প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আমার কি মানে?যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও সোজাসুজি,কথা ঘুরাতে হবে না এতো
.
রতন একদিন জোরাজুরি করতে চেয়েছিলো তো আমি দৌড়াতে গিয়ে পড়ে হাতের এমন অবস্থা হয়েছে
.
কত বছর ধরে জ্বালিয়েছে তোমাকে?
.
অনেক বছর ধরেই
.
এই জন্যই তোমাকে বিয়ে করে বাঁচিয়ে দিয়েছি আমি তুমি তো সেটা বুঝতেই চাও না
.
হুহ!চলুন এখন একটু ওদিকটাই যাই
.
ঘুরবা?এই শরীর নিয়ে?
.
কেন?আমি তো বেশ আছি,জ্বর টর নেই,আই এম ফাইন
.
ফাইন হলেই ফাইন,চলুন তাহলে
.
শান্ত আহানার হাত ধরে হাঁটতেছে
আহানাও চুপচাপ শান্তর দিকে গম্ভীর একটা লুক নিয়ে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটতেছে,দুজনেই নিরব,কারও মুখে কোনো কথা নেই
আহানা এবার মুখ খুললো তাও পনেরো-ষোলো মিনিট পর
সে বললো”আমার হাত ধরা হাঁটা কি জরুরি?”
.
শান্ত হাতটা না ছেড়েই হাঁটতে হাঁটতে বললো”ধরাটা জরুরি নয় তবে অসুস্থ তো তাই ধরতে হয়,না জানি আবার গড়াইয়া গড়াইয়া পাহাড়ের নিচে না পড়ে যায় এই ভেবে”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”আর কোনো কারণ নেই আমার হাত ধরার?”
.
শান্ত থেমে গেলো এবার তারপর মুখটা শক্ত করে বললো”তুমি আসলে কি শুনতে চাও?এটাই তো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি?কথাটা ভুল আহানা!
আমি তোমাকে ভালোবাসি না,পছন্দও করি না
তবে!
তুমি আমার স্ত্রী,লিগালি ওয়াইফ যাকে বলে
তোমার প্রতি করা এসব কেয়ার আমার থেকে প্রাপ্য তোমার অধিকার,এর বাইরে কিছু নয়
আর ভালোবাসাটা এমন জিনিস না যে বিয়ে হলে একসাথে থাকতে থাকতে উতলায়ে পড়লো
ভালোবাসাটা এমন একটা জিনিস আমাদের মধ্যে যেখানে আমি বলতেও পারবো না আদৌ আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা,আর তুমিও বলতে পারবা না বাসো কিনা
মুখে বললেই সেটা ভালোবাসা হয় না
.
আমার আপনার ভালোবাসা চাই ও না,থাকুন আপনি!
.
আহানা হনহনিয়ে উল্টো পথ ধরে ফুফুদের বাসার দিকে চলে গেলো
শান্ত রোবটের মতন ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে আহানার চলে যাওয়া দেখে যাচ্ছে
এই মেয়েরা একটা ক্লিয়ার কথা কেন বুঝতে চায় না?
কেন এত প্যাঁচ বের করে কে জানে!
কোনোকিছু সোজাসুজি নেওয়া যায় না নাকি?নিলে কি ওকে টাকা দিতে হবে আমাকে?
.
আহানার কান্না আসতেছে তাও কোনোরকম নিজেকে সামলিয়ে সে রুমে এসে খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে পড়লো
শান্ত ভাইয়া কি বুঝে না?আমি চাই সে আমাকে ভালোবাসুক
তবে আমি বাসি না,কেন বাসি না জানি না,তবে তার ভালোবাসা আমার দরকার,সে আমার স্বামী আমি তার স্ত্রী
স্ত্রী হিসেবে এটাও তো আমার অধিকার তাই না?
তাহলে সে কেন আমাকে ভালোবাসে না?কি দোষ করেছি?
কোমড়ে হাত দিছে বলে জাস্ট ঝাড়িই তো দিসিলাম, চড় তো আর মারি নাই
তাই বলে জোর করতে পারে না?সব শিখিয় পড়িয়ে নিতে হয়?
এক মিনিট!আমি এসব কি ভাবছি ধুর,আহানা তোর মাথা গেছে,যে ছেলেটা তোর জন্মের শত্রু তুই কিনা তার থেকে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছিস?হোয়াই?
এখন থেকে ভাব নিয়ে থাকবি!ঐ শয়তানটার ভালোবাসা তোর দরকার নেই ওকে?
হুম!লাগবে না লাভটাভ!আমি এরকমই ঠিক আছি
♣
শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে একটা জামরুল গাছে উঠে বসে অফিসের কাজ করতেছে
ওর ফুফাতো বোন সেজোটা মানে রেশমি সে পিক তুলতেছে আহানাকে আর বাকিদের দেখাবে বলে
অফিসের কাজের জন্য মানুষ কি না করে তা শান্তকে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না
শান্ত গাছে উঠেছে কারণ সেখানে একটু নেট আসে
আহানা মুখ গোমড়া করে জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে,রেশমি আর রিমু হাসতে হাসতে এসে আহানাকে ছবিটা দেখালো
আহানা প্রথমে চিনতেই পারলো না এটা যে শান্ত
যখন মুখটা ভালো করে দেখলো তখন তার বিশ্বাস হলো
.
রেশমি আর রিমুর সাথে সেও হেসে ফেললো
রেশমি বললো এটা লাইভ দেখতে হলে আহানা যেন বাড়ির পিছনের জামরুল গাছটার কাছে গিয়ে দেখে আসে
আহানাও এই সুযোগ হাতছাড়া করলো না
সেদিকে ছুটলো,কিছুদূর যেতেই হুডি পরা ছেলেটা মানে শান্তকে দেখলো সে
শান্ত আরামসে গাছে বসে পা গুটিয়ে তার উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করতেছে,সে আহানাকে এখনও দেখেনি
আহানা হাসি থামিয়ে আরেকটু সামনে গিয়ে দেখতে লাগলো ওকে
ওদিকে বিচ্ছুবাহিনী আসতেছে এদিকেই,বিচ্ছুবাহিনী মানে হলো ওরা ফুফুর ছোট জা এর ছেলে ৪টা,একটার বয়স ৪,একটার বয়স ৬ একটার বয়স ৮ আরেকটার বয়স ১০
মেয়ের আশায় ৪টা ছেলে হয়ে গেলো তাদের,এদের জ্বালাপোড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ছোট জা প্রতিজ্ঞা করেছে আর বেবি নিবে না জীবনে
তো ওরা গাছটার নিচে এসে শান্তকে দেখতেছে আহানার সাথে
তারপর আহানাকেও দেখে নিলো একবার
এরপর ৪জনে মিলে গাছটাকে নাড়াতে শুরু করলো,গাছটাতে উঠতেও চাইলো
.
হঠাৎ ভূমিকম্প আসলো কই থেকে?অবশ্য পাহাড়ী অঞ্চলে এমন ভূমিকম্প হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার
বাট গাছের নড়াচড়া তো আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে,এরকম বেশি নড়তেছে কেন
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নিচে তাকালো
আহানা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে আর ওর সামনে ৪টা বাবু,এদেরকে সে চেনে এবং চেনে বলেই তার কিছুটা ভয় লাগলো কারন এদেরকে একসাথ করে সবাই নাম দিয়েছে “বিচ্ছুবাহিনী”
যেখানে যাবে তুলকালাম বাঁধাবে
শান্ত ভাবলো জীবন ঠিক থাকতে গাছ থেকে নেমে যাবে,কিন্তু সেই কষ্ট করতে দিলো না ছেলেগুলো,গাছ এত এত নাড়লো যে শান্ত ল্যাপটপ নিয়ে নিচে পড়লো একদম আহানার গায়ে গিয়ে
এদিকে শান্ত যে আহানার গায়ে গিয়ে পড়েছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ও না করে বিচ্ছু পোলাপান গুলা ল্যাপটপটা হাতিয়ে নিয়ে দৌড় মেরেছে
আহানা চোখ বন্ধ করে হাত দুটো শক্ত করে রেখেছে
শান্ত চুপ করে আহানার বন্ধ চোখগুলোর দিকে চেয়ে আছে
দূর থেকে ফুফুর ছোট দেবর দৌড়ে আসতে আসতে বললেন”মাফ করবা শান্ত,আমার বিচ্ছুবাহিনী বুঝি তোমাদের খুব জ্বালাচ্ছে”
উনার কথা শুনে শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা ও বসে গায়ের থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে বললো”পড়ার সময় লোক দেখেন না নাকি?”
.
শান্ত চুল থেকে জামরুলের পাতা একটা নিয়ে ফেলতে ফেলতে বললো”অন্য কোনো মেয়ের গায়ে পড়লে বুঝি খুশি হতা?”
.
কথাটা শুনে আহানা ব্রু কুঁচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো,আর কিছু বলবে না সে,একদম দূর্বল জায়গায় কথাটা লেগেছে,আরও কিছু বললে আরও দূর্বল কিছু বলে বসবে এই লোকটা
.
সে চলে যেতো নিতেই ওপাশ থেকে শান্ত আরেকটা লাইন বলে ফেললো
আর সেটা হলো”এই যে মাত্র তোমার গায়ে পড়লাম আমার ঠোঁটটা তোমার নাক ছুঁলো,অন্য কোনো মেয়ের নাক ছুঁলে ভালো হতো বুঝি?”
.
আহানা রাগি রাগি চোখে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর চলে গেলো
.
শান্তর তার ল্যাপটপের কথা মাথায় আসতেই এক দৌড় দিলো
দৌড়ে গিয়ে সে বিচ্ছুবাহিনীকে দেখতে পেলো,ওরা ল্যাপটপটা খোলার সব চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু শান্ত ছাড়া তার ল্যাপটপ খোলার সাধ্য কারও নেই
শান্ত এক ধমক দিয়ে ওদের হাত থেকে ল্যাপটপটা ছিনিয়ে নিয়ে চলে আসলো
রুমে এসে আহানাকে পেলো না সে,চিন্তায় আবারও বের হলো রুম থেকে
কোথায় গেলো মেয়েটা??
হেঁটে অনেকটা পথ এসে শান্ত আহানার দেখা পেলো
মহারানী রোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সাজেকের রিসোর্ট গুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে আহানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো”কি?কাউকে না বলে এতটা পথ এসেছো কেন?এখানে যদি রতন বা সাইমন এসে পড়ে তখন কি করবা?”
.
হাসালেন!ওরা এখানে কেন আসবে?রিসোর্ট গুলো দেখলো মন জুড়িয়ে যায় তাই একটু দেখছিলাম এই আর কি!
রুমে আর কতক্ষণ থাকা যায়?
.
ফুফুরা মাছ মাংস কাটে ওসব দেখো তাহলেই হয়
.
আঁশটে গন্ধে বমি আসে বলেই বাইরে হাঁটাহাঁটি করছি
.
এটাতেও সমস্যা ওটাতেও সমস্যা!
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টানতে টানতে ফুফুদের বাসায় নিয়ে আসলো আবার
আহানা কোনো উপায় না পেয়ে ফুফুদের কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসেছে
রান্না শেষ হতে প্রায় ঘণ্টাখানেক লেগেছে,ততক্ষণ আহানা সবার সাথে চুপচাপ বসে ছিলো,ওদের গল্পগুজব শুনছিলো আনমনে
তারপর রুমে আসতেই আহানার চোখ কপালে,তার ব্যাগ নেই,এমনকি শান্তর ব্যাগ ও নেই,চোর টোর এলো নাকি
এই ভয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ফুফুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো “তার ব্যাগ কোথায়”
ফুফু খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন”শান্ত নিয়েছে”
.
নিয়েছে মানে?কোথায় নিয়েছে?
.
শান্তর অফিসের অনেক কাজে বিফল ঘটতেছে বলে ও চাইছে তাড়াতাড়ি চলে যেতে আর তাই আজই সাজেকের একটা রিসোর্টে উঠবে তোমাকে নিয়ে,তোমাকে মেঘ দেখাবে, ঘুরবে তারপর সেখান থেকে চলে যাবে,মনে হয় এখন সে বুকিং দিতেই গেছে
.
আহানা মনে মনে অনেক খুশি হলো তারপর আবার ফেরত গেলো তাদের রুমের দিকে
যেতে যেতে দেখলো শান্ত আসতেছে,আহানা ওর কাছে গিয়ে বললো”বুকিং দিতে পেরেছেন?শুনেছি এখানে নাকি আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হয় তা না হলে ভালো ভিউ পাওয়া রিসোর্ট গুলোয় রুম পাওয়া যায় না
.
ঠিক!আর ওরা আমাকে চিনে ফেলেছে,আর আমি যে তাদের বিরাট বড় একটা স্পন্সার তা তারা বুঝতে পেরে আমাকে আমার পছন্দমত রুম খালি করে দিয়েছে
.
স্পন্সার মানে?আপনি আবার কি প্রোমোট করেছেন?
.
আরে করি নাই বাট করবো,একটা সাজেক ব্লগ বানাবো তাও তাদের রিসোর্ট নিয়ে ব্যাস হয়ে গেলো তাদের প্রোমোট
এই হলো ইউটিউবারদের সুবিধা
.
এহহহহ!
.
জি,তা না হলে তুমি গিয়ে দেখো,এই সিজনে মানুষ ২/৩দিন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে আর সেখানে আমি গিয়ে ১০/২০মিনিটেই পেয়ে গেলাম,সেলিব্রেটি বলে কথা
এখন তাড়াতাড়ি করে লাঞ্চ করে নাও,আমরা গিয়ে হোটেলে উঠবো,ওখানে ব্যাগ রেখে এসেছি আমি
.
আচ্ছা,যাই হোক এটা ভালো করেছেন
.
যা করেছি আমার অফিসের কাজের জন্য করেছি তা ছাড়া আর কিছু না বুঝেছো?
.
আহানা চলে গেলো যেন সে কথাটা শুনেই নাই
.
লাঞ্চ শেষে দুজনে সবাইকে বিদায় জানিয়ে এবার ছুটলো রিসোর্টটার দিকে
তারা যে রিসোর্টে উঠেছে তার নাম ” মেঘ মাচাং”
সাজেকের বাকি রিসোর্ট গুলোর মধ্যে এই রিসোর্টটা নাম করা কারণ এটাতে ভিউ ভালো আসে
আর আহানা মেঘ দেখবে তাই শান্ত ভেবে এই রিসোর্টটাই বুক করেছে
রিসিপশানে এসে শান্ত কিছু ফরমালিটি পূরণ করে আহানাকে নিয়ে রুমে আসলো
আহানা তো অনেজ এক্সাইটেড,দরজা খুলতেই ওর মুখটা নিমিষেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,দুপাশে দুটো সিঙ্গেল বেড
আহানার মুখের ওমন হাল দেখে শান্ত জানালা থেকে পর্দা সরাতে সরাতে বললো”তোমার তো খুশি হওয়ার কথা!রাতে আমার সাথে টাচ লাগলে তোমার ঘুম হয় না,তাই তো আলাদা বেডের রুম নিলাম”তুমি যে বেডে ইচ্ছা সেই বেডে শোও,এবার শান্তি???
.
আহানা মুখটা ছোট করে একটা বেডে এসে বসলো
শান্ত তার ব্যাগ থেকে একটা জ্যাকেট,টিশার্ট আর প্যান্ট নিয়ে বাইরে রাখলো তারপর আহানার দিকে চেয়ে বললো”তৈরি হয়ে নাও,আমরা এখন ঘুরতে যাবো”
.
কোথায়?
.
মেঘপুঞ্জি রিসোর্টটা দেখতে যাব,আর কিছু পাহাড় আছে এখানে ওগুলাও দেখে আসা যাবা,কংলাক পাহাড়টাও
.
ওকে
.
আহানা চুলটা আঁচড়িয়ে নিয়ে বললো”চলুন”
.
শান্ত আর কিছু বললো না,কারণ আহানাকে এমনিতেই ভালো লাগছে নতুন করে সাজার প্রয়োজন নেই তার
.
দুজনেই রিসোর্ট থেকে বের হতেই কোথা থেকে বাইকে করে একটা কাপল এসে থামলো ওদের সামনে
আহানা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে,ওদের মাথায় হেলমেট থাকায় ঠিক চিনতে পারলো না আহানা আর শান্ত
.
মাথা থেকে হেলমেট সরাতেই শান্ত ওকে দেখে হেসে ফেললো তারপর বললো”রিয়াজ??? তুই এখানে?”
.
দেখলি!!ঠিকই তোর দেখা পেয়ে গেলাম,নওমি বললো দেখা পাবো না
.
একদম ভালো হয়েছে,তা বাইক পেলি কই?
.
ভাড়ায় নিয়েছি,কংলাক পাহাড়ে যাব তাই,তোরাও নিয়ে নে
.
ওকে ডান
.
আহানা নওমির দিকে চেয়ে আছে,নওমি একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে,সাথে জিন্স আর আহানা একটা সুতির শাড়ী পরে দাঁড়িয়ে আছে
রিয়াজ আহানাকে জিজ্ঞেস করলো “সে কেমন আছে”
আহানা উত্তরে “ভালো “বললো,ততক্ষণে শান্ত ও বাইক নিয়ে হাজির
আহানার বাইকে চড়ার অভ্যাস নেই তাও শান্তকে কোনোরকম ঝাপটে ধরে বসলো সে
শান্ত হেলমেটটা পরতে পরতে বললো”ভুলেও আমাকে ছাড়বে না,পথ আঁকাবাঁকা,কখন কি হয়ে যায়,শক্ত করে ধরে রাখবা ঠিক আছে?”
.
আচ্ছা
.
সামনে দিয়ে রিয়াজ নওমিকে নিয়ে যাচ্ছে আর পিছন দিয়ে শান্ত আর আহানা
আহানা ভয় পাচ্ছে বলে শান্ত বাইক আস্তে আস্তে চালাচ্ছে,ওদিকে রিয়াজ হাসতেছে শান্তর বাইক চালানোর
স্পীড নিয়ে
শান্ত রেগে আহানাকে বললো মজবুত হয়ে বসতে,এবার রিয়াজকে ছাড়িয়ে যাবে সে
আহানা বাইকের আয়নায় তাকিয়ে শান্তর দিকে মিষ্টি করে চেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে
এভাবে আজ শান্তকে খুব ভালো লাগছে
আহানা যে এতটা মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে সেদিকে তার খবর নেই,সে এখন রিয়াজকে হারাতে ব্যস্ত
আহানা শান্তর পিঠে মাথাটা রেখে পাশে চেয়ে রইলো,চলমান গাছগাছালি সাথে আপন মানুষকে আঁকড়ে ধরে রাখা
আর কি চাই??পাহাড়গুলোও মনে হচ্ছে চলমান
রিয়াজকে হারানো শেষে শান্ত এবার খেয়াল করলো আহানাকে ওকে আবেশে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেন তাদের মাঝে কোনো দেয়াল নেই,ছিলো ও না
শান্ত রীতিমত অবাক,আহানার হয়েছে টা কি??এমন করছে কেন ও??
শান্ত বাইকটা থামিয়ে ফেললো,অথচ আহানা এখনও ওর পিঠে মাথা রেখে দূরের একটি পাহাড়ের দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসতেছে
শান্ত হেলমেটটা খুলে পিঠ ঝাঁকুনি দিতেই আহানার হুস আসলো,থতমত খেয়ে বললো”সরি”
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
তোমার কি হয়েছে একটু বলবা??
.
না কিছুই তো হয়নি,ভুলবশত মাথা রেখেছি তার জন্য সরি
.
তোমার মনের খবর তুমি আর আল্লাহ জানো,আমার জানার সাধ্য নাই
.
রিয়াজ আর নওমি মিলে ছবি তুলতেছে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে
আর আহানা সেখানে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শান্ত তার ইউটিউবের ব্লগ নিয়ে ব্যস্ত
এসব দেখে আহানার এত এত বিরক্তি লাগছে,রিয়াজ আর নওমি কতই না মজা করছে আর আমার স্বামীকে দেখো!বেয়াদব একটা
আমার সাথে একটা ছবিও তো তুলতে পারে!এত সুন্দর ভিউ আসতেছে চারিদিক থেকে,এটাই তো ছবি তুলার মোক্ষম সময়
অথচ উনাকে দেখো!লাগবে না তোর কেয়ার!তোর প্রেম,তোর ভালোবাসা,বাই!
আহানা রাগে গজগজ করতে করতে পাহাড় থেকে নেমে চলে যাচ্ছে
রিয়াজ আর নওমি ওকে চলে যেতে দেখে শান্তকে ডেকে বললো আহানা হুট করে চলে যাচ্ছে কেন
শান্ত ও ব্যাপারটা বুঝলো না,সেও সেদিকে ছুটলো
.
আহানা দাঁড়াও,কোথায় যাচ্ছো?
.
আহানা পিছন ফিরে তাকাচ্ছেও না,কথার উত্তর ও দিচ্ছে না,শুধু হেঁটে চলেছে সে
শান্ত তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে শেষে আহানাকে ধরতে পারলো,হাত ধরে টান দিয়ে আটকিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
আহানার দুচোখ ভর্তি পানি
তার আরেকটা হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে বললো”আমি হোটেলে ফিরে যেতে চাই”
.
শান্ত নির্বাক হয়ে আহানার অশ্রুসিক্ত চোখজোড়ার দিকে চেয়ে আছে,তারপর বললো”কি হয়েছে তোমার?”
.
প্লিস!
.
শান্ত আর কিছু বললো না,আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে বাইকে উঠে বসলো
আহানাও চুপচাপ এসে বসেছে,শান্ত হেলমেট পরতে পরতে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়াজ আর নওমিকে হাত দিয়ে বাই বলে বাইক স্টার্ট করলো
.
হোটেলে এসেই আহানা নিজের বিছানায় দপ করে বসে পড়লো,মুখের হাবভাব নিশ্চুপ এখনও
শান্ত দরজা লাগিয়ে এসে এক দৃষ্টিতে প্রায়ই দেড় মিনিটের মতন চেয়ে রইলো ওর দিকে তারপর কি ভেবে আহানার হাতের কব্জি ধরে ওকে টান দিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলো
.
আহানা চুপ করে আছে এখনও,শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”কি সমস্যা তোমার??জাস্ট ক্লিয়ার করো বলো”
.
আহানা কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো”কিছু হয়নি”
.
শান্ত ওর হাতে চাপ দিয়ে বললো”আমি সত্যিটা শুনতে চাই আহানা”
.
আহানা শান্তকে হুট করেই জড়িয়ে ধরলো,কাঁদতে লাগলো আর কিছু বলতে পারছে না সে
আহানা শান্তকে এভাবে ধরতেই শান্তর বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো
আহানা কষ্ট পেয়েছে??তাই কি সে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে আমাকে?কিন্তু কিসের কষ্ট?
.
আহানা শান্তর জ্যাকেটটা খাঁমছে ধরে শান্তর বুক থেকে মুখটা উঠিয়ে শান্তর দিকে তাকালো তারপর বললো”আমি জানি না আমি কি চাই তবে আমার ভালো লাগে না অন্য কাপলদের দেখলে,কারণ ওদের মতন আমরা নই,কেন নই?”
.
শান্ত আহানার কাঁধ ধরে ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”তার মানে তুমি চাও আমি তোমাকে স্ত্রীর অধিকারটাও দিতাম?”
.
অধিকারটাও???
.
হ্যাঁ টাও!!আমি তোমাকে সেফ করার জন্য বিয়ে করেছি,তোমার মান রাখতে ২য় বার বিয়ে করেছি তোমাকে
তোমাকে সে সকল অধিকার দিয়েছি যেটা তোমার প্রাপ্য,আর রইলো কথা স্বামী স্ত্রীর মাঝের সম্পর্কটার!
.
চাই না!ছেড়ে দিন আমার হাত,আমি কি বলেছি আমি সেটা চাই?মন খারাপ কেন হয়েছিলো সেটা বললাম,আপনি আমাকে আপন করতে চাইলেও আমি দিব না,আপনাকে চেনা হয়ে গেছে আমার
এখন হাত ছাড়ুন
.
শান্ত ওকে আরেকটু কাছে টেনে বললো”চুপচাপ বসে থাকো এখানে”
.
আহানা চোখ মুছে বসে পড়লো বিছানায়
শান্ত দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেছে
আবার ১৫/১০মিনিট পর ফেরত আসলো সে হাতে ২টা ছোট বাঁশ নিয়ে,ভেতরে চা
এসে দেখলো আহানা খাটের এক কোণায় গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে
.
নাও ধরো,এটা খেয়ে শরীর চাঙ্গা করো
.
আহানা হাতে বাঁশটা নিয়ে শান্তর কথা শুনে চোখটা বড় করে চেয়ে রইলো
তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বললো”কেন?চাঙ্গা করে কি হবে?”
.
কিছু হবে না,জাস্ট কান্নাকাটি করছো যে একটু রিফ্রেশমেন্ট ফিল হবে
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চা খাওয়ায় মন দিলো আবার,শান্ত বারান্দায় দাড়িয়ে চুপচাপ চা খাচ্ছে,আহানা চায়ে এক চুমুক দিচ্ছে তো একবার শান্তর দিকে তাকাচ্ছে
শান্ত তার চা শেষ করে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো আহানা ওর দিকেই চেয়ে আছে
শান্ত একটু করে হাসলো,তাও এমন ভাবে যেন আহানা বুঝতেই না পারে
আহানা চোখটা তখনি সরিয়ে আরেকদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার হাত ধরলো আবারও,তারপর ওকে টেনে বারান্দায় নিয়ে আসলো
.
আরে এমন করছেন কেন,কি হয়েছে?
.
শান্ত আহানাকে টেনে এনে বারান্দার একপাশে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে চুপচাপ বাইরের দিকে তাকানোই মনোনিবেশ করলো
আহানা থ মেরে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,এসব কি হচ্ছে সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
শান্তর কোনো উত্তর না পেয়ে আহানা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে বললো”আপনি এমন করলেন কেন??আমাকে হঠাৎ বিছানা থেকে তুলে এনে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখার মানে টা কি সেটাই বুঝতেছি না!
.
শান্ত পাহাড় থেকে চোখ ঘুরিয়ে আহানার দিকে চেয়ে বললো”কেন?তোমার না স্ত্রীর অধিকার দরকার,তো এখন এই মূহুর্তে অন্য কাপলরা যেটা করতো আমি ঠিক সেটাই করতেছি,সিম্পল!”
.
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”তো অন্য কাপলরা এখন বারান্দায় এই রোমান্টিক ওয়েদারে,রোমান্টিক প্লেসে চুমু দিলে আপনিও কি সেটা……!!
.
আহানার কথা আর শেষ হলো না তার আগেই শান্ত আহানার গলা টিপে ধরে ওকে কাছে নিয়ে এসে গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে আবারও ওকে ছেড়ে দিলো
তারপর আবারও সে দূরের পাহাড়টার দিকে চেয়ে রইলো
আহানা গালে হাত দিয়ে ভূত দেখার মতন ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তারপর সোজা হেঁটে রুমে চলে গেলো সে
দপ করে বিছানায় বসে পড়লো,গালে হাত এখনও
শান্ত মনে হয় পাগল হয়ে গেছে,এমন করলো কেন?আমি তো ভাবতেই পারিনি এমনটা করবে
.
শান্ত বারান্দা থেকে ফেরত এসে নিজের বেডে বসতে বসতে বললো”আচ্ছা নিউ কাপলরা এই সময়ে কি করে?আই মিন এখন তো সন্ধ্যা ৬টা বাজে”
.
আহানা কথাটা শুনে গালে হাত দিয়ে ভয়ে বিছানার চাদর টেনে শুয়ে পড়লো
.
শান্ত ফিক করে হেসে দিলো তারপর একটা বালিশ নিয়ে হেলান দিয়ে বসে ফোনে গেমস খেলা শুরু করলো সে
.
আহানা চাদরটা হালকা সরিয়ে উঁকি দিয়ে শান্তকে একবার দেখে নিলো তারপর আবারও মুখটা ঢেকে ফেললো
.
শান্ত ফোন রেখে দিয়ে আহানার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
মেয়েটা মুখ ফুটে বললে আমি তাকে সে সব দিব যা সে চায়!
কিন্তু না,সে বলবে না,কেন বলবে না?সে নিজেও জানে না সে আসলেই কি চায়!
মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ধরে পিটাই,এমন পিটাই যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতন অবস্থা হয় তার
.
আহানা বিপরীত পাশে ফিরে শুয়ে আছে,পরনে কালো রঙের সুতির শাড়ীটা,কিছুক্ষণ আগেই চেঞ্জ করেছে সে
ফর্সা হাত-পিঠটা যেন তুলে ধরে রেখেছে শাড়ীটা
আসলেই পৃথিবীতে কালো না থাকলে ফর্সা কেমন হয় তা বোঝা যেতো না,দুটোরই মূল্য সমান সমান
ব্লাউজটার পিছন সাইতে দুটো ফিতা লাগানো,,তাতে ফুল করে আটকানো আবার,মানে রেডিমেট,এই সুতা টানলেও কি না টানলেও কি,ব্লাউজটা জামার মতন পরতে হয় সুতাটা জাস্ট ডিজাইন করে লাগানো
.
শান্ত গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে,তারপর নিজে নিজে এগিয়ে গেলো আহানার দিকে,চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো
আহানা চাদর সরিয়ে বেডের দিকে তাকালো আবার শান্তকে দেখার জন্য কিন্তু বেড তো খালি,চাদরটা সরিয়ে সে উঠে বসতেই দেখলো শান্ত ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে
কিছুটা ভয় পেয়ে আহানা পিছিয়ে গিয়ে বললো”কি হয়েছে?”
.
কিছু না,অন্য কাপলরা তো একজন আরেকজনকে দেখাদেখি করে তাই আমিও দেখলাম একটু
.
আপনি প্লিস এই অন্য কাপল কি করে না করে সেই ট্যাগ লাইন নিয়ে কথা বলা অফ করেন
.
কেন??তুমি তো বললে অন্য কাপলরা রোমান্স করে আর তুমি আমি করি না বলে তোমার সেটা ভাল্লাগে না যার কারণে কংলাক পাহাড় থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে এসেছো
.
আমার কিছু লাগবে না,যান গিয়ে নিজের বেডে গিয়ে বসেন আমাকে খোঁচা মারা অফ দেন প্লিস
.
ওকে ফাইন,যা তুমি বলবা,বিয়ের পর থেকে তো তোমার কথায় উঠতে বসতেছি
.
আহানা মন খারাপ করে উঠে গিয়ে বারান্দায় নিচে বিছানো তোষকটায় বসে পড়লো,দূরে কিছু দেখা যায় না তবে আকাশে একটা চকচকে চাঁদ দেখতেছি
খুব সুন্দর ভিউ,ঠিক যা যা চেয়েছিলাম সব কিছু পাচ্ছি তবে কিসের যেন শূন্যতা রয়ে যাচ্ছে,কথাটা আহানা শেষ না করতেই পাশেই শান্তর উপস্থিতি টের পেলো
শান্ত তোষকের উপর পা মেলে বসে পড়লো
তারপর একটা গান চালালো ফোনে এরপর ফোনটাও পাশে রেখে দিয়ে আনমনে চাঁদটার দিকে তাকালো
আহানা শান্তর কার্যকলাপ দেখা শেষ করে সেও চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো এবার
শান্ত আহানার গায়ের সাথে লেগে বসতেছে বারবার আহানা সরতে সরতে বারান্দার শেষ প্রান্তে চলে এসেছে
তাই বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বললো”আপনি কি চান আমি পাহাড়ের নিচে পড়ে যাই?”
.
না চাই না,বাট তুমি কেন পড়তে চাচ্ছো সেটাই বুঝলাম না
.
কে বললো আমি পড়তে চাচ্ছি?আপনি তে বারবার গায়ে লাগছেন তাই তো সরতেছি
.
বাহ রে!!তোমার স্বামী আমি
আমি তোমার গায়ে লাগবো না তো কে লাগবে??আর তুমি কেমন স্ত্রী??
গায়ে লাগলাম বলে সরতেসো কেন?চুপ করে বসে থাকলেই পারো
.
আহানা আর কিছু বললো না,দুহাত দিয়ে গা টা ঢেকে বাইরের দিকে চেয়ে রইলো
শান্ত রুমে জ্যাকেট খুলে রেখে এসেছে নাহলে এখন জ্যাকেটটা আহানাকে দিতো গায়ে দেওয়ার জন্য
তারপর কি মনে করে গিয়ে নিজের বিছানার উপর থেকে চাদর এনে সেটা গায়ে মুড়িয়ে আহামার পাশে বসলো
অথচ তার শীত করে না,শীত করতেছে আহানার
আহানা ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে ওর দিকে
শান্ত গানের তালে তালে ঢুলতে ঢুলতে বললো”কেউ চাইলে চাদরটা শেয়ার করতে পারে আমার সাথে ”
.
নো থ্যাংকস
.
তোমার না জ্বর?
.
এত কেয়ার থাকলে পুরো চাদরটাই আমাকে দিয়ে দেন,ঢং না করে,আমি খুব ভালো করে জানি আপনার শীত করছে না
.
আরে আহানা বুঝতেছো না কেন??অন্য কাপলরা চাদর মুড়ি দিয়ে একসাথে বসে থাকে এসময়ে,তাহলে আমরা কেন বাদ যাব??
.
আহানার খুব রাগ হলো এবার,রাগের বশে সে বললো”অন্য কাপলরা হানিমুন সেরে বাড়ি গিয়ে সুখবর শোনায় তাদের ফ্যামিলিকে,তাহলে আমরা কেন বাদ যেতাম?
.
শান্ত মুচকি হাসলো তারপর তার গায়ের থেকে চাদরটা ফেলে ধাওয়া করলো আহানাকে
আহানা পিছোচ্ছে আর সে এগোচ্ছে
আহানা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”আমি আসলে মজা করছিলাম,আপনি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছেন?”
.
শান্ত আহানার একদম কাছে এসে বললো”কাল বাড়ি ফিরে যাব,তাহলে কাল মাকে সুখবর কি করে দিব আমরা? হাউ?”
.
আহানা আরেকটা চড় মেরে দিলো,তবে আস্তে করে,ওরকম ঠাস ঠুস না,জাস্ট গালে হাত লাগিয়ে মুখটা আরেকদিকে ফিরিয়ে দিলো
.
শান্ত মুচকি হেসে মুখটা আবারও আহানার দিকে ফেরালো,মুখ এগিয়ে এনে আহানার গলায় ঘষতেছে সে এখন
খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শে আহানার কাতুকুতু লাগতেছে প্রচণ্ডরকম ভাবে
শান্তকে সরাতে ধাক্কা দিলো সে
তারপর নড়তে নড়তে বললো”প্লিস অন্তত এরকম দুষ্টুমি করবেন না,কাতুকুতু লাগতেছে”
.
শান্ত মুচকি হেসে উঠে চলে গেলো
আহানা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো,গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বড় করে শ্বাস নিচ্ছে সে,শান্তর কি হয়েছে আজকে
কথা মাটিতে পড়ার আগেই একশান নিচ্ছে,সব কিছুতে ভয় করছে আমার
সন্ধাবেলায় গালে চুমু এখন আবার এটা,হইছে টা কি উনার??মন খারাপ করে থাকাও বারণ আমার,সবসময় দাঁত কেলিয়ে থাকা যায় এত??
তার উপর স্পষ্ট করে কারণ না বললেও ঠিক বুঝে নেয়
কি একটা ঝামেলা!
.
শান্ত আহানার বালিশটা নিজের বেডে নিয়ে আসলো,আহানা ৫/৬মিনিট পর বারান্দা থেকে এসে তার বালিশ শান্তর বিছানায় দেখে বললো”এটা কি আবার?”
.
ওমা!নতুন কাপলরা একসাথে ঘুমায়,জানো না?
.
আমার ঘাঁট হয়েছে আপনাকে ওসব বলায়,,প্লিস নতুন কাপল কাপল বলা এসব অফ দেন
.
না অফ দিব না,তোমার একবার একটাতে মন খারাপ হয় আমি শুধু জানতে চাই তুমি ঠিক কিসে হ্যাপি?
কোমড় ধরলে চেঁচাও আবার না ধরলেও চেঁচাও
কেয়ার করলে আড় চোখে তাকাও না করলে কাঁদিয়ে ভাসিয়ে ফেলো
স্ত্রীর অধিকার দিতে চাইলেও দোষ,না দিলে বাপরে বাপ ইজ্জতের ফালুদা করে ফেলো
আমার তো এখন মনে হচ্ছে ইন ফিউচার তুমি বাচ্চার হওয়ার সময়ে বলবা “এটা ঠিক না,আই এম কনফিউজড, আই নিড সাম টাইম”
মানে আমাকে সব দোষ দিতে চাও তুমি আর এটাতেই তুমি হ্যাপি হও,কি চিজ তুমি!আসলেই বুঝি না আমি
এখন মনে হচ্ছে রতন আর সাইমন কেন তোমাকে এখন পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি
ভাই আমি বিয়ে করা বর হওয়ার সত্ত্বেও কিস করতে গিয়া আর হুদাইও মোট মিলাইয়া কতগুলো চড় যে খাইছি
.
ব্যস! এত অভিযোগ যখন জোর করে বিয়ে করেছেন কেন??
চলবে♥
প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৫০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আমি একটা কাগজে লিখে দিব যে আমি ঠিক কি কারণে তোমাকে বিয়ে করেছি তারপর সেটা দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবো
কারণ তোমাকে বিয়ে করার পর থেকে তুমি এই প্রশ্নটা মিনিমাম দেড় শতবার জিজ্ঞেস করেছো এন্ড আই নো তুমি এই প্রশ্ন আরও আরও করবে
.
কথা সেটা না, কথা হলো….
.
চুপ!আর একটা কথাও না,এখানে এসে বসে থাকো,আমি গিয়ে দেখি খাবার কি পাওয়া যায় এখানে তারপর এসে তোমাকে নিয়ে যাব
♣
এই লোকটা আমার কোনো কথা কখনও বুঝার চেষ্টা করে না,নিজের কথাই কথা হয়ে গেলো
.
শান্ত প্রায়ই ১০/১৫মিনিট পর আবার ফেরত এসে বললো”বাম্বো চিকেন খাবে ডিনারে,আহানা যেন তৈরি হয়ে নেয়,রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবে তারা”
.
আহানাও এক পায়ে খাড়া!! লাফ দিয়ে উঠে বললো “চলুন”
.
শুনো!রেডি হয়ে নেওয়া মানে এই না যে যেই জায়গায় বসা থাকে ঐ জায়গা থেকে উঠে বললা “চলুন”,রেডি হওয়া মানে চুল ঠিক করে,পোশাক আশাক ঠিক করে নেওয়া,বুঝছো??
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো একবার,বনমোরগের মতন লাগতেছে তোমাকে
.
আহানা কপাল কুচঁকে চুলগুলো টেনেটুনে খোঁপা করে নিয়ে শাড়ীটাও টেনে ঠিক করে নিলো তারপর বললো”এবার তো চলুন”
.
কি ব্যাপার বলো তো?তোমার এত তাড়া কিসের?
.
তাড়া কিসের সেটা কোন মুখে জিজ্ঞেস করছেন আপনি?আমাকে যে বিকালে নাস্তায় শুধু চা খাওয়াইছেন সেদিকে খেয়াল আছে আপনার?কিপটা জামাই একটা!
এত টাকা কি করবেন যদি আপনজনই খিধায় মরে যায় যায় অবস্থা হয়
.
তুমি যে খাদক একদিনে”শান্তি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির “সব টাকায় খাবার কিনে সেটা খেয়ে সাবাড় করে দিতে পারবা
.
খোঁটা দিচ্ছেন??আমি যাবো না,ডিনার ও করবো না
.
কথাটা বলে আহানা গায়ে কাঁথা টান দিয়ে লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো
.
আরে আরে!এরকম রাগ দেখাও কেন?আমার খিধা লেগেছে,চলো এখন,রাগ-টাগ বাদ দাও,ওসব পরে হবে,উঠো বলছি
.
যাব না আমি,আপনার টাকায় আপনি খাবার কিনে খান
.
দেখো মেজাজ খারাপ করবা না,তা নাহলে কোলে তুলে নিব কিন্তু!
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে চুপ করে আছে কাঁথা মুড়ি দিয়ে
শান্ত যখন দেখলো তার হুমকিতেও আহানা তার কথার নড়চড় হয়নি তখন সে নিচু হয়ে আহানাকে বিছানা থেকে তুলে নিলো
তারপর হেসে বলতে যাবে যে”দেখলা তো কথা শুনো নাই এখন কোলে নিয়েছি”
কিন্তু সেটা সে বলতে পারলো না কারন আহানা তো মহাখুশি তার কোলে উঠে
এমন কি সে মুচকি হেসে শান্তর গলা জড়িয়ে ধরে কোলে উঠাটা সেট ও করে নিলো যেন কত পথ এমতাবস্থায় পাড়ি দিতে হবে
.
শান্ত ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো”তুমি আমার কোলে উঠে হ্যাপি?”
.
ভালোই লাগতেছে,এখন চলুন যাই রেস্টুরেন্টে
.
তুমি আসলে!!!এসব তাহলে নাটক ছিলো!
.
শান্ত উপায় না পেয়ে চুপচাপ আহানাকে নিয়ে হোটেল থেকে নামলো,ম্যানেজার এবং আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে
শান্ত একটা রুমাল দিয়ে মুখটা ঢেকে নিয়েছে নামার সময়
আহানা মুচকি মুচকি হাসতেছে,প্রায় ২মিনিট হয়ে গেছে শান্ত আহানাকে নিয়ে হেঁটেই চলছে
আহানা চুপ করে এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত ওর দিকে একবার তাকায় তো আবার সামনের রোডটার দিকে তাকায়,রোডটা মোটামুটি অন্ধকার তবে আশেপাশের রিসোর্ট গুলো থেকে আলো আসতেছে কিছু
আহানা মুগ্ধ হয়ে শান্তকে অপলক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে,শান্ত হাঁপাচ্ছে এবার,অনেকটা পথই হেঁটেছে সে
আহানা কোনোদিকেই তাকাচ্ছে না,শুধু শান্তকে দেখায় ব্যস্ত সে
.
শান্ত সামনের পথের দিকে চেয়ে বললো”আরেকদিকে তাকাও,এরকম চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেন?আগে কখনও দেখো নাই আমাকে?”
.
দেখি নাই,তবে এ প্রথম এত সময় ধরে কোলে নিয়ে হাঁটতেছেন তো! আই এম ইমপ্রেসড
.
তোমার ইম্প্রেসডের গুষ্টি উদ্ধার করবো আমি,১৪দিনের জিম হয়ে গেছে আমার একদিনেই
এত ওজন বাপরে বাপ!দেখে বোঝা যায় না আসলেই
মনে হয় ৬০/৭০কেজির আলুর বস্তা আরও নরমাল ওজনের হবে
তোমার ওজনের কাছে সেসব ফেল
.
কখনও তুলছেন যেভাবে সিউরিটি নিয়ে বলতেছেন??
.
এক্সকিউজ মি!!
.
না আলুর বস্তা কেন তুলবেন,সেটাই!
.
হুম!গেস করলাম আর কি,বাই দ্যা ওয়ে তোমার ওজন কত?
.
অনলি ৫৩কেজি
.
এই জন্যই আমার ডান হাতের রগটা পিনপিন করতেছে যেকোনো সময় চটাস করে ছিঁড়ে যাবে
.
কেমন স্বামী আপনি?বউকে তুলতে পারেন না
.
তুলতে পারি না?দীর্ঘ ৩মিনিট ধরে হাঁটতেছি কোলে নিয়ে
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও এক কথা ছিলো
বিনা রেস্টে হাঁটতেছি
আমি তোমাকে নামানের পর আমাকে একটা এ্যাওয়ার্ড দিবা,প্রাপ্য আমার
.
রেস্টুরেন্টের সামনে এসে অবশেষে শান্ত আহানাকে নামালো
তারপর বললো”দাও আমাকে কি দিবা,এত কষ্ট করলাম”
কথাটা শান্ত হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললো
.
আহানা পা উঁচু করে শান্তর গালে চুমু দিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে চলো গেলো এক দৌড়ে
শান্ত রীতিমত অবাক,হা করে সে আহানার চলে যাওয়া দেখছে
আহানা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো রেস্টুরেন্টের
শান্ত তার কিছুক্ষণ পর এসে সেও বসেছে,দুজনে দুজনের দিকে তাকাচ্ছে না,এরকম একটা সিচুয়েশনে খাবার ও জলদি এসে গেলো,দুজনে আরেকদিকে ফিরে খাবারটাও শেষ করে ফেললো,তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এবার দুজনে কিছুটা হলেও নরমাল হয়েছে
আহানা রোডের পাশে দাঁড়িয়ে দূরের পানে চেয়ে আছে,দূরে একটা পাহাড়ে আলো জ্বলছে,নিশ্চয় কারোর বাড়ি-ঘর হবে সেখানে
শান্ত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে তার ফুফুর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত,ফুফু জিজ্ঞেস করলেন ডিনার করেছে কিনা,মন চাইলে আবার ফেরত আসতে পারে তারা
শান্ত বললো ডিনার করেছে উনি যেন চিন্তা না করে
.
কথা বলা শেষে শান্ত এসে বললো”হুম চলো যাই”
আহানাও পিছু পিছু আসতে লাগলো কোনো কথা না বলেই,আজকে যা যা হয়েছে জীবনেও তা সে আর শান্ত দুজনের এক জনেও কল্পনাও করতে পারে নাই
দুজনেরই মুখে কোনো কথা নেই
অন্ধকার একটা পথ ধরে দুজনে হাঁটতেছে,মাঝখানে হালকা দূরত্ব বিদ্যমান
শান্তর হাতে বারবার আহানার শাড়ীর ছোঁয়া লাগছে,যতবার লাগছে ততবারই সে আড় চোখে আহানার দিকে তাকায়
আর আহানা সোজা নিচের দিকে চেয়ে হেঁটে চলেছে
কিছুদূর যেতে না যেতেই শান্ত হঠাৎ আহানার হাতটা চেপে ধরলো
আহানা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলে উঠলো”কেউ যদি তোমাকে টেনে নিয়ে যায়,সাবধানতার তো কূল নেই তাই না?”
.
আমার হাত ধরতে মন চাইছে সেটা বললেই হয় এত বাহানার কি আছে?
আর আমাকে কে নিয়ে যেতে চাইবে?শুধু এক কথা আমাকে কে নিয়ে যাবে,কচু নেবে!নিজের বর আমাকে সামলাতে পারে না অন্যরা কি করবে,আর আপনাকে চেনা আছে আমার
কেউ নিয়ে গিয়ে আপনাকে কল করলে বলবেন”ভাই ছেড়ে দে নাহলে তোরে আহানা নিজেই কাঁচা গিলে খেয়ে নেবে”
.
শান্ত আহানাকে টান দিয়ে ওর সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বললো”তোমার মনে হয় আমি এটা বলবো?যেটার ভয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি আর সে আমি কিনা এসব বলবো??জানে মেরে দিব যে তোমাকে আমার থেকে আই মিন কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে চাইবে তাকে
.
আপনার থেকে?বাব্বাহ এত প্রেম!
.
ও তুমি বুঝবে না,তুমি ঝগড়া ছাড়া জীবনে আর কোনো উন্নতি করতে পারবা না জানা আছে আমার
.
হুহ!
♣
দুজনেই রিসোর্টে যখন ফিরে আসলো তখন ঠিক রাত সাড়ে ১০টা বাজে
আহানা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদটাকে দেখছে
কি সুন্দর পরিবেশটা,নিশ্চুপ,শহরের কোনো বালাই নেই এখানে
চাঁদের আলো সোজা মুখের উপর এসে পড়ছে,ইস যদি চাঁদটাকে ছুঁতে পারতাম!
.
পাশে শান্ত এসে বললো”এই চাঁদকে ছুঁতে পারো”
.
আহানা একটা ভেঁংচি দিয়ে বললো”আপনি বুঝি চাঁদ?”
.
চাঁদ কিনা জানি না তবে আজ ঠিক যেমন করে আমাকে দেখছিলে এখনও আকাশের ঐ চাঁদকে তেমন করেই দেখছিলে তাই বললাম আর কি
.
♥যে জিনিস আমরা পাই না,কিন্তু যেটা পাই সেটাতে সে জিনিস মনে করে আপন করে নিই♥
আচ্ছা একটা কথা জানার ছিল
.
বলুন!! আসুন আগে বসুন
শান্ত আহানার হাত ধরে নিচে বিছানো তোষকে বসিয়ে দিলো তারপর গালে হাত দিয়ে আহানার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো সে কি বলতে চায়
.
আহানা হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো একটা কথা
আর সেটা হলো”আপনি কখনও প্রেম করেছেন?”
.
নাহ,অফিসের কাজের চাপে,মায়ের কেয়ার,নিতুর কেয়ারের চাপে আমি এসবের ঘানি টানি নাই,দেখোই না তোমাকে বিয়ে করে বিয়ের দায়িত্ব উঠাতে গিয়েও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি
.
আচ্ছা!তো প্রেমে পড়েছেন কারোর?
.
শান্ত আহানার দুচোখের দিকে তাকিয়ে বললো”হ্যাঁ,পড়েছি”
.
কে সে??দেখতে কেমন?তার কি বিয়ে হয়ে গেছে আপনার মতো?
.
হ্যাঁ তার বিয়ে হয়ে গেছে,তাকে কত বছর ধরে মনে রেখেছিলাম,তার ছবিটা আজও আমার আলমারিতে যত্ন করে রাখা
.
তো তাকে বলেননি কেন?বললে তো আজ সে আপনার হতো
.
মেয়েটা অনেক বাজে বুঝলে,মানে কি বলবো,ওর মতন স্বভাবের মেয়ে আমি আর দেখিনি,প্রচুর দুষ্টুমি করে,সে সবসময় আমাকে হারাতে চাইতো,আমার যা সব তার হওয়া চাই
.
ছোট থেকে জানতেন বুঝি?
আসলে আমার মনে নেই ছোটবেলার কথা তা নাহলে মনে থাকতো শান্ত ভাইয়া ঠিক কোন মেয়েটার জন্য পাগল ছিলো, আমি তাকে চিনি কিনা
.
আরে তুমি চিনো ওকে!
.
তো আমাকে বিয়ে করলেন কেন তাহলে??মনে যদি একটুও মায়া থাকতো তার জন্য অন্য কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছাই আসার কথা না আপনার
.
আরে কি করবো বলো,আমি যেদিন তোমাকে বিয়ে করেছিলাম সেও সেদিন বিয়ে করে নিয়েছে,তাই তো আমিও করে নিয়েছি
.
ওহহ!
.
এবার আমি প্রশ্ন করবো
.
হুম বলেন
.
তোমার সাথে আমার যেদিন দেখা হয়েছিলো সেদিন তুমি সুইসাইড করতে চেয়েছিলা,আমি জানতে চাই কেন??
.
ওটা ফিনান্সিয়াল প্রবলেমের কারণে,আসলে আমি একা সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতাম তাই এসব থেকে মুক্তি পেতে সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম,মায়ের জন্য তো খালা আছে সেই সুবাদে
.
আহা কত প্ল্যান,আমি তো ভাবলাম কোন ছেলে ছ্যাকা দিলো আবার,অবশ্য এখন মনে হচ্ছে কোনো ছেলেই তোমাকে সামলাতে পারবে না,যদিও আমি একটু একটু পারি বাট অন্য কেউ পারে নাই পারবেও না,ইম্পসিবল একটা ব্যাপার
.
সেটা ঠিক,তবে আমি কি এত খারাপ বলুন?
.
প্রশ্নটা করে আহানা অসহায় একটা লুক নিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত আহানার গাল ধরে টেনে বললো”ওলেলেলে”
.
উফ,গাল টানেন কি জন্য?
.
এরকম ফুলা ফুলা গাল দেখলে টানতেই মন চায়,তোমার সাথে ঝগড়া করতে করতে আমি কতদিন কাটালাম,গাল টানলাম আজ,কি ভুল করলাম,বিয়ের দিন থেকে টানা উচিত ছিলো
.
আমিও আপনার চুল টেনে দিব
.
দাও,মাথা ব্যাথা করতেছে
.
আহানাও ভালো মেয়ের মতন চুলগুলো টেনে দিলো শান্তর
.
বাট এক দিক দিয়ে আমি খুশি,অন্তত ঐ কণার হাসবেন্ড হই নাই
.
হলে ভালো হতো,আপনার ওয়াইফ ও হলে আপনার এসব ঢং বের হই যেতো,আমাকে ঝগড়ায় যা তা বলেন,কণাকে বললে একদম মুখটা সেলাই করে দিতো আপনার,তখন ঠিক হতো
.
তোমার ও রতনের সাথে বিয়ে হলে বেশ হতো,আসতে এক চড় যেতে এক চড় খেতে,আর বাকি টর্চার তো আছেই
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চুল টানা বন্ধ করে দিয়ে উঠে চলে গেলো
শান্তর বিছানা থেকে ওর বালিশটা নিয়ে সে পাশের বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো
শান্ত উঠে এসে দেখলো তার ওয়াইফ আগের জায়গায় এসে শুয়ে পড়েছে
.
আহানা এখনও ঘুমায়নি,সামনে থাকা দেয়ালটার দিকে চেয়ে আছে সে,অথচ শান্তর কোনো সাড়াশব্দ নেই
আহানার রাগ আরও বেড়ে গেছে,গাল ফুলিয়ে সে চোখ বড় বড় করে এবার দেয়ালটা দেখে যাচ্ছে
প্রায়ই ১২/১৪মিনিট পর আহানা খেয়াল করলো একটা হাত ওর কোমড় ছুঁয়ে ফেলেছে,পাশ ফিরে তাকাতে যেতেই এবার শান্ত ওর মুখটা আহানার গলায় এনে রাখলো তারপর চোখটা বন্ধ করে বললো”অলরেডি ১২টা বেজে গেছে,ঘুমাও,আর নিশ্চয় এখন কোমড় ধরা নিয়ে চেঁচাবা না?”
.
আহানাও আর কিছু বললো না,চুপচাপ আবারও দেয়ালটার দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো সে
♣
রাত এখন ১টা ৩২বাজে,আহানা ঘুমিয়ে গেছে, শান্ত ঘুমায়নি,কেন যেন ঘুম আসতেছে না
আহানাকে অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে সে জাস্ট আহানার রাগটা ভাঙ্গার জন্য ওকে ধরেছিলো
ঘুম আসতেছে না দেখে উঠে বসলো সে
আহানা হাত দুটো মাথার নিচে রেখে গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছে খাটের এক কোণায়
শান্ত কাঁথাটা ওর গায়ে ভালো করে টেনে দিয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো
একে আমি কখনও ছাড়তে পারবো না,আমার লাইফের একটা অংশ হয়ে গেছে মেয়েটা
শুধু একবার বলো”আমাকে চাও”
যে জোর আমি তোমাকে বিয়ে করতে করেছি সেটা অন্য কিছুতে করতে চাই না আহানা
মাঝে কিসের যেন দেয়াল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বারবার
আমি জানি না কেন,কিসের জন্য ওকে কাছে নিয়েও নিতে পারি না
.
আহানা ঘুরে শান্তর হাতটা জড়িয়ে ধরলো ঘুমের ঘোরে
.
শান্ত বসেই ছিলো,আহানা এভাবে হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে নেওয়ায় তার সব ভাবনায় ছেদ পড়েছে
আরেকটা হাত বাড়িয়ে আহানার চুল গুলো এলিয়ে দিলো সে
তারপর কি মনে করে চুলের ভিতরে হাত দিয়ে ওর মাথাটা ধরে টান দিয়ে ঘুম থেকে তুলে ফেললো ওকে
.
আহানাকে ঘুম থেকে এমন হুট করে উঠিয়ে দেওয়ায় আহানা প্রথমে বেশ ভয় পেলো তারপর বুকে থুথু দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর ব্যাপারটা বুঝতে পারলো যে শান্ত আবারও ওর এত সুন্দর ঘুম টেনে তুলে নষ্ট করেছে
চলবে♥