প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
2034

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৩
#ফাতেমা_জান্নাত(লেখনীতে)

জান্নাত,ইশি,প্রান্তিক তিনজনে ভার্সিটি থেকে মাত্র বের হয়েছে।বাসার পথেই হাটছে তিন জনে।কিছুদূর গেলেই ইশি আলাদা হয়ে যাবে অন্য রাস্তায়। গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদে যাচ্ছে তাই অবস্থা। ভ্যাপসা গরমে পুরো শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। ভার্সিটির থেকে অল্প কিছু দূর রাস্তা পাচঁ মিনিটের পথে একটা রেস্টুরেন্ট আছে।প্রান্তিক রেস্টুরেন্ট এর সামনে এসেই জান্নাত আর ইশি কে উদ্দেশ্য করে বলে,

—দোস্ত গরমে পুরো সিদ্ধ হয়ে গেছি।চল লাচ্ছি খেয়ে আসি ঠান্ডা ঠান্ডা।

—যাবো। তবে বিল তুই দিতে হবে।আমি আবার গরীব শরীব মানুষ।

ইশির কথায় প্রান্তিক ভ্রু কুচকে তাকায়।নাক মুখ কুঁচকে ফেলে।যেন পৃথিবীর সব থেকে বিশ্রী কথা বলেছে ইশি।প্রান্তিক বলে,

—তুই তো কিপ্টাই।এক টাকার চকলেট কিনে খাওয়াতে বললেও তুই দোকান দার কে জিজ্ঞেস করছ ” মামা আট আনার চকলেট আছে?”ভাগ্যিস আমি উদার দার মানুষ। নাহলে আল্লাহ জানে ভবিষ্যৎ এ যে তোর কি হতো?

প্রান্তিক এর কথা শেষ হতেই জান্নাত বলে উঠে,

—তা প্রান্তিক, ইশির ভবিষ্যৎ এর সাথে তোর কি সম্পর্ক?একটু বুঝিয়ে বলতো।

প্রান্তিক থতমত খেয়ে যায় জান্নাতের কথায়।আমতা আমতা করে বলে,

—ওই সব তুই বুঝবি না।বুঝার বয়স তোর এখনো হয় নাই চুপ থাক।

জান্নাত এবার তেঁতে উঠে কি পেয়েছি কি সবাই তাকে।সবাই বলে তার এখনো বুঝার বয়স হয় নাই।তা কত বছরে বুঝার বয়স হবে
জান্নাত রুঢ় ভাবে বলে,

—একদম এই কথা বলবি না।অস’ভ্য পোলা।সবাই পাইচত কি আমারে।তোর ভাই কে ও কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে আমার এখনো বুঝার বয়স হয় নাই।দশ বছরের জুরাইন ও বলে আমার এখনো বুঝার বয়স হয় নাই।সবাই প্রেম সম্পর্কে সব জান্তা।আমি জিজ্ঞেস করলেই বলবে আমার বুঝার বয়স হয় নাই।

জান্নাতের কথা শুনে ইশি,প্রান্তিক মুখ চেপে হাসে।ইশি হাসি থামিয়ে বলে,

—তা প্রণয় ভাইয়া কে কি জিজ্ঞেস করেছিস? আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? এটাই কি জিজ্ঞেস করেছিস নাকি আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?এটা জিজ্ঞেস করেছিস।

—ব্যদ্দপ মাইয়া।কথা কবি না তুই আমার সাথে।তোরা দুই টাই বন্ধু নামের শত্রু যা।তোদের থেকে ও আমার পার্শিয়া অনেক ভালো।

বলেই জান্নাত চেতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।ইশি আর প্রান্তিক পিছনে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে।ভেজায় চটে গেছে জান্নাতি। প্রান্তিক পিছন থেকে কয়েকবার চেঁচিয়ে বলছে,

—এই জান্নাতি দাড়াঁ। ভাইয়া করে ফোন করি।বলি তুই ভাইয়ার নামে আমাদের কাছে বদনাম করেছিস।

জান্নাত দাঁড়ায় যায়।প্রান্তিক কথা শুনে। জান্নাত ঘুরে দাঁড়ায় প্রান্তিক এর দিকে।কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠে,

—তুই যদি তোর ভাইরে কিছু কইচত তোর হাত ভাঙ্গি দিবো আমি।সব দাঁত থাবড়া দিয়ে পালাই আমার পার্শিয়া খেলতে দিবো। অস’ভ্য পোলা।

বলেই জান্নাত রেস্টুরেন্ট এ না গিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরে।এই দুপুর সময়ে খুব কম সংখ্যক গাড়ি পাওয়া যায়।পাওয়া যায় ন। বললেই চলে।

জান্নাত রা’গে গজগজ করতে করতে যাচ্ছিলো। পিছনে ইশি আর প্রান্তিক ও আসছে হেটে। সামনের মোড় থেকেই ইশি গাড়ি নিয়েই তার বাসার পথে যাবে।হঠাৎ জান্নাতের সামনে একটা গাড়ি থামতেই জান্নাত পা চালানো থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।গাড়ি টার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আ হে।কোন বেআক্কেল এভাবে গাড়ি থামিয়েছে।একবার গাড়ি থেকে বের হোক আক্কেল শিখায় দিবো।এমনি পণ করে রেখেছে জান্নাত।

গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে রাফসান মির্জা।জান্নাতের দিকে তাকিয়েই বত্রিশ টা দাঁত দেখিয়ে হেসে দেয়।জান্নাতের সামনে এসে দাঁড়ায়।জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয় আবার।জান্নাত কে বলে উঠে,

—তোমার নাম জান্নাত আজমী তাই না?

জান্নাত অ’বাক হয়।সে তো এই লোকটা কে নিজের নাম বলেনি। তাহলে জানলো কি ভাবে?জান্নাত কে ভাবতে দেখে রাফসান মির্জা হেসে উঠে বলে,

—কি ভাবছো?আমি তোমার নাম কি ভাবে জানতে পেরেছি?আরে এসব তো আমার বা হাতের ব্যাপার।

জান্নাত শান্ত স্বরে মুচকি হেসে বলে,

—মানুষ বা হাত কখন কাজে লাগায় জানেন? ডান হাত অকেজো হয়ে গেলে বা হাত কাজে লাগায়।আপনার ক্ষেত্রে ও ঠিক তাই।ডান হাত তো থেকে ও নেই বোধ হয় আপনার।তাই তো বা হাতের খেল সব আপনার।

আজকের অপমানে রাফসান মির্জা ক্ষুব্ধ হলেও।তা জান্নাতের সামনে প্রকাশ করেনি।তাই আবার বলে উঠে,

—বাই দ্যা ওয়ে তোমার বাবা আগে রাজনীতি করতো তাই না?জুনায়েদ আজমী। আমাদের প্রতিনিধি ছিলো। বিপক্ষ পার্টি।

—ও আচ্ছা।তা রাজনীতি তে প্রতিনিধি দল হিসেবে প্রতিবার দাঁড়ান। তো মানুষের কত টুকু সাহায্য করেন।নির্বাচন এর সময় তো পারলে গরীব দের মুখে ভাত তুলে দেন নিজ হাতে।কিন্তু নির্বাচন শেষ হলেই সেই গরীব মানুষ গুলো এক পয়সার জন্য আপনাদের সামনে দাঁড়ালে তাদের লা’থি উপহার হিসেবে দেন।মানুষ মা’রতে দ্বিধা বোধ করেন না।আপনারা সব গুলো রাজনীতি বিদ – ই এক।

—আরে তুমি রে…

জান্নাত রাফসান আজমী কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে থামিয়ে দেয়।আবারো শান্ত কণ্ঠে বলে,

—লোক মুখে শুনেছি কু’কুরের লেজ বারো বছর চুঙ্গায় ভরে রাখলে ও সোজা হয় না।আপনাকে দেখে সেটার প্রমাণ পেলাম।

কু’কুরের সাথে নিজেকে তুলনা করায় রাফসান মির্জা চটে যায়।রে’গে উঠে বলে,

—কি বুঝাতে চাইছো তুমি?

—এই টাই বুঝাতে চাইছি যে,আমি বার বার বারণ করার পর ও আপনি আমাকে ‘তুমি ‘ সম্বোধন করছেন। যার রাইট আপনাকে আমি দিই নাই।সত্যিই কু’কুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।

প্রান্তিক রিক্সা নিয়ে আসতেই জান্নাত রিক্সায় উঠে যায়।রাফসান মির্জা প্রান্তিক কে খেয়াল করেনি।ইশি কে ও প্রান্তিক রিক্সায় করে তার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।

🌸🌸

বিকেল চারটা বাজে।জান্নাত আসরের নামাজ পড়ে বসে মোবাইল ঘাটছে।হঠাৎ ফোন আসলে জান্নাত দেখে ইশি ফোন করেছে ফোনটা তুলে কানে নিতেই ইশি বলে,

—জানু শুন!

—হুম বল।

—এক্ষুনি প্রান্তিক এর বাসায় চলে আয়।

—কেন?

—আমি প্রান্তিক এর বাসায়।তাড়াতাড়ি আয়।তিনজনে মিলে আড্ডা দিবো কিছুক্ষণ।

—কিন্তু…

—কোনো কিন্তু না।তাড়াতাড়ি আয়।

—আগে বল,প্রান্তিক এর ভাই বাসায় আছে?

—নাহ।ভাইয়া নাকি রাতের বারোটা বাজবে আসতে আসতে।নির্বাচন তো সামনে।

—ওহ।কোন জায়গায় বসে কাকে মা’রতাছে।যা গিয়ে দেখ।

—চুপ করবি তুই?কয়বার বলছি সব রাজনীতি বিদ এক না।প্রণয় ভাইয়া যথেষ্ট ভালো।

—তোকে বলেছে আমার কাছে তার সুনাম গাওয়ার জন্য?

—তোর সাথে কথা বলা টাই ভুল।তাড়াতাড়ি আয় এই বাসায়।

—ঠিক আছে।

জান্নাত ফোন কে’টে মাথায় ওড়না চাপিয়ে নিচে চলে যায়।আহ্লাদী বসে বসে সিরিয়াল দেখছে। জুরাইন খেলতে গেছে।জুনায়েদ আজমী অফিসে। রাহেলা রান্না ঘরে কিছু একটা করছে

জান্নাত রাহেলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।রাহেলা মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,

—কিছু বলবি?

—মা আমি একটু প্রান্তিক এর বাসা থেকে আসছি।ইশি ও আসছে ওই বাসায়।

—ঠিক আছে।তাহলে এক মিনিট দাড়াঁ। আমিও যাবো একটু। রোকসানার সাথে কথা আছে আর এই পিঠা গুলো নিয়ে যাবো।

একটা বক্সে রাহেলা পিঠা সাজিয়ে নিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই রাহেলা আহ্লাদী কে দরজা আটকাতে বলে বেরিয়ে যায় শাহরিয়ার পাবেল এর বাসার উদ্দেশ্যে। জান্নাত আর রাহেলা বাসার গেইট পার হয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখে কালো পোশাক পরিহিত কত গুলো বলিয়ান পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে।সবার হাতেই একটা একটা গু’লি। হয়তো গার্ড এরা।

প্রণয়ের বাসার কলিং বেল দিতেই প্রান্তিক এসে দরজা খুলে দেয়।রোকসানা বেগম আর রাহেলা বসে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে।ইশি আর জান্নাত প্রান্তিক এর রুমে চলে গিয়েছে।
তিন জনে বসেই কথা বলছে।

নিচ থেকে রোকসানা ঢাকতেই জান্নাত নিচে চলে যায়।ইশি দৌড়ে গিয়ে দরজা পাশে দাঁড়ায়।প্রান্তিক প্রণয় কে ফোন দেয়।দুই বার ফোন দিয়েছে কিন্তু প্রণয় ফোন তুলেনি।তৃতীয় বারের সময় প্রণয় ফোন ধরে উৎকণ্ঠিত ভাবে বলে,

—হ্যাঁ প্রান্তিক বল।পার্টি অফিসে আছি।

—ভাইয়া, জান্নাত..

এত টুকু বলেই প্রান্তিক ফোন কেটে দেয়।ইশি,প্রান্তিক দুই জনে হাসতে থাকে।

অন্যদিকে প্রান্তিক এর এমন অর্ধেক কথা বলে ফোন কে’টে দেওয়াতে প্রণয়ের অন্তর আত্না কেপেঁ উঠে যেন।কি হয়েছে জান্নাতের? জান্নাত বলে ফোন কে’টে দিলো কেন প্রান্তিক?

প্রণয় দ্রুত পার্টি অফিস থেকে বের হয়ে নিজে ড্রাইভ করে জান্নাতের বাসার দিকে যায়।এই প্রথম জান্নাতের বাসায় আসা তার।জান্নাতের বাসার কলিং বেল বাজাতেই আহ্লাদী এসে দরজা খুলে দেয়।প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

—খালাম্মা বাসায় নাই প্রণয় ভাই!

প্রণয় পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলে,

—জান্নাত আছে?ওর কি হয়েছে?

প্রণয়ের কথায় আহ্লাদী অ’বাক হয়।আপামণির আবার কি হইবো। আহ্লাদী বলে,

—আপামণি আর খালাম্মা তো আপনাগো বাসায় গেছে ভাই।

—আচ্ছা।

বলেই প্রণয় আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের বাসার দিকে যায়।সারা শরীর ঘেমে চুপচুপে হয়ে গেছে তার।শুভ্র পাঞ্জাবী টা অ শরীর এর সাথে ঘামে চিপকে গেছে।চোখের রিমলেস চশমার আড়ালে ঘামের ফোটা।কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।মনের ভিতরে অজানা ভ’য়।এক সপ্তাহ মেয়ে টাকে দেখে না।কি হয়েছে।আল্লাহ জানে।আল্লাহ যাতে ঠিক রাখে।

প্রণয় দরজার কলিং বেল দিতেই জান্নাত এসে দরজা খুলে।রোকসানা আর রাহেলা রান্না ঘরে।প্রান্তিক, ইশি উপরে থাকায় জান্নাত এসেছে দরজা খুলতে। কিন্তু দরজা খুলে যে এই মানুষ টা কে সে ভাবেনি।ইশি তো বলেছে মিঃ ভালোবাসা রাত বারো টায় আসবে।তবে এত তাড়াতাড়ি আসলো যে?

দীর্ঘ সাত দিন পর জান্নাত কে চোখের সামনে সুস্থ অবস্থায় দেখে কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত প্রণয় সেটা ভুলে গেছে।ইচ্ছে করছে এক সেকেন্ড এর জন্য হলেও জান্নাত কে জড়িয়ে ধরতে।জিজ্ঞেস করতে তার কি ভুল ছিলো যে তাকে দেখা দেয় না জান্নাত। কিন্তু নিজেকে সংযত করেছে প্রণয় আর যাই হোক বিয়ের আগে এসব করা যাবে না।

—কে এসেছে জান্নাত মা??

রোকসানার কথায় জান্নাত সম্বিৎ ফিরে আসে।ড্রয়িংরুম এর দিকে রাহেলা আর রোকসানা আসতে আসতেই রোকসানা কথা টা বলেছে।

জান্নাত দরজা থেকে সরে প্রণয় কে ভিতরে ঢুকতে জায়গা করে দেয়।রোকসানার উদ্দেশ্যে বলে,

—মিঃ প্রণয় এসেছে আন্টি।

রোকসানা রান্না ঘর থেকে লেবুর শরবত এনে প্রণয় এর হাতে দেয়।প্রণয় জান্নাতের দিকে তাকিয়ে শরবতের গ্লাস নিয়ে সোফায় বসে জান্নাতের কথায় রাহেলা তেঁতে উঠে বলে,

—বে’য়াদব মেয়ে।প্রণয় তোর বড় না?ভাইয়া বলে ডাকতে পারিস না?ভাইয়া বলে ডাকবি।

রাহেলার কথায় প্রণয়ের গলায় শরবত আটকে কাশতে শুরু হয়ে গেছে।জান্নাত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।উপর থেকে প্রান্তিক আর ইশি সব দাঁড়িয়ে দেখে কপাল চাপড়াচ্ছে।শেষে কিনা ভাইয়া বানিয়ে দিলো? তাদের এত কষ্টের প্ল্যান জান্নাত আর প্রণয় কে একসাথ করার।প্রান্তিক ইশির কাঁধে হাত রেখে বলে,

—বুঝলি শিশি এত কষ্টের ফল দেখার পরে বলতে ইচ্ছে করে,

‘‘ভোরে ঢাকে কাক,
আমি তো অবাক’’!..

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৪
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

—“আপনি কি খু’ন করেন”?

হঠাৎ জান্নাতের এমন কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় প্রণয়। প্রান্তিক এর রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জান্নাত, প্রণয় কথা বলছে।দুই জনকে এই রুমে পাঠিয়েছে ও ইশি,প্রান্তিক।ছলেবলে কৌশলে দুই জনকে এই রুমে পাঠিয়েছে।

প্রণয় কে চুপ করে থাকতে দেখে জান্নাত আবার স্বগতোক্তি করে বলে,

—“কি হলো বললেল না যে,আপনি কি খু’ন করেন”?

—“খু’ন করা বলতে আপনি কি বুঝিয়েছেন”?

—“মানুষ খু’ন করা”।

—“যদি বলি ‘না’ তাহলে কি বলবেন? আর যদি বলি ‘হ্যাঁ’ তাহলে কি বলবেন “?

—‘না’ বললেল কখনো বিশ্বাস করবো না।

—“এতটা অবিশ্বাস করার কারণ “?

—“রাজনীতি বিদ বলতেই নির্দোষ মানুষ কে খু’ন করা”।

—“তাই”?

—“হ্যাঁ”

প্রণয় হাসে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে। জান্নাত প্রণয়ের এই হাসির কারণ বুঝতে পারেনা। লোকটা পা’গল টা’গল হয়ে গেলো নাকি?এখানে সে হাসি পাওয়ার মতো এমন কি কথা বলেছে? যে লোকটা হাসছে?

প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে আকাশ পানে তাকায়।সেই দিক থেকে চোখ সরিয়ে জান্নাতের মুখশ্রী তে নিবদ্ধ করে নেত্র যুগল। সবার আগে দৃষ্টি পড়ে সেই লালছে কালো নাকের তিল টার দিকে।দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে প্রণয় বলে,

—জুনায়েদ আংকেল ও তো আগে রাজনীতি করতো তাই না?

—হ্যাঁ।

—আংকেল কে জিজ্ঞেস করে দেখিয়েন আংকেল মানুষ খু’ন করতো কিনা?আর কেন খু’ন করতো?

বলেই প্রণয় পকেট থেকে ফোনটা বের করে প্রান্তিক কে কল করে বলে,”দরজা খুলে দেওয়ার জন্য”।প্রান্তিক এসে দরজা খুলে দিয়েই আবার লাপাত্তা হয়ে যায়।আজকে বড় ভাইয়ের সাথে যা করেছে এরপর যদি ভাই কাছে পায় তাকে।তাহলে বোধহয় আস্ত রাখবে না।এই ভ’য়েই প্রণয় এর কাছ থেকে প্রান্তিক পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

জান্নাত প্রান্তিক এর বেলকনিতে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।আর ভাবছে প্রণয়ের বলে যাওয়া সেই শেষের কথা গুলো। কি বুঝিয়ে গেলো লোকটা এই সব বলে?বাবাকে ও বা জিজ্ঞেস কেন করতে বললো নিজে না বলে?

রাহেলার ডাক এসে কানের কাছে পৌছাতেই জান্নাত প্রান্তিক এর রুম থেকে বের হয়। আসার পথে হঠাৎ একটা রুমের দিকে তার চোখ পড়ে।রুমের দরজাটা খোলা।জান্নাত রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। যদিও এটা ঠিক না কারো রুমে উঁকি দেওয়া।কিন্তু রুমের ভিতরে একটা ব্রাউন কালারের পার্শিয়ান বিড়াল দেখে জান্নাতের ইচ্ছে করছে বিড়াল টাকে ছুঁয়ে দিতে একটু।তাই উঁকি দেওয়া।

দরজার একদম কাছে দাঁড়িয়ে ভিতরে ভালো ভাবে উঁকি দেয় জান্নাত। প্রণয় রুমের এদিক সেদিক ছুটছে।আর প্রণয়ের পিছন পিছন বিড়ালটা ও ঘুরছে।কি কিউট।হঠাৎ প্রণয় দরজার দিকে তাকাতেই জান্নাত আর প্রণয়ের চোখাচোখি হয়ে যায়।জান্নাত দ্রুত দরজা থেকে সরে চলে যায়।জান্নাতের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রণয় হেসে দেয়।

🌸🌸

পুরো শহরে অন্ধকার নিমজ্জিত হয়েছে।ঘড়ির কা’টা রাত বারো টার ঘরে।আকাশে শুধু চাঁদ টা উপস্থিত। তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য আজ তারার মেলারা নেই।আচ্ছা চাঁদ টা কি আজ বড্ড একা? হাজার রকমের ভাবনা এসে মাথায় জড়ো হচ্ছে।কিন্তু উত্তর শূণ্য এর কোটায়।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে জান্নাত।হিমেল বাতাস এসে গায়ে জাপটে পড়ছে।পুরো শরীর যেন মুহূর্তে শীতল করে তুলছে।পাশের বেলকনিতে আজ প্রণয় নেই।শূণ্য শূন্য লাগছে।এত দিন নিজেও বেলকনিতে না আসায় এবং মিঃ ভালোবাসা কে এত দিন না দেখায় এত টা শূণ্য অনুভূত হয় নাই।কিন্তু আজ দেখা হওয়ায় যেন মন খুব করে চাইছে পাশের বেলকনির মালিক উপস্থিত থাকা দরকার। খুব দরকার।

জান্নাত তপ্ত নিশ্বাস ফেলে ফিরে যাবে এমন সময় কিছু টুংটাং আওয়াজ কানে আসে।ঘুরে দাঁড়ায় আবার।পাশের বেলকনিতে নজর দেয়।এই তো মিঃ ভালোবাসা এসেছে।উল্টো ঘুরে বসে গিটার বাজাচ্ছে। হয়তো জান্নাত কে খেয়াল করেনি এখনো।

প্রণয় গিটার বাজাতে বাজাতে আস্তে সুরে গেয়ে উঠলে,

🎸স্বপ্নে তার সাথে হয় দেখা ♪
বসে বসে ভাবি তাও একা একা
সে স্বপ্নে আসে তবু
স্বপ্নের চেয়েও মধুর
তাকে পাবার আশায়
দুচোখ রাখা দূর বহুদূর।
তার স্বপ্ন দেখে রাত চলে যায়
তারপর আসে ভোর
তারপর আমার ঘুম ভাংগে
দেখি ব্যস্ততার এ শহর
অবিরাম ছুটে চলা
একা একা কথা বলা
কতো কিছু বলে ফেলা
তাকে ভালোবেসে ফেলা
এ ভালোবাসাতেই রোদ্দুর।
তার স্বপ্ন আঁধারে ঘেরা নয়
সোনালী রোদে ভরা
মেঘের আকাশ চাইনা
তার স্বপ্নে আছে তারা
বেসেছি ভালো তাঁকে
স্বপ্ন দেখার ফাঁকে
স্বপ্নের রং মেখে
মনেতে তার ছবি এঁকে
সে স্বপ্নের চেয়েও মধুর
তাকে পাবার আশায়
দুচোখ রাখা দূর বহুদূর। ♬ ♬

গান গাচ্ছে আর জান্নাত কে নিয়ে হাজার ও ভাবনা ভেবে চলছে প্রণয়। মেয়েটা তাকে কল্পনায়, স্বপ্নে বড্ড জ্বা’লায়।বাস্তবে ও কম যায় না।রাজনীতি করে বলে জান্নাত তাকে খারাপ মানুষ ভেবে।তাই এড়িয়ে চলে।কথা বলতে চাই না।দেখা দিতে চায়না।কল্পনা করে নেয় জান্নাত কে প্রফোজ করছে।খুব ইমপ্রেসিব ভাবে।তার বিড়াল জেনিথ কে দিয়ে প্রফোজ করছে জান্নাত কে।কিন্তু কল্পনা না তো কল্পনায়।বাস্তবে এসব ভাবা ও প্রণয়ের জন্য বিলাসিতা। কারণ জান্নাত তো তাকে পছন্দ- ই করে না হয়তো। উত্তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে প্রণয় এসব ভেবে।

জান্নাত বেলকনির রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে বসে বসেই প্রণয় এর গান শুন ছিলো। যাতে প্রণয় তাকে দেখতে না পায়।জান্নাত আনমনে আওড়ায়,

—‘‘‘মিঃ ভালোবাসা আপনার প্রতি কেন আমার ইমোশন কাজ করে?আপনি আপনার নামের মতোই হয়তো ভালোবাসার সুরভী ছড়িয়ে দিয়েছেন। এটা ঠিক না মিঃ ভালোবাসা।একজন খু’নি এর প্রতি আমার ইমোশনাল হওয়া ঠিক না।’’’

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৫
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

ভোর চারটা পঁয়তাল্লিশ বাজে।রাতে বেলকনির রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে বসে যে প্রণয়ের গান শুনছিলো।সেই ভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে জান্নাত। ঘরে এসে ঠিক করে বিছানায় শোয়া হয় নি।কাধঁ পর্যন্ত কোঁকড়া চুল গুলে খুলে কাঁধে এবং মুখের উপর লুটুপুটি খেলছে।ধরণী এর মাঝে এখনো অন্ধকার এর বিচরণ। পাখি দের কিচিরমিচির ডাক এসে কানে বারি দিচ্ছে।সুদূরে কাক ও ঢাকছে বোধহয়। বাসার পাশের এবং দূরের মসজিদ গুলো তে মুয়াজ্জিন রা আজান দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হঠাৎ হাতের পাশে নরম তুলতুলে কিছু অনুভব হতেই চোখ খুলে তাকায় জান্নাত। আধো আধো অন্ধকারে সাদা কিছু চোখে পড়তেই একটু চমকে যায়।মুহুর্ত এর মাঝে ভালো করে তাকাতেই দেখে তার বিড়াল পার্শিয়া। জান্নাত হাতের পাশে বসে হাতের উপর নিজের মাথা ভুলাচ্ছে আর মিও মিও করে তার নিজস্ব শব্দ তরঙ্গিত করছে।যেন অভিমান এর হাজার ঝুলি নিয়ে বসেছে জান্নাতের কাছে।সব সময় জান্নাত এর পাশে ঘুমায় বিছানায়। কাল জান্নাত বেলকনিতে ঘুমানো তে হয়তো একা একা ঘুমিয়েছে আর বা না হয় সারা বাড়ি জান্নাত কে খুঁজে এখন বেলকনিতে পেয়ে অভিমানের ঝুলি খুলেছে।বোবা প্রাণী দের ভালোবাসা গুলো মন কাড়া হয়ে থাকে।

পার্শিয়া কে কোলে নিয়ে জান্নাত রুমে চলে আসে।ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে নেয়।হঠাৎ কিছুর বিকট শব্দ কানে আসতেই জান্নাত দৌড়ে বেলকনিতে যায়।কিছুক্ষণ পরে আবার আরেকটা শব্দ আসে।শব্দটা যে গু’লির। এবার জান্নাত বুঝতে পেরেছে।বেলকনি থেকে সামনের দিকে তাকাতেই দেখে নয় দশ জন লোক মুখে কালো কাপড়ে ঢাকা।হাতে গু’লি নিয়ে প্রণয়ের বাসার দিকে গু’লি ছুড়ছে।জান্নাত প্রণয়ের বেলকনির দিকে তাকাতেই চোখ যেন কপালে উঠে গেছে।প্রণয় ও গু’লি হাতে ওই মানুষ গুলোর দিকে তাক করে আছে।হঠাৎ প্রণয়ের চোখ পড়ে পাশের বেলকনির জান্নাত এর দিকে।

জান্নাত কিছু বুঝে উঠের আগেই প্রণয় বেলকনির রেলিং টপকে জান্নাত এর বেলকনিতে আসে।জান্নাত কে ধরে নিচে বসে যায় মাথা নামিয়ে। জান্নাত প্রণয় এর বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ টা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।যা খুব দ্রুত চলছে।প্রণয় জান্নাত কে নিচে বসিয়ে একটু মাথা তুলেই বাইরের লোক গুলোর দিকে একটা গু’লি করে।

কিছুক্ষণ পরেই সব কিছু ঠান্ডা হয়ে যায়।জান্নাত নিরব হয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।আজকে সহ দ্বিতীয় বার প্রণয় কে সে মানুষ খু’ন করতে দেখেছে।চার কিংবা পাচঁ দিন আগে একদিন জান্নাত পার্শিয়া কে খুঁজতে খুঁজতে বাসার পিছনের দিক টাই যায়।বাসার পিছনের দিকে ছোট একটা ডোবা আছে।জান্নাতের হঠাৎ চোখ পড়ে ডোবার পাশের মানুষ টার দিকে।যে উল্টা ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত দ্রুত একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে যায়।মানুষ টা কে সেটা দেখার জন্য।

জান্নাত গাছের পিছন থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে থাকে।ডোবার পাশে দাঁড়ানো মানুষ টার হাতে একটা র’ক্ত মাখা ছু’রি। হাতটা ও র’ক্ত দিয়ে মাখা।ডোবার এক পাশে নেমে ছু’রি
টা ধুয়ে হাত ও ধুয়ে নেয়।ছু’রি নিয়ে ডোবার উপরে উঠতেই যেন জান্নাত এর চক্ষুচড়ক গাছ।প্রণয় কে দেখে জান্নাত পুরো অ’বাক হয়ে যায়।লোকটা হসপিটাল থেকে গতকাল এসেছে অথচ আজ-ই মানুষ মে’রেছে?উনি মানুষ খু’ন করে?আগ থেকেই রাজনীতি, রাজনীতি বিদ পছন্দ না।রাজনীতি বিদ রা নির্দোষ মানুষ খু’ন করে বলে জান্নাতের ধারণা। তারপর ও প্রণয় কে সে ভালো ভেবেছিলো। কিন্তু প্রণয় তার ধারণা সত্যি করে প্রণয়ের জন্য তৈরি ভাবনা কে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে।প্রণয় ও মানুষ মা’রে। নির্দোষ মানুষ দের খু’ন করে।

জান্নাতের ভাবনার ছেদ ঘটে প্রণয়ের কথায়।প্রণয় জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

—জান্নাত আপনি ঠিক আছেন?

—আজ ও আবার মানুষ খু’ন করলেন আপনি।

—মানে?

জান্নাত কিছু বলবে তার আগেই রুমে ঢুকে জুনায়েদ আজমী আর রাহেলা। প্রণয় কে দেখে অ’বাক কিছুটা।জুনায়েদ আজমী প্রণয় কে উদ্দেশ্য করে বলে,

—প্রণয় বাবা, তুমি এখানে?বাইরে গু’লির আওয়াজ শুনলাম মনে হলো।

—আঙ্কেল রাফসান মির্জার লোকেরা এ’ট্যাক করেছে কিছুক্ষণ আগে।জান্নাত বেলকনি তে ছিলো। তার গায়ে গু’লি লাগতো যেই ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। তাই আমি বেলকনির রেলিং টপকে এখানে চলে আসি।এখন রাফসান মির্জার লোকেরা চলে গেছে।চলে যায়নি ঠিক।আমার গার্ড দের কবলে বন্দি তারা

প্রণয়ের কথায় রাফসান মির্জা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে।প্রণয়ের উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,

—নির্বাচন এর আর কয় দিন বাকি?

—আর আটদিন পরেই নির্বাচন আঙ্কেল।

—তুমি সাবধানে থেকো বাবা এই কয়টা দিন।
রাফসান মির্জা এখন পুরো দমে চাইবে তোমাকে শেষ করার জন্য।

—জি আঙ্কেল।

—উনি একজন খু’নি আব্বু ।

হঠাৎ জান্নাতের এমন কথায় বিচলিত হয়ে যায় উপস্থিত তিন জন মানুষ। প্রণয় জুনায়েদ আজমীর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আঙ্কেল আপনার মেয়েকে একটু বুঝান তার ধারণা রাজনীতি করছি মানি আমি নির্দোষ মানুষ দের নাকি খু’ন করছি।উনি আমাকে খু’নি তকমা দিচ্ছে।

—আচ্ছা আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি।তুমি যাও বাবা।

জুনায়েদ আজমী বলতেই প্রণয় আবার বেলকনির রেলিং টপকে চলে যায়। রাহেলা নিচে চলে যায় নাস্তা রেডি করতে।আহ্লাদী কে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়।

জুনায়েদ আজমী গিয়ে মেয়ের পাশে বসে।জান্নাতের মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়।জান্নাত বাবার বুকে মাথা রেখে চুপ করে থাকে।জুনায়েদ আজমী কে জান্নাত নিরব থেকে বলে,

—আব্বু তুমি তো রাজনীতি করেছো। কখনো মানুষ খু’ন করেছো?

জান্নাতের কথায় জুনায়েদ আজমী সাবলীল ভাবে উত্তর দেয়,

—হ্যাঁ।

জুনায়েদ আজমীর মুখোচ্চরিত ‘হ্যাঁ ‘ শব্দটা শুনে জান্নাত কিছুক্ষণ এর জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।কিয়তক্ষণ নিরবতার মধ্যে কাটিয়ে আবার বলে,

—কেন খু’ন করতে আব্বু?

—দেখ আম্মু রাজনীতি মানেই যে খারাপ তেমন না।ঠিক তেমনি রাজনীতি বিদ মানেই যে সবাই অসৎপথ অনুসরণ করে তেমন ও না।রাজনীতি এর মধ্যে কেউ চায় জনগণের সেবা করতে।আবার কেউ চায় জনগণের উপর স্বৈরাচারী শাসন চালাতে।আর যে চায় জনগণের এর সেবা করতে সে যদি নির্বাচনে সফল হয় তাহলে তো অন্য জন স্বৈরাচারী শাসন চালাতে পারবে না।তাই তারা যে সেবা করতে চায় তাকে মা’রার জন্য বিভিন্ন ভাবে ওত পেতে থাকে।মা’রার চেষ্টা করে।জনগণ কে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে এক দুইটা মানুষ মা’রতে হয়।আর যে সব মানুষ গুলো কে মা’রা হয় তারা কোনো নির্দোষ মানুষ থাকে না।তারা বিরোধী দলের লোক থাকে।উদাহরণ হিসেবে প্রণয় আর রাফসান মির্জার কথা বলি।দুই জনেই চায় এমপি পদবী তে নির্বাচনে দাঁড়ানোর।কিন্তু দুই জনের উদ্দেশ্য আলাদা।প্রণয়ের উদ্দেশ্য গরীব দুস্থ মানুষ গুলো কে সাহায্য করা।পাশে দাঁড়ানোর।সরকার থেকেও যাতে মানুষ গুলো সাহায্য পায়।আর রাফসান মির্জার উদ্দেশ্য হলো সংসদ সদস্য হওয়া,গরীব দুঃখী মানুষ গুলোর উপর শাসন করা,সরকার থেকে পাওয়া সব কিছু নিজে ভোগ করা।কিন্তু প্রণয় যদি এখন এই নির্বাচনে সফল হয়ে যায় তাহলে তার সব কিছু বিফলে যায়।তাই তো বার বার লোক পাঠাচ্ছে প্রণয় কে মা’রার জন্য।আর সেই লোক গুলো থেকেই নিজেক বাচানোর জন্য প্রণয় তাদের এক দু’জন কে খু’ন করেছে। কোনো নির্দোষ মানুষ কে খুন করেনি। প্রাণ বাচানো ফরজ।রাজনীতি যখন করতাম তখন আমিও বিরোধী দলের মানুষ মে’রেছি আম্মু।বুঝলি আম্মু এবার। রাজনীতি বিদ মানেই যে সবাই নির্দোষ মানুষ কে খু’ন করে এমনটা নয়।এমন হলে তো তোর বাবা ও খু’নি।
।তোর মা জানে সব।আমার পাশে থেকেছে তবুও তোর মা।কখনো আমাকে তোর মা খু’নি বলেনি।কারণ তোর মা জানে আমি কোনো নির্দোষ মানুষ কে মা’রিনি।

বলেই জুনায়েদ থামে।জান্নাত এতক্ষণ চুপ করে সব কিছু শুনলে ও তার বাবার শেষের কথা গুলো তে অ’বাক হয়।এখানে তার আম্মুর কথা আসছে কেন?বিশ্বাস, অবিশ্বাস, ভুল এর কথা ও বা আসছে কেন?আমার সাথে তো মিঃ ভালোবাসার সাথে কোনো সম্পর্ক নেয়।হ্যাঁ হয়তো দুই জনের মাঝে দুই জনকে নিয়ে একটু, বেশি না এই একটু 🤏 ভালো লাগা জন্ম নিয়েছে।তাই বলে আব্বু আম্মুকে নিয়ে কি বুঝাতে চাইলো।

জুনায়েদ আজমীর কথায় জান্নাতের ভাবনার চাদরে ছেদ ঘটে।জুনায়েদ আজমী মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলে,

—আশা করি আমি যা বলেছি বুঝতে পেরেছিস আম্মু।ছেলে টাকে আর “খু’নি” সম্বোধন করিস না।তুই ওকে আর খু’নি বললে আমি ও তোর আম্মুকে বলবো আমাকে খু’নি বলে ডাকতে।

জুনায়েদ আজমীর কথায় জান্নাত অবাক হয়ে বলে,

—আশ্চর্যান্বিত আমি আব্বু।এখানে আবার আম্মু আসছে কেন?আর আমি উনাকে খু’নি বললে তুমি কেন আম্মুকে বলবে তোমাকে খু’নি বলতে?তোমার আর আম্মুর মাঝে তো একটা সম্পর্ক আছে।আমাদের মাঝে তো কোনো সম্পর্ক নেই।তাহলে তুমি আম্মু আর তোমাকে দিয়ে কি বুঝাতে চাইছো?

—সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবি।

বলে জুনায়েদ আজমী মুচকি হেসে চলে যায়।জান্নাত এখনো তব্দা খেয়ে বসে আছে।কি বুঝাতে চাচ্ছে তার আব্বু?কিছুই মাথায় আসছে না।

আহ্লাদী কফি হাতে জান্নাতের রুমে এসেছে জান্নাত কে কফি দিতে।জান্নাত কফি হাতে নিয়েই বেলকনিতে যায়।নাহ প্রণয় নেই।আবার রুমে চলে আসে।আহ্লাদী জান্নাতের রুমে ঝাড়ু দিচ্ছে আর গান গাচ্ছে,

🎶ও বন্ধু বেবিট্যাক্সি, ও বন্ধু বেবিট্যাক্সি,
কই রইলারে?
এসো এসো এই আহ্লাদী এর কাছে..।
এসো এসো এই আহ্লাদী এর কাছে..!🎶

আহ্লাদী এর গান শুনে জান্নাতের বিষম লেগে গেলো। এটা কোনো গান?অকালে গান টাকে নির্মম অ-ত্যা-চা-র করে মে’রে ফেললো আহ্লাদী।সহজ কথায় বুঝা যায় গান টাকে ধর্ষ’ণ করেছে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে