#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:২২+২৩
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
অবশেষে এসেছে সেই মহেদ্রক্ষণ।আজ এমপি নির্বাচন। কার ভাগ্য কি আছে আল্লাহ ভালো জানে।প্রণয় পাচঁ টা চল্লিশে ঘুম থেকে উঠে গেছে।ফ্রেশ হয়ে বাসার পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে চলে যায়।নামাজ পড়ে বের হতেই পাখির বাবা প্রণয় কে ডাক দেয়।প্রণয় ও দাঁড়িয়ে যায়।দুই জনে আবার একসাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে থাকে।বাইরে স্নিগ্ধ বাতাস বয়ছে।শরীর ঠান্ডা করে দিচ্ছে।প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে নিরব থেকে উপভোগ করা টাই এক অন্য রকম শান্তি। নিরবতার উপসংহার ঘটিয়ে পাখির বাবা প্রণয় কে বলে,
—আজ তো নির্বাচন তাই না প্রণয়?
প্রণয় পাখির বাবা কথায় মুচকি হেসে প্রতিত্তোর দেয়,
—জি আংকেল। দোয়া করবেন।
—দোয়া তো সব সময় -ই আছে তোমাদের জন্য।আল্লাহ সফল করুক তোমাকে।
—জি ইনশাল্লাহ।
—পরিস্থিতি দেখে কি মনে হচ্ছে?সফল হবে তো?
—আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি আংকেল। জনগণ কে তো সহজে বুঝা যায় না।তারা মুখে আপনাকে এক কথা বললেও মনে তো থাকে অন্য কিছু।তাই কিছু বুঝতে পারছি না।আল্লাহ সহায় হলে ইনশাল্লাহ সফল হবো।
—আল্লাহ ভরসা।
বলেই আবার দুই জনে হাঁটতে শুরু করলো। বাসার কাছে আসতেই দুই জনে দুই জনের বাসায় চলে যায়।
প্রণয় বাসায় ঢুকে দেখে রোকসানা নাস্তা নিয়ে বসে আছে।প্রণয় কে দেখেই তিনি বলে,
—আয় বাবা,তাড়াতাড়ি বস।পরে তো নাস্তা করার সময় পাবিনা।
বলেই রোকসানা নিজেই প্রণয় কে খাইয়ে দিতে থাকলো। প্রণয় ও দ্বিরুক্ত প্রকাশ না করে মায়ের হাতে খেতে থাকলো। প্রণয় খেয়ে উঠেই বলে,
—আম্মু আমার এখুনি বের হতে হবে।
—আচ্ছা বাবা।দোয়া করি আমার ছেলে যেন সফল হয়ে আসতে পারে বাড়িতে।
—আমি ঘর থেকে আসছি আম্মু।
বলেই প্রণয় নিজের ঘরে চলে যায়।ঘরে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে জেনিথ কে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে।বেলকনিতে যায় একবার। যদি তার ‘‘মনোহরণকারী’’ কে একবার দেখতে পায়।
প্রণয় বেলকনিতে গিয়ে দেখে জান্নাত পার্শিয়া কে কোলে নিয়ে দোলনায় বসে চোখ বন্ধ করে ঢুলছে।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
—কেমন আছেন জান্নাত?
প্রণয় এর কথা কর্ণকুহর এ এসে বারি খেতেই জান্নাত তাকায় প্রণয় এর বেলকনির দিকে।জান্নাত নির্নিমেষ ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে প্রণয় এর দিকে।শুভ্র তায় ঘেরা পাঞ্জাবী, চুল গুলো হয়তো জেল দিয়ে সেট করা।চোখে রিমলেস সেই চশমা টা।হাতে কালো রঙ এর একটা ঘড়ি।ব্যাস এত টুকু তেই লোকটার সৌর্ন্দয অনেক বেড়ে উঠেছে যেন।আজকে যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগছে মি. ভালোবাসা কে।
জান্নত এর থেকে প্রণয় কোনো প্রতি উত্তর না পেয়ে আবার বলে,
—কি হলো কথা বলবেন না?
জান্নাত সম্বিত ফিরে আসে প্রণয় এর কথায়।প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—কিছু বলেছেন?
—কোন ধ্যানে ছিলেন? জিজ্ঞেস করেছি ভালো আছেন?
—জি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি.?
—আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তবে টেনশন কাজ করছে প্রচুর বুঝলেন?
—কেন?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নাত্মক চাহনি নিয়ে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে জান্নাত। প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,
—আজকে নির্বাচন না?আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছে? তাই নিয়ে টেনশন।
—আল্লাহ ভরসা।চিন্তা করবেন না।নির্বাচনে সৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে যদি আপনি যোগ দিয়ে থাকেন তাহলে ইনশাল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সফলতা দিবে।
—ইনশাল্লাহ।
—যাবেন কখন কাজে?
—এই তো এখন।
—আচ্ছা। শুভ কামনা রইলো।
—জি।আচ্ছা আসি তাহলে।
বলেই প্রণয় ঘুরে দাঁড়ায় ঘরে যাওয়ার জন্য।জান্নাত কিছু একটা ভেবে প্রণয় কে আবার ডাক দেয়।বলে,
—শুনুন মি. ভালোবাসা।
জান্নাত ডাক শুনে প্রণয় ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার রেলিং এর কাছে আসে।জান্নাত প্রণয় কে জিজ্ঞেস করে,
—আচ্ছা আপনার ভালোবাসার মানুষ টাকে বলেছেন?
জান্নাত এর কথায় প্রণয় হাসে।অতি সুক্ষ্ম হাসি সেটা।কিন্তু সেই হাসি টা তে ও আরো একবার হারিয়ে যায় জান্নাত। প্রণয় হেসেই বলে উঠে,
—জি বলেছি।
মুহূর্তে -ই জান্নাত এর মুখ টা ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করে তবে সেটা প্রণয় এর সামনে প্রকাশ করে না।প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে ফিচেল হেসে বলে,
—আচ্ছা ঠিক আছে।যান আপনার দেরি হয়ে যাবে তো।
প্রণয় হাসি দিয়ে চলে যায়।জান্নাত আকাশের দিকে তাকায়।তার মনে যেন কালো মেঘ এসে হানা দিয়েছে।আনমনেই বলে উঠে,
—“যাকে পাওয়ার নয়,তার প্রতি কেন মন কুঠিরে অনুভূতিরা জন্ম নেয়?”
🌸🌸
প্রণয়,রিফাত,সজীব,সুজন চার জনে গাড়িতে বসে যাচ্ছে নিজেদের গন্তব্যে।প্রণয় আর রিফাত কথা ডিসকাস করছে কিছু একটা বিষয় নিয়ে।কথার মাঝেই প্রণয় এর ফোন বেজে উঠে।প্রণয় ফোনের দিকে তাকিয়ে নাম্বার টা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে।এই সময় প্রণয় এই ফোন টা আশা করেনি। প্রণয় ফোন টা রিসিভ করে কানে নিতেই অপর পাশে কেউ একজন বলে উঠে,
—প্রণয় দা, যত দ্রুত সম্ভব আপনারা যেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন সেই রাস্তা চেঞ্জ করে অন্য রাস্তায় যান
প্রণয় কথার প্রতি উত্তরে লোকটা কে বলে,
—কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?
—প্রণয় দা,রাফসান মির্জার লোকেরা যে কোনো সময় আপনার উপর এট্যা’ক করতে পারে।
—আচ্ছা।তুই সাবধানে থাকিস।
বলে প্রণয় ফোন কে’টে সজীবের দিকে তাকিয়ে বলে,
—সজীব অন্য রাস্তা ধর।এই রাস্তায় রাফসান মির্জার লোকেরা আ….
প্রণয় পুরো কথা শেষ করার আগেই একটা গু’লি এসে প্রণয় এর পাশের জানালার কাচঁ ভেদ করে নিচে পড়ে যায়।প্রণয় এর পাশের জানালার কাচঁ ভে’ঙে প্রণয় এর হাতে কাচঁ গুলো পড়ে কিছু কিছু কাচঁ গেঁথে যায়।মুহূর্তে -ই প্রণয় এর শুভ্র পাঞ্জাবী লাল রং এর র’ক্ত এ রঙিন রূপ ধারণ করে।ব্য’থায় প্রণয় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
সজীব গাড়ি ঘুরিয়ে আগে আশে পাশে একটা ক্লিনিক যায়।রিফাত গার্ড দের ফোন করে আসতে বলে।তাদের -ই ভুল হয়েছে।গার্ড নিয়ে বের না হওয়ার ফল।গার্ড দের বলেছে পরে আসতে।তাই এই অবস্থা। আক্কেল হয়ে গেছে।
প্রণয় ক্লিনিক এ গিয়ে হাতে ড্রেসিং করিয়ে নেয়।ততক্ষণে গার্ড রা চলে এসেছে।প্রণয় এবার গার্ড দের নিয়েই আবার গন্তব্যে রওনা হয়।কাচঁ ভা’ঙা গাড়িটা মেকানিকস গ্যারেজ এ পাঠিয়ে দেয়।প্রণয় এর গাড়ির সামনে গার্ড দের একটা গাড়ি।পিছনে আরেকটা গাড়ি গার্ড দের।মাঝে তাদের গাড়িটা।
সকাল পোনে দশটা বাজে এখন।কেন্দ্রে মানুষের আনাগোনা মোটামুটি বাড়ছে আস্তে আস্তে। চার দিকে পুলিশ,আর্মি, র্যাব সবার উপর নজর রাখছে।প্রণয়,সজীব,রিফাত,সুজন কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখছে।তবে কাউকে বলছে না যে “শাহরিয়ার প্রণয়” কে ভোট দিতে।এখানে সবাই সেচ্চায় ভোট দিবে যাকে ইচ্ছে তাকে।এখানে কাউকে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করার কোনো মানেয় হয় না।
রাফসান মির্জা প্রণয় কে ভোট কেন্দ্রে সশরীর এ উপস্থিত থাকতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়।মনে মনে নিজের দলের লোক দের কয়েক টা বাজে ভাষায় গা’লি দিতে ও ভুলে না সে।একটা ও কাজের না।শাহরিয়ার প্রণয় কে মা’রতে এই পর্যন্ত কয় বার পাঠিয়েছে। প্রতি বার ফেইল হয়েছে, শাহরিয়ার প্রণয় বেচেঁ গেছে।বিরক্ত রা’গে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে তিনি।ঠিক তখনি তার একটা গার্ড এসে বলে,
—স্যার আপনাকে ওই দিকে ডাকছে।
লোকটা কথা বলে শেষ করতেই রাফসান তাকে সপাটে একটা থা’প্পড় মা’রে। লোকটা গালে হাত দিয়ে ভ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে রাফসান মির্জার দিকে।রাফসান মির্জা প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে রা’গে ফোস ফোস করতে চলে যায়।
থা’প্পড় খাওয়া গার্ড টা রাফসান মির্জার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আস্তে বলে,
—আমাকে থা’প্পড় মা’রলো কেন?আমি কি করেছি?পা’গলা ব্যা’রাম আছে।আমনে আমনে থা’প্পড় মা’রে।
বলেই লোকটা নিজের কাজে চলে যায়। চার দিকে মানুষ গিজ গিজ করছে।তবে সুষ্ঠ ভাবে ভোটদান হচ্ছে।সবাই নিজ ইচ্ছায় ভোট দিচ্ছে যাকে ভালো মনে করছে তাকে।প্রণয় এর গায়ে এখনো সেই লাল র’ক্ত এ রঞ্জিত পাঞ্জাবী। এটা নিয়ে মিডিয়ার লোকেরা অলরেডি এসেছিলো জেরা করতে।প্রণয় অত্যন্ত সুক্ষ্মদর্শী ভাবে তাদের রাস্তায় ঘটা বিষয় টা এড়িয়ে গিয়েছে।কোনো মতে মিডিয়ার লোকদের বুঝ দেওয়ার জন্য বলেছে, “রাস্তায় ছোট খাটো এক্সি’ডেন্ট হয়েছে।সে একা ছিলো সেই গাড়িতে। পিছনে গার্ড ছিলো “.।
প্রণয় এর এই কথায় মিডিয়ার লোকেরা আর কিছু বলেনি।তবে মিডিয়া মানেই তো মসলা পাতি মিক্সচার। তারা আরো মসলা মাখিয়ে তা ভার্চুয়াল জগতে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বিকেল চারটায় ভোট দান কার্যক্রম স্থিতি ঘোষণা করা হয়।তারপর থেকেই শুরু হয় ভোট গণনা কার্যক্রম। সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবে ভোট গণনা চলছে।প্রণয়, সজীব,রিফাত, সুজন মসজিদে চলে যায় আসর নামাজ আদায় করতে।
নামাজ পড়ে এসেই আবার কেন্দ্রে ফিরে আসে চার জন।প্রণয় তাকায় একবার রাফসান মির্জার দিকে।রাফসান মির্জা তার লোক দের কিছু একটা বিষয় নিয়ে শাষাচ্ছে।লোক গুলো মাথা নিচু করেই রাফসান মির্জার কথা শুনছে। প্রণয় তপ্ত শ্বাস ছাড়ে সেই দিকে তাকিয়ে।
ভোট গণনা করতে করতে সময় এসে পৌছায় পাচঁ টা পঞ্চাশ। কি হবে ফলাফল তা নিয়ে প্রণয়, রাফসান মির্জা দুই জনেই উত্তেজিত। প্রণয় ফলাফল নিয়ে যতটা নার্ভাস তার থেকেও বেশি নার্ভাস হয়ে গেছে তার সাথের তিন জনে।প্রণয় রিফাত এর তাকিয়ে বলে,
—তুই এতে ঘামছিস কেন?
রিফাত শার্টের হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—ভাই, চিন্তায় তো রীতিমত আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।কি করবো?
রিফাত এর কথা শুনে সুজন চোখ মুখ কুচকে বিরক্ত নিয়ে বলে,
—বাথরুমে যা।তোর জন্য একটু শান্তি মতো চিন্তা ও করতে পাচ্ছি।ভাগড়া দিস না তো।সজীব আমি জানি চিন্তার কোন পর্যন্ত গিয়ে ছিলাম?
শেষের কথাটা সুজন সজীব কে উদ্দেশ্য করে বলে।সুজনের কথায় সজীব এর থেকেও দ্বিগুণ বিরক্ত নিয়ে বলে,
—বাসর ঘর পর্যন্ত।
বলেই সজীব চোখ মুখ কুঁচকে অন্য দিকে ফিরে।সুজন সজীবের কথাটা অত টা খেয়াল না করে বলে,
—ও আচ্ছা।
একটু সর্তক হতেই সুজন বলে উঠে,
—কিহ্!!বাসর ঘর পর্যন্ত? নাউজুবিল্লা! সজীব, আমি তো এখনো বিয়েই করিনি। বাসর ঘর পর্যন্ত কি ভাবে যাবো?
—তো আমি জানি কেমনে? পা’গল এর মতো উল্টা পাল্টা প্রশ্ন কেন করবি আমাকে?তো..
সজীব আর কিছু বলবে সুজন কে এর আগেই প্রণয় একটা ধ’মক দিয়ে বলে,
—চুপ করবি তিনজন এ?সারাক্ষণ এত ঝ’গড়া কি ভাবে করিস তোরা তিন জনে?ফলাফল কি আসে সেটা নিয়ে টেনশনে আছি।আর তোরা এখানে ঝ’গড়া করছিস?
—সরি ভাই!
নিচু কণ্ঠে তিন জনে বলেই চুপ করে যায়।ফলাফল প্রকাশ এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে দুই পক্ষের লোকেরা।
🌸🌸
সন্ধ্যা ছয়টা বাজে।শাহরিয়ার পাবেলের বাসায় জুনায়েদ আজমীর ফ্যামিলি সহ সবাই ড্রয়িংরুমে টিভির সামনে আসন পেতে বসে আছে।মূলত প্রণয়ের নির্বাচন এর ফলাফল নিউজ দেখার জন্য বসে আছে।জান্নাত এক পাশে পার্শিয়া আর জেনিথ কে কোলে নিয়ে বসে আছে।
দুই জনের সাথে বসে বসে দু’ষ্টামি করছে আর কিছুক্ষণ পরে পরে টিভির দিকে তাকাচ্ছে।টিভির মধ্যে লাইভ নিউজ চলছে।হঠাৎ এক সময় ক্যামেরা এসে প্রণয় এর মুখের দিকে আ’টকে। টিভির স্কিনে প্রণয় এর চেহারা ভেসে উঠে।জান্নাত তাকায় তার মি. ভালোবাসার দিকে।মি. ভালোবাসা ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে কোনো দিকে। কিয়তক্ষণ পরেই প্রণয় ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি তুলে মুনাজাত এর মতো হাত তুলে মুখ মণ্ডলে ছুঁয়ে দেয় হাত।ড্রয়িংরুম এর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠতেই জান্নাত সম্বিত ফিরে আসে নিজের ভাবনা থেকে।সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে গেছে মি. ভালোবাসা এমপি হয়ে গেছে।
জান্নাত আবার টিভির স্কিনে চোখ দেয়।প্রণয় বক্তব্য দিচ্ছে হাসি মুখে।গলায় গাঁদা ফুলের মালা।রজনীগন্ধা আর গোলাপ এর ও মালা আছে গলায়।জান্নাত তাকিয়ে আছে লোক টার সেই অমায়িক হাসি টার দিকে।ইশশ্ মি. ভালোবাসা।
🌸🌸
প্রণয়রা বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়েছে।পিছনে সবাই চি’ৎকার করে যাচ্ছে প্রণয় এর নাম নিয়ে নিয়ে।প্রণয় সবাই কে থামতে বলে গেইটের ভিতরে ঢুকে।কিন্তু থামতে বললেই কি থামে কেউ?সেই চি’ৎকার করে যাচ্ছে।প্রণয় আর ওদের বারণ না করে বাসার কলিং বেলে হাত দেয় বাজানোর জন্য।কিন্তু কলিং বেল বাজানোর আগেই খট করে দরজা খুলার শব্দে প্রণয় আর কলিং বেল না দিয়ে হাত নামিয়ে ফেলে।দরজা খোলার পরেই প্রণয় তাকিয়ে দেখে রোকসানা দরজার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় তার মাকে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরে।রোকসানা প্রণয় এর কপালে আদর দিয়ে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে ছেলেকে।
প্রণয় বাসার ভিতরে ঢুকে দেখে শাহরিয়ার পাবেল, জুনায়েদ আজমী, রাহেলা, জুরাইন, আহ্লাদী,প্রান্তিক সবাই তার দিকে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু একটা মানুষ উপস্থিত নেই। প্রণয় আড় চোখে চার দিকে তাকায়।কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষ টার দেখা পায় না।তাই সবার সাথে কথায় মশগুল হয়ে পড়ে।ভেবেছে জান্নাত হয়তো তাদের বাসায় আছে।তাই আর ভাবেনি প্রণয়।
নিচে সবার সাথে কথা বলে উপরে চলে আসে প্রণয়। নিজের রুমে যাওয়ার জন পা বাড়াতেই পাশের রুম থেকে মেয়েলি কণ্ঠ স্বর পেয়ে সেই দিকে যায়।এটা প্রান্তিক এর রুম।প্রান্তিক এর রুমে কে থাকবে মেয়ে? কৌতুহল নিয়ে প্রান্তিক এর রুমে না ঢুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে জান্নাত পার্শিয়া আর জেনিথ এর সাথে কথা বলছে।বোবা প্রাণী দুটা ও জান্নাত এর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।যেন তারা সব বুঝে।
প্রণয় কে নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই প্রান্তিক ভ্রুকুটি কিছুটা কুঁচকে ফেলে।আস্তে আস্তে প্রণয় এর পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আগে রুমের দিকে তাকায়।দেখে জান্নাত বিড়াল দের সাথে কথা বলছে।এবার প্রণয় এর কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে,
—কি সুন্দর মচৎকার দৃশ্য তাই না?
প্রণয় এর ধ্যান নেই।অজান্তে বলে উঠে,
—হ্যাঁ। এক কথায় দারুণ।
প্রণয় এর কথা শুনে প্রান্তিক ফিক করে হেসে দেয়।কারো হাসি শুনে প্রণয় পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রান্তিক দাঁত কেলিয়ে হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। প্রান্তিক প্রণয় কে বলে,
—ভাইয়া তুমি এতটাই ধ্যানে ছিলে যে আমি যে চমৎকার কে মচৎকার বলেছি সেটাও তুমি ধরতে পারোনি।এক কথায় দারুণ না?
—তোর লজ্জা করছে না বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে?
—নাহ।সব তো তোমার থেকেই শিখা।তাই লজ্জা নাই।বাই দ্যা ওয়ে জান্নাত কে কবে বিয়ে করছো সেটা বলো? আর কতো লুকিয়ে চু’রিয়ে দেখবে।এর থেকে ভালো বিয়ে করে নাও। এক দিকে শহর সামলাবে অন্য দিকে বউ সামলাবে।বিয়ের বছর গড়ার মাথায় না হয় বাচ্চা কাচ্চা ও সামলাবে।এমন হলে তো দারুণ হয় নেতা সাহেব।
প্রান্তিক প্রণয় এর কাঁধে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে কথা টা বলে।প্রণয় প্রান্তিক এর হাত টা কাধঁ থেকে নামিয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুরাইন আর আহ্লাদী আসে।আহ্লাদী এর হাতে চার টা চায়ের কাপ একটা ট্রে তে।জুরাইন প্রান্তিক আর প্রণয়ের এর দিকে অতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
—রুমে চলুন।আপনাদের দুই ভাইয়ের সাথে আমার কিছু গুরুত্ব পূর্ণ শলাপরামর্শ করার আছে।
জুরাইন কথাটা একটু ভাব নিয়েই বলে।প্রান্তিক আর প্রণয় ভ্রু কুঁচকে তাকায় জুরাইন এর দিকে।জুরাইন তাদের তাকানো কে উপেক্ষা করে আহ্লাদী কে নিয়ে রুমের ভিতর ঢুকে।জান্নাত এতক্ষণে খেয়াল করেছে তাদের।জুরাইন এর পিছন পিছন প্রণয় আর প্রান্তিক ও এসে রুমে ঢুকে।জান্নাত তাকায় একবার প্রণয় এর দিকে।প্রণয় ও জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে ছিলো সেই জন্য দুই জনের চোখা চুখি হয়ে।জান্নাত দৃষ্টি নামিয়ে অন্য দিকে নজর দেয়।
জুরাইন আহ্লাদী এর হাত এর ট্রে থেকে এক কাপ চা নিয়ে জান্নাত এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
—আপু তুই একটু বাইরে যা তো।আমাদের প্রাইভেসির প্রয়োজন।
জান্নাত জুরাইন এর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।এই দশ বছরের পিচ্ছি জুরাইন এর আবার কিসের প্রাইভেসি? ভেবে পায় না জান্নাত। জান্নাত জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—কিসের প্রাইভেসি? আমাকে রুম থেকে বের করে কি যুক্তি আটবি তিন জনে?
—তা তোর না জানলে ও চলবে আপু।তুই বের হো তো।
জান্নাত আর কোনো কথা বলেনি।ও রুম থেকে না বের হলে যে জুরাইন ঘ্যান ঘ্যান করবে সেটা ও খুব ভালো মতেই বুঝতে পেরে বের হয়ে এসেছে।জান্নাত চলে যেতেই তার পিছন পিছন পার্শিয়া ও চলে যায়।জেনিথ বিছানায় একবার প্রণয় এর মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার জান্নাত আর পার্শিয়ার যাওয়ার দিকে তাকাচ্ছে। সে যেন সিদ্ধান্ত হীন তাই ভুগছে।প্রণয় কে ছাড়া যেতে ইচ্ছে করছে না।আবার জান্নাত আর পার্শিয়ার কাছে ও থাকতে ইচ্ছে করছে।
প্রণয় হাসি দিয়ে জেনিথ কে কোলে নিয়ে আদর দিয়ে বিছানায় বসে।প্রান্তিক প্রণয় এর হাতে একটা চায়ের কাপ দেয়।নিজে একটা নেয়।জুরাইন একটা নিতেই আহ্লাদী ট্রে নিয়ে চলে যায়।প্রণয় এবার জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—কি বলবেন আমাদের ছোট ভাই?
জুরাইন প্রণয় এর কথা শুনে তার দিকে তাকায়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রান্তিক আর প্রণয় এর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
—ভাইয়া আমি পাখি কে ভুলতে পারছি না।ওর সাথে আমার সেটিং করিয়ে দিন না।
জুরাইন এর কথা শুনে প্রণয় প্রান্তিক দুই জনে বিষম খায়।প্রণয় চায়ের কাপ টাকে বেডের পাশের ছোট টেবিলে রেখে জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—দেখ ছোট ভাই।পাখি কে যে তুমি ভালো বাসো তার প্রমাণ কি?এটা কোনো ভালোবাসা না।এটা হচ্ছে তোমার খারাপ সঙ্ঘ এর প্রভাব। তুমি তোমার যেই বন্ধুদের সাথে মিশো নিশ্চিত তারা তোমার সাথে এই বিষয়ে বেশি কথা বলে।সেই জন্য তুমি ওদের কথা গুলো ভাবার কারণে পাখির সাথে কথা বললে,পাখি কে দেখলে তোমার মনে হয় তুমি ওকে ভালোবাসো।আসলে সেটা মোটেও না।এটা ভালোবাসা না। এটা হচ্ছে সঙ্ঘ দোষের প্রভাব। তুমি বন্ধু পরিবর্তন কর।
প্রণয় এর কথায় প্রান্তিক এক মত হয়ে বলে,
—একজ্যাক্টলি রাইট ভাইয়া। আমি এই পর্যন্ত জুরাইন কে বার বার এই কথাটা বুঝাইতে চাচ্ছি। কিন্তু ও বুঝতে পারছে না।
প্রান্তিক আর প্রণয় এর কথা শুনে জুরাইন একটু চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।যার ধরুন বুঝা যাচ্ছে তাদের কথা জুরাইন এর পছন্দ না।জুরাইন এবার প্রতিত্তোর দেয়,
—ভাইয় আমি চায়ের কাপ ছুঁয়ে বলছি আমি পাখি কে সত্যি ভালোবাসি। এটা আমার সঙ্ঘ দোষ এর প্রভাব না।যদি আমি মিথ্যে বলি তাহলে তো কাপ টা ভে’ঙে যেতো।
জুরাইন কথাটা বলে থামে।রুমের বাইরে থেকে পার্শিয়া ডেকে উঠতেই প্রণয় এর কোল থেকে জেনিথ লাফ দিয়ে খাট থেকে নামতে গেলে জুরাইন এর হাতের সাথে বারি খায়।আর তাতে জুরাইন এর হাত থেকে কাপটা ফ্লোরে পড়ে ভে’ঙে যায়।আচমকা কাপ ভে’ঙে যাওয়াতে প্রণয় প্রান্তিক চমকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে জুরাইন এর দিকে তাকাতেই দুই ভাই হু হা করে হেসে উঠে।তাদের হাসি দেখে এবার জুরাইন কেঁদে -ই দেয়।যেই সেই কান্না না।প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।প্রান্তিক হাসতে হাসতে শেষ।কাপ ছুঁয়েছে বলে কাপ টা ভে’ঙে গেছে আর প্রমাণ করে দিছে এটা জুরাইন এর সঙ্ঘ দোষ।
🌸🌸
—অভিনন্দন মি. ভালোবাসা।
পিছন থেকে কারো কথা শুনে প্রণয় তাকায়।দেখে জান্নাত তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় হাসি দিয়ে বলে,
—শুকরান।
—আপনাকে তাহলে এবার থেকে কি বলে ডাকা যায় বলুন তো?মি. ভালোবাসা?নাকি এমপি সাহেব।
—আপনার যা ইচ্ছে।তবে আপনার মুখে মি. ভালোবাসা ডাক টাই বেশি মানায়।
—আচ্ছাহ।
বলেই জান্নাত হেসে প্রণয় কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।প্রণয় জান্নাত যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘‘অপেক্ষার অবসান না হয় এবার ঘটাবো জান্নাত।তবে আপনার অজান্তে।’’
চলবে ইনশাল্লাহ
#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:২৪
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
রাফসান মির্জা নিজের অফিসে বসে আছে।রা’গে তার মাথা ফে’টে যাচ্ছে।এত কষ্ট করলো এই নির্বাচনে জিতার জন্য।সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য।কিন্তু দিন শেষে তার ফলাফল শূণ্যের কোটায়। তার কর্মরত সব গুলো লোক গুলো কে ইচ্ছা মতো অশ্রাব্য ভাষায় গা’লি দিয়েছে রা’গ কমানোর জন্য।দুটো গার্ড এর মাথায় শ্যুট করে মে’রে ও ফেলেছে।কারণ গতকাল সকালে তাদের দায়িত্ব দিয়েছিলো প্রণয় কে মা’রার জন্য।সব গুলো অকর্মণ্য।
আপাতত রাফসান মির্জার আশেপাশে কেউ নেই।সবাই ভ’য়ে বাইরে আছে।রাফসান মির্জা নিজের কেবিনে ভাঙচুর করেছে।কিছুক্ষণ পরেই দরজায় কেউ নক দেয়।রাফসান মাথা তুলে সেই দিকে তাকিয়ে অশ্রাব্য গা’লি দিয়ে বলে,
—কোন কু…বাচ্চা এখন ডিস্টার্ব করতে এসেছিস আমাকে?খোদার কসম একেবারে গু’লি করে ঠুলি উড়িয়ে দিবো আমাকে ডিস্টার্ব করলে।
রাফসান মির্জার গা’লি শুনে ভ’য়ে গুটিয়ে দরজার বাইরে -ই দাঁড়িয়ে থাকে প্রদীপ আর মেহেদি। প্রদীপ তবুও একটু সাহস করে দরজা হালকা খুলে শুধু মাথাটা ঢুকিয়ে রাফসান মির্জা কে বলে,
—স্যার এমপি শাহরিয়ার প্রণয় এসেছে।আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।
“এমপি শাহরিয়ার প্রণয় ” কথা টা যেন রাফসান মির্জার রা’গে ঘি ঢাললো। টেবিলের উপর হাতের কাছে একটা গ্লাস ছিলো। গ্লাস টা নিয়েই দরজার দিকে তাকিয়ে প্রদীপ এর দিকে ছুঁয়ে মা’রলো।প্রদীপ এর মাথায় পড়ার আগেই প্রদীপ মাথা বের করে আনে।
রাফসান মির্জা মেহেদি কে ডাকতে -ই মেহদি ভ’য়ে ভ’য়ে ভিতরে যায়।রাফসান মির্জা মেহেদির দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
—শাহরিয়ার প্রণয় কে আসতে বল।আর প্রদীপ কে বল এগুলো পরিষ্কার করার জন্য লোক পাঠাতে।
—জি স্যার।
বলেই মেহেদি বেরিয়ে যায়।কিছুক্ষণ পরেই প্রণয় ঢুকে রাফসান মির্জার কেবিনে। প্রণয় এর পরে প্রদীপ দুই জন লোক কে নিয়ে কেবিনে ঢুকে সব পরিষ্কার করতে। কেবিনে ঢুকে প্রণয় চার দিকে একবার তাকায়।কেবিন এর চারপাশে ফুলের টব কাচঁ, গ্লাস ভে’ঙে পড়ে আছে।চেয়ার গুলো ও উলটা পালটা হয়ে পড়ে আছে।প্রণয় সব কিছু নজরে নিয়ে একটা চেয়ার ঠিক করে রাফসান মির্জার সামনে বরাবর বসে।প্রদীপ পুরো কেবিনে চোখ ভুলিয়ে এই অবস্থা দেখে রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়ে বলে,
—স্যার এখানে কি হয়েছে?এই অবস্থা কেন সব কিছুর?
রাফসান মির্জা বিরক্ত হয় প্রদীপ এর কথায়।ছেলেটা প্রয়োজন এর তুলনায় বেশি কথা বলে।ইচ্ছে করে একে মে’রে ফেলতে। নেহাত সব গুলো কাজ ঠিক মতো করে আর শাহরিয়ার প্রণয় এর ইনফরমেশন যোগাড় করে দেয় দ্রুত। তাই একে নিজের কাজে এখনো ধরে রাখছে।নয়তো মে’রেই ফেলতো।
রাফসান মির্জা বিরক্ত নিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে প্রদীপ এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
—কেন তুই দেখছিস না?ভূমিকম্প হয়ছে।যা এবার এখান থেকে।
রাফসান মির্জার কথায় প্রদীপ তো পুরো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ বড় বড় করে রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়ে আছে।যেন পৃথিবীর সব থেকে আশ্চর্য মানুষ তার সামনে বসে আছে আর অষ্টম আশ্চর্য এর কথা শুনিয়েছে তাকে।
প্রদীপ নিজের আশ্চর্যদায়ক অবস্থা থেকে বের হয়ে রাফসান মির্জা কে সুধায়,
—স্যার ভূমিকম্প হয়ছে আপনি বেচেঁ আছেন কেমনে? আপনি ম’রেন নাই?আমি মনে করছি ভূমিকম্প হইলে আপনার মাথায় ছাদ ভে’ঙে আপনি এতক্ষণে ম’রে গেছেন।
—তুই কি আমার ম’রার আশা করছিস নাকি?
—হ্যাঁ না স্যার তা…
—বের হ যা এখান থেকে।একমিনিট ও তোকে দেখতে চাই না।
প্রদীপ কথা শেষ করার আগেই রাফসান মির্জা ধ’মক দিয়ে থামিয়ে দেয়।প্রদীপ লোক দুটো কে নিয়ে বেরিয়ে যায়।এতক্ষণে রুম পরিষ্কার হয়ে গেছে।
প্রণয় এতক্ষণ চুপ করে প্রদীপ আর রাফসান মির্জার কথা শুনছিলো। প্রণয় বুঝে গেছে প্রদীপ যে রাফসান মির্জা কে বেশি বিরক্ত করে কথা বলে।একে বারে রিফাত,সজীব,সুজন এর কার্বন কপি যেন।প্রণয় সুক্ষ্ম হাসে ঠোঁটের কোণে রেখা ফুটিয়ে।
রাফসান মির্জা গলা খাকাড়ি দিয়ে প্রণয় কে বলে,
—তা শাহরিয়ার প্রণয় আমার অফিসে কেন??
প্রণয় হেসে উত্তর দিলো.,
—তেমন কিছু না।দেখতে আসলাম আপনার কি হাল চাল।এখন এসে দেখি আপনি ঠিক থাকলে ও আপনার চার পাশের অবস্থানরত পরিবেশ ঠিক নেই।
—কি বলতে এসেছেন সোজা সাপটা বলুন।মাথা গরম করবেন না।
—আহা রে’গে যাচ্ছেন কেন?অতি রা’গ ভালো না।
বলেই প্রণয় ফোনে কিছু একটা করে।কিছুক্ষণ পরেই রাফসান মির্জার কেবিন এর নক পড়ে।রাফসান মির্জা কিছু বলার আগেই প্রণয় অনুমতি দেয় অনুমতি দেয় ভিতরে আসার।অনুমতি পেয়ে কেবিনে একে একে রিফাত, সজীব, সুজন ঢুকে। তিন জনের হাতে তিনটা মিষ্টির প্যাকেট। তিন জনে রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়েই বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে দেয়।
—এসব কি?মিষ্টি কেন এখানে?
রাফসান মির্জার প্রশ্নে প্রণয় হেসে বলে,
—এতক্ষণ ওরা তিন জন আর আমার গার্ড রা মিলে আপনার অফিসের সকল কে মিষ্টি বিতরণ করেছে। আপনি বাকি ছিলেন তাই আপনার জন্য ও নিয়ে আসলাম। আর যাই হোক এমপি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। এই খুশি টা তো আমি একা ভোগ করতে পারি না।আমার প্রতিনিধি কে এই আনন্দে অংশীদার করার ভাবনায় আপনার জন্য মিষ্টি নিয়ে চলে আসলাম।
বলেই প্রণয় প্রশস্ত হাসি দেয়।রাফসান মির্জা তেলে বেগুনে চেতে উঠে বলে,
—আপনি বেশি করছেন।এর ফল ভালো হবে না।আ…
আর কিছু বলতে পারিনি।এর আগেই প্রণয় রাফসান মির্জার মুখে একটা মিষ্টি পুরে দেয়।রাফসান মির্জা চোখ বড় বড় করে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে আছে।প্রণয় হেসে বলে,
—অতিরিক্ত রা’গ ভালো না।তাই মিষ্টি খেয়ে রা’গ কমান।আসি আবার দেখা হবে ইনশাল্লাহ। আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে মানুষের সেবা করতে পারি।
বলেই প্রণয় বেরিয়ে যায়।প্রণয় এর পিছন পিছন রিফাত, সজীব, সুজন বেরিয়ে যায়।রিফাত বের হওয়ার আগে তার হাতের মিষ্টির প্যাকেট রাফসান মির্জার টেবিলে রেখে বলে,
—মিষ্টির দাম কিন্তু বেশি তবুও বিনা পয়সায় দিয়ে গেলাম আপনাকে।এমপি হতে পারেন নি দুঃখ লাগছে?নো সমস্যা। মিষ্টি দিয়ে গেলাম। মিষ্টি খেয়ে দুঃখ কমান আর বেশি বেশি প্রণয় ভাইকে মনে করে দোয়া করেন উনার জন্য।আসি ক্যান? মিষ্টি লাগলে বলবেন। লজ্জা পাবেন না।আমরা আমরা -ই তো।
বলেই রিফাত ভেটকি মাছের মতো রাফসান মির্জা কে একটা ভেটকি মে’রে বেরিয়ে যায়।রাফসান মির্জা রা’গে মিষ্টার প্যাকেট টা ফেলে দিয়ে বলে,
—তোকে আমি দেখে নিবো শাহরিয়ার প্রণয়। এমপি হয়ে খুব সুখে আছিস তাই না?খুব আনন্দ লাগছে?তোর আনন্দ অতি তাড়াতাড়ি আমি শেষ করবো দেখিছ।
🌸🌸
রাহেলা জোর করে জান্নাত কে একটা মেরুন কালারের শাড়ি পড়িয়েছে।জান্নাত এতে প্রচণ্ড বিরক্ত। মূলত আজকে তাকে দেখতে আসবে।এখন দুপুর দুইটা পঁয়তাল্লিশ বাজে।পাত্র পক্ষ এখনো আসেনি।এসে যাবে যে কোনো সময়।জান্নাত নিজের বেলকনিতে বসে আছে দোলনায়। গায়ে মেরুন রঙ এর শাড়ি জড়ানো। মাথায় হিজাব বাধা।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে।বর্ষার আগমন এর আর মাত্র আনুমানিক সাত দিন আছে।কিন্তু আকাশে এখন থেকেই মেঘ এসে হানা দিচ্ছে।জান্নাত এর কাছে মনে হচ্ছে ওগুলো বিষন্ন তার মেঘ।ঠিক যেমন তার মনে বিষন্ন তার মেঘ এসে জমাট বাধছে,ঠিক তেমন।এই মেঘ কি কখনো মুছে গিয়ে নীলাভ আকাশ টা পরিচ্ছন্ন করবে?প্রকাশ করবে কি তার মনে মিঃ ভালোবাসা কে নিয়ে জন্ম নেওয়া অনুভূতি গুলো?হবে কি মিঃ ভালোবাসা জান্নাত এর একান্ত একজন ভালোবাসার মানুষে রূপান্তরিত?
জানা নেই এই প্রশ্নের উত্তর জান্নাত এর অজানা। মনে এসে বিঁধেছে সুক্ষ্ম ভ’য়।আজকে যে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে কি হবে? তা তার ভাবনাতীত।
পার্শিয়া আর জেনিথ জান্নাত এর বেলকনিতে খেলছে একপাশে বসে।জান্নাত তাদের দুই জনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।হঠাৎ নিচ থেকে রাহেলা ডাকতেই দোলনা থেকে উঠে চলে যায় রুমে।রাহেলা জান্নাত এর শাড়ির আচঁল টাকে পিছন থেকে টেনে সামনে এনে জান্নাত এর হাতে ধরিয়া দেয়।তাকে নিয়ে নিচে পাত্র পক্ষের সামনে চলে আসে।পাত্র পক্ষ থেকে ছেলের বোন আর ছেলের খালামণি এসেছে।আর ছেলের ক্লাস নাইনে পড়ুয়া ভাই।
জান্নাত তাদের কে সালাম দিয়ে তাদের সামনের সোফায় বসে।কিছুক্ষণ কথা বলে।তারা যা যা জিজ্ঞেস করার করে।জান্নাত অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাবলীল ভাবে উত্তর দেয়।
আছরের আজান এর কিছু পরেই মানুষ গুলো চলে যায়।জান্নাত নিজের ঘরে ফিরে আসে।শাড়ি চেঞ্জ করে নামাজ পড়ে নেয়।বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
—🌸‘‘বিষাদের ছায়া যখন পড়ে মনে,
অনুভূতি গুলো থেকে যায় তখন গোপনে’’।🍁
এইযে আমার মনে ও বিষাদের ছায়া পড়েছে মিঃ ভালোবাসা।আপনার প্রতি জন্ম নিয়েছে মন কুঠিরে এক অন্য রকম অনুভূতি। কিন্তু সব টুকুই রয়ে আছে আপনার গোপনে। আচ্ছা আপনি কখনো জানতে পারবেন তা?হয়তো জানবেন, হয়তো না।
🌸🌸
টিক টিক শব্দ করে ঘণ্টার কাঁ’টা এসে থেমেছে বারো টার ঘরে।জান্নাত কফি হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত এক ঘন্টা ঘুমিয়েছে বিধায় এখন ঘুম আসছে না চোখের পাতায়। তাই কফি হাতে বেলকনিতে চলে এসেছে রাতের মনোমুগ্ধকর নির্জন পরিবেশ উপভোগ করতে।
—এত রাতে বেলকনিতে? ঘুমান নি কেন জান্নাত?
হঠাৎ কারো কণ্ঠ স্বর পেতেই কিছুটা চমকে উঠে জান্নাত। পর মুহূর্তে নিজেকে ধাতস্থ করে প্রণয় এর বেলকনিতে তাকিয়ে দেখে প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত ফিচেল হাসে।স্বগতোক্তি করে বলে,
—নয়টায় ঘুমিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ তাই ঘুমা আসছে না।
প্রণয় জান্নাত এর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু একটা বুঝে নিয়ে কথার প্রত্যুত্তর দেয়,
—আপনার কি মন খারাপ জান্নাত?
জান্নাত তাকায় প্রণয় এর দিকে।লোকটা উৎসুক প্রশ্নাতীত চাহনি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার উত্তর এর আশায়।জান্নাত বলে,
—মন খারাপ কিনা নিজের ও বোধগম্য হচ্ছে না।
—কোনো সমস্যা? কিছু নিয়ে কি চিন্তিত আপনি?
—নাহ। তেমন কিছু না।আজকে দেখতে আসছিলো পাত্র পক্ষ বুঝলেন? হয়তো অতি শীঘ্রই বিয়ে টা হয়ে যাবে।
জান্নাত এর মুখে “বিয়ের” কথা শুনে প্রণয় এর মুখ টা ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করে।মুহূর্তে -ই মাথায় এসে হানা দেয় একটি কথা “জান্নাত কে হারিয়ে ফেলবে না তো”?মনের তোলপাড় শুরু হয়।তবুও সেটা প্রকাশ করে না জান্নাত এর সামনে। মুখশ্রী তে হাসির চাপ ফুটিয়ে তুলে জান্নাত কে বলে,
—জান্নাত একটা ওয়ে বলবেন ?
জান্নাত তাকায় প্রণয় এর দিকে।সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়। প্রশ্ন করে,
—কিসের ভিত্তিতে?
—কি করলে আমাকে ও পাত্রী পক্ষ দেখতে আসবে?
—মানে?
—আপনি মাত্র অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ছেন। কিছুদিন পর পর – ই আপনাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসে।অথচ দেখেন আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।রাজনীতি করি।এমপি হয়েছি। বাবার অফিস ও চালায়।তারপর ও পাত্রী পক্ষ আমাকে দেখতে আসে না কেন? আজব! কিছুর অভাব নাই শুধু একটা বউ ছাড়া।
বলেই প্রণয় আফসোস এর নিশ্বাস ফেলে।জান্নাত প্রণয় এর কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে সেটা ভুলে গেছে।
হঠাৎ জান্নাত প্রণয় এর পিছনে প্রান্তিক কে দেখে অন্য পাশে চলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রণয় ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে জেনিথ কে কোলে নিয়ে এসে প্রণয় এর পাশে দাঁড়ায়। প্রণয় প্রান্তিক কে দেখে বলে,
—কিরে সাড়ে বারোটা বাজে ঘুমাস নি?আমার ঘরে কেন তুই?
প্রান্তিক জেনিথ কে প্রণয় এর কোলে দিয়ে বলে,
—ঘুমে ছিলাম। জেনিথ আমার রুমে গিয়ে লাফালাফি করে ঘুমের ডিস্টার্ব করছে তাই দিয়ে গেলাম।
—দরজা লাগিয়ে ঘুমাস নি কেন?
—ভুলে গেছিলাম।
—আচ্ছা যা।যাওয়ার সময় আমার রুমের দরজা টা ভিড়িয়ে দিয়ে যাস।তাহলে আর জেনিথ বের হতে পারবে না।
প্রান্তিক যাওয়ার জন্য ঘুরতেই হঠাৎ চোখ পড়ে পাশের বেলকনিতে এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা জান্নাত এর দিকে।কফির কাপ হাতে দাড়িঁয়ে আছে।প্রান্তিক একবার প্রণয় এর দিকে তাকায় আবার জান্নাত এর দিকে।দুই জনের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে হুট করে চিল্লিয়ে বলে উঠে,
—“আল্লাহ এই দুই জনকে হয় বিয়া করাই দাও, নয়তো এই দুই টা বেলকনি ভে’ঙে ফেলো।এদের রাত দিন চব্বিশ ঘন্টার অত্যা’চারে বেলকনি দুইটা ও অতিষ্ঠ। আল্লাহ আমার কথা রেখো “.।
প্রান্তিক এর কথা শুনে জান্নাত সেই দিকে তাকায় ততক্ষণে প্রান্তিক সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে গেছে।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে যায়।প্রণয় এবার হাসি দিয়ে বলে,
—আমিন।আল্লাহ বেলকনি ভা’ঙার দরকার নেই।বিয়ে হলেই হবে।ওটা কবুল করিয়ে দিও।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤