প্রেম তুমি পর্ব-০২

0
1818

#প্রেম_তুমি
#part:2
#Mishmi_muntaha_moon

ফারহা অর্নিলকে আসতে থেকেই দৌড়ে জরিয়ে ধরে।ফারহা এভাবে জড়িয়ে ধরায় অর্নিল বিরক্ত প্রকাশ করে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।তারপর ভ্রু কুচকে বলতে লাগে।

–এভাবে চিপকাচ্ছিস কেনো দূরে থাক।

অর্নিল ফারহার থেকে দূরে গিয়ে জেবা আর রোহানের মাঝে বসে।অর্নিলকে মাঝে বসতে থেকে রোহান বিরক্ত হয়ে বলে উঠে

–দূর শালা মাঝে কেনো বসলি?

রোহানের কথাকে পাত্তা না দিয়ে জেবা আবার বলতে লাগে।

–কিরে অর্নিল আজ তোর গিটার আনিস নি?

–নাহ।আজ গাড়িতে আসি নি বাইক এ এসেছি।আর বাইক এ নিতে সমস্যা হচ্ছিলো আমার।রফিক কে নিয়ে আসতে বলেছি ও দিয়ে যাবে।

–ওহ।

আয়রা আর রিমু ক্লাসে বসে আছে।রিমু অর্নিলকে দেখার পর থেকে আয়রার কানের সামনে ওর কথাই বলে যাচ্ছে।আর আয়রা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছে।

–ওই দেখ আয়রা অর্নিল ভাইয়ারা ওই গাছের নিচের বড় বেঞ্চটাতে বসে আছে।উনারা সবসময় ওখানেই বসে।আর ফারহা আপু তো উনাকে দেখলেই টিকটিকির মত চিপকিয়ে থাকে।আর আমি তো তোর কথা শুনে ভেবেছিলাম অর্নিল ভাইয়া মনে হয় তোকে দেখে লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়ে গিয়েছে।কিন্তু আজকে দেখে মনে হলো অর্নিল ভাইয়া তোকে চিনেই না আমার ভাবনা একদমই ভুল হলো।আর ফারহা আপুই হয়তো অর্নিল ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড হবে।তাই তো ফারহা আপুকে আমি একদম পছন্দ করি না আর টিকটিকিও আমি একদম পছন্দ করি না তাই উনার নাম টিকটিকি দিয়েছি।(হেসে)

–রিমু তুই দয়া করে উনাদের কথা বন্ধ করবি।উনাদের কথা বলার মত অনেক মানুষ আছে এই ভার্সিটিতে তাই বলছি তুই ও ওই অর্নিল ভাইয়ার কথা বলে ঘ্যানঘ্যান করিস না।বলতে হলে এই ভার্সিটির ব্যাপারে কিছু তথ্য দে আর এতোদিনের ক্লাসে নোট গুলোও দিতে পারিস।

–ও হ্যা তোকে তো নোট গুলি দিতে হবে।

–হুম।আর শুন তোর মামার সাথে কথা বলেছিলি?আমি যে ক্যাফেতে কাজ করতে চাই।আর কলেজে আসার টাইমে যে একটা ক্যাফ দেখলাম ওইটাই তোর মামার ক্যাফ?

–হ্যা ওইটাই।আমি আম্মুকে দিয়ে কথা বলতে বলেছিলাম।আজকে গিয়ে আম্মুকে জিজ্ঞেস করব আচ্ছা?

–আচ্ছা।এখন ক্লাস করাবে না?

–নাহ ক্লাস ভালো করে হয় না।চল আমরা বাহিরে যাই।

–নাহ তুই তোর নোট গুলো আমাকে দে আমি লাইব্রেরি তে গিয়ে তুলে নেই।

–আচ্ছা।চল তোকে আগে পুরো কলেজ ঘুরে দেখাই তারপর লাইব্রেরি তে গিয়ে তুলে নিস।

–আচ্ছা চল।

রিমু একে পুরো কলেজ দেখিয়ে লাস্ট বিল্ডিংয়ের ২ তলায় উঠে। রিমুর ফোন আসাতে ও আস্তে আস্তে হাটতে লাগে আর আয়রা একে একে রুম গুলো ঘুরে ঘুরে দেখে লাগে। লাস্ট রুমে যেতেই অর্নিল আর ওর ফ্রেন্ডদের দেখতে পায়।আয়রা কে দেখে ফারহা তো রেগে আগুন আর অর্নিল আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে মুখের রিয়েকশন বুঝা যাচ্ছে না।ফারহা রেগে কিছু বলবে তার আগেই তুশার বলে উঠে।

–হেই লেহেঙ্গা ওয়ালি তুমি এখানে কি করছো?

সবাইকে নিজের দিকে এভাবে ভুতের মত তাকিয়ে থাকতে দেখে আর তুশারের প্রশ্নে আয়রা থতমত খেয়ে যায়

–না আসলে,,,কিছু না ভুলে এসে পরেছি সরি।

বলে আয়রা তারাহুরো করে রিমুর হাত ধরে দৌড়ে ৩ তলায় গিয়ে সোজা লাইব্রেরিতে গিয়ে লাস্ট বেঞ্চে বসে।
আয়রা রিমুর হাত ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেই।রিমু অবাক চোখে আয়রার দিকে তাকিয়ে বলে

–এভাবে হাত টেনে নিয়ে আসলি কেনো?

–কিছু না।তুই তারাতারি নোট গুলো বের কর।লেট হয়ে যাচ্ছে বাসায় যাবি না আবার।

রিমু বাগ থেকে নোট গুলো বের করে আয়রা কে দিয়ে ও উঠে লাইব্রেরি তে বই দেখতে লাগলো।

অর্নিক গিটার নিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে বলল

–আচ্ছা আমি চললাম কিছু কাজ আছে।

অর্নিলকে চলে যেতে দেখে ফারহা তারাতারি বেঞ্চ থেকে উঠে অর্নিলের সামনে গিয়ে দারায়।ফারহাকে এভাবে সামনে এসে দারাতে দেখে অর্নিল ফারহার দিজে তাকিয়ে বলে

–হোয়াট?রাস্তা আটকালি কেন?

–অর্নিল তুমি আমায় তুই করে বলবে না ওকে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হই তুমি বলবে।তা যাই হোক চলো আমরা লাইব্রেরি তে যাই।

ফারহার কথা শুনে রোহান অর্নিলে পাশে দারিয়ে বলল

–লাইব্রেরি তোদের রোমেন্স করার জায়গা না।

–আজব রোমান্স করব কেনো আমরা সবাই যাবো।জেবা বল না ওদের।

–আচ্ছা চল যাই।

অর্নিল বিরক্ত হওয়ার সত্ত্বেও কিছু বললনা সবার সাথে লাইব্রেরি তে গেলো।লাইব্রেরিতে গিয়ে মাঝের একটা বেঞ্চ তে বসল ৫ জন।ফারহা লাইব্রেরি দেখে দেখতে বলল

–ওয়াও লাইব্রেরিটা কতো সুন্দর লাগছে।

ওর কথায় তুশার মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো

–মুর্খ জীবনে লাইব্রেরি তে না আসলে তো হঠাৎ সুন্দর লাগবেই।

তুশারে কথায় সবাই হাসতে লাগলো।ফারহা রেগে গিয়ে বলল

–তুশার তুই যদি আমাকে আরেকদিন ইনসাল্ট করলি না দেখিস মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো বেয়াদপ।

তুশার আর ফারহার মধ্যে কথা কাটাকাটি লেগে যায়।
অর্নিল গিটারটা হাতে নিয়ে দারিয়ে পরল তারপর যেতে নিবে তখন চোখ পরল পিছে থাকা আয়রার উপর।আয়রাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে সেদিকে যেতে লাগলো।ফারহা অর্নিলকে পিছের দিকে যেতে দেখে ও পিছে পিছে যায়।

অর্নিল আয়রার সামনে দারিয়ে টেবিলে জোরে হাত দিয়ে বারি মারে।

আয়রা হঠাৎ এতো জোরে আওয়াজে ভয় পেয়ে চমকে সামনে তাকায়।অর্নিলকে দেখে অবাক হয়।অর্নিল আয়রাকে ওর দিকে তাকাতে দেখে বলতে লাগে

–তুমি আমায় ফলো করছো?(এক ব্রু উঠিয়ে)

অর্নিকের কথায় আয়রা বকা বনে যায়।

–আমি আপনাকে ফলো করবো কেনো।আমি তো জানিও না আপনি এখানে কখন এলেন।

–স্টপ ইউর ননসেন্স।আমি সকালে আসার সময় দেখলাম তুমি সামনে দারিয়ে ছিলে তারপর ক্লাস রুমেও এখন আবার লাইব্রেরি তেও।

আয়রা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ফারহা আয়রার কাছে এসে হাতে থাকা কাপ নুডুলস আয়রার নোট গুলোতে ঢেলে দেয়।অর্নিল ফারহাকে এমন কান্ড করতে দেখে রেগে গিয়ে বলে

–ফারহা তুই এখানে কেনো এসেছিস আর এটা কি করলি আমি কথা বলছিলাম না?

আয়রার নোট লেখা এখনও শেষ হয় নি আরো এক পৃষ্ঠা লিখা বাকি ছিলো আর ফারহা সব কষ্টে নুডুলস ঢেলে দিলো।আয়রার রাগে কান্না পেয়ে যাচ্ছে।আয়রা টেবিলে পানি ভর্তি বোতল দেখে নিয়ে ফারহার উপর পানি ঢালতে নেই ফারহা সরে যাওয়াতে সব পানি অর্নিল আর ওর গিটারে গিয়ে পরে।এমনটা হবে আয়রা একটুও ভাবতে পারে নি।
অর্নিল জিন্স থেকে রুমাল বের করে শার্ট মুছতে লাগল।
অর্নিলকে কিছু বলতে না দেখে ফারহা আয়রার হাত টেনে ধরে বলতে লাগে।

–এই মেয়ে কি করলে এইটা।

ফারহাকে এভাবে চিৎকার করতে দেখে অর্নিল ফারহার হাত টেনে দূরে দার করায়।

–আমার শার্টে পানি পরেছে আমি দেখে নিবো।ওকে।

তারপর আয়রার দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে উঠলো।

–তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও এখান থেকে।

অর্নিলের ধমকে আয়রা ভয় পেয়ে টেবিল থেকে রিমুর নোট গুলো আর ব্যাগ নিয়ে এক দৌড়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে যায়।

আয়রা এক দৌড়ে গেটের বাইরে এসে পরেছে।তারপর রিকশায় উঠতে নিবে তখন রিমুর কথা মনে পরে।

–ওহ নো!আমি তো ভয়ের চটে রিমুর কথাই ভুলে গেছি।উফফ কি ভয়ানক ওই আপুটা দেখলেই ভয় লাগে।রিমুকে ফোন দিয়ে আসতে বলি।

আয়রা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রিমুকে ফোন দেয়।রিমু ফোন ধরেই প্রশ্ন করতে লাগে।

–আয়রা তুই কোথায় আমি পুরো লাইব্রেরি খুজে আরো কত জায়গায় খুজলাম তোকে।কোথায় তুই?

–আরে আমি কলেজের বাহিরে দারিয়ে আছি তারাতারি আস।আর কোনো প্রশ্ন করিস না এখন প্লিজ তারাতারি আস।

আয়রা ফোন কেটে রিমুর অপেক্ষা করতে লাগে রিমু আসতে বাসায় চলে যায়।

ফারহা মোবাইলে সেল্ফি তুলতে তুলতে হাটছে।আচমকা অর্নিল ফারহার হাত টেনে ধরাতে ফারহা ভয় পেয়ে যায়।অর্নিল ফারহাকে একটা খালি ক্লাস রুমে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়।

–অর্নিল তুমি আমায় এখানে কেনো নিয়ে আসলে।আর ভালো করে বললে আমি নিজেই আসতাম এভাবে টেনে,,,

ফারহাকে পুরো কথা বলতে না দিয়েই অর্নিল আঙুল তুলে বলতে লাগলো

–লিসেন আমি তোকে কিছু বিষয় ক্লিয়ার করে বলে দিচ্ছি।আয়রার থেকে দূরে থাকবি বুঝলি।আর আমার পার্সোনাল বিষয়ে একদম বা হাত ঢুকাবি না।মনে থাকে যেনো না হলে আমাকে তো তুই চিনসি।

–অর্নিল তুমি ওই লো ক্লাস মেয়েটার জন্য আমার সাথে এমন করছো।লাইক সিরিয়াসলি?

–আমি কার জন্য কি করছ তোকে বলার প্রয়োজন নেই।কিন্তু তোর যেনো আমার বলা কথা গুলো মনে থাকে।

অর্নিল ফারহাকে রেখেই ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে আশা করি🥰🥰)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে