প্রেম পুকুর পর্ব-০১

0
793

#প্রেম_পুকুর
[১]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন

বিয়ের প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে বাসর রাতের পরে আমি আমার স্বামীকে দ্বিতীয় বারের জন্য দেখিনি এবং আমাদের মাঝে কোন রকম যোগাযোগ ও নেই।

নিজের প্রিয় বান্ধবীর এমন জটিল স্বীকার উক্তি পেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল আশা।

তোর শাশুড়ি শশুড় এই নিয়ে কিছু বলেনি ।

কি বলবে?

শিমু প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন করায় কিছুটা রু/ষ্ঠ হলো আশা। মেয়েটা চিরকালই এমন কখোনো কোন কিছু পরিষ্কার করে বলেনা।

দেখ শিমু তোদের মধ্য কি কিছু হয়েছে।

আমি এই সব কিছুই জানিনা আশা লোকটাকে আমি বিয়ের আগে মাত্র একবার দেখতে পেয়ে ছিলাম। তুইতো জানিস ঘরোয়া ভাবে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়। আমরা একে অপরকে যেখানে ভালো করে চিনতাম না সেখানে ঝা/মেলা কেমন করে হবে বল তো।

তুই আংকেল আন্টিকে এই ব্যাপারে কিছু বলিস নি।

না এখোনো কিছু বলিনি বিয়ের পরে ফিরুনীতে আমার স্বামী না গেলেও আমার শাশুড়ি আমাকে নিয়ে যায়। শাশুড়ি বাবাকে জানায় হঠাৎ কাজ পরে যাওয়ায় সাফোয়ান বিদেশ গেছে আসতে কিছু দিন সময় লাগবে।

তুই তবুও কেন তাদের সত্যিটা বলছিস না শিমু।

আমাদের আর্থিক অবস্থা তোর জানা আশা এখোন আমি যদি বাড়িতে ফিরে যাই বাবার কষ্ঠ হয়ে যাবে। ওর থেকে আমি বেশ আছি দুইবেলা ভালো খাবার পোশাক সবই তো পাচ্ছি।

কার সাথে কথা বলছো বউমা?

শাশুড়ির কন্ঠ শুনে চোখের কোন বেয়ে গরিয়ে পরা পানি দ্রুত মুছে নেয় শিমু। আশাকে রাখছি বলে কল কেটে দিয়ে পিছনে ঘুরে দারায়।

না আম্মা তেমন কারো সাথে না।

ওহ ভালো, তো শুনো তোমাকে যেটা বলতে এসেছি সেটা শুনো।
আয়ান আজকে দুবাই থেকে ফিরবে। তাই আমি চাচ্ছি আমি আর তুমি মিলে নিজ হাতে কিছু রান্না করব। যেহেতু ও তোমার ছোট দেবর, তুমি পারবে?

জ্বী আম্মা।

লায়ালা ছেলের বউ এর কথায় প্রশন্ন হয়ে চলে গেলেন।
আয়ানকে শিমু কখোনো বাস্তবে দেখেনি দু এক বার তার ননদ অনিকা আয়ানকে দেখিয়েছে ছবিতে আর ভিডিও কলে একবার কথা হয়েছে।
শশুড়ের ব্যাবসার কাজে দুবাই থাকে আয়ান।

তাই সে বিয়েটা হুট করে হয়ে যাওয়ায় সে সেখানে উপস্থিত ছিলোনা ব্যাস আয়ানের ব্যাপারে সে এতটুকুই জানে।

শিমু তার কোমড় পর্যন্ত চুল হাত খোপা করে মাথায় ওরনা পেচিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটলো।

যাওয়ার পথে তার দাদি শাশুড়ি রাজিয়া বেগমের সাথে দেখা হলো।
মহিলা যদিও শিমুকে খুব একটা পছন্দ করেনা। তবুও শ্রদ্ধার খাতিরে শিমু তাকে জিগ্যেস করলো,” দাদি আপনার কি কিছু লাগবে”।

রাজিয়া বেগম মুখ কালো করে বললেন, ” আমার কিছু দরকার নেই তবে দেখো স্বামীকে পটাইতে না পেরে দেবর কে পটিয়ো না”।

মহিলার কথা শুনে এক মুহুর্তেই অন্তর বিষি/য়ে উঠল শিমুর। কতটা নিচ মানসিকতা তার সেটা শিমু বুঝতে পারলো। রাজিয়া বেগম বিয়ের পরেরদিন থেকে কোনো অজানা কারনে তাকে সব সময় ক/টু কথা শোনায়। নিজের কষ্টকে নিজের বুকেই মাটি চাপা দিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটল শিমু।

শাশুড়ির হাতে হাতে কাজ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা লেগে গেলো তার। তাই কাজ শেষে ফ্রেস হতে সে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে চলে গেল সে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট নিয়ে গোসল সেরে মাগরিবের নামাজ পরে কিছু বই পরছিল শিমু।

“ভাবী ভাবী দ্রুত আমার সাথে নিচে চলো। দেখো কে এসেছে”।

অনিকার কথায় দ্রুত জায়ানামাজ ভাজ করে অনিকার সাথে নিচে এলো শিমু।
যদিও সে জানতো আজকে তার দেবর আসার কথা। কিন্তু দেবরের সাথে নিজের স্বামীকে দেখে ভিষন অবাক হলো সে।
অস্পষ্ট স্বরে বলল, সাফোয়ান।

পরিস্থিতি অনেকটা জটিল হয়ে উঠল চারিদিকে গুমট পরিস্থিতি বিদ্যমান।
সকল নিস্তব্ধতা কে ভেঙে দাদি দৌরে চলে গেলো তার দুই আদরের নাতিদের কাছে। এমনিতে এই মহিলা যদিও ভালো করে হাটতে পারেনা কিন্তু তার আদরের নাতিদের দেখলে তার যেন দশ বছর বয়স কমে যায়।

” সাফু আমার কই ছিলি পরের মাইয়ার জন্য তুই কেন বাড়ি ছারবি”।

আবারো রাজিয়ার কথায় শিমুর মন তি/ক্ত হলো সাফোয়ানের চলে যাওয়ার পিছনে সে তো দ্বায়ী নয় তবে প্রতিবার তাকে কেন দ্বায় দেয় এই মহিলা।

শিমুর শশুড় শান্ত দৃষ্টিতে দুই ছেলের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন, তোমরা ফ্রেস হয়ে খেয়ে নাও আমি কাল সকাল দশটায় তোমাদের সাথে কথা বলব।

শিমুর শশুড় আলতাফ শান্ত মস্তিস্কের একজন ব্যাক্তি তাই তিনি এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য কিছুটা সময় নিলেন।
আলতাফ তার কথা শেষ করে নিজের কক্ষে চলে গেলেন।
লায়লা বেগম বুঝতে পারলেন তার স্বামী তার ছেলের প্রতি ভিষন রাগা/ন্বিত কিন্তু সাফোয়ান ক্লান্ত থাকায় কিছুই বললেন না।

তার ছেলে যতই অপরাধ কুরুক না কেন।

শিমুর নিজেকে এখানে বড্ড বেমানান লাগছে।
তার তথাকথিত স্বামী তার দিকে এইপর্যন্ত একবারের জন্য তাকায়নি।

আয়ান শিমুর অস্বস্তি কিছুটা আন্দাজ করে।

” ভাবী আপনি দূরে কেন দারিয়ে আছেন ভাইয়ের পাশে এসে দারান”।
যদিও আয়ান শিমুর অস্বস্তি কমানোর জন্যর বলেছিল কিন্তু শিমুর মাঝে অস্বস্তি কমার বদলে কয়েকগুন বেড়ে গেল।

রাজিয়া বেগম শিমুর দিকে মুখ বাকিয়ে বলল,
“ও যে মেয়ে স্বামীর কদরই তো বুঝেনা ও কি কইরা স্বামীরে দরদ করবো ।

লায়লা শাশুড়ির প্রতি ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন, “আপনার নাতি সেইরকম কদর দেবার স্বামী না”।

“অন্যের মেয়ের জন্য নিজের ছেলেরে কথা শুনাইনো না লায়লা”।

“আপনিও নিজের নাতির দো/ষ ডাকতে আসবেননা, আয়ান তোর ভাইকে নিয়ে ঘরে যা”।

আয়ান সাফোয়ান কে নিয়ে ঘরে চলে গেল।
শিমু দেখল তার পাথরের মত স্বামীর তার পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া। কথা বলা তো দূর একবার নিজের বিবাহিতা স্রীর দিকে তাকালোনা পর্যন্ত।
শিমুর চোখের কোন বেয়ে কয়েক ফোটা জল গরিয়ে পরল নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে চলে গেল।

সে তার স্বামী কক্ষে থাকেনা, ইচ্ছে করেই থাকেনা যে মানুষটার প্রতি তার কোন অধিকার নেই তার ঘরের প্রতি অধিকার দেখিয়ে কি লাভ ?

শিমু খাবার গুলো টেবিলে গুছিয়ে রেখে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।

নিজের ঘরে এসে দরজা টা বন্ধ করে আয়ানার সামনে দারালো নিজের কমতি খুজতে।

মাথার খোপা খুলে দিতেই কালো কেশ গুলো পুরো পিঠ জুরে ছরে ছরিয়ে পরল।

আয়নার সামনে দারিয়ে থেকে শিমু নিজেকে প্রশ্ন করল, ” কি লাভ এই রূপগুণ দিয়ে যেই রূপে আর গুণে স্বামীকেই মুগ্ধ করতে পারলাম না”।

নিজের সাথে কথা বলতে বলতেই শিমু হাটু মুরে বসে বসে পরল মেঝেতে। চোখ দুটোতে অশ্রু কণার ঝরনা শুরু হলো। বরফ যেমন পানির ফোটা আকারে ভূপৃষ্ঠে পানির ফোটা আকারে পতিত হয়ে বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে তেমনই শিমুর বুকে যত অভিমান ছিলো সব পানির ফোটা আকারে চোখ দিয়ে গরিয়ে পরছে।
________

সাফোয়ান দীর্ঘ সময় শেষে সাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হলো।
বের হতেই বিছানায় বসে থাকা বোনের দিকে নজর পরল।
অনিকা ভাইয়ের উদ্দেশ্য চেচিয়ে বলল, “ভাইয়া তুমি আসবে বললে না যে”।

সারপ্রাইজ দিলাম।

নিজের কথা শেষ করে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে শুরু করল।

অনিকা কিছুক্ষন গালে হাত দিয়ে আবার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, “কাকে ভাইয়া “।

সাফোয়ান এবার বোনের মাথায় জোরে গাট্টা মারলো।
অনার্স পরুয়া ছাত্রী যে এত গাধী হয় সেটা তোকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না আমি।

ভাবীও তো অনার্স এ পরে।

সাফোয়ান ভ্রুকুচকে জিগ্যেস করেল, “কোন ভাবী “।

অনিকা ভিষন মজা পেল সেও অনুরূপ ভাবে ভাইয়ে মাথায় গাট্টা মেরে বললো, “অফিসের বস যে এত বোকা হয়ে সেট তো তোমাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। তুমি এত বড়ো গাধা যে নিজের বউ কোন ইয়ারে পরে সেটাই জানোনা”।

নিজের বাক্য সমাপ্ত করে অনিকা দ্রুত ভাইয়ের কক্ষ ত্যাগ করল।
সাফোয়ান এবার হাতের টাওয়াল নামিয়ে টি টেবিলের ওপর রাখল। মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিল একবার।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে