#প্রেম_তুমি
#part :14
#Mishmi_muntaha_moon
অর্নিলের কথা শুনে আয়রা কিছুটা চমকে গিয়ে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে আশেপাশে তাকিয়ে বলল
–আপনি এই সব কি মজা করছেন? ফারহা আপু লুকিয়ে দেখছে নাকি আমাদের?
আয়রার এমন কথা শুনে অর্নিল ভ্রু কুচকে বলল
–নো আই এম সিরিয়াস।
এবার যেনো আয়রা থমকে গেলো। অর্নিলের মুখের অঙ্গভঙি দেখে সত্যি সিরিয়াস মনে হচ্ছে।আয়রা কি বলবে কিছু খুজে না পেয়ে যেতে নিতেই অর্নিল পিছন থেকে হাত চেপে ধরে আগের জায়গায় দার করায়।
–আন্সার দিবে না?
আয়রা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে অর্নিলের সাথে চোখে চোখ মিলাতে পারছেনা। কথা সব গুলিয়ে যাচ্ছে।এইবার মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাবে।আয়রা নিচে তাকিয়ে কোনোরকম ভাবে বলল
–সরি।
বলে হাত ছাড়িয়ে তারাতারি বেরিয়ে গেলো।
অর্নিল চোখ বন্ধ করে আগের জায়গায় কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর কপাল চেপে সামনে বিছিয়ে রাখা চেয়ারে বসে পরল।
এতো তারাহুরো করে বলে তো দিলো কিন্তু এখন কি করবে?
ফোন বেজে ওঠায় অর্নিল ফোন তুলতেই অর্নবের কন্ঠ শুনতে পেল।
–অর্নিল কোথায় তুই?
অর্নিল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
–বাহিরে আছি।
–বাহিরে অনেক জোরে বৃষ্টি পরছে তারাতারি বাড়িতে আস।তোর কাল ও দেখলাম জ্বর তারাতারি আস আম্মু টেনশন করছে।
অর্নবের কথায় অর্নিল শান্ত কন্ঠে বলল
–আমি ঠিক আছি।
বলে ফোন কেটে দিয়ে বাহিরে তাকালো সত্যি খুব জোরে বৃষ্টি পরছে। অর্নিল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল
–আয়রা কি বাড়িতে যেতে পেরেছে ঠিক মতো?
অর্নিল বসা থেকে উঠে বের হয়ে আশেপাশে তাকায় এখানে অন্য যানবাহন পাওয়া সম্ভব না বাইকেই যেতে হবে।বাইক দিয়ে গেলে মুহূর্তে পুরো ভিজে যাবে।অর্নিল কিছুক্ষন এদিক সেদিক ভেবে বাইকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগল।
–
আয়রাকে এমন ভেজা অবস্থায় বাসায় আসতে দেখে জুহি বেগম তারাতারি এসে ওরনা দিয়ে আয়রার চুল মুছে দিতে দিতে বললেন
–আরে এভাবে ভিজলি কেনো।ক্যাফে তেই অপেক্ষা করতি বৃষ্টি থামা পর্যন্ত।
জুহি বেগমের কথায় ক্যাফের কথা মাথায় এলো।অর্নিলের জন্য ক্যাফেতে ও যেতে পারে নি। আয়রা ওর মার হাত টা মাথা থেকে সরিয়ে রুমে চলে যায়।তারপর ড্রেস চেঞ্জ করে ফেন অন করে কাথা মুড়িয়ে কিছুক্ষন জানালা দিয়ে বাহিরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবতে লাগলো
“বৃষ্টি কোথা থেকে এসে পরলো?উনার তো অনেক জ্বর ছিলো। বাড়িতে কিভাবে যাচ্ছে।বাইক এ গেলে তো পুরো ভিজে যাবে তখন আরও জ্বর বেড়ে যাবে।উফফ”
আয়রা ব্রু কুচকে কাথা দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
–
অর্পা বেগম এদিক ওদিক হাটছে আর বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।অর্নিল কে ভিজে টইটম্বুর হয়ে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে ছুটে যায়।তারপর চিন্তিত স্বরে বলে
–আরে তুই এমন ভিজলি কেনো?অর্নব বলল তোর জ্বর?
অর্নিল চুল হাত দিয়ে ঝেরে অর্পা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল
–নাহ আমার কিছুই হয় নি আমি একদম ঠিক আছি।অর্নব কোথায়?
–নাহ ও তো তুলিকে ওর বাবার বাড়ি দিয়ে আসতে গিয়েছে।
–ওহ।আচ্ছা আম রুমে গেলাম।
অর্পা বেগম অর্নিলের যেতে না দিয়ে ওর কপালে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর চোখ বড় বড় করে চমকে বলল
–অর্নি তোর তো জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে আর তুই বলছিস ঠিক আছিস।
–ইটস ওকে আম্মু আম অলরাইট। ডোন্ট ওয়ারি।
অর্নিল ওর রুমে গিয়ে দরজা অফ করতে নিবে তখনই অর্পা বেগম জোর করে পানি ভর্তি বাটি আর রুমাল নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো।
–আবারও? আমি,,,
অর্নিল কে আর কিছু বলতে না দিয়ে অর্পা বেগম অর্নিলের হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল
–চুপচাপ ঘুমা আমি জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি।
অর্নিল অর্পা বেগমের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলল
–কোনো প্রয়োজন নেই।
–চুপ। নে আগে এই ঔষধ খেয়ে নে।
অর্নিল ওর মার জিদের সাথে পেরে না উঠে ঔষধ খেয়ে চুপ করে ঘুমিয়ে পরল। আর অর্পা বেগম অর্নিলের কপালে জলপট্টি দিতে লাগে।
–
দরজায় বারির আওয়াজে আয়রার ঘুম ভেঙে গেলো। আয়রা উঠে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো আস্তে আস্তে অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশে।আয়রা মাথা চেপে ধরে আস্তে করে হেটে দরজা খুলে দিয়ে আবার গিয়ে খাটে বসে মাথাটা ঝিম ধরে আছে।জুহি বেগম আয়রার রুমে ঢুকে আয়রার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
–কিরে এই সময় ঘুমাতে গেলি কেনো?রাতে দেখা যাবে ঘুম আসবে না।আর বৃষ্টি তে ভিজলি জ্বর টর আসে নি তো আবার?
জুহি বেগম আয়রার কপালে হাত দিয়ে দেখে বলল
–না জ্বর তো আসে নি।
জুহি বেগম কে এমন চিন্তিত দেখে আয়রা বলল
–না মা আমি একদম ঠিক আছি।এভাবেই একটু শুইয়েছিলাম কখন ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারি নি।
–আচ্ছা তুই মুখটা ধুয়ে আয়শা কে একটু পড়া।
–আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।
জুহি বেগম যেতে নিতেই আয়রা ডাক দিয়ে বলে
–মা,, কিছু কথা ছিলো।
আয়রার কথা শুনে জুহি বেগম দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল
–হুম বল।
আয়রা কিছুক্ষন চুপ কিরে থেকে কিছু চিন্তা করে আবার বলল
–না কিছু না।তুমি যাও আমি আসছি।
–ঠিক আছিস তুই।
–হুম।
আয়রার মা চলে যেতেই আয়রা হাত মুখ ধুয়ে আয়শা কে পড়াতে যায়।
–
সকালে অর্নিলের ঘুম ভাঙে। রাতে কিছুই খাওয়া হয় নি একেবারে যে সন্ধ্যার দিকে ঘুম দিয়েছে সকালে ভেঙেছে।অর্নিল ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যায়।অর্নিল কে দেখে অর্পা বেগম খাবারের প্লেট নিয়ে অর্নিল কে সোফায় বসিয়ে খাইয়ে দিতে দিতে বলে
–কাল রাতে এতো ডাকলাম শুনলি না। না খেয়েই ঘুমিয়ে ছিলি সারাটা রাত।আর কোথায় যাচ্ছিস এখন বাহিরে একদম যাবি না বলে দিলাম।
অর্নিল পানি খেয়ে যেতে যেতে বলল
–আমি ভার্সিটি তে যাচ্ছি আর এখন আমি ঠিক আছি ডোন্ট ওয়ারি।
–জ্বর শরীরে আর বলে ঠিক আছে।অর্নি,,,উফ এই ছেলে টা কে নিয়ে কি যে করি।
অর্নিল অর্পা বেগমের কথা না শুনে গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি তে যেতে লাগে।
–
আয়রা ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ভিতরে উকি দিয়ে মাঠের কর্নারে দেখতে লাগলো কেওকে না দেখে আস্তে আস্তে করে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে।কর্নারে তাকিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখে অর্নিল একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে ওকে দেখে মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে ওর কাছে আসতে লাগে।
আয়রা অর্নিল কে ওর দিকে আসতে দেখে ছুটে ক্লাসের ভিতরে চলে যায়।
অর্নিল ভার্সিটি তে ঢুকতেই একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কেমন আছে আরও বিভিন্ন কথা অর্নিল ও ভদ্রতার খাতিরে টুকটাক কথা বলছিলো কিন্তু আয়রাকে দেখে ওর কাছে যেতে নিয়েই এভাবে ছুটে যেতেই অর্নিল ভ্রু কুচকে তাকায় তারপর নিজে নিজে বলতে লাগে
–লাইক সিরিয়াসলি। আমাকে দেখে এভাবে পালাচ্ছে যেনো আমি কোনো রোডসাইড রোমিও।
তুশারের চিৎকার দিয়ে ডাক শুনে অর্নিল ওদের কাছে গেলো।
–কিরে এভাবে রেগে আছিস কেনো?
জেবার কথা শুনে অর্নিল ব্রু কুচকে বলল
–না কিছু না।
তুশার অর্নিলের গিটার টা নিয়ে বাজাতে বাজাতে বলল
–নিউজ শুনেছিস?
তুশারের কথা শুনে সকলের ভ্রু কুচকে যায়।রোহান তুশারের কাধে হাত রেখে বলে
–কিসের নিউজ?
–আরে ফারহার বাবা ফারহার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
তুশারের কথা শুনে অর্নিল একটা চেয়ার টেনে বসে বলল
–ও ওয়াও গুড নিউজ।
অর্নিলের কথা শুনে রোহান হেসে বলল
–তোর জন্য তো গুড নিউজ হবেই এতোদিন পর ওর থেকে পিছু যে ছুটবে।
রোহানের কথার মাঝেই জেবা অবাক হয়ে বলল
–কিন্তু ফারহা রাজি কি করে হলো?
–ওর বাবা যা! হয়তো বেচারিকে ধমকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছে।
তুশারের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।
জেবা নিজের হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল
–না জর করে বিয়ে দেয়াটা ঠিক হবে না একদম।
জেবার কথা শুনে রোহান বলে
–হুম।
–
আয়রাদের একটু আগে ক্লাস শেষ হলো। আয়রা ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে ক্যাফে তে যেতে লাগে কালকেও যাওয়া হয় নি তাই আয়রা তারাতারি হেটে যেতে নেয়।অর্ধেক গিয়ে থেমে যায়।রাস্তা টা একদম ফাকা হয়ে আছে।আয়রা স্পিড কমিয়ে কিছুটা আস্তে হাটতে লাগে আর নিজে নিজে ভাবতে লাগলো
–এই ক্যাফের সেলেরি দিয়ে তো কিছুই সম্ভব না এখন আবার পুরও ফ্লাট ভাড়া নিয়েছি ভাড়া ও বেশি। ক্যাফের পাশাপাশি কিছু টিউশনি করাতে পারল ভালো হতো।
আয়রা বিভিন্ন কিছু চিন্তাভাবনা করে সামনে বাড়তে অর্নিলকে দারিয়ে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
–উনি এখানে কেনো উফ।
আয়রা আস্তে আস্তে করে পিছে যেতে নিতেই অর্নিল ঘুরে আয়রার দিকে তাকায়
অর্নিল আয়রাকে দেখে শার্টের হাতা ফোল্ড করে ঠোট কামড়ে ওর তাকায়।
আয়রা অর্নিল কে ওর দিকে তাকাতে দেখে কিছুক্ষন ঠোট চেপে দাঁড়িয়ে থেকে পিছে ঘুরে ডানে বামে না দেখে ছুট লাগালো। কিছুদূর যেতেই হোচট খেয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে ধুম করে পরে।
চলবে,,,
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️