#প্রেম_প্রেম_খেলা
#পর্ব_০৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
অহনা শুটিং স্পটে যেতেই আদ্রিয়ান তাকে ধমক দিয়ে বললো,এতো দেরি হলো কেনো?ঠিক দশ টায় আসতে বলেছি না?
অহনা সেই কথা শুনে বললো, আপনি দশটাই আসতে বলেছেন কিন্তু আমি তো খুশির ঠেলায় সকাল আটটায় এসেছি।কিন্তু গেট খোলা না পেয়ে একটু খেতে গিয়েছিলাম।
আদ্রিয়ান অহনার এমন কথাবার্তা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলো,এই পাগল মেয়েকে তার মিউজিক ভিডিও তে নিয়ে সে আবার ভুল করলো না তো?
হঠাৎ মেকাপ ম্যান আদ্রিয়ানের কাছে এসে বললো,স্যার এদিকে আসুন।আপনাকে রেডি করাতে হবে।আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে চলে গেলো।
অন্যদিকে অহনাকেও অন্য আরেকজন মেকাপ ম্যান নিয়ে গেলো।
অহনাকে পড়ানো হলো পিংক কালারের লেহেঙ্গা আর আদ্রিয়ান কে পড়ানো হলো ব্লাক কালারের শার্ট।দুইজন কে একসাথে দেখতে সেই সুন্দর লাগছিলো।চোখ ফেরানোই যাচ্ছিলো না।আদ্রিয়ান নিজেও বেশ অবাক হলো অহনাকে দেখে।এই কিছুক্ষন আগে যে মেয়েকে সে দেখলো এটা কি সেই মেয়েই?একদম চেনা যাচ্ছিলো না অহনাকে।
অহনা তো আদ্রিয়ানকে দেখে একদম ফিদা হয়ে গেলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো ইসঃ ইনিই কি তার পছন্দের সেই মানুষ। যাকে সে একদম সরাসরি দেখতে পারছে।সে আর দেরী না করে আদ্রিয়ানের কাছে দৌঁড়ে গিয়ে বললো, একটা সেলফি প্লিজ।
আদ্রিয়ান অহনার এমন কান্ড দেখে ওর হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নিয়ে বললো,তুমি কি পাগল?না মানে তুমি এমন ছেলেমানুষী করো কেনো সবসময়?এখন কি সেলফি তোলার সময়?
অহনা সেই কথা শুনে বললো সরি,আর তুলতে চাইবো না।এই বলে অহনা মন খারাপ করে থাকলো।
আদ্রিয়ান অহনার গোমড়া মুখ দেখে ফোন টা ওকে দিয়ে দিলো।আর বললো,তাড়াতাড়ি ওঠাও।বেশি সময় নেই কিন্তু।
অহনা সেই কথা শোনা মাত্র সাথে সাথে ক্লিক ক্লিক করে কয়েক টা সেলফি উঠতে লাগলো।
শুটিং শুরু হয়ে গেলো।
আজ নাজ গার্ডেনে হচ্ছে।কাল হবে ঝরনার পাশে।পরশু হবে পাহাড়ে।এইভাবে মোট পাঁচ জায়গায় যেতে হবে তাদের।একেক দিন একেক জায়গায় যেতে হবে সেজন্য।
সবগুলো সিনে অহনা আর আদ্রিয়ান কে দূরে দূরেই দেখা যাবে।শুধু তারা ঠোঁট নাড়াবে।তবে শেষের দুইটি সিনে শুধু তারা একটু কাছাকাছি থাকবে।সেই সিন টি শেষের দিকে থাকবে।এই সিনটি করার জন্য আদ্রিয়ান আর অহনাকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হলো।
কিন্তু সিন দুইটি করতে আদ্রিয়ান রাজি ছিলো না।তখন ডিরেক্টর বললো একটু ঘনিষ্ঠ না হলে কেউ দেখবে না আপনার ভিডিও।ভিডিও তে এরকম দৃশ্য এখন অহঃরহঃ দেখা যায়।
আদ্রিয়ান ডিরেক্টরের কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো।প্রথম সিনটি ছিলো অহনার হাত ধরে টেনে তাকে তার কাছে আনতে হবে আর তার মুখ টা আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে ঠোঁট স্পর্শ করতে হবে।অহনা তখন লজ্জা পেয়ে চলে যাবে। কিন্তু আদ্রিয়ান আবার অহনাকে তার কাছে টেনে এনে এক ঝটকায় কোলে ওঠাবে।
আদ্রিয়ানের কাছে বেশ ডিফিকাল্ট লাগলো ব্যাপার টা।যেহেতু তার এটা প্রথম কাজ সেজন্য সে ভীষণ নার্ভাস ছিলো।এর আগের ভিডিওতে মেল ক্যারেক্টারে সানি আর উল্লাস ছিলো।কিন্তু এবার আদ্রিয়ানের বন্ধুরা আদ্রিয়ানকেই থাকতে বললো।তাহলে তার মিউজিক ভিডিও আরো বেশি হিট হবে বলে ধারণা করা হলো।
আদ্রিয়ান কে এভাবে ভাবতে দেখে সানি সাহস যোগাতে লাগলো আদ্রিয়ান কে।সে বললো,দোস্ত,এ আর কঠিন কি কাজ?দুই একদিন ট্রাই করলেই পেয়ে যাবি।
উল্লাস তখন বললো,ভাগ্যের কি পরিহাস?মেয়েটা জাস্ট তোর সাথে ছবি তুলতে চাইছিলো।আর আজ সে তোর পার্টনার।একসাথে তোর ভিডিও তে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।
তানহা চুপচাপ। সে কিছু বলছে না।কারণ সে কিছুতেই আদ্রিয়ান কে অহনার পাশে দেখতে পারছে না।তার কেনো এতো হিংসা হচ্ছে সত্যি সে বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ তানহা সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললো, আদি!তোর সাথে আমার একটা কথা আছে।
আদ্রিয়ান হেসে বললো, কি কথা?
তানহা তখন বললো আমি আলাদা ভাবে বলতে চাই কথাটা।
উল্লাস সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,তুই আবার আলাদা ভাবে কিসের কথা বলবি?মানুষ তো প্রেম ভালোবাসার কথা আলাদা ভাবে বলে।
উল্লাসের কথা শুনে সবাই অবাক হলো।এদিকে তানহা উল্লাসের কথা শুনে রাগ করে সেখান থেকে চলে গেলো।
আদ্রিয়ান তখন বললো, তানহা শোন!কি বলতে চাইছিলি?আমি শুনবো।
কিন্তু তানহা আর দাঁড়ালো না।
আদ্রিয়ান তখন উল্লাস কে বললো,দোস্ত এভাবে ওর মন টা খারাপ করে দিলি কেনো?
–আমি কি এমন বললাম?
হঠাৎ অহনা দরজায় দাঁড়িয়ে বললো মে আই কাম ইন?
অহনাকে দেখে সবাই ওর দিকে তাকাতে লাগলো।অহনাকে আদ্রিয়ান নিজেই ডেকেছে।কারণ আজ তাদের প্রাকটিস করতে হবে।
সানি অহনাকে দেখে বললো, কেমন আছো অহনা?
–জ্বি ভালো।
;আদ্রিয়ানের কাছাকাছি এসে কেমন লাগছে তোমার?
অহনা সেই কথা শুনে বললো কি বলছেন এসব?
সানি তখন বললো তুমি তো এটাই চাইছিলে।আদ্রিয়ানের সাথে তোমার একদিন দেখা হবে,তার সাথে এক গাদা সেলফি উঠবে,তাকে তোমার বয়ফ্রেন্ড বানাবে।
আদ্রিয়ান সানির কথা শুনে বললো, স্টপ! কি বলছিস সানি?
–কিছু না।তোরা তোদের কাজ চালিয়ে যা।
চল উল্লাস।এই বলে সানি উল্লাসের হাত ধরে বেড়িয়ে গেলো।
আদ্রিয়ান তখন অহনার কাছে এসে তাকে ধমক দিয়ে বললো, তুমি সত্যি এই কথা বলেছো?
অহনা তখন তোতলাতে তোতলাতে বললো কোন কথা?
–তুমি নাকি আমাকে তোমার বয়ফ্রেন্ড বানাতে চাও?
অহনা আদ্রিয়ানের প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইলো।
আদ্রিয়ান তখন আবার জোরে করে একটা ধমক দিয়ে বললো, কি হলো?চুপ করে আছো কেনো?
অহনা তখন বললো হুম বলেছি।কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি।
আদ্রিয়ান অহনার কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।সে তখন অহনার একদম কাছে গিয়ে বললো, তুমি আমার মিউজিক ভিডিওর জাস্ট একজন পার্টনার।তোমাকে চুজ করেছি কারণ তুমি সবদিক দিয়ে মোটামুটি পারফেক্ট আছো।তাই বলে এটা ভেবো না আমি তোমাকে পছন্দ করি,আর তোমাকে ভালোবাসি বিধায় এই মিউজিক ভিডিও তে সুযোগ দিয়েছি।তাছাড়া তোমাকে আমার পার্টনার করার আরো একটা কারন আছে।
তোমার পাগলামির কারনে ইতোমধ্যে তুমি ভাইরাল।অনেকেই মনে করে আমাদের দুইজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে।এই সুযোগ টা আমি কাজে লাগাতে চাই।যাতে করে আমার ফাস্ট মিউজিক ভিডিও টা হিট হয়।বুঝেছো?
অহনা আদ্রিয়ানের কথা শুনে একদম কেঁদে ফেললো। সে তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো আমি করবো না কোনো কাজ।আমি চললাম।
আদ্রিয়ান তখন অহনার হাত ধরে তার কাছে টেনে এনে বললো, সেটা সাইন দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিলো।তুমি পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিতে সাইন করেছো।এখন চাইলেও তুমি এখান থেকে বের হতে পারবে না।এই পাঁচ বছর তোমাকে আমার মিউজিকেই কাজ করতে হবে।তবে আমি আর থাকবো না।নেক্সট টাইম তোমার শুটিং সানির সাথে হবে।তারপর উল্লাসের সাথেও একটা ভিডিও হবে।
অহনা সেই কথা শুনে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। কারণ সে আদ্রিয়ান ছাড়া আর কারো সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়।আদ্রিয়ান এইভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দেবে সত্যি ওর মাথাতেই ঢোকে নি এটা।
আদ্রিয়ান আর অহনা প্রাকটিস করতে লাগলো।
আদ্রিয়ান অহনার হাত ধরে টেনে তার কাছে এনে তার মুখ মন্ডল স্পর্শ করতে লাগলো।তারপর অহনার ঠোঁট স্পর্শ করতে লাগলো।
কিন্তু অহনা তার কাজে মনোযোগী ছিলো না।সে তার জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিয়ান তখন বললো কি হলো অহনা?
কাজে মনোযোগ দাও।
অহনা সেই কথা শুনে সরে গেলো।তারপর আদ্রিয়ান অহনার হাত ধরে টেনে তাকে কোলে তুলে নিলো।কিন্তু বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারলো না।সাথে সাথে ছেড়ে দিলো।
প্রায় দুই ঘন্টা ধরে তারা এটা প্রাকটিস করতে লাগলো।
তবে অহনার ভীষণ মন খারাপ ছিলো।আদ্রিয়ান তার এতো কাছাকাছি থেকেও সে আনন্দ পাচ্ছে না মোটেও।কারন যে জন্য সে আদ্রিয়ানের সাথে মিউজিক ভিডিও তে কাজ করছে তার তো সে ইচ্ছা কখনোই পূরন হবে না।কারণ আদ্রিয়ান তো তাকে পছন্দই করে না।শুধু মাত্র তার মিউজিক হিট হওয়ার জন্য তাকে নিয়েছে এই ভিডিও তে।কিন্তু অহনা ভেবেছিলো হয় তো আদ্রিয়ান ও তাকে পছন্দ করে।এজন্যই তো তাকে সুযোগ দিয়েছে তার পার্টনার হওয়ার।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
অবশেষে আদ্রিয়ানের মিউজিক ভিডিও টা রিলিজ হয়ে গেলো।ভিডিওর প্রধান আকর্ষন আদ্রিয়ান আর তার গান।তবে তার চেয়েও বেশি আকর্ষন ছিলো অহনা।কারণ ইতোমধ্যে অহনা কে নিয়ে রোজ রোজ নিউজ হচ্ছে।
কেনো আদ্রিয়ান অহনাকেই তার পার্টনার করলো।তাহলে কি আদ্রিয়ান আর অহনার মধ্যে রিলেশন আছে?কেউ কেউ বলছে বাহঃ বেশ মানিয়েছে তাদের।আবার অনেক মেয়ের হৃদয় ভেংগে চুরমারও হয়ে গিয়েছে।কেউ আবার মেনে নিতে পারছে না আদ্রিয়ানের গার্লফ্রেন্ড কে।
এ বছরে যতগুলো মিউজিক ভিডিও রিলিজ হয়েছে তার মধ্যে আদ্রিয়ানের মিউজিক ভিডিও টা সবচেয়ে বেশি হিট হলো।এর আগে সে অনেক মিউজিক ভিডিও বানিয়েছে।কিন্তু এবার সবচেয়ে বেশি হিট হলো।
এবার আদ্রিয়ানের মুখে মিউজিক টার ব্যাপারে জানার জন্য মিডিয়ার লোকেরা এসে ভীড় ধরলো।আর তাকে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
–যেহেতু এটা আপনার প্রথম কাজ, কেমন লেগেছে?
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো, অসম্ভব ভালো লেগেছে।নায়ক হওয়া যে কত টা কঠিন তা এই কাজটা না করলে আমি জানতেই পারতাম না।খুব এনজয় করেছি কাজ টা।
কথায় কথায় মিডিয়ার লোকেরা অহনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো।তার সাথে কোনো রিলেশন আছে কিনা?সেটাও জানতে চাইলো।
আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, এটা সম্পূর্ণ একটা গুজব।তবে মেয়েটা আমার একজন পাগল ফ্যান।সেজন্যই তাকে চুজ করা হয়েছে।তার সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই।এই বলে আদ্রিয়ান চলে গেলো।
অন্যদিকে অহনা তার বাসায় বসে কাঁদতে লাগলো।তার মিউজিক ভিডিও হিট হওয়ার কারনেও তার মনে একটুও আনন্দ নেই।কারণ পরবর্তী কাজ তার সানির সাথে আছে।সে এখন কি করবে? আর কিভাবে এই কাজটা আটকাবে সেটাই ভাবতে লাগলো।তবে আদ্রিয়ান যে কত বড় একজন স্বার্থপর ছেলে তার সেটা জানা হয়ে গেলো
#চলবে,