প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_২৩
#Writer_Afnan_Lara
?
ইনজেকশান দেওয়া শেষে ডাক্তার হাসতে হাসতে চলে গেলেন শান্তর অবস্থা দেখে
শান্ত আহানাকে ঝাঁকালো তাও ও চোখ খুলছে না দেখে আরিফ আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললো ওকে বিছানায় শোয়াতে হবে
ওর বাসার এড্রেস জানেন আপনি?আমি তাহলে ওকে ওর বাসায় দিয়ে আসবো
আরিফ আঙ্কেল শান্তর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন তারপর বললেন ওর তো বাসা এটাই
.
এটাই মানে?আরে আমি বললাম ওর মা বাবার বাসার কথা,সেটা কোথায় জানেন আপনি?
.
বাবা আমি তো এটাও জানি না ওর মা বাবা কে,আমি শুধু এটা জানি আহানা এই আশ্রমের অনাথ বাচ্চাদের মধ্যে একজন ছিল,যাকে সালেহা আপা খুব আদর করতেন অন্য অনাথদের মতো করে
আহানাকেও তিনি পড়িয়েছিলেন,তারপর আপার মৃত্যুর পর আহানা এখান থেকে চলে যায়,চলে যায় বলতে যেতে বাধ্য হয় আর কি,তুমি তো জানোই ১৮বছর পূর্ণ হলে এখানে থাকা যায় না
শান্ত বিস্মিত হয়ে আরিফ উদ্দিনের দিকে চেয়ে আছে
তার মানে আহানা!আর আমি ওকে বললাম ও বুঝবে না বাবা মা না থাকার কষ্ট
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে চুপ করে ওকে কোলে তুলে দাঁড়ালো
আশ্রমের একটা ভালো রুমে নিয়ে ওকে বিছানায় রেখে বেরিয়ে আসলো
হাত দিয়ে চুল টেনে চোখ বন্ধ করে নিজেকে কনট্রোল করার চেষ্টা করছে সে
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল,যার বাবা মা থাকে সে একা কেন চাকরি করে ভাত নুন খেয়ে জীবন চালাবে
এখন সব স্পষ্ট হয়ে গেছে
.
বাবা তুমি আহানাকে চিনো?
.
হুম,শুনুন ওর ঠিকমত খেয়াল রাখবেন,আমি যে রুমে রেখেছি ও যেন সে রুমেই থাকে,অন্য কমন রুমে যেতে বলবেন না,আর আপনি যেটা খান সেটা ওকেও খাওয়াবেন,আমি এখন যাই,ডাক্তার ওকে যে ঔষধ দিয়েছে সেটা কিনতে যাচ্ছি,৮টা ৯টার দিকে এসে একবার দেখে যাবো,রহিমা খালাকে বলবেন ওর খেয়াল রাখতে,আর হ্যাঁ বাচ্চাদের আপাতত ঐ পুকুরে যেতে মানা করবেন,আমি কাল লোক এনে পুকুরের আগাছা পরিষ্কার করাবো
.
আচ্ছা বাবা
.
শান্ত আহানার মুখের দিকে একবার চেয়ে চলে গেলো
.
বাসায় ফিরতেই বাবা বললেন কিরে তুই কই ছিলি?আশ্রমে নাকি কাকে সাপে কামড় দিয়েছে?
.
হুম,এখন ঠিক আছে,সাপটা বিষাক্ত ছিল না
.
মিতুর বাবা!আপনি কেন এখনও হুদাই আশ্রমটা চালাচ্ছেন আমি বুঝতেসি না,ওটা বিক্রি করে জমিটাতে চাষাবাদ করলেও ভালো টাকা উপার্জন হবে
.
কি বলতেসো তুমি?? অনাথ বাচ্চাগুলোর কি হবে?
.
যেখান থেকে এসেছে সেখানে চলে যাবে
.
ব্যাস মা!এটা তোমার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি না! এটা আমার মায়ের নিজের,আমার মায়ের এটা,কেউ চোখ তুলেও তাকাবে না,আমার মায়ের বেলায় আমি কারোর কোনো কথা সহ্য করবো না!অন্য সব নিয়ে যা খুশি তাই করো তোমরা
কিন্তু আমার মায়ের সাথে সংযুক্ত কোনো কিছুতেই কেউ নজর দিবা না,বিক্রি তো দূরে থাক
কথা শেষ করে শান্ত নিজের রুমে চলে গেলো
.
দেখলে তো?একেই বলে পেটের ছেলে আর পরের ছেলের তফাৎ,তুমি কিছুই বললে না??আমাকে এত কথা শুনিয়ে গেলো
কি এমন মহাপাপের কথা বলেছি আমি?যেটাতে কোনো লাভ হয় না সেটা রেখে পালন করে কি লাভ?অনাথ এদের রেখে ফ্রিতে খাইয়ে দাইয়ে কি লাভ??
তাও তো আশ্রমটা ভেঙ্গে ফেললে সেই জমিতে লোক ধরিয়ে চাষাবাদ করিয়ে অনেক টাকা পাওয়া যাবে,টাকাটা তো আমাদেরই কাজে লাগবে
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রেণু!চুপ করো,আশ্রমটা শান্তির নামে দলিল করা,শান্তির অবর্তমানে এটা এখন শান্তর নামে হয়ে গেছে যেদিন শান্তর ১৮বছর পূর্ন হয়েছে সেদিনই
শান্তর অনুমতি ছাড়া কিছু করলে পুলিশ ধরবে তোমাকে, আর শান্ত যখন না করে দিয়েছে তুমি নাক গলাচ্ছো কেন?
তোমার আর মিতুর নামে কি আমি সম্পত্তি কম লিখে দিয়েছি??
.
তো?আমার সায়ন?ও কি তোমার ছেলে না?
.
না আমার ছেলে না,ওর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই তাও তো ওকে আমি মিতুর পরিমান সম্পত্তি লিখিত ভাবে দিয়েছি তোমার আকুতিতে
.
খোঁচা দিচ্ছো?
♣
রোজ রোজ এসব করে,এসবের ভয়ে আমি ঢাকা থেকে আসতে চাই না এখানে
উফ!!
শান্ত আলমারি থেকে আরেকটা জ্যাকেট হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে
আহানার জ্ঞান ফিরতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো,পায়ের দিকে তাকালো,লাল হয়ে আছে,সব মনে পড়তেই কেঁপে উঠলো ভয়ে
কপালের ঘাম মুছে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওড়না নেই,শান্তর জ্যাকেট
এটা তো!আমার ওড়না কই
আহানা হাঁটুর উপর থেকে পাজামা টেনে দেখলো ওড়নার ছেঁড়া টুকরা দিয়ে পা বাঁধা
উফ এই লোকটাও না,আমরা নতুন জামার ওড়না ছিঁড়ে ফেললো,এবার আমি কি পরবো জামার সাথে,বেয়াদব কোথাকার!
আহানা বিছানা থেকে নামতেই দেখলো আরিফ উদ্দিন সালেহা বেগমের কবরের উপর থেকে পাতা সরাচ্ছেন
আহানা এগিয়ে গেলো সেদিকে
.
আরে আহানা?তোমার শরীর কেমন এখন?
.
ভালো
আরিফ উদ্দিন আবার নিজের কাজে মন দিলেন
.
একটা প্রশ্ন করবো?
.
হুম বলো
.
আমাকে এই আশ্রমে কে রেখে গিয়েছিল বলবেন?
.
কথাটা শুনে আরিফ উদ্দিন মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললেন তারপর আবারও কাজে মন দিলেন
.
বলুন না,আমি জানতে চাই,আমার মা বাবা কে ছিল?
.
মা রে,আমি চাই না তুই কষ্ট পা,আমাকে জিজ্ঞেস করিস না
.
প্লিস বলুন না,আমি শুনতে চাই,আমি কষ্ট পাবো না,যার জীবনে কষ্টের সাগর আছে তাকে আর নদী পরিমান কষ্টের কি ভয় দেখান
.
আরিফ উদ্দিন পাতা হাত থেকে ফেলে চশমাটা খুলে গায়ের শার্ট দিয়ে মুছতে মুছতে গিয়ে উঠানে থাকা একটা চেয়ারে বসলেন
.
সেদিন আমি আশ্রমের ময়লা ফেলতে গিয়েছিলাম দূরের ডোবাটায়,ময়লা ফেলে ২কদম হাঁটতেই কান্নার আওয়াজে থেমে গিয়েছিলাম,সেখানে গিয়ে পাগলের মত ময়লা হাতাতে হাতাতে একটা পলিথিন পেলাম,ভিতরে রক্ত মাখা একটা শিশু,মেয়ে শিশু,কেঁদেই যাচ্ছে,দেখে মনে হয়েছে সে এই দুনিয়াতে এসেছে ১কি ২ঘন্টা হয়েছে মাত্র,তার মধ্যেই তাকে দুনিয়ার নিষ্ঠুরতম পরিস্থিতিতে ফেলে গেছে তার মা নয়ত বাবা
হয়ত অবৈধ আর নয়ত অন্য কোনো কারণ
আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আশ্রমে ফিরে গিয়েছিলাম তখন আশ্রমে শান্তি মা এসেছিল বাচ্চাদের দেখতে উনি আমার হাতে বাচ্চাটাকে দেখে চমকে উঠলেন আমি কিছু বলার আগেই আমার হাত থেকে তাকে নিয়ে উনি ভিতরে চলে গেলেন,চিৎকার করে বললেন গরম পানি আনতে,বাচ্চাদের কেবিন থেকে দুধের ফিডার এনে তিনি সর্বপ্রথম বাচ্চাটার মুখে খাবার তুলেছিলেন,সেই বাচ্চাটা হলে তুমি
শান্তি মা ডাক্তার কবিরাজ দিয়ে তোমাকে সুস্থ করে ফেলছিলো, কারন সেদিন ময়লা ডোবায় থেকে তোমার অবস্থা অনেক জটিল ছিল,নাকে মুখে পানি ঢুকেছিল
শান্তি মা তোমার নাম দিয়েছিল আহানা ইয়াসমিন
তারা কয়েক বছরের জন্য সিলেটে চলে গেছিলো,শান্তর বাবার চাকরি ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার কারণে
শান্তি মা একজন ম্যানেজার আনলেন,তোমার সালেহা মা
উনাকে বলে গেছিলেন তোমাকে যেন আলাদা ভাবে আদর করে সবসময়,কারণ তোমার মুখটা ছিল চাঁদের টুকরো যেই দেখতো সেই মাশাল্লাহ বলে উঠতো
এমনকি সালেহাকে তোমার পড়াশুনার সব খরচের একটা মোটা অঙ্কের চেক দিয়ে গেছিলেন শান্তি মা
আহারে উনি যদি আজ তোমাকে দেখতো খুব খুশি হতো
সেবার তিনি শেষ বারের মতন তোমাকে দেখেছিল কারণ তোমার যখন ৮বছর তখনই তিনি সিলেট থেকে ফেরেন এবং শয্যাশায়ী রোগী হয়ে,ক্যানসার ধরা পড়ে তার
আগে তিনি প্রতিদিন বিকালে আশ্রম দেখতে আসতেন কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে একদিনও আসতে পারতেন না
এরপর মাত্র ১/২বছরই এই মরণব্যাধির সাথে লড়াই করে তিনি মারা যান,তোমার তখন মনে হয় ১০বছর ছিল
এখন উনি মারা যাওয়ার ১০টা বছর হয়ে গেছে
আহানা চোখ মুছতে মুছতে আশ্রম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে কিছুটা দ্রুতগতিতে হেঁটে যাচ্ছে সে,আরিফ আঙ্কেলের আর কোনো কথা শোনার ক্ষমতা নেই তার
.
তার মা বাবা তাকে এই পৃথিবীতে এনে ভুল করেছিল তাই তাকে ময়লা ফেলার ডোবায় ফেলে চলে গিয়েছিল
সেদিন মরে গেলে আজ এত কিছু হতো না, কেন মরলাম না আমি,কেন!!
আহানা হাঁটতে হাঁটতে শান্তর সাথে ধাক্কা খেলো
শান্ত ফোনের টর্চটা সামনে ধরতেই দেখলো আহানা
চোখের পানিতে সারা মুখ ভিজে আছে ওর
আহানা শান্তকে দেখে আবেগে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো
শান্ত কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না
আহানা চিৎকার করে কাঁদতেসে
.
আমমমাকে আমমমমমাকে আমমমমার!! মা বাবা ডোবায় ফেলে চলে গিয়েছিল,আমি তাদের জন্য দূর্ভাগ্য বয়ে এনেছিলাম
আমাকে ডোবায় ফেলে চলে গেছে তারা
পৃথিবীর আলো দেখার সাথে সাথে ফেলে গেছে আমাকে
আমি সেদিন মরি নি কেন শান্ত!কেন মরিনি,আল্লাহ আমাকে কেন এত কষ্ট দেখানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে,আমি আর কষ্ট নিতে পারছি না শান্ত,আমার দম বন্ধ হয়ে আসে
কেন আমি অনাথ! আমার মা বাবা থেকেও কেন নেই শান্ত?
আহানা কেঁপে কেঁপে কথা বলতেসে
শান্ত হাত উঠিয়ে আহানার পিঠের উপর রাখলো
সে কি বলবে,তার কিছু বলার নেই
আহানার চেখের পানিতে শান্তর জ্যাকেটের ভেতরের টি- শার্ট ভিজে গেছে
খালি মাটির রাস্তা,দুপাশে ঝাউ গাছ,ঘুটঘুটে অন্ধকার,শান্ত চুপ করে আছে, আহানা শান্তর জ্যাকেট টেনে ধরে আবারও কেঁদে দিলো এটা বলতে বলতে যে
আমি আপনার চেয়ে বেশি বুঝি মা বাবা হারার কষ্ট,আপনি তো মা হারিয়েছেন,আর আমি তো কোনোদিন তাদের চোখেই দেখিনি
আপনাকে তো আপনার মা নিজের হাতে খাইয়েও দিয়েছে
আর আমি?আমাকে কেউ কখনও নিজের হাতে খাইয়ে দেয়নি,হামাগুড়ি দিয়ে মাটিতে থেকেও খাবার নিয়ে খেয়েছি আমি! আরিফ আঙ্কেল বলেছে আমাকে
জানেন!আমাকে রক্ত মাখা শরীরে ফেলে গেছে,আমি এতটা খারাপ,আমি অবৈধ সন্তান
আহানা শান্তর জ্যাকেট ছেড়ে মাটিতে বসে পড়লো
হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো
২দিন ধরে ডাক্তার দিয়ে আমার প্রান বাঁচানো হয়েছিল,সেদিন মরে গেলে হতো না?সব চুকে যেতো না?
আহানা জোরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,আর কথা বলতে পারছে না সে
শান্ত দাঁড়িয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে
.
মানুষের দেখাশুনার জন্য মা থাকে,বাবা থাকে,ভাইবোন থাকে,খালা খালু,ফুফু ফুফা,মামা মামি আরও কত কে থাকে আর আমার জন্য কাউকে রাখেন নি আল্লাহ, আমাকে একা ঠেলে দিয়ে লাগিয়ে দিলো নিজের জন্য পরিশ্রম করে জীবন কাটাতে
অনাথদের যে আশ্রমেও সারাজীবন ঠাঁই হয় না,১৮বছর হতে না হতেই বাধ্য হয়েছি এখান থেকে চলে যেতে,সেদিন আমার হাতে ছিল ১০০টাকার একটা নোট
আমি সেই ১০০টাকা দিয়ে অর্ধেক হেঁটে আর অর্ধেক ট্রেনে করে ঢাকায় গিয়েছিলাম,সবাই বলেছিল ঢাকায় গেলে সব পাবো
সব তো পেয়েছি কিন্তু সব তো টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না,এটা তো কেউ বলেনি আমাকে
তারেক রহমানের বাসায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম আশ্রম থেকে বের হওয়ার ২দিন পর,এই ২দিন আমি ফুটপাতে ছিলাম,ফুটপাতের মানুষদের দেখেছিলাম,এক বেলা খেলে আরেক বেলায় পানির ঘটি নিয়ে বসে থাকতো তারা
আর আমি?আমি তো সেই ২দিন এক বেলাও খাবার পাইনি,তাদের থেকে পানি নিয়ে খেয়েছিলাম আমি
বাসা ভাড়া নিয়ে তারেক আঙ্কেলের পরিচিত একজনের মেয়েকে টিউশনি করানো শুরু করছিলাম
এর জন্য আমি তারেক রহমানের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো
তাই তার সমস্ত খোঁটা দেওয়া কথা আমি আজও মুখ বুজে সহ্য করি
advance টাকা নিয়ে তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম সেখান থেকে ১০০টাকা বাঁচিয়ে
ঐ ১০০টাকা দিয়ে আমি শুধু চাল আর নুন কিনেছিলাম
মীম আর কনিকা আপুর পাতিলে রান্না করে ভাত আর নুন দিয়েই আমার জীবন শুরু হয়েছে ২বছর আগে
ঢাকায় পা রেখে সেদিন নিজেকে আমার অনাথের চেয়েও অসহায় মনে হয়েছিল কারন আমার পাশে সেদিন আমার ছায়াও ছিল না,অন্ধকারে কার ছায়া তার সাথে থাকে?
আমি আসলেই বুঝি না,আমি কি দোষ করেছিলাম?আমার মা বাবার কি ক্ষতি হতো সেদিন আমাকে ডোবায় না ফেললে?আমি কি এতই জঘন্য কারণ নিয়ে জন্মেছিলাম?জন্ম হওয়ার সাথে সাথে একটা সন্তানের কাছে সব চেয়ে সুরক্ষিত স্থান হয় তার মায়ের কোল,তাহলে আমার বেলায় উল্টা হলো কেন?
আমার জন্য ডোবা ছিল কেন?ঠিক আছে ফেলে দিয়েছে কি দরকার ছিল আমাকে বাঁচিয়ে রাখার?এসব দেখানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে?
একটা সন্তানের কাছে মা বাবা কি তারা নিজেরাও জানেন না,জানলে এভাবে ডোবায় ফেলতেন না
আমার অনেক নাম,আহানা,অপয়া,অভাগী,অলক্ষী
আর আজ আরেকটা নাম পেলাম “অবৈধ”
আত্নহত্যা মহাপাপ না হলে আমি এই জীবনের মায়া আরও আগেই ত্যাগ করতাম
আমি আর পারছি না এত এত কিছু সহ্য করতে,আমিও তো মানুষ!
আমার সাথেই কেন এমন হতে গেলো?
শান্ত হাতের পিঠ দিয়ে মুখটা মুছে নিচু হয়ে আহানার হাত টেনে ওকে মাটি থেকে উঠালো
চলবে♥
(টিসু সব শেষ,আজ এই পার্ট লিখতে গিয়ে কেঁদেছি অনেক)