প্রেম প্রেয়স পর্ব-১৫+১৬

0
573

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৫
#আয়েশা_আক্তার

-হ্যাঁ, আমি ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুই তোমার কাছে সুন্দর।

প্রিয় পুরুষের অভিমানী কন্ঠস্বর শুনে চকিতে তাকায় এশা।সাদাফ এশার পাশে বসে অন্য দিকে মুখ করে রেখেছে। এশা কিছুক্ষণ সাদাফকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে হু হু করে হেসে ফেলে। হাসির শব্দ শোনে সাদাফ এশার দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায়। এশা হাসতে হাসতে বলে,

-অভিমান করলে তোমায় বাচ্চাদের মতো লাগে।

সাদাফ আর কোনো কথা না বলে আবারও উল্টোদিকে মুখ ফেরায়। গাল ফোলানো সাদাফকে দেখতে অনেক কিউট লাগছে এশার। এক নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। এশা আজ মনের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সাদাফের কাছে। সাদাফের ডান পাশের গালে নিজের ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিয়েই এশা ছিটকে খানিক দূরে সরে যায়। সাদাফ গালে হাত দিয়ে এশার দিকে ঘুরে দেখলো, এশা পুকুরের পানির দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে আছে। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন সেকেন্ড কয়েক আগে কিচ্ছুটি হয়নি। সাদাফ এশার হাত ধরে একটানে বুকে জড়িয়ে ধরে। এশা লজ্জা পেয়ে সাদাফের বুকে মুখ লুকায়। সাদাফ এশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

-এটা কি হলো?

এশা মাথা তুলে সাদাফের দিকে চেয়ে জবাব দেয়, – কিছুই হলো না।

বলেই সঙ্গে সঙ্গে আবার বুকে মাথা রাখে এশা। এই পুরো দৃশ্যটা লাবণ্য তার ফোনে ক্যাপচার করে নিলো। ভিডিও করা শেষ হতেই, প্রীতম, হৃদয়, অমিত হইহই করে উঠে।

শুধু মোহনা ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে একটু গম্ভীর টাইপের। সবার মতো সবকিছুতে হইহই করে উঠতে পারে না মোহনা। তবে সবার আনন্দ, খুশিতে তার মনেও একটা আনন্দের বার্তা দোলা দিয়ে যায়। সবার মতো তার মনেও অনুভূতি আছে। তবে সে চাইলেই সেটা কাউকে বোঝাতে পারে না। এই যেমন হৃদয় মোহনার মনে এক বিশেষ জায়গা তৈরি করেছে কিন্তু সে চাইলেই সেটা প্রকাশ করতে পারে না। আবার ভয়ও হয়, যদি হৃদয় মোহনাকে পছন্দ না করে? যদি বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়, তাহলে মোহনা সেটা কি করে সহ্য করবে? বন্ধুত্বের অজুহাতে হলেও রোজ নিয়ম করে দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে, কথা বার্তা হচ্ছে। মোহনা হৃদয়কে নিজের মনের কথা বললে যদি মোহনা এটুকুও হারিয়ে ফেলে! নাহ, সে কিছুতেই তাঁর মনের কথা প্রকাশ করবে না। তার জীবনটা তো অন্যদের মতো না। তাই তো বন্ধুদের সাথে ও খুব বেশি দেখা যায় না তাকে। এইযে ওর বন্ধুরা সবাই মাস শেষে বাবা-মা এর থেকে কোচিং ফি, হাত খরচ, মাসে মাসে শপিং ইত্যাদি না চাইতেও হাজির হয়ে যায়। কিন্তু মোহনা খেটে খাওয়া মেয়ে। তার ঘরে বাবার ছায়া নেই, বয়স্ক- গৃহিনী মা। ছোট বোন এবার এসএসসি দিয়েছে তার কলেজে ভর্তি, মায়ের ঔষধ সবকিছু মোহনাকেই দেখতে হয়। মোহনার এইচএসসি পরীক্ষার আগেই তার বাবা মারা গিয়েছে। মা চেয়েছিলো মোহনার বিয়ে দিয়ে দিতে। সমন্ধও দেখেছে কয়েকবার। কিন্তু মোহনা বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। পড়াশোনা শেষ করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। তাই আপাতত হৃদয়ের বিসর্জন না হয় মোহনার হৃদয়েই হোক।

-মোহ? বলতো আজ হিজল ফুল গুলোকে কেন বেশি লাল মনে হচ্ছে?

হঠাৎ পরিচিত কন্ঠ শুনে পাশ ফিরে তাকায় মোহনা। হৃদয়কে এতোটা কাছে দেখে অস্বস্তি বোধ হয় তার। আবার এক ভালো লাগায়ও ছেয়ে হৃদয় মোহনার কাছে আসলে। মোহনা বোঝে উঠতে পারে না। এ কেমন অনুভূতি?

-কিরে কই হারায় গেছিস?

মোহনাকে কথা বলতে না দেখে হৃদয় আবারো প্রশ্ন করে। বাকি সবাই সাদাফ এশাকে নিয়ে মেতে আছে। তারা সাদাফ – এশাকে আজ ইচ্ছে মতো পচাচ্ছে। মোহনা থতমত খেয়ে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক করে জবাব দেয়,

-না.নাহ, কোথাও হা.হারাইনি আমি। আ.আমিমি ত.তো সাসাদাফ এশাকে দে.দেখছিলাম।

মোহনার তোতলানো দেখে হৃদয় হুহা করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়বার যোগাড় হয়েছে হৃদয়ের। মোহনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

-আমাকে আজ জোকার দের মতো দেখতে লাগছে নাকি হৃদয়? এভাবে হাসার কি হলো?

হৃদয় হাসি থামিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে মোহনার দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়তেই মোহনার আবিষ্কার করলো, হৃদয়ের চোখ দুটো অনেক সুন্দর। সে সাথে সাথে মাথা নিচু করে নেয়। হৃদয় মোহনার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো। চেয়ে থেকেই বলে,

-তুই অনেক সুন্দর মোহ। আমার চোখে তোর থেকে সুন্দর আর কাউকে আমি দেখিনি। জানি বিশ্বাস করবি না তবে এটাই সত্যি।

হৃদয়ের মুখে নিজের সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে ভালো লাগায় ছেয়ে যায় মোহনার অন্তর। সে একবার মাথা তুলে হৃদয়ের মুখপানে চেয়ে আবার দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। মনের অবাধ্যতা টের পেয়ে মনকে গভীর ভাবে লাগাম পড়ানোর চেষ্টা করে মোহনা। বলে উঠে,

-কি যা তা বলছিস? তুই একটা পাগল আমি আর সুন্দর কখনোই এক হতে পারে না।

হৃদয় নিজেকে সংবরণ করে বলে, -বাদ দে, বলতো আজকে হিজল ফুল গুলোকে কেন বেশি সুন্দর আর লাল মনে হচ্ছে?

মোহনা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই আজকের ফুলগুলো অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি রঙিন।

-আসলেই তো আজকের ফুলগুলো অন্য দিনের তুলনায় অত্যধিক লাল মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন সেটা বুঝতে পারছি না। তুই জানিস?

-হ্যাঁ, জানি তো।

-তাহলে বল?

কথাটা বলেই পাশের বেঞ্চে গিয়ে বসে পরে মোহনা৷ হৃদয়ও মোহনার পাশে বসতে বসতে বলে,

-ভালোবাসার রং লাল বলে একটা কথা শুনেছিস মোহ? যখন মানুষ কাউকে ভালোবাসে তখন তার অবস্থানরত চারপাশটাকেও ভালোবাসে। তাছাড়া মানুষ প্রেমে পড়লে সে যেমন মনের দিক দিয়ে উজ্জ্বলতা অনুভব করে, তার চারপাশটাও তখন উজ্জ্বল আর রঙিন হয়ে উঠে। ওইযে সবার মাঝখানে সাদাফ এশাকে দেখছিস মোহ?

মোহনা হৃদয়ের দেখানো আঙুল অনুসরণ করে দেখে দু’জন যুবক -যুবতীকে ঘিরে আছে তার বাকি বন্ধুরা। তারা কথা বলছে আর হাসির ফোয়ারা তুলছে। তাদের সবার মাঝখানে যে মেয়েটা বসে আছে তার দিকে নোহনা গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পায়। মেয়েটার মুখ দেখলে যে কেউ বলে দিবে মেয়েটা অনেক বেশি খুশি। তাছাড়া এশা যখন এখানে এসেছিলো তারপর থেকেই এশার মুখ থেকে যেন খুশিরা ছিটকে বেড়িয়ে আসছে। অবশ্য মাঝে মাঝে লজ্জারা এসে এশার মুখে লাল আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। মোহনা মনে মনে বলে উঠে, সত্যিই ভালোবাসার রং লাল। ভালোবাসা মানেই সবকিছু রঙিন।

মোহনার নিরব ভাবনায় ছ্যাঁদ ঘটিয়ে হৃদয় আবারো বলে উঠে,

-এশা সাদাফের প্রেমে পড়েছে। আর সাদাফ এশার তাই তাদের চারপাশটা আজ এতো রঙিন আর সুন্দর। তোর কাছেও আজ সবকিছু রঙিন লাগছে মোহ? তবে কি তুই ও কারো প্রেমে পড়েছিস মোহ?

চলবে..

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১৬
#আয়েশা_আক্তার

ঢাকা শহরে অনেক আগেই রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। মানুষ নিজেদের ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। তলিয়েছে গভীর ঘুমে। এই ঘুমন্ত নগরীতে বিছানায় শুয়ে হাস ফাঁস করছে এক শ্যামাঙ্গিনী। সে পাশ ফিরে লাবণ্যকে দেখলো,বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। হ্যাঁ মোহনা ঢাকাতে লাবণ্যর বাসায় থেকেই ভার্সিটি আসা যাওয়া করে। মোহনার বাকি বন্ধু গুলোও ভীষণ হেল্পফুল তার প্রতি। তবে লাবণ্য একটু বেশিই। এইযে এতোবছর ধরে লাবণ্যের বাসায় থেকে পড়াশোনা করছে, লাবণ্যর মাকে মোহনা আম্মু বলে ডাকে আর নিজের মা’কে মা। মোহনার মনে পড়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিনগুলোর কথা। সেই গ্রাম থেকে কত কষ্ট করে ভার্সিটি আসতো সে। ভার্সিটি শেষে গ্রামে যেতে যেতেই বিকেল হয়ে যেতো। তারপর আসা যাওয়ার ভাড়ায় এক্সট্রা খরচও লাগতো। এতোকিছু করতে কত কষ্ট করতে হয়েছে মোহনা জানে। লাবণ্য মোহনার জীবনে এসেছে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত স্বরূপ। বন্ধুত্ব হওয়ার পর থেকেই মেয়েটা তারজন্য এতোকিছু করছে যে সারা জীবনেও লাবণ্য’র ঋণ সুদ করতে পারবে না। এ পর্যন্ত একটা বইও কিনে নি মোহনা। সব লাবণ্যর বই দু’জন ভাগাভাগি করে পড়েছে। ঢাকা শহরে লাবণ্য -ই মোহনার টিউশনি গুলো ঠিক করে দিয়েছে। টিউশনির টাকা দিয়ে মা আর ছোট বোনের সংসার চালায় মোহনা। নিজের সবকিছু তো লাবণ্যই করছে। মোহনা লাবণ্য মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দেয় তারপর আপন মনে বলে উঠে, “তুই এতো ভালো কেন লাবু?”

মোহনা বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় যায়।অন্ধকার আকাশের দিকে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মনে পড়ে যায় আজ দুপুরে ভার্সিটিতে রেড কার্পেটে ঘটে যাওয়া ঘটনা। কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে হৃদয়ের বলা কথাগুলো।

“এশা সাদাফের প্রেমে পড়েছে। আর সাদাফ এশার তাই তাদের চারপাশটা আজ এতো রঙিন আর সুন্দর। তোর কাছেও আজ সবকিছু রঙিন লাগছে মোহ? তবে কি তুই ও কারো প্রেমে পড়েছিস মোহ?”

কথাগুলো শুনে এশা বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিলো। তার এক মন বলছিলো মনের ডাকে সাড়া দিয়ে হৃদয়কে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিতে। আরেক মন বলছিলো, নাহ ভালোবাসা আমার জন্য না।

এই মুহুর্তে মোহনার ঠোঁট ভেঙে কান্না আসছে। বুকে ব্যথা অনুভব করছে। কাউকে ভালোবেসে তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা কতটা কষ্টের সেটা শুধু মাত্র তারাই বোঝে যারা এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে বা হয়।

মোহনা বিছানা ছেড়ে বারান্দায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম ভেঙেছে লাবণ্যর। সেও মোহনার পিছু পিছু বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মোহনা টেরও পায়নি। মোহনাকে লাবণ্য নিজের বোনের মতো মনে করে। তার কষ্টে লাবণ্যের বুকেও এক সূক্ষ্ম ব্যথার টের পায় লাবণ্য। মোহনার কাঁধে স্নেহের হাত রেখে সে। মোহনা পাশ ফিরে লাবণ্যকে দেখে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরে লাবণ্যও। মোহনা নিজের বা- বোনকেও কখনো এভাবে জড়িয়ে ধরে নি। যেভাবে লাবণ্যকে জড়িয়ে ধরতে পারে। মোহনা মায়ের চোখে অনেকবারই নিজেকে বোঝা স্বরূপ দেখেছে। এমনকি বোনের কাছেও মেহনা শুধুই আবদার পূরণের ভান্ডার। মোহনার মনে হয়, বাবা থাকলে সব ঠিক থাকতো। কেন বাবা তাকে এভাবে অবহেলার সমুদ্রে রেখে হারিয়ে গেলো? বর্তমানে বন্ধু গুলো ছাড়া মোহনার নিজের বলতে আর কেউ নেই, কেউ না।

লাবণ্য মোহনার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে সুধায়,

– কাঁদছিস কেন?

মোহনা নিশ্চুপ। লাবণ্য আবারো জিজ্ঞেস করে,

-ভালোবাসিস হৃদয়কে? চুপ করে থাকিস না মোহ। সত্যিটা বল আমায়। ভালোবাসিস?

মোহনা ফুঁপিয়ে উঠে দু’হাতে চোখের পানি মুছে সামনে পিছে মাথা নেড়ে বোঝায় সে ভালোবাসে হৃদয়কে।

-তুই কি জানিস? বুঝতে পারিস হৃদয়ও তোকে ভালোবাসে? শুধু তুই ওকে ফিরিয়ে দিস সেই ভয়ে বলতে পারে না।

-কি বলছিস এসব? ও কেন আমায় ভালোবাসতে যাবে আমি ওর যোগ্য নই। এটা কিছুতেই হতে পারে না। হৃদয়ের ফ্যামেলি কখনোই আমায় মেনে নিবে না।

-কেন নিবে না? তুই কম কিসে? তুই ভীষণ ভালো একটা মেয়ে, সুন্দরী, মেধাবী, আর কি চাই?

-তুই সবকিছু জেনে শুনে অবুঝের মতো কথা বলছিস কেন?

-তুই তোদের আর্থিক অবস্থার কথা বলছিস? দেখ,হৃদয় ভীষণ ভালো ছেলে। সে কখনোই চাইবে না তুই তোর পরিবারের অযত্ন করিস।

-ওর চাওয়া দিয়ে কি হবে? ওর ফ্যামেলি আমায় মানবে না তুই দেখে নিস।

-আচ্ছা, বাদ দে। এখন ঘুমাবি চল।

-হুম, সকালে উঠে আবার গ্রামে যেতে হবে।

-গ্রামে যাবি মানে? এক সপ্তাহ পর আমার বিয়ে আর তুই চলে যাবি?

-মা অনেক রাগারাগি করবে রে।

-আচ্ছা বেশ, কাল তোর সাথে আমিও গ্রামে যাবো আর আন্টির অনুমতি নিয়েই তোকে নিয়ে আসবো।

-মা কিছুতেই দিবে না।

-সেটা দেখা যাবে এখন চল তো।

পরদিন সকালে,
সাদাফ গাড়ি নিয়ে এসে লাবণ্যের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বারবার কল দেওয়ার পরও পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। সাদাফ, হৃদয়, অমিত, প্রীতম একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে অথচ কোন খবর নেই তার। সাদাফ হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-তুই বরং মোহ’কে কল কর। ওরা দু’জন তো একসাথেই আছে।

-আমি? কিন্তু মোহ যদি কিছু মনে করে?

হৃদয় এবং মোহনার খুব বেশি ফোনে কথা হয় না। এতো বছরে মাত্র দু’বার কথা হয়েছে কলে তা-ও মিনিট গড়ায়নি একবারো। দুইবারই হৃদয় মোহনাকে কল করেছে একটা দুটো কথা বলেই কল কেটেছে। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অস্বস্তি হয় হৃদয়ের। হৃদয় যে মোহনার প্রতি প্রথম থেকেই দূর্বল সেটা সবাই জানে। শুধু মেহনা বাদে। সাদাফ বিরক্ত নিয়ে বললো,

-এতো হেজিটেড করার কি আছে? আমরা সবাই খুব ভালো বন্ধু। আর তুই ই বা এতো ভীতু কেন হৃদয়? মনের কথা বলে দিলেই পারিস।

-তোদের মতো এতো সাহস আমার নাই।

কথাটা বলেই নিজের ফোন থেকে মোহনার নম্বরে ডায়াল করে হৃদয়। বার কয়েক রিং হতেই মোহনা রিসিভ করে। মোহনার নিশ্চুপতা দেখে হৃদয় বলে,

-কই আছিস তোরা?

-কেন? লাবণ্যদের বাসায়ই তো আছি।

-কখন থেকে বাসার নিচে বসে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি। লাবণ্য কই?

-ওয়াশরুমে গিয়েছে।

-আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আয়। তোরা মেয়ে মানুষ আসলেই ঢিলা কম্পানি।

-ভালো হচ্ছে না কিন্তু হৃদয়। তুই ঢিলা তোর বউ ঠিলা।

বলেই কল কাটে মোহনা। হৃদয় থ হয়ে গেলো। সাদাফ বললো,

-কি হয়েছে?

-ওরা আসছে।

প্রীতম হৃদয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

-তা তো বুঝলাম মাম্মা। কিন্তু তোমার মুখ এমন লজ্জাবতী রমণীদের মতে লাগছে কেন?

-ফালতু কথা বলিস না তো তুই?

-আমি মোটেও ফালতু কথা বলছি না। বল কাহিনি কি? মোহ তোকে কি বললো?

-কিছুই বলেনি, তোরা তো ওকে চিনিস। ও আর কি বলবে আস্ত একটা গম্ভীর মাইয়া।

লাবণ্য আর মোহনা চলে আসায় প্রীতম আর কিছু বলে না। এশা এতোক্ষণ সাদাফের বন্ধুদের খুনসুটি দেখছিলো আর হাসছিলো। আর সাদাফ দেখছিলো এশাকে। লাবণ্য আর মোহনাকে দেখে এক লাফে ওদের দুজনের মাঝখানে চলে আসে এশা। উৎফুল্লতার কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-কেমন আছো আপু’রা?

-আলহামদুলিল্লাহ। তুমি? ( দু’জনেই সমস্বরে বলে উঠে)

-আলহামদুলিল্লাহ।

মোহনা সবাইকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আজ লাবণ্যকে নিয়ে গ্রামে যাওয়ার কথা মোহনার কিন্তু সবাই এখানে কি করছে। মোহনার মনে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে বুঝতে পেরে লাবণ্য বলে উঠে,

-তোকে এতো ভাবতে হবে না। আমরা গ্রাম থেকে আন্টির অনুমতি সহ তোকে নিয়ে এসে তারপর শপিং করতে যাবো। সবাই মিলে শপিং করবো, রেস্টুরেন্টে খাবো আর অনেক মজা করবো। বিয়ের পর দেশ ছেড়েই চলে যেতে হবে। আর কখনো সুযোগ হয়ে উঠবে একসাথে সময় কাটাবার। আর মোহ, এশা আমরা তিনজন কিন্তু একই রঙের শাড়ি পড়বো হলুদ অনুষ্ঠানে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে