#প্রেম_তুমি
#part:3
#Mishmi_muntaha_moon
আয়রা গোসল করে বের হতেই রিমু হাত টেনে খাটে বসায়।আসার পর থেকেই পাগল করে ফেলেছে কি হয়েছে কি হয়েছে বলে।রিমু নিজেও খাটে বসে বলতে লাগে।
–এখন তো বল কি হয়েছে?
আয়রা রিমুকে একে একে সব বলল।রিমু শুনে রেগে বলল
–আজব পাগল নাকি?আর ওই ফারহা মেয়েটাও আস্তা পাগল।উনার মাঝে কথা বলার প্রয়োজন কি ছিলো?উনার জন্যই অর্নিল ভাইয়ার গিটারে পানি পরেছে।তুই জানোস গিটার অর্নিল ভাইয়ার জন্য খুব ইম্পর্ট্যান্ট সবসময় সাথেই থাকে।
–হুম আমার সরি বলা উচিত কাল সরি বলে দিবো।তারপর আর তাদের আশেপাশেও যাবো না।আমার নোট গুলোর জন্য কষ্ট লাগছে খুব কষ্ট করে লিখেছিলাম।আর তুই বললি কাল থেকে তো ক্যাফে যেতে হবে সময় পাবো কোথায়।আজ রাতেই লিখতে হবে।
রিমু আয়রার কথা শুনে করে বলল
–হুম।এখন তো কোনো কাজ নেই এখনও লিখে ফেলতে পারোস আর আমিও তোকে টুকটাক হেল্প করব।
রিমুর কথায় আয়রা মুখ বাকিয়ে বলে
–তোর টুকটাক হেল্প তোর কাছেই রাখ।জানি কি হেল্প করবি হেল্পের নাম শুধু কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান করবি।
–এভাবে কেনো বলছিস।আচ্ছা চল এখন খেয়ে আসি তারপর তুই নোট লিখা শুরু করে দিস সন্ধ্যা পর্যন্ত তো শেষ হয়েই যাবে আশা করি।
–হুম।
–
অর্নিল ওর রুমে বসে মোবাইলে কিছু খুব মনোযোগে দেখছে মাঝে মধ্যে ব্রু কুচকে ফেলছে আবার বিরবির ও করছে।কেউ নক দেওয়ায় অর্নিল মোবাইল রেখে দরজার দিকে তাকায়। সাথে সাথেই মুখে বিশাল হাসি নিয়ে উঠে ওর ভাই অর্নবের কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরে।
–আরে তুই কখন এলি?
–মাত্র আসলাম।আর প্রত্যেকবারের মত সোজা তোর রুমে।
অর্নিল অর্নব কে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দারায় তারপর ভ্রু কুচকে ঠোঁটে আঙুল বুলাতে বুলাতে বলে
–তুই দেখি পাঞ্জাবি পরেছিস।ওয়াও নাইস।
–হুম তো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
–হুম যা।
–
আয়রা আরেকটু লিখে কলম রেখে দীর্ঘশ্বাস নিলো।
তারপর রিমুর দিকে তাকিয়ে বলল।
–ফাইনালি শেষ হলো লেখা।
আয়রার কথা শুনে রিমু হাতে থাকা মোবাইলের দিকে তাকিয়েই বলল
–অলরেডি ৮ বেজে গেছে তোর জন্য আমারও বসে থাকতে হয়েছে টানা ২ ঘন্টার মত।
–আহা টানা ২ ঘন্টা ধরেই তো মোবাইল টিপছিস।আর তোকে আমি বলেছি বসে থাকতে।
–নাহ তা বলিস নি কিন্তু একজন ভালো ফ্রেন্ডকে বলতে হয় না এভাবেই হেল্প করে।
রিমুর কথায় আয়রা এক ব্রু তুলে বলল।
–আহ,,,ভালো ফ্রেন্ড।
আয়রার কথায় রিমু হেসে দিলো তারপর বলল।
–ওহ শুন পরশু আব্বু আসবে।
–ওহ আংকেল আসবে।ভালো।
–হুম চল খেয়ে আসি কখন থেকে আম্মু চিল্লাচ্ছে।
–হুম চল।
আয়রা রিমু খেয়ে রুমে আসতেই রিমু গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পরল।আয়রা রিমুর সামনে এসে চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলল।
–রিমু ঘুমিয়ে পরলি?
আয়রার কথায় রিমুর কোনো জবাব এলো না।আয়রা বিছানা থেকে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় যায়।
–আজও ঘুম আসবে না।কেমন অস্থির অস্তির লাগছে।উফ কি করি।
আয়রা বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে এদিক ওদিক হাটতে লাগলো।
–আব্বু আম্মু কেমন আছে কে জানে?
আয়রা এভাবে পায়চারি করতে করতে ১১ টা বেজে গেলো।আয়রা আরেকবার রিমুর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে রিমুর পাশে শুয়ে পরল।
–
অর্নিল কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপ পাশের টেবিলে রাখলো তারপর অর্নবের দিকে তাকাতেই অর্নব বলল।
–তাহলে বল।আমার অগচড়ে কি কি হলো।
–কি হবে আবার সব তো ঠিকঠাকই আছে।
অর্নিলের কথা শুনে অর্নব হাসলো।অর্নিল অর্নবকে হাসতে দেখে বলল।
–তুই বল বিয়ে করছিস কবে বিয়ের বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে
অর্নিলের কথা শুনে অর্নব অবাক হয়ে বলল
–সিরিয়াসলি!২৬ বছর মাত্র আর তুই বলছে বিয়ের বয়স পেড়িয়ে যাচ্ছে।
–তা নয় তো কি।আমার এখন ২৪ বছর আর ১ বছর পরই তো বিয়ে করব কিন্তু তোর জন্য দেখা যাবে আমার বিয়েটাও আটকে থাকবে।
অর্নব অর্নিলের কথা শুনে হেসে মজা করে বলল।
–কোনো সুন্দর মেয়ে পেলি নাকি যে বিয়ের জন্য তাড়া দেখাচ্ছিস।
অর্নবের কথায় অর্নিক ভাব নিয়ে বলল
–হাহ সুন্দর মেয়ে খুজতে হবে নাকি আমার পিছে কত মেয়েরাই তো ঘুরে।
–তাহলে কি একটাকে ধরে বিয়ে করে নিবি?
–হোয়াট তুই কি মনে করিস অর্নিল আহমেদ কে? এতো সস্তা নই।স্পেশাল কাউকে লাইফ পার্টনার বানাবো।
–ওহ তাই নাকি।আমি তো ভাবছি আম্মুর কাছে ফারহার ব্যাপারে কথা বলবো।
অর্নিল চোখ মুখ কুচকে বলল।
–হোয়াট।লাইক সিরিয়াসলি ফারহা।
অর্নব মুচকি হেসে বলল
–কেনো তাহলে অন্য কোনো স্পেশাল মেয়ে আছে নাকি?
অর্নবের কথায় অর্নিল চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বাকা হাসলো কিছু বলল না।
–
–এই আয়রা উঠ তারতারি এতো লেট করছিস কেনো আজ।
রিমুর ডাকে আয়রা লাফ দিয়ে উঠে পরল।তারপর চোখ কচলে রিমুর দিকে তাকালো।রিমু রেডি হয়ে চুল আচরাচ্ছে। আয়রা বিছানা গুছিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল।
–আরো আগে ডাকবি না।
আয়রার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রিমু চুল আচরাতে লাগলো।
আয়রা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তারাতারি রেডি হয়ে নিলো।রিমু ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলল।
–টেবিলে খাবার রেখেছি খেয়ে নে।আমি খেয়ে ফেলেছি।
আয়রা তারাহুরো করে একটা রুটি খেয়ে বেরিয়ে পরে।
আয়রা ওদের ক্লাস রুমে যেতে যেতে রিমুর উদ্দেশ্যে বলে।
–এই তোর মামাকে জিজ্ঞেস করেছিস কয়টা বাজে যেতে হবে।
–২ টা অথবা পনে ৩ টা দিকে গেলেই হবে।যেহেতু হাফ টাইম সকালে তো আর যেতে পারবি না তাই।আর ৮ টা পর্যন্ত।
রিমুর কথায় আয়রা চিন্তিত স্বরে ছোট করে বলল
–ওহ।
আয়রা সাইডে তাকাতেই দেখে অর্নিক আর সবাই বসে আছে আর ফারহা অর্নিলকে কিছু বলছে।দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ফারহার কথায় অর্নিল বিরক্ত।
আয়রা ওদের দেখে হাতে থাকা বই দিয়ে মুখ ঢেকে তারাতারি হাটতে লাগলো।রিমু আয়রাকে এতো তারাতারি হাটতে দেখে চিল্লিয়ে বলল
–এই আয়রা এতো জোরে হাটছিস কেনো দারা আমার জন্য।
বলে আয়রার পিছে দোড় লাগালো।
অর্নিল দূর থেকে আয়রার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।তুশারের কথা শুনে ওর দিকে তাকায়।
–কিরে লেহেঙ্গা ওয়ালি এতো জোরে দৌড়ে গেলো কেন?
তুশারের কথায় ফারহা বলে
–এই তোরা বার বার ওই ইডিয়ট মেয়েটার কথা কেনো বলিস।ও দৌড়ে যাক নাহয় কচ্ছপের মত আস্তে আমাদের কি?
ফারহার কথায় আবারও তুশার বলে
–বুঝি তুই ওর সাথে জেলাস ফিল করস।
তুশারের কথায় ফারহা রেগে বলল
–আমি কেনো ওর সাথে জেলাস ফিল করব ও আমার নকের যোগ্য ও না।
ফারহার কথায় অর্নিল রেগে বলল।
–ফারহা জাস্ট স্টপ।আর তোরা দুজন বার বার ঝগড়া কেনো করিস।আমি গেলাম স্যার দেখা করতে বলেছিলো।
অর্নিল গিটার রোহানের কাছে রেখে উঠে চলে যায়।
–
রিমু আর আয়রা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসে।রিমু সেড ভংগী করে আয়রার উদ্দেশ্যে বলে
–এখন এই এসাইনমেন্টের জন্য কোন সিনিয়ারের কাছে যাবো।তুই জানোস সিনিয়ার সকল আপু ভাইয়া খুবই রুড আর ভাবওয়ালি।
রিমুর কথা শুনে আয়রা চিন্তিত স্বরে বলল।
–উফ কি করব তাহলে এখন অলরেডি ১:৩০ বেজে গেছে।২ টায় তো ক্যাফে ও যেতে হবে।চল দেখি গিয়ে কেউ হেল্প করে কিনা।
রিমু আয়রার কথায় এক্সাইটেড হয়ে বলল।
–চল আমার প্রিন্স চার্মিং এর কাছে যাই।
রিমুর কথায় আয়রা ব্রু কুচকে বলতে লাগলো
–কিহ এই প্রিন্স চার্মিং টা কে?তুই রিলেশনে আছিস আর আমাকে কিচ্ছু বলিস নি।
আয়রার কথা শুনে রিমু চোখ বড় বড় করে বলল।
–আরে নাহ আমি কোনো রিলেশনে নেই।আমি তো অর্নিল ভাইয়ার কথা বলছিলাম। উনি অবশ্যই আমাদের হেল্প করবেন।
–নাহ উনার কাছে যেতে পারবো না।এখন উঠ সময় নষ্ট না করে অন্য কারো কাছে হেল্প চাই।
রিমু আর আয়রা অনেকক্ষন খুজে ক্লান্ত হয়ে আবার গিয়ে বেঞ্চটাতে বসে পরল।রিমু ক্লান্ত হয়ে বলল।
–যাক বাবা কাউকে পেলাম না।কয়েকজন রাজি হলেও আবার না করে দিলো।
রিমু কথা শুনে আয়রা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল।
–হ্যা কি করব এখন।
আয়রার কথার মাঝেই একটা ছেলে এসে ওদের সামনে দারালো।রিমু আর আয়রা চোখ তুলে তাকাতেই ছেলেটা বলল
–হেই হায়।তোমাদের হেল্প লাগবে এসাইনমেন্টের জন্য আমি হেল্প করতে পারি।
ছেলেটার কথা শুনে রিমু আর আয়রার চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো।আয়রা উত্তেজিত কন্ঠে বলল
–জ্বী ভাইয়া।হেল্প করে দিলে খুব উপকার হতো।
আয়রা ব্যাগ থেকে এসাইনমেন্ট বের করে ছেলেটাকে দিবে তখনই একটা ছোট ছেলে এসে বড় ভাইয়াটার উদ্দেশ্যে বলল।
–ভাই আপনারে অর্নিল ভাই ডাকে।
ছোট ছেলেটির কথা শুনে ভাইয়াটা চলে গেলো।রিমু আর আয়রা ছেলেটার আসার প্রহর গুনছে।একটু পর ছেলেটা এসে রিমু আর আয়রাকে বলল।
–সরি আপুরা আমার একটা কাজ আছে আমি তোমাদের হেল্প করে পারবো না।
রিমু আর আয়রার শেষ আশাও চলে গেলো।আয়রা মন খারাপ করে বলল
–এখন কি করি?
–কি আর চল তারাতারি অর্নিল ভাইয়ার কাছে যাই নাহলে উনি ও চলে যাবে।
আয়রা রিমুর কথায় কিছু বলতে পারলো না ওর সাথে গেলো।
অর্নিল আর ওর সব বন্ধুরা একটা ক্লাসরুমে বসে আছে।তখন জেবা বলল
–আমরা এখানে কেনো বসে আছি অর্নিল।বাসায় যাবি না?
–তোর যেতে হলে যা আমি তোকে আটকে রেখেছি নাকি।
অর্নিল ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে জেবা গালে হাত দিয়ে বসে রইল।
অর্নিল গিটার নিয়ে বাজাতে নিবে তখনই আয়রা আর রিমুকে ক্লাসে আসতে দেখে অর্নিল অগচড়ে বাকা হাসলো।ফারহা আয়রাকে দেখে রেগে গিয়ে বলল
–এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছো?
ফারহার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রিমু আয়রার হাত ধরে অর্নিলের সামনে গিয়ে দারালো।ওদের দেখে অর্নিল বলল
–কিছু বলবে তোমরা?
রিমু অর্নিলের দিকে তাকিয়ে অনুরোধের সুরে বলল
–ভাইয়া আসলে আমাদের এসাইনমেন্টের কথা তো জানেনই।প্লিজ আমাদের হেল্প করুন।কেউ আমাদের হেল্প করছে না।
রিমুর কথা শেষ হতেই আয়রা বলল।
–জ্বী ভাইয়া।আর কাল আপনার গিটারে পানি ফেলার জন্য সরি।আমি ইচ্ছা করে ফেলি নি।
আয়রার কথা শুনে অর্নিল মুখ চেপে হাসি আটকালো।
তারপর বলল।
–হেল্প চাই?
অর্নিলের কথায় আয়রা তারাহুরো করে বলল।
–জ্বি ভাইয়া।
অর্নিল কোলে রাখা গিটারটা সাইডে রেখে আয়রার একটু কাছে মুখ নিয়ে বলল।
–তাহলে আমার একটা শর্ত মানতে হবে।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই🥰🥰)