#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[০৩]
”শোনো না নীল নয়না! ছড়ালে এই জোৎসা! তোমাতে বিভোর থাকি! তুমি তা কেন বোঝো না। হুম…হুম…হুম..।”
ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে চুলে বিনুনি করছে স্পর্শী। তার মনটা বেশ ফুরফুরে। যদিও এর বিশেষ কোনো হেতু নেই তবে হঠাৎ খুব খুশি খুশি লাগছে। এজন্য ওষ্ঠজুড়ে লেপ্টে আছে মিষ্টি হাসি। চোখে গাঢ় কাজল। কপালে ছোট্ট কালো টিপ। পরনে লাল কালো মিশেলের থ্রি-পিচ। ষোড়শীর ফর্সা দেহে লাল রঙা থ্রি-পিচে বেশ মানিয়েছে। তারপর সে চুলে বিনুনি গেঁথে একটা রাবার আটঁকে পেছনে ঘুরতেই দেখে দাদীমা বসে আছে। দাদীমার উপস্থিতি টের পায় নি সে। দাদীমাও এসে কিছু বলে নি। চুপ করে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। দাদীমাকে দেখে একগাল হেসে কিছু বলার আগেই দাদীমা বললেন,
-‘আমার দাদুভাই চইলা গেছে হেইডা তুই জানোস?’
-‘হুম।’
-‘তো এত সাজছোস কার লাইগ্গা? কারে তোর রুপ দেহনের
লাইগা মনে রং লাগাইতাছোস? তর সুয়ামি নাই, মুনে (মনে) চোট পাইয়া চইলা গেছে। তাও তোর মুখে হাসি ক্যান?সর! সর আমার চক্ষুর সামনে থেইক্কা। তরে আমার সহ্য হইতাছে না।’
-‘ওই বুড়ি! তয় আইছো ক্যান আমার দ্বারে। তোমার নাতির
কোলে উইঠা বইসা থাহো যাও। আমার এত ঠ্যাকা পড়ে নাই তার বিরহে বিরহিণী সাজার। সে গ্যাছে ক্যান? আমি যাইতে কইছি তারে? পৃথিবীর কোন ভদ্র পুরুষটা বিয়ার পরাদিনই বউকে না বইলা চইলা গ্যাছে দেখাও আমারে। একথা আগে
হুনছো কুনোদিন? কিন্তু তোমার নাতি গ্যাছে। ক্যান গ্যাছে? কারণ সবাই যাতে আমারে ভুল বুঝে, বকে, মারধর করে।’
-‘তোর দিলে কী মায়া মহব্বত নাই? আমার দাদুভাই গ্যাছে আজ চারদিন হইয়া গেছে। তুই একবারো ফুন দিছোস? কী খাইতাছে না খাইতাছে জিজ্ঞাস করছোস? হেই তর সুয়ামী লাগে। তার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব তোর না?’
-‘হেই কী ফোন দিয়েছে? জিজ্ঞাসা করছে বাইচ্চা আছি না মইরা গেছি? জোর কইরা কবুল বলাইলো। তারপর মারধর কইরা কাপুরুষের মতো না বইলা চইলা গেল। হেরও উচিত আছিল না একবার ফোন দেওয়ার? এখন শুধু শুধু আমারে দুষতাছো বুড়ি। তোমার নাতি খুব ভালো তারে নিয়াই থাহো তুমি।’
-‘এত গোস্সা করলে হইবো? আয় আমার কাছে আয় আর কল দে দেখি তর সুয়ামিকে।’
-‘পারব না।’
-‘আইজ বুজবি না বুজবি কাইল চালুন আনো দুধ দুয়াই।’
-‘বুড়ি পুরান প্রবাদ ছাইড়া যা কওয়ার সোজাসুজি কও।’
-‘বইনরে সংসার ধর্ম এত সুজা না। আর সংসারধর্ম তখনই সাজাইতে পারবি যখন তুই তোর সুয়ামিরে বাইন্ধা রাখতে পারবি৷’
-‘ক্যান সুয়ামিরা কী চার পা বিশিষ্ট গরু-ছাগল যে বাইন্ধা রাখা লাগবো?’
-‘ গরু ছাগল না হইলেও তাদের বান্ধা লাগে। কী দিয়া বান্ধা লাগে জানোস? ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর বুদ্ধি দিয়া। আর পুরুষদের মুনে রাগ, জেদ, দম্ভ, বেশি হইবোই। যদি না হয় তয়লে কেমন পুরুষ তারা? আরেকটা সত্যি কথা জানোস?পুরুষের মানুষের যতই রাগ, জেদ, দম্ভ, থাকুক তা চূর্ণ করে এক মাইয়া। বেলাশেষে কুনো না কুনো মাইয়ার কাছেই তারা বান্ধা পড়ে।তাই কইতাছি সংসার করতে হইলে একজন যদি আগুন হয় অন্যজনরে হইতে হইবো ঠান্ডা পানি। নাইলে তরা দু’জনই যদি আগুন হোস তগোর সংসার’ডা পুইড়া ছারখার হইয়া যাইবো। আবার দু’জনই যদি পানি হোস তয় স্রোতে গা ভাসাইয়া ডুইবা মরবি। তাই কইতাছি এহন সুমায় আছে তরা বুঝবার চেষ্টা কর।’
-‘এহন তুমি কইতাছে হের পায়ে তলায় পইড়া মইরা থাকতে? হেই আমারে মা/রধর করবো আর আমি ঠান্ডা পানি হইয়া বইয়া থাকুম। আর মুনে মুনে জব করুম হেই আমার স্বামী। হেই যখন যা করবে তাই সঠিক, হেডাই মাইনা নিতে বাধ্য।’
-‘সন্মান দিলে সন্মান পাওন যায় এডা জানোস? আইজকা তুই যদি মান ভুইলা তার দিকে আগাইয়া যাস। কাইল হেও তর কথা ভাববো, সন্মান দিবো। আর বুকে হাত দিয়ে ক তো দাদুভাই তরে বিনা দুষে মারছে? তুই ক্যান হক্কলের সামনে তারে এতিম কইছোস? হেই কী এতিম যে এতিম কইছিস?
দুনিয়া ভর্তি আত্মীয় স্বজন থাকতে তারে এতিস কস কোন হুশে? একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেি তরে আছাড় মারা উচিত আছিল। কিন্তু আমার দাদুভাই তা করে নি কারণ হেই তোর মতো মাডা মোটা না। আর কুনো ফকিরকে যদি তার সামনে গিয়া কস ফকির আইসে, ভিক্ষা দাও। সেই ফকির কিন্তু মুন খারাপ করব কারণ তার দিলেও ব্যথা লাগে। কেউ কী সাধে চায় ফরিক হইতে? হক্কলেই চায় রাজা হইতে, কিন্তু আসলে কী হয়? হয় না। কারণ রাজা হওয়া তার নসীবে নাই। তেমনি
ধর, আমার দাদুভাইও তাই। ‘
-‘এহন যতই মন ভোলার কথা কও বুড়ি সব দোষ তোমার নাতীর’ই।’
-‘হ তর কুনো দোষ নাই। তুই সাধু। তয় আমার সামনে ফুন দিয়া খোঁজ ল দেহি।’ ‘
-‘পারব না। হের লাইগা তোমার পরাণ পুড়তাছে তাই তুমিই দাও।’
একথা শুনে দাদীমা রেগে আর একটা কথাও বললেন না। হাতে থাকা বাটন ফোনটা চোখের সামনে নিয়ে নাম্বার বের করে কাউকে কল করে কানে ধরলেন। প্রথম বারের বেলায় কেউ কল ধরল না তবে দ্বিতীয়বার কল করার আগেই কল এলো। বুড়ি পানে লাল করা ঠোঁটে মুখভর্তি হেসে বললেন,
-‘বাসর রাইতের পরদিনই পলাইয়া গেলা দাদু ভাই? আহারে!
তয় তুমার সমস্যাখান চুপি চুপি আমারে কইতে পারতা? মুই তোমার এমন একখান বাটনা খাওয়াইতাম একদিনেই চাঙা হইয়া যাইতা।’
-‘আমি একদম ঠিক আছি ডালিং। তুমি তোমার বুইড়ারে গিয়া বাটনা খাওয়াও। আমার ওসব বাটনা টাটনা লাগবো না আমার। আল্লাহ দিলে এমনিই বহুত চাঙ্গা আছি।’
-‘কেমন চাঙ্গা বুঝবার পারছি দাদুভকই। তয় তোমার বউই কইইতাছে তুমি কাপুরুষের মতো না বইলা পলায় গ্যাছো।’
একথা শুনে স্পর্শী শব্দ করে হাসতে লাগল। কাপুরুষ বলায় রুদ্রর মুখখানা কেমন পাংশুটে হয়েছে তা বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে তার। বীরপুরুষের মতো শিনা উঁচু করে বেড়ানো সেই রুদ্রকে বলেছে কাপুরুষ। কথাটা রুদ্রর হজম করা কথা না।
দেখা যাক জবাবে কি বলে?ফোনের ওপার থেকেই রুদ্রের কানে পৌঁছেছে কারো প্রাণখোলা হাসির শব্দ। কে হাসছ? চিনতে কষ্ট হয় নি তার। তবে স্পর্শী দাদীমার পাশেই আছে জেনে ত্যাড়াভাবে জবাব দিলো,
-‘তোমার নাতনি রাণী এলিজাবেথের ন্যায়। আমার বংশের সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পূর্ণ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মেয়ে সে। যার রুপ, গুনের, জুরি মেলাও ভার। এমন যোগ্যতাসম্পূর্ণ এক মেয়েকে ধরা ছোঁয়ার সাধ্য কী আর এই এতিমের আছে? তাছাড়া কাউকে না ধরে, না ছুঁলে, কাপুরুষ বলা সুস্থ কোনো মানবীর কাজ নয়, তাই না?’
রুদ্রর এমন অপমানেজনক কথা শুনে স্পর্শী এবার চেঁচিয়ে উত্তর দিলো,
-‘দাদীমা তোমার নাতিকে বলে দাও তার জন্য এই স্পর্শী মরে যাচ্ছে না। তার ছোঁয়া না পেয়ে কেঁদে কেঁদে জীবন শেষ দিচ্ছে না। মোদ্দাকথা, সে আমার কাছে এতটাও গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়।’
-‘আজ নাহয় কেউ আমার বিরহে কেঁদে ম/রছে না কাল যে এমনি থাকবে এর গ্যারান্টি কি?’
-‘ এর গ্যারান্টি আমি নিজে। সে আজ অথবা কাল যা ইচ্ছে করছে করুক তাতে আমার যায় আসে না।’
-‘আমার বুকে অন্য নারী থাকলেও না।’
আচমকা এমন কথা শুনে স্পর্শী কেন জানি থমকে গেল।
স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল দাদীমার দিকে। তারপর কিয়াৎকাল নিশ্চুপ থেকে জোর গলায় জবাব দিলো,
-‘যে থাকার সে এমনিই থেকে যাবে।’
-‘পৃথিবীর সবচেয়ে থার্ডক্লাস মার্কা যুক্তি এটা। বিপরীতে থাকা মানুষটাকে প্রাপ্ত সন্মানটুকুও দিবে না। মানুষ বলেই গ্রাহ্য করবে না। আর তোমার তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সহ্য করতে অপর ব্যক্তি থেকে যাবে। এত সোজা?তবে তোর দিক থেকে লেইম যুক্তিটাই সঠিক। কারণ তুই বখাটে নেশাখোর জুটাতে পারিস, নেশাখোরের হাতখরচও দিতে পারিস। আর এসব নেশাখোররা আত্মসন্মান খুঁইয়ে হাতখরচ পেতে তোর জন্য থেকে যেতে পারে। তাই আমার মতো একটা রুদ্রকে হারালে তোর কিচ্ছু আসবে যাবে না কারণ তার কাছে তো হাজারটা মাশুম আছে, থাকবে।’
একথা বলে রুদ্র কল কেটে দিলো। আর তার গা জ্বলানো কথাগুলো শুনে স্পর্শী রাগে দুঃখে কেঁদে দিলো। মাশুম যে এত খারাপ সে কীভাবে জানবে? আর তাদের পরিচয় মাত্র সাতদিনের। এই সাতদিনে কীভাবে বুঝবে সে। আর এখানে আরেকটা ভুল বুঝেছে সকলে। সে মাশুমের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছিল না। বরং মাশুমের জোড়াজুড়িতে স্কুলে ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল। প্রেম করলে নাকি মাঝে মাঝে স্কুল ফাঁকি দিতে হয়, লুকোচুরি প্রেমে নাকি অনেক মজা। এসবকিছুর সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত হচ্ছে সে। তাছাড়া মানুষ ঠকেই তো শিখে। অথচ তাকে ভুল শুধরানোর সুযোগই দিচ্ছে না কেউ। মাশুমের সঙ্গে ব্রেকআপ হওয়ার ঘন্টা খানিক পরেই রুদ্রর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলো। একবারও কেউ বুঝার চেষ্টা করল না তার মনের উপর দিয়ে কী যাচ্ছে। যতই সাতদিনের প্রেম হোক মায়া বলে তো কিছু আছে নাকী! আর এসবের চাপে রাগের বশেই রুদ্রকে ছোট বড় অনেক কথা বলে ফেলেছে।
যেসব বলা মোটেও উচিত হয় নি তার। বলার পরে উপলব্ধি করেছে সে ভুল করেছে। মুলত রুদ্র বিয়ের না করার হেতু হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছিল ওই ব্যাপারটা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু তো হলেই না বরং বড় বাবা আর বড় মাকে কষ্ট দিলো। এখন তাদের সামনে যেতেও লজ্জা লাগছে। আর না
মাফ চায় মুখ আছে তার। এখন সেদিনের রেশ ধরেই রুদ্র তাকে অপমান করছে, গা জ্বালানো কথা বলছে। এখন এটা করা কী উচিত হচ্ছে? এসব তিক্ত কথা শুনে তার কী খারাপ লাগছে না, সে কী কষ্ট পাচ্ছে না? পাচ্ছে তো, খুব কষ্ট পাচ্ছে সে। সেদিনের পর বাবা মাও তেমনভাবে কথা বলে না। যেঁচে কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলে নয়তো চুপ করে তার মুখপানে তাকিয়ে থাকে। এতকিছু হবে জানলে মাশুমের সঙ্গে দেখা তো দূর কখনো কথাও বলতো না। এখন ওর নিজের কাছে নিজের ছোট লাগছে। মনে মনে অপরাধবোধ কাজ করছে।
একা একা এসব ভেবে সে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল । আর তাদের দু’জনের কথোপকথন শুনে দাদীমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইল। দু’জনেই জেদি। এদের নিয়ে কী যে করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
________________________
আজ বৃহস্পতিবার! ঘড়িতে রাত নয়টা বেজে সাত মিনিট।
হসপিটালের ওটির সামনে সদ্য এক ফুটফুটে বাচ্চা কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে এক দম্পত্তি। বাচ্চাটাও ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেে কান্না করেই যাচ্ছে একাধারে। ধীরে ধীরে তার কান্না গতি কমার পরিবর্তে বেড়েই যাচ্ছে। কান্নার চোটে মুখটা লাল টকটক করছে। যেন স্পর্শ করলেই রক্ত ঝরবে।
বাচ্চাটার এমন কান্না দেখে ওই দম্পত্তি দিশেহারা হয়ে গেল।কোনোভাবেই বাচ্চার কান্না থামছে না দেখে তারা শরণাপন্ন হলো ডাক্তারের চেম্বারে। ডাক্তার চেকাপ করে তেমন সমস্যা পেল না। তবে একটা দুধের নাম লিখে দিলেন। সঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে খাওয়াবে। তারপর হসপিটালে থাকাকালীন দুধ কিনে বাচ্চাটাকে খাইয়েও দেওয়া হলো। পেটের ক্ষুধা মিটতেই ঘুমে তলিয়ে গেল বাচ্চাটি। নয়তো এতক্ষণ চেঁচিয়ে তাদের অন্তর আত্মা শুকিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখে বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে হেসে ফেললো সেই দম্পত্তি। এবং বাচ্চাটির ছোটো ছোটো হাত স্পর্শ করে কপালে চুমু এঁকে নাম ঠিক করলেন ‘স্পর্শী।’
কিন্তু তখনই কে বা কারা যেন এসে স্পর্শীকে টানা হেঁচড়া
করতে লাগল। উনাদের কোল থেকে কেঁড়ে স্পর্শীকে নিয়ে দৌড়ে চলে গেল বিপরীত পথে। সে পথের শুধু আঁধার আর আঁধার। আঁধারের ভিড়ে কাউকে দেখা গেল না। আর না পেলেন স্পর্শীর কান্নার আওয়াজ।
স্বপ্নে এইটুকু দেখে মরিয়ম বেগমের ঘুম ভেঙে গেল। হাঁতড়ে খুঁজে বেড়ালেন ছোট্ট স্পর্শীকে। কিন্তু স্পর্শী কই? বিছানায় স্পর্শীকে না দেখে উনি চট করে উঠে ছুঁটলেন পাশের রুমে।
উন্মাদের মতো দৌড়ানোর কারণে শাড়ির আঁচলটা লুটিয়ে
পড়লো টাইলসের মেঝেতে। চোখ দিয়ে ঝরছে অশ্রুধারা।
কান্নার চোটে উনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তবুও উনার হুশ নেই।
উনার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে কে বা কারা স্পর্শীকে নিতে এসেছে। স্পর্শী উনার দিকে হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে বলছে, ‘আমি শুধু তোমার মেয়ে মা। আমাকে তোমার সঙ্গেই রাখো মা, আমাকে যেতে দিও না, বাঁচাও আমাকে।’
স্পর্শীর রুমের দরজা সর্বদা হালকা করে ভেজানোই থাকে।
কারণ স্পর্শী রাতে একা থাকতে ভয় করে। মাঝে মাঝে মা! মা! করে ডাকতে ডাকতে ঘুমের ঘোরেই হাঁটা ধরে। চারদিন হলো মেয়েটার সঙ্গে কথা বলে নি উনি। কথা না বলার মুখ্য কারণ রুদ্রকে সকলের সামনে অপমান করা। রুদ্রকেও খুব
ভালোবাসেন তিনি। এর বিশেষ এক কারণ আছে বটে। সেই কারণবশত রুদ্রও উনার কলিজার টুকরো। সে কলিজাকে স্পর্শী কষ্ট দিয়েছে, অন্যায়ভাবে কটু কথা বলেছে। এটা উনি মানতে পারে নি এজন্য রাগের বশেই স্পর্শীকে খাইয়ে দেন নি, চুল বেঁধে দেয় নি। মেয়েটা কতবার যে পেছনে ঘুরে মা! মা! করে ডেকেছে তাও সাড়া দেন নি। এসব কথা ভেবে উনি ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগল। তারপর ধীর পায়ে স্পর্শীর খুব কাছে গিয়ে মেয়েটাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলেন। আর বিরবির করতে বলতে লাগলেন,
-‘আমিই তোর মা আর তুই আমার কলিজা। রুদ্র আমাকে ওয়াদা করেছে,কেউ নাকি তোকে আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না, কেউ না, কখনো না। রুদ্র আছে না রুদ্র, সে আর আমি কাউকে কাড়তেই দিবো না। আমরা আছি না, আমরা তোকে খুব ভালোবাসবো, এভাবে শক্ত করে ধরে বুকের মধ্যে আগলে রাখব।’
To be continue…..!!!