প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_১৮

0
2571

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_১৮
#Writer_Afnan_Lara
?
কাল আমাকে নওশাদ একটা শাড়ীও কিনে দেয়নি,ওকে নিয়ে গেছিলাম শাড়ী কিনতে
.
হয়ত হাতে টাকা ছিল না
.
হুম,নে রাখ ব্লাউজ,কাল তাড়াতাড়ি আসিস কেমন?তাড়াতাড়ি আসলে ফুলের শুভেচ্ছা পাওয়া যাবে
.
মানে??
.
ফুল আমাদের গায়ে ছু্ঁড়ে মেরে ওয়েলকাম জানাবে আর কি
আহানা রুপার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো
.
দুম!!!
.
উফ শান্ত তোরে কে কইসিলো রঙ চা খাইতে??কফি বাদ দিয়ে
এখন মাথা ব্যাথার শোধ আমার উপর দিয়া উঠাইতেছিস,এত জোরে কেউ ঘুষি মারে?যা বাসায় ফিরে রেস্ট নে আর কড়া করে কফি বানিয়ে খা যা
শান্ত অপেক্ষা করছে ছুটি হলে যাবে,আহানাকে একটু জ্বালিয়ে তারপর যাবে
.
আহানা ভাবলো কাল ঐ রোড দিয়ে যাওয়ায় ধরে ফেলছিল আমাকে,আজ কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচ দিয়ে যাব,তাহলে গোলায় যাবে,বুঝতে পারবে না আমি কোন রোড দিয়ে যাবো
আহানা কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছটার নিচ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
.
দাঁড়াও!
.
আহানা চোখ বন্ধ করে নিজেকে বেকুব বলতে বলতে পিছনে তাকালো
আপনি?
.
হুম!
.
কি?
.
কিছু না,যাও
আহানা মাথা ঝাঁকিয়ে জোরে হেঁটে চলে গেলো,কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলো,শান্তর চোখ মুখ এমন লাগতেসিলো কেন?
আহানা আবারও ফিরে এসে দেখলো শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে মাথার চুল টানতেসে চোখ বন্ধ করে
আহানা একটু এগিয়ে এসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো কি হয়েছে আপনার?
.
শান্ত চমকে মাথা তুলে তাকালো আহানার দিকে
তুমি যাও নি এখনও?
.
নাহ মানে আপনাকে এমন লাগতেসে কেন,কি হয়েছে?
শান্ত মাথার চুল টেনে ঠিক করে বললো মাথা ধরেছে,সকালে কফি খাইনি,কফি না খেলে আমার শরীর খারাপ করে
.
বাসায় চলে যান
.
হ্যাঁ
শান্ত বাইকে উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,শরীরে মনে হয় কোনো শক্তি নেই
আহানা দেখলো শান্ত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে
আহানা তার ব্যাগটা গাছের শেকড়ের উপরের রেখে শান্তকে বললো ২০টাকা দিতে
.
শান্ত মাথার চুল জোরে টানতে টানতে পকেট থেকে মানিব্যাগ নিয়ে পুরো মানিব্যাগটাই আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
আহানা ২০টাকা নিয়ে মানিব্যাগটা শান্তর হাতে দিয়ে চলে গেলো
শান্ত আহানার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাছের শেকড়ের দিকে তাকালো,ব্যাগ রেখে গেছে তার মানে আবার আসবে
আহানা এক কাপ কফি নিয়ে এসে শান্তর হাতে দিলো
শান্ত খুশি হয়ে সাথে সাথে পাগলের মত গরম গরম কফি খেয়ে নিলো
.
থ্যাংকস!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ওয়েলকাম
আহানা ব্যাগটা নিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত বললো দাঁড়াতে
.
কি?
.
বাইকে উঠো,আমি তোমাকে দিয়ে আসি
.
আহানা ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে বললো নাহ,ধন্যবাদ
ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো সে ওখান থেকে
বুকের ভেতরটা কেঁপেই যাচ্ছে তার
শান্ত মুচকি হেসে হাতটা বাড়িয়ে ধরলো সামনে, কতগুলো ফুল পড়ে ভরে গেছে তার হাত
গাছটা মনে হয় আহানার মত আমাকেও চিনে গেছে তাই তো হাত বাড়াতেই এত ফুল এসে ভরে গেলো
পিউদের বাসা থেকে বেরিয়ে এবার যাব আকাশদের বাসায় কিন্তু একি!সেই ছেলেগুলো এখানেও রিকসা এনে হাজির করেছে,ওরা জানে কি করে আমি এখানেও প্রাইভেট পড়াই
আহানা বাধ্য হয়ে রিকসায় উঠলো,রিকসা আকাশদের বাসার সামনে এসে থামলো
আহানা আকাশকে পড়িয়ে বের হতেই আবার দেখলো সেই রিকসা দাঁড়িয়ে আছে সাথে ছেলেগুলাও
.
আসসালামু আলাইকুম,ভাবী,ভালো আছেন তো??
আহানা চোখ বড় করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো ভাবী?কার? কিসের?
.
ছেলেটা কাশ দিয়ে বললো কিছু না
যান বাসায় যান,আল্লাহ হাফেজ
ছেলেগুলো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো সেখান থেকে
আহানা ভাবতে ভাবতে রিকসায় উঠলো,কিছু তো গড়বড় আছেই!!
.
বাসায় ফিরে ভাত বসিয়ে বই নিয়ে পড়তেসে আহানা
শান্তর কথা মনে পড়ে গেলো,মানুষ ঔষধ না খেলে অসুস্থ হয়ে যায় আর এই ছেলেটা কফি না খেলে অসুস্থ হয়ে যায়,আজব ব্যাপার!
কয়েকমাস আগে আহানা বাসার সামনের উঠানটাই মরিচের বিচি ফেলেছিল,সেখানে গাছ উঠেছে ৩টা,সেই গাছ ৩টার মধ্যে একটাতে মরিচ ধরেছে অনেকগুলো
আজকে উঠানের সেই মরিচগাছটার থেকে আহানা একটা মরিচ এনে ভাত নিয়ে খেতে বসলো,তার হাতে করা গাছের মরিচ,স্বাদই আলাদা,ঝাল নেই কিন্তু ঝাঁঝ আছে
খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে শুয়ে পড়লো সে
.
পরেরদিন সকাল সকাল আবার বের হলো মিষ্টিকে পড়াতে
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো আহানাকে দেখে কফিটা তাড়াতাড়ি শেষ করলো
আহানা মিষ্টিদের বাসায় ঢুকার সময় শান্তর বাসার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেসে তাও ওর দিকে তাকিয়ে
ডাহা মিছা এটা আমি জানি,ফোনে কথা বলার অভিনয় করতেছে?
আহানা কিছু না বলে চুপচাপ ভেতরে চলে গেলো
মিষ্টিকে পড়িয়ে বাসা থেকে বের হতেই আবার শান্ত সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো
.
আপনার শরীর কেমন আছে?
.
ভালো
.
আচ্ছা
আহানা কি বলবে আর ভেবে না পেয়ে আরেকদিকে ফিরে চলে গেলো
শান্ত ও আর কিছু বললো না,আহানার সামনে আসলে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয় না তার

নওশাদ,সূর্য,রিয়াজ আর শান্ত হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে
ইয়েলো স্কোয়াড?
রোডে ৪জনে বের হতেই সবাই হা করে চেয়ে রইলো
নওশাদের বাইকে রিয়াজ উঠেছে আর শান্তর বাইকে সূর্য
৪জনে ভার্সিটিতে এসে কাজে লেগে গেলো
.
আহানা শাড়ীর কুচি ঠিক করতেসে রুপা এর মাঝে ২৪বার ফোন করেছে তাড়াতাড়ি আসতে নাহলে ফুলের শুভেচ্ছা পাবে না
আহানা তাড়াতাড়ি করে কুচি ঠিক করে চুল ছেড়ে দৌড় দিলো
না কোনো মেকআপ, না কোনো স্টাইল
সাদামাটা একটা মেয়ে,গায়ে নীল শাড়ী জড়িয়ে রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে,আহামরি লাগছে না তাও রোডের সবাই ওর দিকেই চেয়ে আছে,কারন ঢাকায় এই বেশে কোনো মেয়েকে তেমন দেখা যায় না,শাড়ী পড়লে অন্তত লিপস্টিক হলেও ঠোঁটে থাকে তাদের কিন্তু আহানা সেরকম কোনো সাজই দেয়নি,তাই সবাই কিছুটা অবাক হয়েই চেয়ে আছে
চুলগুলো যেন ঝিকমিক করতেসে আহানার,কানের দুল গলার সেটটায় ভারী মানিয়েছে তাকে,একটা শপিং মলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো আহানা,একটু দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো গ্লাসে,একটু লিপস্টিক হলে কতই না ভালো লাগতো
মুখটা কালো করে আবারও হাঁটা ধরলো সে
.
দে শান্ত ঝুঁড়িটা আমাকে দে
.
তুই ফুলগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাক,আমি ওকে বললে ঝুড়ির সব ফুল ঢেলে দিবি
.
কিন্তু কার উপর?
.
আরে প্রিন্সিপাল স্যারের উপর,আর কার,তোর রুপার?

যাহহহ কি বলিস!
.
শান্ত নওশাদকে ঝুঁড়িটা দিয়ে ভার্সিটির গেটের দিকে গেলো
আহানা আসতেসে
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো তার
আহানা হেঁটে আসতেসে দূর থেকে,তাকে দেখা যাচ্ছে
গায়ে তার দেওয়া নীল শাড়ীটা,খোলা চুল,আর কিছু না
কোনো সাজ না,তাও শান্ত হা করে চেয়ে আছে তার দিকে
ওওওওওওয়াওও
.
এ্যা?কি?ওওও কি?ওকে?কি বলতেছিস শুনি না,ওকে বললি??
আহানা শান্তর দিকে একবার তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলো
নওশাদ ভাবলো প্রিন্সিপাল স্যার আসছে
সে ফুলের ঝুঁড়ির সব ফুল আহানার গায়ে ঢেলে দিলো
আহানা থেমে গিয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে উপরের দিকে তাকালো,ফুল পড়েই যাচ্ছে,থামাথামি নাই,এক ঝুঁড়ির ফুলের পাপড়ি তো কম না
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে রোবট হয়ে গেছে
নওশাদ চোখ ডলে দেখলো এটা আহানা,ইস! শান্ত!!এটা তোর প্রিন্সিপাল?
বেয়াদ্দপ!এক ঝুঁড়ি ফুল নষ্ট করলি!
শান্তর হুস আসলো এবার,এগিয়ে এসে বললো আমি কি ওকে বলসিলাম?তুই ঢেলেছিস কেন?
.
তুই ওওওওও বলে কি যেন বলছিলি,আমি ভাবলাম ওকে বলেছিস
.
তোর মাথা
.
আরেহ সব ফুল তোমরা নষ্ট করলা?নওশাদ!আমার গায়ে দেওয়ার জন্য কোনো ফুল রাখলে না তুমি
.
না বেবি,কে বললো
নওশাদ উপর থেকে নেমে আহানার সামনের থেকে ফুল কুড়িয়ে রুপার গায়ে মারলো
.
থ্যাংকু☺
.
এক মিনিট,আহানা??
এই শাড়ীটা তো আমি কাল মার্কেটে পছন্দ করেছিলাম,তোর খালা এটা পেলো কই
.
জানি না তো
.
যাই হোক,এরকম হয়ে এসেছিস কেন?একটু লিপস্টিকও দেস নাই,মরা মরা লাগতেসে এদিকে আয়
রুপা আহানার হাত ধরে নিয়ে গেলো
.
শান্ত এখনও ওদিকে তাকিয়ে আছে
নওশাদ ঝুঁড়িটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো আরেক ঝুড়ি ফুল আনতে
শান্ত ঝুড়িটা নিয়ে নওশাদকে বকতে বকতে চলে গেলো
.
রুপা খুব সুন্দর করে আহানার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছে
ব্যাস এবার তোকে খুব সুন্দর লাগছে
.
শান্ত দোকানদারকে ফুলের ঝুড়ি দিয়ে বললো ফুলের পাপড়ি ভর্তি করে দিতে,পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা ছোট্ট মেয়ে হাতে টিপ নিয়ে বিক্রি করতেসে
শান্ত মুচকি হেসে এক পাতা নীল টিপ কিনে নিলো তার থেকে,টিপ পকেটে ঢুকিয়ে আবারও ভার্সিটিতে ফিরে গেলো ঝুড়ি হাতে নিয়ে
.
আহানা আর রুপা ক্যামপাসে দাঁড়িয়ে ভার্সিটির ডেকোরেশন দেখতেসে
শান্ত দূরে দাঁড়িয়ে আহানাকে দেখে যাচ্ছে
.
কিরে ভাই তুই এত কাম চোর হলি কবে থেকে?
স্টেজটা ঠিক করার দায়িত্ব তোর ছিল না?এরকম ড্যাবড্যাব করে ঐদিকে কি দেখস তুই?
নওশাদ পিছন ফিরতে যেতেই শান্ত ওরে ঘুরিয়ে নিয়ে গেলো
চল স্টেজ ঠিক করি
.
আহানা তুই বাইরে থাক আমি ওয়াসরুম থেকে আসতেসি
.
ঠিক আছে
আহানা কি যেন ভেবে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে গেলো,কয়েকটা ফুল নিয়ে কানে গুজলো
লেকের কাছে গিয়ে পানিতে উঁকি দিয়ে নিজেকে দেখে হাসলো সে
হঠাৎ পানিতে শান্তর প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলো
ভয় পেয়ে পিছন ফিরে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো আহানা
.
একটা জিনিস বাকি রয়ে গেছে
.
কি?
.
শান্ত আঙ্গুল উঠিয়ে আহানার কপাল ছুঁয়ে দিলো
.
আহানা কপালে হাত দিয়ে লেকে দেখতে যেতেই শান্ত হাত ধরে আটকালো আহানাকে
তারপর নিজের হাতের ঘড়িটা আহানার সামনে নিয়ে হাত বাঁকিয়ে ধরলো
আহানা স্পষ্ট ভাবে নিজেকে শান্তর ঘড়ির কাঁচে দেখছে,একটা টিপ তার কপালে
.
এটারই কমতি ছিল
.
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো
.
শশী ম্যাম অবাক হয়ে বললেন আজ ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট আর মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের দেখে মনে হচ্ছে হিমু আর রুপা,ছেলেরা হলুদ আর মেয়েরা নীল,বাহ কম্বিনেশনটা নাইসসস!!
.
শান্ত হেসে মাথা চুলকাচ্ছে,আইডিয়াটা তারই ছিল
.
কিরে আহানা টিপ পেলি কই?
.
ঐ আসলে
.
আচ্ছা বাদ দে,চল সিটে বসি,এখন অনুষ্ঠান শুরু হবে
.
আহানা সিটে বসতেই পাশে শান্ত এসে বসে গেলো
আহানা চোখ বড় করে উঠে গেলো সাথে সাথে রুপা আবার ওর হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বললো কি করিস!আর জায়গা পাবি না,চুপচাপ বসে থাক
.
শান্ত ভাই তোমার সখিনা কই?
.
পার্লারে সাজতেসে
.
নওশাদ পানি খাচ্ছিলো,শান্তর কথা শুনে মুখ থেকে পানি সব ফেলে দিলো,ওর কাশি উঠে গেছে,রুপা ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো শান্ত ভাই!
.
আরে আমি কি করবো?অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পথে আর ও এখনও সাজতেসে
.
ভাইরে ভাই যে হারে সাজতে গেছে মনে হয় আজ কারো বিয়া??
.
শান্ত আহানার দিকে একবার এক বাহানায় তাকাচ্ছে
আহানা রুপার সাথে কথা বলতেসে তার খেয়াল নেই তার পাশে একটা মানুষ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে সেই কখন থেকে
.
ওরে রে জরিনা আইসা পড়সে!!
শান্ত চোখ বড় করে পাশে তাকালো,এলিনা নায়িকাদের মত এন্ট্রি নিচ্ছে
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,মনে হয় সে ভার্সিটিতে নয় কোনো বিয়ে বাড়িতে এসেছে,হাতা কাটা ব্লাউজ,যে শাড়ী পরেছে মনে হয় এখনই খুলে যাবে,শান্তর পাশ থেকে রিয়াজকে উঠিয়ে সে বসে পড়লো
.
তোমার পাশে এই মেয়েটা কি করে?তোমার জন্য কি আর জায়গা ছিল না?
বাই দ্যা ওয়ে আমাকে কেমন লাগছে?
.
কিউট
.
আরে আহানা আজকে শাড়ী পরেছে দেখছি,তা তুমি কি ম্যাচিং করে কিছু পরতে জানো না?ব্লাউজ এর রঙ এত হালকা আর শাড়ীর রঙ ঘাড়ো,তোমাকে যে একটা ক্ষেত লাগতেসে জানো তুমি?কোথা থেকে এরা উঠে আসে!স্টাইল বলতে কিছু জানে না এরা!
.
আহানা এলিনার কথায় কষ্ট পেলো তাই চুপচাপ উঠে চলে গেলো ভার্সিটি থেকে
.
এলিনা!কথা সংযত রেখে বলো
.
তো.?এখন এই মেয়েটার জন্য তুমি আমাকে শিখাতে আসবে আমার কেমন করে কথা বলা উচিত?ভুলে যেও না এই মেয়েটা তোমাকে একদিন চড় মেরেছিল
.
আহানা চোখের পানি ধরে রাখার চেষ্টা করতে করতে চলে যাচ্ছে
.
শান্ত উঠে চলে গেলো সেদিকে
.
এলিনা?তুমি নিজেকে কি মনে করো?তুমি বিশ্বসুন্দরি?তোমাকে যে ফকিন্নির মত লাগতেছে তা আমরা কেউ বলেছি?
.
ওহ শাট আপ রুপা!পার্লারের সাজ তোমাদের মত ফকিররা কি করে চিনবে

ওহ রিয়েলি?তুমি এমন ভাব করতেসো যেন তুমি একাই পার্লারে সাজো,আমরা তো জানি না কিছু!
.
আহানা দাঁড়াও!
.
আহানা চোখ মুছে পিছন ফিরে তাকালো
.
কি?
.
সরি
.
কেন?
.
আসলে আমি তোমাকে শাড়ীটা দিয়েছিলাম,আর আমার এটা খেয়াল রাখা উচিত ছিল কাউকে শাড়ী দিলে তার সাথে শাড়ীর অন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও দিতে হয়
.
মানে?আপনি এই শাড়ীটা দিয়েছেন?
.
হুম
.
কিন্তু কেন?আমাকে দয়া দেখাতে কে বলেছিল আপনাকে?কেন দয়া দেখালেন?আমি নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পারি,কারোর কোনো দয়ার প্রয়োজন নেই আমার,শাড়ী পরতেই হবে এমন তো কোনো কথা ছিল না
আমার তো নীল জামা ছিল ওটা পরে আসতাম আমি
আপনাকে কে বলেছে এরকম দয়া দেখাতে!!
লাগবে না আমার কারো দয়া!যে দয়াতে আরও বেশি অপমানিত হতে হয় সে দয়া আমার লাগবে না
আহানা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো
.
শান্তর আজ নিজের উপর খুব রাগ উঠতেসে,কেন আমি শাড়ীর সাথে ম্যাচিং করে একটা রেডিমেট ব্লাউজ কিনে দিলাম না
.
আহানা সোজা বাসায় ফিরে আসলো,গলার সেটটা আর কানের দুল খুলে ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে,শাড়ীটাও খুলে ফেললো সে
আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল!যার এই দুনিয়াতে মা বাবা বলে কেউ নেই তার খালা আসবে কই থেকে
.
সূর্য?তুই শান্তকে দেখেছিস?
.
নাহ তো
.
শান্ত বাসায় ফিরে গেছে মনে হয়,এলিনা আহানাকে যা কথা শুনাইলো ওর গায়ে লাগছে
.
ওর গায়ে লাগছে কেন?নওশাদ?
.
শান্ত আহানাকে পছন্দ করে মেবি
.
হুম আমারও তাই মনে হচ্ছে
.
আহানা মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে পিউদের বাসায় গেলো পড়াতে
রুপা কল করেই যাচ্ছে আহানা রিসিভ করে বললো পরে কথা হবে,আর কিছু বলার সুযোগ দেয়নি ওকে,লাইন কেটে ফোন ব্যাগে রেখে দিলো
বাসায় ফিরে চালের ছোট বালতিটার ঢাকনা খুলে দেখলো ২/৩টা চাল পড়ে আছে,ইস আমি তো একদমই ভুলে গেছিলাম চাল যে শেষ,এখন কি খাব,হাতে তো টাকাও নেই,অবশ্য কাল মিষ্টির মা বেতন দিবেন,কিন্তু সেই ২হাজার টাকা তো তারেক আঙ্কেলকে দিয়ে দিতে হবে,ধুর!!
পানি আর একটা বিসকিট খেয়ে শুয়ে পড়লো সে
পরেরদিন মিষ্টিদের বাসায় আসতেই দেখলো শান্ত আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা চোখ নামিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত গিয়ে পথ আটকালো
.
আহানা সরি,আমি তোমাকে দয়া দেখানোর জন্য শাড়ীটা দিই নাই,আমি জাস্ট চেয়েছিলাম।।।।।
আহানা শান্তকে আর কিছু বলতে দিলো না
মিষ্টিকে পড়াতে চলে গেলো
শান্ত হাত নিয়ে দেয়ালে ঘুষি মারলো একটা
রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেললো,সিগারেট এক প্যাকেট নিয়ে ফ্লোরে বসে সিগারেট খাওয়া শুরু করলো একের পর এক
আহানাকে মিষ্টির মা ২হাজার টাকা দিলেন,সে বাসা থেকে বেরিয়ে হেঁটে বাসায় এসে ভাবলো তারেক আঙ্কেলকে ১৮০০দিব,বাকি ২০০টাকা দিয়ে চাল আর ডাল কিনবো,হুম নাহলে আজ না খেয়ে থাকতে হবে
আগে দেখি ১৮০০টাকা দেখে যদি তারেক আঙ্কেল চিল্লাচিল্লি করে তাহলে বাকি ২০০টাকা ও দিয়ে দিব
.
আহানা ১৮০০টাকা নিয়ে তারেক রহমানের বাসায় আসলো
কলিংবেল চাপতেই তারেক রহমান এসে দরজা খুলে দেখলেন আহানা টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
আঙ্কেল মাফ করবেন, আমার কাছে ১৮০০টাকা আছে,আমি বাকি ২০০টাকা কদিনের মধ্যেই দিয়ে দিব,এগুলা রাখেন এখন আপাতত
.
টাকা? কিসের টাকা,তোমার টাকা তো রফিকুর রহিম দিয়া দিসে,তোমার আর দিতে হবে না
.
মানে?রফিকুর রহিম কে?
.
না ইয়ে আসলে জানি না,আসি বললো তোমার রিলেটিভ
.
দেখুন,আমার কোনো রিলেটিভ নেই,আপনি জানেন আমি অনাথ,তাহলে টাকা কে দিসে?সত্যি করে বলবেন
.
শাহরিয়ার শান্ত নামে একটা ছেলে দিয়েছে
আহানা সাথে সাথে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে,সোজা শান্তর বাসার দিকে গেলো রাগে গজগজ করতে করতে
শান্ত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়ে জুতার ফিতা লাগাচ্ছে সোফায় বসে
আহানা দরজায় নক করতেই বুয়া গিয়ে দরজা খুললো
আহানা বুয়াকে পাশ কাটিয়ে সোজা ভিতরে চলো গেলো
.
শান্ত সোফায় ছিল তখন,আহানাকে দেখে দাঁড়িয়ে বললো কি হয়েছে?
.
আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে আমাকে দয়া দেখানোর?আমি বলেছি?আমি বলেছি আমাকে সাহায্য করুন?
একবার শাড়ী একবার বাসা ভাড়া!!
দান করতে হলে ফুটপাতের লোকদের করেন আমি মানা করসি নাকি?
আমাকে দয়া দেখান কেন?লাগবে না আপনার টাকা
আমাকে সবাই ফুটপাতের মনে করে,একজনে বলে বুয়ার কাজ করতে আরেকজনে আল্লাহর হস্তে টাকা,বস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে
আমি আজ পর্যন্ত নিজের ভার নিজে বহন করে এসেছি,কারোর থেকে কোনো টাকা দয়া হিসেবেও নি নাই
সো প্লিস আমাকে আর এসব দয়া দেখাবেন না
না খেয়ে মরে যাব তাও কারোর দয়া আমি নিব না
আহানা তার হাতের ২হাজার টাকা শান্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো
বুয়া হা করে তাকিয়ে আছে,শান্তর মত রাগী ছেলে এরকম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,মেয়েটা এত কথা শুনিয়ে গেলো তাও কিছু বললো না
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে