প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব-৩৭+৩৮+৩৯

0
1932

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৭+৩৮
#ফাতেমা_জান্নাত

সকালের সূর্য এর আলোকরশ্মি এসে শহর ময় আলোকিত করে তুলেছে।ব্যস্ত শহরের মানুষ গুলো ছুটাছুটি করছে নিজে দের কর্মস্থলে যাওয়ার তাগিদে।ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিজ নিজ কাজে।কে কার খোঁজ রাখে আর সময় নিয়ে খোঁজ নেয়।কিন্তু যিনি শহরের সব কিছুর দায়িত্ব নেয়।ভালো খারাপ দেখার তাকে খোঁজ নিতেই হয়।সংসার এর বড় ছেলে হিসেবে সংসার এর সবকিছু নজরে রাখা।শহরের মানুষ এর খোঁজ রাখা আর সব শেষে প্রিয় তমা স্ত্রীর ও খোঁজ নেয় সময় পেলেই।প্রিয় তমা স্ত্রী এখন যে শুধু স্ত্রী পদবি তে নেই।হয়ে গিয়েছে তার সন্তানের মা ও।এখন তো একটু বেশিই নজর রাখতে হয়।আর প্রণয় ও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সব দিকে নজর রাখছে।

—জান্নাত আপনি তৈরি হয়েছেন?আর কতক্ষণ লাগবে?

—এই তো আর দুই মিনিট।

বলেই জান্নাত ছুটে কার্বাড এর কাছে যাওয়া ধরলেই প্রণয় এসে জান্নাত এর এক হাত মুঠোবন্দি করে আগলে ধরে।নিজের কাছের দিকে টেনে নিয়ে বলে,

—এখন তো একটু শান্ত ভাবে চলে ফেরা করুন জান্নাত। এখন তো আর আপনি একা না।আপনার মাঝে আমাদের আরো একটা ছোট্ট প্রাণ আছে।সেটা তো মাথায় রাখতে হবে।

জান্নাত নিজের ভুল ধরতে পেরে জিহ্ব কে’টে কানে এক হাত দিয়ে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি ভাষী সুরে বলে,

—সরি! আর হবে না।

—আচ্ছা।একটু সাবধানে কেমন?

—জি।

প্রণয় জান্নাত কে ছেড়ে দেয়।জান্নাত কার্বাড থেকে বোরকা নিকাব নিয়ে পরে নেয়।রেডি হয়ে প্রণয় এর সাথে হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আজকে তারা সবাই ইশি দের বাড়িতে যাবে। মূলত বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।ইশি আর প্রান্তিক এর বিয়ের প্রস্তাব নিয়েই যাবে।


ইশি দের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে আছে প্রণয়, প্রান্তিক,শাহরিয়ার পাবেল। জান্নাত আর রোকসানা ইশির রুমে।রোকসানা ইশি কে এক নজর দেখেই ইশির মায়ের কাছে চলে যায়।তিনি সবার জন্য নাস্তা রেডি করছে।সেখানেই রোকসানা তার সাথে কথা বলছে।জান্নাত ইশি কে রেডি করিয়ে দিচ্ছে।

এক পর্যায়ে জান্নাত ইশি কে তৈরি করে নিচে নিয়ে আসে।ড্রয়িংরুমে সবাই এক সাথে বসে আছে।যেহেতু সবাই পূর্ব পরিচিত তাই আর কেউ না করেনি।তাছাড়া ইশিকে আগে কানাডার যেই ছেলে টি দেখতে এসেছিলো তাদের কে আরো আগেই না করে দিয়েছে।তারা দিন দিন তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছে।আধো বিয়ে করবে কিনা কে জানে.?আর সেখানে তো শুধু দেখা দেখি হয়েছিলো। বাগদান তো হয়নি।বাগদান হলে হয়তো ভাবা যেতো বাদ করবে নাকি করবে না।

সবাই মিলে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামনের মাসেই ইশি প্রান্তিক এর বিয়ে দিবে।কিন্তু এতে ঘোর অমত জানিয়েছে প্রান্তিক। তার এক কথা এত দেরি করে কিসের বিয়ে করবে?বিয়ে যখন হবেই তাহলে এখন হতে সমস্যা কি?আবার এক মাস হওয়ার জন্য অপেক্ষা করো।কিন্তু এগুলো কি আর বড় দের সামনে মুখ ফুটে বলা যায়?মনের কথা মুখে আনার সাহস তার নেই।তাই তো অগত্যা সবার হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলে রাজি হয়ে গিয়েছে।।

🌸🌸

—আচ্ছা মি. ভালোবাসা শুনুন?

জান্নাত এর কথায় প্রণয় এসে বেলকনি তে জান্নাত এর সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে।রাত এখন নয়টা বাজে।জান্নাত জিদ ধরে রাতের আকাশ দেখার জন্য বাইরে এসে বসেছে।প্রণয় এসেই জান্নাত এর মাথাটা নিজের বুকের উপর আগলে নিয়ে জান্নাত কে এক পাশ থেকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,

—বলুন জানুপাখি!

জান্নাত কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বলে,

—জানুপাখি? আজ পর্যন্ত কয়টা নাম দিয়েছেন আপনি আমাকে?

—বলবো?

—হু।

—বেশি না।অল্প কয়েকটা। যেমন-নেশাক্তময়ী,রৌদ্রময়ী কন্যা, নিদ্রাময়ী, ঘুম কন্যা, জানেমান, জানুমণি,জানুপরী, জানুপাখি।

বলেই প্রণয় হেসে দেয়।জান্নাত তাকায় প্রণয় এর মুখ পানে।অবাধ্য মন টাকে একটু শান্ত হতে বলে।এই মানুষ টার ধারে আসলে তার মন টা একটু বেশিই অবাধ্য হতে চাই।ইচ্ছা জাগায় অদ্ভুত সব কান্ডের।এই মানুষ টা তো তার একান্ত-ই একজন। কিন্তু মন কি তা বুঝে?জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আট টা নাম কে আপনি অল্প বলছেন?

—হুম।এটা আর বেশি কি?বউ কে তো ইচ্ছে করে শত শত ভালোবাসার আদুরে নামে ডাকতে।

—আচ্ছা শুনুন একটা কথা বলার ছিলো।

—হুম বলুন।

—সুজন ভাইয়ার সাথে লাবণ্য এর বিয়ে দিলে কেমন হয়?

জান্নাত এর কথা শুনে প্রণয় অবাক নেত্রে তাকায়।জান্নাত এর কথা তার বুঝে আসছে না কিংবা বুঝে আসতে সময় নিচ্ছে।কিয়তক্ষণ চুপ থেকে প্রণয় বলে,

—সুজন কি লাবণ্য কে বিয়ে করবে?লাবণ্য এর সাথে কি হয়েছিলো তার সব কিছুই সুজন এর জানা।

—জানা বলেই তো আমি বলছি সুজন ভাইয়া আর লাবণ্য এর বিয়ে দিতে।আপনি খেয়াল করেছেন কিনা জানি না।কিন্তু আমি সেই দিন লক্ষ করেছি লাবণ্য যখন তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলছিলো তখন সুজন ভাইয়া লাবণ্য এর দিকে তাকিয়ে ছিলো মোহনীয় দৃষ্টিতে। এবং শেষে চোখের পানি মুছতে মুছতে লাবণ্য এর কেবিন থেকে বের হয়েছিলো। তাছাড়া এখন ও তো প্রায় সুজন ভাইয়া লাবণ্যের কাছে থাকে।তাকে দেখে শুনে রাখে।আমার ধারণা যদি ভুল না হয় দেখবেন সুজন ভাইয়া লাবণ্য কে বিয়ে করার কথা আপনাকে এসে জানাবে।

—কিন্তু লাবণ্য কি রাজি হবে?

—আপনি ওকে বলবেন। দরকার হলে আমি নিজে গিয়ে ও বুঝাবো ওকে।কিন্তু তার আগে সুজন ভাইয়া কি বলে তা অপেক্ষা করতে হবে।

—জি।দেখি কি হয়।আপনি খেতে চলুন।

—খেতে যাবো মানে?

—খেতে আসবেন মানে খেতে আসবেন। এই সময় বেশি বেশি খেতে হয় জানেন না?দুই জনের খাবার খেতে হয়।

—একটু আগেই না খেয়ে আসলাম?

—এখন দুধ এবং ফল খাবেন।

—আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন মি. ভালোবাসা?

—আশ্চর্য! আমি মজা করবো কেন জান্নাত?

—এত খেতে পারবো না।

—আচ্ছা ঠিক আছে অল্প করে খেতে হবে।

প্রণয় এর সাথে না পেরে অগত্যা জান্নাত খেতে রাজি হয়।জান্নাত প্রতি মুহূর্তে যেন এক অদ্ভুত প্রেমে পড়ে প্রণয় এর।প্রণয় এর কথায়,চলা ফেরায়,হাসিতে,তাকানো তে,গাম্ভীর্যতায় যেন প্রতিটা চাহনিই তাকে মুগ্ধ করে।জান্নাত মাঝে মাঝে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে ভাবে,”এই মানুষ টা কে কখনো সে যদি হারিয়ে ফেলে তাহলে কি ভাবে থাকবে?কিংবা প্রণয় যদি কখনো তাকে হারিয়ে ফেলে তাহলে কি ভাবে থাকবে? জানা নেই।কিছুই জানা নেই।এই কথা মনে এসে হানা দিলেই যেন বুক ফে’টে কান্না এসে ভীড় জমায় নিজের মধ্যে।

জান্নাত খেয়াল করলো তার চোখ জ্ব’লছে। অবাধ্য চোখের পানি কপল বেয়ে পড়ার অনুমতি চাইছে।চক্ষু কোটর পানি তে টই টম্বুর।মুহূর্তে -ই নেত্রজল কোনো বাধা না মেনে জলপ্রপাত এর ন্যায় কপল বেয়ে পড়তে লাগলো। প্রণয় নিজের মতো জান্নাত এর সাথে কথা বলছে।আর জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে অশ্রু কণা বিসর্জন দিচ্ছে।প্রণয় এখনো খেয়াল করেনি জান্নাত এর চোখের পানি।

প্রণয় এর জান্নাত এর মুখের দিকে তাকিয়ে -ই হকচকিয়ে যায়।এতক্ষণ সে ফল কাটছিলো। জান্নাত এর চোখে পানি দেখেই উদগ্রীব হয়ে বলে,

—কি হয়েছে জান্নাত আপনি কাঁদছেন কেন?পেটে ব্য’থা পাচ্ছেন? বাবু কিক মে’রেছে?

প্রণয় এর কথা শুনে জান্নাত কান্নারত অবস্থায় ফিক করে হেসে দেয়।প্রণয় প্রশ্নাত্মক চাহনি নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে জান্নত এর দিকে।জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—মি. ভালোবাসা!দুই মাসে বাচ্চাদের অস্তিত্ব বুঝা যায় না গর্ভে।চার মাস কিংবা পাচঁ মাসেই বাচ্চা রেসপন্স করে।তাদের অস্তিত্ব বুঝা যায় এবং সেই সময় আস্তে আস্তে তারা মায়ের পেটে আ’ঘাত করে তাদের অস্তিত্ব এর উপস্থিতি বুঝায়।আর আপনি কিনা এখনি বলছেন বাবু কিক মা’রছে কিনা?সত্যি মি. ভালোবাসা আমার হাসি পাচ্ছে।

বলেই জান্নাত আবার হাসি দেয়।হাসতে হাসতে জান্নাত এর চোখে পানি চলে আসে।প্রণয় জান্নাত আর দিকে তাকায়।মোহনীয় দৃষ্টিতে নাহ, মুগ্ধকরা দৃষ্টি তে তাকায়।এই মেয়ে টার হাসি তার বক্ষে সুখের সুক্ষ্ম তী’রের মতো ভেদ করে।যার ফলে জান্নাত এর ভালোবাসার প্রতি তা মুহূর্তে সে দগ্ধ বিদগ্ধ হচ্ছে।মেয়ে টা কি তা জানে?জানলে কখনো এভাবে হেসে তার হৃদয় টাকে এভাবে সুখের তী’রে ক্ষত বিক্ষত করতো না।

প্রণয় নিজেকে ধাতস্থ করে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আপনি কাঁদছিলেন কেন জান্নাত?

প্রণয় এর কথায় জান্নাত এর হাসি থেমে যায়।মুখ থেকে বিলীন হয় হাসির রেখা।থমথমে মুখশ্রী করে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে ছলছল দৃষ্টি তে বলে,

—আমি কখনো হারিয়ে গেলে আপনি কি করবেন মি. ভালোবাসা?নাকি আরেকটা বিয়ে করবেন?

এমন সময় জান্নাত এর এহেন কথা শুনে প্রণয় এর মুখভঙ্গি বদলে যায়।জান্নাত তার উত্তর এর আশায় প্রণয় এর দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।প্রণয় বার কয়েক বড় করে তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে। সে তার রা’গ প্রকাশ্যে আনতে চাই না।প্রান প্রিয় প্রিয়তমার মুখ থেকে কেউ কখনোই হারিয়ে যাওয়া কথা টা সহ্য করতে পারে না।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলায়। স্মিত হাসে।ঠোঁট কোলে হাসির রেখা টেনে এনে জান্নাত এর চোখের দিকে নিষ্প্রভ তাকিয়ে বলে,

—জানেন জান্নাত, আল্লাহর কাছে আমার এই মুহূর্তে একটা জিনিস -ই চাইতে ইচ্ছে করছে.।

—কি?

—‘‘আপনাকে দেখে যেমন আমার মনে প্রেমের হাতেখড়ি হয়েছিলো।ঠিক তেমনি আপনাকে দেখেই যেন আমার দেহের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ হয় জান্নাত ’’।

প্রণয় কথাটা বলতে-ই জান্নাত প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।মাথা রাখে প্রণয় এর কাঁপতে থাকে বুকের সেই যন্ত্র টার উপর।জান্নাত উপলব্ধি করতে পারছে।প্রণয় এর মতো তার হার্ট টা ও দ্রুত বিট করছে।দুই জনের হৃদয়ে চলছে প্রিয় মানুষ টা কে হারিয়ে ফেলার আশংকা। জান্নাত প্রণয় এর বুকে মাথা রেখেই বলে,

—এভাবে বলবেন না মি. ভালোবাসা।আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না।

—আমার কি খুব ভালো লাগে জান্নাত আপনার মুখে হারিয়ে যাওয়ার কথাটা শুনতে?

—সরি।

—নেক্সট টাইম আর এসব কথা বলবেন না।ঘুমাতে চলুন।এগারো টা বেজে যাচ্ছে।এখনো ঘুমাতে আসছেন না আপনি।

বলেই জান্নাত কে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজের বুকের উপর জান্নাত এর মাথাটা নিয়ে শুয়ে পড়ে।জান্নাত এর চুলে হাত ডুবিয়ে দেয়।মাথায় চলছে নানান চিন্তা।রাফসান মির্জা আজ পাচঁ মাস ভারতে আটকে আছে।কখন হুট করে ফিরে আসে বলা যায় না।ওই দিকে জামিল এর করা সেই ভিডিও টা রাফসান মির্জার কাছেই আছে।ওই ভিডিও টা কোনো ভাবে হাতে আসলেই রাফসান মির্জা কে নিয়ে স্টেপ নেওয়া যেতো। আগামীকাল বা পরশু আবার জাতীয় সংসদ ভবনে যেতে হবে।জান্নাত এর প্রেগন্যান্সি এর সময় এখন দুই মাস চলছে।এখন জান্নাত এর চলা ফেরাতে তেমন সমস্যা না হলেও প্রণয় এর মনে ভ’য় টা রয়েই যাচ্ছে।

🌸🌸

—স্যার শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ তো হচ্ছে জুনায়েদ আজমীর মেয়ে জান্নাত আজমী।

ফোনের অপর পাশে রাফসান মির্জা কে কথা টা বললো তার দলের গার্ড।গার্ড রনি রাফসান মির্জা কে আবার বলে উঠে,

—স্যার আপনি বলে ছিলেন শাহরিয়ার প্রণয় এর বাসার সামনে থেকে নজর দিতে।তাই আমরা গত কয়েকদিন থেকে একটা বাসার ছাদ এর উপর থেকেই দূরবীন দিয়ে শাহরিয়ার প্রণয় এর বাসায় নজর রাখতাম। সেই ভাবেই গত কয়েকদিন শাহরিয়ার প্রণয় আর জান্নাত আজমী কে বাসায় এক সাথে বেলকনি তে দেখেছি।

রাফসান মির্জা রনির কথা শুনে ক্রুর হেসে বলে,

—ঠিক আছে তুই ওদের উপর নজর রাখ।আমি দেখি কি করা যায়?

—জি স্যার।

—শুন,মেহেদি আর প্রদীপ কোথায়? ফোন করেছি। ফোন ধরছে না যে।

—স্যার তারা তো দুই জনে রুমে ঘুমাচ্ছে।কালকে অনেক রাত জেগে আপনার কাজ গুলো দেখেছিলো। তাই এখন ঘুমাচ্ছে।

—ওহ।ওদের দুই জনের উপর ও একটু নজর রাখিস। কথায় আছে ঘরের শত্রু বিভীষণ। তাই আমি এখন ওদের উপর ঠিক আগের মতো বিশ্বাস রাখতে পারছি না।নজর ওদের উপর ও দিস।

—জি স্যার।

বলেই গার্ড ফোন কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা প্ল্যান সাজাতে থাকে।কি ভাবে কি করা যায়।কিন্তু এই দিকে বিপ্লব কুমার কে বুঝিয়ে বলে ও কোনো লাভ হচ্ছে না।তার এক কথা তার টাকা আগে দিতে হবে তারপর ছাড়া ছাড়ি।কিন্তু টাকা টা দিবে কি ভাবে?সে দেশে নেই।মেয়ে পাচার করে যে টাকা যোগাড় করবে সেটা ও পারবে না তার লোক গুলো ঠিক মতো।সেই পুলিশ এর হাতে ধরা খাওয়া। এই দিকে তার দুই টা কোম্পানি থেকে একটা কোম্পানি পুরো শেষ।আরেকটা চলছে খানিকটা। কিন্তু এটা শেষ হতে ও সময় লাগবে না।তাহলে টাকা টা দিবে কি ভাবে।

রাফসান মির্জা ভাবতে ভাবতে -ই বলে উঠে,

—শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ তাহলে জুনায়েদ আজমীর মেয়ে জান্নাত আজমী? দুই টাই আমার শত্রু। তোরা দুই টাই আমাকে অনেক অপমান করচত।ঠান্ডা মাথায় ঠান্ডা কথা বলে তোরা আমাকে অপমান করেছিলি। কিচ্ছু ভুলে যায়নি আমি।এত সহজে সব কিছু ভুলার পাত্র রাফসান মির্জা না।তোদের শেষ আমি দেখেই ছাড়বো বাই হুক অর বাই কুক।

বলেই রাফসান মির্জা অট্টহাসি তে ফে’টে পড়ে।যাকে অট্টহাসি না বলে বিচ্ছিরী হাসি বললে ও ভুল হবে না।

🌸🌸

পাখি দের কিচির মিচির ডাক আর সুরেলা কণ্ঠের আজান শুনে ঘুম ভাঙলো জান্নাত আর প্রণয় এর।প্রণয় জান্নাত এর কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।ওযু করে জান্নাত কে বলেই মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।জান্নাত ও শোয়া থেকে উঠে ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নেয়।নিচে গিয়ে দেখে রোকসানা উঠে গিয়েছে।জান্নাত তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। রোকসানার কাঁধে একটু আলসেমি করে মাথা রেখে বলে,

—কি করছো মা?

রোকসানা হেসে দিয়ে চুলার উপর থেকে দুধ এর পাতিল নামিয়ে একটা গ্লাসে দুধ ঢেলে নেয়।জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে দুধের গ্লাস সামনে ধরে রেখে বলে,

—এই যে আমার মায়ের জন্য দুধ গরম করছিলাম। এখন গ্লাসের পুরো দুধ টুকু শেষ করতে হবে।

দুধ দেখেই জান্নাত নাক মুখ চিটকায়।দুধ কোনো কালেই তার পছন্দ নয়।দুধের থেকে কি রকম একটা গন্ধ লাগে তার কাছে। দুধ দেখলেই গা গুলিয়া আসে।কিন্তু কনসিভ করার পর থেকেই প্রণয় জোর করে তাকে এক গ্লাস দুধ খাওয়াবে।এটা যেন প্রণয় এর অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

জান্নাত রোকসানার দিকে তাকিয়ে বলে,

—মা আমি খাবো না দুধ।তোমার ছেলে বলে গিয়েছে তাই না আমাকে এখন দুধ দিতে?

—আমার ছেলে না বললেও আমি এখন তোর ঘরে দুধের গ্লাস নিয়ে যেতাম।

—কিন্তু মা….

—কোনো কিন্তু নয়।তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন। কোনো কথা শুনবো না।

জান্নাত কে কথার মধ্যস্থে থামিয়ে দিয়ে কথা গুলো বলতে বলতে কাছে এসে দাঁড়ায় প্রণয়। জান্নাত করুণ মুখ করে প্রণয় এর দিকে একবার তাকায়।কিন্তু এতে কোনো কাজ হয় না।প্রণয় দুধের গ্লাস টা হাতে নিয়ে নিজেই এগিয়ে দেয়।বাধ্য হয়ে জান্নাত খেয়ে নেয়।এই মা ছেলের চক্করে পড়ে।তার জীবন তিতাময় হয়ে গেছে।সারাদিন খাওয়াবে।

প্রণয় জান্নাত কে নিয়ে ঘরে চলে আসে। জান্নাত কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে হেসে বলে,

—জান্নাত আমাকে সংসদ ভবনে যেতে হবে আগামীকাল। তাছাড়া আজ ও একটা কাজে বের হবো।আপনি থাকতে পারবেন তো একা?কোনো সমস্যা হবে না তো?

জান্নাত না সূচক মাথা নাড়িয়ে স্মিত হেসে বলে,

—কোনো সমস্যা হবে না।আপনি যেতে পারেন সাবধানে। মা তো আছেই।দরকার হলে আম্মু কে ডেকে নিবো।

—আচ্ছা।

বলেই প্রণয় এসে জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে।কপালে অধর ছুঁয়ে দেয়।ড্রেসিংটেবিল এর উপর থেকে চশমা টা নিয়ে চোখে পড়েই,মাক্স অ মুখে লাগিয়ে বেরিয়ে যায় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে।জান্নাত ও হেসে দেয় বিপরীতে।

প্রণয় বাসা থেকে বের হয়েই রিফাত, সজীব, সুজন কে ফোন দিয়ে নির্ধারিত জায়গায় তাড়াতাড়ি আসতে বলে।যাতে কেউ জানতে না পারে সেই ব্যাপারে ও খেয়াল রাখতে বলে।চার জনেই বেরিয়ে যায় নিজে দের গন্তব্য স্থানের উদ্দেশ্যে। প্রণয় কোনো ভাবে জামিল এর মোবাইলে করা ভিডিও টার খোঁজ পেয়েছে।তাই আরো নিশ্চিত হতে সেখানে যাচ্ছে।ভাগ্য ভালো হলে ভিডিও টা ও পেয়ে যাবে।

গাড়িতে বসে প্রণয় স্টেয়ারিং ঘুরাচ্ছে।মন পড়ে আছে জান্নাত এর কাছে।আজ কাল জান্নাত এর কাছ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না।মনে হয় এই বুঝি হারিয়ে ফেললো। কিন্তু শুধু তো নিজের দিক ভাবলে হয় না।শহরের এমপি হয়েছে জন সাধারণ এর সেবা করতে সেখানে ঘরে বসে থাকা টা কি মানায়?তাই তো দিন শেষে অবাধ্য মন টা কে নিয়েই বেরিয়ে পড়ে জন সাধারণ মানুষ এর একটু সাহায্য করার জন্য।

এই দিকে প্রণয় যে বাড়ি থেকে বের হয়েছে তা রাফসান মির্জার লোকদের চোখ এড়িয়ে যায়নি।প্রণয় কে ফলো করে মেহেদি আর প্রদীপ ও যাচ্ছে।প্রণয় কোথায় যাচ্ছে এত সকাল সকাল মূলত সেটাই দেখার মূল উদ্দেশ্য তাদের।প্রণয় এর নজরে আসেনি তারা পিছনে যে ঈগল এর চোখের ন্যায় কেউ নজর রাখছে।

চলবে ইনশাল্লাহ ✨🍁

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৯
#ফাতেমা_জান্নাত

থানায় পুলিশ অফিসার আমান এর সামনে বসে আছে প্রণয়, রিফাত,সজীব,সুজন ।এর বাইরে ও আজ আরো দুই জন লোক যুক্ত হয়েছে তাদের সাথে।মেহেদি আর প্রদীপ। তারা দুই জনে ও প্রণয় দের সাথে থানায় বসে আছে।প্রণয় পুলিশ অফিসার আমান এর কাছে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে এত দিনের জোগাড় করা সব প্রমাণ সাবমিট করেছে।সব প্রমাণ এর মাঝে জামিল এর মোবাইল এবং মোবাইলে করা সেই ভিডিও টা আছে।আর এই ভিডিও টা সংগ্রহ করেছে মেহেদি আর প্রদীপ রাফসান মির্জার বাসার সিক্রেট রুম থেকে।সেখানে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ ছিলো। এত দিন যারা যারা রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে যা যা প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলো তার বিরুদ্ধে স্টেপ নেওয়ার জন্য।কোনো না কোনো ভাবে সেটা জেনে গেলে রাফসান মির্জা তাকে মে’রে ফেলে সকল প্রমাণ নিয়ে এসে নিজের এই বেড রুমের সাথে লাগোয়া সিক্রেট রুমে রাখে। কেন জানি তার কাছে এগুলো নষ্ট করে ফেলতে ইচ্ছে করে না।
যার দরুন এখন সব প্রমাণ পুলিশের হাতে।রাফসান মির্জার এই সিক্রেট রুমের কথা কেউ জানতো না।প্রণয় সেই দিন যখন প্রদীপ আর মেহেদি কে রাফসান মির্জার রুমে একটা পুরাতন মোবাইল আর তাতে একটা ভিডিও খুঁজতে বলেছে তখনি তারা দুই জন রাফসান মির্জার রুম সার্চ করতে শুরু করে।আর এক পর্যায়ে সিক্রেট রুমটা তাদের নজরে আসে।তারা রুমের তালা ভে’ঙে ভিতরে ঢুকে। টিপ টিপ করে হালকা আলোয় একটা লাল বাতি জ্ব’লছে। প্রদীপ মেহেদি সেই দিকে খেয়াল না করে প্রমাণ খুঁজতে থাকে।খুঁজতে খুঁজতে একটা বড় বক্স সামনে পড়ে।বক্স টা খুলতেই দুই জনে দেখে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে অগণিত প্রমাণ এখানে।নারী পাচার করার সময় ছবি,কাউকে মে’রে ফেলার ছবি,নয়তো কোনো মেয়ে কে রেপ করছে এমন ও অনেক কিছু।সব প্রমাণ এর ভিতরে জামিল এর মোবাইল টা পায়।মেহেদি জামিল এর ফোনের থেকে মেমোরি কার্ড খুলে নিজের মোবাইলে লাগিয়ে গ্যালারি তে যায়।সব ছবি ভিডিও দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত ভিডিও টা পেয়ে যায়।প্রণয় এর মোবাইলে ভিডিও টা সেন্ড করে দেয়।আরো কিছু প্রমাণ নিয়ে বেরিয়ে যায় দুই জনে হাসি মুখে।

প্রদীপ আগে থেকেই প্রণয় এর লোক ছিলো। রাফসান মির্জার অত্যন্ত বিশ্বাসী একজন হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে প্রণয় এর কিছু কথা রাফসান মির্জাকে বলে দিতো। আবার প্রণয় কে ফোন কে ফোন করে সাবধানে থাকতে বলতো। এভাবেই রাফসান মির্জার অগোচরে সে এত দিন প্রণয় এর হয়ে কাজ করে গিয়েছে।কিন্তু মেহেদি রাফসান মির্জার -ই লোক ছিলো।প্রদীপ মেহেদি কে নানা ভাবে বুঝিয়ে নিজেদের দলে নিয়ে আসে।মেহেদি কে রাফসান মির্জার খারাপ কাজ গুলোর কথা আরেকটু বিশ্লেষণ করা বুঝায়। এটা ও বলে ভবিষ্যৎ এ রাফসান মির্জা কে পুলিশে নিয়ে গেলে তাকে ও বিপদে পড়তে হবে।এভাবে হাজার বুঝানোর পর মেহেদি প্রদীপ এর কথা মেনে নিয়স রাফসান মির্জার দল ত্যাগ করে।তবে তা রাফসান মির্জা জানে না।

প্রণয় পুলিশ অফিসার আমান কে বলে,

—যা করার যত দ্রুত সম্ভব করবেন। রাফসান মির্জা যেন আরো কারো ক্ষতি করতে না পারে।আর রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে আপনারা কঠোর স্টেপ নিবেন বলে আমার ধারণা।

প্রণয় এর কথায় আমান হেসে দিয়ে বলে,

—চিন্তা করবেন না এমপি সাহেব। অতি শীঘ্রই আমরা রাফসান মির্জা কে ধরার চেষ্টা করবো।

অফিসার আমান এর কথার বিপরীতে প্রণয় হেসে দেয়।হ্যান্ড শেক করে সালাম দিয়ে বেরিয়ে আসে থানা থেকে।মেহেদি আর প্রদীপ কে জড়িয়ে ধরে।দুই জন কে রিফাত আর সজীব এর সাথে থাকতে বলে আজ থেকে আর রাফসান মির্জার কাজে যাওয়ার দরকার নেই।দুই জনে রাজি ও হয়ে যায়।

প্রণয় গাড়িতে বসে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে।অনেক দিন পর যেন রিলিফ ফিল হলো।রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে প্রমাণ যোগাড় করে সাবমিট করে দিয়েছে।এবার শুধু রাফসান মির্জা কে পুলিশ ধরে ফেললেই শান্তি।

কিন্তু আসলেই কি শান্তি পাবে?এত কিছুর পরে ও প্রণয় এর বুক এর ধুকপুকানি টা যেন বেড়ে যাচ্ছে।কমার নাম নিচ্ছে না যত সময় যাচ্ছে।কোথাও যেন কিছু একটা নিয়ে ভয় পাচ্ছে সে।খুব ভয় পাচ্ছে।

🌸🌸

হসপিটালে লাবণ্যের কেবিনে বসে আছে প্রণয়,জান্নাত, রিফাত,সজীব,সুজন।তাছাড়া ও আরো দুই জন লোক এখনে উপস্থিত আছে।একজন উকিল আরেকজন কাজী। লাবণ্য বেডে শুয়ে আছে।বাম হাতে ক্যানেলা লাগানো। তার কাছে সব কিছু এখনো স্বপ্নের মতো লাগছে।সে হয়তো ভাবতে পারে নি এত বড় সর্বনাশ হয়ে যাওয়ার পরে ও কেউ তাকে বিয়ে করতে বলবে।হ্যাঁ আজকে এই মুহূর্তে সুজন আর লাবণ্য এর বিয়ে।সুজন -ই প্রথমে এসে প্রণয় কে জানায় সে লাবণ্য কে বিয়ে করতে চাই।প্রণয় প্রথম এই রাজি হয় নি।সুজন কে বুঝিয়েছে নানা ভাবে।এখন আবেগ এর বশে বিয়ে করে যদি পরে তিক্ততা চলে আসে লাবণ্য এর প্রতি।এখন লাবণ্য এর সাথে ঘটে যাওয়া অঘটন নিয়ে কোনো আপত্তি না জানালে ও যদি ভবিষ্যৎ এ কোনো দিন লাবণ্য কে এসব নিয়ে কিছু বলে তাহলে লাবণ্য সেটা সহ্য করতে পারবে না।বেচেঁ থেকেও ম’রার মতো হয়ে থাকবে।তাই লাবণ্য কে ভবিষ্যৎ এ ও এসব নিয়ে কখনো কিছু বলা যাবে না।সব দিক চিন্তা ভাবনা করে তারপর লাবণ্য কে বিয়ে করতে বলেছে প্রণয় সুজন কে।সুজন সময় চেয়েছে প্রণয় এর কাছে।প্রণয় ও সময় দিয়েছে।তার দুই দিন পরে গত কাল- ই সুজন এসে তার সিদ্ধান্ত জানায়।সে বিয়ে করবে লাবণ্য কে।ভবিষ্যৎ সে কখনো লাবণ্য কে কষ্ট দিবে না ইনশাল্লাহ।

সুজন এর সিদ্ধান্ত শুনে প্রণয় আসে লাবণ্য এর কাছে।লাবণ্য কে সুজনের কথা বলে।সুজন তাকে বিয়ে করতে চায় কথা টা বলতেই লাবণ্য বারণ করে দেয়।লাবণ্য কোনো মতেই রাজি না।তার সাথে কি ঘটে ছিলো সে সব কিছু জানার পর সে কিভাবে বিয়ে করতে পারে।দরকার হলে একা জীবন কাটিয়ে দিবে তারপর ও কাউকে ঠকাতে সে রাজি নয়।প্রণয় শুধু লাবণ্য কে বিয়ের প্রস্তাব টা দিয়ে ছিলো। লাবণ্য রাজি নেই শুনে প্রণয় জান্নাত কে বলে।জান্নাত এসে লাবণ্য কে বুঝায়।সব দিকে মিলিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে।অনেক বুঝানোর পর লাবণ্য রাজি হয়।আর সেই সুবাধেই আজ তাদের বিয়ে।

সুজন এর চোখ মুখে উপছে পড়া আনন্দ এর রেশ।কেন জানি না লাবণ্য এর সাথে ঘটে যাওয়া সব জেনে ও লাবণ্য এর প্রতি তার ভালো লাগা কাজ করছে অধিক পরিমাণ এ।রিফাত সুজন এর দিকে তাকিয়ে দেখে সুজন মিটি মিটি হাসছে।রিফাত কনুই দিয়ে সুজন কে ধা’ক্কা দিয়ে বলে,

—“কি মামা!ছক্কা তো মে’রে দিলে আমাদের আগে বিয়ে করতে এসে।সেই জন্যই বুঝি এত হাসি পাচ্ছে?”

সুজন রিফাত এর কথা প্রতি উত্তরে হেসে দেয়।রিফাত আর সজীব ও হেসে দিয়ে দুই পাশ থেকে সুজন কে জড়িয়ে ধরে।
আনুমানিক ভাবে দশ মিনিট এর কাছাকাছি সময় পর উকিল এগিয়ে আসে একটা পেপারে সাইন করতে বলে সুজন কে।সুজন বিনা দ্বিধায় নির্লিপ্ত ভাবে সাইন টা করে দেয়।এর পরেই পেপার টা আবার লাবণ্য এর কাছে দেয়।লাবণ্য ডান হাত উঁচিয়ে কলম নেয় হাতে।সাইন করতে গিয়ে তার হাত কাঁপছে। চোখ জ্ব’লছে।চোখে পানি এসে উপস্থিত হয়েছে।এই বুঝি নেত্রকোনা থেকে দুই ফোঁটা পানি রেজিস্ট্রি পেপারে পড়বে।সাইন করতে হাত বার বার এগিয়ে নিয়ে আবার পিছিয়ে আনছে।জান্নাত এসে দাঁড়ায় লাবণ্য এর পাশে।লাবণ্য এর মাথায় হাত রাখে।লাবণ্য অশ্রু সিক্ত নয়নে জান্নাত এর দিকে তাকায়।জান্নাত লাবণ্য এর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,

—“ভ’য় পেয়ো না আপু।সুজন ভাইয়া খুব ভালো। তোমাকে হ্যাপি রাখবে।তারপর ও কোনো দিন যদি সুজন ভাইয়া তোমাকে কিছু বলে সোজা তোমার ভাইয়া এর কাছে চলে আসবে।আমরা সুজন ভাইয়ার বিচার করবো। কেমন? তুমি ভ’য় পেয়ো না।নির্দ্বিধায় সাইন করতে পারো।”

জান্নাত এর কথা শুনে লাবণ্য হেসে দেয়।চোখের পানি মুছে সাইন করে দেয় পেপারে।এরপরে এই কাজি এসে ইসলামি শরীয়ত এর মাধ্যমে তাদের বিয়ে পড়ায়। আজ থেকে লাবণ্য সুজন আইনগত ভাবে ও ইসলামি ভাবে স্বামী স্ত্রী। আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুক তাদের দুই জনের হালাল সম্পর্ক এবং তাদের উপর।

জান্নাত, প্রণয় কিচ্ছুক্ষণ লাবণ্য এর সাথে কথা বলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।রিফাত আর সজীব ও বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।কেবিন এর ভিতরে শুধু লাবণ্য আর সজীব -ই আছে।লাবণ্য সজীব এর দিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে দৃষ্টি অন্যদিকে দেয়।সুজন কেবিন এর দরজা টা আটকে দিয়ে লাবণ্য এর সামনে এসে দাঁড়ায়। দুই হাতের আজালায় লাবণ্য এর মুখ টা নিয়ে
দীর্ঘ সময় নিয়ে লাবণ্য এর কপালে চুম্বন স্পর্শ দেয়।এই যে হালাল স্পর্শ। এই স্পর্শে নেই কোনো অপবিত্রতা। নেই কোনো গুনাহ।এটা পবিত্র সম্পর্ক এর পবিত্র স্পর্শ।

🌸🌸

নিকষিত রাতের কালো অন্ধকার চারদিকে। গাছের পাতা গুলো মাঝে মাঝে এসে নড়েচড়ে প্রকৃতির পরিবেশে হাওয়া দিয়ে শরীর শীতল করে যাচ্ছে।বেলি ফুল তার মন মাতানো খুশবু ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রণয় এর বেলকনি তে।দুই দিন আগেই এই বেলি ফুল গাছ টা এনে বেলকনি তে একটা টবে লাগিয়ে দিয়েছে প্রণয়। শুধু বেলি ফুল না।সাথে গোলাপ আর নয়নতারা ফুলের গাছ ও এনে লাগিয়েছে।মূলত জান্নাত এর কথা ভেবেই প্রণয় ফুল গাছ গুলো এনে এখানে রেখেছে। প্রেগন্যান্সি সময় কালে মুড সুইয়িং বেশি হয়।তাই মুড সুইয়িং হলে যাতে এসে বেলকনি তে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে মন ভালো হয়ে যায় জান্নাত এর।

প্রণয় এসে জান্নাত এর পাশে একটা চেয়ারে বসে।এর কিছুক্ষণ পরেই জেনিথ আর পার্শিয়া এসে দুই জন দুইটা চেয়ারে বসে।মোট চারজন চারটা চেয়ার পেতে বসেছে।এই যেন চার সদস্যের পরিবার একসাথে বসেছে ফ্যামিলি মিটিং এ।

প্রণয় জান্নাত এর কাঁধে মাথা রাখে।জান্নাত এর এক হাত টেনে নিয়ে নিজের দুই হাতের মুঠোবন্দি করে।বাইরের আকাশ পানে তাকিয়ে জান্নাত কে স্বগতোক্তি করে বলে,

—জানেন জান্নাত মনে হচ্ছে আজকে অনেক বড় একটা বোঝা কাধঁ থেকে নামালাম।

জান্নাত হেসে দিয়ে বলে,

—পুলিশ রা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে তো?

—হ্যাঁ। তাছাড়া আমান আমার ফ্রেন্ড। তাই ওকে বলেছি বিশেষ ভাবে সব কিছু করতে।কিন্তু একটা কথা জান্নাত?

—কি?

—রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে স্টেপ নেওয়ার পর ও আমার মনে ভয় এখনো দানা বেধে আছে।জানি না কেনো ভয় পাচ্ছে মন।

—আপনি একটু বেশি ভাবছেন মি.ভালোবাসা।কিছু হবে না। তাছাড়া রাফসান মির্জা তো দেশে নেই।তাহলে এত কেন ভয় পাচ্ছেন আপনি।

—জানি না।আমার ভয় টা তো আপনাকে আর আমাদের অনাগত সন্তান কে নিয়ে হচ্ছে। নিজেকে নিয়ে তো না।

—কিচ্ছু হবে।এত বেশি ভাববেন না তো।আল্লাহ ভরসা।

প্রণয় নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে হেসে দেয়।জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আমার কপাল টা আজকে ও ঠান্ডা হয়ে আছে জান্নাত। আপনার ওষ্ঠদ্বয় এর উষ্ণতা দিয়ে উত্তাপ করে দিবেন না?

প্রণয় এর কথায় জান্নাত হেসে দেয়।মিনিট কয়েক যেতেই প্রণয় এর কপালে নিজের অধর ছোঁয়ার উষ্ণতার প্রলেপ দেয়।প্রণয় হেসে দেয়। জান্নাত এর দুই গালে, নাকে,কপালে,চোখে চুমু খায়।ঠোঁটের উপর আলতো ছোঁয়া রাখে নিজের অধর যুগোল এর।আকাশ এর চাঁদের বুড়ি ও যেন তাদের এরকম মিষ্টি ভালোবাসা দেখে লজ্জা পাচ্ছে।তাইতো লুকিয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর মেঘের আড়ালে।আকাশ এর হাজার তারা ও যেন আজ একটু বেশিই আলোকিত হয়ে জ্ব’লছে।বেলি ফুলের ঘ্রাণ টা ও মুহূর্তে একটু বেশিই ছড়িয়ে দিচ্ছে।গাছের পাতা গুলে হেলে দুলে বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।তাদের ভালোবাসায় যেন প্রকৃতি ও মাতোয়ারা হয়েছে।

🌸🌸

রাফসান মির্জার কাছে এখনো গিয়ে খবর পৌছেনি মেহেদি আর প্রদীপ যে তার বিরুদ্ধে গিয়ে সকল প্রমাণ পুলিশ এর হাতে তুলে দিয়েছে।

রাফসান মির্জা বিপ্লব কুমার এর নিয়োগ প্রাপ্ত নতুন গার্ড কে নিজের আয়ত্তে আনতে উঠে পড়ে লেগেছে। যদি কোনো ভাবে এই গার্ড কে নিজের কবলে এনে এখান থেকে বের হওয়া যায় তাতে তারই তো লাভ।তাই যখন থেকে গার্ড টা কে দেখেছে এবং জেনেছে সে নতুন। তখন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কি ভাবে কি করা যায়।
হয়তো সে সফল নয়তো বিফল। চেষ্টার কমতি রাখবে না এই তার পণ।

চলবে ইনশাল্লাহ ✨🖤

[ভুলত্রুটি মার্জনীয় ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে