প্রেমের নাম বেদনা পর্বঃ১৫

0
1487

#প্রেমের_নাম_বেদনা?
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat

“কি বলছিস তুই এগুলো?মাথা ঠিকাছে তোর?” (অর্নি)

“আমার মাথা ঠিকই আছে।বিশ্বাস না হলে তোর মাকে ডাক আমাদের বাসায় আর এখনি বাসায় চল সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”(আরিয়ান)

অর্নি নেহালের দিকে তাকিয়ে বলল

” বিশ্বাস করো আমি এগুলোর কিছুই জানি না।আমাদের বিয়ে হলো কবে আমি তাও জানি না।”

“রিল্যাক্স বলল আর হয়ে গেলো এমন না। আরিয়ান যা বলছে তা করো দেখি কোনটা সত্যি।”

অর্নি ফোন দিয়ে ওর মা’কে আরিয়ান’দের বাসায় যেতে বলল।তারপর তিনজনই ক্লাস না করে আরিয়ান’দের বাসায় রওনা দিলো।

তিন জন বাসায় পৌছাতেই দেখে অর্নি আর আরিয়ান দুজনই বসে আছে।অর্নিকে আসতে দেখে ওর মা বলল

“কি রে এখানে আসতে বললি কেনো?”

“মা এখন যা বলবো তার উত্তর দিবে হ্যাঁ অথবা না।”

অর্নি আর আরিয়ানের মা দুজনই ঘাবড়ে গেলো কি বলবে এমন!!অর্নি আবার বলল

“মা আমার আর আরিয়ানের নাকি বিয়ে হয়েছে?”

“আসলে..”

“কিচ্ছু শুনতে চাই না।হ্যাঁ অথবা না?”

“হ্যাঁ।তোদের বিয়ে খুব ছোটবেলাই হয়েছে। আমরা খুব শখ করে দিয়েছি।”

অর্নি কান্না করতে করতে বলল

“কেনো মা?আমিতো আরিয়ানকে ভালোবাসি না আমি নেহালকে ভালোবাসি।আরিয়ানও তো আমায় ভালোবাসে না।”

“বাসি।”

আরিয়ানের কথা শুনে ওর দিকে সবাই তাকালো।আরিয়ান আবার বলল

“হ্যাঁ আমি তোকেই ভালোবাসি।”

অর্নি দৌড়ে আরিয়ানের সামনে গিয়ে বলল

“ক..কি বলছিস ত.. তুই?”

“বাসতাম না কিন্তু এই কয়দিন ধরে আমি তোকেই ভালোবাসি। পারবো না আমি ছাড়তে তোকে।”

“তুই তো জানিস ভালোবাসা জোর করে হয় না।আমি তো তোকে ভালোবাসি না।”

“ভালোবাসতে তুই বাধ্য।ইউ আর মাই লিগেল ওয়াইফ।”

তারপর নেহালের দিকে তাকিয়ে আরিয়ান বলল

“ব্রো এবার শুনলে তো।তাহলে এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো?চলে যাও।আর ওকে ভুলে যাও।”

নেহাল অসহায় দৃষ্টিতে অর্নির দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।আরিয়ান অর্নির মা কে বলল

“আন্টি ও আজ থেকে এখানেই থাকবে।বিয়ে হয়ে গেছে তো মেয়ে বাবার বাড়ি থাকবে কেনো?”

অর্নির মা খুশি হয়ে বলল

“ঠিকাছে তবে বিয়ে অনুষ্ঠানটা হয়ে গেলে ভালো হতো না?”

“হ্যাঁ ওটা ফাইনালের পর।”

এবার আরিয়ানের মা বলল

“তাহলে ও ততদিন ওইবাড়ি থাকুক।”

আরিয়ান অর্নির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল

“আচ্ছা কিন্তু প্রতিদিন ভার্সিটি আমার সাথেই যাবে।”

অর্নি কিছুই বলল না কাদতে কাদতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে এলো।তারপর দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলো।
আর নেহাল বাসায় না ফিরে লেকের পাড়ে বসে রইলো।

এই পাঁচ দিন ধরে অর্নি আরিয়ানের সাথে আসছে আর যাচ্ছে।একপলকের জন্যেও নেহালের সাথে কথা বলতে পারে নি।অর্নি আরিয়ানকে প্রচন্ড ঘৃণা করে।নেহালও এখন চুপচাপ কারো সাথেই কথা বলে না।

আজ ষষ্ঠ দিন..

অর্নি ক্লাস শেষে ওয়াশরুমের কথা বলে লাইব্রেরিতে গেলো নেহালের সাথে দেখা করতে।গিয়ে দেখে নেহাল হেড ডাউন করে বসে আছে।অর্নি আসতে আসতে গিয়ে ওর কাঁধ স্পর্শ করলো।কারো স্পর্শ পেয়ে নেহাল চোখ তুলে তাকিয়ে অর্নিকে দেখে সোজা দাড়িয়ে পড়লো।তারপর অর্নিকে এক ঝটকায় জড়িয়ে ধরে বলল

“কি করবো বলো?আমি পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।”

“আমিও পারছিনা।”

এরমধ্যেই আরিয়ান এসে পড়লো লাইব্রেরিতে তারপর অর্নির সামনে এসে বলল

“তুই এখানে কেনো?এখনি চল।”

এই বলে ওর হাত টেনে নিয়ে যেতে নিলেই ও হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে ফেলে তারপর বলে

“আমি যাবো না।তুই কেন বুঝিস না আমি তোকে ভালোবাসি না।তুই বাধ্য করলে আমি তোর সাথে থাকবো কিন্তু কখনো ভালোবাসতে পারবো বা।আই হেট ইউ আরিয়ান।”

আরিয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ থেকে এক ফোটা পানি ফেলে আবার অর্নির দিকে তাকিয়ে বলল

“আচ্ছা যা তোকে মুক্তি দিলাম কারণ আর যাই হোক ভালোবাসার মানুষের চোখে ঘৃণা দেখা যায় না।তুই ওর সাথেই ভালো থাক।আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।তবে ফাইনালের পর।”

এই বলে আরিয়ান চলে গেলো আর অর্নি আবার নেহালকে জড়িয়ে ধরলো।

এদিকে আরিয়ান বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে রাদিফ আর রিমনকে কল দিয়ে আসতে বলল।ওরা আসার পর দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলল

“সব শেষ।”

“কি হয়েছে বলবি তো।” (রিমন)

“কাদিস না আগে বল।” (রাদিফ)

“আমি ওকে নিজের কাছে রাখতে পারি নি।ও আমাকে ভালোবাসে না ঘৃণা করে।”

“আল্লাহ কার কপালে কখন কি লেখে কেউ জানে না।তুই কাদিস না প্লিজ তোর জন্য আর ভালো কিছু অপেক্ষা করছে হয়তো।”(রিমন)

” কিন্তু আমি যে ওকে ভালোবাসি।”

“ভুলে যা।” (রাদিফ)

“ভুলে গেলে শান্তি পাবি।”(রিমন)

“ভুলতে পারবো না আমি।তোরাই বল একটা মানুষকে ভালোবাসলে ভোলে কিভাবে?”

এই প্রশ্নের উত্তর ওরা কউ দিতে পারলো না।সত্যিই ভালোবাসার মানুষকে কখনোই ভোলা যায় না।

রাদিফ আর রিমন অনেক্ষণ শান্তনা দিয়ে চলে গেলো।

রাত ১১.০০ টা..

খোলা জানালা দখিনের বাতাসে
ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে
তখন তুমি এসে হেসে
বলে দাও, আছি তোমার পাশে
বহুদূর পথ ভীষণ আঁকাবাঁকা
পথ চলতে ভীষণ ভয়
তুমি এসে বলে দাও, আছি আমি পাশে
করোনা কিছুতেই ভয়
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে
অনেক পথের পথিক আমি ক্লান্তি সর্বশেষ
তোমার পথের ঠিকানা খুজে আমি আজ অবশেষ
তুমি আমার প্রথম ও শেষ জীবনের ভালোবাসা
তোমার মাঝেই তাইতো আমার জীবনের শত আশা
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে
সাদা আকাশে মেঘের ভেলা
রচে রঙের মেলা
কখনো কালো কখনো নীল
কখনো বা ধূসর সাদা
আমার আকাশ জুড়ে ছিল
তোমারই রঙের মেলা
সাদার মাঝে কালো বসিয়ে
তোমারই বিদায়ের পালা
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবেনা
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে
খোলা জানালা দখিনের বাতাসে
ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে

আরিয়ান বারান্দায় দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছিলো আর গান গাইছিলো হঠাৎ কিছু একটার শব্দ হওয়ায় পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলো…

চলবে..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে