প্রেম প্রেয়সী পর্ব-১১+১২

0
533

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১১
#আয়েশা_আক্তার

সেদিন বাসায় ফেরার পর সাদাফ নিজের রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে সাদাফ কিছু একটা ভাবছিলো আর আপন মনে হাসছিলো। হঠাৎ কাঁধে কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায়। ওষ্ঠ যুগল ফাঁকা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস সেলিনা আহমেদ বলে উঠেন,

-মেয়েটাকে খুব বেশি ভালোবাসিস?

সাদাফ খানিক বিস্মিত হলেও সেটা নিজের মনের মধ্যে রেখে হেসে ফেলে। তারপর জিজ্ঞেস করে,

-তার আগে বলো তুমি কিভাবে জানলে মা?

-মায়েরা অনেক কিছু জানতে পারে। এই যেমন একটু আগে তুমি একটি মেয়ের কথা ভেবেই হাসছিলে। এটা কিন্তু তুমি আমায় বলোনি কিন্তু আমি জানি।

-হ্যাঁ, মা মেয়েটাকে আমি অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি।

সাদাফ নিজের মাকে খানিকটা জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলে। মিসেস সেলিনা ছেলের কাঁধে স্নেহের হাত রেখে বলে,

-নাম কি? বাসা কোথায় দেখতে কেমন?

সাদাফ মোবাইল ফোন হতে একটা ছবি বের করে দেখায়। মিসেস সেলিনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়েটিকে দেখতে থাকে। শুভ্র -আকাশী রঙের মিশেলে পড়া একটা সাধারণ থ্রি পিছ, লম্বা চুলগুলো বিনুনি করা, নৌকায় বসে হাস্যোজ্জ্বল মুখে চেয়ে আছে। কোনো সাজগোছ হীন একটা মানুষকে এতো সুন্দর লাগে এটা এই প্রথম সেলিনা বেগমের বোধগম্য হয়। মেয়েটাকে তারও ভীষণ পছন্দ হয়েছে। সাদাফের দিকে মোবাইল ফোন এগিয়ে দিয়ে বলেন,

-মাশাল্লাহ, সুন্দর মেয়েটা। তা বাসা কোথায়? উত্তরাতেই মা। আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে এবার সেকেন্ড ইয়ারে উঠবে।

-কি বলো সেকেন্ড ইয়ার? দেখতে তো পিচ্চি লাগে একদম। হালকা গুলুমুলু ভাব আছে। একদিন বাসায় নিয়ে এসো। আর নাম কি মিষ্টি মেয়েটার?

-নাম এশা ইসলাম, সবাই এশা বলেই ডাকে।

-সুন্দর নাম। তোমার বাবার সাথে কথা বলবো আমি। তুমি ভালো করে পড়াশোনায় মন দাও।

-জী, আম্মু।

তখনই ঘরে গিয়ে মিসেস সেলিনা তার হাসবেন্ডকে সৈকত আহমেদকে সবকিছু খুলে বলে। ছেলের পছন্দই তাদের পছন্দ। এতে তারা অখুশি হননি কেউ ই। বরং দুজনেই ঠিক করেছে ছেলের পরীক্ষার পরই মেয়ের বাসায় যোগাযোগ করবে। মিসেস সেলিনা ছেলেকে পরে এই কথা জানিয়েও দেন।

তার একদিন পরই কোনো এক কাজে বাবার অফিসে এসে শুনতে পায় তার বাবার প্রতিদ্বন্দ্বী মিস্টার চৌধুরী সাহেব তাকে নিয়ে কথা শুনাচ্ছেন। সে দমে যাওয়ার পাত্র নন তাই সবার মুখের উপর উচিৎ জবাব দিয়ে দেন। সাদাফের জবাব শুনে চৌধুরী সাহেব কোনো কথা না বাড়িয়ে মিনমিন করে বললেন,

– ছেলের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন অথচ কাউকে জানাননি? বিয়ে কি লুকিয়ে করার জিনিস নাকি।

সৈকত আহমেদ শান্ত কিন্তু ধারালো স্বরে জবাব দেয়,

-কুকুরকে বিয়ের খবর দিতে হয় না। সে গন্ধ শুঁকে শুঁকে ঠিকই বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে যায়।

চৌধুরী সাহেব স্পষ্ট বুঝতে পারলেন, কুকুর সম্বোধনটা তাকেই করা হয়েছে। ভেতর ভেতর ক্রোধে ফুসলেও ভেজা বেড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে প্রস্থান করেন তিনি। চৌধুরী সাহেব যেতেই সাদাফ ভেতরে এসে সৈকতের সামনে চেয়ার টেনে বসে। সৈকত সাহেব এতোক্ষণ ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে ছেলেকে জিজ্ঞেস করে,

-হঠাৎ অফিসে এলে?

-এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম একবার ঘুরে যাওয়া যাক।

-হ্যাঁ, পুরো অফিসটা ভালো করে ঘুরে দেখো। একদিন তো তোমাকেই ব্যবসার হাল ধরতে হবে।

-হ্যাঁ, তবে পাশাপাশি আমি গানকে রাখতে চাই।

-তোমার গান থাকুক সাথে ব্যবসাটাও। তোমার উপর আমার আস্থা আছে তাই তো তোমার মতের অমত কখনো করিনি। আর এটাও জানি আমার ছেলেও আমার অপছন্দ কিচ্ছু করবে না।

-ধন্যবাদ বাবা, এতোটা ভরসা করার জন্য। তুমি পৃথিবীর বেস্ট বাবা। আর সরি আমার জন্য তোমাকে চৌধুরী আঙ্কেলের থেকে এতোগুলা কথা শুনতে হলো।

-প্রথমত, পৃথিবীর প্রতিটি বাবাই তার সন্তানের জন্য বেস্ট। আর সরি বলার কিছু হয়নি বরং আমি তোমার মায়ের বলা কথাগুলো ভুলে গিয়েছিলাম। আর এটাই সেই তোমার পছন্দের মেয়ে সেটাও বুঝতে পারিনি কারণ আমি তাকে দেখিনি। এরজন্যই চৌধুরীকে সাথে সাথে জবাব দিতে পারিনি। ভালো হয়েছে তুমি এসেছো। তোমার মা বলেছে তার মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে। তারমানে মেয়েটা অবশ্যই মিষ্টি। একদিন বাসায় নিয়ে এসো।

-আচ্ছা বাবা, আমি অফিস টা ঘুরে আসি।

-ওকে।
___________________________

এশার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো। ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে এশা। সে খুশিতে সাদাফকে কল করে সাথে সাথেই জানিয়েছে। সাদাফ আজকাল ভীষণ ব্যস্ত পড়াশোনায়। এক সপ্তাহ পরই পরীক্ষা। তাই এশার সাথে দেখা সাক্ষাৎও আগের থেকে তুলনা মূলক কম হয়।

এদিকে এশাসহ ক্লাসের আরো কয়েকজন মেয়ে ট্রিট দেওয়ার জন্য পাগল করে তুলেছে। বাধ্য হয়ে এশা সবাইকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে হালকাপাতলা খাওয়া দাওয়া আর আড্ডায় কিছু সময় ব্যয় করে তারা। সবশেষে এশা সবার বিল দিয়ে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। সবাই যে যার বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। তাদের মধ্যে দু’জন রওয়ানা দেয় ভার্সিটির হোস্টেলের দিকে। এশা এবং তানহার বাসা দু’দিকে হওয়ায় তারাও একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে দুদিকে অগ্রসর হয়। কিছুক্ষণ হেঁটে একটা রিকশা ডেকে যেই এশা উঠতে যাবে ওমনি তার সামনে উপস্থিত হয় কালো কোর্ট, প্যান্ট, কালো চশমা পড়া একজন দৈতমানব। সে পেছনে ইশারা করে বলে,

-ধর মেয়েটাকে, এখনই গাড়িতে তোল।

তারা এশাকে ধরার জন্য হাত বাড়াতেই এশা সামনে পেছনে বারকয়েক চোখ বুলিয়ে বলে উঠে,

-আপনারা কারা? আর আমাকে গাড়িতেই কেন তুলবেন? আমি বাড়ি যাবো।

-গাড়িতে করে তোমায় মামাবাড়িতে নিয়ে যাবো সোনা।

-আপনারা কেন আমায় মামা বাড়িতে নিয়ে যাবেন? আমার মামা বাড়ি তো রূপপুর গ্রামে।

-আহ, বেশি কথা বলেরে। আমরা তোমার মামাবাড়িতেই নিয়ে যাবো তোমায় এখন গাড়িতে উঠো।

এশা দেখতে পেলো দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাওয়ালা চোখে মুখে ভয় নিয়ে রিকশা নিয়ে পালালো।

-কি হলো উঠবি নাকি জোর করে উঠাবো?

-তুই তুকারি করছেন কেন? আমি মানা বাড়ি যাবো আপনাদের সাথে আমি এখন বাসায় যাবো।

কথাগুলো বলেই এশা হাঁটা ধরে কিন্তু পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন এসে এশার হাত দুটো ধরে ফেলে। আরেকজন এসে কিছু একটা স্প্রে করে এশার মুখ বরাবর। সঙ্গে সঙ্গে এশা নেতিয়ে পরে। লোক দুটো এশাকে ধরে গাড়িতে বসায়। তারপর নিজেরাও বসে একজন ড্রাইভিং সীটে অন্য জন তার পাশে। কালো কোর্ট পড়া লোকটা কাউকে কল করে বলে,

-হ্যালো ড্যাড, কাজ হয়ে গিয়েছে। মেয়েটি এখন আমার গাড়িতে অবচেতন হয়ে পড়ে আছে।

ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেলো না। ছেলেটা আবারো বিরবির করে কিছু একটা বলে কল কেটে মুঠোফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। তারপর গাড়িতে উঠে মেয়েটির পাশের সীটে বসে। ড্রাইভিং সীটে বসা লোকটি গাড়ি চালাতে শুরু করে। কালো কোর্ট পড়া লোকটা এবার এশাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। হঠাৎ করে তার মনে হচ্ছে এশাকে তার ভালো লেগে গেছে। যে করেই হোক এশাকে তার চাই। ফিরে গিয়েই ড্যাডকে বলবে সে। ড্যাডের কাজ তো করা হলো এবার তার কাজের পালা। সে আরো ভাবতে থাকে,

“ছোট থেকেই সাদাফের জন্য অপমানিত হয়ে এসেছি। স্কুল লাইফে ওর জন্য স্যার আমাকে অনেক অপমান করতো। এমনকি ওর জন্য কোনো মেয়ে আমার দিকে তাকাতো না। আজ ওর প্রাণভোমরাকে কাছে পেয়েও ছেড়ে দিবো? কখনোই না। তোর প্রাণভোমরাকে ছিনিয়ে নিয়ে তোকেও উপভোগ করাবো হেরে যাওয়া কতটা কষ্টের। কথায় আছে না শেষ ভালো যার সব ভালো তার। তাহলে সারাজীবন জিতে গিয়ে কি লাভ হলো তোর? শেষে জিত তো হবে আমার।”

চলবে….

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_১২
#আয়েশা_আক্তার

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে এখনো মেয়েকে ফিরতে না দেখে আনিকা চিন্তিত হয়। বারবার ঘড়ি দেখে আর দরজর দিকে তাকায়৷ সময় চলে যাচ্ছে, সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে। কিন্তু এশার আসার খবর নেই। তার মন কেমন কু ডাকছে। মনে হচ্ছে মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয়েছে। নাহলে এশা দুপুর তিনটার মধ্যেই বাসায় ফেরে সবসময়। আরো আগেই বেশির ভাগ ফেরে, খুব বেশি দেরি হলে তিনটা। আনিকা আর কিছু ভাবতে পারছে না। মুঠোফোন তুলে নিয়ে স্বামী ইয়াশ আহমেদের নম্বরে ডায়াল করে। ইয়াস আহমেদ মিটিং এ ব্যস্ত থাকায় কল কেটে দেয়। আনিকা আবারো কল দেয়। এবার ইয়াশ মনে মনে ভাবে, জরুরি কিছু না হলে তো আনিকা কল কেটে দেওয়ার পর আর কল দেয় না। তবে কি বাসায় কিছু হলো? এসব ভেবে নিয়ে সবার থেকে দু’মিনিট সময় চেয়ে নিয়ে কল রিসিভ করে। কল রিসিভ করতেই আনিকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। কান্নার শব্দে চমকে যান ইয়াশ আহমেদ। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে কান্না একটু কমিয়ে ভেঙে ভেঙে বলে,

-এশা এখনো বাড়ি ফিরে নি। তুমি কিছু করো প্লিজ।

এটুকু বলেই আনিকা কল কেটে দেয়। সৈকত মেয়ের না ফেরার কথা শুনে দ্রুত মিটিং ক্যান্সেল করে বাসায় চলে আসে। ইয়াশ আহমেদ বাসায় এসে দেখে তার স্ত্রী মেয়ের চিন্তায় ঘরময় পায়চারী করছে আর চোখের পানি মুছছে। আর ছোট মেয়ে ইয়াশাও তার পাশে পাশে হাঁটছে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। ইয়াশ আহমেদ ইয়াশাকে জিজ্ঞেস করে,

– তোমার আপুর বন্ধুদের ফোন নাম্বার আছে? তাদের সাথে যোগাযোগ করেছো?

-হ্যাঁ, মায়ের ফোন থেকে সবাইকে কল করে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু কেউ আপুর কোনো খবর জানে না। আমি আশায় ছিলাম তানহা আপু অন্তত জানবে আপু কোথায় আছে সেটা। কিন্তু হতাস, সেও জানে না। আপু নাকি অনেকক্ষণ আগেই বাসার দিকে রওয়ানা হয়েছে। কিন্তু এখনো কেন আসছে না সেটাই বুঝতাছি না।

-আমার এশার নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। তুমি যেখান থেকেই হোক খুঁজে এনে দাও আমার মেয়েটাকে।

বলেই আবারো কান্নায় ভেঙে পড়ে আনিকা। সৈকত ইয়াশাকে আনিকাকে সামলাতে বলে বেরিয়ে পরে।
_______________________

এশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে তানহা প্রথমে ভাবে, হয়তো এশা সাদাফের সাথে কোথাও দেখা করতে গিয়েছে। কিন্তু আজ দুপুর পর্যন্ত তো এশা ওর সাথেই ছিলো। এরকম কিছু প্ল্যান থাকলে এশা অবশ্যই তাকে বলতো। তানহা আর কিছু না ভেবে লাবণ্যর নম্বরে কল করে। সাদাফের ফোন নাম্বার যেহেতু নাই তাই লাবণ্যকে কল করেই জিজ্ঞেস করবে এশা সাদাফের সাথে আছে কি না। যেই ভাবা সে কাজ। এশা লাবণ্য’র নম্বরে কল করলো। কয়েকবার রিং হতেই লাবণ্য কল রিসিভ করে,

-হ্যালো, তানহা। কেমন আছো?

-ভালো না আপু। তুমি কেমন আছো?

-আমি তো ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। তুমি ভালো নেই কেন?

-আসলে আপু, এশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর বাসায় সবাই অনেক চিন্তা করছে।

-কি বলো? হয়তো সাদাফের সাথে কোথাও গিয়েছে।

-না, আপু আজ পর্যন্ত আমরা একসাথেই ছিলাম। এরকম কিছু হলে ও আমাকে আগেই বলতো। আমার খুব টেনশন হচ্ছে আপু। আপনি একটু সাদাফ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে আমাকে জানান প্লিজ।

-ওকে পাগলী মেয়ে, চিন্তা করো না। ও হয়তো সাদাফের সাথেই আছে। আমি এক মিনিটে সাদাফকে জিজ্ঞেস করে তোমাকে কল ব্যাক করছি কেমন?

-ওকে আপু।

লাবণ্য কল কেটেই সাদাফের নাম্বারে ডায়াল করলো। সাদাফ কল রিসিভ করতেই লাবণ্য জিজ্ঞেস করে,

-এশা তোর সাথে আছে?

-মানে? এশা আমার সাথে থাকবে কেন? আগে বিয়ে তো করি তারপর একসাথে থাকবো। তুই এসব কি কথা বলিস বিয়ের আগেই একসাথে থাকবো?

-ফাজলামো বাদ দে সাদাফ। এশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।ওর বাসার সবাই অনেক চিন্তা করছে। তাই তানহা আমাকে কল দিয়ে বললো, তোকে জিজ্ঞেস করতে তোর সাথে আছে কি না?

-কি বলিস ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? আমাদের তো আজ দেখা হয়নি। দুপুর থেকে ওকে ফোনেও পাচ্ছি না আমি। বারবার সুইচড অফ বলছে।

-তাহলে কি হয়ে গেলো মেয়েটার? ও কি কোনো বিপদে পড়েছে?

-বাজে কথা বলবি না লাবণ্য আমার শরীরে রক্ত থাকতে আমি এশার কিছু হতে দিবো না।

কথাটা বলেই কল কেটে দেয় সাদাফ। লাবণ্য তানহাকে কল করে জানিয়ে দেয় সাদাফের সাথে আজ এশার দেখা হয়নি। সাদাফ কল কেটে তক্ষুনি বাসা থেকে বের হয়ে যায় এশাকে খুঁজতে। সাদাফ এদিক সেদিক সব বন্ধুদের লাগিয়ে দেয়। তারপর এশার পেছনে লাগিয়ে রাখা দু’জন গোপন সোর্স কে কল করে যা জানতে পারে। সেটা জেনে রাগে সাদাফের কপালের রগ ফুলে যায়। চোখ মুখ কেমন লাল বর্ণ ধারণ করে।
_______________________

এদিকে নিজের ছেলেকে পাঠিয়ে এশাকে তুলে নিয়ে এসেছে এস.এ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করতে। মানে সাদাফকে মানসিক ভাবে অসুস্থ করে দিতেই এশাকে তুলে নিয়ে আসার প্ল্যান করে তিনি। এতে সাদাফ এশাকে হারিয়ে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে। আর তারপরই ছেলের শোকে মিস্টার সৈকত আহমেদ ভেঙে পড়বে। ধীরে ধীরে তার দাঁড় করানো ব্যবসারও অবনতি হবে। তখন চৌধুরী সাহেব এ শহরে সবার থেকে উচু আসনে তার ব্যবসাকে দাঁড় করাতে পারবে। এই তার প্ল্যান। কিন্তু কে জানতো তার ছেলে এশাকে তুলে আনতে গিয়ে তার প্রেমে হাবুডুবু খাবে? জানলে কখনোই তিনি ছেলেকে এ দায়িত্ব দিতেন না।

চৌধুরী সাহেবের একমাত্র ছেলে আমান চৌধুরী এশাকে তুলে নিয়ে এসেই বাবার কাছে আবাদার করে, সে এশাকে বিয়ে করতে চায়৷ আজ এবং এখনই। তারপর সাদাফকে দেখিয়ে দিতে চায় কেড়ে নেওয়ার শাস্তি কতটা ভয়ানক হয়? ঠিক যেভাবে ছোট সময় সাদাফ ক্লাসের ফার্স্ট বয় হতে সরে গিয়েছিল। সাদাফ আসার পূর্বে সবসময় আমান স্কুলে ফার্স্ট হতো। কিন্তু সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় সাদাফ ওদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়। তখনও আমানের রোল ০১ ছিলো। কিন্তু পরবর্তী বছর সাদাফের রোল ০১ হয়ে যায়। এরপর থেকে আমান আর কখনো ক্লাসের ফার্স্ট বয় হতে পারে নি। এতে ভেতরে ভেতরে সাদাফের উপর আমানের মনে ক্রোধের জন্ম হয়। সেই ক্রোধের রোষানলে জ্ব লে ই আমান এশাকে সাদাফের থেকে কেড়ে নিতে চাইছে।

আমান বড্ড জেদি ছেলে। সে যখন বলেছে এশাকে বিয়ে করবে মানে করবেই। তাই চোধুরী সাহেবও বাধ্য হয়ে ছেলের কথা মেনে নিলেন। সে শান্ত স্বরে ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন,

-আমান বাবা, তোমার যখন ইচ্ছে তুমি এই মেয়েকেই বিয়ে করো। কিন্তু দুটো দিন সময় নাও।

-নাহ, দুটো দিন অনেক সময়ের ব্যাপার এরমধ্যে সাদাফ এসে ওকে নিয়ে যাবে।

-সাদাফ জানতেই পারবে না এশা এখানে আছে। তুমি আজ রাতটা অন্তত পার হতে দাও। কাল কাজী ডেকে আমি নিজে এই মেয়ের সাথেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো।

-তুমি সাদাফকে চেনো না বাবা। ও আবারো এসে আমার থেকে মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিতে চাইবে। সেই সুযোগ আমি দিবো না। আমি যেহেতু বলেছি আমি আজকেই মেয়েটা বিয়ে করবো। তারমানে আজ, এই মুহুর্তেই আমি বিয়ে করবো। কেউ আটকাতে পারবে না আমায়। এমনকি তুমিও না বাবা।

বলেই আমান গটগট করে হেটে কোথাও একটা চলে গেলো। তারপর আবার পেছনে ফিরে কৃত্রিম হেসে চৌধুরী সাহেবকে লক্ষ্য করে বললো,

-হালকা পাতলা শপিং করতে যাচ্ছি। বিয়ে করবো বউকে কিছু দিবো না এটা কেমন দেখায় না?

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে