প্রেমের নাম বেদনা পর্বঃ১০

0
1550

#প্রেমের_নাম_বেদনা?
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat

বাসায় এসে যে যার ঘরে গেলো তৈরি হতে।এরমধ্যেই অনেক মেহমান আসতে শুরু করেছে।অর্নি ফ্রেশ হয়ে এসে হলুদ ভারী স্টোনের একটা লেহেঙ্গা পরলো সাথে অর্নামেন্টস আর হালকা সাজ দিয়ে আরিশা আপুর রুমের দিকে গেলো।আরিশা রুমে বসে ওর বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে।অর্নি আরিশার পাশে বসে বলল

“মাশাল্লাহ আপি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”

“তোমাকে ভাল্লাগছে।” আরিশা হেসে বলল।

দ্রুত পায়ে রুমি এসে বলল

“অর্নি আপি আরিশা আপিকে নিয়ে আসো।স্টেজে বসাতে হবে।”

বলেই রুমি সুড়ুৎ করে চলে গেলো।তারপর অর্নি আর আরিশার বান্ধবীরা ওকে নিয়ে স্টেজে বসালো।

এদিকে…

“দোস্ত তোকে একটা কথা বলবো।”(রাদিফ)

বডিস্প্র দিতে দিতে আরিয়ান বলল

” হ্যাঁ বল।”

“অর্নি তোকে ভালোবাসে।”

আরিয়ান চমকে পিছনে ফিরে বলল

“কি বললি?”

এবার রিমন ওর পিঠে হাত রেখে বলল

“হ্যাঁ, রাদিফ ঠিকই বলেছে।”

“কিন্তু কিভাবে সম্ভব?ও তো নেহাল কে…

” না ও তোকে ভালোবাসে।”(রাদিফ)

“তোরা কিভাবে জানলি?” (আরিয়ান)

“আমি যখন অর্নিকে মেলায় যাওয়ার জন্য ডাকতে গিয়েছিলাম তখন ও ফোনে বর্ষাকে বলছিলো’জানিস আজ আরিয়ান আমাকে ট্রুথ ডেয়ার খেলার সময় প্রপোজ করেছিলো।ওইপাশ থেকে বর্ষা কি বলল জানি না কিন্তু ও বলল নেহালকে আমি ভালোবাসি না ও আমার আকর্ষণ ছিলো কিন্তু আরিয়ানকে আমি ভালোবাসি জানি না ও কবে বুঝবে।”

রাদিফের কথা শুনে আরিয়ান চিন্তিত মুখে বলল

“সত্যিই কি ও এটা বলেছিলো?”

“হ্যাঁ এগুলোই বলেছিলো।আচ্ছা ও যদি তোকে ভালোই না বাসতো তাহলে নাগরদোলায় তোকে ওইভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো কেনো?তারপর তোকে নিজের হাতে ফুচকা খাওয়ালো কেনো?তোর হাতে নাকফুল পরলো কেনো?এগুলো কি নেহালের সাথে করেছিলো?না করেনি তাহলে তুই বল কাকে ভালোবাসে।” (রাদিফ)

রাদিফ থামার পর রিমন বলল

“আবার তোর সাথে কাপল ডান্সেও রাজি হয়ে গেলো দেখলি!!যদি ও নেহালকে ভালোবাসতো তাহলে জীবনেও রাজি হতো না।”

আরিয়ান চিন্তিত মুখে বলল

“হুম ব্যাপারগুলো ভাবাচ্ছে।”

তারপর রুম থেকে বেরিয়ে স্টেজের দিকে এগুতে লাগলো।

এদিকে রাদিফ রিমনের কাঁধে হাত দিয়ে বলল

“আল্লাহ ই জানে এই মিথ্যাগুলো তে কোনো কাজ হয় কি না?”

“হুম কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে।চল এখন বাইরে চল দেখি ওরা কি করে।”

আরিয়ানকে স্টেজের দিকে আসতে দেখে অর্নি এগিয়ে এসে বলল

“বাহ!!দারুণ লাগছে তোকে।”

আরিয়ান হাসলো

“তোকে কম লাগছে কোথায়?”

প্রত্তুত্তরে অর্নি হাসলো।আর আরিয়ান অর্নিকে দেখছিলো আসলেই কি এই মেয়েটা ওকে ভালোবাসে?

পিছন থেকে রিমন এসে আরিয়ানের কাঁধে হাত রাখল আর বলল

“দোস্ত তোর সাথে কথা আছে।”

“কি বলবি বল।”

“এখানে না একটু সাইডে আয়।”

রিমন আরিয়ানকে নিয়ে সাইডে গেলো আর এই সুযোগে রাদিফ অর্নির কানে কানে বলল

“অর্নি আরিয়ান একটা বিপদে পড়েছে।”

অর্নি ভ্রুকুচকে বলল

“কি বিপদ?”

“ওই যে রুমি মেয়েটা আরিয়ানকে প্রচুর জালাচ্ছে ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।তুমি প্লিজ ওর আশেপাশে থাকলে মেয়েটা আর এমন করবে না।”

“ঘুরঘুর করলে সমস্যা কি?”

“সমস্যা হলো ও ওই মেয়েটাকে দেখতে পারে না।তাই প্লিজ ওর এই সাহায্যটা করো ওর বন্ধু হয়ে পারবে না এটা করতে?”

অর্নি একটু ভেবে বলল

“ঠিকাছে চেষ্টা করবো।”

রাদিফ হেসে বলল

“ধন্যবাদ।”

এদিকে রিমন আরিয়ানকে বলল

“একটা পরীক্ষা করলেই তো হয় ও তোকে ভালোবাসে কি না?”

আরিয়ান ভ্রুকুচকে বলল

“কি পরিক্ষা?”

“শোন ও যদি তোকে ভালোবাসে তাহলে দেখবি আজকে পুরো অনুষ্ঠানে ও তোর আশেপাশে ঘুরঘুর করবে।”

“আচ্ছা দেখি কি করে?যদি সত্যি ঘুরঘুর করে তাহলে বুঝবো তোরা ঠিকই বলেছিস।”

“ওকে।”

কথা শেষ করে আরিয়ান স্টেজের দিকে গেলো আরিশাকে হলুদ লাগাতে।সব বড়রাদের পর এখন ছোটদের পালা।আরিয়ান হলুদ লাগাতে বসার পর রুমি আরিয়ানের পাশে বসতে নিলেই অর্নি বসে পড়লো।রুমি অর্নির পাশে বসে রিমনকে চোখ মারলো আর রিমন হাই ফাইভ দিলো।রিমন দৌড়ে গিয়ে রাদিফকে বলল

“দোস্ত কাজ হয়ে গেছে।রুমি আরিয়ানের পাশে বসতে পারে নাই তার আগেই অর্নি বসেছে।”

রাদিফ খাওয়া রেখে উচ্ছল কন্ঠে বলল

“এখন হবে মজা।আল্লাহ শেষ পর্যন্ত রুমিকে রাজি করাতে পেরেছি ও রাজি না হলে প্ল্যানটা সাকসেস হতো না।”

“হুম।এখন যে করেই হোক আরিয়ানের মনে প্রেমের ফুল ফোটাতে হবে।”

“হুম কিন্তু আরেকটা কাজ করতে হবে।”

“কি?”

“যে ভিডিও গুলো করেছি আজ রাতে এটা নেহালকে মেইল করে দিবো।তাগলেই কেল্লাফতে।”

“হুম এটা ঠিক বলছিস।এখন চল হলুদ লাগানো বোধহয় শেষ।ওদের এখন কাপল ডান্স করতে বলবো।”

“হুম।আর তুই এটা ভিডিও করবি।”

রিমন আর রাদিফ দুজনে স্টেজের কাছে এসে দেখলো আরিয়ান এক কোণায় দাড়িয়ে মোবাইল চালাচ্ছে আর অর্নি বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।রিমন গিয়ে আরিয়ানকে বলল

“ওই চল কাপল ডান্স দিতে হবে অর্নি ডাকছে।”

“আচ্ছা আসছি।”

এদিকে রাদিফ অর্নিকে বলতেই অর্নি ও এলো।রাদিফ”duniya” গানটা ছাড়লো আর অর্নি আর আরিয়ান ডান্স দেওয়া শুরু করলো।সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।অর্নি আর আরিয়ান অনেক কাছাকাছি।আরিয়ান অর্নিকে দেখছে আর ভাবছে নাহ!!মেয়েটা সত্যিই আমাকে ভালোবাসে ওকে ভালোবাসা যায়।এটা বলে একটা মুচকি হাসি দিলো।

কিছুক্ষণ পর ওদের নাচ শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিলো আর দুজনেরই মা প্রশান্তির হাসি দিলো।এদিকে রিমন আর রাদিফ ও খুশীতে টগবগ করছে।

সারাটা অনুষ্ঠান অর্নির থাকতে হয় নি আরিয়ান ই ওর আশেপাশে থেকেছে।

রাত তিনটায় সবাই ঘুমাতে গেলো। কাল বিয়ে আরো ব্যস্ততা।রুমি,আইরিন,শিউলী আর অর্নি একসাথে শুয়েছে আর আরিয়ান,রিমন,রাদিফ একসাথে শুয়েছে।আরিয়ান শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে এখানে আসার পর থেকে সব মনে করতে লাগলো তারপর মুচকি হেসে রিমন আর রাদিফকে ঠেলে উঠালো দুজনে চোখ কচলে বলল

“কি হইছে?”

“দোস্ত আমি প্রেমে পড়েছি!”

রিমন হাই তুলতে তুলতে বলল

“হ্যাঁ ওইটা তো আমরা জানি।”

আরিয়ান পুলকিত কন্ঠে বলল

“এখন কি করবো?ওকে প্রপোজ করে দেই?”

“আরে নাহ!!আগে ওরে বুঝা তুই ওরে ভালোবাসিস।”(রাদিফ)

“হুম পরে প্রপোজ করবি।(রিমন)

” আচ্ছা বুঝাইতে হইলে কি করমু?”

“আয় তোরে প্রেম শিক্ষার ক্লাস দেই।গাধা এইগুলি ও তোরে বইলা দেওয়া লাগবো?ছেলে হইছিস কেন?পরে বিয়ার পর বলবি দোস্ত বাসর রাইতে কি করমু?শালা আবুল।”(রিমন)

রিমনের কথা শুনে আরিয়ান আর রাদিফ দুজনই হাসতে লাগলো।

এদিকে অর্নি শুয়ে শুয়ে ভাবছি ইশশ নেহালকে একদিন হয়ে গেলো দেখি না।এবার গিয়েই ওকে ভালোবাসি বলে ফেলবো।

চেচাঁমেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো অর্নির।উঠে দেখে পাশে ওরা কেউ নেই ও ই শুধু পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে।হাই তুলতে তুলতে বিছানা ছেড়ে বাইরে আসতেই দেখলো সবাই কাজ করছে।বাচ্চারা খেলছে।অর্নির মা এসে বলল

” ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে নে আর আরিয়ানকে নাস্তা দিয়ে আয়।”

অর্নি ওর মায়ের এই ব্যবহারে বিরক্ত ওকেই কেনো সবসময় আরিয়ানকে জাগাতে হবে,নাস্তা দিতে হবে?অদ্ভুত।”

আরিয়ান, রিমন,রাদিফ তিনজনই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।অর্নি আরিয়ানের রুমে ওদের তিনজনের জন্য নাস্তা দিয়ে ওদেরকে ওঠানোর জন্য আরিয়ানকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু একটাও উঠছে না।অর্নি চলে যেতে নিলেই আরিয়ান ওর হাত ধরে ঝটকা টান দিয়ে বুকের ওপর ফেললো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে