প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
2010

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৪+৩৫
#ফাতেমা_জান্নাত

মিষ্টার বিপ্লব কুমার বসে আছে কলকাতায় তার ডেরাতে। তার সামনেই মুখ কাছুমাছু করে বসে আছে রাফসান মির্জা।বিপ্লব কুমার রাফসান মির্জার দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যা উপেক্ষা করার সাহস হয়ত রাফসান মির্জার কলিজা দিচ্ছে না।ভ’য়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার।কণ্ঠ নালী তে যেন কিছু ছেপে আছে।তাই কিছু বলতে ও পারছে না।মিষ্টার বিপ্লব কুমার যেন তেন কোনো নরম প্রকৃতির মানুষ না। তার সম্পর্কে রাফসান মির্জা জ্ঞাত। তবুও সে কি ভেবে ছিলো তার ড্রা’গ এর ট্রাক পুলিশ এর কাছে ধরা পড়বে?আর বিপ্লব কুমার তার প্রতি এতটা রাগান্বিত হবে?

বেশ কিছুক্ষণ নিরবতার মধ্যে সময় পার করে রাফসান মির্জা তার পাশের দুই জন বডি গার্ড কে বাইরে চলে যেতে বললো। তারা ও কোনো প্রকার বাক্য ব্যয় না করে বেরিয়ে গেলো। গার্ড রা বাইরে যাওয়ার সাথে সাথে বিপ্লব কুমার তার কোমড় এ প্যান্ট এর সাথে গুঁজে থাকা গু’লি টা বের করেই হুট করে রাফসান মির্জা এর হাটু তে একটা গু’লি করে।রাফসান মির্জা আত্ম চি’ৎকার দিয়ে উঠে ব্য’থায়।কুঁকিয়ে উঠে অস্পষ্ট স্বর বের হয় য-ন্ত্র-নায়।সেই দিকে তাকিয়ে বিপ্লব কুমার ভ্রুক্ষেপ ও করে না।সে তার পাওনা মিটিয়ে নিতে এখন যা যা করা দরকার তাই তাই করবে।

রাফসান মির্জা বিপ্লব কুমার এর দিকে তাকিয়ে ব্য’থায় কাতর কণ্ঠে বলে,

—আপনি এমন করলেন কেন?মিষ্টার বিপ্লব কুমার?

বিপ্লব কুমার পৈ’শাচিক হাসি দিয়ে বলে,

—কি ভেবেছেন? আমার টাকা না দিয়ে হাওয়া হবেন?আমার থেকে পালিয়ে বেড়ানো এত সহজ?আমার টাকা খেয়ে এখন আর আমার পাওনা টা আমাকে দিচ্ছেন না।এত সহজ আমাকে ঠকিয়ে পার পাওয়া?

—বিশ্বাস করুন আমি আপনার টাকা দিয়ে দিবো।

বিপ্লব কুমার রে’গে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,

—কবে দিবি?এই পর্যন্ত হাজার বার এই কথা বলে তুই আমাকে বুঝ দিয়েছিস। আর নাহ।এবার যা হবার এখানে হবে।

বিপ্লব কুমার এর কথা শুনে রাফসান মির্জা অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,

—এখানে হবে মানে?কি হবে?

—-যতদিন না তুই আমার টাকা মিটিয়ে দিচ্ছিস। তত দিন পর্যন্ত তোকে আমার কাছেই বন্দি থাকতে হবে।

—কিন্তু আমি এখানে থাকলে আপনাকে টাকা পরিশোধ করবো কি ভাবে?

—তোর লোক দের কে ফোনে বলবি টাকা পাঠাতে।এত বোকা ভেবেছিস আমাকে?তোকা আমি এখান থেকে ছেড়ে দিবো আর তুই গিয়ে নিজেকে গোপন করবি আমার টাকা না দিয়ে?তা আর হচ্ছে না।

—কিন্তু বর্তমানে তো কোনো টাকা নেই আমার একাউন্টে।

—ঠিক আছে।যেদিন টাকা পরিশোধ করতে পারবি। সে দিন নিজের দেশে ফিরে যাস।তত দিন পর্যন্ত আমার কাছে বন্দি থাক।

বলেই বিপ্লব কুমার ডেরা থেকে বের হয়ে যায়।কয়েক জন গার্ড কে বলে যায় কড়া পাহারা দিতে।যাতে রাফসান মির্জা পালিয়ে না যেতে পারে।

ডেরার ভিতরে রাফসান মির্জা ব্য’থায় কুঁকিয়ে উঠছে বার বার।কেউ আসছে ও না দেখবার জন্য।হাটু থেকে র’ক্ত ঝরে পড়ছে ফ্লোরে। মাথায় চিন্তা এসে ভর করছে রাফসান মির্জার। কি ভাবে বিপ্লব কুমার এর টাকা পরিশোধ করবে?তার অফিস এবং অনৈতিক যে কাজ গুলোর সাথে জড়িত ছিলো সব কিছুর করুণ অবস্থা হয়ে যাচ্ছে।লাভের চেয়ে লস এর মুখ দেখছে বেশি।মুহূর্তে- ই ক্রোধ এসে নির্ভর করে তার সারা অঙ্গে এবং মুখশ্রী তে।”শাহরিয়ার প্রণয় তোর জন্য আজ আমার এই অবস্থা। আমার এই করুণ পরিস্থিতির জন্য তুই দায়ী।তোকে কি আমি ছেড়ে দিবো নাকি?খুব খারাপ হবে।শুধু একবার এখান থেকে বের হই”। বলেই চি’ৎকার দিয়ে উঠে রাফসান মির্জা।

🌸🌸

বিষন্ন তায় ঘেরা মুখ নিয়ে নিজের রুমে শয়নে আছে প্রান্তিক। তার চোখে মুখে পড়েছে বিষন্নতার ছায়া।কিচ্ছু ভালো লাগছে না।ইচ্ছে করে জগৎ সংসার ছেড়ে অন্য গ্রহে চলে যেতে। এর মধ্যে প্রণয় রুমে আসে।প্রণয় রুমে এসেই প্রান্তিক কে শুয়ে থাকতে দেখে বলে,

—এই সন্ধ্যা লগ্নে তুই এমন শুয়ে আছিস কেন?

প্রান্তিক বিরক্ত হয় প্রণয় এর কথায়।ভ্রকুটি কুঁচকে ফেলে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তো কি করার কথা ছিলো? গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরার কথা ছিলো নাকি?তাহলে একটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজে দেও।তখন আর সন্ধ্যা লগ্নে শুয়ে থাকবো না।

—তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?

—আমার মতো সিঙ্গেল মানুষ দের কথা এখন এমনি থাকবে।

প্রণয় ভ্রুলতা কুঁচকে ফেলে প্রান্তিক এর এমন বেখাপ্পা কথা শুনে।হলো কি ওর?প্রণয় কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলে,

—ইশির সাথে ঝ’গড়া হয়েছে তোর?

প্রান্তিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে?

—নাহ।আর কিসের ইশি?কোন ইশি?আমি কোনো ইশি কে চিনি না।

প্রণয় অবাক হয় প্রান্তিক এর কথা শুনে।কি বলে ও?কিছু দিন আগে বললো ইশি কে পছন্দ করে।আব্বু আম্মু কে যাতে সে রাজি করায়।প্রণয় ও আর না করেনি।বলেছে আব্বু আম্মুকে সে বলবে।তাহলে আজ হঠাৎ প্রান্তিক এর এমন আচরণ প্রণয় এর মাথায় ঢুকছে না।প্রণয় হাক ছেড়ে জান্নাত কে ডাক দেয়।

—জান্নাত! একবার প্রান্তিক এর ঘরে আসুন তো।

প্রণয় এর কণ্ঠস্বর পেয়ে জান্নাত গায়ে মাথায় ভালো ভাবে উড়না দিয়ে ডেকে প্রান্তিক এর ঘরে আসে।জান্নাত প্রান্তিক এর ঘরে এসে দেখে প্রান্তিক মুখ কালো করে বসে আছে।তার পাশেই প্রণয় ওর কাঁধে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কথা বলছে।জান্নাত রুমের ভিতর ঢুকতেই প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—জান্নাত, ইশির সাথে কি প্রান্তিক এর ঝ’গড়া হয়েছে?আপনি জানেন কি কিছু?

জান্নাত একবার প্রান্তিক এর দিকে তাকায়।আবার প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ইশি কে আজকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে।

জান্নাত এর কথা শুনে এতক্ষণে প্রণয় বুঝতে পারলো প্রান্তিক এর মন খারাপ এর কারণ। প্রণয় হেসে দিয়ে প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি?এটা তো জাস্ট দেখতে এসেছে বিয়ে তো হয়ে যায়নি।

—ভাইয়া পাত্র পক্ষরা ওকে পছন্দ করে গিয়েছে।ছেলে কানাডা থাকে।এক দুই দিনের মধ্যে ছেলে আবার চলে যাবে।চার মাস পরে আবার দেশে এসে ইশি কে বিয়ে করে নিয়ে যাবে বলেছে।

প্রান্তিক এর কথা শুনে প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থাকে।কিছু একটা ভেবে বলে,

—তোদের ফাইনাল এক্সাম কবে?

—দুই মাস পরেই।

—চিন্তা করিস না।ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই ইশি তোর বউ হয়ে এই ঘরে আসবে ইনশাল্লাহ। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।চিন্তা করিস না।( জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে) জান্নাত আমার সাথে আসুন।

বলেই প্রণয় বের হয়ে যায় প্রান্তিক এর রুম থেকে।বাবা মায়ের রুম এর সামনে গিয়ে দরজায় নক করে,

—আম্মু আসবো?

রোকসানা বসে বই পড়ছিলেন। শাহরিয়ার পাবেল নেই বাসায় এখন।প্রণয় এর কথা শুনতে পেয়ে রোকসানা তাকে বলে,

—আয় বাবা।

জান্নাত, প্রণয় দুই জনেই রুমে গিয়ে ঢুকে।রোকসানা ছেলে, ছেলের বউ এর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।দুই জন কেই বসতে বলে।জান্নাত, প্রণয় রোকসানার দুই পাশে বসে।রোকসানা হেসে দিয়ে প্রণয় কে বলে,

—আজ যে তাড়াতাড়ি বাসায় আসলি আব্বু?

— কাজ শেষ করে চলে আসছি।তুমি ওষুধ খাও তো ঠিক মতো?

—হ্যাঁ আব্বু। জান্নাত প্রতিদিন নিজে এসে ওষুধ দিয়ে যায়।

প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।জান্নাত তাদের মা ছেলের কথা শুনছে। নেতা সাহেব সব দিয়ে পারফেক্ট।নিজের দেশের নিজের শহরের মানুষ এর খেয়াল রাখা,
বউ এর মি. ভালোবাসা হয়ে সর্বক্ষণ ভালোবাসায় ঘিরে রাখা,মা- বাবার বড় ছেলে হিসেবে তাদের দিকে খেয়াল রাখা।ছোট ভাই এর মন খারাপ এর সময় বন্ধুর মতো সঙ্গী হয়ে অভ’য় এবং ভরসা দিয়ে পাশে থাকা।

প্রণয় জান্নাত কে নিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে।দরজা বন্ধ করেই জান্নাত এর কাছে এসে পিছন থেকে জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত এর মাথার উড়না ফেলে দিয়ে খোলা চুলে মুখ গুঁজে। সেই নেশাক্ত স্মেল নিতে থাকে নাসারন্ধ্র দিয়ে।জান্নাত প্রণয়ের হাত দুটোর উপর নিজের হাত রাখে।প্রণয় হাত জান্নাত এর পেটের উপরেই বিরাজ করছে।জান্নাত ফিসফিস করে বলে,

—এভাবে জড়িয়ে রেখেছেন কেন মি. ভালোবাসা?

—আপনার আরেকটু ভালোবাসা নিতে।

—তাই?কিন্তু আমার তো এখন কাজ আছে।

প্রণয় জান্নাত কে ছেড়ে দিয়ে হাত ধরে নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসায়। এর পর নিজেই জান্নাত এর কোলে শুয়ে পড়ে জান্নাত কে বলে,

—কোনো কাজ করতে হবে না।স্বামী ঘরে বসে থাকবে একা আর বউ গিয়ে কাজ করবে?এটা হয় নাকি?উঁহু হয় নট।কোথাও যাওয়া যাবে না।মাথা ব্য’থা করছে যদি একটু আদর করে সারিয়ে দিতেন খুব উপকৃত হতাম।

প্রণয় এর কথায় জান্নাত হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,

—কেমন উপকার হতো আপনার?

—যান,জান্নাত! আপনি না দিন দিন দুষ্টু হয়ে যাচ্ছেন। এসব কি বলা যায় নাকি?

বলেই প্রণয় জান্নাত কে চোখ টিপ মে’রে হেসে দেয়।জান্নাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রণয় এর দিকে।প্রণয় কে সে কি এমন জিজ্ঞেস করলো যা বলা যায় না সেটাই বুঝে আসছে না জান্নাত এর।

প্রণয় ডান কাত হয়ে দুই হাতে জান্নাত এর কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকে।জান্নাত তাকায় প্রণয় এর দিকে।প্রণয় এর মাথার চুলে নিজের একটা হাত ডুবিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে চুল টানতে থাকে।আরেক টা হাত প্রণয় এর মুখের উপর।মিনিট খানেক গড়াতেই প্রণয় এর ভারী নিশ্বাস এর শব্দ জান্নাত এর কর্ণপাত হয়।তার মানে মি. ভালোবাসা ঘুমিয়ে গেছে।

জান্নাত অতি সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে প্রণয় কে দেখতে থাকে।আর এই দেখার মাঝেই জান্নাত এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে।নিজের সুপ্ত বাসনা কে প্রকাশ করে প্রণয় এর গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দেয়।প্রণয় তো ঘুমেই সে তো আর বুঝতে পারবে না ভেবেই জান্নাত খুশি হয়।কিন্তু জান্নাত এর খুশিতে এক বালতি না থুক্কু বালতি না এক পুকুরের পানি ঢেলে দিয়ে প্রণয় জান্নাত কে জড়িয়ে রেখেই বলে উঠে,

—‘‘ঘুমে থাকা অবস্থায় আমাকে চুমু দিলে আমি লজ্জা পায় বেশি জান্নাত। আপনার উচিত জাগ্রত অবস্থায় আমাকে বেশি বেশি চুমু দিয়ে লজ্জা ভে’ঙে দেওয়া’’।

প্রণয় এর কথা শুনে জান্নাত কি বলবে সে নিজেই বুঝতে পারছে না।একে তো ধরা পড়ে গেছে,আবার ধরা পড়ার পর প্রণয় এর এমন কথা শুনে তার রিয়াকশন বাটন হ্যাং করেছে বোধহয়। জান্নাত কে অবাক এর সীমান্ত চূড়ায় নিয়ে বিস্ফোরিত করার জন্য প্রণয় আরেকটা কাজ করে ফেলে।শোয়া থেকে উঠেই হুট করেই টপাটপ ভাবে জান্নাত এর ওষ্ঠদ্বয় এ আলতো নিজের অধর ছুঁয়ে আদর দেয়।এখানেই শেষ নই।আবার জান্নাত এর নাকের সেই লালছে কালো তিল টা তে সুক্ষ্ম ভাবে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে আবার জান্নাত এর কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে।আর মুখে বলে,

—‘‘আপনার এই লালছে কালো তিল টার জন্য আমি কন্ট্রোল লেস হয়ে যায়।এর জন্য এই তিলটা কে আর কত শাস্তি পেতে হয় আল্লাহ জানে’’।

জান্নাত এখনো স্তব্ধ হয়ে এক হাত নাকে আরেক হাত ঠোঁটে দিয়ে বসে আছে।যদি ও এটা প্রণয় এর প্রথম স্পর্শ না।তবুও এই স্পর্শ একটু বেশিই মোহনীয় ছিলো।প্রণয় একবার মাথা উঁচু করে জান্নাত এর এই অবস্থা থেকে মুচকি হেসে আবার আগের ন্যায় শুয়ে পড়ে।

🌸🌸

সময় প্রবাহমান নদীর নেয়।কোনো মতেই স্থির নয়।তবে আপনি যদি আপনার সময় কে স্থির করতে চান তাহলে ঘড়ির ব্যাটারি খুলে রেখে দিন।আপনার সময় স্থির হবে।কিন্তু বাস্তবতার সময় চলমান থাকবে।

বলতে না বলতেই দুই মাস পার হয়ে গেছে।প্রকৃতি তে যদিও এখন ঋতু হিসেবে হেমন্ত। তবে সেটাকে মানুষ গণনার বাইরে রেখে বলছে এখন শীত।কারণ শীত এসে ধরা দিচ্ছে ধীর গতি তে।জান্নাত,প্রান্তিক,ইশির অনার্স ফাস্ট ইয়ার ফাইনাল শুরু হয়েছে কিছু দিন আগেই।আজই শেষ পরীক্ষা তাদের।

প্রান্তিক ইশির সাথে রা’গ করে এখনো ঠিক মতো কথা বলছে না।ইশি জানে প্রান্তিক তাকে পছন্দ করে।কিন্তু প্রান্তিক প্রকাশ না করা টাই ইশির বিরক্ত লাগছে।জেদ ছেপে রেখেছে নিজের মধ্যে। তাই মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে প্রান্তিক এর সামনে বলবে,”আর মাত্র কিছুদিন পরেই বিয়ে করে আমি শাই…করে লন্ডন চলে যাবো “।ইশির এসব কথা শুনলে প্রান্তিক রা’গ করে উঠে যায় সেখান থেকে।

ইশির বাবা আজকে নিজে এসেছে ইশি কে ভার্সিটি থেকে নিতে।জান্নাত, ইশি,প্রান্তিক তিনজনে এসে গেইট এর বাইরে দাড়াঁ তেই ইশির বাবা রিক্সা থেকে নেমে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। জান্নাত, প্রান্তিক দুই জনেই সালাম দেয়।প্রান্তিক হেসে দিয়ে বলে,

—ভালো আছেন আঙ্কেল?

ইশির বাবা হেসে দিয়ে প্রান্তিক এর মাথায় হাত রেখে বলে,

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?

—জি আঙ্কেল ভালো। আন্টি ভালো আছে?

—হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ। একদিন বাসায় আসো তোমরা।(ইশির দিকে তাকিয়ে) কিরে ইশি মা,ওদের তো মাঝে মাঝে বাসায় নিয়ে যেতে পারিস।নিস না কেন?

ইশি প্রতি উত্তরে দিয়ে বলে,

—আব্বু ওরা তো আসে না আমি বললে ও।

প্রান্তিক বিড়বিড় করে বলে,

—একবার শুধু বিয়ে টা করে নিই।তখন দরকার হলে ঘর জামাই হয়ে থাকবো।

জান্নাত প্রান্তিক এর পাশে থাকায় কথা টা শুনতে পেয়ে ছিলো। তাই প্রান্তিক এর আরেকটু পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফাস করে বলে,

—বাসায় যেয়ে তোর ভাইয়া কে জানাতে হবে এটা।

প্রণয় থতমত খেয়ে করুণ সুরে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—দোস্ত প্লিজ ভাইয়া কে এটা বলিছ না।ভাইয়া জানলে বিয়ে তো করাবেই না।উল্টা বিয়ের স্বপ্ন দেখতে ও নিষেধ করে দিবে।

প্রান্তিক এর কথা শুনে জান্নাত ফিক করে হেসে দেয়।ইশির বাবা জান্নাত, প্রণয় কে বলে,

—আজ চলো ইশির সাথে বাসায়।

প্রান্তিক না জানিয়ে বলে,

—নাহ আঙ্কেল। অন্য একদিন যাবো। আমাকে একটু লাইব্রেরী তে যেতে হবে।আজ সম্ভব না।

প্রান্তিক এর সাথে তাল মিলিয়ে জান্নাত বলে,

—আমাকে ও বাসায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি আঙ্কেল। আজ সম্ভব হবে না।

—বেশ তাহলে সময় করে এসো একদিন।

—জি।

ইশির বাবা ইশিকে নিয়ে রিক্সায় উঠে চলে যায়।প্রান্তিক জান্নাত কে একটা রিক্সায় তুলে দিয়ে সে তার কাজে যায়।জান্নাত ও বাসার দিকে চলে যায়।

এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দূর থেকে সব কিছু দেখছিলো মেহেদি আর প্রদীপ। হঠাৎ মেহেদি এর ফোন আসে।হকচকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে দেখে রাফসান মির্জা ফোন করেছে।মেহেদি নিশ্বাস ফেলে বলে,

—স্যার দুই মাস শেষ হতে চললো অথচ আপনি এখনো আসছেন না কেন?ওখানে কি বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্ছা পালছেন?

মেহেদি এর কথা শুনে রাফসান মির্জার ইচ্ছা করছে ঠাটিয়ে দুই টা থা’প্পড় মে’রে দিতে।তবুও রা’গ নিয়ে বলে,

—ওই শাহরিয়ার প্রণয় আর ওর বউ এর কি খবর?

—স্যার তারা দুই জনে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।

—গর্দভ। আমি কি তাদের ভালোর খবর জিজ্ঞেস করেছি?ওরা দুই জনে কি করছে তা জানাতে বলেছি।

—স্যার তারা দুই জনে রুমের ভিতর কি করে তা তো আমি দেখিনি যে আপনাকে বলবো। আর আপনি এসব শুনে কি করবেন?ছিহঃ!! কি নিচু মাইন্ড আপনার স্যার।

রাফসান মির্জার ইচ্ছা করছে মেহদির মাথাটা পাটিয়ে দিতে।রা’গ টা কিছু সংবরণ করে বলে,

—প্রদীপ কে ফোন দে তুই।

মেহদি প্রদীপ এর হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়। প্রদীপ বলে,

—জি স্যার বলুন।কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?

—তুই আমকে সাহায্য করবি মানে?আমি কি ভিখারি নাকি?

প্রদীপ বিড়বিড় করে বলে,

—ভিখারি ও আপনার চেয়ে বড়লোক এখন।

রাফসান কিছু শুনতে না পেয়ে বললো,

—কি বললি?

—কিছু না।বলুন স্যার কি বলবেন?

—শাহরিয়ার প্রণয় এর খবর কি?

—স্যার তিনি নিজের মতোই নিজের কাজ করে চলছেন।

—আর ওর বউ?

—স্যার উনার বউ কে একটু আগে দেখলাম রিক্সায় করে বাড়ি যাচ্ছে।

—ওর বউ কে ধরে এনে শেষ করে দে।এরপর শাহরিয়ার প্রণয় কে এমনিই শেষ করে ফেলা যাবে।আমি বলতে পারছি না আমি এখান থেকে কবে আসবো। আমার অফিস আর আউট কাজ গুলোর কি খবর?

—স্যার সব কিছুই দিন দিন ডাউন হয়ে যাচ্ছে।

—এই শাহরিয়ার প্রণয় এর জন্য আমার এই অবস্থা। ওই শাহরিয়ার প্রণয় কে এত সহজে ছাড়বো না।আমার অবর্তমানে এখন সব কাজ তোরা কর।যা আমার করার কথা ছিলো।

—আচ্ছা স্যার।

বলেই প্রদীপ ফোন কেটে মেহেদির হাতে তার ফোন ধরিয়ে দেয়।মেহেদি উৎসুক দৃষ্টি ফেলে বলে,

—স্যার কি বলেছে?

—কবে আসবে ঠিক না।তবে শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে ধরে এনে শেষ করে দিতে বলছে।

—আচ্ছা।তাহলে তো প্ল্যান করতে হবে একটা।

—হুম চল।

বলেই প্রদীপ আর মেহেদি সেই জায়গা থেকে চলে যায়।তিন মাস হতে আর দুই দিন বাকি।অথচ রাফসান মির্জা এখনো ছাড়া পায় নি বিপ্লব কুমার এর কাছ থেকে।তাকে ভারত এর কলকাতায় বিপ্লব কুমার আটকে রেখেছে।আর এই দিকে বাংলাদেশে তার অফিস, আউট কাজ গুলোর করুণ দশা।কবে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে পারবে কবে ছাড়া পাবে বিপ্লব কুমার এর কাছ থেকে তা এখনো অজানাতেই আছেই।জমে যাচ্ছে শাহরিয়ার প্রণয় এর জন্য পাহাড় সম ক্রোধ। ইচ্ছে তো করে সেই ক্রোধানলে পু’ড়িয়ে মা’রতে শাহরিয়ার প্রণয় কে।একবার শুধু ছাড়া পেয়ে যাক তারপরেই শেষ।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🌸

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩৬
#ফাতেমা_জান্নাত

—“”” সেই দিন পনেরো-ই ডিসেম্বর ছিলো। আমি টিউশন করিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি।এমন সময় জামিল আমাকে ফোন করে বলে ওর সাথে দেখা করতে।ও আসছে।জামিল আর সাত দিন হয়েছিলো রিলেশনে জড়িয়ে ছিলাম। আমাদের রিলেশন এর কথা কেউ জানতো না।এমনি আমার মা ও জানতো না।তো সেই দিন আমি তখনি বাড়িতে না গিয়ে সেখানে দাঁড়ায় জামিল এর জন্য।এলাকা তা নির্জীব ছিলো। সন্ধ্যা সাতটা কিংবা আট টায় সব দোকান পাট সাধারণত বন্ধ হয়ে যায়।সেখানে একটা দোকান মতো বড়ো বিল্ডিং আছে। তবে আমি কখনো সেই দোকান টা খোলা দেখি নি।সবসময় দোকান টার বাইরে থেকে তালাবন্ধ থাকতো। হঠাৎ সেই দিন সেই দোকান এর ভিতর থেকে আমি কিছু মানুষ এর কথা শুনতে পায়।আমি সেই দিকে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন লোক কিছু কিছু মেয়ে কে হাত বেধে একটা ট্রাকে উঠাচ্ছে।এবং আরেকটা ট্রাকে কিছু লোক ড্রা’গ এর প্যাকেট উঠাচ্ছে।আমি আড়ালে থেকেই সব কিছু দেখছিলাম।হঠাৎ আমার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই আমি চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখি জামিল। আমি জামিল কে কথা বলতে নিষেধ করে সামনে দেখতে বলি।জামিল ও সামনে তাকায়। জামিল প্রমাণ রাখার জন্য নিজের ফোনটা বের করে ভিডিও করতে শুরু করে।লোক গুলো একে একে সব গুলো মেয়ে কে গাড়িতে উঠায়।গাড়ির ড্রাইভার গাড়িতে উঠে কিছু দূর গাড়ি চালিয়ে যেতেই হুত করে গাড়ি থামায় আবার।কিছু লোক সহ দৌড়ে আসে আমাদের দুই জনের সামনে।আকস্মিক এরকম হওয়ায় আমরা দুই জনেই বিচলিত হয়ে যায়।তখন সেখানে সবুজ পাঞ্জাবী আরো একটা লোক এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়। জামিল কে জিজ্ঞেস করে,

—কি করছিলি এখানে?

জামিল নির্লিপ্ত ভাবে ভয় না পেয়ে বলে,

—আপনাদের চো’রা কাজ গুলো দেখছিলাম। আর ভাবছি এর বিপক্ষে কিভাবে স্টেপ নেওয়া যায়।

—ও তাই নাকি?(আমার দিকে তাকিয়ে) তা মেয়েটা কেরে?তোর বউ নাকি গার্লফ্রেন্ড? বেশ সুন্দর তো।একে পাচার করলে ভালোই লাভ হবে।

বলে লোকটা হেসে উঠে।তার সাথের মানুষ গুলো হাসতে থাকে।জামিল রা’গ দেখিয়ে গর্জন করে বলে উঠে,

—একদম ওকে নিয়ে কিছু বলবি না।তাহলে ভালো হবে না।

লোকটা তখন হেসে উঠে বলে,

—তোকে কেন যেন মনে হচ্ছে তুই শাহরিয়ার প্রণয় এর চামচা। তা ফোনে কি ভিডিও করছিলি? আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ? আর তোর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে কিছু না বললে ও ছুতে তো পারবো তাই না?

কথা বলেই লোকটা জামিল কে কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে মা’রতে মা’রতে সেই দোকান এর ভিতরে নিয়ে যায়।দুটো লোক আমাকে ও টেনে নিয়ে যেতে থাকে।হাজার চি’ৎকার করে ও কোনো লাভ হয়নি।কারণ কোনো মানুষ -ই ছিলো না সাহায্য করার মতো।দোকান এর ভিতরে নিয়ে গিয়ে জামিল কে ওরা হাত পা বেধে মা’রে। জামিল এর ফোন সবুজ পাঞ্জাবি পরা লোকটা হাতে নিয়ে ভিডিও টা দেখে বলে,

—“বাহ্! শাহরিয়ার প্রণয় এর লোক তো খুব চালু।রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করছে।সাহস অনেকদূর। কিন্তু আজ সব সাহস তোর বের করবো আমি।বলেই জামিল কে আবার মা’রে।”

জামিল যখন মা’র খেয়ে একেবারে নেতিয়ে পড়েছিলো। তখন ওরা কয়েকজন জোর করে আমাকে রেপ করে।রেপ করার আগে আমার ঘাড়ে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে ছিলো। যার ফলে আমি চাইলে ও আর জোর জবরদস্তি করতে পারতাম না।ওরা আমাকে ড্রা’গ দিয়েছিলো। আর রেপ করার বাড়ির পাশে এনে ফেলে যায়।আমাকে ড্রা’গ টা তখনো পুরোপুরি ইফেক্ট না করার ফলে কিছুটা বুঝতে পারতাম সব।আমাকে ফেলে গিয়েই তারা জামিল কে আবার মা’রে। আমার জীবন টা কে ওই রাফসান মির্জা শেষ করে দিয়েছে।বেচেঁ থেকে ও ম’রার মতো হয়ে গিয়েছে আমার জীবন। কেন বাঁচালেন আমাকে ভাইয়া? আমার মাকে ও শেষ করে দিলো ওরা।আমার তো আর কেউই নেই।তাহলে কেন আমাকে রাখলেন ভাইয়া? আমার যে এই জীবন নিয়ে বাচঁতে ইচ্ছা করছে না।””

বলেই হু হু কেঁদে দেয় লাবণ্য।দীর্ঘতম দিন গুলোর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে লাবণ্য আজ কোমা থেকে ফিরে এসেছে।সকালে ডাক্টার প্রণয় কে ফোন করে খবর টা দেওয়ার পরেই প্রণয় তখনি জান্নাত কে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে।সাথে রিফাত, সজীব,সুজন কে ও আসতে বলে।হসপিটালে এসেই লাবণ্য কে নিজেদের পরিচয় দেয়।লামিয়া সুলতানার মৃ’ত্যুর খবর জানায়।এর পরেই লাবণ্য কে জিজ্ঞেস সেই দিন রাতে কি হয়েছিলো।আর এতক্ষণ লাবণ্য সেই গুলোই খুলে বলছিলো। এবং সজীব সেগুলো ভিডিও করে রেখেছে।

লাবণ্য এখনো কান্না করছে।প্রণয় জান্নাত কে ইশারা করতেই জান্নাত গিয়ে লাবণ্য কে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে।লাবণ্য কে শান্ত হতে বলে।এর মধ্যে সুজন চোখের পানি মুছতে মুছতে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।তার ইচ্ছা করছে রাফসান মির্জাকে কু’পিয়ে হ’ত্যা করতে।লাবণ্য এর কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না।কেন এমন হচ্ছে তা তার অজানা।

🌸🌸

হসপিটালে ডাক্তার এর সামনে বসে আছে জান্নাত আর প্রণয়। অপেক্ষা করছে জান্নাত কে এতক্ষণ টেস্ট করার রিপোর্ট গুলোর জন্য।কিছু দিন থেকেই জান্নাত অসুস্থ। প্রণয় কে বলেনি। আজকে সকাল মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এমন সময় প্রণয় এসে ধরে ফেলে।চিন্তিত হয়ে সাথে সাথেই প্রণয় জান্নাত কে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে।

ডাক্তার মরিয়ম রিপোর্ট গুলো দেখে প্রণয় আর জান্নাত এর দিকে তাকায়।প্রণয় দুরুদুরু মন নিয়ে ডাক্তার মরিয়ম কে জিজ্ঞেস করে,

—আন্টি জান্নাত এর বড় কোনো সমস্যা হয়নি তো?আমারি দোষ।আমি গতকাল -ই খেয়াল করেছি উনার খাবার না খাওয়া টা ঠিক মতো।খাবার এর প্রতি অরুচি টা।আমি ভেবেছি হয়তো এমনিতেই। উনি ও কিছু বলেনি তাই আমি ভেবেছিলাম….

প্রণয় কে কথার মধ্যস্থে থামিয়ে দিলেন ডা. মরিয়ম।প্রণয় এর দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বলেন,

—আপনার স্ত্রী এক মাসের প্রেগন্যান্ট। আপনারা দুই জনে বাবা-মা হতে চলছেন।

ডাক্তার মরিয়ম এর কথা শুনে প্রণয় যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। এরকম একটা সু সংবাদ যেন তার কাছে মরুর বুকে এক ফোঁটা বৃষ্টির পানির মতো।প্রণয় ডাক্তার মরিয়ম কে বলে রিপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে এসে জান্নাত কে নিয়ে গাড়িতে উঠে।প্রণয় এখনো চুপ করে আছে।জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে প্রণয় এর হাতের উপর হাত রেখে বলে,

—মি. ভালোবাসা আপনি কি খুশি হন নি আমি কনসিভ করাতে?

জান্নাত এর কথা শেষ হতেই প্রণয় হুত করে তড়িৎ বেগে জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে।নিকাব এর উপর দিয়েই জান্নাত এর কপালে গভীর চুম্বন আঁকে।আবার জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে বলে,

—আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি জান্নাত।একটা ছোট্ট প্রাণ আসবে আমাদের পরিবারে। এতে আমি খুশি হবো না কে?আমি অনেক খুশি।রাজনীতি এর সমস্যা গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে টেনশনে থাকতে হয়।আজ চারটা মাস রাফসান মির্জা ভারতে আটকে আছে।এত আমি যতটা না খুশি হয়েছি। তার চাইতে ও বেশি আমার টেনশন হচ্ছে।কখন হুট করে দেশে এসে কি ক্ষতি করে বসে।আর আমার এত এত চিন্তার মাঝে যে আল্লাহ আমাদের কে যে বাবা মা হওয়ার খুশির সংবাদ টা দিয়েছেন তাতে আমার হাজার শুকরিয়া আদায় করলেও যেন কম হয়ে যাবে।

বলেই জান্নাত কে আবার ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে গাড়ি স্টাট দিয়ে বাসার পথে রওনা হয়।
পুরোটা পথ প্রণয় এক হাতে গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরিয়েছে। অন্য হাত দিয়ে জান্নাত এর এক হাত জড়িয়ে রেখে ছিলো। জান্নাত শুধু তাকিয়ে প্রণয় কে দেখেছে।মানুষ টার পা’গলামি গুলো শুধু দেখছিলো আর প্রণয় এর আড়ালে হাসছিলো।

বাসায় এসে খুশির সংবাদ টা দিতেই যেন সবার মাঝে উপছে পড়া আনন্দে এসে ভর করেছে।জুনায়েদ আজমী, রাহেলা, জুরাইন, আহ্লাদী সবাই প্রণয় দের বাসায় চলে আসে।জুনায়েদ আজমী আর রাহেলা জান্নাত, প্রণয় এর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে দোয়া করে।

জান্নাত প্রণয় এর রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।প্রণয় বাসায় নেই।একটু আগেই বেরিয়ে গেছে।লাবণ্য এর বলা জামিল এর করা সেই ভিডিও এর খোঁজ নিতে।যদি কোনো ভাবে পাওয়া যায় আরকি ভিডিও টা।তাহলে সমস্ত প্রমাণ এক সাথ করে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে কেস ফাইল করবে।

জান্নাত এর কোলের উপর পার্শিয়া জেনিথ দুই জনে বসে আছে।জান্নাত দুই জনের সাথে বসে কথা বলছে।এমন সময় রুমের দরজায় প্রান্তিক আর জুরাইন এসে নক করে।জান্নাত আসতে বলতেই দুই জনে রুমে এসে প্রান্তিক সোফায় বসে।জুরাইন জান্নাত এর সামনে বিছানায় বসে।জান্নাত প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ইশির কানাডার জামাই এর খবর?

জান্নাতের কথায় প্রান্তিক তেঁতে উঠে বলে,

—এখনো জামাই হয়ছে?তুই যে জামাই বলছ?

—আচ্ছা ঠিক আছে বল।পাত্রের কি খবর?চারমাস পরে তো তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।

—ছেলের ওখানে কিছু সমস্যা হয়েছে নাকি কাজে।তাই আরো এক দুই মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

—তাহলে তো ভালোই হলো।এটাই সু্যোগ। আচ্ছা আমি তোর ভাইয়া কে বলে সব কিছু করার প্ল্যান করছি।

—আচ্ছা। দেখিস কিন্তু দোস্ত। ইশির যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না হয়ে যায়।

জান্নাত হেসে দিয়ে প্রান্তিক এর দিক থেকে জুরাইন এর দিকে তাকায়।জুরাইন পার্শিয়া জেনিথ এর সাথে খেলছিলো। জান্নাত জুরাইন কে বলে,

—কিরে জুরাইন। পাখির সাথে কথা হয় এখন আর?

জুরাইন জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে,

—আমি ওই সব ছোট খাটো বাচ্চা দের সাথে কথা বলি না আপু।আমি ভালো হয়ে গেছি।বন্ধু ও বদলিয়েছি।

—তাই?আমার ভাইটা বুঝি বড় হয়ে গেছে?

—হ্যাঁ আপু।

বলেই জুরাইন হেসে দেয়।জুরাইন এর সাথে প্রান্তিক আর জান্নাত ও হেসে দেয়।অবশেষে জুরাইন এর মাথা থেকে যে পাখির ভূত তাড়াতে পারলো এতেই শুকরিয়া।

🌸🌸

—ওই শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে মে’রেছিস?

ফোনের অপর পাশ থেকে রাফসান মির্জার কথা শুনে মেহেদি বলে,

—না স্যার। মা’রার মতো কোনো সু্যোগ পাই না।শাহরিয়ার প্রণয় সারাক্ষণ বউ এর পাশে পাশে থাকে।স্যার কি সুন্দর মানিয়েছে তাদের।পারফেক্ট কাপল।

—তোর সাথে কথা বলা টাই আমার সব চেয়ে বড় ভুল।আমার তো মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় তুই আমার লোক নাকি শাহরিয়ার প্রণয় এর লোক।প্রদীপ কে ফোন দে তুই।

—স্যার আমার ফোনে ফোন দিয়ে প্রদীপ এর এর সাথে কথা বলেন কেন?প্রদীপ এর ফোনে ফোন দিয়েই তো তার সাথে কথা বলতে পারেন।

—থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো। প্রদীপ কে ফোন দে।

মেহেদি রাফসান মির্জার চড়া কথা শুনে প্রদীপ কে ফোন দেয়।প্রদীপ ফোন নিয়ে বলে,

—বলুন স্যার।

—শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে এখনো মা’রতে পারিসনি কেন?

—স্যার তেমন কোনো সু্যোগ পাইনি।শাহরিয়ার প্রণয় সব সময় বউয়ের সাথে থাকে বের হলে মাঝে মাঝে।

—তাহলে দুই জন কে মে’রে ফেল।

—স্যার আপনি কবে আসবেন?

—বলতে পারছি না।এই কু***বাচ্চা বিপ্লব কুমার এর টাকা না দিলে বের হতে দিবে না।

—টর্চার করে?

—নাহ। তা করে না।শুধু আটকিয়া রেখেছে।

—আচ্ছা স্যার আমি দেখি কি করা যায়।

বলেই প্রদীপ ফোন কে’টে দেয়।ফোন কে’টে দিয়েই মেহেদির দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দেয়।যে হাসির মানে মেহেদি বুঝতে পারেনি।মেহেদি ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রদীপ এর দিকে।কিন্তু প্রদীপ কিছুই বলে না।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে