প্রেম প্রেম খেলা পর্ব-১১

0
962

#প্রেম_প্রেম_খেলা(১১)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তানহা যে আদ্রিয়ান কে ভালোবাসে সেটা আমি শিওর না।তবে ওর ভাবসাব দেখে বোঝা যায় সে আদ্রিয়ান কে ভালোবাসে তবে এখনো প্রকাশ করে নি সেটা।সানি ছেলেটা উপরে উপরে ভালো হলেও পুরাই ক্যারেক্টারলেস ছেলে একটা।ওর সাথে শুটিং করার সময় ওর অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শতেই আমি বুঝেছি সেটা।তাছাড়া তার সাথে যখন আমি চ্যাটিং করি সে এক দিনেই পটে গিয়েছিলো আর আমার সাথে মিট করতে চাইছিলো।উল্লাস আর লিথিকে সন্দেহের বাহিরেই রাখলাম।কারণ এরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।তাছাড়া যথেষ্ট ভালোও আছে। এদের কোনো খারাপ দিক এখনো আমার চোখে পড়ে নি।আর টিনার ব্যাপারে এখনো কিছু বুঝতে পারছি না।সে এদের সাথে বেশি একটা ঘনিষ্ঠ না।মাঝেমধ্যে দেখা যায় তাকে।

—আদ্রিয়ান?ওর ব্যাপারে কি জানলে?

অহনা এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আর বললো এই বেটার চরিত্র পুরোপুরিই ভালো আছে।তাকে অনেকভাবে পটানোর ট্রাই করেছি বাট সে পটে নি।তবে সে খুব স্বার্থপর একটা ছেলে।স্বার্থের জন্য যে কাউকে ব্যবহার করতে পারে আবার স্বার্থ শেষ হলে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতেও পারে।

–মিঃ আতিক হাসান আর তমালিকা খন্দকার কে দেখে কি মনে হলো?

;ওনারা ভীষণ ভালো মানুষ। আমাকে তো একদম নিজের মেয়ের মতো দেখেছে।এখন অবশ্য আর মেয়ে ভাবে না।যেই শুনেছে আমি মোহনার বোন তখনি তাদের মুখচোখ কেমন যেনো অমাবস্যার চাঁদের ন্যায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।মনে হয় ওনারা মোহনা আপুকে পছন্দ করতেন না।

ইন্সপেক্টর অনিল অহনার মুখে সবার সম্পর্কে এসব বিস্তারিত শুনে বললো,আগেই তোমার পরিচয় দেওয়া উচিত হয় নি তাদের।আরো কিছুদিন অভিনয় টা চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।

অহনা তখন বললো আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না অনিল।কারণ আদ্রিয়ান মোহনা আপুর প্রতি এতোবেশি ভালোবাসা দেখাচ্ছিলো যে তখন আমার পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব হয় নি।

অনিল তখন বললো দেখো অহনা তুমি আদ্রিয়ান কে নিয়ে সন্দেহ করছো তো কিন্তু আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান সত্যি মোহনাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো।তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে দূরে রাখো।ও বেচারা মোহনাকে এখনো ভালোবাসে তা না হলে তোমার মতো মেয়েকে সে পাত্তা না দিয়ে কিভাবে ছিলো?তুমি বরং ওর বন্ধুদের দিকে নজর দাও ভালো করে।কারণ এরা সবাই মোহনার সাথে একই ভার্সিটিতে পড়েছে।হয় তো হিংসার বশে এরাই কিছু করেছে।

অহনা তখন বললো কিন্তু আদ্রিয়ান যে তার স্বার্থের জন্য আমাকে ইউজ করতে চাইছিলো।আমার সাথে সেও এতোদিন প্রেম প্রেম খেলা খেললো তার কি হবে?

অনিল তখন বললো মোহনাকে ভালোবাসার পিছনে আদ্রিয়ানের কি স্বার্থ থাকতে পারে?

“সেটা তো আমিও ভাবছি।জানলে কি আর তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম?

অনিল হলো অহনার মামাতো ভাই।সে একজন পুলিশ অফিসার।কিছুদিন হলো জয়েন করেছে সে।এই অনিলের সাহায্য নিয়েই অহনা তার বোনের অপরাধী কে খুঁজে বেড়াচ্ছে।যে তমালের সাথে মোহনা হোটেলে ধরা পড়েছে সে কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে।তমাল থাকলে এতোদিন আসল অপরাধী কে তারা ধরে ফেলতো।

এক মাস পরের ঘটনা,

অহনা তার বান্ধুবীদের নিয়ে শপিং করতে গিয়েছে।হঠাৎ অহনা খেয়াল করলো সকল মেয়ে জটলা পাকিয়ে কি যেনো করছে।অহনা আর তার বান্ধুবীরা তাড়াতাড়ি করে সেখানে এগিয়ে গেলো।
কিন্তু টুশু হঠাৎ দুলাভাই দুলাভাই বলে চিৎকার করে উঠলো।
কারণ ওখানে আদ্রিয়ান ছিলো।সেজন্য মেয়েরা তার সাথে সেলফি ওঠার জন্য ভীড় জমিয়েছে।

টুশুর চিৎকার শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো।এবার মেয়েগুলো অহনাকে দেখতে পেয়েও তার সাথে ছবি উঠতে চাইলো।
কারন এখন সবাই জানে অহনা আর আদ্রিয়ান রিলেশনে আছে।

হঠাৎ এক মেয়ে জিজ্ঞেস করলো স্যার ম্যাম কে আবার আপনার সাথে কবে দেখবো?

আদ্রিয়ান আর অহনা সেই কথা শুনে চুপ করে রইলো।কারণ দুইজনই জানে এটা আর কখনোই সম্ভব না।
কিন্তু টুশু তখন বললো এখন ভিডিও তে না দেখা গেলেও কিছুদিন পর তাদের সরাসরি হাজব্যান্ড ওয়াইফ হিসেবেই দেখা যাবে।

টুশুর কথা শোনামাত্র অহনা তাকে সরে নিয়ে এলো আর বললো টুশু,সবার সামনে কি সব বলছিস?জানিস না তুই যেখানে সেখানে এসব বলা ঠিক না।কারণ আদ্রিয়ান আর আমাকে কে নিয়ে যেটাই বলবি সেটাই নিউজ হয়ে যাবে।

টুশু সেই কথা শুনে বললো, নিউজ হলে কি হবে?তোরা যে রিলেশনে আছিস সেটা তো সবাই জানে।

এদিকে সনিয়া আর অর্পা আদ্রিয়ান কে দেখে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে।তারা তো জিজু জিজু বলতে বলতে পাগলরের মতো অবস্থা।
আদ্রিয়ান সবার সামনে কিছু বলতেও পারছে না।সেজন্য সে এড়িয়ে গেলো সবাইকে।আর তার গাড়িতে গিয়ে বসলো।

সনিয়া আর অর্পা আদ্রিয়ান কে এভাবে চলে যাওয়া দেখে অহনা কে বললো, জিজু আমাদের সাথে কথা বললো না কেনো?
টুশু তখন বললো, উনি পাবলিক প্লেসে আমাদের সাথে কথা বলবেন না।দেখলি না অহনার সাথেই কথা বললো না।
অহনা সবার কথা শুনে এবার ভীষণ রেগে গেলো।সে তখন টুশু অর্পা আর সনিয়াকে সব সত্য কথা বলে দিলো।আর বললো কখনোই আদ্রিয়ান কে নিয়ে আর কিছু বলবি না তোরা।না আমি ওনাকে ভালোবাসি, না উনি আমাকে ভালোবাসে।সবটাই একটা গেম ছিলো।এই বলে অহনাও চলে গেলো।

টুশু অর্পা আর সনিয়া তো অবাক।তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না অহনার কথা।এটা কি করে সম্ভব?যে অহনা রাতের পর রাত আর দিনের পর দিন আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান বলে পাগলামি করতো সেটা নাকি সম্পূর্ণ টাই তার নাটক ছিলো।

আদ্রিয়ান ডাইরেক্ট তার বাসায় চলে গেলো।কিন্তু বাসাই যেতেই দেখে তানহার বাবা মা এসেছে।আদ্রিয়ান সবাইকে সালাম দিয়ে আর তাদের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে নিজের রুমে চলে গেলো।তার কেনো জানি ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে।

এদিকে তমালিকা খন্দকার আদ্রিয়ান কে রুমে যাওয়া দেখে নিজেও পিছু পিছু এলেন।আর বললেন, বাবা তুই কি ফ্রি আছি?
আদ্রিয়ান কোনো উত্তর দিলো না।সে আনমনে বাহিরের দিকেই তাকিয়ে থাকলো।তমালিকা আদ্রিয়ান কে চুপচাপ থাকা দেখে বললো,
তানহার বাবা মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,বিয়ে?কার বিয়ে?

তমালিকা তখন বললো কার আবার?তোর বিয়ে।তানহা নাকি তোকে পছন্দ করে।কিন্তু বলার সাহস পায় নি।সেজন্য সে তার বোনকে বলে।তখন তার বোন তানহার বাবা মাকে বললে ওনারা সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন।

আদ্রিয়ান তানহার সাথে তার বিয়ের কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলো। আর বললো মা ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড হয়।ফ্রেন্ড কে আবার কেউ বিয়ে করে নাকি?

–কিন্তু তানহা তো তোকে শুধু ফ্রেন্ড ভাবে না।ও তোকে লাভ করে।আমার মনে হয় ওর ভালোবাসাকে তোর অবমাননা করা ঠিক হবে না।তাহলে ও ভীষণ কষ্ট পাবে।

আদ্রিয়ান তার মায়ের কথা শুনে তানহাকে কল দিলো।আর বললো, এসব কি শুনছি তানহা?তুই নাকি আমাকে লাভ করিস?
তানহা আদ্রিয়ানের কথা শুনে বললো, হ্যাঁ করি।কিন্তু তোকে বলার সাহস আমার হয় নি।

আদ্রিয়ান তখন বললো, দেখ তানহা তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হস।তোকে আমি কি করে বিয়ে করতে পারি?

তানহা তখন বললো মোহনাও তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।তাহলে ওকে কেনো বিয়ে করতে চাইছিলি?,

আদ্রিয়ান এবার আর কোনো উত্তর দিলো না।

তানহা তখন বললো, তুই আমাকে পছন্দ করিস না সেটা বললেই তো হয়,এতো অজুহাত দেওয়ার কি আছে?আমি মনে হয় বুঝি না কিছু?তুই মোহনার বোন অহনার প্রেমে পড়েছিস তাই না?
এই বলে তানহা কল কেটে দিলো।

আদ্রিয়ান সেজন্য আবার কল দিলো।কিন্তু তানহা রিসিভ করলো না কল।

আদ্রিয়ান তখন সানিকে কল দিলো।আর বললো দেখ তো দোস্ত তানহা কি রকম ছেলেমানুষী শুরু করেছে।ও নাকি আমাকে ভালোবাসে।আর বিয়ের জন্য আমার বাসায় ওর বাবা মাকে পাঠায়ছে।

সানি সেই কথা শুনে বললো, সত্যি বলতে কি দোস্ত,তানহা তোকে অনেক আগে থেকেই লাভ করে।আমাদের ও বলেছে।

–তোরাও জানতিস?

“হ্যাঁ জানতাম।আমরা তোকে বলতেও চাইছিলাম।কিন্তু তানহা বলতে বারণ করে দিয়েছে।কারণ তানহা তোর বলার অপেক্ষাতেই ছিলো এতোদিন।সে ভেবেছে তুই নিজে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিবি।

আদ্রিয়ান তখন বললো কিন্তু তানহাকে তো আমি শুধু ফ্রেন্ডই ভাবি।ওকে আমি স্বপ্নেও প্রেমিকা হিসেবে ভাবতে পারি না।

সানি তখন বললো, দেখ দোস্ত,তানহা আমাদের অনেক দিনের ফ্রেন্ড।তুই তো ওর ব্যাপারে সব জানিস।আর ও তোর ব্যাপারে সব জানে।তুই যদি তানহার সাথে তোর বাকি জীবন টা কাটাস মনে হয় না খুব বেশি খারাপ হবে।এটা আমি আমার নিজস্ব মতামত দিলাম।এখন তোর লাইফ, তুই কাকে তোর জীবনের সাথে জড়াবি সেটা তোর ব্যাপার।

আদ্রিয়ান সানির প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে কল টা কেটে দিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।কেনো জানি তার জীবন টা খুব এলোমেলো লাগছে।

▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️

রাত তিনটার সময় ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখে আদ্রিয়ানের ঘুম ভেংগে গেলো।সে দেখতে পেলো মোহনা তার বুকে ছুড়ি বসিয়ে দিচ্ছে।স্বপ্ন টা দেখামাত্র আদ্রিয়ান লাফ দিয়ে উঠলো বিছানা থেকে।তারপর সে এক গ্লাস পানি পুরোটাই খেয়ে ঘরের লাইট অন করে দিলো।আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো না সে কেনো মোহনাকে দেখলো?মোহনা মারা যাওয়ার পর একদিনও সে মোহনাকে স্বপ্নে দেখে নি।আজ হঠাৎ করে মোহনাকে সে দেখলো সেটাও আবার এই ভয়ংকর রুপে?

আদ্রিয়ান তখন তার পুরাতন ডায়রি টা বের করলো।আর মোহনার একটা ছবি হাতে নিয়ে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।আর বললো,
আমাকে একা রেখে কোথায় হারিয়ে গেলে এভাবে?আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই মোহনা।ফিরে এসো মোহনা।না হলে আমাকেই নিয়ে যাও তোমার কাছে।
এই বলে আদ্রিয়ান কাঁদতে লাগলো।আদ্রিয়ানের চোখের পানি টপটপ করে মোহনার ছবির উপর পড়লো।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে