প্রেম প্রেয়সী পর্ব-০৪

0
568

#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৪
#আয়েশা_আক্তার

পরদিন,
এশার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী তানহা সকাল সকাল এশাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো। এশা ভেবেছিলো তানহা এমনি এমনিই কাল বলেছিলো যে সে এসে এশাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এতো দেখি সত্যিই এশা এসে হাজির।

-কি রে কই হারায় গেলি? আমি সেই কখন এসেছি। আন্টির সাথে এতোক্ষণ গল্প করে তোর রুমে এলাম আর তোর কোনো পাত্তাই নেই। এভাবে ঘরের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকতে দমবন্ধ লাগে না তোর।

-একদমই না। বরং আরো বেশি ভালো লাগে একা থাকতে।

-আল্লাহ, তুই কেমনে পারিস? আমি তো দু’সেকেণ্ড ও কারো সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না।

-আপুর কথা আর বলবেন না। আমার আপু পারলে সারাদিন রাত রুমের দরজা, জানালা অফ করে বসে থাকে। কারো সাথে মিশতেই চায় না।

এশার বোন ইয়াশা ওদের কথার মাঝখানে এসে কথাগুলো বললো। এশা বোনের দিকে কটমট করে তাকালো। ইয়াশা ভয় না পেয়ে উল্টো হেসে ফেললো। এটা দেখে এশা একটু বিরক্ত বোধ করলো। বোনকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো এশা তার আগেই তানহা ইয়াশাকে বললো,

-শুনো ইয়াশা, আমি আপুর বন্ধু তাই তোমার আপুর মতো আমিও তোমার আরেকটা আপু তাইনা?

ইয়াশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।

-তাহলে আমায় তুমি আপনি করে বলছো কেন? তুমি করে বলবে ওকে?

-ওকে তানহা আপু।

– এইতো গুড গার্ল। (ইয়াশার গাল দুটো টেনে বললো তানহা।)

এশা মনে মন ভাবতে লাগলো, এই মেয়ে কাল পরিচয় হয়ে আজ এশে তার বোনের নামও জেনে ফেলেছে? আবার নাকি মায়ের সাথেও আড্ডা দিয়েছে এতোক্ষণ! কি করে এতো তাড়াতাড়ি সবার সাথে মিশতে পারে ও-ই জানে।

-কি রে এশা তুই কই হারায় যাস বারবার? তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে বের হতে হবে তো।

এশা বিনাবাক্য ব্যয়ে ওয়ারড্রব থেকে একসেট পিংক কালার থ্রি পিচ নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। তার কিছুক্ষণ পর ড্রেস চেঞ্জ করে হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো। মুখে একটু সানস্ক্রিন দিয়ে, লম্বা চুলগুলো খোঁপা করে নিলো, তারপর একটা পিংক কালারের হিজাব মাথায় জরিয়ে পিন আপ করে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো। তারপর ঠোঁটে লিপজেল দিয়ে হাত ঘড়িটা বা হাতে পরে নিয়ে সাইড ব্যাগে মোবাইল নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। মায়ের কাছে বলে, তানহার সাথে বেরিয়ে পরে। বাস স্টেশনে এসে বাসে উঠে পাশাপাশি দুটো সিটে বসে এশা এবং তানহা। এশা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে চুপ করে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বাইরে তাকিয়ে সে কাউকে খুঁজছে। আর বর্তমানে এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য বাকি সব বানের জলে ভেসে যাক। কিন্তু তানহা মোটেও চুপচাপ বসে থাকার পাত্রি নয়। তাই সে এশাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,

-বাইরে তাকায় কি খুঁজছিস? তোর বয়ফ্রেন্ড কে?

-বয়ফ্রেন্ড মানে? (এশা তানহার দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলো)

-বয়ফ্রেন্ড মানে তোর প্রেমিক। এশা তুই এমন একটা ভাব করছিস যেনো এ নাম তুই প্রথমবার শুনলি! কেন তোর বয়ফ্রেন্ড নেই?

-আমার আর বয়ফ্রেন্ড? মন যার কাছে চলে গেলো তার দেখা আর পাবো কি না তারই ঠিক নেই আবার বয়ফ্রেন্ড, হাহ!

-তারমানে, ইউ হ্যাভ এ্যা ক্রাশ?

-কিছুটা সেরকমই।

-ধুর, হেয়ালি না করে ঘটনা কি বলতো।

এশা এবার বাইরে তাকিয়ে উদাস মনে নৌকায় দেখা অপরিচিত ছেলের কথা খুলে বললো। এটা শুনে তানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-তার নাম কি?

-জানি না।

-বাসা কোথায়? এটলিস্ট ঠিকানা তো নিয়ে আসবি?

-না, ঠিকানাও জানি না। অদ্ভুত আমি তো তার সাথে কথাই বলিনি। শুধু জানি সে নৌকা চালাচ্ছিলো। আর আমি এবং মামা সেই নৌকা দিয়েই নদী পার হয়েছি।

এটা শুনে তানহা হু হু করে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো,

-শেষে কি না মাঝির প্রেমে পড়লি তুই এশা? তুই তো দেখছি নাটক সিনেমাকেও হার মানিয়ে দিয়িছিস। হাহাহা।

-হাসিস না তো তানু। আমার ভাল্লাগছে না কিছু।

-ওকে, দোস্ত মন খারাপ করিস না। আমি দোয়া করে দিলাম তুই তোর মাঝিকে খুব শীগ্রই পেয়ে যাবি। আগে চলে আমার হিরোকে দেখবি। তারপর দু’জন মিলে না হয় তোর সেই নৌকার মাঝিকে খুঁজে বের করবো।

-হুম, গাড়ি থেমে গেছে এবার নাম।

এশা এবং তানহা বাস থেকে নেমে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। তানহা গিয়ে আশেপাশের কয়েকজনকে কি যেনো জিজ্ঞেস করে আবার ফিরে এলো। তারপর তারা জিজ্ঞেস করে করে সাদাফ দের কমপিটিশনের ওখানে চলে গেলো। তারা স্টেজের সামনে গিয়ে স্টুডেন্টদের জন্য যেখানে জায়গা রাখা হয়েছে সেখানে গিয়ে বসলো। তারা বসার কয়েক সেকেন্ড পরই মাইকে সাদাফের নাম উচ্চারিত হলো, সাথে চারপাশ হাত তালির শব্দে মুখরিত হলো। সাদাফের নাম শুনে তানহা নিজের হাত দিয়ে এশার একটা হাত চেপে ধরে। এশা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তানহা ফিসফিসিয়ে বললো,

-কি কানেকশন দেখেছিস? আমি এসে বসার সাথে সাথে আমার হিরোকে স্টেজে ডাকা হলো।

এশা বিরক্ত মুখে স্টেজের দিকে তাকালো। সে যা দেখলো তারজন্য এশা মোটেও প্রস্তুত ছিলো। তার মুখ দিয়ে অস্ফুটে উচ্চারিত হলো,” এইতল সেই শ্যাম পুরুষ! ” তানহা এশার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,

-কিরো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস? কি তাক লেগে গেলি তো আমার হিরোকে দেখে। শুধু দেখেই এ অবস্থা তার গান শুনে কি করবি রে তুই এশা?

এশা হাসার চেষ্টা করে বললো, তুই কি যে বলিস তানহা? আমি তাক লেগে যাবো কেন? আমি তো জানতামই তোর পছন্দ যখন তখন সে অবশ্য সেরা হবে।

-হ্যাঁ এবার তার গান শুনলেই বুঝবি আমার পছন্দ খারাপ হতেই পারে না।

তানহার হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে এশা কিছুই বলতে পারলো না। তানহাকে তার বলা হলো না, এটাই সেই মাঝি, বলা হলো না এটাই এশার শ্যাম পুরুষ। তবে এশা বুঝতে পারলো তার বুকের বা পাশে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। এশা সেই ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে গান শোনা মন দিলো। সাদাফ আজও সবাইকে সালাম দিয়ে গাইতে শুরু করেছে,

“আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি।”

দুই লাইন গেয়ে সামনে খেয়াল করতেই সাদাফের চোখ পড়লো সেদিন নৌকায় থাকা অপরিচিতা মেয়েটি সামনে দর্শকের ভিরে বসে আছে। চোখে ভুল মনে করে সাদাফ চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। এবারও দেখলো মেয়েটি সত্যিই সেদিনের মতোই তার দিকে তাকিয়ে তার গান শুনছে। মুহুর্তেই সাদাফের মন ভালো হয়ে গেলো। আজ আর সাদাফ চোখ সরিয়ে নিলো না। বরং পিংক কালারের থ্রি পিছ পড়া মেয়েটির দিকে চেয়ে থেকেই গাইতে শুরু করলো,

“আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি।
বাজে ঝিনিঝিনি রিনিঝিনি
তোমারে যে চিনি চিনি।
মনে মনে কত ছবি এঁকেছি,
আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি।

এশা আর তানহা পাশাপাশি বসেছে। তাই সাদাফ যখন এশার দিকে তাকিয়ে আছে তখন তানহা ভাবছে সাদাফ হয়তো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সাদাফের তাকানো দেখে লাল, নীল বসন্ত এসে যেন তানহার মন ছুঁয়ে দিলো। লজ্জারা এসে তানহার মুখ উপচে পড়ছে। তানহা এশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

-এশা, দেখছিস সাদাফ আজ আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। আমার যে কি লজ্জা লাগছে। আবার খুশিও লাগছে আগে কখনো ও ফিরেও তাকায়নি আর আজ এভাবে তাকিয়ে আছে ভাবতেই খুশি লাগছে।

এশা তানহার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সাদাফের দিকে তাকালো। এশা মনে মনে বললো, তবে আমার কেন মনে হচ্ছে উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে? হয়তো আমার মনের ভুল। উনি হয়তো তানহার দিকেই চেয়ে আছে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে