প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0
2670

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
রাত ১২বাজে ২মিনিট,,,দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে শান্ত,তার কাঁধে মাথা রেখে আহানা ঘুমাচ্ছে,সেও শান্তর মতন ফ্লোরে বসে আছে,শান্ত সোফাটার দিকে চেয়ে ভাবতেছে সে এখন সোফায় গেলে আহানা তাকে ছাড়বে না,ভাগ বসাবে, যার কারণে দুজনেই ফ্লোরে বসে আছে আপাতত
আহানা শান্তর নড়াচড়ায় জেগে চোখ ডলে বললো”এভাবে ঘুম হচ্ছে না তো”
.
তো?তুমি তো তাও দুমিনিট ঘুমালে আমি তো সেটাও পারছি না,মাথা সরাও তোমার,ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেলো,মাথা তো নয় যেন ৫০কেজির রড
.
আহানা মাথা ধরে সোজা হয়ে বসলো তারপর হাই তুলতে তুলতে শান্তর কোলে মাথা রেখে ফেললো ঘুমের ঘোরে
শান্ত কিছু বলে উঠার আগেই সে শুয়ে পড়েছে
শান্ত কি করবে এখন,কোথায় বউয়ের কোলে মাথা রেখে তার ঘুমানোর কথা সেখানে তার বউ তার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে
সব উল্টা হচ্ছে তার সাথে,এদিকে আহানা এত সুন্দর করে গুটিশুটি দিয়ে শুয়েছে যে ওকে ধমক দিয়েও উঠানোর শক্তি ভেতর থেকে আসছে না,কি করা যায়!
.
আহানা ঘুমের ঘোরে বললো”আপনিও আমার মতো শুয়ে পড়েন দুমিনিটের জন্য”

পরেরদিন সকালে শান্ত চোখ খুলে দেখলো আহানা তার কোলে মাথা রেখেছিলো আর সে এখন আহানার মাথার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলো
হুস আসতেই মাথাটা উঠিয়ে নিলো সে
আহানা শান্তর শেরওয়ানি খাঁমছে আরও উষ্ণতা নিয়ে ঘুমাচ্ছে
শান্ত মুচকি হেসে ওর চুলগুলো গুছিয়ে ওর কানে গুজে দিলো
মনে হয় যেন একটা বাচ্চাকে সে আগলে রেখেছে তার কোলে
শান্ত এবার ঘড়ির দিকে তাকালো,সকাল ৬টা বাজে,পিঠ ব্যাথা হয়ে গেছে এভাবে বসে বসে ঘুমাতে গিয়ে
এদিকে আহানাকে সরাতে পারছে না,জোঁকের মতন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে সে শান্তকে
শান্ত আহানাকে নিচ থেকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো,বিছানার চাদরটা নিচে পড়ে আছে,কাল যে ঝগড়া করেছিলো দুজনে মিলে
আসলেই তো চাদর না থাকলে তো বিছানায় শুতে সমস্যা হওয়ার কথা না আর আমরা কিনা সারারাত এত কষ্ট করলাম
শান্ত আহানার পাশে নিজেও শুয়ে পড়লো
আহানা একটিবারের জন্যও জাগলো না,রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারায় এখন মনে হয় সে ঘুমের শেষ রাজ্যে আছে
সকাল ৮টা পর্যন্ত দুজন মিলে প্রচুর ঘুমালো
শেষে আহানা ৮টা বাজে উঠে বসে পড়লো
নিজেকে বিছানায় দেখে এক প্রকার শক খেলো সে,তারপর ফিল করলে হাত পা চুলকাচ্ছে না
শক থেকে বেরিয়ে সে বিছানা থেকে নেমে গেলো
সারা গায়ে শাড়ীর পুতির দাগ বসে গেছে,এসব শাড়ী পরে ঘুমানো যায় নাকি!
মা এত কষ্ট দিলো মেহমানদের মুখ রাখার জন্য
তাড়াতাড়ি এই শাড়ী পালটাতে হবে,সারা শরীরে চিনচিন ব্যাথা করতেছে
আহানা গিয়ে দরজা ধাক্কালো কেউ আসলো না খুলার জন্য
এদিকে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে শান্ত জেগে গিয়ে আহানাকে গালি দিতে দিতে আবারও ঘুমিয়ে গেছে
.
৩০/৩৩মিনিট বাদে শান্ত জেগে গেলো আবারও,চোখের সামনে কাকে যেন দেখলো সে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে একটা মেয়ে,যেন চুল তার জীবনের মহাশত্রু
শান্ত ভালো করে চোখ দুইটা খুলে দেখলো আহানা,পরনে ওর শার্টটা যেটা সে আজ পরবে বলে এনেছিলো,আর নিচে শাড়ী দিয়ে ঘাগড়া বানিয়ে পরেছে
শান্ত উঠে বসে বললো”এসব কি”
.
আহানা চুল থেকে হাত সরিয়ে বললো”আপনার গুনধর বন্ধুরা দরজা এখনও খুলছে না এদিকে ঐ শাড়ীটা পরে আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না বলেই তো হাতের কাছে আপনার শার্টটা পেয়ে পরে নিলাম
প্যান্ট পরলাম না সেটা আরও বিরক্তিকর
আপাততর জন্য আমার শাড়ীটা পেঁচিয়ে স্কার্ট বানিয়ে নিলাম,সুন্দর না?
.
শান্ত মুখ বাঁকিয়ে তোয়ালেটা হাতে করে বাথরুমে চলে গেলো
আহানার মনে পড়লো সে তোয়ালের মধ্যে লোশন ঢেলে রেখেছিলো
সাথে সাথে সেও বাথরুমের ভেতর ঢুকে পড়লো
.
এটা কি আবার!তুমি ঢুকসো কেন?
.
ইয়ে মানে,তোয়ালেটা দিন আমাকে
.
কেন?
.
লাগবে আমার
.
যাও বের হও,আমি এখন ফ্রেশ হবো
.
আগে তোয়ালেটা দিন আমাকে
.
কেন সেটা তো বলো
.
ঐ আসলে আমি কাল দুষ্টুমি করে লোশন ঢেলে দিয়েছিলাম তোয়ালেতে যাতে পুরোটা আপনার মুখে ভূতের মতন মাখিয়ে যায়
.
ইউ!!
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে দৌড় দিলো বাইরের দিকে
শান্ত মুখটা ধুয়ে শেরওয়ানী দিয়ে মুখ মুছে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো আহানার দিকে
আহানা গাপটি মেরে বিছানার কোণায় বসে আছে
শান্ত নওশাদকে ফোন দিলো এবার,নওশাদ ঘুম ঘুম চোখে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই এপাশ থেকে শান্ত এক ধমক দিয়ে বললো দরজা খুলতে
নওশাদ “সরি” বলে আসলো দরজা খুলতে,সে আর সূর্য গেস্ট রুমে ঘুমাচ্ছিলো
দরজা খুলতেই শান্ত আহানার দিকে চেয়ে বললো”যাও তোমার জামা নিয়ে এসো,আর আমাকে আমার শার্টটা ফেরত দাও”
.
আহানা বিছানা থেকে নেমে মুখ বাঁকা করতে করতে চলে গেলো
১০/১৫মিনিট পর সে একটা থ্রি পিস পরে আসলো হাতে শান্তর শার্টটা নিয়ে তারপর ওকে সেটা দিয়ে আবার চলে গেলো মাকে নাস্তা বানাতে হেল্প করতে
মা আর খালা শুধু হাসতেছেন,কেন হাসতেছেন তার কারণ অজানা,আহানা ঠিক বুঝতেছে না এর কারণ কি
শান্ত এসে ডাইনিংয়ে বসতেই একটা খাম পেলো টেবিলে
হলুদ রঙের খাম
আগ্রহ বশত সে খামটা খুললো,ভিতরে একটা চিঠি
চিঠিটা যিনি লিখেছেন তার হাতের লেখা দেখেই শান্ত চিনেছে এটা কার হাতের লেখা,এটা তার ফুফুর হাতের লেখা
তিনি লিখেছেন শান্ত যেন আজকেই সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাও আহানাকে নিয়ে
কদিন তার বাসায় থাকতে হবে এবং সাজেকটাও ঘুরে নেওয়া যাবে
শান্ত বুঝলো ফুফু কেন তাকে কথাটা সামনা সামনি বলেনি কারণ সামনা সামনি বললে হয়ত শান্ত রাজি হতো না বরং ডাইরেক্ট মানা করে দিতো
শান্ত ভাবনায় পড়ে গেলো তারপর আহানাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো
আহানা জানতে চাইলো কি ব্যাপার!
শান্ত ওর হাতে খামটা ধরিয়ে দিয়ো বললো”তোমার কি মত?”
.
আহানা চিঠিটা পড়ে চুপ করে থেকে হঠাৎ করে এক লাফ দিয়ে উঠলো তারপর শান্তর হাত টেনে ধরে লাফাতে লাফাতে বললো”এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে,চলুন না যাই,খুব মজা হবে,আমার তো নাচতে মন চাচ্ছে,সাজেক হচ্ছে স্বপ্নের রাজ্য
চলুন এখনই যাই”
.
আর ইউ ম্যাড?এমনিতেও বিয়ে বিয়ে করে আমার অফিসের অনেক কাজে কারচুপি হয়ে গেছে আর তুমি পড়ে আছো সাজেক নিয়ে
.
তো?আপনার ফুফু জোর দিয়ে বললো তাই আগ্রহ দেখালাম,,,,না গেলে নাই,আমার কি
.
আচ্ছা আমি মাকে বলে দেখবো,তুমি প্যাকিং শুরু করো,মা শুনলে নির্ঘাত হ্যাঁ বলবে জানা আছে আমার
আহানা রান্নাঘর থেকে নাস্তা এনে শান্তর সামনে রেখে এক দৌড়ে গেলো প্যাকিং করতে,সাজেকে এক মাস থাকবে সে মনে মনে ভেবে নিয়েছে,বিন্দু বিন্দু করে সব জায়গা সে দেখবে,এত দিনের স্বপ্ন এভাবে পূর্ণ হবে একদমই ভাবেনি সে
.
শান্ত নাস্তা করে তার বাসায় চলে এসেছে,মাকে কথাটা বলায় যা ভেবেছিলো তাই হলো,মা তো রাজি,মুচকি হেসে তাই বুঝালেন
শান্তর অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা নেই,চিন্তা হলো আহানাকে নিয়ে
যে পরিমাণ দুষ্টু সে,পুরো সাজেক মাথায় করে নাচবে,আসার সময় সব ওলট পালট করে তারপর আসবে
না জানি ফুফুকে কেমন জ্বালায়
.
ওদিকে আহানা ফোন করে জানালো সে রেডি,শান্ত তখন সবেমাত্র একটা জামা নিয়েছে ব্যাগে,এক ধমক দিয়ে সে বললো”বেশি সাজেক সাজেক করলে ওখানে রেখে চলে আসবো ”
.
ওমা!এমন করেন কেন,আপনার ফুফুকে বলে দিব যে আপনি সাজেক যেতে রাজি না একদম,ধরে বেঁধে এনেছি
.
যেটা সত্যি
.
যাই হোক,কখন বের হবেন?
.
আমার প্যাকিং হয়নি,আমি রেডি হয়ে যাওয়ার সময় তোমাকে পিক আপ করে নিব
.
আপনি সাজেকের পথ চিনেন?
.
আমার ফুফুর বাড়ি ওখানে,বহুবার গেছি,গুগল ম্যাপেরও প্রয়োজন পড়বে না
.
আচ্ছা আচ্ছা,তাই তো বলি আপনার মনে এত প্যাঁচ কেন,একদম সাজেকের রোডের মতন
.
কি বললে?
.
কিছু না তো,ওকে বাই,হ্যাপি প্যাকিং

শান্ত একটা হলুদ রঙের জ্যাকেট পরতে পরতে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর নিতুর গাল টিপে দিয়ে যাওয়ার সময় রিপাকে বললো মাকে দেখে রাখতে,কিছু লাগলে তাহসিনকে কল করতে
আহানা তাদের বাসার গেট ধরে ঝুলতেছে,রোডে তার ট্রলি ব্যাগ দাঁড় করানো
কখন আসবে এই লোকটা,আমার খিধে লেগে গেছে
সাইড ব্যাগের থেকে একটা সেদ্ধ ডিম নিয়ে আহানা খেতে খেতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,জার্নিতে সে আর কিছু না নিক,সেদ্ধ ডিম অবশ্যই নেবে,এট লিস্ট পেট তো ভরে,চিপস চকলেটে তো আর পেট ভরে না
আহানা একটা কালো রঙের সুতির শাড়ী পরেছে আজ,মা বলেছে ফুফু শাশুড়ি আমাকে জামায় দেখলে কত কথা বলবে,তাই মা আমাকে শাড়ী পরতে বলেছে হয়ত
আহানা ডিমটা খেয়ে এবার পানি খেলো, শান্তর খবর নেই,এবার সে পায়চারি করতেছে সময় কাটানোর জন্য
১/২মিনিট বাদেই শান্তর কার দেখতে পেয়ে আহানার মনে হলো সাজেক বুঝি এখনই যাওয়া যাবে,মানে দু কদম পের হলেই মেঘ আর মেঘের দেখা মিলবে
আহানা ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা ধরলো কারের দিকে
শান্ত কার থামিয়ে বললো ব্যাগটা পিছনের সিটে রেখে ফ্রন্ট সিটে এসে বসতে
আহানা তাই করলো
.
আমি তো এখানে এসে কল করতাম,আগে থেকেই গেটে এসে ছিলে কেন?
.
আপনার কি?আপনি বুঝবেন না,এই প্রথম যাচ্ছি,আমার কেমন ফিল হচ্ছে আপনাকে সেটা বলে বুঝানো যাবে না
যাই হোক আগে এটা বলুন আগে কি আপনার ফুফুর বাড়ি যাবো নাকি সাজেকের রিসোর্ট গুলাতে যাবো?
.
আমার মনে হয় না ফুফু রিসোর্টে থাকতে দেবে
.
ওমা কি বলেন!রিসোর্ট থেকেই তো মেঘ দেখা যায়,ধুর!
.
আমি ম্যানেজ করবো সমস্যা নাই,তার আগে কদিন হয়ত তার বাসায় থাকতে হবে,বি কেয়াফুল
.
কেন?
.
আমার ফুফু জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকে,এত এত মানুষ তুমি পাগল হয়ে যাবে,এই জন্য আমি যেতে চাচ্ছিলাম না,আমার নিজেরই বিরক্তি লাগে তার বাসায় গেলে
.
কত আর হবে?চাচা জেঠা,তাদের পোলাপান এই তো?
.
জি এই তো তবে,আমার ফুফারা ভাই ৬জন,তাদের আবার ছেলেমেয়ে ৭/৮টা করে করে
তো এবার তুমি হিসেব করো বাড়িতে বাচ্চা বুড়ো কতটা হয়
.
আপনি মজা করছেন না তো??এত মানুষ একসাথে কিভাবে থাকে?বাসা তো তাহলে স্কুল ঘরের মতন হওয়ার কথা?
.
রাইট!স্কুলের ঘরের মতনই,প্রতি রুমে মিনিমাম ৬জন ঘুমায় রাতে
.
আমি বাসায় ফেরত যাব
.
হাহা!শান্ত কোনো কিছু নিয়ে মানা করলে এমনি এমনি মানা করে না বুঝলে আহানা বাবু??
অবশ্য আমাদের আলাদা রুম দিবে,টেনসন নিও না
.
তো আলাদা রুম দিলে ওরা কোথায় ঘুমাবে?
.
পাশের বাসায়,কথা হলো গিয়ে রাতটায় আলাদা হলেও সারাদিন ওদের মাঝখানেই বসে থাকতে হবে
.
আমার এখনই মাথা ধরেছে
.
একটু ঘুমিয়ে নাও,না জানি সেখানে তোমার ঘুম হবে কিনা
.
আহানা ব্যাগ থেকে চুড়ি নিয়ে হাতে পরলো তারপর ঘোমটা দিয়ে বসে থাকলো,শুনেছি অনেক মানুষ থাকলে নানান কথা বলে
তাই পারফেক্ট হয়ে যেতে হবে আমাকে,কেউ যাতে কোনো দোষ না ধরতে পারে
.
কিছু খাবে?হোটেল নজরে পড়তেছে আশেপাশে,থামাবো?
.
না,খিধে নেই,এত লোকের সংমিশ্রনের পরিবারের কথা শুনে আমার খিধা ভেগেছে
.
ভয় পেও না,আমি আছি না?
.
আহানা বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো”ঐ আপনাকে নিয়েই ভয়টা বেশি,সবার সামনে আমাকে নিয়ে মজা করার এই সুযোগ আপনি ছাড়বেন না
.
সেটা ঠিক
.
আবার বলেন ঠিক?আমিও কিন্তু কম না,আমাকে বাঁকা কথা বললে আমিও বাঁকা কথা বলবো আপনাকে বলে দিলাম
.
বলিও,আমার আবার ফুফাতো বোন মাত্র ৬টা,ওদের পাকা পাকা কথায় পারবা তো উত্তর দিতে?
.
আহানা সেখানে অতিব ভদ্র হয়ে বসে থাকবে,যেন ধোয়া তুলসি পাতা,আমার রণচন্ডি রুপ কেবল আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
.
বুঝলাম!
.
আচ্ছা এই যে আঁকাবাঁকা সরু পথটা দিয়ে আমরা যাচ্ছি এটার নাম কি?
.
দীঘিনালা রোড
বলতে গেলে ফুফুর বাসায় এসে গেছি
একটা টিপস দিই শুনো,সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বড় করে সালাম দিবা,ওকে?
.
ওকে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সাজেকের রিসোর্ট গুলাতে পৌঁছাতে হয়তবা ১০/১৫মিনিট বাকি ঠিক সে সময়ে শান্ত কার থামালো,এবার ডান পাশ দিয়ে আরও চিকন একটা রোড গেছে সেটা দিয়ে চলতে হবে
কার সেদিকে যাবে না,মানে ঢুকবেও না
শান্ত কারটা একটা জায়গায় পার্ক করে আহানার আর ওর ব্যাগ হাতে করে নিয়ে চললো
আর আহানা তার ঘোমটা টানায় ব্যস্ত
শান্ত হালকা হেসে বললো”আরে জাস্ট বললাম জয়েন্ট ফ্যামিলি তার মানে এই নয় যে তোমাকে সবাই মিলে ঘোমটার জন্য ধরবে,ওরা সবাই অনেক স্মার্ট”
.
আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে
.
কিছুদূর হাঁটতেই আহানা স্কুলের মতন লম্বাতে একটা বাড়ির মতন কিছু একটা দেখলো সে বিশ্বাসই করতে পারলো না এটাই শান্তর ফুফুর বাড়ি,শান্ত যখন নিজের মুখে বললো তখন তার এটা মানতে হলো শেষে
বাড়ির সামনে বয়স্ক একজন মহিলা আর পাশে ফুফু আর তার ৬টা মেয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আছে,সবার মুখে মিষ্টি হাসি
আহানা সবাইকে সালাম দিলো,উনারা আহানার পিঠে হাত দিয়ে ওকে ধরে বাসার ভিতর দিকে চললেন
.
শান্ত আমি অনেক খুশি হয়েছি তোমরা এসেছো
.
ফুফু তোমার কথা তো রাখতেই হতো,কি আর করার তোমাকে তো মানা করতে পারি না
.
আহানা বাসার ভিতর ঢুকে পুরো ১৪গুষ্টিকে একসাথে না দেখলেও এক এক করে দেখা শুরু হয়ে গেছে
সবার আগে সে এখন কথা বলছে শান্তর ফুফুর শাশুড়ির সাথে
উনি সেই কখন যে আহানার হাত ধরেছেন ছাড়ার নামই নিচ্ছেন না
শান্তকে তার ফুফাতো বোন ছোটটা যার নাম রিমু সে আহানা আর তার থাকার রুমটা দেখিয়ে দিলো
দাদি আহানাকে সোফায় বসিয়ে ওর পাশে বসে এবার ওর পরিবারে কে কে আছে,কতদূর পড়াশুনা করেছে সব জিজ্ঞেস করতেছেন
আর বাকিরা মিলে একের পর এক নাস্তা এনে টেবিলে রাখতেছে,খাবারের আইটেমের লিস্ট দেখে আহানার চোখ কপালে,এই সব তার জন্য নাকি,পুরা এক বছরের খাবার মনে হচ্ছে
শান্ত মুখটা ধুয়ে আবারও এদিকে আসতেছে,এসে দেখলো আহানার দুহাতে দুইটা পিঠা আর সে দাঁত কেলিয়ে সবার কথা শুনে যাচ্ছে
ফুফু শান্তকে দেখতে পেয়ে ওকে ধরে এনে আহানার পাশে বসিয়ে দিলেন
তারপর ওর হাতেও পিঠা ধরিয়ে দিলেন তিনি
শান্ত পিঠাটা মজা করেই খাচ্ছে,আহানা শান্তর খাওয়া দেখে এবার নিজেও খাওয়া শুরু করে দিলো,তেমন একটা মজা লাগেনি তবে আপাতত খেতে হবে তা নাহলে আবার কে কি ভাববে,আহানা আসার পর থেকে এক প্রকার ভয়ে আছে,কেউ ওকে খোঁচা দিলে ওর বড্ড খারাপ লাগে,আর খোঁচাটা যেন না শুনতে হয় তাই সে নিয়ম মেনে চলছে যতটা পারছে
তারা সবাই এখন যে রুমটাতে আছে সেটাতে সোফা আর একটা খাট আছে,ওপাশে জানালা দরজাও আছে,মানে একটা রুমে দরজা দুটো
ওপাশের দরজাটা দিয়ে মনে হয় একটা ছোট উঠানে নামা যায়
আহানা মাথা উঁচু করে সেদিকে একবার তাকালো
.
ফুফু চায়ের ট্রে আনতে আনতে বললেন”তা রিসোর্টে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি তোমাদের?”
.
শান্ত চায়ের কাপটা নিয়ে বললো”ফুফু আহানার মেঘ দেখার শখ,চলে যাওয়ার আগের দুদিন ওকে নিয়ে একটা রিসোর্টে উঠবো ভাবছি”
.
হুম সেটা করতে পারো,তবে আমি চেয়েছিলাম যতদিন সাজেক থাকো ততদিন আমার কাছেই থাকো,আমার বাড়িতে থাকো,অবশ্য এখান থেকে মেঘ দেখা গেলেও একদম দূর থেকে দেখা যায় তাই কাছ থেকে দেখার হলে তোমরা বরং রিসোর্ট একটাতেই যেও
.
কথাটা শুনে আহানা তো খুশিতে গদগদ হয়ে পিঠা আরেকটা মুখে দিয়ে বললো”ফুফু পিঠা অনেক মজা হইছে”
.
দাদি গালে হাত দিয়ে বললেন”এতক্ষণে মাইয়ার মুখে বুলি ফুটছে”
.
শান্ত টিটকারি মেরে বললো”ওরে ওর হ্যাপিনেসের সব দিয়া দাও তোমাকে মাথায় তুলে নাচবে”
.
আহানা মনে মনে শান্তকে একটা গালি দিলো তারপর বাইরে দিয়ে হেসে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে দিলো সে
.
খাওয়াদাওয়া শেষে তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে,শান্তর ফুফাতো বোন মেজোটা আহানাকে নিয়ে চললো ওদের জন্য রাখা রুমটার দিকে,আর শান্ত তার ফুফার সাথে বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে আলাপ করছে বিজন্যাস নিয়ে
আহানা রুমে ঢুকে তো রীতিমত অবাক,একদম রিসোর্ট গুলার রুমের মতন না হলেও কাছাকাছি,বাঁশের তৈরি পুরো রুমটা
তন্নি আহানাকে রুমে রেখে চলে গেছে
আহানা একটু বিছানায় গিয়ে বসে বড় করে শ্বাস নিলো,সবে ২০জনের মতন মানুষের দেখা মিলেছে না জানি আর কত!
সন্ধ্যা যত বাড়তে লাগলো শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে লাগলো ধীরে ধীরে
আহানার গায়ে শীত লাগতেই সে তার ব্যাগটা খুললো,শাড়ী আর থ্রি পিস ছাড়া আর কিছুই নেই,এ তো মহা ঝামেলা,এত শীতে আমি কি গায়ে দিব?
রুমটাতে দরজা সেই দুটোই,আবার বাথরুমও আছে দেখছি,তবে সেটা এই পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়,এটাচড না
আহানা জানালার কাছে গিয়ে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখলো না,তাই পর্দাটা টেনে সে হাত ভাঁজ করে বিছানার মাঝখানে গিয়ে বসলো,শীতে গা কাঁপতেছে এবার
একটা পাতলা কাঁথা রাখা,এটা তো আমারই হয়ে যাবে,ঐ শান্ত কি গায়ে দেবে,আজকে রাতে আবারও ঝগড়া হবে যা বুঝলাম
আহানা আপাতত শীতকে কাবু করতে কাঁথাটা পেঁচিয়ে বসে পড়েছে
শান্ত ৩০/৪০মিনিটের মতন ফুফার সাথে কথা বলে এবার রুমের দিকে ফিরে আসলো
এসে দেখলো আহানা বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে দুহাত ঘষতেছে
.
কি?শীত করে?সোয়েটার আনো নাই?
.
আরে আমি কি জানতাম নাকি যে এখানে এমন শীত পড়ে
.
আমারও শীত করছে তবে জ্যাকেটে আই এম ফাইন,তুমি এক কাজ করো আমার একটা জ্যাকেট পরে নাও
.
কথাটা বলে শান্ত ওর ব্যাগ থেকে একটা জ্যাকেট নিয়ে আহানার হাতে দিলো
আহানা বললো”বাকিরা দেখলে কি বলবে?”
.
তো আমি আর কি করবো?দাঁড়াও চাদর আছে কিনা দেখে আসি
শান্ত গেলো চাদর আনতে
আহানা জ্যাকেটটা পরে আবারও কাঁপতে লাগলো,এত বিরক্তি লাগতেছে তার,পুরো অসহ্যকর লাগতেছে,বাড়ি ফিরে যেতে মন চাচ্ছে এখন এই মূহুর্তে
শান্ত একটা কাঁথা হাতে করে এনে বললো”এক্সট্রা চাদর তো পেলাম না,ফুফু এই একটা কাঁথা দিলো
.
ভালো,ওটা গায়ে দিয়ে আপনি ঘুমাইয়েন,আমি এটা গায়ে দিয়ে ঘুমাবো
.
ওকে,,
.
শান্ত এবার আহানার পাশে বসে ফোন হাতে নিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
আহানার ফোন আছে তবে তার এখন আলাদা রকম বিরক্তি লাগতেছে,শীত হলে সোয়েটার /চাদর গায়ে না থাকলে যে বিরক্তি লাগে ঠিক সেটাই
রাগে শান্তকে গালিও দিতে পারছে না সে,কারণ তার তড়িগড়ির কারণেই সে ভুলে গিয়েছিলো যে এখানে শীত পড়বে অনেক
কিছুক্ষণ বাদে ভুলে আহানার হাত শান্তর হাতের সাথে লাগতেই আহানা বুঝলো শান্তর গা গরম,এখন যদি ওদের মাঝে সব ঠিকঠাক হতো সে নিশ্চয় শান্তকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতো??শীতটাও কমতো,কিন্তু পোড়া কপাল
শান্ত এবার গেমস খেলতেছে মনযোগ দিয়ে
আহানা চুপচাপ ওর পাশে শুয়ে পড়লো,একটু একটু করে শান্তর কাছে এসে কাঁথার নিচে মুখ লুকিয়ে নিলো সে
শান্ত বুঝতে পারলো,খেয়াল ও করলো কিন্তু কিছু বললো না
আহানা যে প্রচণ্ড শীতে ঝগড়াবিবাদ বাদ দিয়ে ওর কাছে ঘেষেছে এটা সে বুঝেছে তাই আর কথা বাড়ালো না
শান্তর গায়ের উষ্ণতা পেয়ে আহানা কখন যে ঘুমিয়ে গেলো
রাত ৯টার দিকে শান্তর ফুফাতো বোন রিমু এসে দরজায় নক করে বললো”ভাইয়া খেতে আসো,খাবার রেডি,নাহলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে”
শান্ত উঠে যেতে নিয়েও পারলো না,আহানা ওর বাম হাতটা শক্ত করে ধরে মাথা লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে,শান্ত হাত নাড়িয়ে ওকে ডাক দিলো কয়েকবার
আহানার ঘুমটা ভাঙ্গতেই নিজেকে একদম শান্তর কাছে দেখে সে বাতাসের গতিতে উঠে সরে গেলো
.
হুহ,এতক্ষণ তো লেগে ছিলেন হঠাৎ এরকম ভয় পেলেন কেন আহানা ম্যাডাম?
.
আহানা এতক্ষণ উষ্ণতায় থেকে এখন দূরে সরে যাওয়ায় শীত ওকে আবারও ধরেছে,সে কাঁপতে কাঁপতে বললো”তো কি করবো,শীতে মরবো নাকি?”
.
আসো ডিনার করবে,আজ রাতে যে কি পরিমান জ্বালাবে তার পূর্বাবাস পাচ্ছি,আমার যে সারারাত তোমাকে বয়ে নিয়ে ঘুমাতে হবে,আদৌ ঘুম আসবে কিনা কে জানে
.
এমন স্বার্থপরের মতন কথা বলছেন কেন?আমি কি হই আপনার?দুবার বিয়ে করা বউ হই,এইটুকু পারবেন না?
আপনার তো উচিত ছিলো মুখ ফুটে বলার যে আহানা আসো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাও তাহলে তোমার শীত কমবে,সেটা তো করেন নাই,আমি নিজে বেহায়ার মতন আপনাকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম আর এখন উল্টো আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছেন কেন আমি আপনাকে ধরলাম
.
আস্তে আস্তে,এরকম ঝগড়া করতে হবে না,তোমার যেমন ইচ্ছা তেমন করে ঘুমাইও,ওকে?এখন চলো ডিনার করতে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বিছানা থেকে নামলো,তারপর শান্তর পিছু পিছু ডাইনিং রুমের দিকে গেলো সে,এবার যাদেরকে সে দেখেনি তাদেরকে দেখলো,মানে শান্তর ফুফুর দেবর,ভাসুর এবং তাদের ওয়াইফদের,বাচ্চা তো আছেই
আহানা বড় করে সালাম দিলো,এক এক করে সবাইকে
ওদের একসাথে বসতে দিয়ে ফুফু আর তার ৬মেয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লো খাবার সার্ভ করাতে
.
ফুফু আমি হেল্প করতেছি,আপনি বসুন,আর দাদি কোথায়?
.
না মা তুমি বসো,তুমি মেহমান আমাদের,তার উপর নতুন বউ
তোমাকে দিয়ে একটা কাজ করানো ও সাজে না,আর আম্মা তো ঘুমিয়ে গেছেন,উনি তাড়াতাড়ি খান রাতের খাবার তারপর তাড়াতাড়ি শুয়ে ও পড়েন
.
আচ্ছা
.
তোমার ঐ কাঁথাতে হবে তো?আসলে আমাদের কাছে বারতি চাদর নেই এই এক ঝামেলা,আমরা ভাবলাম তোমরা সাথে করে চাদর সোয়েটার নিয়ে আসবে
.
ফুফু আমি সত্যি জানতাম না এখানে এরকম শীত পড়ে,জানলে আমি নিয়ে আসতাম আর উনিও তো আমাকে বলেন নিই কিছু
.
শান্ত পোলাও এক চামচ মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো”আমিও জানতাম না তো,দেখো না আমিও সোয়েটার আনি নাই”
.
ফুফুর ভাসুর পাশেই একটা চেয়ারে বসে কাগজে কিসব লিখতে লিখতে বললেন”এসময়ে পাহাড়ী অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি থাকে,এটা কমন সেন্স বুঝলে মেয়ে?”
.
আহানা বোকার মতন চেয়ে আছে উনার দিকে তারপর শান্ত গলায় বললো”আপনার সোয়েটার টা কিন্তু জোস”
.
আহানার মুখে ওমন কথা শুনে সবাই ইয়া বড় হা করে ওর দিকে তাকালো,ফুফুর ভাসুর কাগজ থেকে মুখ তুলে আহানার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন
“কি বললো এই মেয়েটা???”
ফুফুর ভাসুর বয়সে সব ভাই থেকে বড়,এবং অনেক মুডি,তার কথার উপরে কেউ কথা বলার সাহস পায় না আর আহানা কিনা মাঝখান দিয়ে এমন একটা কথা বললো যেন সে উনারই মেয়ে
.
উনি ঠিক কিরকম রিয়েক্ট করবেন তা তিনি নিজেও বুঝতেছেন না,শেষ বললেন”আসমা???আমার জন্য রাখা ভাতটা ঠাণ্ডা হলে বলো,আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাবো,আর এই মেয়েটাকে আমার জন্য যে সুয়েটারটা বুনেছিলা সেটা দাও,পরের বাড়ির মেয়ে,এখানে এসে জ্বর হলে আমাদেরই বদনাম হবে
আর শান্ত?তোমার লাগবে না তো?
.
না আমার লাগবে না,আমাদের এত শীত লাগে না
.
আহানা ব্রু কুঁচকে শান্তর দিকে তাকালো
ফুফু মুচকি হেসে আহানার পাতে মাংস দিলেন,আহানার এক লাইন কথাতে তার ভাসুর যে এতটা বদলে যাবেন তা তিনি একদমই ভাবেননি,রান্নাঘরে যেতেই আসমা উনার হাত ধরে টেনে বললেন”ভাবী,এই মেয়েটার কথায় তো দম আছে দেখছি,আমার স্বামী যিনি কিনা কারোর সাথে জীবনে নরম হয়ে কথা বলেননি তিনি কিনা আজ ওর কথায় কাবু হয়ে গেলো?”
.
ফুফু ফিক করে হেসে বললেন”আমার শান্তর বউ বলে কথা,কথার এবং গুনের দুটোরই তেজ আছে বৈকি,শান্তর সাথে পারফেক্ট ম্যাচ বলেই তো শান্তি ওকে বউ করতে এতদিন উঠে পড়ে লেগেছিলো,আর তুমি তো জানোই শান্তির পছন্দ লেভেল হাই হয়
ওর পছন্দেই আমরা আগে শাড়ী গয়না কিনতাম,আর এখানে ওর একটামাত্র ছেলের বউ বলে কথা,লাখে না কোটিতে একটা তো হবেই
.
শুনলাম শান্ত নাকি ওকে লুকিয়ে সবার অগোচরে বিয়ে করেছিলো?
.
হুম,শান্ত তো ওকে সেই ছোট্টবেলা থেকে পছন্দ করে,দুটোই মিলে পুরো বাসা মাথায় করে রাখতো,এই জন্যই তো রিয়াদ ভাইয়া ওদের বিয়ে ঠিক করেছিলো তখনই,এমনকি কার্ড ও ছাপিয়ে রেখেছিলো ব্যাপারটা পাকাপোক্ত করার জন্য
.
বুঝলাম
.
ওদিকে আহানা নাচতে নাচতে ফুফুর ভাসুরের দেওয়া সোয়েটারটা পরে রুমে এসে বসলো
শান্ত দরজা লাগিয়ে জ্যাকেটটা খুলে একটা টিশার্ট পরতে পরতে বললো”তোমাকে এত পাকা পাকা কথা কে শিখিয়েছে?”
.
কে আবার,আপনি!
.
হেহ!আমি কেন শেখাবো?তুমি আজকে যারে বলছো সোয়েটারটা জোস তার কথায় মানুষের খাওয়া দাওয়া অফ হয়ে যায় সেটা জানো??
.
দেখুন,শক্ত মানুষদের মন অনেক নরম হয়,আর আমি তাদের দূর্বল জায়গা ধরে কথা বলছি
আপনারা উনাকে ভয় পান বলে নরমাল কথা বলেন,কখনও তার সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলে দেখিয়েন আসলেই তিনি কেমন মানুষ সেটা বুঝতে পারবেন
.
শান্ত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো বাঁকাতে বাঁকাতে বললো”আফসোস,আমার মন বুঝলে না,বুঝলে খালি কেমনে আমার সাথে ঝগড়া করা যায় সেটা
.
আমি আপনার কেয়ার করি না বুঝি?কাজের চাপে মাথা ধরে যখন বসে থাকেন তখন চা/কফি কে বানিয়ে খাওয়ায় আপনাকে?
.
আমার বউ,এটা তোমার দায়িত্ব বুঝলে?
.
তো?স্বীকার করলেই পারেন,আমার দোষ না খুঁজে একটু গুন খুঁজেন,মনে হবে যেন শ্রেষ্ঠ সময় যাপন করছেন
.
আহা!
.
আহা কি?আহানা হবে
.
তোমার নামে আহা থাকলেও তোমার কাজে আহা পাচ্ছি না
বকবক বন্ধ করে আমাকে ঘুমাতে দাও,এখন তো তোমার কাছে সুয়েটার আর কাঁথা দুটোই আছে,আমাকে জড়িয়ে ধরার প্রয়োজন নেই তাহলে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে শুতে শুতে বললো”হুম,আপনাকে ধরবো ও না,আপনার গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আমার কিউট নরম ফেস স্কিনটা চুরমার হয়ে গেছে,মনে হইছে যেন আমার গালকে শলামুঠায় আছাড়তেছি
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৪৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আজকে একটু ছুঁয়ে দেখো আমাকে!!!তোমার হাড্ডি একটাও আস্ত রাখবো না
ভালোই ভালোই উনাকে সেই সন্ধ্যা থেকে ডিনারের সময় পর্যন্ত আগলে রেখেছিলাম আর উনি এখন এসে বলে আমার দাঁড়িতে সমস্যা
.
কথাগুলো উপেক্ষা করে আহানা শুয়ে পড়েছে আরেকদিকে ফিরে
শান্ত ওকে শুতে দেখে এবার নিজেও এসে পাশে শুয়ে পড়লো
রাত তখন মনে হয় ১টা কি ২টা বাজে
আহানা নিজের কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো,পাশে শান্ত ছাড়া আর কেউ নাই,তার মানে এটা ওরই কাজ
এই স্টুপিড, উঠুন বলছি,বেয়াদবি করার জায়গা পান না,আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে ছোঁয়ার
.
শান্ত চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে বললো”কি সমস্যা? ভূতে টূতে ধরসে নাকি?এমন চেঁচাও কেন?”
.
আপনি আমার কোমড়ে হাত দিলেন কেন,লজ্জা শরমের মাথা খাইছেন?
.
ওহ আচ্ছা আমি?কি জানি,ঘুমের ঘোরে ভুলে হাত চলে গেছে হয়ত!!সরি
সরি বলে শান্ত আবারও শুয়ে পড়লো
এদিকে আহানার সারা শরীরে কাঁটার মতন সব কিছু বিধতেছে,একেবারে কোমড়েই হাত দিলো,কি বেয়াদবি একটা ব্যাপার স্যাপার,এখন তো একসাথে শুইতেও ভয় করছে আমার,কি করবো এখন
আহানা আঁচল দিয়ে পেটটা ভালো করে ঢেকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আরেকটু দূরে গিয়ে শুয়ে পড়েলো এবার
রাত এবার ২টার শেষ প্রান্তে,আহানা তার কানের কাছে কারোর গরম শ্বাস নিশ্বাস টের পাচ্ছে
সে মুখটা ঘুরিয়ে দেখলো শান্ত চোখ বন্ধ করে মুখটা ওর ঘাড়ের সাথে লাগিয়ে ধরে নিশ্চিতভাবে গভীর ঘুমে আছে
.
আহানা নড়তে যেতেই শান্ত আবারও হাতটা ওর কোমড়ে রেখে ঘুমের ঘোরে বললো”আহানা বাচ্চাদের মতো ছোটাছুটি করিও না,তুমি না আবার দুবার বিয়ে করা বউ?”
.
আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছে,মাঝরাতে এভাবে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে!!তা হতে দিব না আমি
ছাড়ুন!!!
.
আহানা উঠে আবারও বসে গেলো
শান্ত হাতটা দুম করে আহানার শোয়ার সাইডে ফেললো,তার ঘুম ভাঙ্গেনি এখনও
আহানার মন চাচ্ছে শান্তকে ধরে এক ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলতে,ঘুমের ঘোরে না জানি আর কি কি করে ফেলতো,আমার আজকের রাতের ঘুমের একদম ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে এই লোকটা,একবার কোমড়ে হাত তো একবার ঘাড়ে মুখ এনে রাখে,এত এত ঝগড়া করতো এতকাল ধরে আমি তো এর চরিত্রের কথা ভুলেই গেছিলাম,সেই শুরুতেই কিস করতে চেয়েছিলো
এই!এই!!
.
শান্ত প্রচণ্ডরকম বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো,,নাক আর চোখদুটো লাল হয়ে আছে,দাঁতে দাঁত চেপে সে বললো”কি হইছে?”
.
আহানা গাল ফুলিয়ে বললো”আপনি একবার আমার কোমড়ে হাত দেন তো ঘাড়ের কাছে মুখ রাখেন,এসব কোন ধরনের বেয়াদবি?”
.
শান্ত একটু এগিয়ে গেলো আহানার দিকে,আহানার মনে হইছে তাকে কেউ খুন করতে আসতেছে,সাথে সাথে সে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো
শান্ত দেয়ালে ওর একটা হাত রাখলো আহানার পাশ দিয়ে নিয়ে তারপর বললো”আর কিছু তো করিনি তাই না?
ঘুমের ঘোরে মানুষ আরও অনেক কিছু করে ফেলে,যেমন ধরো না তুমি একদিন ঘুমের ঘোরে আমার রুম পর্যন্ত চলে এসেছিলা ঠিক তেমন,আর আমি তো জাস্ট!! ”
কথাটা শান্ত আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো
.
আহানা গায়ে কাঁথা টেনে তোতলাতে তোতলাতে বললো”সরুন এখান থেকে,ডিস্টেন্স রেখে ঘুমান,এমন করে টাচ করবেন না আমাকে,আমার ঘুম হয় না
.
কাঁথাকে লম্বা করে বালিশ বানিয়ে মাঝখানে রাখো,তাহলেই হয়
.
এই শীতে আমি কাঁথা ছাড়া থাকবো?
.
তো আমি কি করবো তুমি বলে দাও,এত চিকন একটা বেডে আমরা দুজন শুবো,একজন আরেকজনের সাথে লাগতেই পারে ঘুমের ঘোরে সেটাতে তোমার যখন সমস্যা তো তুমি বর্ডার তৈরি করে ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও
.
আহানা কি আর করবে কাঁথা দিয়ে বালিশের মতন করে বানিয়ে মাঝখানে রেখে শুয়ে পড়লো ওপাশে,গায়ে সোয়েটার আছে তাও সারা শরীর শীতে কাঁপতেছে,শেষরাতে আর থাকতে না পেরে আহানা কাঁথাটা মাঝখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন সকাল সকাল শান্ত উঠে পড়েছে,সাজেকের সকাল দেখবে বলে,আহানাকে জাগাতে চায়নি কারণ কাল সারারাত যে ওর ঠিকমত ঘুম হয়নি তা জানা আছে তাই ওকে আর জাগালো না শান্ত,নিজে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কটা হুডি পরে বেরিয়ে গেলো মর্নিং ওয়াকে
আহানা তার চলে যাওয়ার ১ঘন্টা বাদেই জেগে গিয়েছে তাও রিমুর ডাকাডাকিতে,তখন মনে হয় সকাল ৭টা বাজে
আহানা গলা ব্যাথা আর মাথা ধরার জন্য কথা বলতে পারছে না,গায়ে হাত দিয়ে বুঝলো তার জ্বর এসেছে,এই শান্তর জন্য এমনটা হলো,বেয়াদব,আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে!!
আহানা উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো,সবার আগে দাদির সামনে পড়তেই সে মিষ্টি হাসি দিলো
কিন্তু দাদি হাসলেন না!!!ফ্যাকাসে মুখে বললেন”নতুন বউরা সকাল সকাল তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়,তুমি দেখি কালকের শাড়ীটা এখনও পরে আছো,গোসল করো নাই নাকি?রিমুকে দিয়ে আমি তোমাদের বাথরুমে গরম পানি পাঠিয়েছি,যাও গোসল করে নতুন পোশাক পরে বের হও
.
আহানাও মাথা নাড়িয়ে আবারও রুমে ফেরত যাচ্ছে,এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও শান্তকে দেখলো না সে,গোসল করতে গিয়ে দেখলো পানিও ঠাণ্ডা হয়ে গেছে,তাও গোসলটা সেরে নিয়ে একটা বেগুনি রঙের সুতির শাড়ী পরে সে রেডি হয়ে নিলো,ভেজা চুল গায়ে লাগতেই শীত মনে হয় ঘাড় চেপে ধরেছে
কাঁপতে কাঁপতে আহানা হাঁটতেছে রুম থেকে বেরিয়ে
সোফার রুমের দিকে যাচ্ছিলো সে,হঠাৎ শাড়ীর সাথে লেগে পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ধরে ফেললো ওকে
আহানা ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো আবার
.
এই মেয়েটা এত ভোরে গোসল করলো কেন,এমন ভাব করছে যেন সিরিয়াসলি সে আমার সাথে একটা সম্পর্কে আছে
গোসল করলো কেন সেটা বুঝলাম না,জ্বর বাঁধিয়ে ছাড়বে,তারপর আম্মু আমার মাথা খাবে
.
আহানা গিয়ে সোফায় বসে আছে,ওর পাশে রিমু বসে ফোনে গেমস খেলছে
ফুফু মুড়ি আর মুড়কি এনে বললেন”তা ঘুম হলো তো নতুন জায়গায়?”
.
আহানা বললো”হুম”
.
শান্ত ও এসে গেছে ততক্ষণে
.
ফুফু ব্রু কুঁচকে বললেন”তোমার শরীর খারাপ নাকি?কথা ওমন শোনাচ্ছে কেন?এত ভোরে আবার গোসলই বা করলে কেন?”
.
ফুফু একটু কথা শুনাও তো,ওকে কে বলেছে এত ভোরে গোসল করতে?জ্বর হলে তখন কি হবে?
.
জ্বর হলে কি??হয়ে গেছে অলরেডি,কপাল ছুঁয়ে দেখ
.
শান্ত চোখ রাঙিয়ে বললো”এবার খুশি তো তুমি?”
.
দাদি এসে কঠিন গলায় বললেন”নতুন বউ বাসি কাপড়ে থাকা শোভা পায় না বলেই তো আমি ওকে জোর করে গোসল করতে বললাম, এই টুকু জানো না নিলু?
.
ফুফু মাথা নিচু করে বললেন”আসলে শহুরে মেয়ে তো,জায়গা বদলালে সেখানকার পানির সাথে মিশতে সময় লাগে,এই সিজনে জ্বর হলে তো সমস্যা তাই বললাম
.
ওসব সেরে যাবে,এরকম একটু আধটু জ্বর হলে কিছু হয় না,তোমরা নাস্তা করো তো
.
মুড়ি মুড়কি খাওয়া শেষে ফুফু বললো ৮টায় নাস্তা দেবে,ততক্ষণ গিয়ে রুমে বসতে
আহানা উঠে সেদিকে ছুটতেই শান্ত ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
কি?
.
যখন তোমার জ্বর তখন গোসল করলে কেন?
.
জ্বরের ভয় বেশি নাকি দাদির ভয় বেশি?আর একটু জ্বরে কিছু হয় না,চলুন না একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি
.
ধরো
.
এটা কি?
.
হুহ,আমি তো নাকি তোমার কেয়ার করি না,ভোর ৬টায় উঠে মর্নিং ওয়াকে গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ গিয়ে একটা লোককে দেখলাম তার বাসা থেকে বের হচ্ছে হাতে নিয়ে ১২/১৩টা চাদর,ব্যস কিনে নিলাম একটা তোমার জন্য
.
বাহ!
.
আহানা খুশি হয়ে চাদরটা গায়ে মুড়িয়ে নিলো
শান্ত ভ্রু কুঁচকে হাত দিয়ে ওর কপালটা চেক করে মুখটা কালো করে হাঁটা ধরলো,আহানা ওর পিছু পিছু আসতেছে
মাটির একটা পথ,দুপাশে বন,তারা একটা পাহাড়ের ওপর দিয়ে হাঁটতেছে,মূলত ফুফুদের বাসাটাই ওখানে
কুয়াশা আর কুয়াশা,ঠাণ্ডা পরিবেশ
আহানা এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হেঁটে চলেছে,অনেকটা পথ হাঁটতে হাঁটতে তারা তাদের কারের দেখা পেলো যেটা পার্ক করে রাখা
শান্ত তার কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন বের করে ছবি তুলছে এখন
আহানাও এসে পাশে দাঁড়ালো,চাদরটা আনাতে আহানা শান্তর প্রতি কিছুটা হলেও খুশি হয়েছে,মনে মনে ভালো লাগা কাজ করছে
শান্ত ছবি তুলতে তুলতে বললো”এভাবে কি দেখো?প্রেমে টেমে পড়লা নাকি?”
.
আহানা সাথে সাথে মুখটা আরেকদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো”কিসের প্রেম?আমার প্রেম নেওয়ার মতন ক্ষমতা আছে আপনার?”
.
বুঝলাম না
.
আমি প্রেমে পড়লে সেই মানুষটাকেও প্রেমে ফেলবো,তারপর সে পারবে তো নেশা থেকে বেরোতে?
.
শান্তকে চ্যালেঞ্জ করছো?
.
কিসের চ্যালেঞ্জ! আমি তো আপনার প্রেমেই পড়লাম না,আপনি প্রেম থেকে তো দূরেই
.
শান্ত হঠাৎ ফোনটা পকেটে পুরে আহানার কোমড়ে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিয়ে আসলো
আহানা এতক্ষণ ডায়ালগ মারতে মারতে হুট করে এমন একটা সিচুয়েশনে চলে আসবে ঠিক ভাবেনি সে
শান্তর দিকে না তাকিয়ে ডানে বামে তাকালো সে,দূর দূরান্তেও কেউ নেই,শুধু সে আর শান্ত আর তাদের সাদা কারটা
সাথে কিছু কুয়াশা ভাসমান অবস্থায় দোদুল্যমান!
.
তুমি না হয় আমাকে প্রেমের নেশায় ফেলবে কিন্তু আমার প্রেমে পড়লে তো তুমি মরেই যাবে
অবশ্য অলরেডি প্রেমে পড়েই গেছো তা নাহলে বিয়ের চুক্তিটা শেষ হওয়ার কথা শুনে কাউকে কিছু না বলে রিয়াজের বিয়ের থেকে একা বাড়ি চলে আসাকে আমি কি ধরে নিতাম?
.
আহানা হালকা কেশে শান্তকে হাত দিয়ে আলতো করে সরাতে সরাতে বললো”ওটা কিছু না,এমনি মন খারাপ ছিলো বলেই”
.
বলেই??চলে এলে?আবার বললে কেন আমি বললাম চুক্তিটা শেষ হলে তুমি মুক্ত,এটা বলে খোঁচাও তো মেরেছিলা,২য় বার বিয়ে কি এমনি এমনি করেছিলাম আমি?
.
শান্তর মুখে সব সত্য শুনে এই ঠাণ্ডার মাঝেও আহানার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে
শান্ত মুচকি হেসে আহানার কোমড় থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো আবার
আহানা লজ্জা পেয়ে আরেকদিকে ফিরে হাঁটা ধরলো,কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলো সে,তারপর মাথা তুলে দূরের একটা পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো,সত্যি কি সে সেদিন শান্তর প্রেমে পড়েই ওকে ২য় বার বিয়ে করেছিলো?
.
এই মেয়ে শুনো!
.
আহানা পিছন ফিরে তাকালো
.
এত শীতের মধ্যে আর বাইরে থাকতে হবে না,চলো এখন
.
আহানাও বাধ্য মেয়ের মতন শান্তর সাথে বাড়িতে ফিরে গেলো,টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে ফুফু আর ফুফুর জা রা মিলে
আহানা এক কোণায় গিয়ে বসলো,কারণ সবার সাথে কাজে হাত লাগাতে চেয়েছিলো কিন্তু ফুফু দেয়নি
ফুফু শান্তকে বললো আহানার শরীর ভালো হলে ওকে নিয়ে ঘুরে আসতে,বাসায় থাকতে হয়ত বোরিং লাগবে
শান্ত রুটি মুখে দিয়ে বললো”না আজ আর ও বের হবে না,জ্বর বাধিয়ে নিয়েছে এখন আর বের হতে হবে না,পরে অসুখ আরও বাড়বে”
.
সেটা ঠিক বলেছিস
.
আহানা নাস্তা করে এসে আবারও শুয়ে পড়েছে,শরীর খারাপ লাগতেছে,সবার মাঝে বসে থাকলে ১০০টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে,ওদিকে শান্ত ফুফুর কাছ থেকে ঔষুধ নিতে গেছে আহানার জন্য
আহানা মায়ের সাথে কথা বলে নিলো,মনটা এখন একটু হালকা লাগছে এখন,শরীর খারাপের কথা আহানা জানালো না মাকে
আবার শুতে নিতেই দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছে,হাতে এক কাপ চা,ধোঁয়া ওঠা গরম
শান্ত চায়ের কাপটা ওকে এগিয়ে দিলো তারপর ওর পাশে বসে ওর কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করে নিলো
আহানা তো রীতিমত শক,চোখ ইয়া বড় করে সে শান্তর কাজে অবাক হচ্ছে বারবার
.
ওমন করে কি দেখো তুমি?
.
এত কেয়ার করতেছেন তো তাই
.
তোমার শরীর খারাপ আর আমি খেয়াল না রাখলে ফুফু আম্মুকে জানিয়ে দিবে তারপর আম্মু আমার সাথে রাগ করে থাকবে
.
আন্টি ভয়ে এত কেয়ার করছেন?
.
হুম তাই নয়ত কি!
.
ওহ
.
শান্ত উঠে চলে গেলো আবার
আহানা চা শেষ করে বিছানা থেকে নেমে রুমটার পিছনের দরজাটা খুলে বাইরে বের হলো,সূর্য এখন মাথার উপরে,তাও শীত শীত আমেজ আছে,দূরে ফুফুকে দেখা যায়,উনি বড় একটা মাছ কাটতেসেন
আহানা সেদিকে না গিয়ে উল্টো দিকে গেলো,একা একা হাঁটতে মোটামুটি লাগছে,মাটিগুলো হলুদ হলুদ
আহানা কিছুদূর গিয়ে একটা দোলনা দেখতে পেলো
মেহগনি গাছ দুটোর মাঝ বরাবর লাগানো,সম্ভবত কোনো বাচ্চার জন্য বানানো,তবে কম ওজনের বড় রাও বসতে পারবে
আহানা এই সুযোগ হাত ছাড়া করলো না,গিয়ে দোলনাটায় বসে পড়লো,নিজে নিজে ঢুলতে লাগলো সে,ভালোই লাগছে,কিছু সময়ের জন্য শরীরটা ফুরফুরে লাগতেছে
.
শান্ত ঊষার সাথে কথা বলা শেষ করে ফোন পকেটে রাখতে রাখতে দক্ষিণ দিকে তাকাতেই আহানাকে দেখলো
আহানা বাচ্চাদের মতন একটা দোলনায় দোল খাচ্ছে
শান্তর মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার কথা,তাদের বাসার বাগানটায় একটা দোলনা বানিয়ে ছিলো শান্ত আর আহানা মিলে
তারপর সারাদিন সেটাতে দুজন মিলে দুলতো
কতবার পড়ে হাত পা কেটেছে দুজনে,,একদিন তো উড়ে গিয়ে বন পরিষ্কার করার মেশিনের উপর পড়ছিলো আহানা,হাত পুরো জখম হয়ে গেসিলো তার
আহানার হাতে হয়ত দাগটা এখনও আছে,শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে ওকে দোলনা থেকে নামিয়ে নিলো
.
কি সমস্যা!
.
দেখি তোমার হাত
.
শান্ত আহানার হাত উল্টো করতেই দেখলো ছোটবেলার সেই দাগটা আছে এখনও,তবে তার পাশে আরেকটা দাগ
শান্ত কপাল কুঁচকে বললো”এটা আবার কিসের দাগ,কবে হলো?”
.
আহানা হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো”আপনার কি?”
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে