ওদের রিলেশন ব্রেকআপ হয়ে গেছে। জীম তো এমনই ছেলে। কারো সাথে সিরিয়াসলি রিলেশনশিপএ জড়ায় না। কয়েকদিন কথা বলে তারপর টাটা বাই বাই। আবার নতুন একটা। আর আমার আপুও এমন
“ওহহহ। আইসিটি প্রোগ্রাম গুলো কম্পিলিট করেছিস
” নাহহহ তুই
“হুমম। নিশ্চয় তুই বুঝিস নাই
” হুমমম
“চল আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি
” ভালো লাগছে না
“এমন করলে তুই তো ফেল করবি। প্লিজ বোঝ আমার থেকে। খুব ভালো করে বোঝাবো।
” ওকে। বোঝা
“মন দিয়ে বুঝবি
” হুম
মিষ্টি তিথিকে বোঝাতে থাকে।
” আমাকেও একটু বোঝাও
একটা ছেলের কন্ঠ শুনে মিষ্টি চমকে ওঠে।
জীম হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। তিথি খুশি হয়ে বলে
“তুমি এখানে?
জীম ওদের পাশের ছিটে বসে। বাসের পেছনের ছিটে বসেছে ওরা। তিথি জানালার পাশে তারপর মিষ্টি আর মিষ্টির পাশে জীম।
” তোমার টানে চলে এলাম
“ওহহ রিয়েলি
” হুমমম। তো এ কি তোমার টিচার?
“বলতে পারো। কোচিং থেকে স্যার যা বোঝায় আমি বুঝতে পারি না পরে মিষ্টি বুঝিয়ে দেয়।
” গ্রেড
“হুমম খুব ব্রিলিয়ান্ট ও
” ওয়াও
“তিথি তুই এখানে বস প্লিজ
মিষ্টির কেমন লাগছে জীমের পাশে বসতে। তারপর জীমের মুখ থেকে সিগারেট আর বেয়ার মেশানো বাজে একটা গন্ধ আসছে। যা মিষ্টির খুব বাজে লাগছে।
“ও
তিথি বলার আগেই জীম বলে
” আমার কিন্তু তোর পাশে বসতে দারুণ লাগছে ফুলটুসি
জীম মিষ্টির দিকে একটু ঝুঁকে বলে। মিষ্টির তো জান যায় যায় অবস্থা। হঠাৎ বাস থেমে যায়।
“এই বাসটার আবার কি হলো?
জীম বিরবির করে বলে। এই সুযোগে মিষ্টি উঠতে যায় জীম হাত ধরে
চলবে