#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:০১
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
ভার্সিটির প্রথম দিন ক্লাস করে বাড়িতে গিয়ে শুনে বাবার কাছে মেয়ের নামে ছেলেদের ইভটিজিং করার অপ’রাধে মা’মলা দায়ের করেছে পাশের বাসার ছেলে।এতদিন শুনে এসেছে পাশের বাসার ছেলে মানে ক্রাশ। আর এখন কিনা পাশের বাসার ছেলেই দিলো ক্রাশ নামের বাঁশ?
জান্নাত বাড়িতে ঢুকতেই দেখে ড্রয়িংরুমে তার বাবা জুনায়েদ আজমী সোফায় বসে টিভিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিউজ দেখছে।আর তার মা রাহেলা কিচেনে কাজ করছে খুঁটিনাটি। জান্নাত সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে বাবার ডাকে দাঁড়িয়ে যায়।পিছন তাকিয়ে আবার বাবার সামনে এসে বলে,
—কিছু বলবে আব্বু ?
জান্নাতের জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টি কে তার বাবা উপেক্ষা করে টিভি বন্ধ করে আবার জান্নাতের দিকে তাকায়।জান্নাত এখনো আগের মুখভঙ্গি তেই বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।জুনায়েদ আজমী ইশারায় জান্নাত কে বসতে বললো। জান্নাত ও বাবার কথামতো গিয়ে বসে পড়ে।
জুনায়েদ আজমী দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে সুধায়,
—আম্মাজান আপনার সাথে আমার অনেক বড় একটা কথা বলার আছে।
জান্নাত ও বাবার মতো করেই মাথায় দু’ষ্টামি চেপে বলে,
—জি আব্বাজান, বলেন।আপনার গুরুত্বপূর্ণ কথাটা পেশ করুণ আমার দরবারে।
—আপনার নামে ইভটিজিং এর মা’মলা দায়ের করা হয়েছে।
বাবার কথায় জান্নাত লাফ মে’রে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
—লা হাওলা কু আতা ইল্লা-বিল্লাহ।ভুক্তভোগী কে আব্বু?কে আমার নামে এই চরম মিথ্যে মা’মলা দায়ের করেছে।
জুনায়েদ আজমী কিছু বলবে তার আগেই কিচেন থেকে রাহেলা হাতে খুন্তি নিয়ে ড্রয়িংরুম এ প্রবেশ করে খুন্তি নাড়িয়ে বলে,
—আমার বাপ দাদার চৌদ্দ গুষ্টি কখনো শুনছে মেয়ে হয়ে ছেলেদের ইভটিজিং করতে?অথচ এই মেয়ে আজ ফাস্ট দিন ভার্সিটি তে গিয়ে ছেলেদের ইভটিজিং করে বাড়ি ফিরেছে।মানুষ এসে ওর নামে বিচার ও দিয়ে গেছে।এসব কেমন কথা?
রাহেলার কথায় জান্নাতের তেমন কোনো ভাবান্তর হলো না।জান্নাত রাহেলা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—আম্মু,তুমি তোমার বাপ দাদার জন্মে কখনো শুনো নাই।এই নিয়ে নিশ্চয় তোমার মনে দুঃখ ছিলো। কিন্তু দেখো তোমার দুঃখ নির্বাসন হয়ে গেছে। তোমার মেয়ের জন্মে তুমি সেটা শুনে ফেলছো।আহা!কি ভালোবাসা তোমার জন্য আমার।
জান্নাতের কথায় রাহেলা তেঁতে উঠে জুনায়েদ আজমী কে বলে,
—মেয়েকে কি তুমি কিছুই বলবে না?মেয়েটা দিন দিন অধঃপ’তন হচ্ছে।তুমি কি এভাবে চুপ করে থাকবে? সপাটে একটা থা’প্পড় মে’রে দাও ওকে।
—আহ!রাহেলা তুমি তোমার কাজে যাও।আমি কথা বলছি আমার মেয়ের সাথে।মে’রে ধরে বললেই যে সন্তান সঠিক পথে আসে সেটা তোমাকে কে বললো। বরং সুন্দর করে বুঝালেই সন্তান বুঝে।
—যা ইচ্ছা করো তোমরা বাবা মেয়ে।আমি আর কিচ্ছু বলবো না।কোনো দাম নেই এই সংসারে আমার।
বলতে বলতে রাহেলা আবার রান্না ঘরে চলে গেলো। জুনায়েদ আজমী মেয়েকে নিজের কাছে ডাকলো।জান্নাত বাবার কাছে গিয়ে বসে বাবার বুকে মাথা রাখতেই বাবা মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,
—আম্মু আজকে একজন এসে বলে গেছে তুমি নাকি ভার্সিটি তে ছেলেদের দেখলে গান গাও।ইভটিজিং করো এটা কি সত্যি আম্মু?
—আব্বু আমি তোমাকে মিথ্যে বলবো না।কিন্তু আমি কোনো ছেলেকে দেখে গান গায়নি।আমরা তো ফ্রেন্ডরা গানের কলি খেলছিলাম। সেটা যদি কোনো ছেলে শুনে মনে করে ইভটিজিং করা হয়েছে তাকে।তাতে তো আমার দোষ নেই।নিশ্চয় তার কানের এবং চোখের দোষ।
—তা আমার আম্মু কি এমন গান গাইছিলো যে, একটা ছেলে শুনে ভেবে নিয়েছে তাকেই উদ্দেশ্য করে গাওয়া হয়েছে?
—আব্বু এটা তোমাকে বলা যাবে না।বাই দ্যা রাস্তা আব্বু তোমাকে এসে বললো কে আমি ছেলেদের ইভটিজিং করেছি।আর আমি যে এই বাসায় থাকি জানলো কি ভাবে?
—সকালে তোমাকে নাকি বাসা থেকে বের হতে দেখেছে।আর ছেলেটা আমাদের পাশের বাসার ছেলে।প্রান্তিক ছেলেটার নাম।আমাকে এসে বললো যে ভার্সিটি তে তুমি নাকি ওকে উদ্দেশ্য করে ফ্রেন্ড দের নিয়ে গান গেয়েছিলে। সেটাকে ইভটিজিং হিসেবে ধরা হয়েছে।তাই এসে আমাকে বলেছে।যাই হোক,আর কিন্তু কোথাও কোনো গান গাইবে না ঠিক আছে আম্মু?
—আচ্ছা আব্বু।জুরাইন কোথায়?
—আসেনি এখনো স্কুল থেকে। জুরাইন এর নতুন টিউটর রেখেছি আজ থেকে।
—নতুন টিউটর? কে আব্বু?
—আপনার ইভটিজিং এর স্বীকার ভুক্তভোগী প্রান্তিক জুরাইন এর টিউটর।
—আব্বু আমি ইভটিজিং করিনি।
—আচ্ছা। আমি তো মজা করেছি।যাও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে এসো।একসাথে খেতে বসবো।
জুনায়েদ আজমীর কথা মতো জান্নাত নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হলো।আর মাথায় চলছে ভাবনা।নিজ মনেই বলতে থাকে,
—এই পাশের বাসার ক্রাশ কিভাবে দিতে পারলো আমায় বাঁশ।যদিও এখনো দেখিনি তাকে।তবুও বান্ধুবি দের মুখে শুনেছি পাশের বাসার ছেলেরা নাকি ক্রাশ খাওয়ার মতো হয়।
ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে নিচে চলে গেলো খাবার খেতে।রাহেলা এখনো জুনায়েদ আজমী আর জান্নাত এর উপর রে’গে আছে।উনার ভাষ্যমতে জান্নাত কে কেন কড়া কথা শুনাইনি জুনায়েদ আজমী?
🌸🌸
সন্ধ্যায় প্রান্তিক এসেছে জুরাইন কে পড়াতে।জুরাইন এর ঘরের দিকে যাওয়ার পথে জান্নাত এর সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হয়ে যায়।প্রান্তিক জান্নাত কে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।যেন পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট তম মানুষ টা জান্নাত যে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
জান্নাত কে ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রান্তিক বলে,
—এইযে,ইভটিজার পথ ছাড়েন। আমার সময় নেই।
ইভটিজার বলাই জান্নাতের পায়ের র’ক্ত মাথায় উঠে গিয়েছে যেনো।তীব্র বিরোধিতা করে জানায়,
—আপনি কাকে ইভটিজার বলছেন? আমি মোটেও ইভটিজিং করিনি।মুখ সামলে কথা বলতে শিখুন মিষ্টার টিউটর।
—রাস্তায় একটা ছেলেকে দেখে ছিহঃ মার্কা গান গাওয়া ইভটিজিং এর আওয়াতা ভুক্ত।
—আমি কোনো আপনাকে দেখে গান গাই নাই।আমরা ফ্রেন্ডরা গানের কলি খেলছিলাম।
—যেটা গাইছিলেন সেটা কে গান বলে?
—শিল্পী দের সম্মান করতে শিখুন। যে গানটা গেয়েছিলো।সে ও একজন শিল্পী।আর গানটা খারাপ কি?অসাধারণ গান,আরেকবার গায়।আপনি ও শুনেন।
🎶তোমার ও বউ নাই আমার ও জামাই নাই,
চলো দুইজন সংসার কইরা খায়।🎶
চাপা..
আর বলার আগেই প্রান্তিক দ্রুত হেটে জুরাইন এর রুমের দিকে চলে যায়।আর জান্নাত সেই দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।মিষ্টার ভুক্তভোগী টিউটর কে জ’ব্দ করতে পেরেছে। সেই ভেবে জান্নাত বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায় আবার।
🌸🌸
জুরাইন এর রুমে প্রবেশ করে প্রান্তিক এর চক্ষুচড়ক গাছ।তার চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া স্টুডেন্ট জানালার কাছে দাঁড়িয়ে পাশের বাসার মেয়েকে ফ্লাইং কিস দিচ্ছে।
প্রান্তিক টু শব্দ না করে জুরাইন এর পিছনে দাঁড়িয়ে পাশের বাসার দিকে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে। আর জুরাইন সেই দিকে তাকিয়ে হাসছে আর ফ্লাইং কিস ছুড়ছে।
এসব দেখে তো প্রান্তিক এর মাথায় হাত।এই পিচ্ছি বয়সের এই ছেলে এত তাড়াতাড়ি পেকে গেছে?এই বয়সে কিস কি সেটাও আমরা জানতাম না।আর এই ছেলে ফ্লাইং কিস দিচ্ছে এই বয়সে?কেয়ামত এর আর বেশি দেরি নাই।আস্তাগফিরুল্লা।
প্রান্তিক গিয়ে চেয়ারে বসে জুরাইন কে ডাক দিতেই জুরাইন পিছনে তাকায়।দেখে তার নতুর টিউটর এসে গেছে।এর আগে তিন জন টিউটর কে ভাগিয়েছে পড়া রেখে উল্টা পালটা কথা বলে।বাবা আজ আবার নতুন টিউটর ধরে এনেছে।এই যেন জুরাইন এর কাছে এক প্যারা। তবুও কোনো চিন্তা নেই।একেও ভাগিয়ে দিবে।সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে জুরাইন প্রান্তিক এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
—আসসালামু আলাইকুম স্যার।
—ওয়ালায়কুম সালাম।আমাকে ভাইয়া বলে ঢেকো। স্যার বলার দরকার নেই।বসো তুমি।
প্রান্তিক এর অনুমতি তে জুরাইন অন্য একটা চেয়ারে বসে বলে,
—জ্বি আচ্ছা।ভাইয়া আপনার নাম কি?
—শাহরিয়ার প্রান্তিক। তোমার নাম কি?
—জুরাইন আজমী। ভাইয়া আপনি কিসে পড়েন?
—সে সব তোমার জানার দরকার নেই বই নাও তুমি।
প্রান্তিক এর এমন কথায় জুরাইন এর মুখভঙ্গি বদলে গেলো। বুঝা যাচ্ছে প্রান্তিক এর এই কথা তার পছন্দ হয়নি।তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বই নিয়ে পড়া শুরু করে।আর প্রান্তিক বুঝিয়ে দিচ্ছে পড়া।
প্রান্তিক জুরাইন এর একটা খাতা নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলো।হঠাৎ একটা পাতায় চোখ আটকে যায়।প্রান্তিক একবার খাতার দিকে আরেকবার তার সামনে বসা পড়তে থাকা জুরাইন এর দিকে তাকাচ্ছে।
প্রান্তিক নিজেকে ধাতস্থ করে জুরাইন এর খাতায় লেখা চিঠির দিকে তাকিয়ে পড়তে থাকে,
প্রিয় পাখি,🥰
তোমাকে খুব ভালোবাসি।তুমি কতটা সুন্দর তুমি জানো?উঁহু জানো না।কারণ আমি বলিনি আজ পর্যন্ত তোমাকে। তোমাকে যখন প্রতিদিন তোমার অজান্তে ফ্লাইং কিস দিই তখন যেনো আমার কল্পনায় ভাসে তুমি লজ্জায় লাল হয়ে গেছো। আর আমার সেই সময় ইচ্ছা করে তোমার লাল হওয়া গালে তিব্বত পাওডার মেখে দিয়ে আসি।
পাখি কি জানে না তার জুরাইন তাকে ভালোবাসে।নাহ জানে না কারণ জুরাইন তাকে বলেনি। সমস্যা নেই।আমি গতকাল আমার এক ফ্রেন্ড এর থেকে শুনছি সে নাকি মোবাইলে একটা মুভি তে দেখেছে,ছেলে মেয়েকে গোলাপ ফুল দিয়ে কত গুলো মানুষের সামনে ভালোবাসার কথা বলে।এই যে তোমাকে যে ফ্লাইং কিস দিই।এটার কথাও আমার ফ্রেন্ড আমাকে বলেছে।সে মুভিতে দেখেছে।আমিও কতগুলো মানুষের সামনে তোমাকে ভালোবাসার কথা বলবো।
ইতি
জুরাইন ❤️
পুরো লেখা পড়ে প্রান্তিক পুরো তাজ্জব বনে গেলো যেন। এই জন্যই বলে এই বয়সে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দেওয়ার দরকার নেই।বাচ্চারা কি দেখে টিভি মোবাইলে সেই দিকে নজর দেওয়া।বন্ধু দের থেকে কি শিখে বন্ধুরা কেমন তা যাচাই করা।নাহলে অল্প বয়সে অধঃপ’তন। যার জ’লন্ত প্রমাণ জুরাইন।
প্রান্তিক এবার কিছুটা মজার ছলে জুরাইন কে ঢেকে চিঠিটা দেখিয়ে বলে,
—এটা কি জুরাইন?
—এটা প্রেম পত্র ভাইয়া। আমি পাখিকে ভালোবাসি।
প্রান্তিক আরো এক ধাপে অ’বাক হলো জুরাইন এর কথা শুনে। কি সুন্দর অনর্গল ভাবে কথা টা বলা যাচ্ছে।এখানেই শেষ নাকি বলার সময় আবার মেয়েদের মতো ব্লাশিং করছে।
প্রান্তিক জুরাইন এর কাঁধ চাপড়ে বলে,
—তুই তো দেখছি ইমরান হাসমি কে ফেল করিয়ে দিলি।ইমরান হাসমি এর আগেই তুই ফাস্ট।
জুরাইন এই মাথায় আসছে না ইমরান হাসমি কে?তাই বেশি না ভেবে প্রান্তিক এর দিকে প্রশ্ন ছু’ড়ে দেয়,
—ইমরান হাসমি কে ভাইয়া?
এবার প্রান্তিক পড়েছে বিপাকীয় অবস্থায়। একে এবার কিভাবে বুঝাবে ইমরান হাসমি কে?তবুও কিছুতো বলা লাগবে।
—ইমরান হাসমি হলো তোদের মতো পিচ্ছি যেই বাচ্চা গুলো অল্প বয়সে ভালোবাসি বলে তাদের আইডল।নারী জাগরণ এর অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। আর তোদের মতো পিচ্ছি বাচ্চাদের অগ্রদূত ইমরান হাসমি।
—ও আচ্ছা।
জুরাইন আর কোনো কথা বলেনি।প্রান্তিক ও আর কিছু বলেনি।আপাতত একটা বলে তো চুপ করানো গেছে।
🌸🌸
জুরাইন কে পড়া শেষ করে প্রান্তিক নিজেদের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়েছে।এমন সময় জুরাইন দৌড়ে আসে জান্নাত এর কাছে।জুনায়েদ আজমী ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসা।জগ থেকে পানি ঢালছে গ্লাসে পান করারা জন্য।
জুরাইন জান্নাত কে বলে,
—আপু বলতো পিচ্ছি বাচ্চাদের জাগরণ এর অগ্রদূত কে?
জুরাইন এর কথা শুনে জান্নাত অ’বাক। আর প্রান্তিক বিস্ময় আর ভ’য় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এখন না আন্টি আংকেল এর সামনে ইমরান হাসমি নামটা বলে মান সম্মান ফালুদা বানাই দেয়।
—জানি না তুই বল।
জান্নাতের কথার পৃষ্ঠে জুরাইন হেসে দেয়।আর প্রান্তিক দূরে দাঁড়িয়ে কপাল চাপড়াচ্ছে। তার আক্কল হয়ে গেছে এই ছেলের সাথে এইসব বলে।জুরাইন এক গাল হেসে বলে,
—ইমরান হাসমি।
সাথে সাথেই ঘর ময় কাশির শব্দে রঞ্জিত হতে শুরু হয়ে গেছে।জুনায়েদ আজমী পানি পান করতে গিয়ে বিষম লেগে কাশি উঠে গেছে জুরাইন এর কথা শুনে। জান্নাত কাশতে কাশতে ঘরে চলে গেছে।যাওয়ার আগে প্রান্তিক এর দিকে চোখ রা’ঙানি দিয়ে তাকিয়ে গেছে।বাবা মায়ের সামনে ভাই উ’দ্ভুত একটা কথা বলে কি অপ’দস্থ না-ই করলো। প্রান্তিক ও লজ্জায় বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।
আর জুরাইন সবার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে মনের সুখে নিজের ঘরে চলে যাচ্ছে।আর মনে মনে বলছে,
—আই আ’ম শিউর কালকে থেকে এই টিউটর ও আসবে না।আজকে লজ্জা পেয়ে গেছে।পড়া নামক প্যা’রা কে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে।যতগুলো টিউটর আনা হবে সব গুলোকেই ভাগিয়ে দিবো।
একটা পিচ্ছি বাচ্চার মাথায় কতটা দু’ষ্টামি বুদ্ধি থাকতে পারে তা হয়তো জুরাইন কে না দেখলে বিশ্বাস হতো না কারো।টিউটর কে ভাগানোর জন্য সবার সামনে লজ্জাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি।
#চলবে কী??
#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:০২
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
ঘড়ির কাঁ’টা রাত সাড়ে এগারো টার ঘরে এসে থেমেছে।কিন্তু জুনায়েদ আজমী আর শাহরিয়ার পাবেল এর গল্প এখনো শেষ হয়নি।দুই জন বন্ধু সাথে পাক্কা রাজনীতিবিদ ছিলো। সে সব নিয়েই গল্প করছে এখন।শাহরিয়ার পাবেল হচ্ছে প্রান্তিক এর বাবা।শাহরিয়ার পাবেল রাজনীতি থেকে নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছে। এখন তার-ই মতো রাজনীতি এর পথে পা বাড়িয়ে কাজ করছে তার বড় ছেলে।জুনায়েদ আজমী এক বছর আগেই রাজনীতি থেকে সরে এসেছে।মেয়েটা দিন দিন বড় হচ্ছে।শ’ত্রু পক্ষের মেয়ের দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়তে বেশি সময় লাগবে না।তাই তো রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।একমাত্র মেয়ের দিকে তাকিয়ে।
—বুঝলি পাবেল?অনেক দিন পরেই মনে হলো দুই বন্ধু সেই আগের জীবনে ফিরে গিয়েছি।
জুনায়েদ আজমীর কথায় শাহরিয়ার পাবেল হেসে উঠে বলে,
—তা কি আর বলতে?ভাগ্যিস অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দুই জনে পাশাপাশি বাসা কিনেছি। এবার রাত ভর জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।
—তো রাজনীতি পথটা ছাড়লি কেন?ভালোই তো করছিলি তুই?
—বয়স হয়েছে চারদিকের দৌড়াদৌড়ি তে শরীর খারাপ হয়ে যায় আরো।আমার এই অবস্থা দেখে বড় ছেলে বলেছে সে রাজনীতি তে যোগদান করবে।আমি যাতে এবার সরে আসি।আর ছেলেটা ও দেখলাম রাজনীতি করার প্রতি একটা আলাদা ঝোক আছে সাথে ভালোই বুঝে রাজনীতি। তাই আর না করিনি।এখন ওই-ই করছে সব।
—ছেলেটা কে তো দেখলাম না।এখানে থাকে না নাকি?
—ও শহরের বাইরে আছে কাজে।আগামীকাল আসবে ইনশাল্লাহ।
—যাক ভালোই।
🌸🌸
সকাল সাতটা বাজে।জান্নাত নাস্তা করতে নিচে এসেছে।জুনায়েদ আজমী টিভিতে নিউজ দেখছে।জান্নাত একবার নিউজটা দেখে আবারো সেই দুই বিরোধী দলের মা’রামা’রির খবর।এসব প্রতিদিন দেখতে দেখতে বিরক্ত। বাবা কিভাবে এসব দেখে তার বুঝে আসছে না।রাহেলার ঢাকে জুনায়েদ আজমী আর জান্নাত দুই জনে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে নাস্তা করতে।কিছুক্ষণ পরে জুরাইন ও চলে আসে।
—আব্বু তুমি বিরক্ত হও না প্রতিদিন এসব নিউজ দেখতে দেখতে?
খাবার মাঝেই জান্নাতের এমন কথায় থমকে যায় জুনায়েদ আজমী। রাজনীতি মেয়েটা পছন্দ করে না তিনি সেটা জানে।কিন্তু কেন পছন্দ করে না তাও উনার জানার বাহিরে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
—আম্মু তুমি কি ভুলে গেছো তোমার বাবা একজন রাজনীতিবিদ ছিলো?
—না ভুলিনি আব্বু।কিন্তু প্রতিদিন এত রে’ষারে’ষি খবর দেখতে ভালো লাগে না।মানুষের সমস্যা গুলো তো সমাধান হয়না।উল্টা দুই দলের কাড়াকাড়ি তে নির্দোষ মানুষ এর প্রাণ যায়।
—একদল চায় মানুষের ভালো করতে অন্যদল চায়না।তাইতো মা’রামা’রির সৃষ্টি হয়।তবে ইনশাল্লাহ একদিন গরীব মানুষের দেখা শুনার জন্য আল্লাহ কাউকে পাঠাবে।
—এসব কল্পনা করাও ভুল।
—পাবেল এর বড় ছেলে এবার এমপি পদে দাঁড়াবে। ছেলেটা মাশাল্লা বড্ড ভালো। ও যদি এমপি হয়ে যায়।মানুষের ভালোর জন্য লাগামহীন কাজ করে যাবে আমি জানি।তখন দেখবে নির্দোষ মানুষ গুলো ও শান্তি পাবে।
পাবেল এর বড় ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া জুনায়েদ আজমী কে দেখে সন্দেহের চোখে তাকালো জান্নাত। ইদানীং জুনায়েদ আজমী পাবেলের বড় ছেলের প্রশংসা একটু বেশি করছে তার কাছে।কিন্তু কেনো? তা বুঝতে পারছে না এখনো?
—তা এমপি পদে দাঁড়াক বা এম্বি লোড পদে দাঁড়াক। তাতে আমার কি?তুমি ওই ছেলের প্রশংসা আমার কাছে করছো কেন?
—এমনি বললাম আরকি।
মেয়েটার সামনে রাজনীতিবিদ কোনো ব্যক্তি কে নিয়ে সুনাম করা যায় না।চেঁতে উঠে।
জুনায়েদ আজমী খেয়ে উঠে চলে গেছেন। আজ দুই বন্ধু বের হবে একসাথে। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হতে চলে গেছে।
জুরাইন খাবার নিয়ে আঁকিবুঁকি করছে।জান্নাত সেই দিকে তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ নজরে।তার ভাইয়ের মতিগতি তার কাছে ভালো ঠেকছে না।সামথিং ইজ ফিশি।
খাবার খেতে খেতে জুরাইন কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
—কিরে জুরু?খাচ্ছিস না যে। কোনো সমস্যা নাকি?
হঠাৎ জান্নাত এর কথায় জুরাইন কিছুটা আ’তকে উঠে।জান্নাত তাকিয়ে আছে ভাইয়ের মুখের দিকে।কি এমন বিষয় নিয়ে এতটাই চিন্তায় মগ্ন ছিলো যে জান্নাতের কথায় আতকে উঠলো। এই ছোট্ট ভাইয়ের এত কিসের চিন্তা ভাবনা?
জুরাইন চারদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে নিলো। মা কিংবা বাবা আশেপাশে আছে কিনা?বাবা মাকে ধারেকাছে না দেখে একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে জান্নাতের আরেকটু পাশ ঘেঁষে বসে।কেউ যাতে না শুনে তাই অতি সন্তর্পণে জান্নাত কে সুধায়,
—আপু প্রেমে পড়লে কি খাওয়ার রুচি চলে যায়?
জুরাইন এর মুখ থেকে আচমকা প্রেমের কথা শুনে জান্নাত তব্দা খেয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তার দশ বছরের ভাই কিনা প্রশ্ন করছে প্রেম নিয়ে?প্রেমে ট্রেমে পড়লো নাকি আবার?
জান্নাত অতিশয় নিজেকে ধাতস্থ করে জুরাইন কে বলে,
—কেন সে সব জেনে তোর কি কাজ?আর এই সব প্রেম ট্রেম এর কথা তোর মুখে কেন?এই বয়সে প্রেমের বুলি ফুটেছে মুখে।
জুরাইন ও নাছোড়বান্দা। সে আজ জেনেই ছাড়বে তার প্রশ্নের উত্তর। তাই বোনের কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার বলে,
—এই আপু আরেকটা প্রশ্ন শুননা?প্রেমে পড়লে কি পেটের ভিতরে গুড়গুড় করে?
জুরাইন এর মুখ থেকে প্রেম ভিত্তিক রসায়ন এর কথা যত শুনছে তত জান্নাতে অষ্টম আশ্চর্য এ পৌছে গেছে।তার ভাই আবার এই বয়সে প্রেমে পড়লো না তো?
প্রশ্ন টা জুরাইন কেই ছু’ড়ে দিলো,
—জুরু বাই এনি সান্স, তুই আবার প্রেমে পড়িস নি তো?
জান্নাতের কথায় জুরাইন ব্লাশিং করতে করতে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো। যাওয়ার আগে পিছন ফিরে জান্নাত কে বলে গেলো,
—এইসব তুই বুঝবি না আপু।এসব বুঝার বয়স তোর এখনো হয় নাই।
বলেই জুরাইন এক ছুটে নিজের ঘরের দিকে চলে গেছে।আর রেখে গেছে জান্নাতের মাথায় ঘুরতে থাকা এক ঝাক প্রশ্ন। জান্নাত এখনো ভেবে পাচ্ছে না সে বড় নাকি জুরাইন বড়?জুরাইন কিনা তাকে বলে,প্রেমের বিষয়ে বুঝার বয়স এখনো হয় নাই?অথচ জুরাইন এর দশ বছর বয়স-ই এসব বুঝার বয়স?
জান্নাত কে ভ্যাবলা এর মতো বসে থাকতে দেখে রাহেলা এগিয়ে এসে জান্নাতের কাঁধে হাত রেখে বলে,
—কিরে এভাবে বসে আছিস কেন?খাচ্ছিস না যে?কি ভাবছিস এতো?
মায়ের কথায় জান্নাত সম্বিৎ ফিরে আসে।রাহেলার মুখের দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে বলে,
—আম্মু!আমি বড় নাকি জুরাইন বড়?
জান্নাতের মুখ থেকে এমন আবা’ল মার্কা কথা শুনে রাহেলা চটে গেলো। এই মেয়ে পা’গল টা’গল হলো নাকি?ও কি ভাবে জুরাইন এর ছোট হবে?রাহেলা তেজি গলায় জান্নাত কে স্বগতোক্তি করে,
—তোর মাথা ঠিক আছে?জুরাইন তোর বড় হতে যাবে কেন?
—না কিছু না।
বলেই জান্নাত উপরে চলে গেলো। আর পিছনে রাহেলা ছেলে মেয়ে দুটো কে বকছে।আজকাল দুইটা সন্তানের কথা কাজ উনার পছন্দ না।
🌸🌸
সময়ের কাঁ’টা সেকেন্ড মিনিটের ঘর ফেরিয়ে ঘন্টার ঘর ও অতিক্রম করছে। সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। প্রান্তিক এসেছে জুরাইন কে পড়াতে।ড্রয়িংরুম এ জান্নাত বসে আছে।প্রান্তিক কে উপরে যেতে দেখেই জান্নাত উঠে দাঁড়ায় প্রান্তিক এর সামনে গিয়ে বলে,
—আসসালামু আলাইকুম মিষ্টার ভুক্তভোগী টিউটর। কেমন আছেন?
জান্নাতের মুখে ভুক্তভোগী টিউটর কথাটা শুনে প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
—ভুক্তভোগী টিউটর মানে?
—ওই যে আপনি বললেন না?আপনি আমার ইভটিজিং এর ভুক্তভোগী।আর জুরাইন এর টিউটর আপনি।তাই সব মিলিয়ে আপনার নাম ভুক্তভোগী টিউটর।
—একদম আজে বাজে নামে ডাকবেন না আমায়।আমার নাম প্রান্তিক। শাহরিয়ার প্রান্তিক।
—সে আপনার নাম প্রান্তিক হোক বা কার্তিক হোক।তাতে আমার কি?আমি তো আপনাকে ভুক্তভোগী টিউটর বলেই ডাকবো। আমার বাবার কাছে এসে আমার নামে নালিশ করা না?
—নালিশ দিয়েছি.বেশ করেছি।পথেঘাটে ছেলেদের ইভটিজিং করে আবার কথা বলছে।ইভটিজার কোথাকার।
—ভালো হবে না কিন্তু ভুক্তভোগী টিউটর। একদম আজে বাজে কথা বলবেন না।আমি ইভটিজিং করিনি।আমি গান গেয়েছি।আরেকবার গানটা শুনাই?
বলেই জান্নাত হাসতে হাসতে গাওয়া শুরু করবে তার আগেই প্রান্তিক দ্রুত কদমে জুরাইন এর ঘরে চলে যায়।দুই ভাই বোন কোন দিন তাকে পা’গল বানিয়ে পাবনার পা’গলা গারদে পাঠায় সেই চিন্তায় প্রান্তিক এর ঘুম চলে আসে চোখে।
🌸🌸
প্রান্তিক জুরাইন এর ঘরে এসে দেখে জুরাইন পড়ার টেবিলের মন ম’রা হয়ে বসে আছে।প্রান্তিক ভাবছে আজ আবার হলো কি?ছ্যাকা খেয়েছে নাকি?
প্রান্তিক গিয়ে চেয়ারে বসে।জুরাইন প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে আবার আগের ন্যায় মুখ চুপসে বসে থাকে।প্রান্তিক জুরাইন কে বলে,
—কি হয়েছে জুরাইন? কোনো কারণে মন খারাপ.?
প্রান্তিক এর প্রশ্নে জুরাইন একটু নড়েচড়ে বসে।প্রান্তিক এর দিকে প্রশ্ন তাক করে বলে,
—আচ্ছা ভাইয়া? প্রেমে পড়লে কি পড়াশুনায় মন বসে না বা থাকে না?
জুরাইন এর থেকে এমন কথার আশা প্রান্তিক করেনি।তাই কিছুটা হকচকিয়ে গেলো। বুঝে গেছে তার স্টুডেন্ট বন্ধুদের সঙ্গ দোষে আজেবাজে কথায় আসক্ত হয়ে আজেবাজে চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরছে।একে বুঝাতে হবে ঠান্ডা মাথায়।
প্রান্তিক শান্ত দৃষ্টিতে তে জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—শুনো জুরাইন!এই সব প্রেম সম্পর্কিত সত্যিকার অর্থে তুমি কিছুই জানোনা বা বুঝোনা।আসল কথা হচ্ছে স্কুলে তোমার ফ্রেন্ড দের থেকে তুমি যা শুনো সেই গুলো তুমি মাথায় ক্যাচ করে নিয়ে ভাবতে থাকো সেই সব।তাই তোমার মাথায় আজেবাজে ভাবনা গুলো আসে।আর পাখি হয়তো তোমার সাথে একটু মিষ্টি করে আদর করে কথা বলছে। আর তা দেখে তুমি ভাবছো ও তোমাকে পছন্দ করে এমন করে।তাই তুমি ও ভাবছো তুমি ওর প্রেমে পড়ে গেছো? কিন্তু আসল সত্যি তা না।তুমি বন্ধুদের কথা গুলো বেশি ভাবার কারণেই পাখিকে দেখলে তোমার তা মনে হয়।একটা কথা মাথায় রাখো।তুমি চতুর্থ শ্রেণীতে আর পাখি ষষ্ঠ শ্রেণীতে। তোমার থেকে দুই বছরের বড় পাখি।এসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়াশুনায় মন দাও।আর আগের বন্ধু দের থেকে সরে এসো।খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশলে খারাপ চিন্তা ভাবনায় মাথায় আসবে।তোমার এই ছোট্ট বয়সে এসব কি ভাবে মাথায় আনো?সব কথার শেষ কথা।পাখিকে নিয়ে কিছু ভাবার দরকার নেই।পাখির থেকে যথেষ্ট দূরত্ব নিয়ে থাকবে।বন্ধুদের আজেবাজে কথায় কান দিবে না একদম।
অনেকক্ষণ কথা বলার পর প্রান্তিক থামে।তপ্ত নিশ্বাস ফেলে।জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে দেখে জুরাইন চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রান্তিক প্রাপ্তির হাসি হাসে।আশা রাখে জুরাইন তার কথা বুঝতে পেরেছে।তাই জুরাইন কে স্বগতোক্তি করে,
—আমি কি বলেছি বুঝতে পেরেছো জুরাইন??
প্রান্তিক এর প্রশ্নে জুরাইন নিরবতার ছেদ ঘটিয়ে প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—জি বুঝেছি ভাইয়া।
প্রান্তিক মুচকি হেসে বলে,
—কি বুঝেছো?
— I love him
জুরাইন এর এমন কথায় প্রান্তিক পুরো তাজ্জব বনে গেলো যেনো। এতক্ষণ এই ছেলেকে কি বুঝিয়েছে।আর ও কি বলছে?প্রান্তিক মৃদু চেঁচিয়ে বলে,
—What??
—ইংরেজি বুঝেন না ভাইয়া? মানে আমি পাখিকে ভালোবাসি।
বলেই জুরাইন চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রান্তিক সেই দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়াতে থাকে।এই কোন স্টুডেন্ট এর পাল্লায় পড়লো? শখের বসে টিউটর হয়েছে। এমন স্টুডেন্ট কে পড়াতে আসছে যে অল্প বয়সে সব বুঝে পেকে বসে আছে।
প্রান্তিক মাথাটা উপরের দিকে তুলে হাত দুটা ও উপরে মোনাজাত এর মতো করে বলে
—হে আল্লাহ! এই পেকে যাওয়া পিচ্ছি বাচ্চাকে হেদায়েত দান করো।
বলুন সবাই আমিন..
চলবে ইনশাল্লাহ ✨