#প্রেমের_নাম_বেদনা?
#পর্বঃ২০
#Arshi_Ayat
অর্নি ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে রাদিফ, রিমন,আর আরিয়ান তিনজনে মিলে আড্ডা দিচ্ছে।অর্নি ওদের দেখে স্মিত হেসে বলল
“তোমার কখন এলে?”
রিমন ঘড়ি দেখে বলল
“এইতো দুই অথবা তিন মিনিট হবে।এখন বলো তুমি কেমন আছো?”
“ভালো।তোমরা?”
রাদিফ কিছুটা হেসে বলল
“আলহামদুলিল্লাহ।”
এবার আরিয়ান অর্নিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল
“শালার বিয়ে করছি কিন্তু নিজের বিয়ের দাওয়াতটা এখনো খাইতে পারলাম না।”
রিমন হাসতে হাসতে বলল
“দোস্ত আমরাও কিন্তু বাদ হয়ে গেছি।”
রাদিফ মনমরা করে বলল
“তুইতো বউ পেলি কিন্তু আমি এখনো একটাও পটাইতে পারলাম না।”
রিমনও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“উই আর সেম ব্রো।”
আরিয়ান রাদিফের পিছনে চাপড় মেরে অর্নির দিকে চোখা দৃষ্টিতে চেয়ে বলল
“তোদের আর দুঃখ করতে হবে না।তোরা যাতে মেয়ে পটাতে পারিস সেই জন্য আমি আবার বিয়ে করবো।”
রাদিফ অবাক হয়ে বলল
“কাকে?”
“যাকে আগে করেছিলাম তাকে।”
“আমিন।”
রিমনের আমিন শুনে রাদিফ আর আরিয়ান দুজনই বলল
“ছুম্মা আমিন।”
অর্নি কিছুই বলছিলো না শুধু চুপচাপ শুনছিলো কিন্তু মনে মনে চলছে অন্যকিছু।ওরা তিনজন আরো কিছুক্ষণ বকবক করার পর আরিয়ানের মা সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকলো তারপর সবাই একসাথে নাস্তা করলো।একটুপর চারজনে মিলে একটা মুভি দেখলো।শোয়ার সময় অর্নি এসে আরিয়ানকে বলল
“আমাকে বাড়িতে দিয়ে আয়।”
“কেনো?”
“এখানে তো জায়গা নেই।”
“কে বলছে জায়গা নেই।এত্তো বড় একটা খাটে আমিই শুধু ঘুমাই।তাও আমি মোটা না যে তোর জায়গা হবে না।”
“আমি এখানে শুবো না।”
“বেশি বকবক না করে চুপচাপ শুয়ে পড়।”
“বলছিতো শুবো না।”
আরিয়ান আচমকা হেসে বলল
“অর্নি তুই কি ভুলে গেছিস আমি কি পরিমাণে ঘাড়ত্যাড়া।”
অর্নি আরিয়ানের কথার মর্ম বুঝে ওকে আর কিছু বলল না চুপচাপ একপাশে শুয়ে পড়লো।আরিয়ানও মুচকি হাসি দিয়ে ওর পাশেই শুয়ে পড়লো।
এভাবে একসপ্তাহ চলে গেলো।আরিয়ান অর্নিকে প্রচুর জালাচ্ছে।অর্নি মাঝেমাঝে রেগে ওকে কিল ঘুষি দেয় আবার মাঝে মঝে কিছু না বলে হজম করে নেয়।
আজ সকালে আরিয়ান ভার্সিটিতে গেলো কিন্তু অর্নি শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে গেলো না।আরিয়ান ভার্সিটিতে যাওয়ার পর অর্নিও বের হলো ডিভোর্সের কাগজ পত্র চেক করতে।আজ সাইন করে আরিয়ানকেও ডিভোর্সের কাগজটা দিয়ে দিবে।
আরিয়ান ভার্সিটি শেষ করে এসে ফুলের দোকান থেকে একগুচ্ছ গোলাপ আর দুইটা রজনীগন্ধা কিনলো।তারপর কিছু চকলেট কিনে বাড়ি গেলো।ঘরে এসে দেখে অর্নি রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে ঢুলছে।আরিয়ান টেবিলে ব্যাগ আর ফুল গুলো রেখে ওর সামনে এসে হাটু গেড়ে ওর হাত ধরে বলল
“কি রে তোর কি খারাপ লাগছে?”
অর্নি চোখ খুলে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
“না আমি ঠিকাছি তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।”
“হ্যাঁ বল।”
অর্নি ওর ব্যাগ থেকে ডিভোর্স লেটার টা বের করে ওর হাতে দিয়ে বলল
“নে ধর।আমি সাইন করে দিয়েছি।তুইও করে দিস।”
আরিয়ানের বুকটা ধক করে উঠলো ও তাড়াতাড়ি কাগজটা খুলে দেখলো এটা ডিভোর্স লেটার আর ওতে অর্নির সাইনও আছে।আরিয়ান মুহুর্তেই রেগে গেলো।বসা থেকে নিজেও উঠে দাড়ালো অর্নিকেও দাড় করালো তারপর ওর গালে সজোরে একটা থাপ্পড় দিলো অর্নি থাপ্পড় খেয়ে আরিয়ানের দিকে বিস্ফোরিতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।আর আরিয়ান ডিভোর্স লেটার টা ছিড়ে কুটিকুটি করে বলল
“তুই ভালোবাসার মর্ম ই বুঝিস না।তা নাহলে তোকে যে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি তোর এটা চোখে পড়তো।
” দেখে আমিতো নেহালকে ভালোবাসি তোকে আমি কখনোই ভালোবাসি নি।”
“তুই এখনো নেহালকে নিয়ে পড়ে আছিস।আরে যে চলে গেছে তাকে নিয়ে সারাজীবন পড়ে থাকা যায় না।তোকে এগুলো বলে লাভ নাই তবে এটা শুনে রাখ তুই আমি মরে যাবো তবু তোকে ডিভোর্স দেবো না।”
এই বলে আরিয়ান চোখ মুছে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।অর্নি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর দেখলো টেবিলের ওপর গোলাপ আর রজনীগন্ধা সাথে কিছু চকলেট পড়ে আছে।অর্নি ফুলগুলো হাতে নিলো তারপর বলল
“কেনো এভাবে ভালোবাসিস তুই?আমিতো তোকে ভালোবাসি না।তুই এভাবে আমার সাথে ভালো থাকবি না।”
অর্নি কাউকে কিছু না বলে নিজের বাড়ি এসে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
একটু পর কে যেনো এসে দরজা ধাক্কা দিতেই অর্নি ঢুলুঢুলু চোখে দরজা খুলতেই রাদিফ চোখ মুছতে মুছতে বলল
“এখন তো তুমি খুশী তাই না?”
অর্নি অবাক হয়ে বলল
“কি হয়েছে বলবে তো।”
“কি আর হবে যাকে দেখতে পারো না সে চলে গেছে বহুদূরে।”
রাদিফের কথা শুনে অর্নির ঘুম পুরোপুরি উবে গেলো।অর্নি রাদিফকে জোরে জোরে ঝাকিয়ে বলল
“কি বলছো তুমি?”
“আরিয়ান আর নেই।এক্সিডেন্ট করেছে।যাও নিচে লাশটা রাখা আছে।ভালো না বাসলেও শেষবারের মতো একটু দেখে আসো।”
অর্নি ভিষণ জোরে একটা চিৎকার দিয়ে সিড়ি দিয়ে দৌড়াতে।তাড়াহুড়োয় নামতে গিয়ে নিজেও সিড়ি থেকে পড়ে গেলো।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)