#প্রেম_প্রেয়সী
#পর্ব_০২
#আয়েশা_আক্তার
সাদাফ আহমেদ বেশ শৌখিন একজন মানব। তার পোষাক, চালচলন, কথাবার্তা সবকিছুই বেশ গোছানো এবং মার্জিত। তার গায়ের শ্যাম রঙের সাথে মানিয় সবসময় সে পোষাক নির্বাচন করে। সেও ঢাকা শহরেরই বাসিন্দা। তবে তার বাবা সাহাবউদ্দীনের জন্ম রূপপুর গ্রামে। এর মানে হলো সাদাফের দাদাবাড়ী রূপপুর গ্রামে। পড়াশোনার ফাঁকে প্রায়ই যাওয়া হয় সেখানে তাঁর। গ্রামে সে বেশ এনজয় করে। সেখানে গিয়ে সে সাঁতার, নৌকা চালানো সবই শিখেছে। রূপপুর বেড়াতে গিয়ে প্রায়ই শখের বশে নৌকা চালিয়ে মানুষজন পারাপার করে সাদাফ। আর আজও সে ঢাকা আসার পূর্বে নিজে নৌকা চালিয়ে নদী পার হয়েছে। সেই সাথে কিছু মানুষকেও পার করেছে। ঢাকায় ফিরতেই বন্ধু’রা তার বাসায় এসে হাজির হয়েছে। অমিত, লাবন্য, প্রিতম, হৃদয় হচ্ছে সাদাফের ভার্সিটি লাইফের বন্ধু। সেই প্রথম বর্ষ থেকে এখনো তারা একসাথে আছে। কিন্তু কে জানে এবছর পর তারা কে কোথায় চলে যাবে! হ্যাঁ, সাদাফ ও তার বন্ধু’রা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। সাদাফ গ্রামে থাকায় অনেক দিন তাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়ে উঠেনি। তাই আজ সাদাফের ফেরার খবর শুনেই সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছে। কিন্তু সাদাফের আজ কোনো কিছুতেই মন নেই। তার চোখে বারবার শুধু একটা মায়াবী মুখচ্ছবি ভেসে উঠছে। হ্যাঁ আজ সকালে নৌকা চালিয়ে গ্রামের নদী পার হওয়ার সময় নৌকায় দেখা একটা মেয়েকে দেখে চোখ আঁটকে গিয়েছিল সাদাফের। সোজাসুজি মেয়েটির দিকে না তাকালেও বেহায়া চোখ বারবার চলে যাচ্ছিলো তার দিকে। সুন্দর একটা মায়াবী মুখ, টিকালো নাক, বিনুনি করা চুল, হালকা আকাশি রঙের কাপড়ে সাদা এমব্রয়ডারি কাজ করা একটা সাধারণ থ্রি পিছ জড়ানো গায়ে, ব্যাস এটুকুই। এতো সাধারণ লুকেও মেয়েটিকে কেমন অসাধারণ লাগছিলো।
-কি রে আমাদেরকে সামনে বসিয়ে কই হারিয়ে গেলি?
সাদাফের ভাবনার মধ্যেই লাবন্য কথাটা বলে উঠে। সাদাফ ধ্যান ভেঙে সামনে তাকাতেই দেখে লাবন্য আকাশি রঙের একটা লং টপস পড়েছে। আকাশি রঙটা দেখে আবারও সাদাফের চোখের সামনে সকালে দেখা মেয়েটির প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। এবার সাদাফ মাথা নেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। আর ভাবে, “নাহ, আর বাঁচা গেলো না। এবার বোধহয় প্রেম প্রয়সী চলেই এলো!” যারজন্য সাদাফ এতোদিন অপেক্ষায় ছিলো।
-কি রে হা করে কি ভাবছিস? সেই কখন থেকে বসে আছি আমরা। তুই কোনো কথাই বলছিস না! (লাবন্য)
লাবন্যের কথা শুনে সাদাফ ফেকাসে চেহারা নিয়ে জবাব দিলো,
-আজ অনেক ক্লান্ত লাগছে। আজ আমার আর বের হওয়া হবে না। তোরা রাগ করিস না প্লিজ। কাল ভার্সিটি গিয়ে দেখা হবে। আর কম্পিটিশন নিয়ে সব রকম আলোচনাও কালই হবে।
-আচ্ছা, তাহলে আজ আমরা যাই। তুই বরং রেস্ট নে।
কথা শেষ করে সাদাফের বন্ধুরা সব চলে গেলো। সবাই কিছু না বুঝলেও লাবন্যর মনে হতে লাগলো, সাদাফের কিছু একটা হয়েছে। তা না হলে সাদাফ তো এমন করে না কখনো? কি জানি আমি হয়তো বেশি ভাবছি। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের বাসায় পৌঁছালো লাবণ্য। বাসায় গিয়ে দেখে মেহেদী এসেছে। নিমিষেই লাবন্যর মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায়। মেহেদী লাবন্যর হবু হাসবেন্ড। দুই পরিবার মিলে তাদের বিয়ের পাকা কথা বলে রেখেছে। প্রথমে দু’জন দু’জনের উপস্থিতিতে অস্বস্তি বোধ করলেও ধীরে ধীরে দু’জন দু’জনকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। আর তারজন্যই এখন দু’জন নির্ভয়ে একজন আরেকজনের সাথে হাটতে হাটতে কথা বলতে বলতে পথ পাড়ি দিতে পারে। মেহেদীকে দেখেই লাবণ্য ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কখন এলে?
-এইতো কিছুক্ষণ।
-হঠাৎ না বলেই চলে এলে? বললেই তো আমি বাসা থেকে বের হতাম না তাহলে।
– ভেবেছিলাম বউকে চমকে দিবো এসে। কিন্তু হায় ভাগ্য! বউকে ছাড়াই এক ঘন্টা পার হয়ে গেলো!
কাঁদো কাঁদো মুখ করে কথাগুলো বললো মেহেদী। লাবণ্য এটা দেখে হেসে ফেললো। রিনরিনে হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বললো,
-এখন তাহলে কি করতে হবে আপনার জন্য?
-বেশি কিছু না ঘরে গিয়ে বিছানার ডান পাশে দেখবেন একটা ব্যাগ আছে। সেটাতে যা আছে তা পড়ে চটপট তৈরি হয়ে আসুন বাইরে বের হবো একটু। শাশুড়ী আম্মুকে বলেছি আগেই। আপনার আর বলতে হবে না।
-ওকে দু মিনিটে আসছি। তুমি টিভি অন করে দেখতে থাকো।
-আপনার দু’মিনিট মানে কতক্ষণ বলবো?
-না বলতে হবে না। যা বলেছি সেটা করো।
বলতে বলতে লাবণ্য ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ঘরে এসে দেখে, বিছানার ডানপাশে একটা শপিং ব্যাগ রাখা। ব্যাগে কি আছে দেখতে গিয়ে লাবণ্য অবাক হলো বেশ! ভেতরে একটা পার্পল কালার শাড়ি, পার্পল কালার এক মুঠো কাচের চুড়ি, পার্পল রঙের পাথর দেওয়া একজোড়া ঝুমকো। লাবণ্য এসব দেখে ভীষণ খুশি হয়ে গেলো। সে এগুলো বিছানায় রেখে রুম থেকে বেরিয়ে আশপাশ দেখে নিলো কেউ আছে কি না। কেউ নেই নিশ্চিত হয়ে ড্রয়িং রুমে বসা মেহেদীর দিকে এগিয়ে গেলো। রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার মা মিসেস স্বপ্না বেগমকে দেখা যাচ্ছে কি না। দেখতে না পেরে। মেহেদীর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বললো,
“এতোগুলা গিফট দিয়ে খুশি করার জন্য এটা আপনার।”
বলেই দৌড়ে রুমে চলে আসলো লাবণ্য। ঘটনার আকস্মিকতায় কি হলো সেটা বুঝতে পারলো না মেহেদী। গালে হাত দিয়ে লাবণ্যর ঘরের দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু। কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পেরে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে অস্ফুট উচ্চারণ করলো,
-পাগলী!
কিছুক্ষণের মধ্যেই লাবণ্য তৈরি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ততক্ষণে স্বপ্না বেগমও রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। মেয়ের দিকে তাকাতেই তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো
-মাশাল্লাহ, নজর না লাগুক।
লাবণ্য মায়ের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো, -দেখতো মা কেমন লাগছে?
-একদম রাজকুমারীদের মতো লাগছে তোকে।
-উফ, মা! তুমি সবসময় বানিয়ে বলো।
এবার স্বপ্না মেহেদীর সামনে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,- বলো তো কেমন লাগছে আমাকে?
মেহেদী শাশুড়ীর সামনে কিছু বলতে পারলো না। শুধু স্বপ্না বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-মা, আমরা বের হচ্ছি।
লাবণ্য মেহেদীর এমন আচরণে অবাক হলো। সে কি জিজ্ঞেস করলো আর মেহেদী তার জবাব না দিয়ে এটা কি বললো! আশ্চর্য! এতে লাবণ্যর খানিক মন খারাপ হলো। সে গাড়িতে গিয়ে মন খারাপ করে বসে রইলো। মেহেদী গাড়িতে উঠে বসে সিট বেল্ট বেঁধে নিলো। তারপর লাবণ্যর নরম গালে টুপ করে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে ড্রাইভিং করতে শুরু করলো। লাবণ্য একবারো মেহেদীর দিকে তাকায়নি। মেহেদী বুঝতে পারে তার মন খারাপ হয়েছে। তাই হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে লাবণ্যর দিকে চেয়ে রইলো। হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় লাবণ্য মেহেদীর দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায়। মেহেদী কাব্যিক সুরে বলতে শুরু করে,
“আমি কবি হলে না হয়
কাব্যের সুরে করতাম তোমার রূপের বর্ণনা।
তুমি কি জানো? তোমায় স্বর্গের পরীর চেয়েও
সুন্দর লাগছে প্রিয়তমা।”
লাবণ্যর মন ভালো হয়ে গেলো। তার ঠোঁটে লজ্জা রাঙা হাসিরা এসে ভিড় জমালো।
চলবে…