#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৬
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
পার্টি অফিসে আফজাল সাহেব সহ আরো বেশ কিছু লোকের মাঝে মিটিং এ উপস্থিত আছে প্রণয়। আর সাত দিন পরেই নির্বাচন। তা নিয়ে সবাই মিলে গুরুত্ব পূর্ণ মিটিং এ বসেছে।কি করলে ভালো হবে সে সব নিয়ে সবাই সবার মতামত দিচ্ছে। সুষ্ঠ ভাবে যেন নির্বাচন হয় তা নিয়েও আলোচনা চলছে।সবার মাঝে থেকে আজাদ নামের একজন আফজাল সাহেবের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
—স্যার আমার মনে হয় না সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন হবে।এখন থেকেই তো রাফসান মির্জা যেই এট্যা’ক করছে।নির্বাচন এর দিন না কোনো গ’ণ্ডগোল করে।মিঃ এসপি কে তো বলেছি রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে।কিন্তু উনি তো কান ই নিচ্ছে না আমার কথায়।
প্রণয় হেসে উঠে বলে,
—আজাদ সাহেব ঝ’গড়া করলে কমে না বরং বাড়ে।আমি যদি এখন নির্বাচন এর আগে রাফসান মির্জার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যাই তাহলে ও আরো ক্ষে’পে যাবে।জন সাধারণ মানুষ গুলো কে মা’রতে ও দুই বার ভাববে না।নির্বাচন এর দিন ঝামেলা করার প্রবণতা আরো বেড়ে যাবে।কারণ তখন আমার উপর তার ক্ষোভ টা অধিক পরিমাণ এর থাকবে।সেই ক্ষোভ থেকেই হয়তো নির্বাচনে জাল ভোট ও তৈরি করতে পারে।থাকুক না সে তার মতো যা ইচ্ছা করুক।আমিও দেখতে থাকি।আল্লাহ ভাগ্যে যা রাখছে তাই -ই হবে।আমার উপর এট্যা’ক করতে করতে এক সময় সে ক্লান্ত ও হয়ে যেতে পারে।
প্রণয়ের কথায় আজাদ সাহেব চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।সব কিছুতে প্রণয়ের এমন শান্ত থাকা তার পছন্দ না।আফজাল সাহেব প্রণয়ের কথার বিপরীতে বলে উঠে,
—তা ঠিক আছে।কিন্তু তারপর ও তুমি সাবধানে থেকো প্রণয়।এই পর্যন্ত তিন বার -ই
তোমার উপর এট্যা’ক করা হয়েছে।ভাগ্যক্রমে আল্লাহ হেফাজত করেছে।
হঠাৎ প্রণয়ের ফোন ভাইব্রেট করে উঠতেই প্রণয় ফোন রিসিভ করে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কানেক্ট করে নেয়।সবার আলগোছে একবার একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সুজন ফোন দিয়েছে।ওপাশ থেকে সুজন বলে উঠে,
—প্রণয় ভাই!লামিয়া সুলতানা মা’রা গেছে।আই মিন মা’রা যায় নি।মে’রে ফেলা হয়েছে।
—“হোয়াট “?
বলেই প্রণয় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।মিটিং রুমের উপস্থিত সবাই প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রণয় সবার দিকে একবার চোখ ভুলিয়ে নিয়ে কল টা কে’টে দেয়।আফজাল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—স্যার ইট’স ইমিডিয়েটলি আমাকে একটু বের হতে হবে।
আফজাল ভ্রুকুটি কুঁচকে ফেলে।উৎকণ্ঠিত ভাবে প্রণয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
—কোনো সমস্যা প্রণয়? কি হয়েছে?
—স্যার আমি আপনাকে পরে এসে সব বলছি।
বলেই প্রণয় আর কিছু শুনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে না থেকে বের হতে নিলেই পিছন থেকে আজাদ সাহেব এর কথা এসে কানে লাগে।আজাদ সাহেব বলে উঠে,
—দেখেছেন স্যার কতটা খারাপ হতে পারে মিঃ এসপি?আপনাকে কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে।উনি যে এমন এটা আমি আগ থেকেই বুঝতে পারছি।উনাকে চিনতে আমার এক ইঞ্চি ও ভুল হয় নি।
প্রণয় পিছন ঘুরে তাকায়।আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,
—যার মন কলুষিত, তার কাছে শুধু আমি কেন প্রতিটা ভালো কিংবা সৎ মানুষ কে -ই খারাপ মনে হবে।এটা নতুন কিছু না।তবে আপনাকে দ্বারা আবার প্রতিফলন হলো আরকি।
বলেই প্রণয় বেরিয়ে যায়।আফজাল সাহেব আজাদ সাহেব এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আজাদ সাহেবের কথা বার্তা আফজাল সাহেবের পছন্দ না।
🌸🌸
লামিয়া সুলতানার ছোট্ট জরাজীর্ণ ঘরের চারপাশে মানুষের অবস্থান।ঘরের ভিতরে পড়ে আছে লামিয়া সুলতানার নিথর দেহ।লা’শ হয়ে পড়ে আছে। ঘরের ভিতরে প্রণয়,রিফাত,সজীব,সুজন আর পুলিশ এর লোক।মিডিয়ার লোক ও আছে।তারা তাদের মতো কাজ করে যাচ্ছে।প্রণয় এর মাথায় আসছে কে মে’রেছে লামিয়া সুলতানা কে?
লামিয়া সুলতানা লাবণ্য এর মা।কিছুদিন আগে প্রণয়রা লামিয়ার বাসায় এসেছিলো। লাবণ্য কে তাদের সাথে নিয়ে যায় লামিয়ার অনুমতি নিয়ে।লাবণ্য এর চিকিৎসা চলছে বর্তমানে। তবে সেটা এখনো পর্যন্ত বাইরের কেউ জানে না।লামিয়া এত দিন মেয়ের সাথেই ছিলো। গত কাল কোনো এক প্রয়োজনে বাসায় এসেছে।আর হয়তো কেউ সেটা কোনো ভাবে জানতে পেরে এসেছে। লামিয়া কে মে’রে দিয়েছে।
পুলিশের কথায় প্রণয় এর ভাবনার চাদরে ফুটো হয়ে সম্বিত ফিরে আসে।পুলিশ অফিসার প্রণয় কে বলে,
—স্যার লা’শ টা কি করবো? পোস্টমর্টেম করাতে কি নিয়ে যাবো?
প্রণয় নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে,
—না অফিসার, তার দরকার নেই।মনে হয় না রেপ করা হয়েছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছা একজন পিছন থেকে হাত মুছড়ে ধরেছিলো।আরেক জন সামনে থেকে ধারালো ছু’রি গলার রগে চালিয়ে মে’রেছে।হাতের মধ্যে ভালো করে দেখুন আঙুল এর চাপ পড়ে আছে।আপনি শুধু একটা কাজ করুন হাতের মধ্যে অন্য হাতের যেই আঙুল এর চাপ আছে সেটা নিয়ে রাখার ব্যবস্থা করুন। তারপর – ই দাফন করা হবে।
—জি স্যার।
বলেই প্রণয় লামিয়া সুলতানার দিকে একবার তাকায়।সেই দিন লাবণ্য যেই বিছানায় শুয়ে ছিলো সেই বিছানায় লামিয়ার লা’শ পড়ে আছে।কা’টা গলা দিয়ে যেন র’ক্ত এর স্রোত বয়ে গেছে।বিছানায় র’ক্ত দিয়ে রঞ্জিত। প্রণয়ের চোখের উপর ভাসছে প্রথম যেই দিন এসেছিলো সেই দিনের কথা।প্রণয় রা যখন সেই দিন লামিয়ার ঘর থেকে চলে আসছিলো সেই দিন প্রণয় কে লামিয়া জড়িয়ে ধরেছিলো। তিন দিন আগেও যখন লাবণ্য কে দেখতে গিয়েছিলো প্রণয়, লামিয়া প্রণয়ের হাত দুটো ধরে প্রণয় কে বলেছিলো, “বাবা তোমার বোন টা কি আর সুস্থ হবে না?ওকে তোমার বোনের মতো সব সময় আগলে রেখো। আমার কোনো ছেলে নেই তুমি আমার ছেলের মতোই। লাবণ্য সুস্থ হবে কিনা জানি না।তবুও ওকে আগলে রেখো। ”
প্রণয় সেই কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বের হয়ে আসে লামিয়ার ঘর থেকে। সুজন সজীব কে দাফনের সব কিছু যোগাড় করতে বলে।পুলিশের কাজ শেষ হলে লামিয়া কে গোসল দেওয়া হবে।
🌸🌸
চারদিকে রোদের উত্তপ্ত তাপ।পুরো পৃথিবী টা কে যেন ঝলসে দিবে।দুপুর তিনটা বাজে।।যোহরের নামাজের পরেই লামিয়া সুলতানার জানাজা দাফনের কাজ সম্পন্ন করা হয়।ফাঁকা রাস্তায় এখন নিজেই ড্রাইভ করছে প্রণয়। কিছুক্ষণ একা থাকার জন্য আজকে আর সজীব কে ড্রাইভ করতে আসতে বলেনি।ফোন টা নিয়ে রিফাত কে ফোন দেয়।রিফাত ফোন ধরে বলে,
—আসসালামু আলাইকুম প্রণয় ভাই।
—ওয়ালায়কুম সালাম।শুন একটা কথা বলার ছিলো।
—হ্যাঁ ভাই বলেন। আমি শুনছি।
—লাবণ্য এর ওখানে আরো গার্ড বাড়িয়ে দে।কড়া নজর রাখতে বল সবাই কে।আর গার্ড দের সব ইনফরমেশন নিয়ে তবে ওখানে রাখবি।লাবণ্য এর উপরে যাতে কোনো ক্ষতির প্রভাব না আসে।
—আচ্ছা ভাই।
বলেই রিফাত ফোন কে’টে দেয়।প্রণয় গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ এক জায়গায় এসে ব্রেক করে।সামনে জান্নাত হাটছে।প্রণয় গাড়ি থেকে নামে।দ্রুত হেটে জান্নাত কে পিছন থেকে ডাক দেয়,
—এই যে জান্নাত, শুনছেন?দাঁড়ান।
পিছন থেকে কেউ ডাকছে বুঝতে পেরে জান্নাত দাঁড়িয়ে যায়।পিছন এ তাকিয়ে দেখে প্রণয়। ভ্রুকুটি কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।প্রণয় জান্নাতের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বড় করে কয়েক টা নিশ্বাস ফেলে বলে,
—আপনাকে কত বার ডেকেছি।দাঁড়ালেন না কেনো? আমি আরো হয়রান হয়ে গেছি দৌড়াতে গিয়ে।
জান্নাত প্রণয়ের পিছনে কিছুটা দূরে গাড়ির দিকে তাকায়।প্রণয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
—আপনাকে দৌড়াতে কে বলেছে? এত টুকু গাড়ি দিয়ে আসলে কি গাড়ির সব তেল শেষ হয়ে যেত?রাজনীতি বিদরা যে এতটা হিসেবে করে চলে আজ জানলাম।
প্রণয় অবাক।কি বলছি কি জান্নাত। একবার ওকে খু’নি বলা এখন আবার বুঝাতে চাইছে কিপটা। এ কি মেয়ে রে বাবা।
প্রণয় জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
—হঠাৎ এই অসময়ে এখনে যে?আচ্ছা চলুন গাড়িতে বসে কথা বলি।এখন রিক্সা পাবেন বলে মনে হয় না।তাছাড়া গরম ও অনেক।
জান্নাত আর দ্বিরুক্ত প্রকাশ করেনি। প্রণয়ের সাথে গাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো আর মুখে বললো,
—ইশির সাথে একটা কাজে গিয়েছিলাম। কাজ শেষ হতে দেরি হয়ে গেছিলো। এই দিকে গাড়ি ও পাচ্ছিলাম না।এক দুইটা যা পেতাম বাসার রাস্তায় যেতে রাজি হচ্ছিলো না।তাই হেটে হেটে চলছিলাম। রথ থাকতে পথ ধরা এমন।
প্রণয় হেসে দেয়।গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বসতে বলে জান্নাত কে।জান্নাত ও গিয়ে বসে।প্রণয় ও ঘুরে এসে গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে বসে।জান্নাতের চোখ যায় পিছনের সিটের দিকে।ছোট্ট দুটো প্যাকেট এর মধ্যে দানাদার কিছু আছে বলে মনে হচ্ছিলো। জান্নাত প্রণয় কে বলে,
—পিছনের সিটে এগুলো কি?
প্রণয় পিছনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
—ক্যাট ফুড।জেনিথ এর জন্য নিয়েছি।আপনি ব্রাউন কালারের যেই বিড়াল টাকে আমার রুমে উঁকি দিয়ে দেখেছেন। তার নাম জেনিথ।
জান্নাত কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায় সেই দিন উঁকি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার কথা টা মনে আসতেই। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
—আপনার জেনিথ কিন্তু মাশাল্লা খুব সুন্দর মিঃ ভালোবাসা।ব্রাউন কালার, গুলুমুলু। মাশাল্লা।
—আপনার পার্শিয়া ও মাশাল্লা সুন্দর। সাদা কালার।চোখে ধরার মতো।তবে আপনি চাইলে জেনিথ কে নিতে পারেন। তবে সাথে জেনিথের মালিকের দায়িত্ব টা নিতে হবে।
জান্নাত অবাক হয়ে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।প্রণয় ভাবলেশহীন ভাবে ড্রাইভ করছে। জান্নাত প্রণয় কে বলে,
—মানে?বুঝতে পারি নি!
—ওহ হো! জান্নাত আপনি এত কথা বলছেন কেন?আপনার কথার কারণে আমি ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিতে পারছি না।ইচ্ছে তো করে মনযোগ দিয়ে আপনাকে দেখি।বাই দ্যা ওয়ে আঙ্কেল কে জিজ্ঞেস করেছেন মানুষ খু’নের ব্যাপারে?
—হুম।
—ভুল ভে’ঙেছে এবার?
—হ্যাঁ।
—একটা কথা বলি আপনাকে? রাখবেন?
—হ্যাঁ বলুন।রাখার মতো হলে রাখবো ইনশাল্লাহ।
—এবার থেকে আপনি বাসার বাইরে বের হওয়ার সময় মুখ ঢেকে বের হবেন প্লিজ। বোরকা হিজাব তো পরেন -ই। সাথে নিকাব টা একটু যোগ করুন।প্লিজ! আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি।সেই দিন এর মা’রা মা’রিতে বিরোধী দলের লোকেরা আপনাকে আমার সাথে দেখেছে। পথে ঘাটে যে কোনো সময় আপনাকে ওরা দেখলে ক্ষতি করতে পারে।আর আমি তা চাই না।তাই প্লিজ আমার অনুরোধ টা রাখুন। নিকাব সহ পরবেন এবার থেকে।
জান্নাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে।কিয়তক্ষণ পরেই বলে,
—ঠিক আছে।এবার থেকে আমি নিকাব পরে বের হবো।
প্রণয় হেসে দেয় জান্নাত তার অনুরোধ টা রাখবে জেনে। জান্নাত তাকিয়ে থাকে প্রণয়ের সেই অমায়িক হাসি টার দিকে।আজকে চোখে চশমা টা নেই।হঠাৎ প্রণয়ের কথায় জান্নাত এর ভাবনার বিচ্যুতি ঘটে।প্রণয় বলে উঠে,
—“এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না প্লিজ জান্নাত! আমার লজ্জা করে।এত লজ্জায় ম’রেই যাবো আমি।ইতিহাস রচিত হয়ে যাবে,সারা শহর,টিভি, নিউজ পেপারে একটা কথায় তখন বলা হবে,‘‘জান্নাত নামের এক মেয়ের তাকিয়ে থাকাতে লজ্জা পেয়ে মা’রা গেছে প্রণয় নামের শান্ত শিষ্ট,সহজ-সরল এক অবুঝ বালক’’।”
জান্নাত অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে।কি সব বললো মিঃ ভালোবাসা?সে নাকি অবুঝ বালক?মিঃ ভালোবাসা কে অবুঝ বালক বললে তো অবুঝ বালক দের অপমান করা হলো।
জান্নাত বিরক্তি তে মুখ কুঁচকে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤
#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৭
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
—রিফাত তোর কি মনে লামিয়া সুলতানা কে কে মা’রতে পারে?
প্রণয়ের কথায় রিফাত তাকায় প্রণয়ের দিকে।প্রণয়ের অফিসেই চারজনেই প্রণয়ের অফিস রুমে বসে আছে।চারজনের মাঝেই লামিয়া সুলতানার মার্ডার নিয়ে কথা চলছে।
রিফাত কিছু বলে উঠার আগেই সুজন সহসায় অকপটে বলে উঠে,
—প্রণয় ভাই আমার তো মনে হয় রাফসান মির্জার লোক -ই মে’রেছে।
সুজন এর কথায় প্রণয় তাকায় সুজনের দিকে।চোখের চশমা টা খুলে টেবিলের উপর রাখে।রিফাত,সজীব,সুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
—আন্দাজ এর উপর তো সন্দেহ করা ঠিক না।প্রমাণ ছাড়া কিছুই করা যাবে না।
রিফাত বলে উঠে,
—প্রণয় ভাই, আমার তো মনে হয় ওরা লাবণ্য কে খুঁজতে এসে ছিলো। লামিয়া সুলতানা কে হয়তো জিজ্ঞাসা করেছিলো। উনি স্বীকার না করাতে উনাকে মে’রে দিয়ে চলে গেছে।
—হুম এটা পয়েন্ট হিসেবে ধরা যায়।
প্রণয় এবার সজীবের দিকে তাকিয়ে বলে,
—সজীব জামিলের মার্ডার এর ব্যাপারে কোনো কিছু জানতে পেরেছিস?
—না ভাই।এখনো তেমন কোনো কিছু জানতে পারিনি।আমি সোর্স লাগিয়ে দিয়েছি জানার জন্য।
প্রণয় তপ্ত নিশ্বাস ফেলে।কিছু একটা মনে পড়তেই বলে উঠে,
—লাবণ্য এর অবস্থা এখন কেমন? আগের থেকেও ভালো নাকি খারাপ?
রিফাত প্রতি উত্তরে বলে,
—এখনো কিছু বুঝা যাচ্ছে না ভাই।ডাক্তার রা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ভাবে।হাই পাওয়ার এর ড্রা’গ ছিলো। তাই হয়তো ওষুধের কাজ করতে সময় নিচ্ছে।
—আচ্ছা।খেয়াল রাখিস।যাতে বাইরের কেউ না যায় ওর কেবিনে এবং যেসব ডাক্তার দের বলেছি ওর চিকিৎসা করতে তারা ব্যতিত অন্য কোনো ডাক্তার বা নার্স যেন না যায়।নতুন কেউ লাবণ্য এর চিকিৎসা করতে চাইলে আগে আমাকে জানাবি।বলা যায় না।শত্রু কখন ছদ্মবেশ নিয়ে এসে ওর ক্ষতি করে।লাবণ্য ঠিক হলে অন্তত ওর থেকে কিছু হলেও জানতে পারবো। তাছাড়া লামিয়া সুলতানা লাবণ্য কে আমার দায়িত্বে রেখে গেছে।ওর ক্ষতি যাতে নাহয় সেটা চাইবো। র’ক্ত এর সম্পর্ক না হলে ও আমাদের বোনের মতো।
প্রণয়ের কথায় সুজন একটু কেশে উঠে বলে,
—প্রণয় ভাই,সবার বোনের মতো?
—হ্যাঁ। তবে তুই যাতে এটা মানতে পারছিস না তাহলে যা শুধু তোর বোনের মতো ও।
সজীব এর কথায় সুজন মুখ ফ্যাকাসে করে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
—ভাই শুধু আপনাদের তিন জনের বোনের মতো হলে হয় না?মানে আমি বাদে সবার বোনের মতো হলে হয় না?
—কি মামা?সমস্যা কি?তোমার বোনের মতো ভাবতে এত আপত্তি কিসের?
—চুপ করবি তোরা তিন জন?লাবণ্য অসুস্থ হসপিটাল বেডে শুয়ে আছে।আর তোরা তাকে নিয়ে এখানে ঝ’গড়া করছিস?
প্রণয়ের ধ’মকে তিনজনে চুপ হয়ে যায়।আর কোনো কথা না বলে তিন জনে প্রণয়ের কেবিন থেকে বের হয়ে যে যার কাজে চলে যায়।প্রণয় চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে।মাথার মধ্যে এসে ভর করছে নানান চিন্তা ভাবনা।সব যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।লাবণ্য যত দিন না ঠিক হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত কিছুই ঠিক মতো বলা যাচ্ছে না।
🌸🌸
জান্নাত ভার্সিটি তে।আজকে জুরাইন স্কুল যায়নি। বিষন্ন মন নিয়ে বসে আছে সে।পাখির সাথে তার ঠিক মতো দেখা হচ্ছে না এখন আর।জুরাইন এর ধারণা পাখি তাকে ইগনোর করছে।তার ভালোবাসার মূল্য দিতে চায় না।পাখির এই অবহেলায় সে সারাক্ষণ বিষন্ন হয়ে থাকে।
সন্ধ্যায় প্রান্তিক আসে জুরাইন কে পড়াতে।জান্নাত বাসার ছাদে গেছে।পার্শিয়া জান্নাত কে কিছুক্ষণ রুমে ডেকে ডেকে খুঁজেছে হয়তো। জুরাইন এর রুমে এসে প্রান্তিক এর পায়ের কাছে বসে ডাকতেই প্রান্তিক জুরাইন কে পড়তে বলে পার্শিয়া কে কোলে তুলে নেয়।
জুরাইন পার্শিয়ার দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।বিরস মুখে প্রান্তিক কে বলে,
—ভাইয়া ওকে আমার ঘরে আসতে বারণ করুন।ওকে দেখলে আমার কষ্ট টা বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
প্রান্তিক অবাক হয়ে তাকায় জুরাইন এর দিকে।এই বোবা প্রাণী আবার কিসের কষ্ট দেয় জুরাইন কে?পরোক্ষণেই ভাবে হয়তো পার্শিয়া আছড় দিয়েছে জুরাইন কে।তাই বলে,
—জুরাইন পার্শিয়া কি তোমাকে আছড় কে’টেছে কোথাও?
—হ্যাঁ। আমার হৃদয়ে।
—মানে?
—আজ তিনটা দিন আমি পাখি কে দেখি না।ওকে দেখলে আমার পাখির কথা মনে পড়ে যায়।
প্রান্তিক অ’বাক হয়ে বলে,
—কেন?ওর চেহারায় পাখির প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে নাকি?
—নাহ।ওর নাম ‘পার্শিয়া’। আমার পাখির নাম ‘পাখি’।দুই জনের নামের প্রথমে ‘পা’ আছে।তাই ওকে ‘পার্শিয়া’ বলতে গেলে আমার পাখির কথা মনে পড়ে যায়।
প্রান্তিক অবাক নেত্রে তাকিয়ে আছে।তার এখন কেমন রিয়াকশন দেওয়া উচিত হয়তো ভুলে গেছে।কিছুক্ষণ পর প্রান্তিক বলে উঠে,
—ঠিক আছে জুরাইন তাহলে তুমি একটা কাজ করতে পারো।
—কি ভাইয়া?
—পার্শিয়া কে এবার থেকে তুমি ঠ্যাংর্শিয়া বলে ডাকবে। তাহলে আর পাখির কথা মনে পড়বে না।
—ঠ্যাংর্শিয়া?
—হ্যাঁ। পার্শিয়ার প্রথমে ”পা’ আছে।’পা’ মানে ঠ্যাং। তাই ঠ্যাংর্শিয়া।
—আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া। পাখি কে ভুলার জন্য যা করতে হয় আমি করবো। পাখি আমার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি।তার কথা কেন মনে রাখবো আমি?রাখবো না আর কখনো মনে রাখবো না।
বলেই জুরাইন চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমের বাইরে চলে আসে।আর প্রান্তিক যেন তাজ্জব বনে গেলো। হা হয়ে আছে।উছিলা দেখিয়ে না পড়ার জন্য চলে গেলো জুরাইন। এক নাম্বারের পড়া চো’র।
🌸🌸
রাত বারোটা বাজে।জান্নাত এর বাসার ড্রয়িংরুমে প্রণয়, জুনায়েদ আজমী, শাহরিয়ার পাবেল তিন জনে বসে রাজনীতি বিষয়ক কিছু নিয়ে ডিসকাস করছে।জান্নাত পানির বোতল হাতে নিয়ে নেমে এলো পানি নেওয়ার জন্য।জুনায়েদ আজমী মেয়ে কে দেখেই ডাক দিলেন নিজের কাছে।
ফুল হাতা কামিজ আর চুড়িদার পরা জান্নাত। মাথায় ওড়না পেছানো। বাবার ডাকে সেই দিকে যায়।এখনো প্রণয় আর পাবেল কে খেয়াল করিনি।ঘুম ঘুম চোখে জুনায়েদ আজমী এর পাশে বসে জুনায়েদ আজমী এর বুকে মাথা রাখলো। তিনি ও মেয়ে কে এক হাতে জড়িয়ে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
—এখনো ঘুমাও নি কেন আম্মু?
—ঘুম ভেঙে গেছে আব্বু।পানির পিপাসা পেয়ে ছিলো আব্বু।ঘরে পানি ছিলো না তাই নিচে আসছি।
—আচ্ছা তাহলে পানি নিয়ে ঘরে যাও।ঘুমাও। বেশি রাত জেগে থেকো না।
—আচ্ছা আব্বু।
বলেই জান্নাত উঠে দাঁড়ায়। এতক্ষণে প্রণয়ের দিকে চোখ পড়ে তার।সাদা পাঞ্জাবী পায়জামা পড়ে বসে আছে এখনো। লোক টার কি একটু ক্লান্তি নেই?ভেবে পায় না জান্নাত। সারাক্ষণ পার্টি অফিস,নির্বাচন আর নিজস্ব অফিস নিয়ে ছুটাছুটি। নিজের খেয়াল টা রাখে কখন মানুষ টা?
এলোমেলো উস্কো খুসকো চুলে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছে প্রণয়। জান্নাতের খুব করে ইচ্ছে করছে লোকটার এলোমেলো চুল গুলো আরেকটু এলোমেলো করে দিতে।হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে।বলতে ইচ্ছে করে,”এতটা কেয়ারলেস কেন আপনি মি. ভালোবাসা?সারাদিন কাজ নিয়ে পড়ে থাকেন। একটু ও নিজের যত্ন নেন না আপনি।” কথা গুলো মুখেই থেকে যায়।প্রকাশ করে না।চোখ নামিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে বোতলে পানি ভর্তি করে নিজের ঘরে চলে যায় জান্নাত।
এতক্ষণ জান্নাতের সদ্য ঘুম থেকে উঠে আসা চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলো প্রণয়। মেয়েটার ঘুম জড়ানো কণ্ঠ,চেহারায় ও যেন অন্য রকম নেশা লেগে যায়।প্রণয় আনমনেই ভেবে উঠে,
— “আপনি সত্যিই আমাকে পা’গল করে দিবেন। কি দরকার ছিলো ঘুম জড়ানো চেহারায় আমার সামনে আসার।এখন আপনাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যে আমার বহুগুণ বেড়ে গেলো।আপনি সত্যিই নেশাক্তময়ী ঘুমকন্যা।”
শাহরিয়ার পাবেল আর জুনায়েদ আজমী প্রণয় কে একের পর কথা বলছে।প্রণয়ের সেই দিকে খেয়াল নেই।উনারা দুই জন ও খেয়াল করেনি প্রণয়ের যে তাদের কথায় মনোযোগ নেই।কিছুক্ষণ পরেই শাহরিয়ার পাবেল ছেলের উদ্দেশ্যে বলে,
—রাফসান মির্জা কে যখন তিন বার এট্যা’ক করেছে তাহলে আরো করতে পারে।তোকে সাবধানে থাকতে হবে আরো।কি বললাম বুঝতে পেরেছিস?
শাহরিয়ার পাবেল এর কথায় প্রণয়ের মনোযোগ নেই। সে আনমনেই বলে উঠে,
—“আব্বু আমি বিয়ে করবো “।
হুট করে গুরুত্ব পূর্ণ কথার মাঝে প্রণয় বিয়ের কথা বলায় জুনায়েদ আজমী, শাহরিয়ার পাবেল দুই জনেই প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ যেন তাদের কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤
#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৮
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
—প্রণয় ভাই রহিমা বেগম রে ধরে আনছি।সজীব আর সুজন বাইরে উনার পাশে আছে।
রিফাত এর কথায় প্রণয় তাকায়।রিফাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—উনাকে আমার কেবিনে নিয়ে আয়।
—আচ্ছা ভাই।
বলেই রিফাত বের হয়ে যায়।প্রণয় চেয়ারে মাথা সহ শরীর হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।প্রণয় জানতে পেরেছে লামিয়া সুলতানা বাসায় আসার কথা রহিমা বেগম রাফসান মির্জার লোক দের জানিয়েছে। তাই রহিমা বেগম কে নিয়ে আসার জন্য বলেছিলো।
দরজায় নক হতেই প্রণয় অনুমতি দেয় ভিতরে আসতে।রিফাত,সজীব,সুজন রহিমা বেগম কে নিয়ে প্রণয়ের কেবিনে ঢুকে।প্রণয় একটু টান টান হয়ে চেয়ারে বসে।রহিমা বেগমের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা টা নিচু করে ফেলে।রিফাত কে কিছু একটা ইশরা করতেই রিফাত রহিমা বেগম কে একটা চেয়ারে বসায়।তারা তিন জনে চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।প্রণয় এসে রহিমা বেগমের সামনে একটা চেয়ারে বসে।টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে রহিমা বেগমের হাতে দেয়।
তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাস টা নিয়ে এক নিশ্বাসে সব টুকু পানি পান করে। সুজন রহিমা বেগমের হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে রেখে আবার এসে পাশে দাঁড়ায়। রহিমা বেগমের চোখে ভ’য়।মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ভ’য়ে।প্রণয় মুচকি হেসে রহিমা বেগম কে বলে,
—আসসালামু আলাইকুম!আন্টি ভালো আছেন?
প্রণয়ের এহেন আচরণে রহিমা বেগম চোখ তুলে তাকায়। কিছু বলে না।প্রণয় এর সালামের উত্তর ও নেয় না।প্রণয় এর এমন শান্ত কথা বরাবরই রিফাত এর বিরক্ত লাগে।তার এক কথা,” অন্যায় কারীর সাথে কেন এত শান্ত কথা বলবে প্রণয় ভাই?কয়েক ঘা দিয়ে দিলেই তো হয়”।
রিফাত বিরক্ত টা এবার প্রকাশ করে প্রণয় কে বলেই ফেলে,
—প্রণয় ভাই এই মহিলার সাথে এত মশলা মাখিয়ে কথা বলার কি দরকার? ঠাস করে একটা দিয়ে দিবেন দেখবেন সব সত্যি বের করে দিবে মুখ দিয়ে।
—আহ্! রিফাত শান্ত হো।এত মাথা গরম করিস কেন?আমি কথা বলছি তো।আর তুই উনার গায়ে হাত তুলবি কেন?উনাকে এনেছি মহিলা গার্ড দিয়ে, যদি মা’রতে হয় মহিলা গার্ড দিয়েই মা’রবো।
—সরি ভাই!
বলেই রিফাত চুপ করে যায়।প্রণয় আবার রহিমা বেগমের দিকে চোখ দেয়।বলে উঠে,
—তা আন্টি, লামিয়া সুলতানা কে মা’রার কি কারণ?
—……..
—আপনি কি কথা বলবেন নাকি আমি অন্য কোনো পথ অবলম্বন করবো আপনি কথা বলার জন্য?
প্রণয়ের কথা এবার অনেকটা গম্ভীর শুনা গেলো। রহিমা বেগম প্রণয় এর দিকে তাকায়।প্রণয় তার দিকেই রা’গ মিশ্রিত গম্ভীর চেহারা নিয়েই তাকিয়ে আছে।প্রণয় এবার ধ’মক দিয়ে বলে,
—কি হলো বলছেন না কেন?
রহিমা বেগম ঈশৎ কেঁপে উঠে বলে,
— ব..বলছি।
—বলুন। আমিও শুনছি।
—আপনারা যেই দিন আমাদের গ্রামে আসছেন।তার পরের দিন – ই গ্রামে কিছু মানুষ আসে।তখন রাত আটটা বাজে।আমার ঘরের দরজা নাড়তেই আমি দরজা খুলে দিই।দরজা খুলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে তিন চারটা ছেলে আমার ঘরে ঢুকে পড়ে।আমার স্বামী মুদি দোকান দার।উনি বাজারে ছিলো। আমি ঘরে একাই ছিলাম। লোক গুলো কে দেখে ভ’য় পেয়ে গেছিলাম। সব গুলো লোকের -ই মুখ ঢাকা ছিলো। আমার মাথায় গু’লি ধরে একটা ছেলে আমাকে লাবণ্য দের ঘরের কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি তাদের কে লাবণ্য দের ঘরে নিয়ে যায়।কিন্তু বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দেখে তারা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো “লাবণ্য আর ওর মা কোথায়? ” আমি তখন বলে ছিলাম যে,আপনারা তাদের দুই জন কে কই জানি নিয়ে গেছেন। তখন ওরা….
রহিমা বেগম এত টুকু বলতেই সজীব থামিয়ে দিয়ে বলে,
—ওয়েট ওয়েট। লাবণ্য কে যখন আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন রাত দশটা বাজে।আপনি কিভাবে দেখলেন? আপনার তো দেখার কথা না।
রহিমা বেগম আবার বলা শুরু করে,
—সেই দিন আপনারা যখন লাবণ্য আর লামিয়া ভাবিরে নিয়া গেছিলেন আমি পিছন থেকে দেখছি।আপনারা বের হওয়ায় সময় ও দেখছি।তখন আমার স্বামী বাজার থেকে আসছে।উনি ঘরের ঢুকার পর আমি দরজা বন্ধ করতে গেলেই দেখি আপনারা লাবণ্য রে কোলে করে নিয়ে কই যাইতে ছিলেন। ভাবছিলাম সবাই রে ডাক দিবো। কিন্তু তখন দেখি লামিয়া ভাবি বড় সাহেব(প্রণয়) এর সাথে কথা বলতে বলতে ঘরে তালা দিয়ে বের হচ্ছে।তখন বুঝতে পারলাম হয়তো লামিয়া ভাবির সম্মতি আছে যাওয়ার আর লাবণ্য ও এর হয়তো চিকিৎসা এর জন্য নিয়ে যাইতেছেন। আমার ঘর লামিয়া ভাবির ঘরের পিছনে। তাই আপনারা আমাকে খেয়াল করেন নি।
রিফাত রহিমা বেগম কে থামতে দেখে বলে উঠে,
—তারপর?
—তার পরের দিন -ই ওই লোক গুলো আসে।আমাকে হুমকি দিয়ে যায়। বলেছে লামিয়া ভাবি ঘরে আসলে যেন উনাদের জানায়।নাহলে আমার স্বামী কে মে’রে ফেলবে। এটা ও বলেছে।দরকার হলে টাকা দিবে তারা।তবুও যেন তাদের কে লামিয়া ভাবির খবর দিই।সেই সময় টাকার কথা শুনে লোভে পড়ে যায়।স্বামীর মুদি দোকান থেকেও বা কত টাকা আয় হয়।দিন এনে দিন খাওয়ায় মতো।তাই তাদের কথায় রাজি হয়ে যাই।পরে একদিন লামিয়া ভাবি বাড়ি আসে।বাড়ি এসে প্রথমে আমার সাথে দেখা করে কথা বার্তা বলে। উনি ঘরে যাওয়ার সাথে সাথে আমি ওই লোক গুলো কে ভাবির আসার কথা জানিয় দিই।তার কিছুক্ষণ পরেই তিনজন মাক্স পরা লোক আসে।লামিয়া ভাবির ঘরে যায়।কিছুক্ষণ পরেই লামিয়া ভাবির ঘর থেকে জিনিস পত্র পড়ার শব্দ এ আমি উনার ঘরে যায়।কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ থাকে তাই আমি উনার ঘরে পিছন সাইডের টিনের একটা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে তাকায়।তাকাতেই আমার চোখ দুটো বড় হয়ে সারা শরীর এর পশম দাঁড়িয়ে যায়।একটা লোক ঘরের মধ্যে কিছু একটা খুজছিলো।আরেকজন লামিয়া ভাবির হাত দুটো পিছন থেকে এক হাত দিয়ে মুছড়ে ধরেছিলো। অন্য হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে বার বার জিজ্ঞেস করেছিলো লাবণ্য কোথায়।কিন্তু উনি স্বীকার করেনি।বলেনি তাদের। হঠাৎ করে কোথা থেকে সবুজ পাঞ্জাবী পরা একটা লোক ছু’রি হাতে নিয়ে এসেই লামিয়া ভাবির গলার রগ কে’টে দেয়।আমি আমার নিজ চোখে দেখেছি গলা কাঁ’টা মুরগির মতো লামিয়া ভাবি দাপাদাপি করছিলো কিছুক্ষণ। এর পরেই উনি নিস্তেজ হয়ে যায়।গলা দিয়ে র’ক্ত এর স্রোত বয়ে যায়।আমি ভাবি নি ওরা লামিয়া ভাবি কে মে’রে ফেলবে। লামিয়া ভাবি সব সময় আমাকে বোনের মতো ভাবতো। আর আমি লোভে পড়ে উনাকে….
এত টুকু বলেই হু হু করে কেঁদে উঠে রহিমা বেগম।প্রণয়,রিফাত,সজীব,সুজন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।তাদের শরীর এর পশম গুলো দাঁড়িয়ে গেছে।কি কষ্ট কর মৃ’ত্যু দিয়েছিলো।
রিফাত নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
—লোক তিন জনের মুখ দেখে ছিলেন আপনি?
—জি না।উনাদের মুখে মাক্স ছিলো।
এতক্ষণে এবার প্রণয় বলে উঠে,
—আচ্ছা ছু’রি টা কোথায়? উরা নিয়ে গেছে নাকি রেখে গেছে কোথাও লুকিয়ে?
রহিমা বেগম প্রণয় এর দিকে একবার তাকায়।আবার চোখ নামিয়ে বলে ফেলে,
—নাহ। ছু’রি নিয়ে যায়নি।আমার কাছে রেখে গেছে।
প্রণয় অবাক হয়ে বলে,
—আপনার কাছে রেখে গেছে?
—হ্যাঁ! লামিয়া ভাবি মা’রা যাওয়ার পর আমি ও ঘরের পিছন থেকে চলে আসি। ওরা ও তিন জনে আমার ঘরে আসে।আমাদের এই দিকে আমরা ঘর এর মানুষ। আমি,লামিয়া ভাবি,আর ও একজন ছিলো। কিন্তু উনি সেই সময় মানুষের বাড়িতে কাজ করতে যায় তাই কেউ ওই তিন জন লোক কে দেখেনি।তারা র’ক্ত মাখা হাত,আর ছু’রি নিয়ে আমার ঘরে আসে।তাদের দেখে আমি ভ’য় পেলেও কিছু বলি না।ওরা আমার ঘরের থেকে পানি নিয়ে হাত আর ছু’রি টা ধুয়ে নেয়।ছু’রি টা আমার হাতে দিয়ে বলে লুকিয়ে রাখতে কোথাও। ছু’রি টা লামিয়া ভাবির ঘর থেকেই নিয়ে ছিলো ওরা।এই ছু’রি নিয়ে এখন গ্রাম থেকে বের হওয়া সম্ভব না।কেউ একটু দেখে ফেললে সন্দেহ হতে পারে।তাই আমাকে ছু’রি টা রাখতে বলেছে।আর মুখ বন্ধ রাখতে বলেছে।তারা এটা ও বলেছে,পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলে ও আমি যদি মুখ বন্ধ রাখি তাহলে এক লাখ দিবে টাকা।টাকার লোভে কাউকে কিছু বলিনি মুখ বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু আপনারা জেনে গেলেন কিভাবে?
রহিমা বেগমের প্রশ্নে প্রণয় উত্তর দেয় না।ক্রুর হাসে।তার এই হাসির আড়ালে হয়তো অন্য কোনো সূত্রপাত আছে।
🌸🌸
বিরহজনিত মন নিয়ে রাস্তায় একা একা হেটে বাড়িতে আসছে জুরাইন। স্কুল থেকেই ফিরছে জুরাইন। পাখির জন্য মন টা তার একটু বেশিই আনচান আনচান করে।গরম তেলে পানি দিলে যেমন ছ্যাত করে উঠে ঠিক তেমনি পাখির কথা মনে পড়লে তার মনটা যেন ছ্যাত করে উঠে।শত চেষ্টা করে পাখির কথা ভুলতে পারছে না সে।
হঠাৎ তার কাঁধে কেউ হাত দিয়ে বলে,
—কেমন আছো জুরু?
জুরাইন তাকিয়ে দেখে পাখি তার কাঁধে হাত দিয়ে হেসে পা মিলিয়ে হাটছে।মুহূর্তেই জুরাইন এর চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে।পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,
—এত দিন কোথায় ছিলে তুমি পাখি?
—নানু বাড়ি গিয়েছিলাম।
—পাখি তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো । অনেক দিন থেকেই বলবো বলবো করে বলা হয়ে উঠে না।
—হ্যাঁ বলো।
—পাখি ইয়ে মানে….
—কি ইয়ে মানে করছো.?বলে ফেলো।
জুরাইন কিছুটা সাহস নিয়ে অকপটে বলে ফেলে,
—পাখি আই লাভ ইউ!
জুরাইন এর কথায় পাখি ভ্রু কুঁচকায়। সহসায় কিছু বলে না।কিছুক্ষণ থেমে বলে,
—শুন জুরাইন তুমি এসব প্রেম ভালোবাসার কিছুই বুঝো না।তুমি কেন আমি নিজেও বুঝি না এসব প্রেম ভালোবাসার মানে ঠিক মতো।আর তু….
পাখি কে কথা সমাপ্ত করতে না দিয়ে জুরাইন সহাস্যমুখ নিয়ে বলে,
—সমস্যা নেই পাখি।আমি তো বুঝি।আমি তোমাকে প্রেম ভালোবাসার মানে বুঝিয়ে দিবো। আমার থেকেই তুমি প্রথম প্রেমের হাতেখড়ি নিবে নাহয়। আমি সত্যিই বুঝি প্রেম ভালোবাসা।বুঝি বলেই তো তোমার জন্য আমার হৃদয়ে ধুকপুকানি হয়।না হলে কি হতো?
পাখি বিরক্ত তে চোখ মুখ কুঁচকায়। রুঢ় কণ্ঠে বলে উঠে,
—আর তোমার এই ফা’লতু প্রেমের হাতেখড়ি হয়েছে ফালতু বন্ধু দের সাথে মিশে।
—এভাবে বলো না পাখি।
—জুরাইন শুন।তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো।এসব একদম বলবে না।আমি তোমার দুই বছরের বড়।তুমি মাত্র ক্লাস ফোরে পড়।এসব এর কিছুই বুঝো না।বন্ধু দের পাল্লায় পড়ে এসব করছো।
ঠান্ডা ভাবে কথা গুলো বলেই পাখি দ্রুত হেটে জুরাইন এর আগে চলে যায়।জুরাইন পাখির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠে,,
“প্রেমের সমাধি ভেঙ্গে
মনের শিকল ছিঁড়ে,
পাখি যায় উড়ে যায়
আমার হৃদয় ভেঙে যায়”।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤