প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_২৪

0
2539

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৪
#Writer_Afnan_Lara
?
আহানা নিজেকে সামলাও
আহানা কান্না থামিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে গিয়েও পারলো না,পড়ে যাচ্ছে বারবার
শান্ত আহানার হাত ছাড়েনি এখনও,পিঠের উপর দিয়ে হাত নিয়ে ওকে শক্ত করে ধরলো
আহানা আর শান্ত চুপচাপ হেঁটে চলেছে,দুজনের একজনের মুখেও কোনো কথা নেই
আশ্রমে এসে শান্ত আহানাকে সেই রুমে নিয়ে আসলো,টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এনে আহানার দিকে বাড়িয়ে ধরলো
আহানা পানির গ্লাসটা নিয়ে চুপ করে বসে আছে
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে আশ্রমের রান্নাঘর থেকে এক প্লেট খাবার নিয়ে আসলো
আহানা পানি খেয়ে এখনও কাঁদছে
শান্ত চেয়ার টেনে ওর সামনে বরাবর বসলো,ভাতের লোকমা বানাতে বানাতে বললো যখন আমি কাঁদতাম কিছু খেতে চাইতাম না তখন আমার মা আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো
তুমি বলেছিলা তোমাকে কেউ নিজের হাতে খাইয়ে দেয়নি,চলো আজ আমি খাইয়ে দিব তোমাকে
শান্ত আহানার মুখের সামনে লোকমা ধরলো
আহানা চোখ মুছে বললো নাহ,দরকার নেই,আমি নিজে খেতে পারবো
.
তুমি নিজের হাতে খেতে গেলে কম খাবা,আমি তোমাকে বেশি করে খাইয়ে দিব
শান্ত আহানার মুখে লোকমাটা দিয়ে দিলো
.
আরিফ আঙ্কেল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে,শান্ত একেবারে ওর মায়ের মত হয়েছে,ওর মায়ের ও অন্যের কষ্ট সহ্য হতো না,সবাইকে এমনভাবে ভালোবাসতেন যেন সবাই তার আপন
.
আপনার জ্যাকেটটা!
.
রেখে দাও,ঢাকায় ফিরলে দিও না হয়,আর তোমার ওড়না তো আমি ছিঁড়ে ফেলসিলাম
.
আমার কাছে আরেকটা জামা আছে,তার ওড়না পরবো আপাতত
.
ঠিক আছে
শান্ত আহানাকে পুরো খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে ওকে ঘুমাতে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো
অনেক অনেক কান্না করার ফলে আহানা বালিশে মাথা রাখতেই ঘুম এসে গেলো তার
শান্ত আস্তে করে আবার রুমে এসে লাইটটা অফ করে চলে গেলো
.
আঙ্কেল আমি আসি,কাল তো ঈদ,কাল আবার দেখা হবে নামাজের সময়
.
আচ্ছা বাবা
.
শান্ত চলে গেলো বাসার দিকে,বাসায় ফিরে দেখলো সায়ন ডাইনিং এ বসে খাচ্ছে
বাবা টিভি দেখতেছেন,শান্তকে দেখে ওকে টেনে এনে ডাইনিং এ বসালো
মুরগির লেগ পিসটা শান্তর খুব প্রিয় আর শান্তর বাবারও
শান্তর মা সবসময় একটা মুরগী রাঁধলে লেগ পিস ২টো শান্ত আর তার বাবাকে দিতেন
শান্ত চোখ বন্ধ করে স্মৃতি মনে করে মুচকি হেসে চোখ খুলে দেখলো ওর পাতে মুরগীর অন্য একটা পিস,লেগ পিস বাবার পাতে আর আরেকটা সায়নের পাতে
বাবার এদিকে খেয়ালই নেই,তিনি আশ্রমের কথা বলতেছেন আর খাচ্ছেন
শান্ত চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে আসলো,খালা কফি দিয়ে গেছেন,শান্ত কফিটা নিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আহানার কথা ভাবতে লাগলো
না জেনে ওকে এতদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি,এখন তো মনে হয় আমি ছাড়া ওর পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই,আমার উচিত ওকে আগলে রাখা
কফি শেষ করে সিগারেট নিতেই দরজায় নক হলো
বাবা কোমড়ে হাত দিয়ে এসে শান্তর হাত থেকে সিগারেট নিয়ে নিলেন
.
তোকে মানা করি নাই খাবি না এসব
.
বাবা খেতে দাও না,এটা খেলে শরীর ভালো থাকে আমার
.
শান্ত?এটা কেনো ঔষুধ না ওকে?আমাকে বুঝাতে হবে না,রাত হয়েছে,শুয়ে পড়ো,কাল সকাল থেকে অনেক কাজ
বাবার কথা রক্ষার্থে শান্ত চাদর টেনে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন সকাল সকাল পাঞ্জাবি পরে বাবার সাথে গেলো ঈদের নামাজ পড়তে
আহানা একটা ছোট বাচ্চার সাথে ছোটাছুটি করছে
দৌড়াতে দৌড়াতে একদম শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
শান্ত আশ্রমে এসে এতক্ষণ আহানার দুষ্টুমি দেখতেছিলো
পরনে তার সাদা পাঞ্জাবি,মাথায় টুপি,ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি,হাতে জায়নামাজ
আহানা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত দাঁড়াতে বললো
.
কি?
.
সালাম দিবে না?
.
আসসালামু আলাইকুম
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম
নাও তোমার ঈদ সালামি
.
লাগবে না
.
আরে রাখো রাখো
শান্ত আহানার হাত টেনে ধরে ৫হাজার টাকা ওর হাতের ভিতর ঢুকিয়ে দিলো
আহানা শান্তর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাতে থাকা টাকা গুলোর দিকে তাকালো
.
এত টাকা দিলেন কেন??লাগবে না
.
দিয়ে ফেলেছি কিছু করার নাই,বাই বাই
শান্ত নিমিষেই উধাও,আহানা টাকা গুলোর দিকে চেয়ে মুখ গোমড়া করে চলে গেলো
শান্ত পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে হাফ প্যান্ট আর টি শার্ট পরে নিয়ে দূরের মাঠটায় গোস্ত কাটতে বসে গেলো
.
আহানা আপু চলো না দেখবো
.
না আমার ভয় করে এসব দেখতে,তন্নি তুমি যাও
.
না তোমাকে নিয়েই যাব
তন্নি আহানার হাত টেনে মাঠের দিকে নিয়ে গেলো
এতসব মানুষের ভিড়ে আহানার চোখ পড়লো শান্তর উপর
শান্ত দাঁত কেলিয়ে গোস্ত কেটে যাচ্ছে হঠাৎ দক্ষিনা হাওয়ায় বুকটা কেঁপে উঠতেই সামনে তাকালো সে
আহানা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে,হাসবে কি কাঁদবে বুঝতেসে না,হাফ প্যান্টে শান্তকে যা লাগছে না!!
শান্ত লজ্জায় লাল হয়ে আরেকদিকে ফিরে বসে পড়লো
আহানা ফিক করে হেসে দিয়ে চলে আসলো ওখান থেকে
.
বিকালের দিকে ছাদে এসে বসে আছে শান্ত,এখানে ভালো লাগতেছে না,এত এত সমস্যা এই বাড়িতে
এখন মনে হচ্ছে জব নিতেই হবে তাড়াতাড়ি করে,যাওয়ার সময় আহানাকে সাথে নিয়ে যাব,একা যেতে দিব না
নওশাদ ফোন দিয়ে বকাবকি শুরু করে দিসে শান্ত কেন সকাল থেকে একবারও ফোন করেনি,জানের দোস্ত না ছাই এসব বলে যাচ্ছে সে
শান্ত অনেক করে convince করলো ওকে এটাও বললো যে ঢাকায় ফিরে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবে
আহানা তার সালেহা মায়ের কবরটা ভালো করে পরিষ্কার করে দিচ্ছে,কাল মৃত্যুবার্ষিকী উনার,আহানা নিজের হাতে রান্না করবে
সবাই প্লেট নিয়ে বসে গেছে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য
শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে এদিক ওদিক দেখে সব তদারকি করে যাচ্ছে
আহানার প্লেটটা ওর রুমে রাখা,সে গেছে হাত ধুতে
শান্ত উঁকি দিয়ে দেখলো প্লেটে অল্প গরুর গোস্ত আর আলু আর কিছু নেই
রহিমা খালাকে ডেকে আরেকবাটি গোশত এনে রাখলো পাশে তারপর চলে গেলো
আহানা হাত ধুয়ে এসে বললো ওমা এত গোস্ত আসলো কই থেকে
রহিমা খালা বলে গেছেন উপর পক্ষের কড়া আদেশে বেশি গোস্ত দেওয়া হয়েছে ওকে
.
উপর পক্ষ মানে?
.
রহিমা খালা মুচকি হেসে চলে গেলেন কিছু বললেন না
.
ওমা! এদের সবার হলো টা কি বুঝি না আমি!
.
আহানা বিকালের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সেই ডোবাটার কাছে আসলো
এটা এখন আর ডোবা নেই,পরিষ্কার হয়ে গেছে সব,ঘাট ও লাগানো হয়েছে
আহানা নিচে নেমে ঘাটে বসে ডোবাটার দিকে তাকিয়ে রইলো
.
কেউ যদি বলে তাকে আমি এই ডোবায় আবার ফেলতে পারি!?
.
আহানা চমকে পিছনে তাকালো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে ওর পাশে এসে বসলো
.
তো কি খবর ম্যাডাম?কি ভাবেন?
.
আপনি এখানে কি করেন?
.
আমার ইচ্ছা,তোমার কি?এটা তোমার ডোবা?
.
আপনি কি ঠিক করে কোনো কথাই বলতে পারেন না!
.
নাহ,যেমন তুমিও পারো না,কাল রেডি হয়ে থেকো,একসাথে ঢাকায় ফিরবো
.
আপনার মাথা ঠিক আছে?কাল সালেহা মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী, আমি কাল যেতে পারবো না
.
সেটা তো আমিও জানি,সারাদিন থেকে রাতে রওনা দিবো কেমন?
.
আমি?আপনার সাথে?ইমপসিবল
.
কেন?
শান্ত জ্যাকেট টেনে চোখ মেরে বললো আমাকে কি তোমার ভাল্লাগে না,অবশ্য রতনে রতন চিনে,তুমি আমাকে দেখে ক্রাশিত হবেই বা কেন
.
হুহ!!যান আপনি,আমি একা যেতে পারবো,এসেছিও একা
.
ওহ তাই?তোমার টিকেট আছে তো?ফিরতি টিকেট?
.
আহানা চোখ বড় করে ভাবলো সত্যি তো,আমার কাছে তো ফিরতি টিকেট নেই,আমি তো আসার সময় রিকুয়েস্ট করে একটা সিট পেয়েছিলান
.
কেউ যদি বলে তাকে আমি একটা টিকেটের ব্যবস্থা করে দিতে পারি
.
নো থ্যাংকস!
কথাটা বলে আহানা উঠে চলে গেলো
.
আরে দাঁড়াও,কিভাবে ঢাকা ফিরবে সেটা তো বলো
.
আপনার জানার দরকার নেই
.
উফ!এই মেয়েটা এত নাছোড়বান্দা!!
শান্ত পকেটে হাত ঢুকাতেই চমকে গেলো,পকেট থেকে বের করে দেখলো ৫হাজার টাকা,এগুলো তো আমি আহানাকে দিয়েছিলাম,আবার ফেরত দিলো?টাকা নিলে কি হয় আমি বুঝি না,সবসময় ফেরত দেয়,আর আমার পকেটে টাকা রাখলো কখন আমি তো টেরই পেলাম না
.
পরেরদিন ছোটখাটো আয়োজন শুরু হয়ে গেলো,আহানা নিজের হাতে রান্না করছে,শান্ত আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে মজা করতেসে
আহানাকে সাহায্য করার জন্য রহিমা খালাও আছেন
শান্ত মাঝে মাঝে রান্নাঘরের দিকে এক পলক তাকায়
আহানা ওড়না কোমড়ে বেঁধে রাঁধতেসে মন দিয়ে,প্রতিবছর সালেহা বেগমের মৃত্যুবার্ষিকীতে আল্লাহর ওয়াস্তে আশ্রমের সবার জন্য রান্না করা হয়,এবছর আহানা আছে বলে সে রাঁধতেসে
শান্ত মায়ের কবরটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছে হঠাৎ মনে হলো মা হাসতেসে ওর দিকে তাকিয়ে
শান্ত লুকিয়ে কিছু করলে মা যেমন করে হাসতো এখন তেমন করেই হাসলো
শান্ত চমকে এদিক ওদিক তাকালো মাকে আর দেখতে পেলো না,মাঝে মাঝে এরকম চোখের সামনে মাকে দেখতে পায় সে,মনের ভ্রম!
মা এমন করে হাসলো কেন,আমি তো কিছুু লুকায় নাই
নাকি আহানাকে নিয়ে আমার সাথে মজা করলো
উফ মা তুমিও না,তুমি তো জানো আহানা আমার টাইপের না,আমার মাথায় ও রাগ চেপে থাকে আর ওর মাথায় ও, ওর সাথে কি আমাকে মানাবে,হুদাই হাসলা আর আমাকেও লজ্জায় ফেললা
.
রান্না শেষে সবাই বসে পড়লো খাওয়ার জন্য
শান্ত একটা প্লেট নিয়ে বাচ্চাদের পাশে বসে গেলো
আহানা নিজের হাতে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে
শান্তর সামনে এসে এক চামচ দিতেই ও বললো ঝাল বেশি দাওনি তো?
.
বাচ্চাদের জন্য আলাদা করে কম ঝাল দিয়ে বানানো হয়েছে
আহানা কথাটা বলে চলে গেলো
শান্ত ভাবনায় পড়ে গেলো,আহানা এটা কি বললো?আমি বাচ্চা?ও নিজেই তো বাচ্চা,আমি তো ওর থেকে ৫/৬বছরের বড় আর ও আমাকে বলে আমি বাচ্চা,দেখাবো মজা,আজ পুকুরে চুবাই ওর কটু কথার জেদ উঠাবো আমি
আহানা নিজেও খেতে বসলো সবাইকে খেতে দিয়ে
খাওয়া শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো,দুপুরের ঘুম
বাইরে কড়া রোদ!
আহানা মগে করে পানি নিয়ে বের হলো মুখ ধোয়ার জন্য,রান্না করার সময় ধোঁয়া চোখে মুখে ঢুকে এখন চোখ খচখচ করছে
মুখে পানি দেওয়ার আগেই শান্ত এসে দাঁড়ালো ওর সামনে
.
কি?
.
আমি বাচ্চা?
.
কে বললো?তাই নাকি?
.
চুপ!তোমাকে বলসি না আমাকে নিয়ে মজা করবা না,ঐবার তো ছাদ থেকে ফেলবো বলসিলাম এবার পুকুরে ফেলে দিবো
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরতেই আহানা ভয়ে হাতের মগের সব পানি শান্তর গায়ে মেরে দিলো
শান্ত চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে মুখ মুছতেছে
আহানা এক দৌড়ে পালালো
.
আজ তোমাকে কে বাঁচাবে আহানা!
.
শান্ত ও দৌড় দিলো আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর চলে এসেছে,আশ্রমের বাইরে
আশেপাশে শান্তকে দেখা যাচ্ছে না,উফ বাঁচলাম!
আহানা একটু এগিয়ে দেখতে যেতেই কেউ একজন পিছন থেকে হাত টেনে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
আআপপপপনি এখানে?
.
হুম,আমি,তুমি আমাকে পানি দিয়ে ভিজাইসো না,আমিও ভিজাবো
শান্ত ক্ষেতের কাছে আহানাকে টেনে নিয়ে গেলো
.
এই প্লিস হাত ছাড়ুন,আর কখনও এমন করবো না সত্যি
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে ক্ষেতে থাকা মটর চালু করে দিল
.
আহানা নিজেকে ছাড়ানোর সব চেষ্টা করতেসে
শান্ত এত শক্ত করে আহানাকে ধরেছে যে নিজেকে ছাড়ানো টা তার সাধ্যে নেই
শান্ত আহানাকে টেনে মটরের সামনে দুম করে ফেললো
আহানা হাত দিয়ে মাথা ঢেকে বসে আছে,পানিতে ভিজে অবস্থা টইটুম্বুর
.
প্লিস পানি বন্ধ করেন,আর আপনাকে ভিজাবো না সরি
.
নাহ,আমার রাগ যাওয়ার পর্যন্ত ভিজো
শান্ত ক্ষেতে নেমে একটা খুঁটির সাথে খড়কুটো দিয়ে আহানার হাত বেঁধে দিয়ে আবার উঠে গেলো
.
পাশের একটা আমগাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে
আহানা ব্রু কুঁচকে ওর দিকে চেয়ে হাত খোলার চেষ্টা করছে খুঁটিটা থেকে
.
চড়ের শোধ ও নেওয়া হয়ে যাবে আজ?
.
আপনি খুব খারাপ একটা লোক!!খুব খারাপ,আপনাকে আমি ভালো মনে করেছিলাম
.
হ্যাঁ তাই তো আমাকে মগের পানি দিয়ে ভিজাই দিসিলা??
.
আপনি বলছিলেন পুকুরে চুবাবেন তাই
.
তো?সত্যি কি পুকুরে চুবাইতাম?আমি তো জানি তুমি সাঁতার জানো না
.
বেশি বক বক না করে পানি বন্ধ করেন,আমার মাথা ধরছে
.
একসাথে চা খাবো,মাথা ব্যাথা চলে যাবে
.
শেষে উপায় না পেয়ে আহানা বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি শুরু করে দিসে হাত পা ছড়িয়ে কাদায় ছড়াছড়ি করে ফেলতেসে
.
শান্তর এবার দয়া হলো উঠে এসে পানি বন্ধ করে আহানার দিকে হাত বাড়িয়ে ধরলো
.
নাও উঠো,তোমার শাস্তি শেষ
.
আহানা চোখ রাঙিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মুচকি হেসে দিয়ে শান্তর হাত ধরে টান দিয়ে নিচে ফেললো ওকে,আহানার হাতের বাঁধনও খুলে গেছে ততক্ষণে

আল্লাহ! আমার নাক
.
হিহি?
.
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার,নাক মনে হয় ফেটে গেছে আমার,উহু!!!!
.
আহানা নিচের থেকে হাত দিয়ে কাদা নিয়ে শান্তর সারা মুখে মাখিয়ে দিলো হাসতে হাসতে
.
ছিঃ,এই এসব কি করতেসো,থামো,ইয়াক!
.
আর ভিজাবেন আমাকে?
.
আহানা উঠে গিয়ে মটর আবার চালু করো দিলো,তারপর এক দৌড়ে পালাতে যেতে নিতেই শান্ত উঠে এসে আবার ওর হাত মুঠো করে ধরে ফেললো
.
আমাকে কাদা লাগাইসো,আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব?
.
শান্ত আহানার হাত দুটো চেপে ধরে ওকে দুম করে কাদার সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
কি হলো মিস আহানা,চিৎকার করবেন না
.
আহানা শান্তর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে,শান্তর সাথে পেরে উঠছে না,কি বলবে সেটাও জানে না
.
শেষে শান্ত হেসে দিয়ে হাত ছেড়ে দিলো ওর,দুজনে কাদায় পড়ে ভূত হয়ে গেছে,পানিতে আবার সব কাদা চলে গেছে গায়ের থেকে
.
হইসে আজকের জন্য ফাইট অফ,যাও জামা চেঞ্জ করে আসো, আমিও যাই
শান্ত চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলো
আহানার মন চাচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদা শুরু করে দিতে,এই ছেলেটা এত বেয়াদব কেন!
সে আশ্রমে ফিরে আসতেই দেখলো তন্নি সহ আরও অনেকে কোমড়ে হাত দিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে
.
আহানা হালকা কেশে বললো ঐ আসলে পুকুরে পড়ে গেসিলাম
.
তাই নাকি?তা কে বাঁচালো তোমাকে?তুমি তো সাঁতার জানো না
.
নাহ,কিনারায় পড়ে গেসিলাম তো তাই নিজেই উঠতে পেরেছি
আহানা তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো
ওদের কথার জবাব দেওয়ার মুড নাই,মাথা রাগে চড়গ গাছ হয়ে আছে তার উপর এত মিথ্যা কথা সরাসরি বলা টাফ ব্যাপার
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে