#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[১৩]
সারাদিনের রাগ তুলতে রাগে জিদে স্বজোরে কামড়ে ধরল রুদ্রর ঠোঁট। তখনই রুদ্র টের পেল নোনতা স্বাদ।অর্থাৎ ঠোঁট কেটে গেছে। সেই সঙ্গে স্পর্শী খামছে ধরেছে তার শার্ট এবং পিঠে বসিয়ে দিচ্ছে ধারালো নখ। আকষ্মিক আক্রমণে রুদ্র
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পরক্ষণে কিছু ভেবে হাল ছেড়ে দিলো। সমস্ত ব্যথা সহ্য করে স্পর্শীকে রাগ মেটানোর সুযোগ করে দিলো। তখনো স্পর্শী রুদ্রর ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে। তারপর যখন সে দেখল রুদ্র বাঁধা দিচ্ছে না তখন সে
ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেয়ে রুদ্র সরলো না বরং স্পর্শী দুইহাত
শক্ত করে চেপে ধরে শুষে নিতে থাকল স্পর্শীর ঠোঁট। স্পর্শী তাকে যত জোরে কামড় দিয়েছে রুদ্র তাকে তত সফট্ভাবে
কিস করছে। বেশ কয়েক মিনিট এমন অত্যাচার করার পর রুদ্র তাকে ছেড়ে পাশে শুয়ে পড়ল। স্পর্শী হাঁপাচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আচমকা একটা কথা মনে হতেই স্পর্শীর গা গুলিয়ে উঠল। ঘৃণায় চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। পাশ ফিরে
বিরক্তের নজরে তাকার রুদ্রর দিকে। রুদ্রর ঠোঁটে রক্ত ছিল
সেই রক্ত কোথায় গেল? বোধহয় ওর পেটেই গেছে। একথা ভেবে ছিঃ! ছিঃ! করে উঠার আগেই রুদ্র হ্যাচকা টানে তাকে বুকের উপর ফেলল। অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আলতো করে মুছে দিলো স্পর্শীর আধভেজা ঠোঁট।তখনো তার ওষ্ঠ কোণে দুষ্টু হাসি। মনে দুষ্টু ভাবনা। ঠোঁটে রুদ্রর ছোঁয়া পেয়ে স্পর্শী ভীষণ বিরক্ত হলো। ঝাটকা মেরে হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠতে চেষ্টা করলো। তখন রুদ্র তার কোমর জাপটে ধরে বলল,
-‘কামড়া-কামড়ি না করে ডিপলি কিস চাস বললেই হতো। না করতাম নাকি? তুইই বল, একমাত্র বউয়ের আবদার অপূর্ণ রাখতে পারি?’
-‘তুমি আসলেই অসভ্য, ছাড়ো! ছাড়ো বলছি।’
-‘অসভ্যের দেখেছিস কি? এই পথের যাত্রা কেবল শুরু।’
-‘উফ! অতিরিক্ত কথা বলো তুমি।’
-‘রাগের মাত্রা হাই ভোল্টেজে কেন বলবি তো নাকি।’
-‘রাগ করবো কেন? খেয়ে আর কাজ নেই আমার।’
-‘তাহলে চল আমার শখটা পূরণ করেই ফেলি?’
-‘কোন শখ?’
-‘ আমার শখ আমার বেডরুমভর্তি বউ আর ড্রয়িংরুমভর্তি ছানাপোনা থাকবে। তাদের নিয়ে একসঙ্গে ঘুরতে বের হবো, সুখে দিন কাটাব, কত মজা হবে।’
-‘তারপর এতগুলো বাচ্চা পয়দা করার পর তোমার শত্রুরা
তোমাকে মেরে রাস্তায় ফেলে যাবে। তোমার অবর্তমানে তারা
গাছতলায় গিয়ে আশ্রয় নিবে। ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদবে।আর
বউগুলো নিজস্বার্থে জীবনসঙ্গী খুঁজে ভেগে যাবে। পরিশেষে তোমার ছানাগুলো রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে খাবে, টোকাই উপাধি পাবে, দারুণ হবে না?’
-‘ধুর! দিলি তো আমার শখের বারোটা বাজিয়ে। ‘
-‘যা সত্যি তাইই তো বললাম।’
-‘ধন্য করলি। তা হাতের কি অবস্থা এখন, ব্যথা আছে?’
-‘জেনে লাভ নেই, বাদ দাও।’
-‘ আচ্ছা, কখনো তোর মন বলে না আমার সঙ্গে মৃদু স্বরে কথা বলতে? সারাদিন পর বাসায় ফিরে যদি বউ খ্যাঁচখ্যাচ করে তাহলে কার ভালো লাগে?’
-‘যে আমার নয় তার সঙ্গে কী ভালো কথা থাকতে পারে ?’
-‘আমি তোর নাতো কার?’
-‘কবুল বললেই কেউ হওয়া যায় না।’
-‘এই ‘কেউ’ বলতে আসলে কি বুঝাচ্ছিস স্পষ্ট করে বল।’
-‘আপন মানুষ, একান্ত নিজের মানুষ।’
-‘মন চাইলে শুধু আপন নয় প্রাণপ্রিয়’ও হওয়া যায়। এজন্য নিজেদের আগ্রহ থাকা লাগে। যেটা তোর নেই। হবে কী তাও সন্দেহ। আচ্ছা আমাকে এটা বল, আমরা কি ঝগড়াই করে যাব আজীবন? এভাবে আর কত দিন? আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করা যায় না? আসলেই কী যায় না? এমন চলতে থাকলে আমাদের সম্পর্কের আরো অবনতি হবে৷ আমাদের বাসার মানুষগুলো হতাশ হবে, কষ্ট পাবে। একটু স্বাভাবিক হয়ে ওঠ না স্পর্শী, প্লিজ। প্রতিদিন মেজো মা কল করে আর আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে এমনভাবে মিথ্যাকথা বলতে যেন আমরা কত্ত সুখী। মেজো মাকে মিথ্যা বলতে আমার ভীষণ খারাপ লাগে।রুমাকেই দেখ, কাফিকে ছাড়া কিছু বোঝে না। মেয়েটা পাগলের মতো ভালোবাসতে জানে, ভালো রাখতে জানে। কাফি কোথাও গেলে প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজ নিবে, কী করছে, কি খাচ্ছে, আরো কত কী, কতই সুন্দর তাদের সম্পর্কটা। যদি কোনো কারণে কাফি কল রিসিভ না করে তখন আমাকে মেসেজ করে, ‘ভাইয়া, প্লিজ, দয়া করে
এইটুকু বলুন সে সুস্থ আছে, ভালো আছে।’ তাহলে ভাব ঠিক কতটা ভালোবাসলে এমন উতলা হওয়া যায়,? ভালোবাসা তখনই সুন্দর, যখন সঠিক মানুষটা পাশে থাকে। আর সুন্দর জিনিসটা নিজের মতো করে সুন্দর করে নিতে হয়। স্বযত্নের প্রলোপ লাগিয়ে আগলে রাখতে হয় নিজ যতনে। তাকে সব সময় বুঝার চেষ্টা করতে হয়, ভালোওবাসতে হয়। তবেই না সম্পর্ক মধুর হয়। অথচ আমার বউটাকে’ই দেখ সে আমার খোঁজ নেওয়া দূর আমাকে নিয়ে সুস্থ চিন্তাও করতে পারে না। শুধু রাজনীতি করার অপরাধে কাঠগড়াতে দাঁড় করিয়ে নানান রকমের অভিযোগ দায়ের করে। আমার বাঁচা ম/রা নিয়ে পড়ে থাকে। তাকে আমি কীভাবে বোঝায় যার যেভাবে মৃত্যু লেখা আছে সে সেভাবেই মৃত্যুবরণ করবে। মৃত্যুরখেলা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার হাতে। এখানে কারোর হাত নেই। কিন্তু সেই পাগলিটা তো আমার কথা বোঝেই না। আর বুঝাতে গেলেও আমাকেই ভুল বুঝে। এমনকি এসব ভেবে আমাদের বর্তমান সময়টুকুও নষ্ট করে ফেলছে, আদৌ কি এটা ঠিক হচ্ছে?’
-‘তোমার কাছে রাজনীতিই সব শুধু শুধু আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছো কেন?’
-‘বোকার মতো রাজনীতির সঙ্গে নিজের তুলনা করিস কেন?
রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় তুই তোর জায়গায়। এখানে তুলনা আসছে কোথা থেকে? রাজনীতি হচ্ছে আমার পেশা আর তুই হচ্ছিস আমার নেশা। আমার কাছে নেশা ও পেশা দু’টোই ভিন্ন স্থানের বাসিন্দা। তাছাড়া আমারই যখন সমস্যা হচ্ছে না তোরও তো হওয়ার কথা নয়। মোদ্দাকথা, গতরাতে যে অঘটন ঘটালি এ কাজটা কোন যুক্তিতে করলি? আমার পুরো কথাটা শুনে নাহয় সিদ্ধান্ত নিতি,এখন কে কষ্ট পাচ্ছে?
রাগের বশে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত সুফল ডেকে আনে না।’
-‘জানি। এজন্য একথাটা এখনো বাসার কাউকে জানায় নি। ‘
-‘ভেরি গুড! বুদ্ধি তো ভালোই আছে শুধু কাজে লাগাস না।’
আর একটা কথা, আমার সঙ্গে থাকলে হলে আমার ভালো খারাপ সব মেনেই থাকতে হবে। নয়তো বাপের বাড়ির রাস্তা মাপ।’
-‘আমার বাপ তোমার কে?’
-‘শশুড়।’
-‘তো শশুড়কে নিয়ে এভাবে কথা বলতে লজ্জা লাগছে না?’
-‘আশ্চর্য! আমি কি উনাকে চুমু খেতে চেয়েছি নাকি জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চেয়েছি যে লজ্জা লাগবে?’
-‘তুমি আসলেই যা তা।’
একথা বলে স্পর্শী জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসল।
এই বে/হায়া পুরুষের মুখে কিচ্ছু আঁটকায় না নয়তো এমন কথা বলতে পারে।তার কাছে ভদ্র কথা আশা করা বোকামি।
এখন রাত দুইটা বেজে তিন মিনিট। স্পর্শীর হালচাল দেখে
রুদ্র উঠে রান্নাঘরে গেল।ওভেনে খাবার গরম করে প্লেটভর্তি
খাবার এনে স্পর্শীকে টেনে তুলে বিছানায় বসাল। তারপর সে যত্ন করে স্পর্শীর মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজেও খেতে লাগল। আজও আসার সময় বিরিয়ানির এনেছে এমনকি এখন খাইয়েও দিচ্ছে নিজের হাতে। স্পর্শী টু শব্দ করছে না ভদ্রমেয়ের মতো খাচ্ছে চুপটি করে। খেতে খেতে গতরাতের কথা ভেবে আপনমনে ওর অশ্রু ঝরতে লাগল। আফসোস করতে থাকল মনে মনে। প্রিয়/ অপ্রিয় যেইই হোক কারো মুখের খাবার ছুঁড়ে ফেলা উচিত নয়। অথচ সে রাগের বশে গতরাতে তাইই করেছে। তখন রুদ্র চাইলে তাকে লাগাতার থাপ্পড় মেরে থামাতে পারতো। কিন্তু এখন অবধি ছাড় দিয়েই যাচ্ছে রুদ্র। তবে খাবার ছুঁড়ে ফেলার অন্যা/য় আর কখনো করবে না সে, কখনো না। তাকে কাঁদতে দেখে রুদ্র লোকমা দিতে গিয়েও থেমে গেল। তারপর স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞাসা করল,
-‘ খেতে ইচ্ছে করছে না বললেই হয়, বোকার মতো কাঁদছিস কেন?’
একথা জবাব দিলো না স্পর্শী। অনেক কষ্টে খাবার গিলে
উচ্চারণ করল,
-‘সরি।’
-‘সরি কেন?’
-‘গতরাতে খাবার নষ্ট করেছি এটা করা উচিত হয় নি। আর এমন করবো না, প্রমিস।’
-‘এভাবে যদি আমাকেও একটু বুঝতি তাহলে…। ‘
-‘আমি চাওয়াটা কি খুব বেশি? আমি তোমার সঙ্গে থাকতে চাই বলেই তোমার সুরক্ষার জীবন চাই। তুমি কেন বুঝছো না, রাজনীতিবিদদের জীবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। আজ রাতে তুমি তোমার অধিকার বুঝে নাও আর রাজনীতি টাজনীতি
এসব ছেড়ে দাও। ‘
-‘লাভ নেই। একবার দলে নাম উঠে গেলে সেখান থেকে ফেরা মুশকিল। আর এসব চিন্তা করতে কে বলেছে তোকে? তোর দায়িত্ব আমাকে ভালোবাসা। তুই তোর দায়িত্বে অটল থাক বাকিটা আমি বুঝে নিবো।’
একথা বলে রুদ্র খাওয়া শেষ করে প্লেট রেখে ফিরে এলো।
তারপর কেউ আর কোনো কথা বাড়ালো না দু’জন দু’পাশে ফিরে শুয়ে পড়ল। সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চোখেও ঘুম নেমে এলো। পরেরদিন সকালে স্পর্শী ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো। রুমা বোধহয় আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে। সে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা দিতেই দাদীমাকে দেখে চমকে উঠল। দাদীমা চা খেতে খেতে রুমার সঙ্গে কথা বলছে। দাদীমাকে দেখে স্পর্শী দৌড়ে গিয়ে দাদীমাকে জড়িয়ে ধরলো। খুশিতে দাদীমার গালে কয়েকটা চুমু দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল। দাদীমা নাতনির হাতে থাবা মেরে মুখ ঝাপটা মেরে বলতেন,
-‘সারা রইত সুয়ামীর আদর খাইয়া এহন আইছো পিরিত দেখাইতে, সর, সর কইতাছি।’
-‘বুড়ি যেই সুয়ামী দিছো হেই আদর করে না খালি ধমকের উপ্রেই রাহে। একফুঁডাও ভালোবাসে না আমারে। এই সুয়ামী লাগবো না তুমি এইডারে হাঁটে বেইচ্চা নতুন সুয়ামী আইনা দাও।’
একথা বলেই স্পর্শী পুনরায় খিলখিল করে হাসতে লাগল। নাতনির কথা শুনে দাদীমার হেসে উঠে নাতনিকে জড়িয়ে ধরলেন। রুমা রান্নার দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে স্পর্শীর হাসি মুখের দিকে। এই বাসা এসে স্পর্শী হেসে বলে মনে হয় না।
অথচ দাদীমাকে পেয়ে কত্ত খুশি সে। তার এই হাসি ফিরিয়ে
আনতে রুদ্র তার কাজ সেরে ঢাকা গিয়ে দাদীমাকে এনেছে।
তবুও এই মেয়ের কত্ত অভিযোগ রুদ্রের প্রতি। দাদী নাতনির গল্পের শেষ নেই। তারা সোফায় বসে গল্প করেইযাচ্ছে, স্পর্শী
কাশেম বয়রা থেকে শুরু করে চেনা পরিচিত সকলের খোঁজ নিচ্ছে। একপর্যায়ে কথায় কথায় স্পর্শী দাদীমাকে জড়িয়ে ধরে অভিমানী সুরে বলল,
-‘জানো এখানে আমার একটুও ভালো লাগে না। তুমি এসে খুব ভালো করেছো। যাওয়ার সময় আমাকেও নিয়ে যাবে।’
-‘তোর সুয়ামী গিয়া আনছে আমারে। দাদুভাইয়ের নাকি কী জুরুরী কাজ আছে, দশদিনের লাইগা কুনহানে যাবে।’
-‘কোথায় যাবে? ‘
-‘তা তো কই নাই মুরে। তয় হুনছি দাদুভাই ভোটে দাঁড়াইবো।’
(বিঃদ্রঃ- মাথা ব্য/থায় কাতর আমি এজন্য রোজ গল্প দিতে পারি না।)
To be continue……..!!