প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৮(শেষ পর্ব)
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সেদিন ছিল সোমবার,খুশির দিন ও বলা যেতে পারে আবার কষ্টের দিন ও বলা যায়
কারণ যেদিন একসাথে সুখবর এবং খারাপ খবর দুটোই এসেছিলো আমার জীবনে
আমি আসলেই ভাবতে পারিনি আমি সে সময়টায় গর্ভবতী ছিলাম,শুরু থেকেই ডাক্তার বলে এসেছিলো আমার বাচ্চা এবনরমাল হবে,প্রতিবন্ধী টাইপ হবে কিংবা অটিস্টিক ও হতে পারে
কারণ আমি ঝিনাইদহে শান্তর সাথে মজা করতে গিয়ে পা পিছলিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম,পড়ে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে আমি জ্ঞান হারিয়েও ফেললাম তারপর যখন চোখ খুললাম আশেপাশে শান্ত আর নানু, মামিকে দেখতে পেলাম,নানু আমার দিকে চেয়ে ইচ্ছে করে হাসার চেষ্টা করলেন,কারণ ততক্ষণে ডাক্তার বলে দিয়েছে তাদের যে আমি প্রেগন্যান্ট আর শান্ত খুশি হওয়ার পরিবর্তে মুখটা কালো করে রেখেছে কারণ ডাক্তার সাথে এটাও বলেছেন আঘাতটা পেটে পড়ায় বাচ্চা হয় মরবে নাহয় এবনরমাল হয়ে জন্মাবে
এবরশান করানো যাওয়া যেতো কিন্ত এবরশান করালে পরে বাচ্চা হতে নানান সমস্যা হয়
এই ভেবে ভুলটা আর করলাম না
আমি সেদিন থেকে ধরেই নিয়েছিলাম আমার সন্তান আর ৫টা মানুষের মতো হবে না,আমি নিজেকে শুরু থেকেই তৈরি করতে থাকলাম
কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না??”যেটা ভাবি সেটা হয় না,যেটা ভাবিনা সেটা হয়”
অবশ্য আরেকটা কথাও আছে,নেগেটিভ ভাবলে পজিটিভ হয়
আমার ক্ষেত্রেও তাই,আমাকে আল্লাহ উপহার স্বরুপ একজন প্রতিভাবান সন্তানের জননী বানালেন,যে কিনা ক্লাস ৫এ পড়াকালীন ক্লাস ৭এর পড়া বুঝে,আমি আসলেই ভাগ্যবতী
♣
মিসেস আহানা তা আপনি প্রেগনেন্সিতে কি কি খেয়েছিলেন যদি একটু বলতেন?
.
হাহা,সেটা কোনে ফ্যাক্ট না,আপনার ভাগ্যের উপর নির্ভর করে,অবশ্য আমার যদি প্রতিভাবান সন্তান না হয়ে প্রতিবন্ধী ও হতো আমার কিছু যায় আসতো না,কারণ আর যাই হোক সে তো আমারই সন্তান তাই না?
.
Attention everyone! এবার মঞ্চে নাচ করতে আসবে হুমাইরা হক,হাত তালি!!
.
যে নাচ করতে আসবে সে বুঝি আপনার মেয়ে?
.
না!আমার মেয়ে তো যে উপস্থাপনা করছে সে
নাম তার”শান্ত্বনা শাহরিয়ার”
.
কিহ?এই বয়সে এত ভালো ইংরেজি বলতে পারে?আমি তো শুরু থেকে এর কথা বলার দিকে খেয়াল রাখছিলাম,মাই গড এটা আপনার বেবি?তা আপনার বাবুর বাবা কই?তাকে তো দেখছি না!
.
সে অফিসের কাজে ব্যস্ত বলে আসতে পারেনি আজ
.
শান্ত্বনা কিছুতে পার্টিসিপেট করেনি?
.
করেছে তো,সে গান গাইবে,তার বাবার মতো তার গলার আওয়াজ ভালো
.
আচ্ছা
.
হুমাইরার নাচ দেখলেন, আপনাদের এবার পারফরমেন্স দেখাবো আমি নিজে
আমার বাবার পছন্দের গানটা আমি আমার মত বানিয়েছি😎আজ সেটা গাইবো,হাত তালি!!!
.
আহানা হেসে দিয়ে হাত তালি দিলো,তবে তার মেয়ে যে কি গান গাইবে তা তার অজানা,বাসায় তো বলেছিলো সে একটা চেনাপরিচিত গান গাইবে তার মতো করে
♣
চাইনা ছেলে তুমি অন্য কারো হও
পাবে না কেউ তোমাকে তুমি কারও নও
চাইনা ছেলে তুমি অন্য কারও হও,পাবে না কেউ তেমাকে তুমি কারও নও
আমারও নও
ওও!হোহোহোহো
.
আহানা চোখ ইয়া বড় করে শান্ত্বনার গান শুনছে,তারপর জিভে কামড় দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না আমি,পুরো বাপের কার্বন কপি হয়েছে একটা
.
আহানা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে স্টেজে এসে শান্ত্বনার
কান ধরে নামিয়ে নিয়ে গেলো স্কুলের গেটের দিকে
.
তোকে এসব শিখিয়েছিলাম?এই তোর প্রতিভা?মিসেস রানুর সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা করে দিলি
আজ থেকে ৫দিন তোর চাউমিন খাওয়া বন্ধ
.
না মা এত বড় শাস্তি দিও না
.
তোর বাবাকে কল করে জানাচ্ছি আমি,প্রতিভা না ছাই,এত এত প্রশংসা করতেছিলাম মেয়েটার আর সে এটা কি করলো!স্কুলে কেউ এসব গান গায়?
.
হুমাইরা যে পাগলু ডান্স –ডান্স—ডান্স গানে নাচলো তখন ওর আম্মু তো ওরে কিছু বললো না,আবার শশী যে পরান যায় জলিয়া রে গানের সাথে অভিনয় করলো তাও তো ওর মা ওকে বকলো না,তাহলে আমি কি দোষ করলাম?
.
তাই বলে এমন গান?চাই না ছেলে তুমি অন্য কারো হও?আজ তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে
.
শান্ত্বনা দৌড় দিয়েছে আহানার ভয়ে
তারপর এক দৌড় স্কুলের বাইরে চলে আসলো সে,একটা খয়েরী রঙের কার এসে থেমেছে তার সামনে,শান্ত্বনা দেরি না করে পটাপট উঠে গেলো সেটাতে
.
বাবা হারি আপ,মা আজ আমাকে মেরে ভূত বানিয়ে দেবে তা না হলে
.
কি হয়েছে বলো,নাহলে এখন না বলে তোমাকে নিয়ে পালালে আমাকেও তোমার সাথে মেরে ভূত বানিয়ে দেবে
.
ঐ যে আমি গান লিখেছিলাম,চাই না ছেলে তুমি অন্য কারও হও সেটা গেয়েছিলাম স্টেজে আজ
.
ইস!তোমাকে কে বলেছিলে গানটা ওখানে গাইতে,আমি তো তোমাকে শিখিয়েছিলাম বন্ধুদের মাঝে গাওয়ার জন্য
.
আহানা শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজে এগিয়ে এসে কারের কাছে দাঁড়িয়ে বললো”বের হ কার থেকে,আবার পালানো হচ্ছে?”
.
মিসেস আহানা!!!ওয়েট আ মিনিট
.
আহানা কারোর ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকালো,শান্ত্বনাদের স্কুলের হেড টিচার হাতে একটা ট্রপি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে আসতেছেন এদিকে
.
কি হয়েছে ম্যাম?
.
আপনার মেয়ে এই ট্রপিটা জিতেছে,সেটা না নিয়েই চলে যাচ্ছিলেন আপনারা
.
কিসের জন্য জিতেছে এটা?ও তো কিছুতে,আই মিন ঐ গানটার জন্য পেয়েছে?
.
ইয়েস!ওর গানের লিরিক্স কেমন ছিল সেটা আমরা কাউন্ট করি নাই,আমরা জাস্ট দেখেছি ওর গানের গলা কেমন,জাস্ট ওসাম গেয়েছে আর তাই বরাবরের মতো সে বিজয়ী
.
ইয়াহু!!দেখলে বাবা আমি জিতলাম
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে ট্রপি হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”তোমরা এখানে থাকো,আমি আমার সব বান্ধুবীদের দেখিয়ে আসি,আমার মেয়ে ফালতু একটা গান আই মিন ইউনিক গান গেয়ে এওয়ার্ড পেয়েছে
.
হ্যাঁ যাও যাও
.
শান্ত্বনা ঠিক হয়ে বসে বললো”বাবা!এখন এফবিতে গিয়ে দেখো,মা এতক্ষণে ২০/৩০টা পোস্ট দিয়ে ফেলেছে আমার ট্রপিটা নিয়ে
.
তোমার মা দুনিয়ায় এক পিসই আছে,কিভাবে এতবছর সামলাতে পেরেছি তা আমি জানি,আর এ কদিনে তুমিও জানো
.
রাইট,পিটি অন ইউ
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”তোরে এত পাকনামি কে শেখায়?”
.
রক্তিম,আর কে শেখাবে!
.
তা সে জিতে নাই কিছুতে?
.
আসলে তো জিতবে
.
আসেনি কেন?
.
স্কুলের এই অনুষ্ঠানটা নাকি বোরিং,আর তাই রক্তিম গেছে ফুটবল ম্যাচ এটেন্ড করতে
.
আর তাই তুমি ওর উপর রেগে আছো?
.
হু
.
ভেরি গুড
♣
এই শুনুন
.
ইস রে বুকে লাগলো!
.
বিয়ের এত বছর পরেও আপনার বুকে লাগে?
.
পাগলি তু নেহি সামজেগা
.
সরেন! বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছে,মায়ের কি খবর,অনেকক্ষণ দেখি না,টেনসন হচ্ছে,চলুন যাই
.
হুম
.
৩জনে মিলে বাসায় ফিরে আসলো,এসে দেখলো মা খালা মিলে শান্তি রহমানের রুমে বসে আছেন কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছেন তারা
.
কি গো,,আমাকে না নিয়েই গল্প শুরু করে দিলে?আমিও শুনি একটু এত হাসির কি কারণ
.
শান্ত্বনা দৌড়ে গেলো নিতুর রুমের দিকে
.
আরে বলিস না,রক্তিম আর শান্ত্বনার কান্ডকলাপ নিয়ে হাসতেছি আমরা
.
কেন মা?কি করলো আবার?আমাকে এটা বলো না যে শান্ত্বনা আবার রক্তিমকে চড় মেরেছে?
.
হুম সেটা নিয়েই হাসতেছি এবার নাকি রক্তিম পাল্টা চড় মেরেছে
.
আচ্ছায়ায়ায়ায়া,তাই তো বলি আমার মেয়ের সকাল থেকে মন খারাপ কেন😂
.
শান্ত আহানাকে এক ধাক্কা মেরে বললো”তোমার মেয়ে একদম তোমার মতো হয়েছে”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে খানিকটা হাসলো তারপর হঠাৎই মাথায় হাত দিয়ে সে নিচে পড়ে গেলো সবার সামনে
শান্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল বলে আহানা পড়ে যাওয়ার সময় ধরতে পারেনি ওকে,নিমিষেই সব হাসি গায়েব সবার মুখ থেকে
শান্ত আহানাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন করলো আসার জন্য
ডাক্তার এসে আহানাকে চেক করে বললেন”বমি করে বেশি?সিক?”
.
হ্যাঁ,কয়েকদিন ধরে শুধু বমি করছে
.
ডাক্তার মুচকি হাসলেন
.
ডাক্তারের মুখে হাসি দেখে শান্ত মাথায় হাত দিয়ে আহানার পাশে বসে পড়লো তারপর ছলছল চোখে চেয়ে বললো”শান্ত্বনার বয়স যখন ৩বছর ঠিক সেসময়টা থেকে আমরা আরেকটা বেবির জন্য ট্রাই করছিলাম বাট সেই সুখবরটা আসছিলো না, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি,এতবছর পর সুখবরটা আসবে এটা একদম ভাবনার বাহিরে ছিল,ভেবেছিলাম আর আসবে না
.
বি কেয়ারফুল,শান্ত্বনার সময় কি হয়েছিলো মনে আছে তো?এবার একটু সাবধানে থাকবেন আপনারা দুজনেই,বেশি বেশি খেয়াল রাখবেন,দেরিতে কনসিভ করা বাচ্চার কেয়ার আলাদা করে নিতে হয়
.
অবশ্যই আমি খেয়াল রাখবো
.
তবে এভাবে হাবভাব দেখে তো বুঝা যায় না আসলেই গর্ভবতী কিনা,আপনারা বরং হসপিটালে এসে একবার টেস্ট করিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ সিউর হয়ে নিন
.
আচ্ছা সেটা করে নিব
.
আহানার হুস ফিরে এসেছিলো একটু আগেই,আহানা কথাগুলো শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লো সাথেসাথে,তারপর পেটে হাত দিয়ে বললো”আল্লাহ এবার যেন একটা আহান্ত আসে আমার কোল জুড়ে”
.
আরেকটা শান্ত্বনা হলেও সমস্যা নাই
.
আরে এই শান্ত্বনাকে সামলাতে গিয়ে আমি শেষ,পুরো আমার মত হয়েছে,ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখতাম “আমার মেয়ে আমার এটিটিউড পেলে আমি শেষ”আর সেই পোস্ট টা যে এত সত্যি হবে আগে জানতাম না
.
এবার ভাবো তোমাকে আমি সামলাচ্ছি কি করে
.
ইহ!সরুন,আমি এখন ফরেস্ট কেক খাব
.
শুনলাম প্রেগনেন্সিতে আচার খায়,বাট তুমি দেখি মিষ্টি খাচ্ছো
.
মিষ্টিও খায়,বুঝছেন?
.
শান্ত মুচকি হেসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চললো
.
এই এই!আমি হেঁটে যেতে পারব তো
.
ডাক্তার বলেছে কোলে কোলে রাখতে
.
তাই না?
.
হুম,
.
আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো
.
কি?
.
শান্ত্বনা রক্তিমকে থাপড়ায় তো রক্তিম পাল্টা ওকে থাপড়ায় কি করা যায় বলুন তো?
.
রিয়াজের ছেলে আমার মেয়েকে চড় মেরেছে তো?ওর একদিন কি আমার যতদিন লাগে আজ
.
আপনার মেয়ে যে এতদিন মেরে এসেছে?নওমি তো একটিবারও বিচার দিতে আসেনি
.
সেটাও তো কথা,আচ্ছা আমি শান্ত্বনাকে বুঝিয়ে বলবো বাট এরপরেও যদি রক্তিম শান্ত্বনাকে মারে তো আমি রিয়াজের কাছে যাব সোজা
.
তখন দেখা যাবে এখন নামান তো,
.
শান্ত আহানাকে নামিয়ে দিয়ে নিতুর রুমের দিকে গেলো নিতু আর শান্ত্বনার সাথে গল্প করতে
♣
আজ এতটা বছর পর আহানা সেই আবারও মন খুলে হাসলো শান্তর সূর্যমুখী বাগানটার দিকে চেয়ে
আর মা হচ্ছিলো না বলে নিজেকে এতদিন সে দোষারোপ করে করে আসছিলো,কারণ তার যে একটা আহান্ত চাই
যাকে সে সারাদিন ধরে দেখবে,দুচোখ ভরে!
যেখানে সে এখনও লজ্জার কারণ সামনা সামনি অনেকক্ষণ ধরে শান্তর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না,লজ্জায় মাথাটা নিচু হয়ে যায় তার
জীবন কোনসময় কিভাবে বদলে যেতে পারে তা আমরা কেউ বলতে পারি না
সেদিন আমি মরতে চেয়েছিলাম,সেদিন যে লোকটা আমাকে বাঁচিয়েছিল আজ সে আমার স্বামী এবং আমার দুটো বাচ্চার বাবা
.
হয়ত তার হাতে ফিরে পাওয়া জীবনটা তার জন্যই লিখা ছিলো
♥♥♥♥♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥♥♥♥
Api ai story tar chaite season 1 besi valo chilo. Ai ta pore khub boring feel hocchilo. R aktu guchiye likhle valo hoto.tar poreo valo likhecho
Apni new kun golpo tii likchen api?
Khub valo hoyeche apu..
ami season 1 r season 2
duitai porechi…
all the best..