প্রেম প্রেম খেলা পর্ব-০১

0
1966

#প্রেম_প্রেম_খেলা
#সূচনা_পর্ব
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আদ্রিয়ানের এক পাগল ভক্ত অহনা,আদ্রিয়ান কে সরাসরি জন্মদিনের উইশ করবে বলে সেই সন্ধ্যা থেকে তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু এখন পর্যন্ত সে না আদ্রিয়ানের বাসায় প্রবেশ করতে পারলো না আদ্রিয়ানের দেখা পেলো।
একদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর অন্যদিকে মশারা তার কানের কাছে গান গাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
অহনা তখন বললো, মশা রে আমার থেকে দশহাত দূরে চলে যা,আমি আদ্রিয়ানের গান পছন্দ করি, তোদের না।
মশা কি আর কারো কথা শোনে?একবার অহনার পায়ে তো আরেকবার তার হাতে কুটুস কুটুস করে কামড়াতে লাগলো।আর অহনা সেই কামড় খেয়ে নাগিন ডান্স দেওয়া শুরু করলো।কেউ যদি তাকে এই অবস্থায় দেখে নির্ঘাত তাকে মৃগী রোগী ভাববে তা না হলে পাগল বলে চিল্লাতে থাকবে।সেজন্য অহনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।

তবে এবার অহনার বেশ খটকা লাগলো।কারন সে ছাড়া আশেপাশে কেউ ছিলো না।সেজন্য অহনা মনে মনে ভাবতে লাগলো এতো বড় একজন সেলিব্রেটি আর তার ভক্ত শুধু সে একাই!

এদিকে তার আনা টাটকা খয়েরী গোলাপের তোড়া টা একদম নেতিয়ে পড়ছে।কত শখ করে এনেছে ফুলগুলো।তাজা গোলাপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে তার পছন্দের মানুষ টাকে।একটা পারফিউম সেট আর নিজের হাতে অংকন করা আদ্রিয়ানের কিছু ছবিও সে গিফট হিসেবে এনেছে।

অহনা আর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না।সেজন্য সে মনে মনে আদ্রিয়ান কে বকতে লাগলো।আর বললো,
“এসব কিছু এই ছেলের জন্যই হচ্ছে।আমাকে পাগল করে ছেড়ে দিবে ছেলেটা।জানি না কি আছে এর মাঝে?কেনো তাকে ছাড়া কিছু ভালো লাগে না?”
এই বলে অহনা জোরে জোরে চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,

আদ্রিয়ান!কবে তুমি আমার প্রেমে পড়বা?কবে নিজের মুখে বলবে “আই লাভ ইউ অহনা”।এই বলে অহনা আদ্রিয়ান কে নিয়ে তার স্বপ্নের জগতে চলে গেলো।
||
||
এই মেয়ে?এখানে এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো?

“কারো ধমকানি শুনে স্বপ্নের জগত থেকে ফিরে এলো অহনা।” সে তো এতোক্ষণ আদ্রিয়ান কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলো।অহনা দেখতে পেলো আদ্রিয়ান তাকে প্রপোজ করছে।যেই আংটি টা পড়াতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে এই দারোয়ান বেটা ডাক দিলো অহনাকে।

আদ্রিয়ানের বাসার দারোয়ান বললো,

আপনি কি করছেন এখানে?সেই সন্ধ্যা থেকে দেখছি আপনাকে।এখন পর্যন্ত যান নি দেখি।

অহনা দারোয়ান বেটার ধমকানি শুনে ভুলভাল বকতে লাগলো।কিন্তু দারোয়ান বেটা ঠিক বুঝতে পারলো কেনো দাঁড়িয়ে আছে এই মেয়ে?সেজন্য তিনি বললেন,

“আমাকে দিন গিফট গুলো।”আমি দিয়ে দেবো স্যার কে।

অহনা সেই কথা শুনে বললো আপনাকে কেনো দিতে যাবো?আমি নিজের হাতে আদ্রিয়ান কে দেবো।

দারোয়ান সেই কথা শুনে বললো কোথায় থেকে যে এসব পাগল ছাগল আসে।আদ্রিয়ান ওনার গিফট নেওয়ার জন্য তো বসে আছে সেজন্য এখানে এসে নিয়ে যাবে?এই বলে দারোয়ান গেট বন্ধ করতে ধরলো।

অহনা তখন চিৎকার করে বললো এই যে আংকেল? শোনেন প্লিজ।

“জ্বি বলো”।

“আমি তো শুনেছি আদ্রিয়ান সবার গিফট তার নিজের হাতেই নেবে।” কিন্তু এখনো বাসা থেকে বের হচ্ছে না কেনো তিনি?

” তুমি মিস করে ফেলছো।”আদ্রিয়ান স্যার সবার গিফট নিয়ে এখন তার নিজের রুমে রেস্ট করছে।

অহনা সেই কথা শুনে বললো, “কি বলছেন কি আংকেল?”সেই সন্ধ্যা থেকে তো আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।আদ্রিয়ান কে তো একবার ও দেখলাম না।না কোনো ভক্ত দেখলাম তার।

দারোয়ান তখন হাসতে হাসতে বললো, মামুনি এটা বাসার পিছন গেট।সামনের গেটে গিয়ে দেখো তোমার মতো হাজার হাজার লোক দাঁড়িয়ে আছে।তবে এখন আর তিনি কারো গিফট নেওয়ার মুডে নেই। এক ঘন্টা পর হয় তো আরেকবার আসবেন।

অহনা তখন বললো, তাই তো বলি এখানে এতো মশা কামড়াচ্ছে কেনো?আর কেমন যেনো পঁচা পঁচা গন্ধ।উহঃ!
এতোক্ষন অনুভব না করলেও এখন সে ঠিক বুঝতে পারছে।
অহনা আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে সামনের গেটে চলে গেলো।
||
||
“ও মাই গড।” এখানে হচ্ছে টা কি?একজন নয়, দুইজন নয় হাজার হাজার ছেলে মেয়ে।এতোগুলো মানুষের মাঝে তাকে আদ্রিয়ান দেখবে কি করে?আর সে আদ্রিয়ান কে তার ভালোবাসার কথা জানাবেই বা কি করে?
এইজন্য অহনার ভীষণ মন খারাপ হলো।

হঠাৎ এক মেয়ে পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে বললো, এই মেয়ে!আমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কেনো?পিছনে যাও?শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলো।দেখছো না সবাই লাইন ধরে আছে।

অহনা সেই কথা শুনে লাইন থেকে বের হয়ে আসলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো তার সিরিয়াল আসতে আসতে রাতই শেষ হয়ে যাবে তবুও আর আদ্রিয়ানের দেখা মিলবে না।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো অহনার।অহনা সেজন্য তার গাড়িতে গিয়ে বসলো আর ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে টুশু বললো,

“কি রে আদ্রিয়ানের গফ?” নাগর কে কাছে পেয়ে আমাদের কথা ভুলে গেলি?একটি বার তো ফোনও দিলি না?”

“মজা নিচ্ছিস টুশু?” নি বেশি করে মজা নি।যেদিন আদ্রিয়ানকে পেয়ে যাবো না সেদিন এই কথার প্রতিশোধ নেবো।

“আরে বাবা!রাগ করতেছিস কেনো?” আমি খারাপ কি বললাম?আচ্ছা ঝগড়া করা বাদ দিয়ে বল, আদ্রিয়ান তোকে দেখে কি বললো?

টুশুর কথা শুনে অহনার এবার ভীষণ রাগ উঠলো।তার তো আদ্রিয়ানের সাথে দেখাই হয় নি।কি আর কথা বলবে?

এদিকে অহনাকে চুপ করে থাকা দেখে টুশু বললো,
তোর ভালোবাসার কথা ওকে জানাইছিস?শুনে কি বললো আদ্রিয়ান?

অহনা সেই কথা শুনে রাগ করে কল কেটে দিলো।আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,আজ সবাই বেশি করে হেসে নাও।একদিন এই আমাকে আদ্রিয়ানের পাশে দেখে সবাই তাক লেগে যাবে।

এদিকে আদ্রিয়ান তার ইন্সটাগ্রাম থেকে লাইভে আসলো। আজ তার জন্মদিন উপলক্ষে পছন্দের গানটি আবার একবার সবাইকে শোনাচ্ছে সে।যে গানটির মাধ্যমে প্রথম সবাই আদ্রিয়ান কে চিনতে পারে।❞

🎵🎵🎵
তুমি নীল আকাশ আপন করেছো
হঠাৎ কোন কালে, কে জানে!
স্বপ্ন সীমানা ছুঁয়ে দিয়েছো
কোন সে জাদুতে, কে জানে!
🎵🎵🎵
আমি ছিলাম তোমার পাশে
তোমার আকাশ ভালবেসে
সে বিশালে খুঁজেছি একটুকু ঠাঁই
তাও মেলেনি তা
হঠাৎ যখন ছুটির খেলা
মেঘে মেঘে অনেক বেলা
তখন সে ক্রান্তিকালে ধুম্রজালে
খুঁজছো যে বৃথা

“লাইভ স্টার্ট করতেই লক্ষ লক্ষ ভিউ হয়ে গেলো।আর সবাই আদ্রিয়ান কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে লাগলো।”

অহনা নিজেও লাইভ টা দেখতে লাগলো।আর আদ্রিয়ানের সাথে গুন গুন করে গাইতে লাগলো।

🎵🎵🎵
অশান্ত মন, বোঝাই কাকে?
হারিয়ে চাইছি তোমাকে
হাতছানি দিয়ে যে ডাকে
স্মৃতির পাতা
নদীর শেষে, আকাশ নীলে
স্বপ্নগুলো মেলে দিলে
তারা বলে সবাই মিলে
দীপান্বিতা
🎵🎵🎵
শোনো না, রূপসী, তুমি যে শ্রেয়সী
কি ভীষণ উদাসী, প্রেয়সী
না, না, না, না, না, না
জীবনের গলিতে, এ গানের কলিতে
চাইছি বলিতে, “ভালোবাসি”

আহা!কি সুর!কি গানের গলা!কি তার চাহনি!
অহনা আদ্রিয়ানের সাথে গান গাইতে গাইতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।

আদ্রিয়ান!নাম টা শোনামাত্র মেয়েরা তাকে নিয়ে স্বপ্নের জগতে চলে যায়।।আর কোনো মেয়ে যদি তাকে এক নজর দেখে তাহলে তো সাতদিন ধরে সেই মেয়ের খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।তার মাথাতে শুধু তখন আদ্রিয়ান নামটাই ঘোরপাক খায়,আর মনের মধ্যে বার বার আদ্রিয়ানের ছবি ভেসে ওঠে।এতোটাই জনপ্রিয় হলো সঙ্গীতশিল্পী আদ্রিয়ান।যার গায়ের রং হলুদ ফর্সা,স্ট্রেইট করা চুল,স্লিম বডি,আর উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি।
সেজন্য আদ্রিয়ানের প্রতি সবার এতোবেশি আকর্ষণ!তার গানের গলা এতো সুন্দর যে মুহুর্তের মধ্যে যে কেউ অজানাতে হারিয়ে যেতে পারে।

অহনা!সে একজন ভার্সিটির স্টুডেন্ট যে আদ্রিয়ানের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আদ্রিয়ান ছাড়া সে কিছুই বোঝে না এখন।সব সময় শুধু তার মুখে আদ্রিয়ানের নাম।এমন ভাবে গল্প করে মনে হয় সত্যি সত্যি আদ্রিয়ান তার বয়ফ্রেন্ড।
অহনার এমন পাগলামি দেখে অহনার বান্ধুবি টুশু,অর্পা আর সনিয়া তাকে সাইকো বলে সম্বোধন করে।
অহনাও সবাইকে বলেছে আদ্রিয়ান কে সামনাসামনি না দেখা পর্যন্ত সে হাল ছাড়বে না কিছুতেই।আর একদিন না একদিন এই আদ্রিয়ান নাকি তার প্রেমে পড়বেই পড়বে।

এইজন্য তার বান্ধুবীরা তাকে পাগল পাগল বলে সারাক্ষন ক্ষেপায়।আর ব্যঙ্গ করে বলে আদ্রিয়ান হলো একজন জনপ্রিয় শিল্পী, যার তোর মতো হাজার হাজার পাগল ভক্ত আছে। সে কিনা তোর মতো একজন সাধারণ মেয়েকে প্রপোজ করবে!

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে