#প্রেম_তুমি
#part :15
#Mishmi_muntaha_moon
অর্নিল আয়রাকে এভাবে পরে যেতে দেখে ছুটে গিয়ে আয়রার হাত ধরে উঠায়।তারপর রেগে বলে
–মানে কি এমন ছুটছো কেনো।পরে এবার শান্তি লাগছে?
আয়রার হাতের কনুইয়ের দিক দিয়ে ছুলে গেছে দেখে অর্নিল তারাতারি পকেট থেকে রুমাল বের করে বেধে দেয়।
আয়রা অর্নিলের থেকে কিছুটা দূরে সরে তারাতারি হেটে ক্যাফে তে চলে যায়।
অর্নিল ওর গাড়ির সামনে গিয়ে রেগে পা দিয়ে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে বলে
“উফ এই মেয়েটা কবে বুঝবে?আমাকে দেখেই ছুটে পালাচ্ছে ইডিয়ট”
আয়রা ক্যাফে তে ঢুকতেই রিমুর মামা সামনে এসে রেগে বলে
–তোমার কাল থেকে আর কাজে আসতে হবে না।
রিমুর মামার কথা শুনে আয়রা অনুরোধ করে বলে
–কিন্তু কেনো আংকেল আমার কি কোনো ভুল হয়েছে হয়ে থাকলে ভেরি সরি।
–তুমি না বলে মাঝে কতদিন মিস দিলে তারপর ফোন করে আবার জয়েন হতে চাচ্ছিলে আমি জয়েন করলাম কিন্তু এখনও তুমি মিস দিচ্ছো আর লেট করে আসছো এগুলো চলবে না।
–সরি আংকেল আর হবে না প্লিজ।
–ঠিক আছে কিন্তু কাল যদি এমন হয় তাহলে আর কোনো কথা শুনবো না।
–
আয়রা ওর রুমের বারান্দায় বসে আছে হাতে চায়ের কাপ। এক ধ্যানে সাইডের কদম গাছটাতে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না কিছুই তবুও ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।আচমকা মাথায় কেউ হাত রাখাতে চমকে উঠে।
–মা,,?
জুহি বেগম আয়রার পাশে দারিয়ে বলে
–কি হয়েছে এতো ভাবোস কি নিয়ে?
–নাহ কিছু না।তুমি এখনও ঘুমাও নি?
–না।আয়শা কে ঘুম পারিয়ে দিয়ে আসলাম।তুই ঘুমাস নি কেনো এখনো কাল ভার্সিটি তে যাবি না?
–হ্যা যাবো তো।আচ্ছা যাও তুমি আমার ঘুম পাচ্ছে।
জুহি বেগম না যেতেই আয়রা বসা থেকে উঠে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। জুহি বেগম আয়রার রুমের লাইট অফ করে চলে যায়।
–
–কি বললি তুই আয়রাকে প্রপোজ করে দিয়েছিস?
অর্নবের কথা শুনে অর্নিল মুখ চেপে ধরে আস্তে করে বলে
–হুম।
–এতো তাড়া কিসের ছিলো তোর?
–তাহলে আমি আবার ওর চলে যাওয়ার অপেক্ষা করতাম।
–কিন্তু তুই তো বললি ওরা এখানেই শিফট হয়েছে তাহলে আবার চলে যাবে কেনো?
অর্নিল পাশে থাকা পানি ভর্তি গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলল
–আমি জানি না তখন ওকে দেখে এতো খেয়াল ছিলো না কিছুর বলতে ইচ্ছে হলো তাই বলে দিয়েছি।
–হুম বলে যেহেতু দিয়েছিস এখন মানানোর চেষ্টা কর।
–আচ্ছা তুই যা তুলি বেচারি তোর অপেক্ষা করছে।
অর্নব অর্নিলের রুম থেকে চলে যায়। অর্নব চলে যেতেই অর্নিল বিছানা থেকে মোবাইল নিয়ে কাউকে ফোন দেয়।
–
আয়রা প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলো মোবাইলে আওয়াজে উঠে বসে মোবাইলের দিকে তাকায়।কিন্তু নাম্বারটা সেভ করা না থাকায় ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে
–এতো রাতে কে ফোন দিলো।
আয়রা কিছুক্ষন ভেবে রিসিভ করে কানে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে
–হ্যালো কে?
–ঘুমাও নি এখনো?
–সরি আপনি হয়তো র্ং নাম্বারে কল দিয়েছেন। আপনি আমাকে যে ভাবছেন আমি সে নই।
–শাট আপ।ইডিয়ট আমি অর্নিল।
অর্নিল নাম শুনেই আয়রা তারাতারি কল কেটে দেয়।অর্নিল নাম টা শুনেই বুক ধকধক করছে।
আয়রা অর্নিলের কল কাটতেই অর্নিলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।অর্নিল মোবাইল ছুড়ে সাইডে ফেলে রেখে কপালে হাত দিয়ে ঘুমায়।
“কালকে সব ক্লিয়ার করতেই হবে।আমার সাথে কোনো কথায় বলছেনা আজব।”
–
আয়রা হাতে চুরি পরছে আর আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে।
–কি হলো দাঁড়িয়ে আছিয়া কেনো যাবি না।
জুহি বেগমের কথায় হুশ আসে।আয়রা অরনা ঠিক করে পরে তারাতারি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়।আয়রা হাটছে আর মনে মনে ভাবছে।
“উফ আমি কেনো এভাবে উনাকে দেখেই পালাচ্ছি।আমিই বা কি করি উনাকে দেখলেই মনে হয় হার্টে কেউ হাতুরি পিটা করছে।উফফ”
আয়রা আশেপাশে তাকাতে তাকাতে ভার্সিটির ভিতর পর্যন্ত যেতেই দেখে অর্নিল আর ওর সব ফ্রেন্ড রা গান গাচ্ছে প্রথম দিনের মত আর সবাই গোল হয়ে ওদের গান শুনায় ব্যাস্ত।আয়রা গানটা শুনে থেমে গিয়ে অর্নিলের দিকে তাকালো।
অর্নিল আয়রাকে আসতে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে গাইতে লাগে।
“ও,,ওও,, তেরে হোকে রাহেঙ্গে
ও,,ওও,, দিল জিদ পে আরা হে
ও,,ওও,, তেরে হোকে রাহেঙ্গে
ও,,ওও,, তেরা শখ চাড়া হে,,
আয়রা আর না শুনে তারাতারি ক্লাসে চলে যায়।
সুন্দর ভাবে ক্লাস শেষ হতেই আয়রা ভার্সিটি থেকে যেতে লাগে।সামনে একটা ছেলে কে দেখতে পেয়ে আয়রা মৃদু কন্ঠে ডাক দেয়।
–এইযে ভাইয়া,,,,
ছেলে টা আয়রার দিকে তাকাতেই আয়রা ওর কাছে যেতে পা বারায় কিন্তু কেউ শক্ত করে হাত চেপে ধরায় আয়রার ঘার ঘুরিয়ে পিছে তাকায়।অর্নিল কে দেখে কিছু বলতে নিবে তখনই অর্নিল আয়রার হাত ধরে টেনে ভার্সিটির কিছু দূরে একটা লেকের পাশে নিয়ে যায়।
–আমার সাথে কথা বলতে প্রবলেম আর ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে যাচ্ছিলে।
আয়রা অর্নিলের কথার জবাব না দিয়ে হাত ছাড়াবার চেষ্টা করতে লাগলো। আয়রা কে এভাবে হাত ছারানোর চেষ্টা করতে দেখে অর্নিল আয়রার হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরতেই আয়রা আরও বেশি শক্তি দিয়ে ছাড়াতে চেষ্টা করে।আয়রা হাত জোরে নিজের দিকে টেনে নিতেই আয়রার চুরি ভেঙে খুব বাজে ভাবে অর্নিলের হাত কেটে যায়। অর্নিল ব্যথা পেয়ে মৃদুস্বরে ‘আহ’ শব্দ করে আয়রার হাত ছেড়ে দেয়।
হঠাৎ এভাবে অর্নিলের হাত কেটে যাওয়ায় আয়রা স্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আয়রা কিছুতেই বুঝতে পারে নি এভাবে হাত কেটে যাবে।
আয়রা তারাতারি করে ব্যাগ থেকে অর্নিলের দেওয়া রুমাল দিয়ে অর্নিলের হাত বেধে দিতেই অর্নিল আয়রার হাত থেকে রুমাল টা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়।তারপর হাতে পেচিয়ে নিয়ে আয়রার কাছে গিয়ে রেগে বলে
–কি হয়েছে এমন করছো কেনো।আমার জন্য কি কোনো ফিলিংস নেই তোমার?আমার কষ্টর কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে।
আয়রা অর্নিলের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেক বেশি কেটে গেছে।সাদা রুমালের অনেকাংশই রক্তে ভরে গেছে।
আয়রাকে কিছু বলতে না দেখে অর্নিল রেগে কাটা হাত টা আরও জোরে চেপে ধরে।
অর্নিল কে এভাবে কাটা হাত টা চেপে ধরতে দেখে আয়রা চোখ মুখ খিচে বলে
–আস্তে রক্ত বের হচ্ছে তো।
অর্নিল কিছু না বলে আয়রাকে রেখেই সেখান থেকে চলে যায়।
অর্নিল যাওয়ার পর আয়রা রেগে সব চুরি খুলে ছুরে ফেলে দিয়ে কিছুক্ষন চুরি গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ক্যাফে তে যেতে লাগে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই তাই যেতেই হবে।
–
অর্নিল বাড়িতে আসতেই দেখে তুলির বাবা মা আরও কিছু মানুষ এসেছে।সবাই এক সাথে বসে কথা বলছে আর তুলি সকল কে খাবার পরিবেশন করছে।অর্নিল একপলক দেখে রুমে চলে যায়।
রুমে গিয়ে কাটা জায়গাটা পরিষ্কার করে বেন্ডেজ করে নেয়।তারপর শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় যায়।
আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে আছে।খুব জোরে বৃষ্টি হবে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
অর্নিল বারান্দা থেকে রুমে যেতেই দেখে অর্নব রুমে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজছে।
–কাকে খুজছিস?
–আরে তোকেই তো খুজছিলাম। এখানে একা কি করছিস নিচে আস তুলির বাবা মা এসেছে।
–আমার মুড ভালো না আমি যাবো না তুই যা।
অর্নিল খাটে বসে চুল ঠিক করতেই অর্নব অর্নিলের হাত ধরে বলে
–এই তোর হাতে কি হয়েছে?
–না কিছু না।
–মিথ্যা বলছিস কেনো? আচ্ছা শুন আয়রাকে মানিয়েছিস?
অর্নবের কথা শুনে অর্নিল রেগে বলে
–না ও তো বুঝতেই চাচ্ছে না কিছু।কি করবো আমি এইটাও তো বুঝতে পারছি না।
অর্নব অর্নিলের অবস্থা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্নিলের রুম থেকে চলে যায়। খুব রেগে আছে রাগ টা কমা জরুরি।
–
আয়রা সারারাত ঘুমাতে পারে নি খুব খারাপ লাগছিল। সকালে উঠেই শরীরে হাল্কা জ্বর অনুভব হয়।কাল ক্যাফে থেকে ফিরার পথে বৃষ্টি শুরু হয় আর বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বৃষ্টি তে ভিজে নাজেহাল। তাই আজ এই অবস্থা।
আয়রা তবুও ভার্সিটি তে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু জুহি বেগম সাফ মানা করেছে যেতে তাই আর কি করার। আয়রা কাথা মুরে শুয়ে আছে অনেক শীত লাগছে।
বিকাল হতে যাচ্ছে কিন্তু উঠতেই ইচ্ছা করছে না কিছু খেতেও ইচ্ছা করছে না।আয়রা খুব আলসেমি নিয়ে কাথাটা খুলে একটু উঠে খাটের পাশের জানালা টা বন্ধ করে আবারও কাথার ভিতরে ঢুকে যায়। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছিলো তাই কষ্ট করে উঠে বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে নিবে তখনই বাহিরে কোনো ছেলের আওয়াজ পেয়ে উঠে আস্তে করে বাহিরে যায়।
আয়রা ওর মার রুমে উকি দিতেই দেখে একটা ছেলে
উনার রুমে বসে আছে।আরেকটু ঢুকে সামনে থেকে দেখতেই ভ্রু কুচকে তাকায়।
–আপনি?
চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।