প্রেম পর্ব-০১+০২

0
3321

#প্রেম
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)

রাত বারোটা। গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে মিষ্টি। সামনেই তার এইচএসসি পরীক্ষা। হঠাৎ করে মিষ্টির রুমের বেলকনিতে কিছু পড়ার শব্দ আসে। মিষ্টি বইটা রেখে অধিক আগ্রহে এগিয়ে যায় কি পড়েছে দেখার জন। মিষ্টি ভেবেছিলো হয়ত ফুলের টব ভেঙেছে।

বেলকানিতে গিয়ে মিষ্টি দেখে একঝুড়ি চকলেট। আর তার সাথে গিফটের কাগজে মুরানো কিছু একটা।
মিষ্টি ভাবছে চকলেট গুলো ধরবে কি না। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। তাই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

“আপি ঘুমোবি না

ছোট ভাইয়ের কথায় চকলেটের দিক থেকে ছোট ভাইয়ের দিকে তাকায় মিষ্টি।

” আপি তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? মা তো বলেছিলো রাতে বেলকানির দরজা না খুলতে তুমি তাও খুলেছো। দাঁড়াও আমি এহ্মুনি মায়ের কাছে বলে দিচ্ছি

“তাজ দেখ

” কিহহ

“এদিকে আয়

তাজ মিষ্টির কাছে গিয়ে দেখে চকলেট। তাজ খুশি হয়ে চকলেট গুলো নিয়ে আসে।

” এতো চকলেট এখানে এলো কি করে

“আমিও বুঝতে পারছি না

” থাক বুঝতে হবে না। চলো খাওয়া শুরু করি।

মিষ্টি আর তাজ বিছানায় বসে চকলেট খাওয়া শুরু করে। মিষ্টি ভাবছে চকলেট গুলো কে রেখেছে। ভাবছে আর খাচ্ছে

“আপি আমি আর খাবো না পেট ভরে গেছে। তুমি শুয়ে পড়ো। মা খাতা দেখছে আর বাবাও কাজ করছে তাই আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে বলতে।

” ঠিক আছে তুই যা আমি শুয়ে পড়ছি।

তাজ চলে যায়। মিষ্টি বেচে যাওয়া চকলেট গুলো পড়ার টেবিলে রেখে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ি।

একটু পরেই মিষ্টির ফোনে একটা মেসেজ আসে

“চকলেট তোমার খুব প্রিয় তাই চকলেট গুলো রেখে এসেছি। আর আমি জানতাম আমার মিষ্টি আমার দেওয়া চকলেট গুলো খাবেই। লাভ ইউ সো মাচ জানটা। একন ঘুমিয়ে পড়ো

মেসেজটা পড়ে মিষ্টি ভয়ও পায় আবার রাগও হয়। কে এই লোকটা? আবার আমাকে ফলো করছে? কে হতে পারে?

এসব সাঁত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মিষ্টি ঘুমিয়ে পড়ে।

ফজরের আজানের সময় মিষ্টির বাবা মিষ্টিকে ডেকে তোলে
মিষ্টি চোখ বন্ধ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে

” বাবা আর পাঁচ মিনিট ঘুমায় প্লিজ

“আর এক মিনিটও না। আজ বাদে কাল তোমার পরিহ্মা সে খেয়াল আছে তোমার।

বিরক্তি নিয়ে মিষ্টি উঠে ফ্রেস হতে যায়। মিষ্টির বাবা এবার তাজকে ডাকতে যায়। তাজ ক্লাস ফাইভে পড়ে।

মিষ্টি ওজু করে ফজরের নামাজ আদায় করে বই নিয়ে বসে। তাজ বিরক্তি নিয়ে পরি পাশে বসে বইয়ের পাতা উল্টোচ্ছে। এতো সকাল সকাল উঠে পড়তে বসাটা বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।

এক টানা নয়টা পর্যন্ত পড়ে মিষ্টি আর তাজ ওঠে। মিষ্টি তারাহুরো করে রেডি হচ্ছে কলেজে যেতে হবে। মিষ্টির মা রান্না শেষ করে টিফিন প্যাক করছে। মিষ্টির মা একটা প্রাইমারি স্কুলের টিচার।

মিষ্টি কলেজ ড্রেস পড়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে মায়ের পিছে ঘুরছে চুল বিনুনি করতে। কিন্তু মিষ্টির মায়ের হাতে অনেক কাজ তাই পারছে না। শেষমেষ বাবা মিষ্টির চুল বিনুনি করে দেয়।

রাস্তার পাশে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বিরক্তি নিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি। কিন্তু রিক্সা আসার কোনো নামই নেই।

দুরে বাইকের ওপর শুয়ে কেউ একজন মিষ্টিকে দেখে যাচ্ছে। তারপর কি মনে করে বাইক স্টার দিয়ে মিষ্টির সামনে গিয়ে বাইক থামায়।

এভাবে বাইক থামানোয় মিষ্টি কিছুটা ভয় পায়।

বাইকের লোকটা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বলে

” নাম কি তোমার?

মিষ্টি ছেলেটাকে নতুন দেখছে। এর আগে কখনো দেখে নি।

“কেনো বলবো? কে আপনি?

ছেলেটা একটু হেসে বলে

” আমি কে তা তোমার না জানলেও চলবে

“আমার নামটাও আপনার না জানলেও চলবে

“কলেজে যাচ্ছো? চলো তোমায় নামিয়ে দিয়ে আসি

“থ্যাংক্স ভাইয়া লাগবে না। আমি একাই যেতে পারবো

মিষ্টির মুখে ভাইয়া শুনে ছেলেটা রাগী চোখে মিষ্টির দিকে তাকায়। তখন রিক্সা চলে আসে। মিষ্টি রিক্সায় উঠে চলে যায়
ছেলেটা মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে

” আই লাইক ইউআর এটিটিউট।

চলবে।

#প্রেম
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana

ক্লাস রুমে বসে বসে পরের ক্লাসের পড়া পরছে মিষ্টি। আইসিটি স্যার আসবে। পেছন থেকে একটা মেয়ে মিষ্টির চুল ধরে ধরে দেখছে। এতে মিষ্টির খুব বিরক্ত লাগছে। মিষ্টির চুলে কেউ হাত দিলে মিষ্টির খুব বিরক্ত লাগে। মিষ্টির চুল গুলো খুব লম্বা আর ঘনো। খুব সুন্দর চুল। প্রায় হাটু পর্যন্ত।

“ওয়াও মিষ্টি এতো সুন্দর চুল তোমার।

” সুন্দর বলতে নেই মাশাল্লাহ বলতে হয়।

“সরি মাশাল্লাহ

মিষ্টি একটু মুচকি হাসি দেয়। চুল নিয়ে প্রশংসা প্রতি দিন শুনতে হয় মিষ্টির। মাঝে মাঝে ভাবে হিজাব করবে কিন্তু একা একা হিজাব করতে পারে না বলে আর করা হয় না।

ক্লাস শেষে মিষ্টি আর মিষ্টির বেষ্টু আইসিটি প্রাইভেট পরার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

” মিষ্টি আরও দশ মিনিট আছে চল না ফুসকা খেয়ে আসি

“হুম চল

মিষ্টি আর তিথি ফুসকা খেতে যায়।

ফুসকার দোকানে চেয়ারে বসে গল্প করছে মিষ্টি আর তিথি। ফুসকাওয়ালা ফুসকা বানাচ্ছে। হঠ্যাৎ করে সকালের সেই ছেলেটা ওদের কাছে বাইক থামায়। বাইক থেকে নেমে মিষ্টির পাশে বসে

” মামা ঝাল বেশি দিয়ে এক প্লেট ফুসকা দেন তো।

জীম চেয়ারের দুপাশে হাত রেখে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। মিষ্টি বিরক্তি নিয়ে একবার তাকায়। তারপর আবার তিথির সাথে গল্পে মন দেয়।

ফুচকাওয়ালা তিনজনকে তিন প্লেট ফুসকা দেয়।

জীম ফুসকা একদম পছন্দ করে না কিন্তু মিষ্টির সাথে একটু থাকবে বলে ফুসকা খেতে এসেছে।
মিষ্টি ফুসকা পেয়ে খাওয়া শুরু করে। জীম একটা ফুসকা মুখে দিয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টির তো কোনো দিকে খেয়াল নেই। মিষ্টি আর তিথির ফুসকা খাওয়া শেষ কিন্তু জীম মাএ একটা খেয়েছে।

মিষ্টি একবার জীমের দিকে তাকিয়ে বিল দিতে যায়। জীম ফুসকার প্লেট ফেলে দিয়ে বলে

“মামা কি ফুসকা বানাও তুমি একটুও ভালো হয় না। দিলা তো মুখটাকে নষ্ট করে। ধুর। এরপর থেকে কিন্তু আর এমন বাজে ফুসকা বানাবে না

মিষ্টি ভ্রু কুচকে হাত ভাজ করে তাকিয়ে আছে জীমের দিকে। মিষ্টি ভেবেছিলো ফুসকা মামা হয়ত জীমকে কিছু কথা শুনিয়ে দেবে। কিন্তু মিষ্টিকে ভুল প্রমাণিত করে বললো

ফুসকা মামা মাথা নিচু করে বলে

” আমি বুঝবার পারি নাই ফুসকা খাওয়া জাইবো না। এরপর থিকা ভালো কইরা বানানো চেষ্টা করুম

“ঠিক আছে

মিষ্টি এখন আর চুপ থাকতে পারলো না

” মামা আপনার ফুসকা অনেক ভালো হয়েছে। আমি তো প্রতিদিম আপনার কাছে থেকে ফুসকা খাবো। এই যে টাকা নেন

মিষ্টি মিষ্টি করে একটু হেসে ফুসকাওয়ালাকে টাকা দেয়।
ফুসকাওয়ালা জীমের দিকে একবার তাকিয়ে টাকা নেয়।
মিষ্টি চলে যায়। মিষ্টি চলে যাওয়ার পরে জীম ফুসকাওয়ালার কাছে থেকে মিষ্টির দেওয়া টাকা নিয়ে অন্য টাকা দেয়।

কোচিং শেষে বাড়ি চলে যায় মিষ্টি। বাড়িতে এসে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। মিষ্টির মা আর ভাইও স্কুল থেকে চলে এসেছে

“মিষ্টি বসে পড়লে কেনো? যাও ড্রেস পাল্টে আসো।

মিষ্টি উঠে পড়ে। ড্রেস পাল্টে সাওয়ার নিতে যায়। মিষ্টি একা নিজের চুলে শেম্পু করতে পারে না তাই মিষ্টির মা হেল্প করে। সাওয়ার শেষে মিষ্টির চুল আঁচড়ে দেয়। তারপর ছাঁদে বই নিয়ে পারত বলে।

মিষ্টি বই আর ফোন নিয়ে ছাঁদে চলে যায়। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। সাদা টিশার্ট আর গোলাপি স্কাট গলায় সাদা একটা ওরনা পেচিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পড়ছে মিষ্টি।
জীম ছাঁদে এসেছিলো সিগারেট খেতে। সিগারেটের ধোঁয়ায় জীমের মায়ের পবলেম হয় তাই বাসায় থাকলে সিগারেট খেতে পারে না।
মিষ্টিকে দেখে জীম চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। হা করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টির চুল গুলো এগো লম্বা তা জীম কখনো খেয়াল করে নি।
হঠাৎ মিষ্টির সামনের ছাঁদে চোখ যেতেই দেখতে পায় জীম হা করে তাকিয়ে আছে। মিষ্টির এবার খুব রাগ হয়।

” এই ছেলেটা আজ আমার পিছু ছাড়ছে না। যেখানেই যাচ্ছি এর মুখ দেখতে হচ্ছে। তাকিয়ে আছে দেখো মনে হয় জীবনে মেয়ে দেখে নি। দাঁরাও দেখাচ্ছি তোমায়।

বিরবির করে কথা গুলো বলে মিষ্টি আশেপাশে কিছু খুঁজে। একটা ইটের টুকরো পায়। ওইটা হাতে নিয়ে জীমের দিকে ছুড়ে মারে।

জীম সেটা কেচ ধরে ফেলে। তারপর একটু হেসে বলে

“ফুলটুসি আমাকে গোলাপ ছুঁড়ে মারলে কেনো??

” প্রথম মতো আমি মিষ্টি ফুলটুসি না। আর কানার বাচ্চা কানা ওটা ইটের টুকরো গোলাপ না

“মিষ্টি বাহ নামের সাথে চেহারার মিল আছে।

“ইডিয়েট

মিষ্টি মুখ ঘুরিয়ে আবার পড়ায় মন দেয়। কেননা এই অসভ্যের সাথে কথা বলে লাভ নাই। তখন মিষ্টির ফোনে মেসেজ আসে। মিষ্টি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে

” ওই জান এমন রুপ নিয়ে কেনো আমার সামনে দিয়ে ঘুরেবেড়াও? আমাকে কি পাগল করে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছো নাকি? লাভ ইউ আমার জানটা

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে