#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে (০২)
#নূন_মাহবুব
-” ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি কর্ণপাত হতেই তন্দ্রা কে”টে যাওয়ার সাথে সাথে আপনা আপনি দর্শনেন্দ্রিয় খুলে যায় অজান্তার।অজান্তার গাত্রে এখনো বিয়ের লাল বেনারসী জড়ানো রয়েছে।বিয়ে,বাসর রাত নিয়ে প্রত্যেক টা মেয়ের জীবনে নানা রকম জল্পনা কল্পনা থাকে। স্বামী নামক অপরিচিত ব্যক্তির জন্য মনের গহীনে কতো শতো স্বপ্নের জাল বোনা থাকে। সেরকম টা অজান্তার ও ছিল । অথচ তার বাসর রাতে স্বামীর বিছানায় জায়গা টুকু মেলে নি তার। বেলকনিতে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। হয়তো তার ললাটে এমন টাই লেখা ছিল। সারারাত গরম আর মশার কামড়ে একটু ও ঘুম হয় নি অজান্তার।রাতে গহনাগুলো খুলে মেঝেতে রেখেছিল , সেগুলো মেঝে থেকে তুলে অঙ্কনের ড্রেসিং টেবিলের উপর খুব সতর্কতার সাথে রেখে অজান্তা পা টিপে টিপে ওয়াশরুমে চলে গেল।অজান্তা নামাজ পড়ার জন্য ওযু করে এসে দেখে কোথাও জায়নামাজ নেই। পরক্ষণেই অজান্তার চোখে পড়ে রাতে উঠিয়ে রাখা বেডশিটের ওপর। জায়নামাজ না পেয়ে অজান্তা বেডশিট বিছিয়ে ফজরের সালাত আদায় করে নেয় ।অজান্তা নামাজ শেষ অগোছালো রুম টা পরিষ্কার করছে এমন সময় দরজার বাইরে থেকে আঞ্জুম আরা চৌধুরীর গলা শুনতে পায়।দরজার অপর প্রান্ত থেকে আঞ্জুম আরা চৌধুরী বলছেন,
-” সরি দাদুভাই। আমি তোমাদের প্রাইভেসির জন্য বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়েছিলাম।যাতে তোমাদের বাসর রাত আরো মধুময় হয়ে ওঠে। দুজন দুজনের মনের গহীনে পৌঁছে যেতে পারো।আই থিংক এতে তোমাদের উপকার হয়েছে।দরজার লক খুলে দেওয়া হয়েছে।ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে এসো।সবাই অপেক্ষা করছে নবদম্পতির জন্য।”
-” দরজা খোলা পেয়ে অজান্তা নিজের রুমে চলে আসে চেন্জ করার জন্য । অজান্তা একটা চুড়িদার নিয়ে ওয়াশরুমে যাবে এমন সময় নাতাশা চৌধুরী এসে বললো
-” অজান্তা! তুই এই রুমে কেন? তুই জানিস না বিয়ে হবার সাথে সাথে বরের ঘর নিজের ঘর হয়ে যায়। গতকাল থেকে বাবুর রুম তোর ও রুম হয়ে গেছে। এখন থেকে তুই বাবুর রুমে থাকবি।আমি বাবুর রুমে গিয়ে দেখি বাবু ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু কোথাও তোকে না পেয়ে আমার এইখানে আসতে হলো।”
-” আসলে বড়মা আমি অঙ্কন ভাইয়ের রুমেই ছিলাম। কিন্তু আমার কাপড় চোপড় সব কিছু এই রুমে রয়েছে।তাই চেন্জ করার জন্য এসেছি। তুমি নিচে যাও আমি এক্ষুনি শাড়ি চেন্জ করে চুড়িদার পরিধান করে আসছি।”
-” তোকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে অজান্তা। আমি তোর জন্য শাড়ি নিয়ে এসেছি।এখন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে এই শাড়ি আর গতকাল তোর বড়বাবা যে গহনাগুলো তোকে দিয়েছে সেগুলো পরে নিচে আয়।”
-” ঠিক আছে বড়মা।তবে তোমার অসুস্থ্য শরীর তুমি আবার কিচেনে যেও না কিন্তু।আমি চেন্জ করে এসে সবার জন্য নাস্তা রেডি করছি। তাছাড়া বেলি তো আছেই ও আমাকে হাতেহাতে সাহায্য করবে। তুমি একদম আগুনের কাছে যাবে না বড়মা।”
-“নাতাশা চৌধুরী অজান্তাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বললো, পাগলি মেয়ে টা কতো ভাবে আমার জন্য। এজন্যই আমি আর ইমতিয়াজ তোকে সারাজীবন আমাদের সংসারে রাখার লোভ সামলাতে পারি নি।এখন যা তো ঝটপট রেডি হয়ে নিচে আয়।”
-“নাতাশা চৌধুরী বেড়িয়ে গেলে অজান্তা তার দেওয়া প্যাকেট খুলে দেখে একটা কালো আর ব্লু কালারের জামদানি দুইটা শাড়ি রয়েছে। তার সাথে প্রয়োজনীয় সব কিছু।অজান্তা আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যাবে এমন সময় মনে পড়ে বড়মা তো গহনা নিতে বলেছিলো। কিন্তু আমি তো ভুলক্রমে গহনাগুলো অঙ্কন ভাইয়ার রুমে রেখে এসেছি। এখন তার রুমে গেলে যদি আবার রাতের মতো বকাঝকা করে। যদি বন্দুক নিয়ে তেড়ে এসে তার বিখ্যাত ডায়ালগ দিয়ে বলে,অজান্তা! তুই আবার আমার রুমে এসেছিস কেন? এক্ষুনি বের হয়ে যা আমার রুম থেকে।অন্যথায় একদম গু’লি করে তোর মাথার খু’লি উড়িয়ে দিবো। তখন কি জবাব দিবো আমি? পরক্ষণেই মনে হলো এই টাইমে অঙ্কন ভাই জগিং করতে বের হয়। নিশ্চয় আজ ও তার ব্যতিক্রম হয় নি।আমি নিশ্চিন্তে গিয়ে আমার গহনাগুলো নিয়ে আসতে পারবো।এক বুক আশার সঞ্চার করে অজান্তা অঙ্কনের রুমের দিকে পা বাড়ালো।”
___________________________________
-” ফোন ভাইব্রেটের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল অঙ্কনের। অঙ্কন তড়িঘড়ি করে উঠে ফোনের দিকে চোখ পড়তেই বললো, ওহ্ শিট! আমার জগিং এর সময় পার হয়ে যাচ্ছে আর আমি ঠিকই পাই নি।সব হয়েছে ঐ ড্রামাবাজ মেয়েটার জন্য।ওর জন্যেই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়েছে।যার কারণে আজ আমার জগিং মিস হয়ে গেল। অঙ্কন অজান্তাকে হাজার টা বকা দিতে দিতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে প্রবেশ করতেই শ্যাম্পু বা সাবান জাতীয় কিছুর উপর স্লিপ হয়ে ঠাস করে মেঝেতে পড়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ অনেক টা ভিজে যাওয়ার সাথে সাথে কোমরে ও বেশ চোট পায়। বিরক্তিতে অঙ্কন মুখ থেকে চ জাতীয় শব্দ বের করে বললো ,আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার ওয়াশরুমে কেউ এসেছিল। কিন্তু কে হতে পারে? আমার অনুমতি ব্যতীত কারো সাহস হবে না আমার রুমে প্রবেশ করার। ও মাই গড! তার মানে ঐ ড্রামাবাজ , নোংরা মেয়েটা আমার ওয়াশরুমে ও চলে এসেছে?তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি অজান্তা।এর জন্য তোর কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।আই উইল টিচ ইউ এ গুড লেসন ।মাইন্ড ইট । একে তো তোর জন্য আজকে জগিং করতে যেতে পারি নি।এখন আবার কোমরে ব্যথা পেতে হলো। আবার ভিজে ও গিয়েছি।এখন তো শাওয়ার না নিয়ে বের ও হতে পারব না। কিন্তু টাওয়াল তো আনি নি। অঙ্কন টাওয়াল নিতে আসবে এমন সময় রুম থেকে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেল। অঙ্কন ভাবছে নিশ্চয় সুইটহার্ট এসেছে।সে ওয়াশরুম থেকেই হাঁক ছেড়ে বললো, সুইটহার্ট মাই ডার্লিং আমার টাওয়াল টা একটু দিয়ে যাও তো।”
_
-“অজান্তা ভাবছিলো অঙ্কন ভাই নিশ্চয় রুমে থাকবে না।এই আশায় তার গহনাগুলো নেওয়ার উদ্দেশ্যে অঙ্কনের রুমে এসে হাজির হয়েছিলো। কিন্তু ওয়াশরুম থেকে তীব্র আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে তার ধারণা ভুল।সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়” এই প্রবাদ টার মানে। অজান্তা তড়িঘড়ি করে গহনাগুলো নিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে তার আগে আবারো শুনতে পায়,
-“সুইটহার্ট কোথায় গেলে তুমি?দাও না আমার টাওয়াল টা। আমার কিন্তু শুধু মাত্র একটা হাফ প্যান্ট পরা। তুমি কি চাচ্ছো আমি হাফ প্যান্ট পরে তোমার সামনে আসি? তুমি টাওয়াল না দিলে আমি সত্যি সত্যি এই অবস্থায় তোমার সামনে চলে আসবো।”
-“অজান্তা এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো, দূর কি মুসিবতে পড়ে গেলাম। এখন কি করবো আমি? আমার কি তাকে সাহায্য করা উচিত? তাছাড়া অঙ্কন ভাই মনে করছে রুমে তার সুইটহার্ট এসেছে,তাই আমি যদি টাওয়াল দিয়ে আসি তাহলে সে ভাববে সুইটহার্ট ই দিয়েছে।অজান্তা আকাশ কুসুম চিন্তা করে টাওয়াল নিয়ে দরজায় নক করলে অঙ্কনের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসে। অঙ্কন মুচকি হেসে বলে সকাল সকাল সুইটহার্টের প্রেমের বৈঠা খুলে দিয়ে তাকে প্রেমের অতল সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে কেমন হবে ব্যাপার টা?নিশ্চয় খুব বকা দিবে আমাকে? আমার কান মলে দিবে।দিক না! আমি ও তো এমনটাই চাই।আমি আবার ও সুইটহার্টের আগের মতো শাসন,আদর , ভালোবাসা পেতে চাই।বড্ড মিস করি শাসনগুলো।সেই আদর ভালোবাসা শাসন পেতে আমাকে যদি এতো টুকু দুষ্টুমি করতে হয়,করবো আমি।”
-” অজান্তা ভেতর থেকে অঙ্কনের কোন রেসপন্স না পেয়ে আবারো দরজায় নক করার সাথে সাথেই অঙ্কন হ্যাঁচকা টানে তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতেই দুজনে ব্যালেন্স হারিয়ে শাওয়ারের নিচে পড়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।।