প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
1808

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব-৩১
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

রাফসান মির্জা আর প্রণয় মুখোমুখি হয়ে বসে আছে।স্থান হিসেবে আছে প্রণয় এর অফিস। আজ হুট করেই রাফসান মির্জা প্রণয় এর অফিসে আসে।প্রণয় এতে কিঞ্চিত পরিমাণ অবাক হলে ও তা মুখশ্রী তে প্রকাশ করে না।প্রণয় এর কেবিন এ শুধু রাফসান মির্জা আর প্রণয় -ই বসে আছে।প্রণয় রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু রাফসান মির্জা কোনো কথা বললে তো?

নিরবতা কে উপসংহার দিয়ে প্রণয় -ই আগে বলে উঠে,

—তা,মির্জা সাহেব। হঠাৎ আমার অফিসে কেন?

রাফসান মির্জা প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলে,

—আসলাম ইচ্ছা হলো একটু তাই।তবে আপনার সাথে একটু খোশ গল্প করার ইচ্ছা ছিলো।

প্রণয় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে একটা হাসি দিয়ে বলে,

—আসলে আমি এখন আপনার সাথে খোশ গল্প করতে পারবো না।আমার প্রচুর কাজ আছে।

রাফসান মির্জা কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে বললেন,

—তাহলে আপনার বাড়িতে একদিন নাহয় নিমন্ত্রণ করেন, আসি।শুনলাম বিয়ে করেছেন। আপনার বউ এর হাতে রান্না খাওয়া হবে।আপনার বউ কে ও দেখা হবে।

—জি আসবেন।এসে খাওয়া দাওয়া করে যাবেন।তবে আমার বউকে আপনাকে দেখাতে আমি ইচ্ছুক না।

—তা মেয়ে পটিয়েছেন কি ভাবে?আমার লোকরা আপনার বউ এর চেহারা না দেখলে ও মুখ ঢাকা অবস্থায় একবার দেখেই বলেছে আমাকে, ঝাক্কাস মাইয়া জোগাড় করছেন আপনি।তা বিয়ের আগে কি বিছানায় গিয়েছে নাকি…..

আর কিছু বলার আগেই প্রণয় রে’গে তাকে চুপ করতে বলে। জান্নাত কে নিয়ে কোনো প্রকার বাজে কথা শুনতে প্রণয় চায় না।প্রণয় রা’গ চেপে রেখে ঠান্ডা গলায় রাফসান মির্জা কে বলে,

—আপনি এখন আসতে পারেন।

—আহা! আপনি রাগ করছেন কেন?আমি তো জাস্ট জিজ্ঞেস করেছি নতুন নাকি পুরাতন মা*?

প্রণয় এবার চি’ৎকার করে চেয়ার ছেড়ে উঠেই রাফসান মির্জা কে মা’রার জন্য উদ্যত হয়ে হাত তুলতেই নিজেকে কন্ট্রোল করে আবার হাত নামিয়ে ফেলে।রাফসান মির্জার হাত ধরে টেনে কেবিন থেকে বের করে দিয়ে সুজন কে ডাক দিয়ে বলে,

—গার্ড কে বল একে এক্ষুনি আমার অফিস থেকে বের করে দিতে।আর যাতে কোনো দিন একে আমার অফিসে ঢুকতে না দেয়।এর সাথে বেশি ভালো ব্যবহার করে ফেলেছি। আর না।

বলেই প্রণয় এক ধা’ক্কা মা’রে রাফসান মির্জা কে।রাফসান মির্জা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তোর বউ কে তো আমি এক রাতের জন্য হলেও নিয়ে আসবোই। যে ভাবেই হোক।দেখে নিস তুই শাহরিয়ার প্রণয়।

এত ক্ষণ যত টুকু রা’গ দমিয়ে রেখেছিলো।এখন সেটা ও উত্তপ্ত লাভার ন্যায় যেন টগবগ করে উঠলো। প্রণয় দৌড়ে গিয়ে হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে রাফসান মির্জার নাক বরাবর একটা ঘু’ষি দিলেন।রাফসান মির্জা কিছু টা দূরে ছিটকে পড়ে। আবার জান্নাত কে নিয়ে কিছু বলতে যাবে। প্রণয় এর আগেই ওর গালে দুটো থা’প্পড় বসিয়ে দেয়।

রিফাত এসে প্রণয় কে ধরে শান্ত হতে বলে।কিন্তু বললেই কি শান্ত হওয়া যায়?হঠাৎ প্রণয় এর ফোন বেজে উঠতেই প্রণয় পকেট থেকে ফোন নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে দেখে জান্নাত ফোন করেছে।মুহূর্ত এর মধ্যে রা’গ টা উধাও হয়ে গেলো। প্রণয় রাফসান মির্জার দিকে আরেক বার শক্ত চাহনি নিয়ে সুজন সজীব কে বলে, “রাফসান মির্জা কে ঘাড় ধা’ক্কা দিয়ে বের করে দিতে “।বলেই প্রণয় ফোন নিয়ে কেবিনে চলে যায়।

ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে জান্নাত সালাম দিয়ে বলে,

—আপনি কি ব্যস্ত আছেন?

প্রণয় স্মিত হেসে বলে,

—নাহ।বলুন। কিছু বলবেন?

প্রণয় এর কথায় জান্নাত চুপ করে থাকে।প্রণয় ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—ভিডিও কলে আসুন জান্নাত। আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।

—জি আচ্ছা।

বলেই জান্নাত ভিডিও কলে কানেক্ট হয়।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত চোখ তুলে প্রণয় এর দিকে তাকাচ্ছে না।প্রণয় জান্নাত কে লজ্জা পেতে দেখে হাসছে।জান্নাত কিছুক্ষণ পরেই বলে উঠে,

—বাসায় কখন আসবেন আজ?

—চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি আসার।বলতে পারছি না কখন আসবো।

—ওহ আচ্ছা।

—আচ্ছা এখন রাখলাম। আমার একটু কাজ আছে জান্নাত।

—জি।আসসালামু আলাইকুম।

বলেই জান্নাত ফোন কে’টে দেয়।প্রণয় ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।গত কাল রাতে এর পর থেকে জান্নাত তার সাথে কথা বলছে না লজ্জায়। সামনে ও আসছে না।প্রণয় অফিস আসার সময় ও জান্নাত সামনে আসেনি।বেলকনি তে দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রণয় রুম থেকেই বলে এসেছে সে অফিসে গেলে জান্নাত যেনো তাকে একবার হলেও ফোন করে।সেই সুবাদে এই এখন ফোন করেছে।নয়তো মনে হয় না ফোন করতো।

🌸🌸

রাত বারো টায় প্রণয় বাসায় আসে।বাসার এক্সট্রা ছাবি দিয়ে মেইন দরজা খুলে বাসায় ঢুকে।ড্রয়িংরুমে এসে দেখে প্রান্তিক টিভি দেখছে।হরর মুভি দেখছে। প্রণয় যে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেই দিকে তার কোনো নজর নেই।প্রণয় পিছন থেকে গিয়ে প্রান্তিক এর কাঁধে হাত রাখতেই প্রান্তিক চমকে উঠে চি’ৎকার দেয় “ভূ’ত” বলে।প্রণয় প্রান্তিক এর মুখ চেপে ধরে। প্রান্তিক চুপ হয়ে যেতেই মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলে,

—রাত বারো বাজে টা তুই বসে বসে হরর মুভি দেখছিস। আবার তোকে ধরতে না ধরতে ভূ’ত বলে চি’ৎকার দিচ্ছিস কেন?

প্রান্তিক প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তো ভ’য় পাবো না?একে তো হরর মুভি দেখছি।এর মধ্যে তুমি যদি পিছন থেকে এসে গায়ে হাত দাও।ভ’য় পাওয়া টা কি স্বাভাবিক না?

—খেয়েছিস তুই?আব্বু আম্মু ওষুধ খেয়েছে রাতে?

—হুম।জান্নাত ওষুধ দিয়েছে ওদের।

—যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড় তুই।বেশি রাত জাগিস না।সকালে পরে নামাজ পড়তে উঠতে পারবি না সময় মতো।

—আচ্ছা যাচ্ছি।

বলেই প্রান্তিক টিভি অফ করে চলে যায় রুমে।প্রণয় কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে যায়।

প্রণয় রুমে এসে দেখে জান্নাত বিছানায় ঘুমাচ্ছে। জান্নাত এর পাশেই পার্শিয়া জেনিথ ঘুমাচ্ছে। প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় চেঞ্জ করতে।

চেঞ্জ করে এসে শুতে যেতেই জেনিথ শোয়া থেকে উঠে এসে জান্নাত এর আরেক পাশে শুয়ে পড়ে।প্রণয় তা দেখে ভ্রু কুঁচকায়। প্রণয় ভ্রুকুটি কুঁচকে বলে,

—আমার বিয়ে করা বউ।আমাকে আমার বউ এর পাশে শুইতে না দিয়ে দুই জনে দুই পাশে কি সুন্দর করে শুয়ে আছে।এটা আমি মানবো না।

বলেই প্রণয় জেনিথ পার্শিয়া দুই জন কে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।প্রান্তিক এর রুমের দরজা এখনো খোলা।দুই জনকে প্রান্তিক এর রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা টা হালকা ভিড়িয়ে দিয়ে প্রণয় ক্রুর হাসে।যেন সে তৃতীয় বিশ্ব যু’দ্ধ জয় করেছে।নিজের রুমে এসে দরজা টা বন্ধ করে দেয়।

বিছানায় এসেই জান্নাত কে টেনে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে শুয়ে পড়ে।জান্নাত ঘুম ঘুম চোখ মেলে তাকায় প্রণয় এর দিকে।তারপর দুই পাশের দিকে নজর দিয়ে দেখে পার্শিয়া জেনিথ কেউ নেই।জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রণয় কে বলে,

—পার্শিয়া,জেনিথ কই?

—বের করে দিয়েছে ওদের রুম থেকে।ওদের কারণে আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারি না জান্নাত। দুই জনে দুই পাশে শুয়ে থাকে আপনার।

জান্নাত অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় করে বলে,

—দুটো বোবা প্রাণী নিয়ে ও জেলাস?

—হুম।মেয়েরা যেই রকম কোলবালিশ নিয়ে পর্যন্ত জেলাস হয়। ঠিক সেই রকম আমার ও পার্শিয়া,জেনিথ কে নিয়ে জেলাস হয়। সারাদিন বউ কে কাছে পায় না।রাতের সময় টুকু ও ছাড় দিবো নাকি?এই রাফসান মির্জা আর পার্শিয়া,জেনিথ মনে হয় গোপনে ষ’ড়যন্ত্র করেছে আমার বিরুদ্ধে। নাহলে আমি আপনার কাছে আসলে একদিন রাফসান মির্জা লোক পাঠাবে গণ্ডগোল করার জন্য।নয়তো পার্শিয়া জেনিথ আপনার দুই পাশে থাকে।

এতক্ষণ নিজের মতো কথা বলে প্রণয় চুপ হয়।জান্নাত তাকিয়ে আছে প্রণয় এর মুখের দিকে।হুট করে প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকায়।দুই জনের নজর এক হয়।প্রণয় মৃদু হেসে বলে,

—জান্নাত বিয়ের আগে বলেছিলাম বিয়ের পর ছুটিয়ে প্রেম করবো। কথা টা মনে আছে আপনার?

জান্নাত মিহি স্বরে বলে,

—হু।

—প্রেম করতে পারবেন আমার সাথে?হালাল প্রেম?

জান্নাত লজ্জায় রাঙা মুখ করে বলে,

—জানি না।

প্রণয় জান্নাত কে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,

—না পারলে ও সমস্যা নেই।আমি শিখিয়ে দিবো আপনাকে।হালাল প্রেমের হাতেখড়ি হবে নাহয়।

বলেই জান্নাত এর কপালে অধর ছোঁয়া দেয়।ডান হাতে নিজের মোবাইল টা সাইড টেবিল থেকে নেয়।রিফাত,সজীব,সুজন এবং আরো একজন ব্যক্তি কে একটা ম্যাসেজ করে দেয়।চারজনের কাছেই ম্যাসেজ এক সাথে চলে যায়।এবং ম্যাসেজ টা চার জনে দেখেই রিপ্লে দেয় ” অপেক্ষা করছি ভাই নেক্সট ধামাকার জন্য”।

প্রণয় চারজনের ম্যাসেজ দেখেই ক্রুর হাসে।মোবাইল টা রেখে দিয়ে জান্নাত এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে জান্নাত ঘুমিয়ে গেছে।প্রণয় চোখ বন্ধ করবে এমন সময় প্রণয় এর ফোনে আরেকটা ম্যাসেজ আসে।প্রণয় ফোন নিয়ে দেখে প্রান্তিক ম্যাসেজ করেছে।ওপেন করে দেখে প্রান্তিক ম্যাসেজ করেছে,

“বিয়াত্তা ভাইয়া!পার্শিয়া, জেনিথ আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।দুই জনেই আমার গায়ের উপর ঘুমাতে আসছে বার বার।”

প্রণয় হেসে দিয়ে রিপ্লে দেয়,

—অভ্যাস করে নে।বিয়াত্তা ভাইয়া বলার অপরাধে আজ থেকে পার্শিয়া,জেনিথ এর দায়িত্ব তোর।

লেখেই প্রণয় ম্যাসেজ সেন্ড করে ফোন টা রেখে দেয়।জান্নাত কে আরেকটু আবেশে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে যায়।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্বঃ_৩২
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

—স্যার ভারত থেকে মিষ্টার বিপ্লব কুমার ফোন করেছে। আপনার সাথে কথা বলতে চাইছে।

মেহেদি এর কথা শুনে রাফসান মির্জা ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকায় মেহেদি দিকে।রাফসান মির্জার চোখে মুখে ভ’য় এর ছায়া পড়েছে।মেহেদি এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—উনি ফোন করেছে কেন?

—স্যার আমাকে বলে নি।শুধু বলেছে আপনার সাথে কথা বলতে চায়।আপনাকে নাকি কয়েক বার ফোন করেছে।কিন্তু আপনি ফোন ধরেন নি।তাই আমাকে করেছে ফোন।বলেছে আপনি যদি এবার তাকে ফোন না করেন।তাহলে তিনি পুলিশ কে জানাবেন।

“পুলিশ ” কে জানানোর কথা টা শুনেই রাফসান মির্জার শরীরে ঘামের উপস্থিতি দেখা গেলো।মেহেদি রাফসান মির্জার এই অবস্থা দেখে বলে,

—স্যার বিপ্লব কুমার এর সাথে কি আপনার কিছু নিয়ে চুক্তি বদ্ধ ছিলো।

—তোর এত কিছু জেনে কি লাভ।তুই যা এখন।আমি বিপ্লব কুমার এর সাথে কথা বলে নিবো।

—আচ্ছা স্যার।

বলেই মেহেদি রাফসান মির্জার কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।রাফসান মির্জা সেই দিকে তাকিয়ে টেবিল এর উপর থেকে ফোন টা নিয়ে ভ’য়ে ভ’য়ে বিপ্লব কুমার কে ফোন দেয়।দুই বার রিং হতেই অপশ পাশ থেকে ফোন রিসিভ করে বিপ্লব কুমার খেঁকিয়ে বলে উঠে,

—আপনার সমস্যা কি মির্জা সাহেব?আপনি আমার ফোন তুলছেন না কেন?

রাফসান মির্জা আমতা আমতা করে বলে,

—মাফ করবেন। আসলে আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম তো।তাই ফোন ধরতে পারিনি।

—কাজের অজুহাত আমাকে দেখাতে আসবেন না।আপনাকে আমার হাড়ে হাড়ে চেনা আছে।আমার টাকা খেয়ে ড্রা’গ পাঠান নি কেন আপনি?

—কিছু সমস্যার কারণে পাঠাতে পারিনি।সামনের মাসে অবশ্যই পাঠাবো।

—আমি এত কিছু শুনতে চাই না।আপনি আগামীকাল কের মধ্যে ভারত আসবেন। আমার সাথে দেখা করবেন। এবার সামনা সামনি- ই আপনার সাথে আমার কথা হবে যা হওয়ার।

—তা কি করে হয়।আমি..

রাফসান মির্জা কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বিপ্লব কুমার বলে,

—আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না।আগামীকাল যাতে আপনাকে আমি ভারত দেখি।

বলেই বিপ্লব কুমার ফোন কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা কি করবে বুঝতে পারছে না।ভারতে বিপ্লব কুমার কে ড্রা’গ সাপ্লাই করবে বলে বিপ্লব কুমার এর কাছ থেকে এডভান্স পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে ছিলো। কিন্তু তার বদলে রাফসান মির্জা এখনো ড্রা’গ দিতে পারে নি বিধায় বিপ্লব কুমার গত দুই দিন থেকে তাকে পর পর ফোন করে যাচ্ছে।কিন্তু রাফসান মির্জা ফোন ধরে নি।পঞ্চাশ হাজার টাকা সে কি ভাবে পরিশোধ করবে ভেবে পায়না।ড্রা’গ এর গুদাম ঘর পু’ড়িয়ে ফেলেছে পুলিশ।তাই ড্রা’গ ও সাপ্লাই করতে পারছে না টাকা ও আসছে না।অন্য দিকে অফিস এর একের পর এক ডিল গুলো কম্পানি রা ক্যান্সেল করে দিচ্ছে।ব্যাংকে যেই পরিমাণ টাকা ছিলো। ভেবে ছিলো মানুষ কে টাকা খাইয়ে ভোট কিনে নিবে।কিন্তু মানুষ তার থেকে টাকা নিয়ে শাহরিয়ার প্রণয় কে ভোট দিয়ে এমপি পদবী তে জিতিয়ে দিয়েছে।কি করবে বুঝতে পারছে না রাফসান মির্জা।মিষ্টার বিপ্লব কুমার ও বলেছে ভারত গিয়ে তার সাথে কথা বলতে।না জানি কি ব্যবস্থা করে রেখেছে?

🌸🌸

—প্রণয় দা,রাফসান মির্জা তো মনে হয় ভারত যাবে।

ফোনের ওই পাশের লোক টার কথা শুন প্রণয় অবাক হয়ে ভ্রুকুটি কুঁচকে ফেলে।প্রণয় ফোন কলে থাকা ব্যক্তি কে জিজ্ঞাসু ভাবে সুধায়,

—কেন যাবে ভারত?জানছ কিছু?

—না দাদা।তবে এত টুকু বুঝতে পারছি বিপ্লব কুমার এর সাথে তার কিছু একটা নিয়ে কথা হয়েছে।

—কয় দিনের জন্য যাবে?

—গত কাল যাবে।তবে মনে হয় দুই তিন দিনের মধ্যে চলে আসবে।আপনার ক্ষতি না করে রাফসান মির্জা কি করে বেশি দিন দেশের বাইরে থাকবে?

—আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে, আমাকে সব আপডেট জানাস।

—আচ্ছা দাদা।বৌদি কেমন আছে দাদা?

—দাদার খবর না নিয়ে বৌদির খবর নিচ্ছিস?

—দাদা এতকাল আপনার খবর নিয়েছি এবার নাহয় কয় দিন বৌদি এর খবর নিই।

—তোর বৌদি ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ।

—আচ্ছা দাদা সাবধানে থাকবেন আপনি।আমি প্রতি মুহূর্তে খবর জানাবো।

—আচ্ছা।

বলেই প্রণয় ফোনটা কেটে দেয়।তারমানে প্ল্যান টা আরো কিছু দিন পিছাতে হবে।অবশ্য এতে তাদের -ই আখেরি লাভ হয়েছে।রাফসান মির্জা ভারত থেকে আসবে।তাদের থেকে এমন একটা সারপ্রাইজ পাবে।আর আনন্দে জ্ঞান হারাবে।ভেবেই প্রণয় ক্রুর হাসে।

🌸🌸

জান্নাত আর প্রান্তিক মুখোমুখি বসে আছে ড্রয়িংরুম এর সোফায়। প্রান্তিক জান্নাত এর দিকে বিরক্ত সূচক দৃষ্টি ফেলে বলে,

—আমার উপর এতটা নির্দয় কি ভাবে হতে পারলি তুই আর ভাইয়া?

প্রান্তিক এর কথা শুনে জান্নাত অবাক হয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,

—কি করেছি আমরা?

—তোরা দুই জনে সারা রাত আরামে ঘুমাস।আর এই দিকে পার্শিয়া, জেনিথ কে আমার রুমে দিয়ে আমার ঘুম হারাম করিস।এটা কি ঠিক?

—অবশ্যই ঠিক।যতকাল তুই সিঙ্গেল থাকবি। তত কাল পার্শিয়া, জেনিথ এর দায়িত্ব তোর উপর থাকবে।

পিছন থেকে ড্রয়িংরুমে আসতে আসতে কথা টা বলছিলো প্রণয়। এসেই জান্নাত এর পাশে বসে পড়ে।প্রান্তিক বড় ভাই এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—তাহলে আমি আগামীকাল -ই বিয়ে করবো।

—একদম না।তুই বিয়ে করলে পার্শিয়া জেনিথ কে রাখবে কে?তাছাড়া তোকে কে ও বা বিয়ে করবে?

—কেন ইশি করবে?

—ইশির তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোকে বিয়ে করবে।আর ওর বাবা মা ও তোর সাথে ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বসে আছে।

—সময় হলে সেটা দেখতে পারবে।

—সে যা ইচ্ছা তুই কর।কিন্তু পার্শিয়া জেনিথ এর দায়িত্ব তোকে এই নিতে হবে।(জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে)জান্নাত রুমে আসুন তো।

বলেই প্রণয় উঠে রুমে চলে যায়।জান্নাত ও কোনো বাক্য ব্যয় না করে সুর সুর করে প্রণয় এর পিছন পিছন রুমে যায়।প্রান্তিক ওদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কত গুলো কথা বলে উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। প্রান্তিক এর পিছন পিছন পার্শিয়া আর জেনিথ ও যাওয়া ধরে।প্রান্তিক দুই জনের দিকে তাকিয়ে বলে,

—একদম আমার পিছন পিছন আসবি না।

প্রান্তিক এর কথা শুনে দুই জনে একবার ডাক দিয়েই দৌড়ে প্রান্তিক এর রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ে।প্রান্তিক সেই দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়ায়।

🌸🌸

অন্ধকার রাত।বর্ষার ঋতু এখন।তাই বাসার আশ পাশ ওর ছোট খাটো ডোবা, জঙ্গল থেকে ব্যাঙ এর ডাক শুনা যাচ্ছে।সাথে ঝি ঝি পোকারা ও যেন তাদের আওয়াজ সবার কানে পোঁছানো এর প্রতি যোগিতা করছে।আকাশে কালো চাদরে চাঁদ ও নেই তারাকা রাজিরা ও নেই।নিকষ কালো চাদর দিয়ে যেন আবৃত আকাশ টা।হিম শীতল বায়ু ও প্রবাহমান।শরীর শীতল করে দেয়।

বেলকনি তে বসে কিছু নিয়ে চিন্তা করছে প্রণয়। জান্নাত এসে পিছন থেকে প্রণয় এর কাঁধে হাত রাখে।প্রণয় এই হাতের ছোঁয়া বুঝতে পারে।ঠোঁট কোলে হাসির রেখা টেনে নিজের কাঁধ এর উপর রাখা হাতের মালিক এর হাত টা ধরে সামনে এনে হেসে বলে,

—আমার সামনে চেয়ারে বসুন।

জান্নাত বসে প্রণয় এর সামনে একটা চেয়ারে। তার হাত দুটো এখনো প্রণয় এর হাত এর মাঝে অবস্থানরত। জান্নাত এর গায়ে জড়ানো পার্পল কালারের শাড়ি।কাধঁ পর্যন্ত কোঁকড়া চুল খোঁপা করা।প্রণয় মোহনীয় দৃষ্টিতে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত প্রণয় কে কিছু বলবে এর আগেই প্রণয় জান্নাত এর হাত দুটো নিজের সামনে উঁচু করে তুলে ধরে হাতের পিঠে নিজের অধর ছোঁয়া দেয়।হিম শীতল বাতাস এর সাথে প্রণয় এর অধর ছোঁয়া যেন জান্নাত এর শরীর শিরদাঁড়া হলো।বয়ে গেলো যেন ভালোবাসার স্রোত শরীর এর প্রতিটা শিরা উপশিরা দিয়ে।লজ্জা পেয়ে জান্নাত এর মুখ র’ক্তিম আভায় পরিণত হয়েছে।জান্নাত লজ্জায় মুখ ডাকবার ঝো নেই।আড় চোখে একবার প্রণয় এর দিকে তাকায়।প্রণয় এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে এক পলকে।জান্নাত মিহি স্বরে বলে,

—এভাবে কেন দেখছেন?

—ভালো লাগছে।তাই।

জান্নাত আবার মৃদু কণ্ঠে বলে,

—সব সময় – ই তো দেখেন।

—‘‘আপনাকে দেখতে আমার মাঝে ক্লান্তি আসে না জান্নাত। ইচ্ছে করে আপনাকে সব সময় সামনে বসিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকি আপনাতে।আপনাতেই আমার চক্ষু শীতল হয় জান্নাত ’’।

প্রণয় এর কিছু একটা মনে পড়তেই জান্নাত কে বলে,

—জান্নাত আমার একটা ভাবনার সমাপ্তি করতে হেল্প করবেন?

জান্নাত এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলে,

—জি বলুন।

প্রণয় জান্নাত এর হাত ধরে জান্নাত কে রুমে নিয়ে আসে।বেলকনি এবং রুমের দরজা আটকে দিয়ে কার্বাড এর পিছন থেকে একটা বোর্ড। সাদা রং এর একটা বোর্ড বের করে আনে।এই টা তো হোয়াইট বোর্ড।জান্নাত ভ্রু কুঁচকে তাকায়।বোর্ড টা বের করে এনে যখন প্রণয় জান্নাত এর দিকে ফেরায়।বিস্ময়ে জান্নাত চোখ বড় বড় করে প্রণয় এর দিকে তাকায়।প্রণয় স্মিত হেসে জান্নাত এর হাতে কালো মার্কার পেন তুলে দিয়ে বলে,

—“এবার এগুলো সল্ভ করুন। পুরোটা ঘিরে যেন উত্তর একটা – ই হয়।

জান্নাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে বুঝে বিষয় টা নিজের আয়ত্তে আংশিক ভাবে এনেই প্রণয় কে প্রতিটা পয়েন্ট এক করে দেয়।প্রণয় সব কিছু বুঝতে পেরে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:৩৩
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

নিশুতি রাত।বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির ফোটা পড়ছে।আকাশে ও গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ডাক দিচ্ছে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মাঝে।এই বৃষ্টি মুখর পরিবেশ হয় কারো জন্য রোমান্টিক আবার কারো জন্য হতাশা।ফুটপাত এর মানুষ গুলো বৃষ্টির পানি থেকে আশ্রয় পাওয়ার জন্য খুঁজছে যেখানে সেখানে ঠায়।আর এই দিকে একটা ঘরে দুইজন মানব মানবী খুঁজছে তাদের অনেক গুলো প্রমাণ এর পিছনের একটা যোগ সূত্র।

হোয়াইট বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে আছে জান্নাত। তার পাশেই প্রণয় বসে চেয়ে আছে ।বোর্ডে কিছু ছবি,কিছু স্ক্যাচ লাগানো। একটা ছবি জামিল এর নিথর ক্ষত বিক্ষত লা’শ এর।একটা ছবি লাবণ্য এর আছড় কাটা মুখের। যে আছড় গুলো ছিলো ধ’র্ষক এর।আরেকটা ছবি লামিয়া সুলতানার গলার রগ কে’টে দেওয়া দেহের।স্ক্যাচ টা হচ্ছে একটা লোক একজন মহিলা কে পিছন থেকে হাত আর মাথা টান টান করে ধরে রেখেছে।মহিলা টার সামনেই আরেকজন ছু’রি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মহিলা টি হলো লামিয়া সুলতানা।
বোর্ড এর এক পাশে দুটো হ্যান্ড ফিঙ্গার ফরেনসিক রিপোর্ট পেপার লাগানো। দুটো রিপোর্ট – ই শুধু মাত্র হাত এবং আঙ্গুল ফরেনসিক এর।জান্নাত সব কিছু চোখ ভুলিয়ে দেখে নিজের নখ দর্পনে আনে।বোর্ড এর এক পাশে মার্কার পেইন দিয়ে লেখে,”জামিল এর মৃ’ত্যু “,অন্য পাশে লেখে “লাবণ্য এর ধর্ষ’ণ “।এরপর প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—জামিল এর লা’শ কবে পেয়েছেন আপনারা?

প্রণয় কিয়তক্ষণ চুপ থেকে ভেবে বলে,

—ষোলো- ই ডিসেম্বর।

—লা’শ দেখে কি মনে হয়েছিলো?কয় দিন আগে মা’রা হয়েছিলো তাকে?

—এক দিন পুরো হবে বা হয়নি।বলা যায় হয়তো রাতে ওকে মে’রে ছিলো।সকালে পেয়েছি এমন।

জান্নাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

—লামিয়া সুলতানার বাড়িতে গিয়েছিলেন কবে আপনারা?

—আঠারো ডিসেম্বর।

জান্নাত এবার কিছুক্ষণ চুপ থাকে।মার্কার পেন দিয়ে দুটো তারিখ লেখে দুই জায়গায়। জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে পেন এর ক্যাপ আটকে বলে,

—লামিয়া সুলতানার বাড়িতে গিয়ে ছিলেন আপনারা আঠারো ডিসেম্বর। লামিয়া সুলতানা বলেছিলো, “দুই দিন আগে সন্ধ্যার পর দিয়েই একটা গাড়ি এসে লাবণ্য কে উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়”।আর দুই দিন আগে মানে হচ্ছে পনেরো ডিসেম্বর। আবার জামিল এর লা’শ পেয়ে ছিলেন ষোলো- ই ডিসেম্বর সকালে বা দুপুরে। আপনার ভাষ্যমতে জামিল কে হয়তো রাতে মে’রে ছিলো। একদিন আগে রাতে যদি মে’রে থাকে।তাহলে সেটার তারিখ ও এসে দাঁড়ায় পনেরো ডিসেম্বর এ।দুই জনের তারিখ টা- ই কিন্তু একই দিনে হয়ে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন?

প্রণয় চুপ করে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে থাকে।জান্নাত কি বুঝাতে চাইছে সেটা তার মাথায় এখনো পুরোপুরি ঢুকে নি।সেই জন্য জান্নাত কে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সুধায়,

—এর মানে আপনি কি বুঝাতে চাই ছেন জান্নাত? ক্লিয়ার করে বলুন প্লিজ?

—সব ক্লিয়ার করবো। আগে শুনুন। আপনি তো বলে ছিলেন লামিয়া সুলতানা বলেছে লাবণ্য কে ঘরে আনার পর সে অস্পষ্ট স্বরে ‘বি’ অথবা ‘ভি’ বলেছে।এবার এই পয়েন্টে আসুন।’বি’ তে গুরুত্ব পূর্ণ কিংবা লাবণ্যের রেপ এর সাথে সম্পর্কিত কোনো শব্দ মিলাতে পারছি না।তবে ‘ভি’ শব্দটি এর সাথে মিলে যায় ‘ভিডিও’ শব্দটা।এমন হতে পারে হয়তো লাবণ্য কোনো ভিডিও এর কথা বলতে চেয়েছিলো।

জান্নাত এর কথা থামতেই প্রণয় উৎকণ্ঠিত ভাবে বলে উঠে,

—কারেক্ট। আপনি একদম ঠিক পয়েন্ট ধরেছেন। এই কথা টা বার বার আমার মাথায় এসে ছিলো। কিন্তু শেষে গিয়ে আর আমি মিলাতে পারি না।

—আচ্ছা আমি বলছি শুনুন।আপনি আমাকে বলে ছিলেন যে,আপনাদের গুপ্তচর জানিয়েছে রাফসান মির্জা ড্রা’গ সাপ্লাই করার সময় জামিল দেখে ছিলো। আর পরে তারাও জামিল কে দেখে দ্যান মে’রে পেলে।তাহলে হিসাব সমেত এটা দাঁড়ায় না?ষোলো ডিসেম্বর রাতে জামিল কে মে’রে ফেলা হয় এবং লাবণ্য কে রেপ করা হয়।হয়তো লাবণ্য এর কাছে প্রমাণ হিসেবে কোনো ভিডিও ছিলো। আর সেই ভিডিও এর জন্যই লাবণ্য কে রেপ করে এবং ড্রা’গ দেয় যাতে লাবণ্য কোমায় চলে যায় এবং তাদের রাস্তা ফুল ক্লিয়ার হয়ে যায়?

কথা গুলো বলে জান্নাত থামতেই প্রণয় গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,

—আর ফিঙ্গার এন্ড হ্যান্ড ফরেনসিক রিপোর্ট দুই টা তেই রাফসান মির্জার এর আঙুল এর চাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।লামিয়া সুলতানা কে মা’রার অ’স্ত্র ছু’রির হাতের ছাপ এবং আমার অফিস কেবিনে গ্লাসে হাত রাখা রাফসান মির্জার হাতের চাপ অবিকল এক।এর মানে এটাই দাঁড়ায় যে রাফসান মির্জা- ই লামিয়া সুলতানা কে মে’রে ছে।কিন্তু লামিয়া সুলতানা কে পিছন থেকে যিনি ধরেছিলো সে কে তা এখনো বুঝে আসছে না।

—হুম বুঝতে পারছি।তবে রাফসান মির্জা কে আইন এর কঠোর আওয়াতায় আনতে হলে আপনাদের দরকার একজন বাদীর।আর বাদী হিসেবে দরকার লাবণ্য কে।এবং লাবণ্য যে ভিডিও এর কথা বুঝাতে চেয়ে ছিলো সেটা।যেহেতু রাফসান মির্জা ও আইনের সাথে সম্পর্কিত লোক।তাই দু তিনটা লা’শ কিংবা কিছু মুখের কথা,রিপোর্ট দেখালে হবে না।ঠিক- ই টাকার জোরে বেরিয়ে আসবে।তাই এখন সবার আগে দরকার লাবণ্য কে কোমা থেকে ফিরিয়ে আনার।তার জবানবন্দি, এবং সেই ভিডিও সম্পর্কে জানার।বর্তমানে ভিডিও টা কোথায় আছে সেটাও জানতে হবে।

—জি।আমি লাবণ্য এর।চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো উন্নত করে দিচ্ছি।তারপর দেখি আল্লাহ কি করে।

—আচ্ছা।

বলেই জান্নাত হাসে।প্রণয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দেড় টা বাজে।প্রণয় কোনো কথা না বলে সোফা থেকে উঠে গিয়ে হোয়াইট বোর্ড টা আবার কার্বাড এর পিছনে রেখে দেয়।সব কিছু ঠিক ঠাক করে এসে জান্নাত এর সামনে দাঁড়ায়। জান্নাত এর কোমড় জড়িয়ে ধরে দুই হাতে।জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে প্রণয়। জান্নাত কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে বলে,

—হাসছেন কেন?

প্রণয় জান্নাত এর কথার উত্তর না দিয়ে উল্টা নিজে জান্নাত এর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলে,

—রাজনীতি পছন্দ করেন না?

জান্নাত গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

—নাহ।

—রাজনীতি বিদ দের পছন্দ করেন না?

—নাহ।

—আপনাকে জড়িয়ে ধরে রাখা এই রাজনীতি বিদ কে ও পছন্দ করেন না?

জান্নাত হেসে দিয়ে বলে,

—এই রাজনীতি বিদ কে পছন্দ করি কিনা জানি না।তবে এই রাজনীতি বিদ টা কে ছাড়া
সতেজ প্রাণ নিয়ে চলা অসম্ভব।

—রাজনীতি, রাজনীতি বিদ দের পছন্দ করেন না।কিন্তু রাজনীতির মা’র প্যাচ তো দেখি ভালোই বুঝেন।

—রাজনীতি বিদ এর পাশের বেলকনি তে ছিলাম তো।তাই সাইড এফেক্ট করেছে।তাছাড়া নেতা সাহেব এর বউ হয়ে এত টুকু না বুঝলে কি হয়?

—তা অবশ্য ঠিক।এখন বলুন সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার জন্য কি গিফট চান আপনি?

জান্নাত প্রণয় কথায় মিহি হাসে।প্রণয় দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,

—আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?

জান্নাত এর আবেদন শুনে প্রণয় জান্নাত এর কোমড় থেকে হাত নামিয়ে হাত দুটো প্রশস্ত করে দুই দিকে মেলে ধরে বলে,

—‘‘আসুন।এই “মন কুঠির” নামক জেল খানার একমাত্র কয়েদি আপনিই। আর কেউ না’’।

জান্নাত প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।মাথা রাখে প্রণয় বক্ষের সেই তার নামে বিট করা যন্ত্র টার উপরে।শুনতে থাকে প্রতিটা স্পন্দন। দ্রুত বিট হচ্ছে প্রণয় হার্ট।জান্নাত ভ্রু কুঁচকায়।মানুষ টা তো স্বাভাবিক -ই আছে।তবে হার্টবিট এতো ফাস্ট কেন?

জান্নাত প্রণয় এর বুক থেকে মাথা তুলে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—কি হয়েছে আপনার? আপনার হার্টবিট এতো ফাস্ট কেন?এত টা অশান্ত ভাবে কেন বির্ট করছে?

প্রণয় জান্নাত এর নাকের সেই লালছে কালো তিলটা এবং ডান গালে তে অধর স্পর্শ দিয়ে বলে,

—আপনি শান্ত করে দিন জান্নাত।

প্রণয় এর এই কথা টা তে কি ছিলো জান্নাত জানে না।সে প্রণয় এর দুই চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো এক নেশায় ডুবে আছে যেন সে?সে পুনরায় প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।প্রণয় এর বুকের বাঁ পাশে দুই ইঞ্চি নিচের যন্ত্র তার উপর নিজের ওষ্ঠ যুগোল এর উষ্ণতা স্পর্শ দেয়।প্রণয় চমকায়।হত বিহম্বল দৃষ্টি পেলে জান্নাত এর দিকে তাকায়।প্রণয় এর তাকানো তে জান্নাত নিজের হুশে ফিরে আসে।লজ্জা পায় নিজের কাজে।
প্রণয় জান্নাত কে এমন লজ্জায় মুখে লালাভ আভার জানান দিতে দেখে বুকে হাত দিয়ে বলে,

—লজ্জায় রাঙা মুখ করবেন না জান্নাত, এখানে লাগে।

প্রণয় এর কথায় জান্নাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।কি বলবে সে নিজেই বুঝতে পারছে না।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে