প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৩২
#Writer_Afnan_Lara
?
শান্ত আরেকদিকে ফিরে চলে গেলো
আহানাও দাঁত কেলিয়ে লিফট থেকে বেরিয়ে আসলো
দুজনের একজনেও মিষ্টির কথার জবাব দিলো না
.
আমার ব্যাগ এনে দিন আমি আর আপনার বাসায় যাব না
.
ইহহহ!তোমার দরকার হলে তুমি গিয়ে আনো,আমি পারবো না আনতে,হুহ
.
আহানা শান্তকে বকতে বকতে শান্তর বাসায় গিয়ে ব্যাগ নিয়ে সোজা চলে গেলো তার বাসার দিকে
.
বাসায় ফিরে পান্তা ভাত খেয়ে জামা চেঞ্জ করার জন্য ওড়না খুলতে গিয়ে মনে হলো শান্ত আশেপাশেই আছে,শান্তর গায়ের গন্ধটা একদম তীব্র ভাবে নাকের কাছে আসতেসে,মনে হয় যেন ও পাশেই দাঁড়িয়ে আছে
এদিক ওদিক তাকিয়ে পরে আহানার খেয়াল হলো ওড়না থেকে শান্তর গায়ের গন্ধ আসতেসে,শান্ত মুখ মুছেছিল কয়েকবার তাই হয়ত
তারপর হেসে দিয়ে জামা আরেকটা পরে আহানা বের হলো বাসা থেকে
ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে ঢুকেই দেখলো সবাই জানালার ধারে গিয়ে উঁকি মেরে কি যেন দেখছে আর একজন আরেকজনকে ধরে মুচকি মুচকি হাসতেসে
আহানা এতক্ষণ ওদের এমন ভাব দেখেছে,কি দেখতেসে সেটাই বুঝার চেষ্টা করতেসে সে,কয়েকজনের তো মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেছে
শেষে আর থাকতে না পেরে আহানা নিজেই দেখতে গেলো রহস্য উদঘাটন করতে
ভিড়ের সবাইকে ঠেলেঠুলে মাঝখান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে,বড় একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিলো
তারপর জানালায় উঁকি দিতেই আহানার চোখ কপালে
মাঠ ভর্তি ছেলে,ভার্সিটির পাশের বাউন্ডারির বাহিরের একটা মাঠে ফুটবল খেলতেসে সবাই
তার মধ্যে শান্তকে দেখা যাচ্ছে,সাথে নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্য ভাইয়াও আছে,তমাল দূরে একটা চেয়ারে বসে আছে
এতগুলো ছেলের মাঝে শান্ত যেন সন্ধাতারার মত জ্বলে আছে
তুমুল ভাবে খেলা শুরু হয়েছে,টানটান উত্তেজনা,মেয়েরা সব ছেলে রেখে শান্তকে নিয়েই কথা বলছে
কিউট,মিউট,টিউট কোনো কথায় ছাড়তেসে না তারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ!
আর আমি কিনা আজ পর্যন্ত এই গাধাটার মধ্যে কোনো ভালো গুন খুঁজে পেলাম না,আফসোস
আহানা মুখ বাঁকিয়ে ফিরে যেতে লাগলো হঠাৎ সব মেয়েরা এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলো
আহানা ভয় পেয়ে আবার দৌড়ে আসলো দেখার জন্যে
কি হলো এমন যে সবাই এমন উত্তেজিত হয়ে উঠলো
নিচে তাকিয়ে দেখে আহানার চোখ আবারও কপালে উঠে গেলো,শান্ত ম্যাচ জিতে খুশিতে তার জামা খুলে ফেলেছে খেলতে খেলতে
আহানা ভেঁংচি দিয়ে আবার বেঞ্চে এসে বসলো,আজ শয়তানটা অফিসে যাবে না নাকি,ইচ্ছে করে এমন করেছে আমি জানি,মেয়েদের নিজের বডি দেখানোর জন্য,আমি বুঝি না এমন বডি তো অন্য ছেলের ও আছে তাহলে ওরা সব ছেলে রেখে শান্তর উপর এমন ক্রাশিত কেন কে জানে,বিরক্তিকর,ওর সব আমার বিরক্তিকর লাগে
একটা দুইটা ক্লাস হয়েছে
মেয়েরা স্যারের কথায় কোনো কান না দিয়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে ম্যাচ দেখায় মন দিয়েছে সব চাইতে বেশি,এক ম্যাচ শেষ হয়ে আরেক ম্যাচ শুরু হয়েছে মনে হয়,হইহুল্লড় শুনা যাচ্ছে
.
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে,তখন বাজে বেলা ১২টা
আহানা একা একা কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে বসে আছে
সময় কাটানোর জন্য নিচ থেকে কঙ্কর নিয়ে পানিতে মেরে যাচ্ছে
অফিস এক ঘন্টা বাদে খুলবে,আহানা তাই এখানে বসে সময় অতিবাহিত করতেসে,ভার্সিটির ক্লাসেই বসে থাকতো কিন্তু ভার্সিটির গেট লক করে ফেলেছে দারোয়ান
দূর থেকে কাকে যেন দেখা যাচ্ছে,পোশাক দেখেই বুঝা গেলো এটা শান্ত,খেলা শেষ করে দৌড়ে আসতেসে,হুহ আজ মিঃ শান্ত অফিসে যেতে লেট করে ফেলবে,এখন বাজে ১২টা,অফিস শুরু ১টা থেকে,কাদায় মাখামাখি হয়ে গেছে পুরা,হিহি,খুব বকা খাওয়াবো আজ রাফি স্যারকে দিয়ে
শান্ত কাছে এসে দেখলো আহানা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে,দাঁত কেলিয়েও হাসতেসে মাঝে মাঝে
.
কি এমন হেসে চেয়ে আছো কেন?অন্য মেয়েদের মত তুমিও ক্রাশ খেলে নাকি?
.
আমার আর কাজ নেই,এমন কাদায় মাখানো ভূতকে দেখে ক্রাশ খাবো!
.
বডি দেখসো??নাকি না দেখেই কথাটা বললে
.
ওমা তাই,আমার তো আপনার বডি নজরেই পড়ে নাই,কিছু কিছু ছেলের বডি চোখ বড় করে খুঁজে দেখতে হয় আপনার ও তেমন
.
মিথ্যা কথা বলো কেন?মেয়েরা আগে আমার বডির দিকে তাকিয়েছে আর তুমি বলো তুমি মাত্র দেখলে?
.
তোহহহ?
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে ঝুঁকে আহানার দিকে এগিয়ে গেলো
আহানা গাছের সাথে লেগে ভয়ে চোখ বন্ধ করে বললো এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি,সরুন বলতেসি,আপনার সারা গায়ে কাদা লেগে আছে,আমার গায়ে লেগে যাবে
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানার আরও কাছে এসে ওর গালে নিজের গাল থেকে কাদা লাগিয়ে দিলো
আহানা চোখ শক্ত করে বন্ধ করে ফেলেছে
.
কি বলছিলে?আমাকে কাদামাখা ভূত লাগে?তোমাকেও এমন ভূত বানাবো এখন
.
শান্ত আহানার হাত টেনে ধরে নিজের বুকের উপর রেখে ঘষে নিলো
আহানা নড়াচড়া করতেও পারছে না শান্ত ওকে গোল করে আটকে রেখেছে
কাদা লাগানো শেষে উঠে গেলো শান্ত
.
বলো আমাকে ভূত লাগছে?নাকি তোমাকে ভূত লাগছে?
.
আহানা শান্তকে বকতে বকতে লেকের পাশে গিয়ে পানি নিয়ে মুখ ধোয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো,হঠাৎ দুম করে শব্দ হলো,শান্ত পানিতে ঝাঁপ দিসে গোসল করার জন্য
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আহানা ব্যাগ থেকে তোয়ালেটা দাও তো
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে শান্তর ব্যাগ থেকে তোয়ালে নিয়ে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
না দিলে কি করবেন মিঃ অশান্ত?
.
আহানা মজা করিও না,তোয়ালে দাও আমি মাথা মুছবো,আমি কিন্তু লেক থেকে উঠলে তোমার খবর আছে
.
আহানা কথাটা না শুনার ভান করে হেঁটে চললো তোয়ালে হাতে নিয়ে
শান্ত রেগে পানি থেকে উঠে আসলো,হাত দিয়ে চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে আসতেসে সে
আহানা হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে,হঠাৎ কারোর জোরে হেঁটে আসার শব্দ পেয়ে পিছনে তাকালো সে,শান্তকে দেখে কলিজা বের হওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেলো তার,দৌড়ে পালাতে যেতেই শান্ত এগিয়ে এসে আহানার চুলের মুঠে ধরে টান দিলো
.
আহহ!
সরি সরি নিন আপনার তোয়ালে
.
তখন দাও নাই কেন,বেয়াদব মাইয়া!
.
শান্ত আহানার থেকে ছোঁ মেরে তোয়ালেটা নিয়ে নিলো,আহানা ভেগে যেতেই শান্ত ওকে ধরে এক টান দিয়ে গাছের সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
সরি আর এমন মজা করবো না,সত্যি
.
শান্ত হেসে দিয়ে মাথা আহানার মুখের কাছে নিয়ে ঝাড়লো কতক্ষণ,আহানা চোখ বন্ধ করে আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে
.
শান্ত যখন দেখলো চুল থেকে আর পানি পড়ছে না চুল ঝাড়া অফ করে দিলো সে
আহানা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নড়তে যেতেই শান্ত যা করলো তার জন্য সে একদমই তৈরি ছিল না
শান্ত ওর মাথা আহানার গলায় নিয়ে ঘষেছে
আহানার পুরো শরীর শিউরে উঠলো তখন,চোখ বন্ধ করে শান্তর হাত চেপে ধরলো সে,তারপর হুস আসতেই শান্তকে সরিয়ে ফেলে সোজা চলে গেলো ওখান থেকে
শান্ত কিছুক্ষন আগে কি করলো সেটা ভেবে সে নিজেই বিস্মিত হয়ে গেছে
এমনটা কেন করলাম আমি!
.
আহানা অফিসে এসে ধুপ করে চেয়ারে বসে পড়লো,গা এখনও কেঁপে যাচ্ছে.শান্ত হঠাৎ করে এমন কেন করলো সেটাই বুঝতেছি না
শান্ত ১০মিনিটেই অফিসে এসে পৌঁছে গেলো,সিটে বসে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে সে,লেট যাতে না হয় তাই তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে
.
ওহ মাই গড শান্ত,তুমি তো আমাকে পাগল করে দিবে এমন একটা লুক দিয়ে
.
আহানা কেমন করে যেন বেবির দিকে চেয়ে আছে
শান্ত বুঝতে পেরে বেবির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,বেবি শান্তর টাই টেনে কাছে এগিয়ে এসে বাকি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে কথা বলে যাচ্ছে
.
চুল কম মুছতে তাহলে এখন সেই পানি পড়া আমি দেখতে পারতাম,কত যে ভাল্লাগতো
.
বেবির কথা শুনে শান্ত মুচকি হেসে আহানার দিকে তাকালো
.
সরি বেবি,কি করবো চুল যে আরেক জায়গায় ঝেড়ে এসেছি
.
কি হলো আহানা?তুমি এমন করে চেয়ে আছো কেন?তোমার কি আমাদের দুজনকে ভালো লাগে না?
.
আপু তোমাকে আমার খুব ভাল্লাগে,তবে ঐ অশান্তকে ভালো লাগে না
.
অশান্ত??কে?
.
তোমার পাশের এই যে একটা লম্বা খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে তার নাম অশান্ত
.
শান্ত রাগে ফুলতে ফুলতে বেবির হাত ধরে বাইরে চলে গেলো
.
যাক বাচঁলাম,দুটো চোখের সামনে থাকলে মেজাজ খারাপ থাকে আমার
.
কি হলো শান্ত,রাগে একরম ফুসতেসো কেন,আমি কি কিছু করেছি?
.
নাহ,কিছু করোনি(আহানা করেছে সব)
.
আহানা ফাইল রাখতেসে ড্রয়ারে,রেখে পিছন ফিরতেই এক ধাক্কা খেলো শান্তর সাথে
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে সেন্টার ফ্রেশ খাচ্ছে,আহানাকে দেখে ফু দিলো ওর মুখে
আহানা ওয়াক ওয়াক করতে করতে চলে গেলো
বেয়াদব একটা,এই ধরনের চুইংগাম আমার একদম ভালো লাগে না,বমি আসে,ঔষুধের মত মনে হয়,গন্ধ তো জঘন্য
অসভ্য কোথাকার!
.
Attention everyone!
এদিকে আসো সবাই
.
আহানা সেদিকে গেলো,শান্ত ও এসে পড়লো,বাকি কর্মচারীরাও তাকিয়ে আছে রাফির দিকে
.
তো শুনো সবাই,পরের সপ্তাহে তোমাদের সবাইকে কুমিল্লা ট্যুরে যেতে হবে
.
সবাই খুশিতে ইয়াহু বলে উঠলো
.
থামো থামো,এমনি এমনি যাবা না তোমরা,কুমিল্লায় একটা বিল্ডিং বানানো হচ্ছে যেটার নকশার কপি আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে
জিসান স্যার ঐ নকশা দেখে অনেক খুশি হয়েছে উনি তার ক্লায়েন্টকে উক্ত নকশা অনুযায়ী বিল্ডিং বানানোর ডিল করবে
বাট কথা হলো গিয়ে ছবির দ্বারা পুরো বিল্ডিং কেমন তা বোঝা যায় না,তোমরা সবাই বিল্ডিংয়ের কোণায় কোণায় লক্ষ করে উনাদের পাঠানো নকশার যে ত্রুটি রয়েছে আই মিন নকশাতে যা ফুটে উঠেনি তোমরা সেটা ফুটিয়ে এনে আমাদের হাতে দিবে
বিল্ডিংয়ের মালিকের সাথে আমাদের কথা হয়েছে,তোমরা সবাই একসাথে রওনা হবে,আমাদের অফিসের আলাদা মাইক্রো নিয়ে,আমি যাব তোমাদের সাথে,ওকে?
.
ওকে!!
.
আহানা ভাবনায় পড়ে গেলো, মিষ্টিকে তো তাহলে আবার একদিন পড়াতে পারবে না,ধুর ধুর,ট্যুরের কি প্রয়োজন সেটাই বুঝতেসি না আমি!!
.
ওহ মাই গড আমার তো তাহলে শপিংয়ে যেতে হবে,কুমিল্লায় অনেক কিছু দেখার আছে,আমি সব জায়গায় যাব,নিউ ড্রেস নিতে হবে জলদি,লিপস্টিক ও নিউ কিনব,জোস একটা ফিলিংস!!সেই মজা হবে
.
এই মাইয়া সাজা ছাড়া কিছু জানে না,পুরা এলিনা টাইপ!
.
ব্রেক টাইমে সবাই ক্যানটিনে চলে গেছে আহানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে,আজ কোনো কাজ নাই তার
ফাইল সব দেখা শেষ
শান্ত বেবির ভয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেসে
.
আহানা!
.
হুম বলো আপু
.
তুমি একটু শান্তকে বলবে এদিকে আসার জন্য,আমি ডাকছি ও আসতেসে না,তুমি বললে আসবে,প্লিস প্লিস
.
না আমি বলতে পারবো না,আর উনি কখনও আমার কথা শুনেন না,৩০মিনিট পরেই তো আবার সবাই কাজে ফিরে আসবে তখন না হয় কথা বলিও
.
আরে তোমরা তো খালি ঝগড়া করো,তো এখনও ঝগড়া শুরু করে দাও তাহলে ও নিচ থেকে চলে আসবে,প্লিস ওকে এখানে নিয়ে আসো,কাজের সময় তো আর কথা বলতে পারবো না
.
আচ্ছা ফাইন
.
আহানা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখলো শান্ত অফিসের গেটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে
.
এই যে মিঃ অশান্ত!
.
শান্ত চমকে উপরে তাকালো
.
মিঃ অশান্ত আপনি জানেন আপনাকে বাঁদরের মত দেখতে??
.
আহানা?তোমার মাথা ঠিক আছে?
.
না বাঁদর না গাধা!!
.
আহানা!!মেজাজ গরম করবা না একদম,মাইর খাবা
.
আচ্ছা!!বাঁদর গাধা দুটোই আপনি
.
শান্ত সিগারেট টা নিয়ে হনহনিয়ে আসতেসে
.
এই বেবি আপু আসতেসে আসতেসে
.
দাঁড়াও!আমার একটা কল আসছে আমি কথা বলে আসি তুমি ততক্ষণ ওকে একটু সামলাও,আর হ্যাঁ বলিও আমার ওর সাথে important কথা আছে
.
আরে আরে,আমাকে বাঘের মুখে রেখে চলে গেলো!ধুর!
.
আহানা পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত আসতেসে ক্ষিপ্র গতিতে
.
আহানা ভয়ে পিছিয়ে গেলো
শান্ত এগিয়ে এসে ওর চুলের মুঠি ধরে টেনে ধরলো ওকে
.
সরি আমি আসলে আপনাকে বেবির..
.
চুপ,আমার রাগ উঠাতে তোমার ভালো লাগে তাই না?
.
না লাগে না,আমি তো বেবি আপুর কথায়.,,
.
কোথায় বেবি,মিথ্যা বলার জায়গা পাও না?
.
শান্ত আহানাকে টেনে ধরলো আরও,কি বলতেছিলে?আমি গাধা?বাঁদর??
.
না আপনি কোনোটাই না,আপনি খুব ভালো
.
শান্ত আহানার হাত চেপে বললো আর কোনোদিন বিনাকারণে আমার রাগ উঠাবা না বুঝছো??
.
হাত ছাড়ুন
.
শান্তর এক হাতে ছিল সিগারেট,সেই হাত দিয়ে আহানার আরেক হাত টেনে ধরলো সে
.
আহানার হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা লাগতেই সে কেঁপে উঠলো
শব্দ করলো না,শান্তর মুখ থেকে চোখ সরিয়ে হাতের দিকে চেয়ে রইলো
কিসের জন্য ব্যাথা পেলো সেটাই ভেবে যাচ্ছে সে
শান্তর হাতেও এবার সিগারেটের ছ্যাঁকা লাগলো
সাথে সাথে সে হাত সরিয়ে দেখলো আহানার হাতে দাগ হয়ে গেছে,নিজেরও যে পুড়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার,তাড়াতাড়ি আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো ওকে
দৌড়ে রাফির কাছে গিয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ একটা নিয়ে আবার ফেরত আসলো,আহানা থ হয়ে বসে আছে
চিৎকার করবে নাকি রাগে শান্তকে কয়েকটা ঘুষি মেরে দিবে সেটাই ভাবতেসে সে,কিন্তু শান্তর এমন কেয়ার দেখে সে কি করবে সেটা ভাবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে
শান্তর চোখেমুখে ভয় আর অপরাধ বোধ কাজ করছে,আহানাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার ইনটেনশান তার ছিল না,তার হাতে যে জ্বলন্ত সিগারেট ছিল তা মনেই ছিল না তার
আহানা চুপ করে শান্তর দিকে চেয়ে বসে আছে
শান্ত হাঁটু গেড়ে বসে আহানার হাত পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে আর কোথাও পুড়ছে কিনা সেটাই দেখতেসে সে
.
তুমি ব্যাথা পেলে বললে না কেন?
তখন বললে আমি হাত ছেড়ে দিতাম,আমি তো টেরই পাইনি পরে আমার হাতে ছ্যাঁকা লাগতেই টের পেলাম
আহানা চোখ বড় করে শান্তর হাতের দিকে তাকালো
শান্ত হেসে বললো তোমার ক্ষতের চেয়েও সামান্য,ছেলেদের এত ব্যান্ডেজ লাগে না
শান্ত উঠে দাঁড়াতেই বেবি এসে গেলো,শান্তর হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো,আহানা পিছন ফিরে ওদের চলে যাওয়া দেখছে
.
এই মানুষটা আমার কেয়ার করতে পিছুপা হয়না আবার ঝগড়া করতেও পিছুপা হয়না,কেমন মানুষ মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না আমি
.
অফিসের কাজ শেষ,সবাই এক এক করে চলে যাচ্ছে,আহানা চোরের মত বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে,শান্তকে কোথাও দেখলো না
হ্যাঁ দেখেছিল ৪৫মিনিট আগে,রাফি স্যারকে বলে বেবির সাথে কোথায় যেন গেছিলো
আহানা আর উপায় না পেয়ে অন্ধকারেই হাঁটা ধরেছে
অফিস এমন একটা জায়গায় অবস্থিত যেখানে গাড়ী কম,মানুষ কম,নির্জন একটা এরিয়া
আহানা দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে হেঁটে যাচ্ছে,পিছন থেকে আলো জ্বালানো কি যেন আসতেসে,বাইকের শব্দ
আহানা হেসে দিয়ে পিছনে তাকালো,নাহ বাইকে তো অন্য কেউ,শান্ত না
আবারও মুখ গোমড়া করে হেঁটে চললো সে,একটা টংয়ে ৭/৮টা ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে,আহানা ভয় ভয় চোখে সেদিকে তাকিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে চলে যাচ্ছে
তার চেয়ে জোর গতিতে একটা বাইক এসে পাশে থামলো
আহানা ভাবলো অন্য কেউ হবে সে হেঁটে চলে যাচ্ছে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে
কেউ যদি উঠে আসে ওকে ধরতে তাহলে এক দৌড় দিবে সে এই ভেবে তাদের দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে
.
এভাবে ছেলেদের দিকে চেয়ে থাকলো ওরা নির্ঘাত তোমাকে ধরতে আসবে
.
কথাটা শুনে আহানা থেমে গেলো,পিছন ফিরে দেখলো শান্ত বাইক থেকে নেমে টংয়ের দিকে যাচ্ছে
.
মুখে এক রাশি হাসি ফুটে উঠলো আহানার,মনে হলো সুরক্ষা পেয়েছে সে,আর কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,হেসে দিয়ে এসে নিজে নিজে শান্তর বাইকে উঠে বসে পড়লো
.
শান্ত চায়ের কথা বলে আহানার দিকে তাকিয়ে হাসলো
.
একটা ছেলে বললো কি ভাই??গফকে একা রেখে কই গেছিলেন?
.
শান্ত সিগারেট একটা ধরাতে ধরাতে আহানার দিকে চেয়ে বললো গফের দোষ,আমার জন্য অপেক্ষা না করেই হাঁটা শুরু করে দিসিলো
ঢাকা শহরে রাতের বেলায় ২মিনিটেই যে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতে পারে তা সে জানে না,হয়ত জানে রাগ করেই অপেক্ষা না করেই হাঁটা শুরু করে দিয়েছিলো
.
তাহলে বড় কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান
.
শান্ত সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ছেলেটার দিকে চেয়ে হাসলো,তারপর চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো ওর যে টংয়েরই চা পছন্দ!!
চলবে♥