প্রেম পর্ব-০৫+০৬

0
1586

#প্রেম
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana

চোখ খুলে মিষ্টি দেখলো মিষ্টি ওর রুমে শুয়ে আছে৷ আর ওর মাথার কাছে ওর বাবা মা আর ভাই বসে আছে।

“মা

মিষ্টির কন্ঠ শুনে মিষ্টির বাবা মা ব্যস্ত হয়ে পড়ে

” এখন কেমন লাগছে সোনা

“বাবা ভালো লাগছে। কিন্তু আমি এখানে কি করে আসলাম

” তুমি রাস্তায় পড়ে ছিলে আমি বাড়ি নিয়ে আসলাম (বাবা)

“ওই ছেলেটা সত্যি খুব খারাপ। আমাকে বিপদে ফেলে চলে গেলো
মিষ্টি মনে মনে বলে

” আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি।

মিষ্টির মা মিষ্টির জন্য খাবার নিয়ে আসে। মিষ্টির বাবা মিষ্টি আর জীমকে খাইয়ে দেয়। তারপর মিষ্টিকে রেস্ট নিতে বলে চলে যায়।

জীম নিজের রুমে সিস বাজাচ্ছে আর চুল আচরাচ্ছে।
“তোমার এক্সাম ছিলো না আজ

বাবা কন্ঠে বাবার দিকে তাকায়

” এক্সাম দেবো না

“কেনো?

” আমি তো ফাইনাল ইয়ারের বই ই কিনি কি লিখবো?

“বই কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলাম না তোমায়
চিৎকার করে বলে জীমের বাবা। সামনের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনে মিষ্টি ওর ব্যালকানিতে যায়। আর দেখে জীম আর ওর বাবা

” ওই টাকা দিয়ে সিগারেট খেয়েছি

“বাহহহ খুব ভালো। বই কেনার টাকা দিয়ে সিগারেট কিনেছো। কতো ভালো কথা

” সত্যি কথা বললাম

“বেয়াদব

” ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি। এখন আর নতুন করে বলার কি আছে

“বমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও

” আছে এই বাড়ি তাই শুধু বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলো।

“তবুও আমার বাড়িটা আছে। তোমার কি আছে

” আমার বাবার ব্যাংক ভরা টাকা আছে।

জীম রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এখন এখানে থাকলে ওর এসব ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে হবে। জীমের বাবার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। নিজের ছেলে এতো বেয়াদব এটা উনি মেনে নিতে পারে না।

মিষ্টি নিজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিলো

“এই ছেলেটা প্রচুর বেয়াদব। বাবার সাথে কি রকম বিহেব করতে হয় জানে না। ধুর এই ছেলেটার কথা আর ভাববো না।

মিষ্টি রুমে এসে বই নিয়ে বসে। মিষ্টির মা এসে বলে

” আজ পড়তে হবে না।

মিষ্টি তো মহা অবাক। যে মা সারাক্ষণ পড়া নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করে সে আজ পড়তে না করছে। ব্যাপারটা মিষ্টির ঠিক হজম হচ্ছে না

“মা আর ইউ ওকে

” কেনো বলোতো

“না মানে তুমি পড়তে না করছো

” তুমি অসুস্থ তাই। ফিট হলে আবার পড়বে। এখন শুয়ে পড়ো।

মিষ্টি শুয়ে পড়ে। মাঝরাতে ফোন বাজার শব্দে মিষ্টির ঘুম ভাঙে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে বেশ কয়েকটা মেসেজে এসেছে। মেসেজে গুলো অপেন করে দেখে

“এতো তারাতাড়ি আমার জানটা ঘুমিয়ে পড়লো। আজ পড়া নেই

” বেলকনিতে দেখো একটা গিফট রাখা আছে

“লাভ ইউ সো মাচ আমার জানটা

মেসেজ গুলো দেখে মিষ্টির মাথা ঘুরে। কে এমন মেসেজ পাঠায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিষ্টি বেলকানিতে যায়। বেলকানির দরজা খুলে একবার জীমের রুমের দিকে তাকায়। দেখে জীম একহাতে মদের গ্লাস অন্য হাতে সিগারেট।

তারপর বেলকনির দোলনার দিকে বড় একটা শপিং ব্যাগ। মিষ্টি ব্যাগটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমে এসে ব্যাগটা খুলে দেখে একটা নীল শাড়ি। আর চুল বাধার অনেক গুলো ক্লিপ

” এই লোকটা পাগল না কি

মিষ্টি ব্যাগটা আলমারিতে রেখে আবার শুয়ে পড়ে।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙতে দেখে পাশে বাবা আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে। পাশে বাটিতে পানি আর কাপড়ের টুকরো। মিষ্টি বুঝতে পারে রাতে জ্বর এসেছিলো আর বাবা জলপট্টি দিয়েছে। মিষ্টি উঠে বসে।

“মিষ্টি শুয়ে থাকো জ্বর কমেনি

” বাবা কলেজে যেতে হবে তো

“আজ কলেজে যেতে হবে না

মিষ্টি শুয়ে পড়ে। মিষ্টির বাবা খাবার আনতে যায়। তখন মিষ্টির ফোন বেজে ওঠে

” কে

“জ্বর এসেছে

” আপনি কে?

“আগে বলো কেমন আছো

” আমি যেমনই থাকি আপনার কি? কে আপনি

“যদি বলি তোমার বফ

” আমি এসব ফালতু রিলেশন করি না যে বফ থাকবে

“ওহহ তার মানে সিট খালি আছে

” মানে

“কিছু না। বাবা কি তোমার জন্য খাবার আনতে গেছে

” বাবা টা কে

“আবির চৌধুরী

“আপনি আমার বাবার ছেলে মানে আমার ভাইয়া

” মিষ্টি কার সাথে কথা বলছো

চলবে

#প্রেম
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana

মিষ্টি চমকে বাবার দিকে তাকায়

“বাবা তিথি ফোন দিয়েছিলো

” ঠিক আছে ফোন রেখে খেয়ে নাও।

মিষ্টির বাবা খাবার রেখে চলে যায়। মিষ্টি ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে এখনো লাইনে আছে।

“ফুলটুসি দেখি প্রেম করার আগেই মিথ্যে বলা শুরু করে দিয়েছে

” বাজে কথা বাদ দিয়ে ফোন রাখুন

“ঠিক আছে তাহলে কলেজে দেখা হচ্ছে

জীম মিষ্টির কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয়।
মিষ্টি ফ্রেশ হয়ে খাবার খায়।
মিষ্টির বাবা বারবার বারণ করার পরেও মিষ্টি জোর করে কলেজে যায়। লাল একটা গাউন পড়ে কলেজে যায়। কলেজে ঢুকবে তখন জীম মিষ্টির সামনে বাইক থামায়

” সমস্যা কি পথ আটকালেন কেনো? যেতে দিন

“চলো আজ আমি তোমায় নতুন ক্লাস করাবো

” মানে

“তোমাকে নিয়ে লংডাইভে যাবো

” আমি আপনার সাথে যাবো এটা আপনার মনে হয়

“মনে হয় না তবে তোমাকে কি করে নিতে হবে সেটা আমি জানি

” যাবো না আপনার সাথে

“শিওর যাবে না

” ১০০%

“তাহলে তোমার বাবাকে পিক গুলো সেন্ট করি কি বলো

জীম মিষ্টির সামনে মোবাইল ধরে যাতে মিষ্টি একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।

” এই ছেলেটা তো আপনি

জীম মোবাইলটা পকেটে রেখে বলে

“হুম। তোমার বাবাকে বলবো তুমি আমার সাথে প্রেম করো।

” বাবা বিশ্বাস করবে না

“তাই তো পিক গুলো

” আপনি কি চান বলেন তো

“তোমাকে

” মানে

“আইমিন তোমার সাথে ঘুরতে চাই

” কিন্তু আমি চাই না

“আমি চাই

” আমি যেতে পারি যদি আপনি আমার এই পিক গুলো ডিলিট করেন

জীম একটু ভেবে বলে

“ঠিক আছে। বাইকে ওঠো

” হেলমেট কই

জীম মিষ্টিকে হেলমেট পরিয়ে দিতে যায়

“আমি পারি

” আমার এতো টাকার হেলমেট যদি ভেঙে ফেলো

“ওতোটাও পাগল না

জীম হেলমেট বেধে দেয়।

মিষ্টি বাইকের ছিট ধরে বসে

” আমাকে ধরে বসো

“সরি

” পড়ে গেলে দোষ নাই

জীম ফুল স্পিডে বাইক চালায়। মিষ্টি জীমের ওপর পারে যায়। জীমকে শক্ত করে ধরে। জীম একটু হাসে।
সিনেমা হলের সামনে বাইক থামায় জীম।

“নামো। আমার শার্ট তো ছিড়ে ফেলেছো

মিষ্টি লাফ দিয়ে নামে

” আপনার শার্ট একটুও ছিড়ে নাই। চেক করে নেন

জীম বাইক থেকে নেমে বলে

“ছিড়লে তো তোমারটাও ছিড়ে ফেলতাম

” বেয়াদব। এখানে আনলেন কেনো আমাকে

“সিনেমা দেখবো তাই

” এখানে সিনেমা

“কেনো তুমি কখনো সিনেমা হলে যাও নাই

” নাহহ

“ওহহ। চলো

জীম মিষ্টির হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মিষ্টিকে এক সাইডে দাড় করিয়ে টিকিট আর চকলেট কিনে নিয়ে আসে জীম

” চলো

মিষ্টি জীমের পেছনে হাটছে। কিন্তু সিনেমা হল দেখে মিষ্টির মাথা ঘুরছে। দুনিয়ায় যত কাঁপল ছিলো সব মনে হয় সিনেমা হলে চলে এসেছে। সিনেমা এখনো শুরু হয় নি তাই লাইট জ্বলছে। জীম মিষ্টিকে নিয়ে দেয়ালের সাইডে একটা সিটে বসে।

ওদের আগে পিছনে অন্য কাঁপলরা বসেছে

“বলছিলাম কি

” বলো

“এখানে তো কোনো সিনেমা হচ্ছে না

” মুভি এখনো শুরু হয় নি। আর পাঁচ মিনিট আছে। তুমি চকলেট খাও

জীম মিষ্টিকে চকলেট দেয়। মিষ্টি খাচ্ছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে

“কোনো দিকে তাকাবা নাহ। শুরু সামনের দিকে তাকিয়ে থাকবে

” কিন্তু কেনো

“আমি বলছি তাই

” আপনার কথা আমি শুনবো কেনো

“আমার কথা না শুনলে আমি তোমাকে এখান থেকে গুম করে দেবো। আর কোনো দিনও বই আর বাবার মুখটা দেখতে পাবে না। সো চুপচাপ বসে থাকো

মিষ্টি ভয়ে ভয়ে চকলেট খাচ্ছে। জীম ফোন দেখছে। সিনেমা শুরু হয় আর সাথে সাথে লাইট অফ হয়ে যায়। মিষ্টি একটা চিৎকার দেয় কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। কারণ জীম মিষ্টির মুখটা চেপে ধরে আছে।

” একদম চিৎকার করবে না

“উম উম

” কি উম বলো চিৎকার করবো না

মিষ্টি হাত দিয়ে ইশারা করে জীম মিষ্টির মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়

“এতো অন্ধকার কেনো?

” এখানে অন্ধকারই থাকে
“আমি থাকবো না এখানে

“আমি যাবো না। তুমি যাও

জীম মুভি দেখায় মন দেয়। মিষ্টি জীমের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়।

সামনের কাঁপরা কিছ করছিলো সেটা দেখে মিষ্টি জীমের দিকে তাকিয়ে দেখে জীম মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়। জীম পেছন পেছন যায়।

মিষ্টি বাইরে বেরিয়ে দেখে গেট তালা দেওয়া। মিষ্টি এবার কান্না করে দেয়

” ফুলটুসি কি হলো কাঁদছো কেনো

“আপনি আমাকে বাঁজে জায়গায় নিয়ে এসেছেন

” সরি ভুল হয়ে গেছে। এরপর থেকে তোমাকে নিয়ে

“এরপর মানে কি হ্যাঁ। আমি আর জীবনেও আপনার সাথে কোথাও যাবো না। কথাও বলবো না। গেট খুলতে বলুন

” মিষ্টি শুনো

“গেট খুলতে বলবেন কি না

” ঠিক আছে শান্ত হও

গেট খুলে দেয় মিষ্টি ওখান থেকে বেরিয়ে রিকশা খুজে কিন্তু কোথাও নেই। জীম বাইক নিয়ে আসে

“ওঠো

মিষ্টি উঠে বসে। মিষ্টিকে মিষ্টির আইসিটি কোচিং এর ওখানে নামিয়ে দেয়। মিষ্টি যেতে নিলে হাত টেনে ধরে

” সারপ্রাইজ না দেখেই যাচ্ছো।

জীম মোবাইল বের করে দেখায় আজকের পিক। অনেক রকমের ছবি জীম আর মিষ্টির। হাত ধরা, হেলমেট পরিয়ে দেওয়া, চকলেট দেওয়া সব ছবি। এসব দেখে মিষ্টি মাথায় হাত দেয়

“ফুলটুসি রাতে তোমার বেলকনিতে ওয়েট করবো চলে এসো

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে