প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
1728

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব-২৮
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

—প্রণয় দা,আজকে দুপুর দুইটাই রাফসান মির্জার মা’ল পরিবহণকারী ট্রাকে ড্রা’গ যাবে সিলেট বর্ডার ক্রস করে ভারতে।

ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির কথা শুনে প্রণয় ফিচেল হাসে।ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি কে বলে,

—ঠিক আছে।আমি দেখছি কি করা যায়।সাবধানে থাকিচ তুই।

—ঠিক আছে প্রণয় দা।

লোকটা ফোন কাটতে গিয়ে আবার বলে উঠে,

—প্রণয় দা!

—হ্যাঁ বল।

—বৌদি ভালো আছে?

—হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছে।

—আচ্ছা দাদা।

বলেই লোকটা ফোন কে’টে দেয়।প্রণয় সজীব কে ফোন করে।প্রথম রিং হতেই সজীব ফোন তুলে বলে,

—আসসালামু আলাইকুম ভাই।

—ওয়ালায়কুম সালাম।সজীব শুন।

—বলেন প্রণয় ভাই।

—এখনি পুলিশ কে ইনফর্ম করে বলে সিলেট বর্ডারে চেক পোস্ট বসাতে। আজকে দুপুর দুই টাই রাফসান মির্জার মালবাহী ট্রাক ড্রা’গ নিয়ে যাবে বর্ডার ক্রস করে।

—আচ্ছা ভাই।আমি এখনি সব করতাছি।

বলেই সজীব ফোন কে’টে দেয়।প্রণয় ল্যাপটপ এর কি- বোর্ডে কিছু একটা দ্রুত হাতে টাইপিং করে। লেখা শেষ হতেই ক্রুর হেসে বলে,

—মির্জা সাহেব! আপনার জন্য একটা বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আমার পক্ষ থেকে।

বলেই প্রণয় ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।মাথায় চলছে নানান হিসেব।সব কিছুর পিছনে একটা-ই যোগ সূত্র।যা প্রণয় ধরতে পারলে ও আংশিক ভাবে মিলাতে পারছে না একটা জায়গায়।

🌸🌸

দুপুর দুই টার নিউজ দেখার জন্য টিভি এর সামনে বসে আছে রাফসান মির্জা। আজ সে বরাবর এর চাইতে একটু বেশিই খুশি।তার ড্রা’গ গুলো বর্ডার ক্রস করে ভারত গেলেই তার হাতে চলে আসবে এক কোটি টাকা।যেখানে যাবে ড্রা’গ। সেখানের মালিক এর সাথে আগেই ডিল করে ছিলো ড্রা’গ নিতে হলে এক কোটি টাকা দিতে হবে।লোক গুলো ও রাজি হয়েছিলে রাফসান মির্জার কথায়।মূলত তারা বিভিন্ন স্কুলে কলেজে রাফসান মির্জার দেওয়া ড্রা’গ গুলো সাপ্লাই করবে এর আগেও করেছে স্কুল কলেজে সাপ্লাই। এতেই স্টুডেন্ট রা ড্রা’গ আসক্ত হয়ে এখন বেশি বেশি ড্রা’গ চাচ্ছে।স্টুডেন্ট দের হাতে যত বেশি ড্রা’গ তুলে দিতে পারবে আর স্টুডেন্ট রা ড্রা’গ আসক্ত হবে এতে তাদের লাভ তত বেশি গুণ বেড়ে যাবে। সেই জন্য বেশি টাকা হলেও প্রয়োজন বিধায় রাফসান মির্জার থেকে ড্রা’গ নিচ্ছে।

রাফসান মির্জা মেহেদি আর প্রদীপ কে ডাক দেয়।দুই জনেই রাফসান মির্জার সামনে এসে দাঁড়ায়। রাফসান মির্জা মেহেদি এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ড্রা’গ এর ট্রাক রওনা হয়েছে?

মেহেদি বিনয়ী হেসে বলে,

—জি স্যার। এতক্ষণ হয়তো বর্ডার ক্রস করে ফেলেছে।

মেহেদি এর কথা শুনে রাফসান মির্জা হাসে।মনে মনে হাজার ভাবনা কষে।এক কোটি টাকা দিয়ে কি কি করবে সে।হঠাৎ টিভিতে সংবাদ পাঠিকার কথায় ধ্যান ভে’ঙে সেই দিকে তাকিতেই যেন তার মাথায় আকাশ ভে’ঙে পড়লো। টিভি তে লাইভ নিউজ দেখাচ্ছে সিলেট বর্ডার এ পুলিশ চেক পোস্ট বসিয়েছে। বর্ডার ক্রস করা সব ট্রাক চেক করছে।

সিলেট বর্ডার এ পুলিশ একটা ট্রাক চেক করে দেখে ট্রাকে ড্রা’গ এর ছোট ছোট প্যাকেট। পুলিশ ট্রাক ড্রাইভার কে গাড়ি থেকে বের করে আনে।শার্টের কলার্ট ধরে বলে,

—এই ট্রাক এর ড্রা’গ গুলো কার?কোথায় যাচ্ছে?

ট্রাক ড্রাইভার ভ’য় পেয়ে আমতা আমতা করতে করতে বলে,

—এগুলো ভারত যাচ্ছে।

—ড্রা’গ গুলো কার?

—আহসান মির্জার।

—আহসান মির্জা কে?কোথায় থাকে?

ট্রাক ড্রাইভার বলে,

—আমি জানি না।আমি তাকে দেখিনি। শুধু আমাকে একটা নাম্বার থেকে ফোন করে বলে ছিলো **** এই জায়গায় তাদের একটা ডেরা আছে।সেখান থেকে ড্রা’গ ট্রাকে নিয়ে ভারত যেতে।সাথে কালো পোশাক পরা কয়েক জন লোক ও ছিলো আমার সাথে।ওই নাম্বার থেকে আর ফোন আসেনি।

ড্রাইভার এর কথা শুনে পুলিশ বলে,

—চল ডেরা টা দেখাবি।

বলেই পুলিশ ড্রাইভার কে টানতে টানতে নিজেদের সাথে নিয়ে গাড়িতে উঠে,এবং অন্য কয়েক জন্য পুলিশ কে বলে,

—ট্রাক টা থানায় নিয়ে যাও।

রাফসান মির্জা টিভিতে শুধু দেখে ছে তার ড্রা’গ এর ট্রাক ধরা পড়েছে।পুলিশ যে লোক টা কে এত কিছু জিজ্ঞেস করেছে সেগুলো তিনি দেখতে পায়নি।তিনি মেহেদি আর প্রদীপ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আজকে যে বর্ডার এ চেক পোস্ট বসবে।তোরা আমাকে জানাস নি কেন?

—স্যার আমরা তো পুরো খবর নিয়েছি। আজকে চেক পোস্ট বসার কোনো কথা ছিলো না।তাহলে হঠাৎ করে কিভাবে?

প্রদীপ কথায় রাফসান মির্জা কিছুটা ভাবতে বসে।তার এখন মাথা খারাব হয়ে গেছে। এক কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিলো। আর এখন এক লাখ ও পাবে না।তার মধ্যে ড্রাইভার টা যদি তার নাম বলে দেয়।তাহলে তো সব শেষ।কিছু একটা ভেবে পেতেই রাফসান মির্জা বলে,

—আচ্ছা এই বর্ডার এ চেক পোস্ট বসানো এর পিছনে কোনো মতে শাহরিয়ার প্রণয় এর হাত নেই তো?

মেহেদি কথার প্রত্যুত্তর এ বলে,

—থাকতে ও পারে স্যার। বলা যায় না।শাহরিয়ার প্রণয় আপনার থেকেও বুদ্ধিমান। কখন কি করে বুঝায় যায় না।

মেহেদির কথা তে রাফসান মির্জা তেঁতে উঠে বলে,

—তুই কি বলতে চাইছিস আমার বুদ্ধি নেই?
আমার মগজ ফাঁকা?

মেহেদি কিছু বলতে যাবে এমন সময় প্রদীপ টিভির দিকে তাকিয়ে বলে,

—স্যার আপনার ড্রা’গ এর ডেরা তে আ’গুন লাগাই দিছে কে?নাকি দাবানল লাগছে?

রাফসান মির্জা টিভির দিকে তাকিয়ে এসব দেখে হায় হুতাশ করতে থাকে।তার বুঝে এসে গেছে এই সব কিছুর পিছনে প্রণয় এর হাত আছে।তাই চি’ৎকার করে বলে উঠে,

—শাহরিয়ার প্রণয় তুই কাজটা ভালো করলি না।আমার সব শেষ করে দিলি তুই।তোর শেষ আমি দেখে ছাড়বো।সাপের লেজে যখন পাড়া দিলি তাহলে সাপের দংশ’নে বি’ষ শরীরে ঢুকার জন্য ও প্রস্তুত থাক।

🌸🌸

রাত এগারো টা বাজে।প্রণয় এখনো বাসায় আসেনি। জান্নাত প্রণয় এর রুমের বেলকনি তে থাকা চেয়ার বসে আছে।তার সামনেই টেবিল এর উপরে পার্শিয়া আর জেনিথ বসে আছে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে। ঘুম জান্নাত এর চোখের পাতায় এসে বসে আছে।কিন্তু এখনো প্রণয় আসেনি বিধায় সে না ঘুমিয়ে বসে আছে।

রাত এগারো টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে প্রণয় বাসায় আসে।নিজের রুমে এসে দেখে লাইট জ্বালানো। কিন্তু জান্নাত নেই রুমে। পার্শিয়া আর জেনিথ ও নেই।প্রণয় ভেবে নিয়েছে জান্নাত তাদের বাসায় গিয়েছে।তাই আর কোথাও না খুঁজে কার্বাড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।চেঞ্জ করে বের হয়ে বেলকনির লাইট জ্বালানো দেখে।কি মনে করে যেন বেলকনি তে যায়।গিয়ে দেখে জান্নাত টেবিল এর উপর মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। পাশে পার্শিয়া আর জেনিথ ও ঘুমাচ্ছে টেবিল এর উপর শুয়ে।জান্নাত এর কাধঁ পর্যন্ত ছড়ানো কোঁকড়া চুল গুলো মুখ এর উপর এসে মুখ ঢেকে দিয়েছে।প্রণয় জান্নাত এর চুল গুলো দেখে কিছু টা ভ্রু কুঁচকায়। আনমনে ভেবে উঠে,”মেয়ে টার চুল গুলো এত ছোট কেন?কোমর পর্যন্ত বিছানো কোঁকড়া চুল হলে সৌন্দর্য আরো বেশি বেড়ে যেত মেয়ে টার।অবশ্য এত টুকু তে ও বেশ লাগছে। মাশাল্লা “।

আনমনে কথা গুলো ভেবেই প্রণয় হেসে দিয়ে ঘুমান্ত জান্নাত এর পাশে গিয়ে জান্নাত এর কাঁধে হাত রেখে বলে,

—জান্নাত, জান্নাত। চলুন ঘরে গিয়ে ঘুমাবেন। এখানে এভাবে কেন বসে ঘুমাচ্ছেন?ঘাড় ব্য’থা হয়ে যাবে।

প্রণয় এর কথার কোনো প্রত্যুত্তর আসে না।জান্নাত গভীর ঘুমে মগ্ন।প্রণয় ভেবে পাচ্ছে না কি করবে?কিছু একটা ভেবে জান্নাত এর মাথা টাকে টেবিল এর উপর থেকে আলগোছে তুলে নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে ধরে জান্নাত কে কোলে নিবে এমন সময় জান্নাত চোখ খুলে তাকায়।দুই জনের দৃষ্টি এক হয়ে যায়।কিয়তক্ষণ তাকিয়ে থাকে দুই জন দুই জনের দিকে।এই মুহূর্ত টা বাংলা সিনেমায় দেখালে নিশ্চিন্ত “লা,লা,লা,লা,” বাদ্যধ্বনি বাজতো।আর জলসা সিরিয়াল হলে সাত আট মিনিট এই ভাবে তাকিয়ে থেকে একটা হিন্দি গান চলতো।

—মি. ভালোবাসা আপনি কখন আসলেন? আমাকে ডাকেন নি কেন?

প্রণয় পাশের একটা চেয়ার বসে বলে,

— আধ ঘন্টা হয়ে এসেছে আমি যে বাসায় আসছি।আর আপনাকে ডেকেছি ও।কিন্তু আপনি ঘুমাচ্ছিলেন পরিবার নিয়ে।

—পরিবার নিয়ে?

বলেই ভ্রুকুটি কুঁচকে ফেলে জান্নাত। প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,

—এই যে পার্শিয়া আর জেনিথ ও আপনার সাথে ঘুমাচ্ছিলো।তো ওরা তো পরিবার এর সদস্য। তাই বলেছি।

—ওহ আচ্ছা।খাবেন না?

—না খেয়ে এসেছি। আপনি খেয়েছেন?

—হ্যাঁ। একটা কথা বলার ছিলো।

—জ্বি বলুন। একটা কেন বলবেন? যত ইচ্ছে তত টা বলুন।

—নাহ একটাই বলি এখন।

—আচ্ছা বলুন।

বলেই স্মিত হাসে প্রণয়। জান্নাত প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আপনি তো আমার বড়।আপনি কেন আমাকে “আপনি “সম্বোধন করছেন?তুমি করেই বলতে পারেন।

জান্নাত এর কথায় প্রণয় হেসে দেয়।হেসে জান্নাত কে বলে,

—আমি কেন”আপনি” সম্বোধন করছি জানেন?

—কেন?

—‘‘কিছু ভালোবাসা “আপনি ” সম্বোধন এই সুন্দর মানায়। যেমন আমার আর আপনার ভালোবাসা’’।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব-২৯
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

প্রণয় রেডি হচ্ছে অফিস যাওয়ার জন্য।জান্নাত ও ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।প্রণয় -ই তাকে বলেছে আবার ভার্সিটি যাওয়া শুরু করতে।তাই আজ থেকে ভার্সিটি যাবে। দুই জনে এক সময় বের হলেও আলাদা আলাদা ভাবে যাবে।বাইরের কেউ এখনো জানে না জান্নাত প্রণয় এর স্ত্রী।তাই প্রণয় ও জানাতে চায় না।যদি তার রাজনীতি এর ফলে জান্নাত এর উপর কোনো বিপদ এর আচঁ আসে?তাই প্রণয় শুধু দুই পরিবার আর ইশি, রিফাত,সজীব, সুজন এর বাইরে বাকি সবার কাছে বিষয় টা গোপন করে রেখেছে।

জান্নাত বোরকা পরে হিজাব আর নিকাব হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রেডি হতে পাচ্ছে না।রেডি হতে পাচ্ছে না বললে ভুল হবে।মূলত প্রণয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত জায়গা পাচ্ছে না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে।প্রণয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবী উলটা পিঠ থেকে ঠিক করছে জান্নাত এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।মানে কি এসব এর?পাঞ্জাবী ঠিক করতে ও কি আয়নার সামনে দাঁড়ানো লাগে।

প্রণয় ইচ্ছে করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তার খুব ইচ্ছে করছে তাকে এমন করতে দেখে জান্নাত কি ভাব মূর্তি ধারণ করে।আয়নার মধ্যে দিয়ে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে প্রণয় মিটিমিটি হাসে।যা জান্নাত এর চোখ এড়িয়ে যায় নি।জান্নাত এবার স্বগতোক্তি তুলে বলে,

—আপনি রেডি হতে এত সময় কেন লাগছে?

প্রণয় স্মিত হেসে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

—আমি জানি না তো।আপনি জানেন কি কেন এত দেরি হচ্ছে আমার?

—জানবো কেন? অবশ্যই জানি।আমাকে রেডি হতে দিবেন না আপনি এটাই আপনার দেরি করার কারণ। ছেলে মানুষ এর রেডি হতে এত সময় লাগতে পারে সেটা আমার কল্পনার বাইরে।

জান্নাত এর কথা শুনে প্রণয় উৎফুল্ল চিত্তে বলে উঠে,

—তাহলে আমকে ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন আপনার।আমাকে ধন্যবাদ দিন জান্নাত।

জান্নাত অবাক নেত্রে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ধন্যবাদ কেন দিবো?

—এই যে ছেলে মানুষ রেডি অধিক সময় লাগে।সেটা আমি আপনার কল্পনার ভিতরে নিয়ে আসলাম।এবার ধন্যবাদ দেন।

জান্নাত কি বলবে বুঝে না পেয়ে চুপ করে আছে।প্রণয় জান্নাত এর চুপ করে থাকা তা নিতে পারে না।তাই নিজের মুখ টা কে কিছু টা চুপসে নিয়ে বলে,

—জানেন জান্নাত আমি একটা ভুল করেছি।

জান্নাত ভ্রু কুঁচকে প্রণয় এর মুখের দিকে তাকায়। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে বলে,

—কি ভুল করেছেন?

—প্রথম ভুল রাজনীতি তে জড়িয়েছি, দ্বিতীয় ভুল বাবার অফিস এর দায়িত্ব নিয়েছি। আর এসব দায়িত্ব নেওয়ার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বউ এর সাথে একটু সময় কাটাতে পারি না।এই দুঃখের কথা শুধু আপনাকেই বললাম বুঝলেন।কাউকে তো আর এসব বলা যায় না।নতুন বিয়ে করেছি দরকার ছিলো অনন্ত এক সপ্তাহ সব কাজ থেকে আমাকে ছুটি দেওয়ার। কিন্তু সব গুলো যেন আমার আস্ত শত্রু।একটা বুঝলো না নতুন বউ রেখে কাজে যেতে আমার মন সায় দেয় না।এসব কেন বুঝে না ওরা একটু বলবেন আমাকে জান্নাত?

জান্নাত প্রণয় এর এমন অভিযোগ শুনে হাসবে না কাঁদবে সেটাই হয়তো ভুলে গেছে।কি লাগামছাড়া কথা এটা আবার অভিযোগ বাক্য। প্রণয় পাঞ্জাবী পরে জান্নাত কে ডাক দেয় তার কাছে আসতে।জান্নাত তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে -ই জান্নাত এর দিকে মুখ করে ফিরে দাঁড়িয়ে বলে,

—পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো লাগিয়ে দিন।

জান্নাত বিপরীতে কিছু না বলে হেসে বোতাম লাগিয়ে দিয়ে সরে আসতে গেলেই প্রণয় জান্নাত এর কোমর জড়িয়ে ধরে জান্নাত কে আয়নার সামনে দাড়াঁ করিয়ে নিজে পিছনে দাঁড়ায়। হাসি দিয়ে বলে,

—এবার আপনি তৈরী হোন।আমিও হচ্ছি।সমস্যা হবে না।

দুই জনেই রেডি হয়ে নেয়।প্রণয় বেরিয়ে যাবার আগে জান্নাত কে আবার নিজের কাছে ডেকে নেয়।জান্নাত প্রণয় এর সামনে এসে দাড়াঁ তেই প্রণয় জান্নাত এর কপালে নিজের ওষ্ঠদ্বয় এর স্পর্শ দেয়।কিছু সময় নিয়ে জান্নাত কপাল থেকে অধর সরিয়ে হাদি মুখে বলে,

—সাবধানে যাবেন।কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে ফোন করবেন। আমি ইনশাল্লাহ চলে আসবো।

— জি আচ্ছা।

—আরেকটা কথা।

—জি বলুন।

—আমাদের বিয়ের কথাটা কাউকে জানাবেন না।এতে আমার শত্রু রা হয়তো আমার ক্ষতি করার জন্য ঘুটি হিসেবে আগে আপনার ক্ষতি করতে চাইবে।তা আমি চাই না।সেই জন্য কাউকে বলবেন না।

—আচ্ছা বলবো না।আপনি সাবধানে যাবেন।

—জি ইনশাল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।

—-আসসালামু আলাইকুম।

—ওয়ালায়কুম সালাম।

বলেই জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।জান্নাত তার ব্যাগ নিয়ে বের হয় রুম থেকে।গতকাল গিয়ে তাদের বাসা থেকে তার বই নিয়ে এসেছে।জান্নাত বের হয়ে রিক্সা নিয়ে ভার্সিটি চলে যায়।প্রান্তিক বাইক নিয়ে আগেই গিয়েছে আজ।তার কাজ আছে কোথায় যাবে তারপর ভার্সিটি আসবে।অবশ্য জান্নাত এর রিক্সার পিছনে সজীব ও এসেছে।অতি সর্তকতা এর সাথে জান্নাত এর রিক্সার পিছনে নজর রেখে গিয়েছিলো যাতে কেউ বুঝতে না পারে।প্রণয় -ই সজীব কে বলেছে জান্নাত ভার্সিটি যাওয়ার সময় জান্নাত কে ফলো করে যেতে।যদি কোনো বিপদ হয় জান্নাত এর।সেই জন্য দূর থেকেই ফলো করতে বলেছে।তবে যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

🌸🌸

রাফসান মির্জা বসে বসে ভাবছে কি ভাবে শাহরিয়ার প্রণয় কে রাস্তা থেকে সরানো যায়।ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় কিছু একটা আসতে -ই মেহেদি আর প্রদীপ কে ডাক দেয়।মেহেদি, প্রদীপ এসে দাঁড়াতে -ই বলে,

—শাহরিয়ার প্রণয় বিয়ে করেছে তাই না?

প্রদীপ স্বগতোক্তি করে বলে,

—জি স্যার।

—ওর বউ টা কে? চিনিস বা দেখেছিস ওর বউ কে?

—না স্যার। আমরা তো আপনার সাথেই চিপকে থাকি সবসময় আরশোলার মতো।দেখবো কেমনে?

মেহেদির এমন অতিরিক্ত কথায় রাফসান মির্জার রাগ উঠে যায়।এই ছেলে টা ইদানীং বেশি কথা বলে।বলে না,সঙ্ঘ দোষে লোহা ও ভাসে।প্রদীপ এর সাথে থেকে থেকে এই মেহেদি ও এখন অতিরিক্ত কথা বলে।রাফসান মির্জা প্রদীপ কে বলে,

—খোঁজ নিয়ে আমাকে জানা শাহরিয়ার প্রণয় এর বউ কে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানার চেষ্টা কর কে ওর বউ বাই হুক অর বাই কুক।

বলেই রাফসান মির্জা হেসে দেয়।প্রদীপ আর মেহেদি রাফসান মির্জার কেবিন থেকে বের হতে যাবে।এর আগেই রাফসান মির্জা দুই জনকে আবার ডাক দেয়।অতি আস্তে তাদের দুই জনকে কিছু বলে।এর পরেই তিন জনে সম সুরে হেসে উঠে।

🌸🌸

প্রণয় অফিস থেকে মাত্র বের হয়েছে।আজকে একবার পার্টি অফিসে যাবে আফজাল সাহেব এর সাথে দেখা করতে।সেই জনে রিফাত আর সুজন কে অফিস এর বাকি কাজ গুলো করে নিতে বলে সজীব কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অফিস থেকে।গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায় প্রণয় আর সজীব। সজীব উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে।প্রণয় উঠে ফন্ট সিটে বসতে যাবে এমন সময় প্রণয় এর নাম্বারে একটা ফোন আসে।প্রণয় ফোনটা ধরে “হ্যালো” বলার আগেই ওপাশ থেকে ব্যক্তি টির বলা কথা শুনে প্রণয় অবাক হয়ে ভ্রু কুটি কুঁচকে ফেলে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:৩০
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

প্রণয় ফোনটা ধরে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে ব্যক্তি টির বলা কথা শুনে প্রণয় অবাক হয়ে ভ্রু কুটি কুঁচকে ফেলে। অপর পাশের ব্যক্তি টি বলে,

—প্রণয় দা অফিসে যেই গাড়িটা করে এসেছেন। সেইটাই করে কোথাও যাবেন না।ওটার ব্রেক ফেল করে দিয়েছে রাফসান মির্জার লোকেরা।

বলেই লোকটা ফোন কেটে দেয়।প্রণয় ক্রুর হেসে গাড়িতে উঠে বসে।সজীব গাড়ি স্টার্ট দিতে নিলে প্রণয় স্টিয়ারিং এ হাত দেয়।সজীব প্রণয় এর দিকে প্রণয় চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে।সজীব ও আর গাড়ি স্টার্ট না দিয়ে বসে থাকে।প্রণয় ফন্ট ক্যামেরা তে পিছনে দেখে।

প্রণয় দের গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে প্রদীপ আর মেহেদি দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় দের গাড়িতে উঠতে দেখে মেহেদি প্রণয় কে বলে,

—চল।ওরা তো গাড়িতে উঠে গেছে।তারমানে চলে যাবেই।এখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই।চল আমরা চলে যায়।

প্রদীপ ও কোনো বাক্য ব্যয় না করে চলে যায় মেহেদির সাথে।

ওরা চলে যেতেই প্রণয় আর সজীব গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।সজীব গাড়ির তাঁর ঠিক করে গাড়ি চালানো শুরু করে পার্টি অফিস এর দিকে।প্রণয় ক্রুর হাসে রাফসান মির্জার ব্যর্থ হওয়া প্ল্যান ভেবে।আর মাথায় সাজাতে থাকে রাফসান মির্জা কে কিভাবে সারপ্রাইজ দেওয়া যায় সেটা।

🌸🌸

রাফসান মির্জা নিজের কেবিনে বসে মেহেদির সাথে কথা বলছে।প্রদীপ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—প্রদীপ, শাহরিয়ার প্রণয় এর গাড়ির তাঁর কে’টে দিয়েছিস তো?যাতে ব্রেক ফেল হয় খুব তাড়াতাড়ি?

প্রদীপ রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,

—জি স্যার। মেহেদি গাড়ির নিচে ঢুকে শুয়ে তার কাটছে।আমি চার দিকে তাকিয়ে দেখছি কেউ দেখছে কিনা?কেউ দেখে নি।

—গুড।

মেহেদির দিকে তাকিয়ে রাফসান মির্জা বলে,

—কি খবর বল? ওরা গাড়িতে উঠেছে তো?ব্রেক ফেল হয়েছে তো গাড়ি? এখনো কোনো নিউজ বের হচ্ছে কেন?

— জি স্যার এতক্ষণে গাড়ি ব্রেক ফেল হয়ে শাহরিয়ার প্রণয় বোধহয় মা’রা ও গেছে।মিডিয়া হয়তো এখনো খবর পায়নি।

মেহেদি এর কথায় রাফসান মির্জা কিছু বলতে যাবে এর আগেই তার ফোনে প্রণয় এর নাম্বার থেকে ফোন আসে।উনি ভ্রু কুঁচকে মেহেদি আর প্রদীপ এর দিকে তাকায়।ইশারায় তাদের কে কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে বলে।দুই জনে বের হতেই রাফসান মির্জা ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই প্রণয় সালাম দিয়ে বলে,

—মির্জা সাহেব এবার ও আপনার প্ল্যান ফ্লপ হলো।আল্লাহ এবার ও আমাকে বাচিঁয়ে নিয়েছে।কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মা’রে কে?আল্লাহ যদি বাচিঁয়ে রাখতে চায় তাহলে আপনি বার বার আমাকে মা’রার প্ল্যান করে কি লাভ?

বলেই ফোন কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা রা’গে পাশের ফুলের টব টা ছু’ড়ে ফেলে ভে’ঙে ফেলে।আবার নতুন প্ল্যান করে।”এত সহজে দমে যাওয়ার লোক রাফসান মির্জা নয়” -বলেই রাফসান মির্জা হাসতে থাকে।

🌸🌸

পার্টি অফিস থেকে মাত্র বের হয়েছে প্রণয় আর সজীব। আফজাল সাহেব এর সাথে বেশ অনেক ক্ষণ কথা হয়েছে প্রণয় এর।পার্টি অফিস থেকে বের হয়েই প্রণয় নিজের অফিসে আসে আরেক বার।কিছু ফাইলে তার সিগনেচার দরকার ছিলো। যা না করলেই নয়।তাই প্রণয় আবার অফিসে যায়।অফিসে যেতেই রিফাত ফাইল গুলো নিয়ে আসে।প্রণয় ফাইল গুলো তে সিগনেচার করেই ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

রাতে জান্নাত প্রণয় খাওয়া শেষ করে মাত্র রুমে এসেছে।বরাবর এর চাইতে আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছে প্রণয়। ঘড়িতে ঘন্টার কাঁ’টা বরাবর এগারো এর ঘরে।প্রণয় ঘরে এসেই দরজা বন্ধ করে দেয়। জান্নাত গিয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসে।প্রণয় ল্যাপটপ নিয়ে বসে। হালকা কিছু কাজ রয়ে গেছে সে গুলো শেষ করেই ঘুমাতে যাবে।

জান্নাত আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছে।প্রণয় কিছুক্ষণ পর পর ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে জান্নাত এর দিকা তাকাচ্ছে। নজর টা বরাবরই নাকের সেই লালচে কালো তিলটা তে গিয়েই আটকায়।

প্রণয় ল্যাপটপ রেখে উঠে এসে জান্নাত এর পিছনে দাঁড়ায়। জান্নাত আয়নার মধ্যে প্রণয় কে দেখে বলে,

—কিছু বলবেন?

জান্নাত এর কথার প্রতি উত্তরে প্রণয় কিছু বলে না। প্রণয় কিছু একটা মনে করতে- ই জান্নাত কে অপেক্ষা করতে বলে কার্বাড এর সামনে গিয়ে কার্বাড খুলে দুটো কিটকাট চকলেট এনে জান্নাত এর হাতে দেয়।জান্নাত চকলেট পেয়ে খুশিতে আপ্লুত হয়ে প্রণয় কে উৎকণ্ঠিত সুরে বলে,

—আপনি জানলেন কি ভাবে কিটকাট চকলেট যে আমার প্রিয়?

প্রণয় হেসে দিয়ে বলে,

—আপনার বেলকনি তে মাঝে সাঝে উঁকি ঝুঁকি দিলে বুঝা যাওয়া যাবে আপনার কোন চকলেট প্রিয়।

প্রণয় এর কথায় জান্নাত মাথা নিচু করে হেসে ফেলে ।মাঝে মাঝে বেলকনি তে বসে চকলেট খেতো।আর বেলকনি তে রাখা বাস্কেট এ চকলেট এর প্যাকেট ফেলো দিতো। হয়তো প্রণয় কোনো ভাবে সেটা দেখেছে।

জান্নাত আয়নার সামনের ছোট্ট টুলে বসে বসে চকলেট খাচ্ছে। সাথে পার্শিয়া আর জেনিথ ও জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত তাদের মুখের সামনে চকলেট খাওয়ার জন্য ধরলে তারা মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয়।আইসক্রিম হলে নিশ্চিন্ত দুই জনে খেতো। চকলেট হওয়ার কারণে খাচ্ছে না।

প্রণয় সোফায় বসে জান্নাত এর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।জান্নাত সেই দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রণয় কে স্বগতোক্তি করে সুধায়,

—কি দেখছেন এভাবে?

প্রণয় জান্নাত এর কথার প্রত্যুত্তর দেয় না।উঠে কাছে এসে পিছন থেকে জান্নাত এর দুই বাহু তে হার রেখে জান্নাত কে দাড়াঁতে বলে।জান্নাত দাড়াতেই নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে জান্নাত এর কপালে গভীর ভাবে ভালোবাসার পরশ ভুলিয়ে দেয়।কিছুক্ষণ নাকের তিল টার দিকে তাকিয়ে নাকের উপরে অধর ছোঁয়া দেয়।জান্নাত খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকালে প্রণয় জান্নাত কে আরেক ধাপ অবাক করে দিয়ে জান্নাত কে জড়িয়ে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,

—‘‘আপনার এই চুলের স্মেল,নাকের লালচে কালো তিলে এই কেমন নেশা ছড়িয়ে আছে যে আমি বারে বারে নেশায় পড়ে যায় জানুমণি ’’?

প্রণয় এর কথায় জান্নাত উত্তর দেয় না।প্রণয় এর বুকে মাথে রেখে হাসে।এই মানুষ টা তার একান্ত একজন। মানুষ টা পাশের বেলকনির সেই বালক টি যে এখন পেয়েছে তার স্বামী রূপের পরিচিতি।

এসব ভেবেই জান্নাত নিজেও প্রণয় কে দৃঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের হাত দুটো নিয়ে যায় প্রণয় এর পিঠের মধ্য খানে।আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।

জান্নাত শুনতে পায় প্রণয় এর বুকের বাম পাশের দুই ইঞ্চি নিচে “হার্ট” নামের যন্ত্র টার হৃৎ স্পন্দন। হার্ট এর প্রতিটা বিট যেন জান্নাত এর নাম বলে বিট করছে।জান্নাত আবেশে প্রণয় কে আরেকটু জড়িয়ে ধরে সকল সংকোচ ভুলে।প্রণয় ও প্রিয় তমা কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।পারে না তো যেন বুকের মধ্যে খানি তে ঢুকিয়ে রাখে।

প্রণয় নেশাক্ত কণ্ঠে জান্নাত কে বলে,

—আজ যদি আপনার কাছে একটু নির্লজ্জ হওয়ার আবদার করি।আপনি কি অনুমতি দিবেন জান্নাত?

এই কথার বিপরীতে কি বলা উচিত জান্নাত এর জানা নেই।মানুষ টাকে বাধা দিবে কেন?মানুষ টা তো তার স্বামী। আল্লাহর দেওয়া রহমত।এই মানুষ টা কে ‘না’ করার ক্ষমতা যে তার নেই।জান্নাত লজ্জায় মুখে র’ক্তিম আভা ছড়িয়ে প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে।প্রণয় প্রিয়তমা স্ত্রীর সম্মতি সূচক উত্তর পেয়ে হাসে।ভালোবাসার রাত টুকু তে হোক না ভালোবাসা আরেকটু গভীর। ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ভালোবাসার আন্দোলনে শিহরিত হোক শিরা উপশিরায়।নাম হোক একটা রাতের। আখ্যায়িত থাকুক ভালোবাসার রাত নামে।সন্ধি হোক দুটো মনের, দুটো প্রাণের,দুটো দেহের।

🌸🌸

রাত সাড়ে চারটা বাজে।রাত জাগা নিশাচর পাখিরা কিচিরমিচির করছে।প্রণয় এর উদাম প্রশস্ত বক্ষে- ই জান্নাত ঘুমাচ্ছে দু হাতে প্রণয় কে জড়িয়ে।যেন এই জায়গা টা তেই সে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে।প্রণয় তাকিয়ে আছে জান্নাত এর মুখশ্রীর দিকে।মেয়ে টার দিকে যত তাকিয়ে থাকে তত যেন তার ঘোর লেগে যায়।যত দেখি তত- ই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।মেয়ে টা কে দেখলেই যেন চক্ষু শীতল হয়।হালাল ভালোবাসা গুলো এমনি।প্রণয় নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ঘুম আসছে তার।দুই হাতে সে ও জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে। জান্নাত এর মাথার কোঁকড়া চুল গুলো তে হাত গলিয়ে দেয়।কপালে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয় আবারো।

হঠাৎ বাইরে কিছুর শব্দ পেতেই প্রণয় জান্নাত কে নিজের বুকের উপর থেকে আলগোছে তুলে নিয়ে বিছানায় বালিশে মাথা টা রেখে শুইয়ে দেয়।শরীর ঢেকে দেয় কাঁথা দিয়ে।উঠে একটা কালো টি- শার্ট গায়ে জড়িয়ে বেলকনি তে গিয়ে দাঁড়ায়।যা ভেবেছিলো তাই।রাফসান মির্জার লোক দের সাথে তার গার্ড দের সাথে মা’রামা’রি চলছে।

প্রণয় রুমে এসে একবার জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে সাইড টেবিল ড্রয়ার থেকে গু’লি টা নিয়ে সাইলেন্সার লাগিয়ে আবার বেলকনি তে চলে যায়।সেখান থেকে রাফসান মির্জার লোকদের মধ্যে একজন এর দিকে গু’লি টা তাক করেই ট্রিগার এর চাপ দেয়।সাথে সাথে গু’লি টা ছুটে গিয়ে লোকটার মাথায় ঢুকে।সেখান এই মা’রা যায় লোকটা। সবাই উপরে তাকাতেই প্রণয় কে দেখে।জানের ভ’য় সবার আছে।সেই জন্য সেখান থেকে পালিয়ে যায় প্রণয় কে না মে’রে। ভেবেছিলো গার্ড দের মে’রে প্রণয় এর বাসায় ঢুকে ঘুমের মধ্যে -ই প্রণয় কে মারবে।কিন্তু তারা কি আর ভাবতে পেরেছে প্রণয় আজ রাতেই জেগে থাকবে।

লোক গুলো চলে যেতেই প্রণয় মোবাইল টা নিয়ে রাফসান মির্জা কে ফোন করে।রাফসান মির্জা ঘুমে বিভোর। এই তো সুন্দর আরাম এর ঘুমের মাঝে কর্কশ শব্দ করে ফোন টা বেজে উঠায় বিরক্ত হলেন তিনি।ঘুম ঘুম চোখেই নাম্বার না দেখে ফোন কানে তুলে বিশ্রী ভাবে গা’লি দিয়ে বলে,

—এত রাতে ফোন করেছিস কোন আমলের দু সংবাদ দিতে?

প্রণয় রাফসান মির্জার গা’লি শুনে মাথা টা গরম হয়ে গেলে ও মাথা ঠান্ডা রাখে।প্রণয় বেশ বুঝতে পারছে রাফসান মির্জা ঘুমের ঘোরে তার নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে কথা বলছে।প্রণয় ক্রুর হেসে বলে,

— স্যার,একটা দু সংবাদ আছে।আর সেটা হলো, শাহরিয়ার প্রণয় তার স্ত্রীর সাথে একান্ত সময় কাটাচ্ছিলো।আর তার মাঝে আমরা উনার বাড়িতে এট্যা’ক করে ব্যাঘাত ঘটিয়েছি।

“শাহরিয়ার প্রণয়” নাম শুনে আর প্রণয় এর কণ্ঠ শুনে রাফসান মির্জার চোখ থেকে যেন ঘুম উড়ে গেলো।তিনি তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসে ভালো করে নাম্বার চেক করে দেখে প্রণয় ফোন করেছে।এবার একটু গলা ঝেড়ে কণ্ঠ গভীর করে বলে,

—শাহরিয়ার প্রণয় তুই এই ভোরে আমাকে কেন ফোন দিয়েছিস?

—মির্জা সাহেব আপনি এত দিন যা করেছেন তা আমি কিছু টা হলেও মেনে নিতাম।কিন্তু একটু আগে লোক পাঠিয়ে আক্র’মণ করা টা আমি কখনো মেনে নিবো না।বাইরে গেলে যেমন শান্তি দেন না।এখন বউ এর সাথে ও
একটু শান্তিতে সময় কাটাতে দিচ্ছেন না।আপনার এরকম অতর্কিত আক্র’মণ এর কারণে আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চারা আসবে কি ভাবে দুনিয়া তে?এগুলো ঠিক না মির্জা সাহেব।বউ এর সাথে অন্তত সময় কাটাতে দিবেন।

বলেই প্রণয় হেসে ফোন টা কে’টে দেয়।রাফসান মির্জা তব্দা খেয়ে বসে আছে।ভোর রাতে শাহরিয়ার প্রণয় কি পা’গল হয়ে গেলো নাকি?ফোন দিয়ে এসব কি বললো? রাফসান মির্জার মাথায় বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে প্রণয় এর কথা।প্রণয় এর কথা তার ভাবনার বাইরে।

প্রণয় রুমে এসে জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

—রাজনীতি তে জড়িয়ে শুধু ভুল করি নি।চরম ভুল করেছি।যার ফল প্রসূতি তে এখন বউ এর সাথে শান্তি তে সময় ও কাটাতে পারছি না।

বলেই।জান্নাত এর কপালে অধর ছুঁয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

[ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেক দিতে পারিনি ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে