#প্রেম_তুমি
#part:8
#Mishmi_muntaha_moon
আয়রা কলেজে যাওয়ার জন্য বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এসেই দেখে অর্নিল রিকশার উপর বসে আছে।এই এক সপ্তাহ যাবত অর্নিল আয়রাকে প্রতিদিন পিক করতে এসেছে আবার বাসায়ও দিয়ে গেছে।কখনও গাড়ি কখনও বাইক আবার আজ রিকশা।আয়রা ব্রু কুচকে তাকাতেই অর্নিল চোখ দিয়ে ইশারা করে রিকশায় উঠতে বলল।আয়রা রিকশায় উঠে বসতেই রিকশা চলতে শুরু করে। আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল
–আপনি আজও এসেছেন নিয়ে যেতে।আমি না আপনাকে বলেছি আমি একা যেতে পারবো।নাকি বয়ফ্রেন্ডের এক্টিং করতে করতে নিজেকে সত্যিই বিশ্ব প্রেমিক ভাবছেন?
অর্নিল মুচকি হেসে বলল
–কেনো আমি নিতে আসলে কোনো সমস্যা আছে?
অর্নিলের কথায় আয়রা চুল সামলাতে সামলাতে বলল
–না সমস্যা হব কেনো।বাই দা ওয়ে আপনি আজ পাঞ্জাবি পরেছেন ভালো লাগছে।
আয়রার কথা শুনে অর্নিল মাথা নিচু করে বাকা হাসলো। তারপর বলল
–তাই নাকি?
–হুম।তা ফারহা আপুও কি শাড়ি পরেছে?
আয়রার কথা শুনে অর্নিলের মুড আর মেজাজ দুটোই বিগড়ে গেলো। অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে বলল
–বেশি কথা শিখে গেসো।
–আমি কারো সাথে ফ্রি হলে মন খুলে কথা বলি।
রিকশা থামাতেই আয়রা আর অর্নিল নেমে দারায়।আয়রা কলেজের ভিতরে ঢুকতেই দেখে ফারহা ওর দুকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফারহাও আজ শাড়ি পরেছে।তাও আবার অর্নিলের পাঞ্জাবির সাথে মেচিং কালারিং কালো।
ফারহা আয়রার দিক থেকে চোখ সরিয়ে তুশারের দিকে তাকিয়ে বলে
–দেখলি এই মেয়েটার জন্য অর্নিল এখন রিকশায় চড়াও শুরু করে দিয়েছে আমরা একদিন ওকে আমাদের সাথে রিকশায় উঠতে রিকুয়েষ্ট করেছিলাম হাজার বলার পর ও মানে নি।
ফারহার কথা শুনে তুশার বিরক্ত মুখে চুপ করেই বসে রইল।
আয়রা ক্লাসে যেতে নিতেই দেখে সবাই ক্লাসের বাহিরে আর কিছু নিয়ে কথা হচ্ছে সবার মাঝে।আয়রা ক্লাসে না গিয়ে আবার অর্নিলের কাছে গেলো। অর্নিল আয়রাকে দেখে বলল
–কিছু বলবে?
আয়রা অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল
–কলেজে কি কিছু হবে?আর ক্লাস হবে না?
অর্নিল কিছু বলার আগেই তুশার বলল
–নাহ ক্লাস হবে না আর কাল কলেজ থেকে ট্রিপে যাবে।
ট্রিপের কথা শুনে আয়রার মুখে চিন্তার ভাজ পরে গেলো। অর্নিল আয়রাকে বলল
–এই ট্রিপের সব দায়িত্ব আমার।চলো তোমার নাম লিখে দেই।
অর্নিলের কথায় আয়রা তারাহুরো করে হাত নারিয়ে বলল
–না না আমি কোনো ট্রিপে যাবো না।
অর্নিল আয়রার কথা না শুনে ওর নাম লিখে দিলো তারপর বলল
–যেতে তো তোমাকে হবেই।আমি ডিসাইড করে ফেলেছি।
অর্নিলের কথা শুনে আয়রা অবাক হয়ে বলল
–আমি যাবো কি যাবো না এইটা আমি ডিসাইড করবো আপনি না ওকে।
আয়রার কথায় অর্নিল হাতের ঘড়ি দেখে এক কথায় বলল
–আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড।
অর্নিলের এই একটা কথা শুনতে শুনতে আয়রা রীতিমত বিরক্ত। আয়রা বিরক্ত নিয়ে বলল
–এই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের থ্রেট দেওয়া বন্ধ করুন।আমি যাচ্ছি না মানে যাচ্ছি না।আমি এই আজাইরা ট্রিপের জন্য টাকা খরচ করতে পারবো না।আর আমি এই ট্রিপে যেতে কমফোর্টেবল না।
আয়রার কথা শুনে অর্নিল আয়রার একটু কাছে এসে নরম স্বরে বলল
–টাকার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।আর আমি আছি তো সাথে তাই না?
অর্নিলের কথায় আয়রা আর না করতে পারল না।রাজি হয়ে গেলো। তারপর আয়রা যেতে নিতেই অর্নিল ডাক দিয়ে থামালো।
আয়রা ঘাড় ঘুরিয়ে অর্নিলের দিকে তাকিয়ে বলল
–জ্বি বলুন।
অর্নিল আয়রার চোখে চোখ রেখে বলল
–কাল শাড়ি পরে আসবে।
অর্নিলের এমন অবদার শুনে আয়রা হাল্কা ভ্রু কুচকে বলল
–আমার শাড়ি নেই।
অর্নিল আয়রার থেকে চোখ সরিয়ে সাইডের টেবিল থেকে একটা শপিং ব্যাগ আয়রার হাতে ধরিয়ে বলল
–কাল যেনো শাড়ি পড়া দেখি।
অর্নিল হাত দিয়ে চুল স্লাইড করতে করতে চলে যায়।
আয়রা ক্লাসে ঢুকে রিমুকে খুজে কিন্তু পায় না।ইদানীং রিমুও আয়রাকে ইগনোর করছে কোনো কারণে। আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল তারপর শপিং ব্যাগটা খুলে দেখল লাল রঙের খুব সুন্দর একটা শাড়ি। আয়রা শাড়িটা আবার ব্যাগে রেখে ব্যাগটা নিয়ে বাহিরে গেলো ক্লাসে একা কি করবে তাই আয়রা ক্যাফেতে যাবে ভেবেছে।গেটের সামনে যেতেই অর্নিলকে দেখতে পেল।একটা স্যারের সাথে কথা বলছে।আয়রা পাশ কাটিয়ে যেতে নিতেই অর্নিল হাত ধরে ফেলে।
–আচ্ছা স্যার আমি একটু পর আপনার সাথে কথা বলছি।
স্যার চলে যেতেই অর্নিল আয়রার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল
–কোথায় যাচ্ছো?
–ক্যাফেতে।
অর্নিল আয়রার হাত থেকে ওর দেওয়া শপিং ব্যাগ নিয়ে সেটার ভিতর কিছু রেখে আবার আয়রার হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর বলল
–যাও এইবার।
অর্নিল পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে চলে গেলো। আয়রা কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবতে লাগলো।
–উনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।আর উনার হাসিটা,,
আয়রা থেমে গিয়ে নিজের মাথায় চাটি মেরে সেখান থেকে চলে গেলো।
–
অর্নিল খুব ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করবে তখনই অর্নব প্রবেশ করলো রুমে।অর্নিল অর্নব কে দেখে মুচকি হেসে বসতে বললো।অর্নব না বসে অর্নিল কে নিয়ে ছাদে গিয়ে বসল।
–আজকাল বড় বিসি মানুষ হয়ে গিয়েছিস দেখছি।ভায়ের সাথে সময় কাটানোর সময় নেই তোর।
অর্নবের কথা শুমে অর্নিল মুচকি হেসে বলল
–তোর সাথে সময় কাটানোর জন্য সময়ের প্রয়োজন হয় না।যখন ইচ্ছা আসবি আমি কখনো না করেছি?
–তুই না করবি না তা জানি আচ্ছা এখন বল এতো ক্লান্ত কেনো?
অর্নিল চেয়ারে গা এলিয়ে বলল
–আরে কলেজ থেকে ট্রিপে যাবে আর সেটার সব দায়িত্ব আমার।তাই আরকি একটু ক্লান্ত হয়েগিয়েছি।আচ্ছা তুই বল তুলির সাথে দেখা করেছিস।
অর্নিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–তোর কি মনে হয় মা যেটা একবার বলেছে সেইটা না করে দম নিবে?দেখা করতে গিয়েছিলাম আজ।মেয়েটা আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছে।
অর্নিল হেসে দিয়ে বলল
–ওয়াও তার মানে তুলি আজ থেকে ভাবি যেহেতু তোর ও পছন্দ হয়েছে।
অর্নব ছোট ছোট চোখ করে বলল
–আমার কথা বাদ দে তোর কথা বল।
অর্নিল কিছু না বুঝার ভান করে বলল
–আমার আবার কোন কথা?
অর্নিলের কথা শুনে অর্নব বলল
–তুই আগে তো আমায় সব বলতি।আচ্ছা যা বলতে হবে না।এইটা বল তুই সত্যি আয়রাকে ভালোবাসিস?
অর্নবের কথা শুনে অর্নিল বলল
–আই ডোন্ট নো।
অর্নিলের জবাবে অর্নব একটু জরে বলল
–এর মানে ভালোবাসিস।আচ্ছা ওয়েট আয়রা জানে?
অর্নিল অন্যমনস্ক হয়ে বলে উঠলো
–নাহ আমি বলতে চাইছি না।
অর্নিলের কথা শুনে অর্নব অবাক হয়ে বলল
–আজব তো কেনো বলতে চাইছিস না।ভয় পাচ্ছিস নাকি?
অর্নবের কথায় অর্নিল অর্নবের দিকে তাকিয়ে বলল
–হোয়াট! ভয় আর আমি নেভার।আমি কাউকে ভয় না।
–তাহলে বলিস না কেনো?
অর্নিল অর্নবের কথায় পাত্তা না দিয়ে উঠে বলল
–আমি চললাম আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।
অর্নিল সিড়ি দিয়ে নেমে ওর রুমে চলে গেলো।
–
আয়রা রুমে এসে রুম লক করে নিচে বেছানো বিছানায় বসল কাধের ব্যাগটা রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে উঠে ব্যাগ থেকে টাকা বেড় করলো আজকে সেলেরি পেয়েছে আয়রা।তার থেকে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে দিতে হবে।
আয়রা 1500 টাকা আলাদা করে ভাড়া দিয়ে এসে অর্নিলের দেওয়া ব্যাগটা আবারও খুলল।ব্যাগে একজোড়া কানের দুল খুবই সুন্দর। আয়রা কানের দুল টা শাড়ির সাথে রেখে দিলো। ইদানীং মাথাটাও খুব ব্যাথা করে।আয়রা ঘুমাতে নিবে এরকম সময় কারো ফোন আসাতে আয়রা উঠে বসে ফোন তুললো। কিন্তু ফোন তুলে যা শুনল তার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না।
–
সকাল হতেই অর্নিল কলেজে এসে সকল স্টুডেন্ট দের বাসে বসায়।ফারহা, তুশার, রোহান জেবা ওরা সবাই একসাথে বসেছে।অর্নিক আয়রা কে খুজতে বাসের থেকে নামতে নিলেই ফারহা ডাক দেয়।অর্নিল ফারহার ডাক শুনে ওদের কাছে আসে।অর্নিল আসতেই ফারহা বলল
–অর্নিল তুমি কি আমাদের সাথে বসবে না?
ফারহার কথা শুনে অর্নিল ব্রু কুচকে বলল
–কেনো যেখানেই বসি এতে তোর কি?
ফারহা অর্নিলের কথায় তুশারের দিকে ফিরে বলল
–দেখলি তুশার এখন ও আমাদের সাথে বসবে ও না সবসময় তো আমাদের সাথেই বসতো কোনো ট্রিপে গেলে। এখন ওই আয়রার সাথে বসবে গিয়ে।
তুশার ফারহার কথার জবাব দিলো না অর্নিলের দিকে তাকালো। অর্নিল তুশারের দিকে তাকিয়ে বলল
–ওকে ফাইন।আমি এখানেই বসবো।বাট দেখে আসি আয়রা এসেছে কি না।
অর্নিল যেতে নিতেই আবারও ফারহা ডেকে বলে
–অর্নিল তোমার যেতে হবে না আমি দেখেছি ওকে ও অন্য একটা বাসে উঠেছে।
ফারহার কথা শুনে অর্নিল কিছু বলল না ওদের সাথে বসল।অর্নিল কে বসতে দেখে জেবা বলল
–আয়রার সাথে বসলে আমাদের কোনো সমস্যা হতো না কিন্তু আমাদের সাথে বসেছিস এটা দেখে আনন্দ লাগছে।
জেবার কথায় অর্নিল মুচকি হাসলো। বসে তো গেল কিন্তু তবুও মাথায় আয়রার কথায় ঘুরছে।অর্নিল সব চিন্তা বাদ দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল
–ইটস ওকে ট্রিপে গিয়ে দেখে নেবো।
চলবে,,,