#প্রেম_পুকুর
[২]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন
একটা দীর্ঘ রাত কেটে গিয়ে নতুন একটি সকাল হয়। সেই সকাল কারো জন্য সুখ আনন্দ বয়ে আনে আবার কারো জন্য আনে বিষা*দ আর মর্ম*পীরা।
সকালে উঠে নির্দিষ্ট সময় সালাত আদায় করে নিজের কাজে লেগে পড়েছে শিমু। সঙ্গে বাড়ির কাজের বুয়া রহিমা খালা আর শাশুড়ি লায়লা বেগম ও আছেন।
লায়লা আর রহিমা গল্পে মশগুল হয়ে আছে শিমু টুকটাক তাদের কথা শুনছে আর কাজ করছে।
হঠাৎ অপ্রত্যাশীত ভাবে রান্না ঘরে আগমন হয় রাজিয়া বেগমের। শিমু এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পরে রান্না ঘরে এই মহিলাকে বলতে গেলে আসতেই দেখেনি। কারন শিমু যতটুকু জানে রাজিয়া বেগম আগু*নের তাপ মোটেও সহ্য করতে পারেনা তার নাকি মাথা ব্যা*থা করে।
শিমুর অবাক হওয়া দেখে রাজিয়া বেগম শিমু দিকে ঘুরে মুখ বাোকালেন। এই মেয়েটাকে তার শুরু থেকেই পছন্দ না। কত ইচ্ছে ছিল নাতির জন্য নিজের পছন্দ মতো স্মার্ট একটা মেয়েকে নাতিবউ করে আনবে। কিন্তু এ মেয়ে তার উল্টো ধার্মিক এবং সাদা মাটা প্রকৃতির একটা মেয়ে।
রাজিয়া বেগম শিমুকে ঠেলে সরিয়ে দেখল কি কি রান্না হচ্ছে।
মোটামোটি চার পাঁচ পদ তৌরি হয়েছে তবুও সে প্রশন্ন হলেননা।
” লায়লা আরো দু এক পদ করোতো আমার নাতিদের এই কটা পদ দিয়ে কি আর খাওয়া হবে”।
শিমু যদিও কিছু মুখে বলতে পারলোনা মনে মনে সে বিষন ক্ষু/ব্দ হলো। মুখে বলা খুবই সহজ কিন্তু রান্না ঠিক করা ততটাই কষ্টকর।
” মনে হয়না মা আমার ছেলেরা সকালে এতো খাবার খাবে”।
ছেলের বউ এর কথায় রাজিয়া বেগম মুখ কালো করে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন নিজের ছেলেটাকে তো হাত করতে পারলেননা কিন্তু নিজের নাতিকে হাত করে ঠিকই এদের শায়েস্তা করবেন।
——————–
খাবার টেবিলে সব খাবার গুছিয়ে রাখছিল শিমু আর রহিমা ।লায়ল বেগম রুমে গেছন ফ্রেস হতে।
এর মাঝেই বাড়ির সবাই একে একে খাবার টেবিলে এসে বসতে শুরু করল।
অনিকা চোখ ডলতে ডলতে খাবার টেবিলে এসে বসল কিন্তু খাবারে দিকে তাকাতেই তার চোখের থেকে সমস্ত ঘুম উরে গেল।
ভিষন খুশি হয়ে খাবারে হাত দিতে যাবে অমনি আয়ান এসে বোনের হাত চাটি মারল।
আয়নের এহেন কাজে পচন্ড বিরক্ত হলো অনিকা,”তুই দেখিস তোর বউ কে আমি কোন বেলায় শান্তিতে খেতে দিবোনা”।
” আমার বউ কি তোরটা খাবে নাকি আমারটকা”।
“আমি কি তোর টা খাই না বাবার টা”।
“যারটাই খাস মুটিয়ে যাচ্ছিস দেখছিস না”।
“আমি মুটিয়ে যাচ্ছি এতো বড় কথা বলতে পারলি তুই”?
এই থামবি তোরা।
বাবার কন্ঠ পেয়ে দুই ভাই বোন একেবারে চুপ হয়ে গেল। কিন্তু একে ওপরকে চোখ দিকে শা*ষাতে মোটেও ভুললো না।
শিমু এদের দুই ভাইবোনের দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া দেখে নিজের বোনেদের কথা চিন্তা করল।
শিমুরা চার বোন। শিমু বড় বোনের বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর আগে । অভাবের সংসার হওয়ার তার বাবা খুব দ্রুত তার বড় বোন কে বিয়ে দিয়ে দেয়।
আর তার ছোট দুজন জমজ বোন আছে যাদের কে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা পৃথিবী মায়া ত্যাগ করে চলে যান।
শিমু অনুভব করল ওর নিজের বোনদের কথা মনে পড়ছে।
“এই মেয়ে দারিয়ে না থেকে আমাদের খেতে দিবে তো নাকি। নাকি না খেয়েই বসে থাকতে হবে”।
রাজিয়া বেগমের কথায় হুশে ফিরল শিমু।
ইতিমধ্যে শাশুড়ি বাদে টেবিলে সবাই উপস্থিত।
শিমু একে একে সবার প্লেটে খাবার বারছিল। নিজের স্বামীর প্লেটে বড়তে গিয়ে হাত থেমে গেল অদৃশ্য জরতা তাকে আকরে ধরল।
সাফোয়ান শিমুর হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন কিন্তু মুখে টু শব্দ টিও করল না।
রাজিয়া বেগম বিরক্ত হলেন ভিষন। শিমু হাত থেকে খাবারের চামচ কেরে নিয়ে নিজেই বেড়ে দিলেন প্রান প্রিয় নাতিকে।
প্রথমবার রাজিয়ার কাজটা মনে মনে ভালো লাগল শিমুর।
“শিমু তোমায় খাবার সার্ভ করতে হবে না তুমি ও আমাদের সঙ্গেই বোসো”।
“আব্বু আম্মা আসুক আমারা একসাথেই খেতে বসব”।
আলতাফ আর কিছু বললেন না। নিজের খাওয়া শেষ করে দুই ছেলেকে তার কক্ষে যেতে বলে নিজের কক্ষে প্রস্থান করলেন ।
_________
শিমু নিজের কক্ষে বসে ছিল। প্রয়োজন ছারা সে খুব একটা নিজের কক্ষের বাইরে যায়না।
“আসবো ভাবী।”
শিমু দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল অনিকা এসেছে। মেয়েটা খুবই মিষ্টি সভাবের ব্যাবহারও খুব সুন্দর। এইযে এই বাড়িতে আসার পর মেয়েটা তাকে যতবার ডাক দেয় ততবার তার মধ্যে ভালো লাগার কাজ করে। মেয়েটা তার এক বছরের জুনিয়র। কিন্তু ভালোবাস আর সম্মান এই মেয়েটা থেকেই সবচেয়ে বেশি পেয়েছে সে।
“আসোনা, আমার ঘরে আসতে তোমার কোন অনুমতি নিতে হবেনা।”
“তবুও ভাবী অনুমতি ব্যাতিত কারো রুমে আসা ঠিক না ”
“ওকে ওকে তোমার যেটা ভালো লাগে তুমি সেটাই করবে”।
অনিকা শিমুর পাশি গিয়ে বসল।
“জানো ভাবী এই বাড়িতে তুমি আসার আগে আমার কোন গল্প করার মানুষ ছিলোনা। কিন্তু তুমি আসার পরে আমি আমার মনের কথা গুলো কোন সংকোচ ছাড়াই বলতে পারি”।
“তো গল্প বুড়ি আজকে কি নিয়ে গল্প করবেন আপনি “।
“সাফোয়ান ভাইয়াকে নিয়ে শুনবে তুমি”।
শিমুর হাসি মাখা মুখটা এক মুহুর্তেই মলিন হয়ে গেল। এই লোকটা তার মনের কোনে শুধু ঘৃ*নারই সৃষ্টি করেছে। তার জানা মতে কোনো আদর্শবান পুরুষই বিয়ে করে বউ কে একা ফেলে চলে যাবেনা। এর ফলে সেই মেয়েটাকে কতটা ক*ষ্ট পোহাতে হয় সেটা শুধু সেই জানে।
শিমুর থেকে কোন উওর না পেয়ে অনিকা বুঝতে পারলো সে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। যেটা কর তার মোটেও ঠিক হয়নি। তাই সে নিজের কথা কে অন্য দিকে ঘোরালো।
_______
সাফোয়ান ড্রয়িংরুমে সোফায় কোলের ওপর লেপটপ নিয়ে বসেছিল। লায়লা নিজের ছেলের পাশে গিয়ে বসলেন। সে সাফোয়ান কে এখোন বুঝতে পারেনা চেনা ছেলেটা কেমন অচেনা হয়ে গেছে। সকালে আলতাফ নিজের ছেলেদের সাথে প্রায় দুই ঘন্টা কথা বলেছেন কি বলেছন তার কিছুই লায়লা জানেনা তবে এটুকু জানেন তার ছেলেটা একটা মেয়ের প্রতি অন্যা*য় করছে। মেয়েটাকে নিজে পছন্দ করে নিজের ছেলের বউ করেছিল সে। কত আশা নিয়ে মেয়েটা এসেছিল এ বাড়িতে কিন্তু কি পাচ্ছে মেয়েটা।
মাকে লক্ষ্য করে নিজের কোলে থাকা ল্যাপটপ টা বন্ধ করলো সাফোয়ান। মা কি নিয়ে কথা বলবে সাফোয়ান তার কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।
কোন কিছু না বলেই মায়ের কোলে টান টান হয়ে শুয়ে পরলো। ছেলে আচমকা কোলে শুয়ে পরার কিছুুটা বিস্মিত হলো লায়লা। কিছু বলতে যাবেন তার মাঝেই সাফোয়ান মায়ের কাছে একটা আবদার করল।
“মা একটু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাওনা”।
ছেলে আবদার লায়লা বেগম ফেলতে পারলেননা।
কিছুক্ষন পিনপতন নিরাবতা চলল মা ছেলের মাঝে ।
নিরাবতা ভেঙে সাফোয়ান বলতে শুরু করল।
“মা আমি দুঃখিত নিজের ভালো মন্দ এখোনো আমি বুঝতে পারিনি।নিজের তাড়াহুড়ায় নেয়া ভুল সিদ্ধান্ত কে সব সময় সঠিক মনে করেছি।
নিজের মায়ের কথা অবজ্ঞা ও স্রীকে অব*হেলা করেছি। মা আমি বুজতে পেরেছি আমার করা চরম অন্যা*য়। ”
নিজের কথা শেষ করে সাফোয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।
“মা তুমি বলতেনা আয়ানের বিবেক বুদ্ধি কম কিন্তু জানো মা আয়ান খুবই বুদ্ধিমান একটা ছেলে। ও না বোঝালে আমি আমার চরম বোকামিটা করেই যেতাম।
মা আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি এর পরের থেকে আমি আর কোন বোকামি কোরবোনা প্রমিজ।”
দেরি করে হলেও যে ছেলে সঠিকটা বুঝতে পেরেছে তার জন্য লায়লা বেগম পচন্ড খুশি হলেন।
“আমারো কিছুটা ভুল আছে আমারো উচিৎ হয়নি তোমাকে বিয়ের জন্য ফোর্স করা।কিন্ত আমিও নিরুপায় নিজের ছেলের ভালোর জন্য আমি স্বার্থ পর হয়েছিলাম।বাবা অতিত সবারই থাকো কারো ভালো কারো আবার খারাপ। আমি চাই তুমি তোমার ওই পুরোনো জরাজীর্ণ জিবন কে পিছনে ফেলে বর্তমান জিবনকে সুন্দর করে তুলো।”
“ভাইয়া এইটা কিন্তু ঠিক না তুমি বউয়ের কোল ও দখোল করবে আবার মায়ের কোল ও দখোল করবে আর আমি এগুলো তাকিয়ে তাকিয় দেখবো। আমার নয় বউয়ের আদরের বয়স হয়নি কিন্তু মায়ের আদরের তো বয়স আছে তাই নয় কি?”
আয়ানের কথা শুনে সাফোয়ান মায়ের কোল থেকে উঠে আয়ানের কান ধরল।
“তোর এই ঠোঁট কাটা স্বভাব কবে যাবে বলতো”।
“বউ এনে দিলেই চলে যাবে “।
“কি বললি?”
“না মানে আর করব না সরি।”
দুই ছেলের কান্ড দেখে লায়লা উচ্চস্বরে হেসে দিলেন। কে বলবে এরা বড় হয়ে গেছে ।
চলবে,,,,