প্রেমের মেলা পর্ব-০৪

0
708

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৪ ]
#বর্ষা

নদীর পাড়েই আশিয়ান ইনায়ার কপালে আলতো চুম্বন করে হাঁটু গেড়ে বসে গাড়ি থেকে নিয়ে আসা ক্যামেলিয়া ফুল হাতে বলে উঠে,

”জান আমার আসক্তিতে আমি একান্তই আমার করে পেতে চাই তোমাকে।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই জান!উইল ইউ বি মাই লাইফ?উইল ইউ বি মাই ওয়াইফ?উইল ইউ বি মাই চিলড্রেনস মাদার?উইল ইউ বি মাই সোলমেট?”

ইনায়া পিছিয়ে যায়।আশিয়ান আবারো বলে,

”আমি বলছি না তোমাকে এখনই জবাব দিতে। তুমি সময় নেও।তারপর বলো”

ইনায়া আশিয়ানকে উঠে দাঁড়াতে বলে।তারপর বলে,

”আমি কখনো আমার পরিবারের বাইরে আমার বন্ধুবান্ধব ছাড়া কাউকে ভালোবাসিনি।আমি ভালোবাসার মানে একদমই জানি না।তবে এতটুকু জানি যে ভালোবাসা রং বদলায়।আপনি আমাকে এখন আপনার যতটা ভালোবাসা দেখাচ্ছেন, ঠিক ততটা ভালোবাসা এই দুই’বছর কোথায় ছিলো আপনার?”

আশিয়ান নিজেকে এক্সপ্লেন করতে চায়।তবে ইনায়া কিছুই শুনতে নারাজ।সে চলে যেতে চায়।আশিয়ান আর ইনায়াকে ঘাটায় না।সে তো জানে সে কেমন ছিলো তার প্রিয়তমাকে ছাড়া।ওই সময়টা হয়তো আর ফিরে আসবে না‌।তবে পূর্বের চেয়ে যে ভালোবাসাটা বাড়বে বয়ে কমবে না তা এই দুই বছর পর উপলব্ধি করেছে আশিয়ান।

আশিয়ান ইনায়াকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়েছে।ইনায়াকে বাড়িতে নামিয়ে দিতে চাইলেও সে রাজি হয়নি। পাশাপাশি বাহানা হিসেবে দেখিয়েছিলো ওর গাড়ি ভার্সিটিতে তা নিতে হবে।

গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় আশিয়ানকে বিদায় জানায় ইনায়া।আজকে দিনের শুরুটা খারাপ হলেও শেষটা সুন্দর হয়েছে।কালকে তো নিউ ইয়ার।প্রতিবার কোনো না কোনো প্লান থাকলেও এবার আর নেই।

কয়েকটা রাস্তা ঘুরে তারপর বাড়ি ফিরেছে সে কেননা লক্ষ্য করেছিলো যে আশিয়ানও পিছুপিছু আসছে।যখন দেখলো ওর গাড়ি আর পেছনে নেই তখন রাস্তা বদলে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটলো।

ফ্রেশ হয়ে একটু বসলো। অনলাইন থেকেই কিছু খাবার ওর্ডার করে শুয়ে রইলো।যখন মনে পড়লো যে ইশানকে তো জানানো হয়নি তার বাড়ি ফেরার ঘটনা তৎক্ষণাৎ ফোন করলো।

অন্যদিকে ইনায়াকে খুঁজে ক্লান্ত ইশান বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পর ফাবিহা সারওয়ার বাড়ি পৌঁছান।ছেলের রুমে উঁকি দিলে ইশানকে বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখেন।তবুও এর কারণ জিজ্ঞাসা না করেই ফ্রেশ হতে চলে যান।ইশান মাথা চেপে বসে ছিলো।কি করবে,কোথায় খুঁজবে কিছুই জানে না। ভার্সিটির আশপাশ অনেক জায়গায় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে।কেউ দেখেনি।এখন মাথা কাজ করা একদমই বন্ধ করে দিয়েছে ইশানের।

ফাবিহা সারওয়ার ফ্রেশ হয়ে গম্ভীরভাব বজায় রেখে ইশানের ঘরে প্রবেশ করেন।ইশান মা’কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।সব কাঠিন্য যেন এই রমনীর মাঝেই সীমাবদ্ধ।স্কুল পর্যন্ত ওকে বয়েস স্কুলে পড়িয়েছে।আর কলেজে ওঠার পরপরই রিনি নামক মেয়েটার সাথে বিয়ে ঠিক করে দিলো।ইশানও এক রিনিতেই আসক্ত হতে চাইলো। কেননা সে যে আর কোনো মেয়েকে এর আগে প্রেয়সী বা নিজের করতে চাইনি।

ফাবিহা সারওয়ার ইশানের পাশ থেকে ওর ফোনটা তুলে নিলেন। ইয়ু দিয়ে সেভ করা নাম্বারটা ওকে দেখিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

”ইয়ু নামক এই মেয়েটিই কি সেই মেয়ে যার জন্য তুমি রিনির সাথে মিসবিহেভ করেছো?”

ইশানের রাগ উঠে।চরম পর্যায়ে রাগ ওঠে।কিছু হলেই ওই রিনি নামক মেয়েটা ওর মা’কে জানিয়ে দেয়।বা** জীবন আর ওর রাখতে মন চায় না।এদিকে ইনায়ার চিন্তা অপর দিকে রিনি আর মায়ের প্যারা। ফাবিহা সারওয়ারের হাতে ফোন থাকা অবস্থাতেই ফোনটা বেজে ওঠে।ইনায়ার কল। ফাবিহা সারওয়ার কল রিসিভ করে ওপাশের কোনো কথা না শুনেই যাচ্ছে তাই বলে ঝাড়তে শুরু করেন তিনি।ইশান প্রথমবারের মতো মায়ের সাথে বেয়াদবি করে ফোনটা কেড়ে নেয়।বলে,

”তোকে আমি পরে ফোন দিচ্ছি। অপেক্ষায় থাক”

ফাবিহা সারওয়ার ইশানের গালে চড় লাগান।রেগে বলেন,

”বড় হচ্ছো আর বেয়াদব হচ্ছো।আগে তো এমন ছিলে না।ওই ওই মেয়েটার কারণেই এমন হচ্ছো তাই না!আমি খোঁজ পেয়েছি তো মেয়েটা কতটা উশৃঙ্খল..”

”স্টপ ইট মম।ইনায়া চঞ্চল তবে উশৃঙ্খল নয়।আর কোনো মেয়ে সম্পর্কে এমন বলতে তোমার খারাপ লাগছে না?এমনও তো হতো পারতো সে তোমার মেয়ে!”

”প্রথমত ইনায়া আমার মেয়ে নয় আর দ্বিতীয়ত তুমি ওই মেয়ের থেকে দূরে থাকবে।তোমার ডেড আসবে কাল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো”

ইশান অবাক হয়।ডেড আসছে কাল মানে কি!ইনায়া না বললো ডেড সিঙ্গাপুর ব্যাক করেছে।তবে ইনায়া মিথ্যে বলছে নাকি ওর মম তা ইশান বুঝতে পারলো না।ইশানের মম ইশানের ফোনে কিছু একটা করে ওর হাতে ফোন দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।ইশান ফোন রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

এদিকে ইনায়া তব্দা খেয়ে বসে আছে ফাবিহা সারওয়ারের কথায়।শরীরটা ঘিনঘিন করে উঠে তার।কোনো নারী কি অন্য নারীকে এভাবে বলতে পারে! অসম্ভব।ইনায়ার সন্দেহ হয় আদৌ এই নারী ওর মা তো নাকি ওর সন্ধানে কোনো ত্রুটি ছিলো!

রাত্রিবেলা ঘুমিয়ে শান্তি পায়নি ইনায়া। আতশবাজির শব্দ আর ফানুশের আলোতে চোখ বুজিয়ে আর ঘুমটা ভালো হয়নি। ভোরবেলা ঘুমিয়ে ছিলো তবে রুমানার কলে উঠতে হলো।ম্যাসেঞ্জারে ঢুকেই দেখলো অনেকজন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।সবাইকে রিপ্লাই দেওয়া সম্ভব না বলে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্ট করে দেয়।ফোন দেয় জ্যাক, ক্যালিস,নোয়াকে। কনফারেন্স কল।

”হ্যাপি নিউ ইয়ার গায়েস ”

”হ্যাপি নিউ ইয়ার ইউ ”

পুরনো বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডা দেয় সে। অবশ্য ওরা এখনো ঘুমায়ইনি। সারারাত সেলিব্রিট করেছে নিউ ইয়ারের তবে তা আতশবাজি এবং ফানুশের ব্যবহার না করে। অবশ্য যেখানে এগুলোর ব্যবহার হয়েছে তারাও সতর্কতার সাথেই নিউ ইয়ার উৎযাপন করেছে।

ইনায়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।কালো রঙের থ্রিপিস পড়ে।শখ করেই কিনেছিলো এটা সে। কেননা আজ অব্দি সে কখনোই থ্রিপিস পড়েনি। জাস্ট শখের বশে আজকে সুন্দর করে নিজেকে তৈরি করে সে। গন্তব্য কোথায় তাও জানে না। শুধু গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বে এই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে তার মস্তিষ্কে।

পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়ে বেরতেই তার চক্ষু চড়কগাছ।আশিয়ান আসেনি তবে রুমান নামক ওই ছেলেটা আর এলি এসে দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়ার বেড়ে ওঠা সিঙ্গাপুরে হলেও এত ছোট আকৃতির পোশাক সে আদৌ পড়েনি।ইনায়া ওদের সামনে গিয়ে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে প্রশ্ন করে।

”কাউকে খুঁজছেন নাকি আপনারা?”

এলি সানগ্লাসটা খুলে বিরক্তি প্রকাশ করার লুক দিয়ে বলে,

”তোমার কাছে সাহায্য চেয়েছি?চায়নি তো তাহলে ফুটো ”

এলির কথাবার্তার এমন বেগ থেকে তৎক্ষণাৎ মাথা গরম হয়ে যায় ইনায়ার।রুমান এলিকে বারবার বলছে যে মিস বিহেভ দয়া করে করবেন না ওনার সাথে।তবে এলি তা শুনলে তো!আশিয়ান গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথেই ঝামেলা দেখতে পায়। অবশ্য রুমানকে এখানে দেখেই গাড়ি থামানো কেননা সে ইনায়াকে এখনো অব্দি খেয়াল করেনি।আশিয়ানকে দেখেই এলির নটাংকি শুরু হয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

”বেভ দেখো না এই মেয়েটা আমাকে যা-নয় তাই বলে অপমান করছে!”

আশিয়ান রেগে যায়।এলিকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। রুমানের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই গরগর করে সব সত্যি বলে দেয় সে।বলে দেয় যে এলি ইনায়ার সাথে ঝামেলা ক্রিয়েট করতেই এখানে আসতে চেয়েছে।আর রুমান যদি তাকে না আনে তবে নাকি তার চাকরি খেয়ে দিবে সে কেননা সে তো আশিয়ানের ফিয়োন্সে হয়!ইনায়া ফিয়োন্সে কথাটা শুনে আশিয়ানের দিকে তাকায়।আশিয়ানও ওর দিকে তাকিয়ে।ইনায়া তাচ্ছিল্য হেসে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।আশিয়ান পিছু ডাকে তবে ইনায়া চলে যায়।আশিয়ান এলির সামনে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে,

”আজ তুমি যদি মেয়ে না হতে তোমার নিঃশ্বাস আজ আমি বন্ধ করে দিতাম।তোমার পাপার কাছে আমি ঋণী।সে আমার দুঃসময়ে আমার পাশে ছিলো যা সে আমার ঋণ পরিশোধেই করেছিলো।তাই বলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো এমনটা ভেবো না।আর কখনো যদি শুনি যে তুমি আমাকে তোমার ফিয়োন্সে বলেছো তাহলে সেখানেই তোমাকে শেষ করে দিবো।তোমার পাপাইকে সম্মান করি বলেই বলছি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাও।”

কথাগুলো বলেই গটগট করে চলে যায় আশিয়ান।এলি কাঁদতে থাকে।দুইবছর কি কম সময়!এই দুই বছরে যে সে আশিয়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে।আশিয়ান কেন এটা বোঝে না!তবে আশিয়ানের ভালোবাসা ও কাউকে পেতে দিবে না।ও না পেলে কেউ পাবে না।এমনই মনস্থির করে এলি।রুমানকে কষিয়ে এক চড় লাগিয়ে বলে,

”মিথ্যে বললে কি এমন ক্ষতি হতো তোর?যা গাড়ি বের কর আমি হোটেলে ফিরবো।তারপর তুই জাহান্নামে গেলেও আমার কোনো সমস্যা নেই”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে