#প্রেমের_নাম_বেদনা?
#পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat
হঠাৎ কিছু একটা শব্দ হওয়ায় পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলো ওর মা খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আরিয়ান মা কে দেখে তার সামনে এসে দাড়ালো।ওর মা খাবারের প্লেট টা টেবিলের ওপর রেখে বলল
“খেয়ে নে।”
“আমার ইচ্ছে করছে না।”
“ওই মেয়েটার জন্য এখন তোর কষ্ট হচ্ছে কেনো যে ওকে আমি তোর সাথে বিয়ে দিলাম!!সব আমারই দোষ।”
“না মা তোমার দোষ না এটা হওয়ার ই ছিলো।”
“থাক তুই ওকে ভুলে যা দেখিস তোর কপালে আরো ভালো মেয়ে আসবে।”
আরিয়ান কিছু বলল না কারণ আর কি বলবে সবাই এই একই শান্তনা দিবে।আরিয়ানের মা রুম থেকে চলে গেলো আর ও আবার বারান্দায় দাড়িয়ে রইলো।
এভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।আরিয়ান আগের মতো নেই।খুব চুপচাপ থাকে রিমন,রাদিফ ওদের সাথেও খুব একটা কথা বলে না প্রয়োজন দু একটা এর বেশি না।হঠাৎ একদিন সকালে আরিয়ান আনমনে হাটছে রাস্তা দিয়ে হঠাৎ কে যেনো ওকে ধাক্কা দিয়ে সাইডে সরিয়ে দিলো তারপর ওর কাঁধ ধরে বলল
“আর একটু হলেই তো গাড়ির নিচে চাপা পড়তে।এখন ঠিকাছো তুমি?”
আরিয়ান নেহালের কথার জবাব না দিয়ে আবার হাটা শুরু করলো।পিছন থেকে অর্নি এসে নেহালের পাশে দাড়িয়ে বলল
“কি বলল ও?”
“কিছুই না অসাবধানে হাটছিলো এখন ধাক্কা না দিলে এক্সিডেন্ট করতো।”
“হুম ও জানি কেমন হয়ে গেছে।”
“ভালোবাসা এমনি যার চলে যায় সেই বোঝে বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা।”
অর্নি কিছু বলে নি।এভাবে একমাস চলে গেলো।আগের মতো কিছুই ঠিক নেই।তবে নেহাল আর অর্নি প্রেম ভালোই চলছে।ফাইনালের মাত্র আর একদিন বাকি।ফাইনালের পর আরিয়ানের সাথে ডিভোর্স হয়ে যাবে তারপর নেহালের সাথে বিয়ে!!!
কাল অনার্স ফাইনাল।সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে।আরিয়ানও পড়ছে।হঠাৎ মনে হলো কেউ ওর চুল টান দিলো।আরিয়ান ‘আহ’করে পিছনে তাকাতেই দেখে অরি দাড়িয়ে আছে।অরি হলো আরিয়ানের খালাতো বোন।অরি কে দেখে আরিয়ান খুশী হয়ে বলল
“কি রে কেমন আছিস?”
“এইতো ভালো তুমি কেমন আছো ভাইয়া?”
“এইতো ভালোই।এবারতো সেকেন্ড ইয়ার তাই না?”
“হুম।আর তোমার তো অনার্স শেষ। আহা!!কি শান্তি!!”
“আসছে শান্তির মা। কচু শান্তি অনার্সের পর মাস্টার্স কি তোর বাপে পড়বো?”
অরি হাসতে হাসতে বলল
“বাপে পড়বো কেন তুমি পড়বা।
“সেটাই।এখন বল আসার পর থেকে কিছু খেয়েছিস?”
“নাহ!!এসেই ফুপির সাথে দেখা করে
তোমার সাথে দেখা করতে আসছি।”
“আচ্ছা যা এখন কিছু খেয়ে নে।
” হুম যাচ্ছি কিন্তু তোমাকে এমন কবির সিং এর মতো লাগছে কেনো?”
“কি বলছিস কবির সিং এর মতো লাগবে কেনো?”
“না ওর মতো চুল দাড়ি রেখেছো তাই।”
“আরে চুল দাড়ি কাঠা হয় না অনেকদিন ধরে।আজকে কাটতে হবে কালকে পরীক্ষা তো।এখন তুই যা।
” আচ্ছা।”
অরি চলে গেলে আরিয়ান আবার পড়তে বসলো।একটুপর ওর মা এসে বলল
“কি রে অরি কে কেমন লাগে তোর?”
“ভালোই তো ও আবার খারাপ ছিলো কবে?”
“আরে আমি সেটা বলছি না।”
“তাহলে?”
“মানে ওর সাথে তোর বিয়ে….”
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই আরিয়ান বলল
“মা তুমি এসব কি বলছো?আমি একজন কে ভালোবাসি আমি পারবো না আবার অন্য কাউকে ভালোবাসতে তাছাড়া ওকে আমি ছোট বোন হিসেবে ভালোবাসি কিন্তু এর বেশি কিছু না।”
“তুই বুঝতে চাইছিস না কেনো জীবন এক জায়গায় থেমে থাকে না।ওই মেয়েটা তো সুখেই আছে কিন্তু তুই মাঝখানে কষ্ট পাচ্ছিস।আমি তোকে এভাবে দেখতে পারবো না।”
“মা আমাকে মাফ করো আমি পারবো না।”
এটা বলেই আরিয়ান উঠে ছাদে চলে গেলো।তারপর ফোন বের করে অর্নির ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ কে যেনো ওর হাত থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিলো।আরিয়ান পাশে তাকিয়ে দেখলো অরি ওর ফোন নিয়ে অর্নির ছবিটার দিকে বলল
“এটা কি আমার ভাবি?”
আরিয়ান একটা মলিন হাসি দিয়ে বলল
“হ্যাঁ কিছুদিনের জন্য।”
“মানে?”
আরিয়ান অরিকে সব খুলে বলল সব শুনে অরির প মন খারাপ হয়ে গেলো তারপর শান্তনার স্বরে বলল
“থাক ভাইয়া মন খারাপ করো না।তোমার জন্য যেটা উত্তম সেটাই হবে।”
“হুম।আচ্ছা আমার কথা বাদ দে।তোর কথা বল।”
“আমার কথা কি বলবো বলো খাই দাই ঘুমাই টাইপ জীবন আমার প্রেমেই পড়ি নাই।”
“তুই ই ভালো আছিস।”
পরেরদিন সকাল ৯.০০ টা..
আরিয়ান পরিক্ষা দেওয়ার জন্য রওনা হলো।অর্নিও আর নেহাল ওরা ও আসলো।আরিয়ান ভার্সিটিতে ঢুকতেই ওদের দুজনকে একসাথে দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তবুও কোনোমতে পরীক্ষার হলে গিয়ে বসলো তারপর পরীক্ষা দিয়ে কারো সাথে কোনো কথা না বলেই বেরিয়ে এলো।এভাবেই ওদের অনার্সের পরীক্ষা গুলো হয়ে গেলো।তাই এখন আর আরিয়ান অর্নিকে দেখতে পায় না।
পরীক্ষা শেষ হলো আজ ছয়দিন।অরিও চলে গেলো।আজ সপ্তম দিন আজ একটা স্পেশাল দিনও তবে ওটা আরিয়ানের জন্য না নেহালের জন্য।আজ অর্নির জন্মদিন।আরিয়ানের মনে আছে যে আজ ওর জন্মদিন কিন্তু ও উইশ করবে কি না এটা নিয়ে দ্বিধায় আছে।শুয়ে শুয়ে এটাই ভাবছিলো আরিয়ান কিন্তু হঠাৎ ওর ফোনে একটা মেসেজ এলো।অর্নির মেসেজ ছিলো।মেসেজে লিখা
“আজ বিকেলে বাসায় আসিস।মা ডেকেছে।প্লিজ আসিস।”
আরিয়ান বিকেলে গেলো।ওকে দেখে অর্নির মা এসে বলল
“কেমন আছো?”
“ভালো।আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।যাও বসো।আজতো অর্নির বার্থ ডে তাই পর ফ্রেন্ড রাও আসবে।”
আরিয়ান গিয়ে বসলো।ওদের ক্লাসের অনেকেই এসেছে।অর্নিও ছিলো কিন্তু নেহাল ছিলো না।অর্নি এসে আরিয়ানকে বলল
“কেমন আছিস?”
“তুই আগে বল তুই কেমন আছিস?”
“ভালো।”
“তাহলে আমিও ভালো।”
“মানে?”
“বুঝবি না বাদ দে।নেহাল কই?”
“ও আসছে।”
“ওহ!আচ্ছা।”
একে একে সবাই এলো কিন্তু নেহালের দেখা নেই এখনো কিছুক্ষণ পর অর্নির ফোন বেজে উঠলো অর্নি রিসিভ করলো
“কিহ!!পুলিশ নিয়ে গেছে।আচ্ছা আমি আসছি।”
এই বলে অর্নি ছুটে বেরিয়ে গেলো।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)