#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০৩
#আয়েশা_আক্তার
ভার্সিটিতে গিয়ে এশা চুপচাপ ক্লাসের এক কর্ণারে বসে আছে। হঠাৎ তার কাঁধে কোমল স্পর্শ পেয়ে সে ঘুরে তাকায়। চেয়ে দেখে এক হাস্যোজ্জ্বল সুন্দর মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এশা তাকাতেই মেয়েটি জিজ্ঞেস করে,
-আমি কি এখানে বসতে পারি?
এশা কৃত্রিম হেসে জবাব দিলো, – অবশ্যই।
মেয়েটি বসতে বসতে বললো, -আচ্ছা তোমার কি মন খারাপ? আর আমি কি তোমায় তুই করে বলতে পারি?
মেয়েটি এমন প্রশ্ন করবে সেটা এশা আশা করেনি। তাই হতভম্ব হয়ে শুধু চেয়ে রইলো। আর মনে মনে ভাবতে থাকলো, এটা নিশ্চিত বাঁচাল টাইপ মেয়ে। যারা বেশি কথা বলে তাদের বাঁচাল বলা হয়। তবে বেশি কথা বললেও এরা সরল প্রকৃতির হয়। এদের মনে কোনো প্যাঁচ থাকে না। এরা যেমন খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশতে পারে। তেমনই এদের মনে যা থাকে অকপটেই সেগুলো বলে ফেলতে পারে।
এশার এমন তাকিয়ে থাকা দেখে মেয়েটি এশার সামনে দিয়ে বার কয়েক নিজের হাত এপাশ ওপাশ করলো। এতে এশার ধ্যান ভাঙলো। এশা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো,
-না, আমার মন খারাপ নয়।
-তাহলে এমন হুতুমপেঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেন?
এশার অনুমতি দেওয়ার আগেই মেয়েটি তুই করে বলতে শুরু করেছে। এতে অবশ্য এশার আপত্তি নেই। কারণ একই ডিপার্টমেন্টের একই ক্লাসে যেহেতু পড়ে সেক্ষেত্রে তারা বন্ধু। আর বন্ধুকে বন্ধু তুই করে বলতেই পারে। এশার জবাব দেওয়ার আগেই আবারো মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো,
-তুই কি নতুন এডমিট হয়েছিস ভার্সিটিতে? না মানে এই ক’মাস দেখিনি তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
এশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলো,
-নতুন এডমিট হইনি তবে আমি ভালো করে একমাসও ক্লাস করিনি।
-ওমা কেন? এতো ফাঁকিবাজ হলে চলে?
-ফাঁকিবাজ না রে ভার্সিটিতে কাউকে চিনি না। নতুন পরিবেশ তাই ভালো লাগে না আসতে।
-কি যে বলিস! আমার তো নতুন নতুন পরিবেশে যেতে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে। তো নাম কি তোর?
-এশা ইসলাম তোমার?
-তাবাসসুম তানহা, আর তুই আমায় তুমি করে বলবি না। তুই করে বলবি বুঝেছিস?
-ওকে।
-হ্যাঁ, একটা পার্সোনাল কথা জিজ্ঞেস করবো?
-হ্যাঁ, করতেই পারিস।
তানহা কিছু বলে উঠার আগেই ক্লাসে স্যার চলে আসলো। তাই সে আর কিছু বলতে পারলো না। প্রথম ক্লাস যখন প্রায় শেষ সময় ঠিক তার পাঁচ মিনিট আগে একটা নোটিশ এলো। স্যার সবাইকে মনোযোগের সহিত শোনার আদেশ দেওয়ায় সবাই বেশ মনযোগ দিয়ে স্যারের কথা শুনার চেষ্টা করলো। নোটিশে জানালো, ভার্সিটির কর্তৃপক্ষ সবাইকে কোনো এক গানের কমপিটিশনে যেতে হবে। তাই আজ প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পরই ভার্সিটি ছুটি। এবং আগামী দু’দিন ভার্সিটি বন্ধ থাকবে। এ নোটিশ পেয়ে অনেকেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। এমনকি তানহা নিজেও। কিন্তু এশার এতে কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
-যাক দু’দিন বাঁচলাম।
-বাঁচলি মানে? ভার্সিটি বন্ধ তাই?
-হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার ভার্সিটিতে একদমই আসতে ইচ্ছে করে না।
-তুই না বললি তোর কোনো বন্ধু নেই, কাউকে চিনিস না তাই ভালো লাগে না? তাহলে এখন তো আমি আর তুই বন্ধু। এখন সমস্যা কোথায় ভার্সিটি আসতে।
-সমস্যা, নেই আসবো তো দু’দিন পর।
-দু’দিন পর নয় কালই আসবি। তোর বাসার ঠিকানা দে আমি নিজে গিয়ে তোকে পিক করে নিয়ে আসবো।
-কাল এসে কি করবি? কাল তো ভার্সিটি বন্ধ।
-তো কি হয়েছে? গানের কম্পিটিশনে যাবো। বাসায় যদি বলিস ভার্সিটি বন্ধ তাহলে বের হতে দিবে?
-বাসায় বলবোই বা কেন? আর কেনই বা ভার্সিটি আসার নাম করে কমপিটিশনের ওখানে যাবো?
-উফ, আমি যাবো তাই তুই ও যাবি,ওকে?
-তুই কেন যাবি? আর আমি কোথাও যাবো না।
-উফ, আল্লাহ মেয়েটা এতো কথা কেমনে বলে! তুই যাবি আমার সাথে কাল। আর আমি যাবো আমার ক্রাশের গান শুনতে বুঝেছিস?
-তোর ক্রাশ?
– হ্যাঁ, ফাইনাল ইয়ারে পরে সাদাফ আহমেদ। কি সুন্দর যে গান করে আমি তো একবার গান শুনেই প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
-তারমানে তুই প্রেমে পড়েছিস?
-সেটা তো কবেই দোস্ত। কিন্তু কেউ জানে না আজই তোকে বললাম কাউকে বলিস না।
তানহা ফিসফিসিয়ে বললো কথা গুলো। এশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার বাসার ঠিকানা দিয়ে চলে গেলো। তানহাও নিজের বাসার দিকে পা বাড়ালো।
_____________________
সাদাফ আজ ভার্সিটিতে এসেই গান কমপিটিশনে যোগ দেওয়ার জন্য দূরের অন্য একটা ভার্সিটিতে চলে গেছে। কিন্তু তার আজ ভয় হচ্ছে। যেভাবে নৌকায় দেখা অপরিচিত মেয়েটা তার চোখে আর মনে জায়গা করে নিয়েছে। সবসময় শুধু তাকেই ভাবতে ইচ্ছে করে। বন্ধু’রা বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে? এতোক্ষণ না বললেও এবার বলে ফেললো,
-আমি বোধহয় শেষ!
-শেষ মানে?
সাদাফ ঠোক গিলে জবাব দেয়,
-একটা সুন্দরী মেয়ে আমার মনে বসত তৈরি করে ফেলেছে রে তাই শেষ।
-বলিস কি? কে সে? (সবাই চিৎকার করে বললো একসাথে)
-কে সে জানি না তবে আমার মনে হয় এটাই সেই প্রেয় প্রেয়সী যার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করে ছিলাম।
-প্রেমে পড়ে গেলি, মনের ঘরে জায়গা দিয়ে ফেললি আর জানিসই না মেয়েটা কে? এটা আবার কেমন কথা?
লাবণ্য জিজ্ঞেস করলো। আর বাকি সবাই জিজ্ঞেসু দৃষ্টি নিয়ে সাদাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাদাফ মেয়েটির সাথে কোথায় দেখা হয়েছে সেই ঘটনা বন্ধুদের খুলে বললো। সবাই হুহু করে হেসে ফেললো। অমিত হাসতে হাসতে বললো,
– সবচেয়ে বড় কথা হলো শেষে তুই ও প্রেমে মজনু হলি!
সাদাফ কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই স্টেজের মাইকে লাবণ্য এবং সাদাফের নাম এনাউন্সমেন্ট করা হলো। হ্যাঁ, আজ লাবণ্য এবং সাদাফ ডুয়েট গান গাইবে। গানের সুত্রেই সাদাফ -লাবণ্যর বন্ধুত্ব হয়েছে। তারা দু’জন বাকি বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে স্টেজে উঠে গেলো। সবাইকে সালাম জানিয়ে লাবণ্য গাইতে শুরু করলো,
তোমার ইচ্ছে গুলো, ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো
ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো।
এটুকু গেয়ে লাবণ্য থেমে গেলো। কয়েক সেকেন্ড পর সাদাফ গাইতে শুরু করলো,
তোমার ইচ্ছে গুলো, ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো
ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পারো।
আমার ভালোলাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো।
সাদাফ থামতেই লাবণ্য আবার শুরু করলো,
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো।
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো।
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়োসড়ো।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ইচ্ছে গুলো।
লাবণ্য স্টেজে সাদাফের পাশে গান গাইছে ঠিকই। কিন্তু তার মনে চোখে বার বার মেহেদী চলে আসছে। ঠিক তেমন সাদাফের মনেও বারবার অপরিচিত আসমানী পরীটা এসে হানা দিচ্ছে। সাদাফও তার অপরিচিতাকে মনে করেই গাইছে,
তোমার আবেগ মাখা খামখেয়ালী
হাঁটছে আমার পিছু।
আমার আসা যাওয়ার পথের বাঁকে
পায়নি অন্য কিছু।
সাদাফ থামার সাথে সাথে লাবণ্য সুর তুললো,
তোমার আবেগ মাখা খামখেয়ালী
হাঁটছে আমার পিছু।
আমার আসা যাওয়ার পথের বাঁকে
পায়নি অন্য কিছু।
এভাবে দুজন একসাথে পুরো গানটা গেয়ে শেষ করলো। ওরা থামতেই চারপাশ হাত তালিতে মুখরিত হলো। তারা যেন আগাম জানিয়ে দিচ্ছে এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী সাদাফ এবং লাবণ্য। যদিও তিনদিন পার্টিসিপেট করার পর। সর্বোচ্চ বাছায় করে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে।
চলবে…